• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

বাঘের গায়ের গন্ধ ও প্রথম ভ্রমণ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২১/০৩/২০১৪ - ৩:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একদিন হঠাৎ স্কুল ছুটি হয়ে গেল আগ ভাগে ।
স্কুল কম্পাউন্ডের বাইরে এসে দেখি সব শূন্য, কেমন ফাঁকাফাঁকা চারদিক ! আমি ভ্যাবলার মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি । প্রচণ্ড গরমে ঘামে চুপচুপে হয়ে গেছে আমার স্কুল ড্রেস । কিছুদূর হেঁটে বাস স্টপেজে এসে দাঁড়াই ।
বাড়ি যাব !
একটার পর একটা বাস এসে থামে । আমি একটাতেও উঠি না । ভ্যাবলার মত দাঁড়িয়ে থাকি !
সবুজ রঙের একটা বাস এসে থামে । খালি বাস।
দুই তিন জন লোক বসে আছে বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে । আমি উঠে পড়ি এই বাসটাতে ।
মিনিট দশেক পর বাস ছেড়ে দ্যায় । আমি জানিনা আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে এই বাস !

আমি বাড়ি যাচ্ছি না !

আমি অনেক দূরে কোথাও যাচ্ছি ! বাসের জানালা দিয়ে আমি মুখ বের করে দিই । বাতাস আমার চোখে মুখে এসে লাগে । আমার চুলে উথালি পাথালি বাতাস খেলা করে । আমার মনে হয় আমি উড়ছি, আমার মনে হয় আমি পাখি হয়ে গেছি ।

বাস ছুটে চলেছে ! আমার মনে কেমন এক চাপা উত্তেজনা কাজ করে । কেমন একটু ভয় ভয় করে ! কোথায় যাচ্ছি আমি ?
জানিনা !

“বাবু, ভাড়া দ্যাও”

আমি দশ টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিই ।

“কই যাবা”

কোথায় যাবো ?

আমি জানিনা তো !

তবু বাসের গায়ে লেখা একটা যায়গার নাম বলে দিই ।

বাস চলতে থাকে । চলতে থাকে ঝড়ের বেগে ।
জানিনা কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ! কন্ডাক্টরের ডাক শুনে জেগে উঠি আমি । বাসে আমি ছাড়া আর কেউ নেই ।
স্কুল ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে আমি বাসের দরজার দিকে এগুতে থাকি ।

যখন বাসের বাইরে পা রাখি তখন কেমন যেন একটা দেমাক এসে ভর করে আমাকে ।
“আমি একা একা এতো দূর চলে এসেছি?”
নিজেকে কেমন অচেনা মনে হয় ! মনে হয় আমি অনেক বড় হয়ে গেছি !

হাঁটতে থাকি অচেনা শহরের ফুটপাত ধরে । রাস্তার পাশের নানারকম দৃশ্যাবলী আমি দেখতে থাকি চোখ বড় বড় করে ।
রংধনুর মত রঙের আইসক্রিম বিক্রি করছে একটা লোক । আমি দুটাকা দিয়ে একটা আইসক্রিম কিনি ।
আইসক্রিমের রঙ আমার জিভ আর ঠোঁট রাঙিয়ে দ্যায় । আমার সাদা শার্টে রংধনুর রঙ লেগে যায় ! সেদিকে আমার ভ্রুক্ষেপ নেই ।
আমি রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকি । একটা ভিক্ষুক চেঁচিয়ে গান গাইছে, আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভিক্ষুকের গান শুনি । একটা আট আনা পয়সা ভিক্ষুকের থালায় ফেলে সামনের দিকে এগুতে থাকি ।
আমার কানে তখনও বাজতে থাকে-
“আমি অন্ধ
কপাল মন্দ, আপনাদের জানাই
একটা পয়সা দয়া কইরে দিয়া যান ভাই।”

এভাবে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে একটা বিশাল মাঠের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি বুঝতে পারিনি । আমি বিস্ময়ের সাথে খেয়াল করি মাঠের ভেতর একটা আকাশ ছোঁয়া তাঁবু খাটানো আছে । আর সেখানে ঝুলানো একটা রঙচঙে সাইনবোর্ড । সেখানে লেখা “দি নিউ সোনার বাংলা সার্কাস” , আর তার পাশে আঁকা বাঘ, হাতি, বানর, সিংহ, আরও নানারকম পশুপাখির ছবি । কৌতূহলী হয়ে সামনে এগিয়ে যাই, তাঁবুর ভেতরে ঢোকার পথে এসে দাঁড়াই । ভেতরে ঢুকতে সাহস হয়না ।

তবু ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখি ! নানারকম অদ্ভুত সব জিনিসে ঠাসা ভেতরটা । কয়েকটা লোক মুখে রংচঙ মেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে । কয়েকটা ফ্রক পরা মেয়ে কি সব বলে নিজেদের ভেতর হাসাহসি করছে । আমার দৃষ্টি আরও খানিকটা দূরে গিয়ে আটকে যায় । একটা খাঁচা ! আর সেই খাঁচায় বন্দি আস্ত একটা ডোরাকাটা বাঘ !
খুব ইচ্ছে করে আরেকটু কাছে গিয়ে বাঘ দেখি । কিন্তু মনের ভয় কাটিয়ে উঠতে পারিনা ।

হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন আমার কাঁধে হাত রাখে ! আমি চমকে পিছনে তাকাই । একটা মোটা গোঁফওয়ালা লোক । আমি খুব ভয় পেয়ে যাই ।
“কি খোকা খেলা দেখতে এয়েচ ?” লোকটা কেমন দরদ মাখানো কণ্ঠে আমাকে জিজ্ঞেস করে ।

আমি কোনক্রমে বলি-“হ্যাঁ”

“কিন্তু খেলা তো শেষ, আজকে আমরা চলে যাচ্ছি এখান থেকে”।

আমি বলি-“একটু ভেতরে ঢুকে বাঘ দেখা যাবে কাকু”
লোকটা হেসে বলে-“এইসো আমার সাথে”

আমি কিছুটা শঙ্কা আর কিছুটা কৌতূহল নিয়ে লোকটার পেছন পেছন যেতে থাকি । ভেতরে ঢুকে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় ।

চারদিকে শুধু রঙের মেলা ! অদ্ভুতুড়ে পোশাক পরে মানুষেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে । একটা লোক একটা অদ্ভুত এক চাকার সাইকেল চালচ্ছে । কয়েকটা হ্যাফপ্যান্ট পরা মেয়ে অনবরত লাফাচ্ছে আর ডিগবাজি দিচ্ছে ট্রাপাউলিনের উপর । দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে একটা মেয়ে । একজন লোক একসাথে অনেকগুলো বল নিয়ে লোফালুফি করছে দারুণ দক্ষতায় ।
আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকি এসব । মগ্ন হয়ে এইসব দেখতে দেখতে কখন যে দাঁড়িয়ে পড়েছি খেয়াল করিনি । সেই গোঁফ ওয়ালা লোকটার ডাকে হুশ ফেরে আমার । দেখি লোকটা কেমন কৌতুকপূর্ণ চোখে আমার দিকে চেয়ে আছে ।

“এইসো খোকা, বাঘ দেখবা না ?”

আমি লোকটার পিছুপিছু গিয়ে বাঘের খাঁচার সামনে এসে দাঁড়াই । হাড় জিরজিরে একটা বাঘ !

তবু আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি । বাঘটা কেমন যেন ঝিম ধরে আছে ! আমার খুব ইচ্ছে হয় বাঘটাকে ছুঁয়ে দেখতে ।
গোঁফ ওয়ালা লোকটা আমাকে বলে-“তুমি বাঘ দেখো খোকা, দেইখে বাড়ি চইলে যেইও”
লোকটা চলে যায় আমাকে বাঘের খাঁচার সামনে রেখে ।

আমার মনে তখনো বাঘ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে প্রবলভাবে বিদ্যমান । আমি আশে পাশে তাকিয়ে দেখি কেউ আছে কিনা । কেউ নেই ।
আমি নিচু হয়ে বাঘের খাঁচার ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিই ।
ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে বাঘের লেজে হাত দিই আলতো ভাবে । কেমন যেন খসখসে !
হঠাৎ বাঘটা আমার দিকে মুখ করে শব্দ করে অথে-“ঘ্যাক”

আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে এক ছুটে দৌড়ে পালাই ওখান থেকে । সেই প্রকাণ্ড তাঁবু, সেই মাঠ, সেই শহরের ফুটপাত সব পিছনে ফেলে আমি দৌড়াতে থাকি । পৌঁছে যাই সেই বাস স্টপেজে, যেখানে আমি নেমেছিলাম ।
কোনক্রমে একটা বাড়ি ফেরার বাসে উঠে যাই আমি ।
বাস চলতে থাকে আমাকে নিয়ে ।
আমি বাড়ি যাচ্ছি ।
বুকে হাত দিয়ে দেখি বুকটা তখনও ধকপুক করছে । হাত দুটো দিয়ে আমি মুখ ঢাকি । আমার হাতে বাঘের গায়ের গন্ধ !

আজ এই এতো বছর পরেও আমি সেই গন্ধ টের পাই আমার হাতের তালুতে । আজ এতো বছর পরেও আমার বুক ধুকপুক করে সেদিনকার মত ! শুধু সেই সময়টা কেমন করে উধাও হয়ে গেল ! যেন জাদুকরের হাতের মুঠো থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া রঙিন বল !

_____________________________________________________________________________________

তাহসিন রেজা


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

তাহসিন রেজা, কল্পনা ভাসাতে পারবেন ভালই। লেখা পাব্লিশের আগে দুই তিনবার দেখে নিলে বানান ভুল এড়াতে পারবেন। অতিথি লেখক যেহেতু সুতরাং এডিট দিতে পারবেন না এখই। সব মিলিয়ে চমৎকার। সামনে আরও ভাল লেখা পাবো আশা এটাই। ভাল থাকবেন :)

Shah Waez (শাহ্‌ ওয়ায়েজ।)
Facebook

..............................................................................................
কোথাও নেই ঝুমঝুম অন্ধকার
তক্ষক ডাকা নিশুতিতে
রূপকথা শুনে শিউরে উঠে না গা
স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলি ফুল
আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ শাহ্‌ ওয়ায়েজ

তাহসিন রেজা

দীনহিন এর ছবি

ভাল লেগেছে। খুব। গল্প বলার ঢং এত শৈল্পিক! আচ্ছা, আপনি অনেকদিন ধরে লিখছেন না তো? :)

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

লিখছি তো অনেকদিন ধরে । কিন্তু সচলের সাথে দেখা হবার পর অনেকদিন বন্ধ থাকা লেখা লেখা খেলা আবার চালু হল নতুন করে ।
শুভকামনা দীনহিন

তাহসিন রেজা

হিমু এর ছবি

তাহসিন আপনি সচলায়তনে নিবন্ধন করে ফেলুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

নিবন্ধন করে ফেলব । :)

শুভকামনা হিমু ভাই । :)

তাহসিন রেজা

আশালতা এর ছবি

আরে বাহ্‌! খাসা লেখা। =DX

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ আশালতা দিদি ।

খুব ভালো থাকবেন সবসময় ।

তাহসিন রেজা

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ভালো লাগল লেখাটা। শৈশবের দিনগুলোর কথা ভাবলে আসলেই অন্যরকম খারাপলাগা অনুভূতি হয় একটা। পেছনে ফেলে আসা সেই দিনগুলো আর পাওয়া যাবে না ভাবলেই...

যতিচিহ্নের ব্যবহারে আরেকটু যত্নবান হলে পড়তেও আরাম লাগবে পাঠকের। যেমন, দাঁড়ি বা কমা বা বিস্ময়চিহ্নের আগে স্পেস হয় না।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ অতন্দ্র প্রহরী :)
যতিচিহ্নের ব্যবহারে পরের বার থেকে যত্নবান হব :)

তাহসিন রেজা

কৌস্তুভ এর ছবি

এইটা কোন শহরের গল্প?

তাহসিন রেজা এর ছবি

খুলনা :)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

এক লহমা এর ছবি

ভাল লাগল।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তাহসিন রেজা এর ছবি

ধন্যবাদ এবং শুভকামনা :)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

মরুদ্যান এর ছবি

খাইসে! যদি কামড়ায় দিত! :p

লেখা খুব সুন্দর হইসে।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

তাহসিন রেজা এর ছবি

হ্যা আমি এখনও ভাবি যদি কামড়ে দিত (ঘেঁয়াও) :D
অনেক ধন্যবাদ মরুদ্যান :)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

(Y)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তাহসিন রেজা এর ছবি

(ধইন্যা)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।