“গোঁয়ার্তুমি করো না বন্ধু” অচেনা হিতৈষীর আহ্বানে মনটা সাড়া দিতে না চাইলেও ঠেকায় পড়ে রণে ভঙ্গ অবশেষে দিতেই হল। কতদিন হয়ে গেল উঠা হচ্ছে না পাহাড় চূড়ায়। পর্বতমালার এপাশে তো বরফের ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই আর। কিন্তু চূড়ায় উঠতে গেলে তো যেতে হবে অপরপাশে আর তাই প্রতি রবিবার ভোরে হাজির হই ওপাশের শেষ গুচ্ছগ্রামে অনেক আশা নিয়ে।
গুচ্ছগ্রামের সকাল
একা একা নিজের মত, একা বসে থাকা
ট্র্যাকিং পথ ধরে আধা রাস্তা পেরুতেই শুরু হয় আমার পিছলে পড়া। হিতৈষী আমার বেহাল দশা দেখে সাবধানবানী শুনিয়ে এগিয়ে চলেন শৃঙ্ঘপানে। মন খারাপ করে ঘরে ফেরার পথ ধরি আমি। ততক্ষণে পূব আকাশ সূর্যমামা রাঙিয়ে দিয়েছে প্রভাতের কিরণে। ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি গুনগুন সুর-লহমায় বদলে যাবে মন খারাপ দিয়ে শুরু হওয়া দিনটি। সত্যি বলতে পুরো সপ্তাহটাই তো কেটে গেছে সেই গুনগুন ধ্বনির পেছনে ছুটে। পাহাড় পানে তাকাবার সময় যে আমার আর নেই, শুনতে পাচ্ছি আমি বসন্তের আগমনী বার্তা।
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে (হিতৈষী)
প্রকৃতির অবাক বৈচিত্রে পর্বতমালার ওপাশের তুষারাচ্ছন্ন ভ্যালি পেরিয়ে এপাশে আসলেই ফুলের সৌরভে আর মৌমাছির উপস্থিতিতে বসন্ত ছুঁয়ে যায় হৃদয়ে। মনটা হুহু করে ওঠে আমার, স্মৃতির মণিকোঠায় ভেসে আসে শৈশবের সেই দুরন্ত দিনগুলির কথা। আমাদের সেই সাদা দোতলা বাড়ির জানালার কার্নিশ(সানশেড) আর আমগাছে প্রতিবছর মৌমাছির দল বাসা বাঁধতো। দিনের পর দিন মধুর ভারে সেই মৌচাকের আয়তন বাড়ত আর আমরা ছোটরা দিন গুনতাম কবে আসবে মধু আরোহণকারী। চাক ভেঙ্গে সেই লোক সম্মানী হিসেবে নিয়ে যেত অর্ধেক মধু আর বাকিটা বরাদ্দ থাকত বাড়ির ছোটদের জন্য, আঙ্গুল দিয়ে চেটেপুটে খাবে বলে।
চিরস্থায়ী স্মৃতি বলে কি আসলেই কিছু আছে? কত দশক পেরিয়ে গেছে নিজের অজান্তেই, কিন্তু ভ্রমরের গুঁজন কানে আসতেই অলৌকিকভাবেই সেই প্রভাতে নিজের মনে বিড়বিড় করে উঠেছি শৈশবের মুখস্ত সেই ছড়ার লাইনগুলি……
মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি
দাঁড়াও না একবার ভাই।
ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে
দাঁড়াবার সময় যে নাই।
ফুলে ফুলে
ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে
টীমওয়ার্ক
মৌমাছি আর সংগৃহীত মধু
বসন্ত বিলাস
হারানো এক শৈশব মুহূর্ত যেন মিঠে আবেগে আপ্লুত করেছে আবার আমায়। এক হাতে ক্যামেরা আর অন্য হাতে স্যান্ডউইচ নিয়ে লাঞ্চব্রেকেও ছুটে ফিরি ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকা মেঠো পথের ধারে। মধ্যাহ্নের সূর্যের আলোয় মৌমাছির গায়ে লেপ্টে থাকা ফুলের পরাগে দেখি আমি আলোর ঝিকিমিকি। ‘হুলবিহীন মৌমাছি’ বলেও একটি প্রজাতি আছে বলে শুনেছি। আমি পতঙ্গবিশারদ নই, অতটা মাথাও ঘামাইনা। ওদেরও সময় নেই ক্যামেরাহাতে আসা আগুন্তুকের নাড়ি-নক্ষত্র বিচারের। মধু সংগ্রহ করতে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে উড়ে বেড়াতেই ব্যাতিব্যাস্ত তাঁরা। পরাগসংযোজক হিসেবে নিজেদের পরিপক্কতার খবর তো এদের জানা নেই কিন্তু পুষ্প ঠিকই সে খবর রাখে, নিজের প্রস্ফুটন যতটুকু সম্ভব ততটুকুই মেলে ধরে অতিথি ভ্রমরের আপ্যায়নে। বসন্তের প্রারম্ভে পুষ্পবিকাশের এই দিনগুলি মাতাল হাওয়ায় জাঁকিয়ে বসে প্রকৃতির মাঝে।
নিঃস্বার্থ ভালবাসা ১
বন্ধুত্ব ১
বন্ধুত্ব ২
চুম্বন
নিঃস্বার্থ ভালবাসা ২
বাম্বলবি(bumblebee) বলে একটি প্রজাতি অবশ্য হরহামেশা দেখা যায় না। ইটালিয়ানরা আদর করে ডাকে বম্বো(bombo)। আকারে একটু বড় আর লোমশ এই পতঙ্গ ‘গুনগুন’ শব্দের থেকে ‘ভনভন’ শব্দটাই করে বেশি। এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের গর্ভমুন্ড পর্যন্ত পরিবহণে এদের জুড়ি মেলা ভার, লোমশ বুকে অনায়াসেই লেপ্টে যায় হাজারো পুষ্পরেণু। কিছু বিশেষ ফুলের প্রতি এদের আকর্ষণ আছে বলে মনে হয়। কালো-হলুদ ডোরাকাটা রঙের এই মধুকরের স্বভাবটা এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। ক্যামেরা হাতে দ্বিপদী আগুন্তুকের উপস্থিতি খুব একটা যে তাঁদের পছন্দ না সে কথা আমাকে জানিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি। সাহস সঞ্চয় করে ভাব জমানোর চেষ্টা যে করিনি তা নয়, কিন্তু হুল সাদৃশ্য এক অঙ্গের ছবি তুলে মনের কোনে এক অজানা ভীতির উদ্ভব হয়েছে!
বাম্বলবি ১
বাম্বলবি ২
হুল ??
ফুলের আকর্ষণে গুনগুন আর ভনভন না করে একেবারে নিঃশব্দে এসে চুপটি মেরে বসে থাকে প্রজাপতি আর ঘাসফড়িঙ। অমৃত সুধার নেশায় কীটপতঙ্গের যেন মেলা বসে যায় খোলা আকাশের নিচে।
ঘাপটি মেরে বসে আমিও থাকি, ঘড়িবাঁধা জীবনের মাঝে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া এই বিরতিতে হোক না একটু রুটিনের ছন্দপতন। নীল আকাশের নিচে প্রাণীবৈচিত্রে ভরা বসন্তের মিষ্টি রোদের তাপে মন হয় প্রফুল্ল, ভালবাসতে ইচ্ছে হয় ছোট্ট এই জীবনের বেঁচে থাকার প্রতিটি মুহূর্তকে।
.........জিপসি
মন্তব্য
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
ধন্যবাদ রনি ভাই! সত্যি করে বলছি ছবিগুলো তোলার সময় আপনার কথা ভেবেছি, ফুলের প্রতি আপনার ভালবাসা তো সচলে হরহামেশাই দেখতে পাই।
রমনা পার্কে তো অনেক ঘুরলেন, তো এবার ইটালি ঘুরতে আসুন। বসন্তের রূপ দেখে মাথা খারাপ হয়ে যাবে।
……জিপসি
আমার কথা ভাবে ভেবে সম্মানিত বোধ করছি। অবশ্যই যাব, সময়, সুযোগ আর অবশ্যই সাধ্য যেদিন হবে, সেদিন যাব।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
(Y)
____________________________
.........জিপসি
বাহ্!!!
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
.........জিপসি
পোকা-মাকড়ের ছবি তোলা আসলেই বেশ কঠিন কাজ।
শুভেচ্ছা জিপসিকে
খুব একটা কঠিন কিন্তু না। মোটামুটি মানের ক্যামেরা হলেই চলবে, ম্যাক্রো/মাইক্রো কোন লেন্স আবশ্যক নয়।
ধৈর্য লাগবে প্রচুর।
.........জিপসি
ভালো লাগল।
কিন্তু, "নিঃস্বার্থ ভালবাসা"! ন্যা - ্যা - ্যাঃ
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ। জলিল ভাইয়ের নিঃস্বার্থ ভালবাসা দেখা হয়নি এখনও!
.........জিপসি
পর্বত আরোহন
মধু আহরণ
আগন্তুক
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য। বানানগুলি ডাইরিতে টুকে রাখলাম, আমার লেখায় এই শব্দগুলি ঘুরেফিরে আবার আসবেই।
.........জিপসি
ছবিগুলো অপূর্ব।
আরো ছবি আর লেখা আসুক
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
পোকামাকড়ের পিছনে ক্যামেরা নিয়ে ছুটাছুটি প্রতিদিনই হচ্ছে। দেখি আরও কিছু লিখার মালমসলা যোগাড় হয় কিনা।
.........জিপসি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
পোকামাকড় ভালু পাই
.........জিপসি
মধুর মতই মিষ্টি সব ছবি!
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আপনার চমৎকার মন্তব্য থেকেও তো দেখি অনেক মধু ঝরে পড়ছে!!!
……জিপসি
নতুন মন্তব্য করুন