The past actually happened. History is what someone took the time to write down.- A. Whitney Brown
ব্লগ লেখার ইচ্ছা কখনও ছিল না, যদিও প্রচুর ব্লগ পড়া হয়। কেন জানি মনে হত সময় নষ্ট করার কাজ। আজ কি যেন হল, একটা ভিডিও দেখার পর। পাকিস্তানের কোন এক চ্যানেলে দেখাচ্ছে বাঙ্গালীর প্রাণের দাবী, বাংলাদেশ পাকিস্তান ভাই ভাই (দেখুন এখানে)। দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারলাম না। মনে হল কিছু লেখা দরকার। সবাইকে কিছু জানানো দরকার। হয়ত সবাই তা জানে, সবার কাছে এমন অনেক গল্প আছে, এমন নতুন কিছু না। তবু আমার জানা গল্প জানানো দরকার, যার জানার ইচ্ছা জানুক, না জানার ইচ্ছা না জানুক। আমার লেখার, লিখে রাখি।
সন ২০০০
মতিঝিল সরকারি বাল্ক উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষার ক্লাশ নিতেন বাবুল হোসেন খান। মালাউন ছাত্রদের এক হাত নিতেই যেন তিনি ক্লাশে হাজির হন। প্রথম দিন ক্লাশে ঢুকেই জিজ্ঞেস করেন, "এই ক্লাশে সংখ্যালঘু কে কে আসস রে?" ছিলাম ৩ জন, দাঁড়ালাম। "এই জানস নাকি ভারত নাকি পদ্মার নাম গঙ্গা কইরা দিবে, তোরা দেশে বইসাই গোসল কইরা পূণ্য পাবি।" আমি এদিক ওদিক তাকাতে থাকলাম, বাকি ২ জন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সংখ্যাগুরুর দল মিটিমিটি হাসছে। মাত্র দিনাজপুরের এক মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে এক স্কুলে ভর্তি হলাম, শুরুতেই আমার আর আমার সাথের বাকি ৫৭ জনের পার্থক্য কানে ধরে বুঝিয়ে দেয়া হল। শিক্ষক মহোদয়ের তখনও রাগ ঝাড়া শেষ হয়নি। "ভারত তো তগো আব্বাজান। জানস নাকি পাকিস্তান নিউকিলার বোমা বানাইসে? ভারত যদি আমাদের ২ দেশরে এক থাকতে দিত আমরাও তো বলতে পারতাম আমাদের নিউকিলার বোমা আছে, এখন পারবি বলতে?" মাত্র ক্লাশ ৬ এ, নিউকিলার বোমা কি জিনিস এটাই জানিনা, মনে মনে ধরে নিলাম এটা না থাকলে অনেক ক্ষতি হয়ত। সংখ্যাগুরু শ্রেণী মাথা নেড়ে সায় দিল, ভারত এই দেশটার সর্বনাশ করল। সেই দোষের শাস্তি দিতে হলে আমাদের তিন মালাউনকেই দেয়া উচিৎ। যাই হোক পড়ানো শুরু হল। দিনটা গেল কোনোরকম (ক্লাশের শেষে বিভিন্ন উসকানিমূলক কথা শুনে)।
এরপর দিন যায়, মাস যায়, এল বিশ্বকাপে বাংলাদেশ পাকিস্তান খেলা। বাবুল স্যারকে এক ছাত্র প্রশ্ন করে, "স্যার খেলায় কোন দেশ সাপোর্ট করবেন?" স্যার বড় উৎসাহ পেয়ে বসলেন, এই কোমলমতি শিশুগুলো তার কাছে জানতে চায় এমন কথা। পড়া থাক, শুরু করলেন বয়ান, "আমি হইলাম সাচ্চা মুসলমান, মুসলমান হইয়া মুসলমানের দেশ পাকিস্তানরে সাপোর্ট না কইরা কি হিন্দুগো দেশ ইন্ডিয়ারে সাপোর্ট করুম নাকি?" কোমলমতি ছাত্রগণ হর্ষধ্বনি করে তালি বাজায় উঠল। স্যার হাত উঠায়া সবাইরে থামালেন, "তবে নিজের দেশ খেললে সবাই নিজের দেশরেই সাপোর্ট করবা, হিন্দুগো মত ইন্ডিয়া সাপোর্ট করবা না।" সবাই হেঁসে সমর্থন জানিয়ে দিল। যাই হোক বাংলাদেশ সেই ম্যাচে জিতল, সেই খুশিতে পরেরদিন সর্বত্র সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হল। ছুটি কাটিয়ে ক্লাশে গেলাম। স্যারের মুখ গোমড়া, ঢুকেই শুরু করলেন, "পাকিস্তান তো বাংলাদেশরে জিতাই দিছে, বুঝতে পারসিস তোরা? বুঝবি কেমনে? খেলা তো বুঝস না। আর ছেলেপিলে দেখি এই কারণে বাজি ফুটায়, রাতে রাস্তায় নাইমা তামাশা করে, পরেরদিন সব বন্ধ। দেশটা কোন পাগলে চালাইতেসে কে জানে?" সবাই আবার সহমত, ঠিক তো, এই দেশের কোন ক্ষমতা আছে নাকি পাকিস্তানের মত দেশরে হারায়?
এই কোমলমতি শিশুগুলো আজ বড় হয়েছে। অনেকের সাথে যোগাযোগ আছে, অনেকের সাথে নেই। এদের অনেকের বুকে আজও স্যারের সেই বানী, সাচ্চা মুসলমান পাকিস্তান সাপোর্ট করে। তারা বদলায়নি, তারা বদলায়না, বদলাতে পারেনা। এইরকম ভিডিও যখন দেখি তখন ভাবি, বাংলার বুকে না জানি কত বাবুল হোসেন খান সাচ্চা মুসলমান হতে হলে পাকিস্তান সাপোর্ট করার শর্ত চাপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
পুনশ্চঃ প্রথমে ভেবেছিলাম এই লোকের নাম গোপন রাখব, পরে ভাবলাম এদের নাম প্রকাশ করে দেয়াই উচিৎ। এই লোকগুলো কখন কোন মুখোশ পড়ে বসে থাকে বলা মুশকিল। একটার মুখোশ আমি খুলে দিলাম, বাকিদের আপনারা সামলান।
মালাউন
মন্তব্য
বাবুল হোসেনকে ভুট্টোর আবদার মতন ঘাস খেয়ে থাকতে বাধ্য করা হোক, পাকিস্তানী ভাই বলে কথা, হিদুয়ানী ভাত খেতে চাইলে লুঙ্গি তুলে কষে জোড়া গদাম
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
৬-৮, টানা তিন ক্লাশ এই সাবজেক্ট পড়া লাগত আর ভদ্রলোকের উক্তি শোনা লাগত।
ঘটনাগুলো খুবই কষ্টের
তবুও, অনুরোধ থাকল এরকম নিক ব্যবহার না করার জন্য।
আমি জানি আপনি অনেক কষ্ট থেকেই এরকম নিক লিখেছেন, তবুও।
আমার সামনে যে স্কুল জীবনে এরকম বৈষম্যের শিকার আমার সাথের কেউ হয়নি তেমনটা বলা যাবে না, সূক্ষ্মভাবে হলেও তাদের অনেক খোঁচা খেতে হয়েছে।
ছোটবেলায় শোনা, 'লাল পিঁপড়া- কালো পিঁপড়া' থিয়রি অনেক কষ্ট দিয়েছে পরবর্তীতে আমাকে। অথচ, এই 'থিয়রি' আমি শুনেছিলাম আমার সাথেই খেলায় অংশ নেয়া আরেকটা বাচ্চার থেকে।
অনেক সময়ই আরেকটা কথা শুনি, বাংলাদেশে হিন্দুরা অনেক ভালো আছে ইন্ডিয়ার মুসলমানদের তুলনায়।
আরে, তুলনা করারই বা কি দরকার?
সবাইকে মানুষ ভেবে, একসাথে মিলেমিশে থাকা কি খুব কঠিন?
শুভেচ্ছা
সহমত
নিক পাল্টানোর কথা ভাবছি, কিভাবে পাল্টাতে হয় জানালে কৃতজ্ঞ হব।
লেখা ভালো লেগেছে কিন্তু সালের হিসাবে গণ্ডগোল আছে। পাকিস্তানের সাথে আমরা জিতেছিলাম ১৯৯৯ সালে। আপনার কাহিনীর শুরু ২০০০ সালে তার
দিন-মাস
পর খেলায় জেতার কথা এসেছে।
সাম্প্রদায়িকতা নিপাত যাক।
-পিয়াল
ধন্যবাদ, হয়তো বছর গণনায় আমার ভুল হয়েছে। ঠিক করে দিচ্ছি
এমন অভিজ্ঞতা সবখানে কম বেশি সবার হয়েছে। এমন করে না হলেও এখনো চলছে এমন শ্রেণীবিভাজন। আমার নিজের অফিসেই দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ততাকথিত শিক্ষিতরাও বাবলু হোসেনের খোলস পড়ে বসে আছেন।
মাসুদ সজীব
খেলার সাথে রাজনীতি মিশাবেন না, একটু আধটু ধর্ম মিশাইতে সমস্যা নাই
নতুন মন্তব্য করুন