বিপুলা সমুদ্রের মাঝে একরত্তি দ্বীপ ‘বার্ক’ (Berk). ছিমছাম এই সুন্দর দ্বীপগ্রামটিতে বাস করে একদল ভাইকিং। হ্যাঁ, আমি সেই অসম সাহসী বীর যোদ্ধা জাতির কথাই বলছি। গেল কিছু সময় ধরে অবশ্য এ গ্রামটি কিছুটা হলেও পালটে গেছে। আশেপাশের অন্যান্য দ্বীপের ভাইকিং দলগুলোর সাথে স্থাপিত শান্তি/স্থিতিচুক্তি যুদ্ধাংদেহী জাতিটার মধ্যে আপাতত শান্তি বজায় রাখতে পারছে। আর তা সম্ভব হয়ে উঠছে শান্তিকামী বার্কের হাতে থাকা এক শক্তির উৎসের কারণে। সে কারণটা হচ্ছে- তাদের পোষ্মানা ড্রাগনেরা। ড্রাগন।
২০১০ সালে বক্স অফিস কাপিয়ে ড্রিমওয়ার্কস হলিউডে নিয়ে আসে এক অভাবনীয় বন্ধুত্বের আখ্যান। ‘How To Train Your Dragon’ নামের এই এ্যনিমেটেড মুভিটিতে রচিত হয়েছিল মানুষ এবং ড্রাগনের এক দৃষ্টিনন্দন মিতালি। অনিন্দ্য গল্প আর নির্মান শৈলীতে তৈরী এ চলচিত্রটি সে বছর জিতে নিয়েছিলো কোটি দর্শকদের হৃদয়।
আর সেই ভালোবাসাকে সামনে রেখেই, ঐতিহ্যবাহী শিশুতোষ চ্যানেল ‘কার্টুন নেটওয়ার্ক’ (আমার মতে) গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে চিন্তাশীল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো ২০১১ সালে। তারা ড্রিমওয়ার্কস্কে অনুরোধ করে মুভিটার উপর একটি সিরিজ বানাতে- তাদের নেটওয়ার্কে প্রচার করার জন্য। ড্রিমওয়ার্কসএর ক্রিয়েটিভ টিমও এমন একটি সুযোগের জন্য মুখিয়ে ছিলেন। নির্মিত হলো ‘How To Train Your Dragon’ মুভিটার কন্টিনিউয়েশন প্লট-এ ‘Dragon Riders of Berk’ নামের সিরিজটার।
(পাঠকদের মধ্যে কেউ ‘How To Train Your Dragon’ মুভিটা না দেখে থাকলে পরবর্তী অংশটুকু না পড়ার অনুরোধ রইলো। সামনে ভয়ংকর সব স্পয়লার আছে।)
‘How To Train Your Dragon’ মুভির শেষ দিকে যদিওবা ‘রেড ডেথ’ নামের সেই ভয়াল রাক্ষুসে ড্রাগনকে হারাতে সমর্থ হয় আমাদের নায়ক হিক্কাপ (Hiccup) আর তার সংগীরা কিন্তু তাতে হিক্কাপ হারায় তার ডান-পা’টি। সুস্থ হয়েওঠার সময়ই হিক্কাপের জন্য একটি লোহার পা তৈরী করে দেয় বার্কের বিখ্যাত কামার ‘গবার’। মজার ব্যপার হচ্ছে, হিক্কাপের এই নতুন পা-টি বরং সহায়ক ও সুবিধাজনক হয়ে ওঠে হিকাপের পোষা নাইটফিউরি জাতের ড্রাগন ‘টুথলেস’এর কৃত্তিম লেজের পাখনাকে নিয়ন্ত্রন করতে। পা হারিয়ে মুষড়ে পরার বদলে জীবনযুদ্ধে পোড় খাওয়া সৈনিকের মতো হিক্কাপ হয়ে উঠলো পরিণত এক নেতায়। বার্কে প্রতিষ্ঠা করলো ‘ড্রাগন একাডেমি’র। যেখানে সে এবং তার বন্ধুরা ড্রাগনদের প্রশিক্ষণ ও তাদের ব্যপারে আরো জানার চেষ্টা করবে। পাশাপাশি বার্কের কোন ধরণের প্রয়োজনে এগিয়ে আসে তার দল। উপরি হিসেবে ড্রাগনদের সাথে সখ্যতার মাধ্যমে এক ভয়মিশ্রিত এক সমীহ বার্কের প্রতি তৈরী হয় প্রতিবেশী দ্বীপবাসী ঝগরুটে নেতৃত্বের মাঝে। এর ফলে এমনকি বার্ক আক্রমণ করতে ভাবার আগে এখন তাদের ভাবতে হয় ড্রাগনদের মোকাবেলা করার ব্যাপারটাকে।
এ্যনিমেটেড সিরিজটাতে সমাবেশ ঘটেছে একঝাক প্রাণবন্ত আর আগ্রহোদ্দিপক বেশ অনেকগুলো চরিত্রের। ড্রাগন ট্রেইনার হিক্কাপ বা এ্যস্ট্রিড এর মতো ঠান্ডা মাথার যোদ্ধা যেমন আছে, তেমনি আছে স্নটলাউডের মতো উদ্ধত, মাথামোটা চরিত্রের। আছে ফিশলেগ এর মতো বুদ্ধিজীবির। রাফনাট আর টাফনাট-এর কথা আলাদা ভাবে না বললেই নয়। পুরো সিরিজজুড়ে এই বোকা জমজ ভাই-বোনদের উদ্ভট কাণ্ডকীর্তি হাসির জোগান দিয়ে যাবে এমন কি স্নায়ু টানটান উত্তেজনার মাঝেও। এতো গেল ট্রেইনারদের কথা- বৈশিষ্ঠের দিক দিয়ে ড্রাগনরাও কম যায় না। প্রতিটা ড্রাগনই তার প্রশিক্ষক এর সাথে কমন কিছু বৈশিষ্ঠ্য শেয়ার করে। হিক্কাপের ড্রাগন টুথলেস তারই মতো বুদ্ধিমান ও প্রচণ্ড গতিশীল। এ্যস্ট্রিড-এর ড্রাগন ‘স্টর্মফ্লাই’ পারদর্শী যোদ্ধা। ‘হুকফ্যাং’ তার প্রশিক্ষক স্নটলাউডের মতোই রাগী। ফিশলেগ এর মতো ড্রাগন মিটলাগ একটু অলস আর আদুরে। আর বোকা জমজদেরতো ড্রাগনই একটি দুই মাথাওয়ালা জিপলব্যাক গোত্রের ড্রাগন। রাফনাট নিয়ন্ত্রণ করে ডানের মাথা বার্ফকে আর বামের মাথা ব্লিচকে নিয়ন্ত্রণ (!) করে টাফনাট। বুঝুন তবে কী কী রকম ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে পারে ফলশ্রুতিতে।
সিরিজটাতে উদ্ভব ঘটেছে দারুন কিছু খল চরিত্রের। আছে বিশ্বাসঘাতক এ্যলভিন আর তার বাহিনী যাদের উদ্দেশ্য বার্ক দখল করে ভাইকিং অঞ্চলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। আছে যুদ্ধোন্মাদ সাইকোপ্যাথ রাজপুত্র ড্যাগার। আর দানব ভিলেন হিসেবে মুভিতে দেখা ‘রেড ডেথ’ এর শুন্যস্থান পুরণ করতে এখানে যুক্ত হয়েছে এর চেয়ে শতগুণ ভয়ংকর ‘স্ক্রিমিং ডেথ’ এর।
একটা বিশেষ ব্যপার উল্লেখ না করলেই নয়। এই এ্যনিমেটেড সিরিজটা ড্রিমওয়ার্কসের অন্য আর দশটা সিরিজের মতো নয়। সিরিজটার শুরুর দিকে একক পর্বভিত্তিক এপিসোড থাকলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ধারাবাহীক কাহিনীভিত্তিক পর্ব তৈরী করা হয়েছে। তাই হুটহাট করে এক আধটা পর্ব দেখে ফেললে পুরো সিরিজটার মজা নষ্ট হবার যথেষ্ট আশংকা আছে। অন্যদিকে, এই প্রথমবারের মতো ড্রিমওয়ার্কস-তাদের তৈরী কোন এ্যনিমেটেড সিরিজে সামান্য ‘ডার্ক টোন’ (অন্ধকার আবহ ?!) এনেছে। অর্থ্যাৎ সিরিজটির ভালো চরিত্রগুলোতে সবসময়- ‘Goodie To Shoe’ বৈশিষ্ঠ্যই পাবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। আবার খল চরিত্রগুলোর সবকিছুই আপনার খারাপ নাও লাগতে পারে।
স্বাভাবিকভাবেই ড্রিমওয়ার্কস-এর অন্য সব মুভি/সিরিজের মতোই এই সিরিজটার গ্রাফিকওয়ার্ক ঝকঝকে-তকতকে আর সুন্দর। ড্রাগনদের চেহারায় বিভিন্ন রকম অনুভুতিও আবগেগের প্রকাশতো মুগ্ধ করে দেবার মতো।
এখন এ্যনিমেটেড সিরিজটার ২য় সিজন এখন প্রচার হচ্ছে। দ্বিতীয় সিজনটির নাম অবশ্য- ‘Dragons: Defenders of Berk’। বলা বাহুল্য ঘটনার ঘনঘটা বেশ ভালোভাবেই ঘুর পেঁচিয়ে উঠছে। ড্রিম ওয়ার্কসের বরাতে- আসছে জুনের ১৩ তারিখে মুক্তি পেতে যাওয়া ‘How To Train Your Dragon- 2’ এর সাথে প্রথম মুভিটার সংযোগ সেতু হিসবে কাজ করছে এই সিরিজটি।
ড্রাগন আর মানুষের মিতালির উপর গড়ে ওঠা কার্টুনটির গল্প বন্ধুত্বের, বিশ্বাসের, দুঃখকে পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর আখ্যান। আস্থার জমিনে নির্ভরতার আশ্বাস।
বার্কের উন্মুক্ত প্রান্তর আর সুনীল আকাশে উড়ে বেড়ানো ড্রাগনগুলো আর তাদের বন্ধুদের এ্যডভেঞ্চারে যোগ দিতে আপনাকে আমন্ত্রণ।
---- মনজুর এলাহী ----
তথ্যসুত্র- উইকি, অফিসিয়াল সাইট আর সিরিজটি দেখার অভিজ্ঞতা।
মন্তব্য
বইয়ের মজাটা সিনেমায় ফুটে ওঠেনি। তবে সিনেমাও উপভোগ্য ছিলো।
এনিমেটেড সিরিজটাও কিন্তু ভালোই উপভোগ্য হিমু ভাই। বিশেষ করে ডার্ক টোনে করা বেশ কয়েকটা পর্ব মাথায় গেঁথে যায়। ড্রিমওয়ার্কসের সিরিজগুলোতে এর আগে এ বিষয়টা দেখিনি। মজাই লাগছিলো।
সময় করে দেখতে পারেন।
---- মনজুর এলাহী ----
বাহ, সিরিজটার কথা জানা ছিলোনা। নেটফ্লিক্সে আছে বোধহয়। চান্স পেলেই দেখে ফেলব।
দেখেন। সেকেণ্ড সিজনে জমে গেছে পুরা। তৃতীয় সিজন এর জন্য বসে আছি। ফিংগার টুইস্টেড।
---- মনজুর এলাহী ----
''How To Train Your Dragon'' দেখেছিলাম । খুব উপভোগ্য লেগেছিল । সিরিজটা দেখার ইচ্ছে হচ্ছে
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
জুন মাসে 'How To Train Your Dragon- 2' আসছে। তার আগেই দেখে ফেলুন। মুভিটা তাহলে আরো ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
---- মনজুর এলাহী ----
পোস্টের হেডিং দেখেই সন্দেহ হয়েছিল এটা তোমার লেখা। পরে দেখলাম আমার অনুমান ভুল নয়। পাওয়ার রেঞ্জার নিয়ে একটা পোস্ট নামাও।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ঠিকই বুঝেছিলেন। টুনালোচনা সচলে আমি ছাড়া আর কেউ লেখে বলে মনে হয় না। অনেক আগে সুহান অবশ্য 'পেঙ্গুইন অফ মাদাগাস্কার' নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিল।
বকা দিয়েন না। 'পাওয়ার রেঞ্জার' দেখা হয় নাই।
---- মনজুর এলাহী ----
মনজুর এলাহী, ভাল লাগলো। বর্ণনামুলক বলেই হয়তো এটা খানিকটা মজা হারিয়েছে। তারপরেও ভাল লেখনী।
Shah Waez (শাহ্ ওয়ায়েজ।)
Facebook
..............................................................................................
কোথাও নেই ঝুমঝুম অন্ধকার
তক্ষক ডাকা নিশুতিতে
রূপকথা শুনে শিউরে উঠে না গা
স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলি ফুল
আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল
সিরিজটার কথা তো জানতাম না! বাহ, আগ্রহ জন্মালো বেশ। দেখতে হবে। How to Train Your Dragon মুভিটা দেখেছিলাম। খুব ভালো লেগেছিল। দ্বিতীয় পর্ব দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি।
---- মনজুর এলাহী ----
স্পয়লার ওয়ার্নিং এর জন্য ধন্যবাদ। মুভি দেখে নিয়ে বাকীটুকু পড়বো।
____________________________
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বাহ, দেখতে হবে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন