• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

অনাহূত তিলক

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২১/০৩/২০১৪ - ১০:৫২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মুজিবর সাহেবের মেজাজ ভয়ঙ্কর রকমের খারাপ। তিনি অফিসের চেয়ারে ঝিম ধরে বসে আছেন আর খেয়াল করছেন ডেস্কে কাজের চাপ বেছে বেছে আজকেই বেশি, একারণে তাঁর মেজাজ আরো খারাপ হচ্ছে। অকারণে ধমকাচ্ছেন সবাইকে। পিওন চা রেখে গেছে অনেকক্ষণ, মুজিবর সাহেব খেয়াল করলেন না। পিওনকে ডেকে দিলেন কড়া ধমক। ব্যাংকের বিজনেস ফ্লোরে উচ্চস্বরে কথা বলা নিষিদ্ধ, সবাই কেমন ফিস ফিস করে কথা বলে। প্রাইভেট ব্যাংক গুলোর এই এক প্র্যাকটিস দাঁড়িয়েছে এখন। কাজের সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে এটি নাকি জরুরী, কর্পোরেট কালচার। মুজিবর সাহেব কাজ করেন ডিপোজিট ডিপার্টমেন্টে। ম্যানেজার সাহেব ওনাকে ডেকে পাঠালেন।

'কি ব্যাপার মুজিবর সাহেব? শরীর ঠিক আছে?'

'জ্বি স্যার'।

'অকারণে চেঁচামেচি করছেন কেন?'

মুজিবর সাহেব জবাব দিলেন না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেন। জবাব দেবার কোন মানে হয়না। ম্যানেজার সাহেব কাগজের উপর এঁকে এঁকে আরো কিছু কর্পোরেট কালচার বুঝালেন। ‘আপনি কি বুঝতে পারছেন আমি কি বুঝাতে চাইছি?’

মুজিবর সাহেব মনে মনে একটা বাজে কথা বললেন। কাকে বললেন নিজেই বুঝতে পারলেন না। মুখে বললেন- 'জ্বি স্যার, বুঝতে পেরেছি'। তাঁর মেজাজ আরো খারাপ হতে থাকলো। ডেস্কে এসে এই কয়েক মিনিটে জমে থাকা বেশ কয়েকটি চেক ক্যান্‌সেল করলেন ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস করে। প্রায় সাথে সাথেই পেমেন্ট অফিসারের কাছ থেকে একটা চেক ফেরত আসলো। 'স্যার স্টেইল চেক।' চেকে ডেট লেখা ১৩-০১-২০১৩। এক বছর আগের ডেট। জানুয়ারি মাসে এটা একটা কমন ভুল, পূর্ববর্তী সাল লিখে ফেলে অসাবধানতায়। ব্যাংকাররা সতর্ক থাকে সাধারণত, মুজিবর সাহেব অসতর্ক হলেন। তাঁর মুখে এক গাদা থুতু জমা হয়েছে। বুক জ্বালা করছে। এসিডিটি প্রবলেম। রাতে ঘুম নাহওয়ায় প্রায়ই এমন হচ্ছে। মুজিবর সাহেব চেক বেয়ারার কে ডেকে কষে ধমক দিতে গিয়েও সামলে নিলেন নিজেকে। দ্বিতীয়বার চেম্বারে ঢোকার কোনো মানে হয়না।

মুজিবর সাহেবের মেজাজের কারণ পারিবারিক। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে উনি বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। উনি জানতে পেরেছেন চারুকলার এক ছাত্রের সাথে মেয়ের সম্পর্ক আছে, পিকলু না কি নাম জানি। এই ছবি আঁকা-আঁকি মুজিবর সাহেবের একদমই পছন্দ নয়। বিদ’আত, বেশরিয়া কাজ। সে পিকলুর আঁকা হোক, আর পিকাসো'র। তাছাড়া বিবাহ বহির্ভূত এই ধরণের সম্পর্ক মুজিবর সাহেব সহজভাবে নিলেন না। শুনার পর থেকেই মুজিবর সাহেব অস্থির হয়ে পাত্র খুঁজেছেন এবং বিয়েও উনি ঠিক করে ফেললেন একমাসের মাথায়। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। ব্যাংকে চাকরি করে। এটা অবশ্যি মুজিবর সাহেবের পছন্দ হয়নি। ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ব্যাংকে চাকরি করবে কেন? প্রোডাকশন রিলেটেড ইন্ডাস্ট্রিতে যাবে। খোঁজ নিতে গিয়ে জেনেছেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকেই আজকাল এই পেশায় আসছে। মেধার অপচয় কিনা মুজিবর সাহেব ঠিক ধরতে পারলেন না। মাথাও ঘামালেন না। পাকা কথা দিয়ে ফেললেন পাত্রপক্ষকে। মেয়ে তার মায়ের মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছিল, ঠিক প্রতিবাদ নয়, প্রতিবাদ মুজিবর সাহেবের বাড়িতে এলাউড না। বলা যেতে পারে আবেদন।

'মেয়ে মাত্র থার্ড ইয়ারে উঠলো, এখনি বিয়ে দিয়ে পড়াশুনার ক্ষতি করে লাভ কি?' মুজিবর সাহেবের স্ত্রী আফসানা বেগম রাতে স্বামীর হাতে পান তুলে দিতে গিয়ে অনুযোগের সুরে জানায়।

'আমি কি মেয়ের বইপত্র ফেলে দিচ্ছি? টিউশন ফি দেয়া বন্ধ করে দেব বলেছি? নাকি আইডি কার্ড তালা মেরে রাখছি? ভালো-শিক্ষিত ছেলে, বংশ ভালো,তাছাড়া আমার কথা হয়েছে ওরাও চায় পড়াশুনা শেষ করুক। অসুবিধারতো কিছু দেখছিনা।'

'নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ, শ্বশুর শাশুড়ি এগুলোর মাঝে মেয়ে পড়তে পারবে? সংসারের কাজ কে করবে?'

'ভ্যাজর ভ্যাজর করবানা। ইচ্ছা যদি থাকে যে কোন পরিবেশেই পড়ালেখা করা যাবে, না থাকলে বেহেস্তে গেলেও যাবেনা।' মুজিবর সাহেব চরম বিরক্তি নিয়ে স্ত্রীকে ধমক দেন।

মুজিবর সাহেবের হাতে টাকা ছিলোনা, ডিপিএস, প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে নেয়ার পরও ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকার আলাদা একটি লোন করলেন মুজিবর সাহেব। ফিরোজ সাহেব এই বিষয়ে বেশ আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, বলা যায় নিজেই উদ্যোগী হয়ে লোনটা করিয়ে দিয়েছেন। ফিরোজ সাহেব লোকটা ভালোই, নামায কালাম পড়েননা এই যা। নামাযের কথা বললেই বলেন 'জীবনে এতো বেশি আকাম করেছি, নামায দিয়া কাভার করা যাবেনা মুজিবর সাহেব। একটা গল্প শোনেন- ব্রিটিশ আমলে যখন নীল চাষ হতো তখন একটি এলাকায় গভর্নর সফরে যাবেন সংবাদে ঐ এলাকার প্রশাসক এলাকার সব নীল চাষিকে ডেকে হুকুম দিলো অমুক তারিখ গভর্নর আসবেন, তোমরা যদি প্রচুর পরিমাণ নীল গাছ কেটে গভর্নরকে সন্তুষ্ট করতে না পার তাহলে তোমাদের আঙুল কেটে নেয়া হবে, আর যদি খুশি করতে পারো তবে মজুরি বাড়িয়ে দেয়া হবে। প্রশাসকের হুকুম তার উপরে আঙুল হারাবার ভয়, বাড়তি মজুরির লোভ সব মিলিয়ে চাষিরা লেগে গেলো কঠোর পরিশ্রমে। কেউ কাটলো ১০০ কেজি, কেউ ৮০ কেজি, কেউবা ৭০.... আবার কেউ চুপটি মেরে ফাঁকি মারলো। যথারীতি গভর্নর আসলো, দেখলো এবং বলল- ওভার অল পরিমাণ সন্তোষজনক। আমি প্রতিদিনই এই পরিমাণ নীল গাছ চাই। আজ যে যেই পরিমাণ কেটেছো প্রতিদিন সেই পরিমাণ কাটা চাই, পরিমাণ কমলে আঙুল কাটা! যেই চাষি ফাঁকি মেরেছে সে তো হেসে কুটি কুটি। সে বেঁচে গেলো। চিন্তা করছি আখেরাতে যদি এই কোটি কোটি গুনাহ্‌গার দেখে আল্লাহ্‌ বলে বসে তোমরা পৃথিবীতে যে যেভাবে ছিলে, এখানেও সেভাবে থাকো, এতো লোকের বিচার করা সম্ভব না; আপনি কিন্তু ফেঁসে যাবেন মুজিবর সাহেব। হা হা হা।'

মুজিবর সাহেব মনে মনে বলেন আস্তাগাফিরুল্লাহ্‌। 'আখিরাত নিয়ে এইধরনের রসিকতা করা ঠিক না ফিরোজ সাহেব'।

‘আচ্ছা যান, রসিকতা বাদ। মুজিবর সাহেব, টাকা নিয়া এতো চিন্তা করছেন কেন? এনি পারপাস লোন নিয়ে নেন একটা। হাতে টাকা আসলে মাস ছয়েক পরে শোধ করে দিবেন, সমস্যা কি?'

'কি লোন বললেন?' মুজিবর সাহেব বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করেন।

'আরে এনি পারপাস, এনি পারপাস। মুশকিল আহসান বলতে পারেন।' ফিরোজ সাহেব হাসতে হাসতে বলেন। 'কনসেপচুয়ালি নারী পাচারের জন্যও এই লোন এপ্লিকেবল! হা হা হা!'

'অ!'

মুজিবর সাহেব 'এনি পারপাস' নিলেন। দিন চারেক ছুটি নিয়ে সব কিছু গুছিয়ে আনলেন। ছেলের বাড়ি থেকেও ঘুরে আসলেন একবার। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে। বেশ যৌথ একটি পরিবার। এলাকায় ভালো ব্যবসা বাণিজ্য আছে। ছেলের এক চাচা ঢাকায় কি সব আমদানি রপ্তানি করে শুনলেন। বেশ ধর্মপ্রাণ পরিবার। বাড়ির পাশেই একটা মসজিদ করেছেন। ভালোই। সিকদার বাড়ি বললে সবাই চেনে। মুজিবর সাহেব বেশ সন্তুষ্ট আথিতেয়তায়, আচার ব্যবহারে। মসজিদে যোহরের নামাযও আদায় করলেন হবু বেয়াইয়ের সাথে।

বিয়ের দিন সকাল থেকেই মুজিবর সাহেবের দম নেয়ার ফুসরত নেই। জুমা বার হওয়ায় ঠিক সময়ে মসজিদে যাবার তাড়াতো আছেই। এদিকে কমিউনিটি সেন্টারগুলোও যাচ্ছেতাই। একজন বসে না থাকলে খাবার পাচারের তালে থাকে সব। দুই নম্বরিতে দেশটা ভরে গেলো। মুজিবর সাহেব হতাশ বোধ করেন মনে মনে। ঘরেও শান্তি নেই। মেয়ে গোঁ ধরে বসে আছে। মুজিবর সাহেবের কড়া শাসনে প্রতিবাদ করার কোন সুযোগ নেই। হুকুম তামিল করাই একমাত্র পথ। মেয়ে সেকারণেই বিয়ে করছে এটা মুজিবর সাহেব বোঝেন। কিছু করার নেই, মেয়ের ভবিষ্যৎ উনি ‘পিকাসো’র হাতে ছেড়ে দিয়ে বে’দাত কাজকে অনুমোদন করতে পারেন না। আর বিবাহ পূর্ব এই ধরণের সম্পর্কের কথা শুনার পর থেকেই মেয়ের প্রতি এক ধরণের বিরক্তি অনুভব করেন মুজিবর সাহেব।

বাদ মাগরিব কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠান। কনে পক্ষের সবাই এসে পড়লেও রাত নয়টা পর্যন্ত বর পক্ষের অনুপস্থিতি মুজিবর সাহেবকে বিচলিত করে। উনি ইতি মধ্যে মাগরিবের নামাজ ক্বাযা করেছেন। ছেলের বাবাকে একবার ফোন দিয়েছিলেন এরমধ্যে, উনি ফোন ধরেন নি। মুজিবর সাহেব অসস্তি নিয়ে আবার ফোন দেন। ফোন বেজে যায়। ‘লা ইলাহা ইন্না আন্তা্‌ সুবাহানাকা ইন্নি কুংন্তু মিনাজ্বজ্বলিমিন’ মুজিবর সাহেব অজানা আশঙ্কায় দোয়া ইউনুস পড়েন মনে মনে। আবার ফোন দেন।

‘বেয়াই সাহেব, সব ঠিক আছেতো ইনশাল্লাহ্‌? কতোটুকু এসেছেন?’ মুজিবর সাহেব উৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন।

‘কিছুই ঠিক নেই ভাই। আমরা এখন চট্টগ্রাম মেডিক্যালে’।

মুজিবর সাহেবের বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে উঠে, শরীর কাঁপতে থাকে। পুরোপুরি শোনেনও না অন্য-প্রান্তে কি বলছেন। উনি দ্রুত বসে পড়েন কমিউনিটি সেন্টারের ফ্লোরে। যতোটুকু বুঝতে পারেন সেটা হচ্ছে সাঙ্গু ব্রিজের কাছাকাছি এসে বিপরীত দিক থেকে প্রচণ্ড বেগে ছুটে আসা একটি ট্রাককে সাইড দিতে গিয়ে বর-যাত্রীবাহী দ্বিতীয় বাসটি খালে পড়ে যায়। বরকে বহনকারী কারটি পিছনে ছিলো, কোন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু খাঁদে পড়ে যাওয়া বাসে এলাকার অন্যদের সাথে ছেলের এক চাচা ছিলেন, যিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। মারা যায় এক শিশুসহ আরো তিনজন। অনেকেই মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে আরো দুইজনের অবস্থা আশঙ্কায়। মুজিবর সাহেব সূরা বাকারার ১৫৬ নাম্বার আয়াত পড়তে থাকেন বারে বারে। ছুটে যান চট্টগ্রাম মেডিক্যালে। চারিদিকে শুধু কান্না আর হাহাকার, হতবিহবল পরিবেশ। যে শিশুটি মারা গিয়েছে তার মায়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। মেডিক্যালের ওয়ার্ড জুড়ে কেবলি দুঃসহ গোঙানির শব্দ।

বিধ্বস্ত পরিবেশ থেকে রাত বারোটা নাগাদ মুজিবর সাহেব পাত্র এবং তার কিছু নিকট আত্মীয় স্বজনসহ বিমর্ষ মন নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে আসেন। এ যেনো নিষ্ঠুর নিয়তি। কাজী উপস্থিত ছিলেন। বিয়ে পড়ানো হয়। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাও সারা হয় দায়সারা ভাবে। কোনরূপ আমেজ ছাড়া। ছেলের বাবা বিয়ে স্থগিত করে পরবর্তীতে কোন একসময় আয়োজন করার জন্য বলেছিলেন, কিন্তু কনেপক্ষের উপর্যুপরি অনুরোধে কোনক্রমে আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন। কিন্তু জানিয়ে দিলেন আজ তাঁরা মেয়ে তুলে নিয়ে যাবেন না। ‘ভাই সাহেব পরিস্থিতিতো হাসপাতালে নিজেই দেখেছেন। এই অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে বাড়ি যাওয়াটা ঠিক হবেনা। অন্তত চেহলামটা যাক। নানান জন নানান কথা বলবে। বুঝতেইতো পারছেন।‘

‘জ্বি, ঠিক আছে, ঠিক আছে’। মৃদু অস্বস্তি নিয়ে মুজিবর সাহেব সম্মতি দেন। বুঝে উঠতে পারেন না ঠিক কি করবেন। কন্যা বিদায়ের চিরাচরিত আবেগঘন পরিবেশের বদলে কমিউনিটি সেন্টার জুড়ে বিরজকরে এক নিষ্ঠুর নিরবতা। এ যেনো এক উৎকণ্ঠার সহবাস অন্তকালের। নিয়ন আলোময় রাস্তা বড্ড অদ্ভুতুড়ে আঁধারী মনে হয়।

মেয়ের চাচা শ্বশুরের চেহলাম অনুষ্ঠানে মুজিবর সাহেব তার স্ত্রীসহ উপস্থিত থেকেছেন এবং চরম অস্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। পূর্বেকার আথিতেয়তা উনি আশা করেননি কিন্তু পাশকাটানোটা খোঁচা দেয় বড়। মেয়েকে তুলে নেয়ার বিষয়ে কেউ কোন আলাপ তুললেন না। মুজিবর সাহেব ভেবেছিলেন শোকাবহ পরিবেশে বিষয়টি আলাপ না করে বাসায় ফিরে কথা বলবেন ফোনে। কিন্তু আফসানা বেগমের মুখে শুনলেন মেয়ের চাচী শাশুড়ি তাঁর সঙ্গে কথাও বলেন নি। মৃদু ফিসফিসানিতে জানতে পেরেছেন মেয়েকে অপয়া হিসেবে চিহ্নিত করে পরিবারের অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না, আশুভ ছায়া দেখতে পাচ্ছেন নতুন বউয়ের আগমনে। যে কেবলই কেড়ে নেবে।

মুজিবর সাহেব অসহায় বোধ করেন। যে ঘটনায় তাঁর মেয়ের কোন হাত ছিলোনা সেটিকে ইস্যু করে মেয়ের ভাগ্যে অনাহূত তিলকের ছাপ উনি মেনে নিতে পরেননা। তাঁর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এর মাঝে আবার তাঁর স্ত্রী খোঁচা দিচ্ছেন ‘সারাজীবনে আমার একটা কথা আপনি পাত্তা দিয়েছেন? বলেছিলাম মেয়েটা পড়াশুনা শেষ করুক।‘ নিজেকে অপরাধী লাগে মুজিবর সাহেবের। অফুরান বিষণ্ণতা নিয়ে সারারাত বিছানায় ছটফট করেন, অফিসে কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না। সময় হয়তো সবকিছুকে সহজ করে দিবে। মেয়েও হয়তো স্বামীর বাড়ি যাবে একসময়, কিন্তু আমৃত্যু বয়ে বেড়াবে অপয়ার অপবাদ। একরাশ হতাশা আর অপরাধ-বোধ মুজিবর সাহেবকে ঘিরে রাখে সারাবেলা, সারাক্ষণ।

-----------------------------------------------------------------
- দেব প্রসাদ দেবু


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

দেব প্রসাদ দেবু, আপনার লেখাতে প্রথমে খুব গোছালো মনে হলেও হটাত কেমন যেন তাড়াহুড়ো লাগে শেষের দিকে। আরেকটু সময় দেবেন।

Shah Waez (শাহ্‌ ওয়ায়েজ।)
Facebook

..............................................................................................
কোথাও নেই ঝুমঝুম অন্ধকার
তক্ষক ডাকা নিশুতিতে
রূপকথা শুনে শিউরে উঠে না গা
স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলি ফুল
আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল

অতিথি লেখক এর ছবি

@শাহ্‌ ওয়ায়েজ,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুপরামর্শের জন্য।

-দেব প্রসাদ দেবু

অতিথি লেখক এর ছবি

দেব প্রসাদ দেবু,

আপনি তো ভাই এখানে, ওখানে, সবখানে সুবাস ছড়াচ্ছেন। কুসংস্কারকে সংস্কার করে কবে যে সাধারণ মানুষ পিঠ সোজা করে দাঁড়াতে পারবে, কে জানে?

----ইমরান ওয়াহিদ

অতিথি লেখক এর ছবি

@ইমরান ওয়াহিদ,
সংস্কারের কথা বললেই ১/১১ এর কথা মনে পড়ে! :)
অনেক ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

-দেব প্রসাদ দেবু

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

শুরুর দিকে বুঝতে পারি নাই শেষে এই টুইস্ট অপেক্ষা করছে! চমৎকার।

যেমনটি বলেছিলাম, আপনার লেখা দিন কে দিন আরো খোলতাই হচ্ছে। কিন্তু ঐ ওয়ায়েজ ভাইএর সাথে সহমত পোষন করে যাই।

গল্পের শুরুতে তাড়াহুড়ো করে মেয়ের বিয়ে দেয়ার কারণটা বলতে কিন্তু আপনি চার প্যারা আর সাথে একটা কথোপকথন রেখেছেন। ফলে জিনিসটার গতি যে মাত্রা পেয়েছে, শেষ কথাটা বলতে আপনি মাত্র দুটো প্যারা নেয়াতে তার সাথে তাল মিলছে না। অবশ্যই এমন কোন হার্ড এন্ড ফাস্ট রুল নেই যে প্যারার সংখ্যা দিয়েই গতি বিচার হবে, বা শুরুটা এমন হলে শেষটাও এমন হতে হবে। কিন্তু আমি এটা বললাম জাস্ট একটা উদাহরণ হিসেবে।

হাত খুলে লিখতে থাকুন।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

@প্রোফেসর,
নাহ্‌ ! শেষে এসে ইন্টারসিটিতে উঠা ঠিক হচ্ছেনা বারে বারে, মেইল ট্রেনই ভালো, স্টেশনে স্টেশনে ফেরিওয়ালাদের সাথে দেখা সাক্ষাতেরও গুরুত্ব আছে দেখছি! অনেক ধন্যবাদ আপানাকে। সবচে' বড় কথা শেখা হচ্ছে বেশ!

-দেব প্রসাদ দেবু

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ইন্টারসিটিতে উঠুন না - সেটাও তো চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা! কিন্তু পাঠকের প্রত্যাশা থাকে যে আপনি আগাগোড়া মোটামুটি গতিটা ধরে রাখবেন। যদি মেইল ট্রেন দিয়ে শুরু করে ইন্টারসিটিতে চলে যান তবে পাঠক বলবে তাড়াহুড়ো করেছেন, আবার যদি ইন্টারসিটি দিয়ে শুরু করে মেইল ট্রেনে আসেন, তবে পাঠক বলবে কাহিনি ঝুলে গেছে! এ এক দুমুখো করাত ভাই, যেতেও কাটে, আসতেও কাটে!!!

আপনার পরের গল্পের আশায় রইলাম।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

দেখি প্রোফেসর সাব করাত বাঁচিয়ে সামনে এগুনো যায় কিনা !
আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

-দেব প্রসাদ দেবু

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আপনার লেখা আরও গল্প পড়ার ইচ্ছা জাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

@অতন্দ্র প্রহরী
আপনার ঝরঝরে লেখাগুলো পড়ে বেশ ভালো লাগে। সেই আপনার ইচ্ছা জাগলো শুনে বেশ লাগলো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

-দেব প্রসাদ দেবু

কৌস্তুভ এর ছবি

শেষটা ঘটনা হিসাবে ঠিক আছে, বাক্য হিসাবে আরো ধারালো হতে পারত।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ কৌস্তুভ।

-দেব প্রসাদ দেবু

অতিথি লেখক এর ছবি

@এক লহমা,
খেয়াল করবেন মুজিবর সাহেবের বাসায় প্রতিবাদের কোন পরিবেশ উনি রাখেননি, একক সিদ্ধান্তে সব করেছেন এবং ভিন্নমত উনি গ্রহণ করেননা। যেকারণে নিজের ভুল নিয়ে উনি চিন্তিত নয়, এরকম প্রচুর মানুষ আমাদের চারপাশে আছেন। যারা নিজের ভুল কখনো বিবেচনায় নেন না। গল্পটি দুটি উদ্দেশ্যকে বেস্‌ ধরে লেখা। একটি কুসংস্কারের থাবা, অন্যটি স্বেচ্ছাচারী মানুষের চরিত্র উন্মোচন। একটা বিষয় খেয়াল করবেন স্বেচ্ছাচারীরা খুব বেশি ধর্মাশ্রয়ী হয় এবং অন্যের ভুল বেশি করে দেখে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি পড়ার জন্য।

-দেব প্রসাদ দেবু

এক লহমা এর ছবি

গল্প লেখা ঝরঝরে হয়েছে। কিন্তু, মেয়ের বাবার হতাশা, বিষণ্ণতার কারণ একটি দুর্ঘটনার ফল হিসেবে মেয়ের উপর নেমে আসা অযৌক্তিক দোষের জন্য দায়ভাগী হওয়া। এ ছাড়া আর কোন কারণে মেয়ের জোর করে বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তার কোন ত্রুটির অনুভব নেই। দুর্ঘটনাটি না ঘটলে বা দুর্ঘটনার জন্য মেয়ে অযৌক্তিকভাবে দোষী সাব্যস্ত না হলে তিনি যা করেছেন, ঠিক-ই করেছেন। অর্থাৎ, তার নিজের কাজটির অযৌক্তিকতা, নির্মমতার কোন উপলব্ধিতে তিনি পৌঁছান নি। এই উপস্থাপনা, আমার কাছে, গল্পটির সার্থকতার পক্ষে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লেগেছে। (Y)
ইসরাত

অতিথি লেখক এর ছবি

ইসরাত, অনেক ধন্যবাদ, শুভকামনা। ;)

-দেব প্রসাদ দেবু

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

(Y)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

দেব প্রাসাদ দেবু এর ছবি

(ধইন্যা)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।