ভ্যাপসা বিচ্ছিরি একটা গরম। জ্যৈষ্ঠ মাসের এই সময়টায় বৃষ্টি হলে একটা আরামদায়ক আবহাওয়া বিরাজ করলেও বৃষ্টি না হলে অসহ্য গরমে টেকা দায় হয়ে যায়। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি তো নেই-ই সাথে কাঁঠ ফাঁটা রোদ। খড়খড়ে মাটির উপর দিয়ে একটু বাতাস গেলেও ধুলো ওড়ে। বড় গাছগুলো মাটি থেকে সাধ্যমত রস শুষে নিয়ে প্রাণপণে নিজেদের সতেজ রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে যেন। আশেপাশের ছোট গুল্ম আর ঘাসেদের ভাগে জুটছে না কিছুই তেমন। পানির অভাবে লতা গুল্ম গুলো ঝিম মেরে আছে আর ঘাসেরা অনেকটাই সবুজ থেকে ধূসর রূপ নেয়ার পথে!
বাতাসও যা হয় তাতে যেন কেউ স্টিম ইঞ্জিনের বাষ্প মিশিয়ে দেয়। গা জ্বালা করে আরো! আজ সে বাতাসটুকুও নেই। প্রকৃতি হঠাৎ যে কার উপর এত অভিমান করে গোমরামুখো হয়ে বসে আছে কে জানে! অবশ্য চাইলে সে হাজারটা অভিযোগ করতে পারে। বাতাসের কোন লক্ষণ নেই। গাছের পাতাগুলোও যেমন স্থিরতার প্রতিক হয়ে আছে, তাতে গাছগুলোকে দিব্বি ক্যামেরায় তোলা ঝকঝকে ছবি বলে চালিয়ে নেয়া যেতে পারে! হঠাৎ কি এক নাম না জানা পাখি মহাব্যাস্ত ভাব নিয়ে উড়ে গেল আম গাছটার পাশ দিয়ে। তার ডানার ঝাপটায় নিথর পাতাগুলোর মধ্যে কয়েকটি যেন শিহরিত হল! বহুদিনের পুরোনো স্বপ্নের মত কোনমতে টিকে থাকা হলদেটে একটি পাতা সে শিহরণ টুকুই আর সইতে পারলো না! ঘুরতে ঘুরতে এসে তার স্থান হল মাটিতে। প্রথমবারের মত সে পেল মাটির স্পর্শ! মার্চ করে হেটে চলা পিপড়ার মিছিলের মাঝখানে এসে পড়ায় হঠাৎ কোন বহিরাগত শত্রুর আক্রমণ ভেবে দিগ্বিদিক ছুটে পালাতে লাগলো তারা। ছোট্ট জায়গাটুকু অস্থিরতায় ছেয়ে গেল কিছুটা সময়ের জন্য! সামনে থাকা পিপড়াদের এহেন ছুটাছুটি দেখে অপেক্ষাকৃত পেছনে থাকাগুলো তাদের পিছু পিছু ছুটতে লাগলো কিছু না বুঝেই। কঠোর শৃঙ্খলা মেনে এগিয়ে চলা দলটি ক্ষণিকেই রূপান্তরিত হল বিশৃংখল এক দঙ্গলে!
পেছনে থাকা কয়েকটি তাগড়া সাইজের পিপড়া সামনে এগিয়ে এসে থমকে দাড়ালো, অন্যদের মত দৌড়ে এদিক সেদিক পালানোর চেষ্টা করলো না। উৎসুক দৃষ্টিতে তারা যেন পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো হলদে হয়ে আসা পাতাটিকে। প্রাণহীন এবং বৃন্ত থেকে খসে পড়া স্থির হলুদ রঙের বস্তুটিকে তাদের কাছে হয়তো নিরীহ বলেই মনে হল। আস্তে আস্তে তারা এগিয়ে যেতে লাগলো পাতাটির দিকে, সাবধানী ভঙ্গিতে । তাদের দেখাদেখি আরো কয়েকটি উৎসাহী পিপড়া কে দেখা গেল তাদের পিছু নিতে। বেশ বড় সাইজের একটি পিপড়া কে হঠাৎ সবার সামনে এগিয়ে আবার উল্টা ঘুরতে দেখা গেল। সামনের দু পা তুলে অনেকটা দাড়ানোর ভঙ্গিতে কিছু একটা বলতে চাইল যেন। পিছু নেয়া পিপড়াগুলোও যেন তার কথা শুনতে লাগলো মনোযোগ সহকারে!
একটু পর দেখা গেল বেশ কয়েকটি পিপড়া মিলে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে হলদে রঙের পাতাটি।
সারাদিনের বিচ্ছিরি গরমের পর বিকেলের আগ দিয়ে সূর্য কে ঢেকে দিয়ে কোত্থেকে যেন বিশাল এক খন্ড কালো মেঘ ভেসে এল। পশ্চিম কোণ থেকে ছড়াতে ছড়াতে একসময় অধিকার করে নিলো পুরোটা আকাশ। ঝুমঝুমিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে যেন আকাশ থেকে ঢল নামল। বৃষ্টির তোড়ে ভেসে যেতে লাগলো সব খরতাপ আর খড়কুটো। বৃষ্টি থেমে গেলে বড় গাছের ভেজা পাতার উপর শেষ বিকেলের রোদ পড়ে চিকমিকিয়ে উঠলো। লতা গুল্মেরা যেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাড়ালো আর ঘাসগুলো হেসে উঠলো নতুন করে ফিরে পাওয়া জীবনের আনন্দে।
রাস্তার এক কোণা দিয়ে উঁচু যায়গা গুলোতে জমে যাওয়া পানির স্রোত ঢালুতে নেমে যাচ্ছিল। সাথে ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছিল উঁচুতে জমে থাকা নানা রকমের খড়কুটো আর জঞ্জাল! কিছুক্ষণ পর সেই স্রোতে ভেসে আসতে দেখা গেল একটা হলুদ রঙের পাতা যার উপরে কয়েকটি পিপড়া প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছিল পাতাটি আঁকড়ে ধরে স্রোতের ধকল সামলাতে!!! ঝরে পড়া পুরোনো সেই হলুদ পাতাটি,যেটিকে পিপড়াগুলি কয়েক ঘণ্টা আগে নিজেদের কাঁধে বয়ে নিয়ে গিয়েছিল!!!
----------------------------
সুবোধ অবোধ
মন্তব্য
এতবড় অণু কিসের ভাই?
দারুণ লিখেছেন।
----ইমরান ওয়াহিদ
কই বড়?!! গুড়া সাইজ।
সুবোধ অবোধ
পিঁপড়া পাতা নিয়ে যাচ্ছিল, আবার পরে পাতার ওপরই আশ্রয় নিল পিঁপড়া -খুব মজার টুইস্ট।
লেকার থিম মনটাকে স্পর্শ করে গেল।
শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ।
সুবোধ অবোধ
*লেখা
বেশ লাগলো প্রতুল মুখোপাধ্যায়েরগানটা শুনেছেন?
পিঁপড়ে নিয়ে একটা গপ লিখে কই জানি ফেলে রেখেছি তার কথা মনে পড়ে গেলু
হাত পা খুলে লিখতে থাকুন, খুব শিঘ্রিই হাচলত্ব প্রাপ্ত হবেন ফুুঁউউ দিয়ে দিলাম যান
আমিও ফুঁ আর পানিপড়া দিয়ে গেলাম।
(নতুন হাচলদের ফুঁ বেশি কার্যকর )
এর পরের লেখা কি এই পানি খায়া লেখমু?
সুবোধ অবোধ
খুপ সাপধান, হাত পা আবার জয়েন্ট থেকে খুলে ফেলবেন না।
----ইমরান ওয়াহিদ
সুবোধ অবোধ
ধইন্যা! হু, গানটা ছুডু বেলাতেই শুনছি।
আপনের গপ খানা দ্যান না ক্যারে? আমরা পড়ি।
হাত পা খুইলা লেখুম??!!!
হাচলত্ব? আপনার মুখে ফুল, ফল, মধু সব চন্দনই পড়ুক!
সুবোধ অবোধ
সে জন্যেই আপনি এরকম দার্শনিক চিন্তার মানুষ!
ভাগ্যিস এটা পড়ুক মাথায় বলেন্নি
চমৎকার লেখা!
সালমান বিন হোসাইন
সুবোধ অবোধ
বেশ তো ......
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
সুবোধ অবোধ
facebook
সুবোধ অবোধ
পৃথিবীটাকে যত বেশি ভালবাসবেন তত বা তারচাইতে বেশি প্রতিদান পৃথিবী আপনাকে ফেরত দেয়। যতই তুচ্ছ আমরা মনে করি না কেন প্রতিটি বস্তু বা প্রানীকে, সময় বা অবস্থানভেদে সে হয়ত ততটাই অমূল্য।
সুবোধ অবোধ
গল্প চলুক।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
সুবোধ অবোধ
ভাল লাগল।
চালিয়ে যান, শিগগিরি হাচল হউন!
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
সুবোধ অবোধ
লেখা পছন্দ হয়েছে। পিঁপড়েগুলো কি পাতাটাকে নিয়ে গেছিলই নৌকা বানানোর জন্য?
____________________________
ফ্যাসিবাদী বাকশালী প্রোফেসর!!! খালি নৌকা বানানোর চিন্তা!!!!
ধইন্যা ...
সুবোধ অবোধ
নতুন মন্তব্য করুন