• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function 'theme_imagefield_image' not found or invalid function name in theme() (line 669 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/theme.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

ট্রুথ লাভ এন্ড এ লিটল ম্যালিস

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২১/০৩/২০১৪ - ৪:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“আমি এমন কিছু করিনি, যার ফলে কেউ তা লিপিবদ্ধ করার মতো মূল্যবান বিবেচনা করতে পারে। আমি মরে পচে গেলে আমাকে বিস্মৃত না হওয়ার একমাত্র সুযোগ হতে পারে পড়ার মূল্যবান কিছু রেখে যাওয়া। বহু ঐতিহাসিক ঘটনা আমি প্রত্যক্ষ করেছি এবং সেইসব ঘটনাকে একটি সুনির্দিষ্ট রূপ দিতে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেছি.................. এই আত্মজীবনী বয়োবৃদ্ধের সন্তানের মতো। এটি থেকে বেশি কিছু আশা করা যথার্থ হবে না। এর মধ্যে আছে কিছু গালগল্প, কিছু সুড়সুড়ি, কিছু খ্যাতি নাশ, কিছু বিনোদন............”

চলে গেলেন খ্যাতিমান লেখক খুশবন্ত সিং, অনেকটা নিভৃতেই। বিগত নয়টি বছরে বারবার পড়েছি তার আত্মজীবনী ‘ট্রুথ লাভ এন্ড লিটল ম্যালিস’। দূরে কোথাও ভ্রমণে বেরুলেও সাথে রেখেছি প্রিয় বইখানি। সুদূর মন্তেভিদিওর পথঘাটে হেঁটেছি আর মাথায় ঘুরঘুর করেছে খুশবন্ত সিং বর্ণিত ষাটের দশকে উরুগুয়ে নিবাসী একমাত্র ভারতীয় সেই হতভাগা সর্দার চঞ্চল সিংয়ের গল্প। ধর্ম, বিশ্বসাহিত্য, ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, সাংবাদিকতা আর পত্রিকার সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে যতবারই তর্ক বেঁধেছি, খুশবন্ত সিংয়ের লেখনী আমায় যুগিয়েছে যুক্তির উপমা।

লেখক, সাংবাদিক এবং সম্পাদক হিসেবে তার দৃষ্টিভঙ্গি বরাবরই ছিল প্ররোচনামূলক ও বিতর্কিত। কিন্তু সততা থেকে বিচ্যুত হননি সারাজীবন। পাঠক হিসেবে ব্যাপারটা আমি হাড়েহাড়ে টের পেয়েছি। খুশবন্ত সিং নিজেই তো মজা করে লিখেছেন ‘দি অনেস্ট ম্যান অফ দ্যা ইয়ার’ খেতাব প্রাপ্তির গল্প “......আমি যদি যথার্থই একজন সৎ মানুষ হতাম, তাহলে আমার উচিত হতো খেতাবটি ফিরিয়ে দেয়া। কিন্তু করমুক্ত দশ লাখ রূপি আমার সততার প্রশ্ন এড়ানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত বেশি লোভনীয় প্রমানিত হয়েছিল............ আমি কতোটা অসৎ তা প্রমানের জন্য আমি অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, যিনি আমার হাতে চেক তুলে দেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশোবন্ত সিং, যিনি অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন – তাদের ব্যাগ থেকে বলপেন চুরি করি”

১৯১৫ সালে পাঞ্জাবের হাদালিতে জন্মগ্রহণকারী খুশবন্ত সিং নিজেও পুড়েছেন জন্মভূমি ত্যাগের যন্ত্রণায়। দেশ-বিভাগের দিনগুলি নিয়ে তার অমর উপন্যাস ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’ রচনার প্রেক্ষাপট জানতে অবশ্যই পড়তে হবে তার আত্মজীবনী। ইতিহাসের গতি পরিবর্তনকারী বহু ঘটনার চাক্ষুষ প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে অনেক কিছুই লিখেছেন তার আত্মজীবনীতে। মহাত্মা গান্ধী, জিন্নাহ, নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীর মত হাই প্রোফাইল রাজনীতিবিদদের সাথে গড়ে ওঠা অন্তরঙ্গ সম্পর্কের অনেক খুঁটিনাটি লিখেছেন অবিচলিত স্পষ্টতায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দুবার পাকিস্তান সফর করেছেন ইন্দিরা আর ভুট্টোর মাঝে বার্তাবাহক হিসেবে। টিক্কা খানের সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী প্রথম ভারতীয় সাংবাদিক হিসেবে বাদানুবাদের প্রসঙ্গও এসেছে খুশবন্ত সিংয়ের সহজাত ধারালো লেখনীতে।

১৯৩৪ সালের গ্রীষ্মে আইন শিক্ষা নিতে বম্বে থেকে জাহাজে চেপে লন্ডন আসার বর্ণনা দিয়ে শুরু তার আত্মজীবনীর অন্তর্গত ভ্রমণ কাহিনীগুচ্ছের সুস্বাদু আয়োজন। ছাত্রাবস্থায় টইটই করে ঘুরে বেড়ানো ইউরোপের নানান দেশের গল্প আর চাকুরিজীবনে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা হিসেবে নানান মুখরোচক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন কাঙ্ক্ষিত স্বচ্ছতা ও অকপটতায়। আইন পেশায় নিজের ব্যার্থতা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিয়ে আবৃতি করেছেন কবি আকবর ইলাহাবাদীর কবিতা,

পয়দা হুয়া উকিল, তো ইবলিস নে কাহা
‘আল্লাহ নে মুঝে সাহিব-ই-আওলাদ কর দিয়া’।

(যখন কোন আইনজীবীর জন্ম হয়, তখন ইবলিস আনন্দ প্রকাশ করে বলে, ‘আল্লাহ তো আমাকে নিজের আভিজাত্ত্যে সমৃদ্ধ করেছেন’ )

বইয়ের একটি অধ্যায়ের নাম ‘পাকিস্তান’। খুব মনোযোগ দিয়ে আমি বারবার পড়ি। খুব চমৎকার সব উক্তি আর শায়েরি মিশেয়ে বর্ণনা করেছেন পাকিস্তানি নাগরিকদের মানসিকতা। ইসলামাবাদের এক সংবাদ-সম্মেলনে মুখ ফসকে তো বলেই ফেলেছিলেন “পাকিস্তানের সময় ভারতের চাইতে আধ ঘণ্টা পিছিয়ে আছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে তোমরা আমাদের চেয়ে ত্রিশ বছর পিছিয়ে আছো............ আমাদের গাড়ি নড়বড়ে হলেও সেগুলো ভারতে তৈরি......... তোমাদেরকে হয় নতুন মসজিদ নির্মাণ করতে হবে অথবা মটরগাড়ি তৈরি করতে হবে। একসাথে দুটো করলে কোনটাই হবে না”। পাঞ্জাবি কবি চিরাগ দীনের একটি কবিতার দুটি লাইন যতবারই পড়ি ততবারই হাসি,

পাকিস্তান দিয়া মওজাউঁ-ই-মওজাউঁ
সারে পাসে ফৌজান-ই-ফৌজান

(পাকিস্তান খুব উপভোগ্য সময় কাটাচ্ছে, যেদিকে তাকানো যায় শুধু সৈন্য চোখে পড়ে)

খুশবন্ত সিংয়ের আজকের পরিচয় উনি ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত রম্যলেখক এবং সাংবাদিক। উকিলের পেশা, ফরেন সার্ভিস আর ইউনেস্কোর লোভনীয় চাকুরি ছেড়ে একজন পুরোদস্তুর লেখক বনে যাবার গল্প লিখেছেন চমৎকারভাবে। পঞ্চাশ বছর ধরে বিরামহীন ভাবে লিখেছেন তিনি। বৃদ্ধ বয়সে আত্মকথা লিখতে বসে ভূমিকার প্রথম লাইনেই বলেছেন “খানিক ভীতি চাঞ্চল্য নিয়ে আমি এই আত্মজীবনী শুরু করেছি। এটি অনিবার্যভাবেই হবে আমার শেষ বই। আমার জীবন সন্ধ্যায় লিখিত অন্তিম রচনা। আমার লিখার কালি দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে”। কিন্তু ঘটনাবহুল যার জীবন তার আত্মজীবনী পাঠকের হাতে আসতে হয়েছে নানা নাটক।

বইটি প্রকাশ হবার কথা ছিল ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু বিধিবাম, ভারতীয় উপমহাদেশের বহু প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদ আর সমাজ জীবনে মর্যাদার আসনে আসীন ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে অজানা সত্য তুলে ধরায় সংশ্লিষ্টরা যে ক্ষুব্ধ হবেন তাতে তো সন্দেহ ছিলনা এবং এই ক্ষুব্ধতার শিকারে পরিণত হয়েছিল তার আত্মজীবনী ‘ট্রুথ লাভ এন্ড এ লিটল ম্যালিস’। আদালতের নিষেধাজ্ঞা কাটাতে প্রকাশনা সংস্থাকে আইনি লড়াই করতে হয়েছে ছয়টি বছর। খুশবন্ত সিংয়ের কলমও থেমে থাকেনি, “বিগত ছয় বছরে আমি বরং অতীতের যে কোন ছয় বছরের চাইতে বেশি সংখ্যক বই প্রকাশ করেছি”

কলম আজ থেমে গেছে। বার্ধক্যজনিত কারনে ৯৯ বছর বয়সে নিভে গেছে জীবনপ্রদীপ। প্রিয় লেখক খুশবন্ত সিংয়ের নিজের ভাষায় “আমার অন্তিম ইচ্ছার ব্যাপারে আমি নির্দেশ দিয়েছি কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়াই বাহাই গোরস্থানে আমাকে দাফন করার জন্য। বাহাইরা আমার অনুরোধে রাজি হয়েছে, তবে আমার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করার শর্ত জুড়ে দিয়েছে। আত্মায় যেহুতু আমার বিশ্বাস নেই সেজন্য তা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই”।

(পাদটীকাঃ ইংরেজি ভাষায় মূল আত্মজীবনী পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত হয়েছে ২০০২ সালে। বাংলাদেশে ‘ঐতিহ্য’ থেকে আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর অনুবাদিত বইটি আমার পঠিত। চমৎকার এই বইটি উপহার হিসেবে পেয়েছি প্রিয় বন্ধু ইয়াফির তরফ থেকে)

.........জিপসি


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

খুশবন্ত সিং যতটা পড়েছি সবই বাংলা অনুবাদে। সে নিজেও তো মনে হয় হিন্দিতে লেখে।
এই বইটা সংগ্রহতব্য তালিকায় যুক্ত হলো। লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। (Y)


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

খুশবন্ত সিং ইংরেজি ভাষাতেই অধিক সাহিত্যকর্ম করেছেন, বাংলা অনুবাদের বইগুলিই আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে!
ইতালিতেও দেখি এই গুণী লেখকের মৃত্যু খবরের শিরোনাম হয়েছে, একবার বইয়ের দোকানে 'ট্রেন টু পাকিস্তান ' আর 'দিল্লী' উপন্যাসের ইতালিয়ান অনুবাদ দেখে আনন্দিত হয়েছিলাম !

......জিপসি

দীনহিন এর ছবি

লেখাটা পড়ে খুশবন্ত সিংকে প্রথমবারের মত ভালভাবে জানলাম। ভদ্রলোকের নাম শুনে আসছি ছোট থেকেই, যদিও পড়া হয়নি তেমন কিছু কখনো। যাই হোক, বইটি সংগ্রহ করছি শীঘ্রই।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ, জিপসি।

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

কিনে ফেলুন নির্দ্বিধায়, পস্তাবেন না। আমার পড়া সবচেয়ে মজার আত্মজীবনী।
কি নেই এতে? ইতিহাস, সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, যৌন সুড়সুড়ি......... সব পাবেন অতি প্রাঞ্জল ভাষায়। এতটা সততার সাথে কেউ তার আত্মজীবনীতে লিখবে না “আমার বাবা মা দুজনই দীর্ঘজীবী ছিলেন। আমার বাবা মৃত্যুবরণ করেন নব্বই বছর বয়সে- স্কচ হুইস্কির গ্লাসে শেষ চুমুক দেয়ার কয়েক মিনিট পর। আট বছর পর আমার মা তাকে অনুসরণ করেন চুরানব্বই বছর বয়সে। তার অন্তিম অনুরোধ ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ এবং প্রায় অশ্রুত কণ্ঠে ‘ভিস্কি’। তাকে হুইস্কি দেয়া হয়। তিনি গ্লাসটি ছুঁড়ে ফেলেন এবং আর কথা বলেননি। আশা করি, যখন আমার সময় আসবে আমিও দীর্ঘ পথ যাত্রার জন্য পান করতে গ্লাস তুলে ধরতে সক্ষম হবো”।

.........জিপসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

(মোম)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

:( :(

........জিপসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।