পুলিশ জীবন কেমন?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৩/০৪/২০১৪ - ১২:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(ইমেজ ক্রাইসিসে ভোগা পুলিশ বাহিনীর নানারকম খারাপ খবরই আমাদের চোখে পড়ে, খবরের পাতা খুললেই নীল ইউনিফর্ম পরা লোকগুলোর কোন না কোন অপকর্ম দেখতে পাই। কোন বিক্ষোভ সামলাতে গিয়ে হতাহতের খবর লেখা হয় এভাবেঃ "২ জন পুলিশ এবং ৪ জন মানুষ হতাহত"। এর মানে দাঁড়ায় পুলিশ আর মানুষ যেন দুটো আলাদা প্রানী!

যতই খারাপ ভাবি আর গালাগালি করি, পুলিশ বাহিনী ছাড়া কোন সভ্য সমাজের অস্তিত্ব কি সম্ভব? রিচার্ড ডকিন্স তাঁর "দি গড ডিলিউশন" বইটিতে কানাডার মন্ট্রিয়ালের মত সভ্য নগরীতে মাত্র ১৬ ঘন্টার জন্যে পুলিশ স্ট্রাইকের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তার কিছুটা বর্ণনা এই লিঙ্কে ডকুমেন্টারি আকারে দেখতে পাবেন।

পুলিশের জীবন কেমন, এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় প্রতিনিয়তই। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, বিসিএস পরীক্ষাতে প্রথম শ্রেনীর সরকারী চাকুরির পছন্দক্রমে পুলিশ ক্যাডারের স্থান একেবারে শুরুর দিকে!

পুলিশের চাকুরির ( বিসিএস ক্যাডার) বিভিন্ন দিক নিয়ে মূলতঃ বিসিএস পরীক্ষা দিতে আগ্রহীদের জন্যে এই লেখাটি লিখেছিলাম। সচলের পাঠকদের জন্যে কিছুটা সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত আকারে এখানে তুলে দিচ্ছি। )

পুলিশ ক্যাডারের ভালো-মন্দঃ

আপনারা যাঁরা পুলিশ সার্ভিসে যোগদানে আগ্রহী ,তাঁরা এই সার্ভিসের বিভিন্ন দিক নিয়ে আগ্রহী হবেন-এটাই স্বাভাবিক।চলুন শুরুতেই এর অনুজ্জ্বল দিকগুলো দেখা যাকঃ

১) ভাবমূর্তি সংকট(Image crisis): পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন অসৎ পুলিশের কর্মকান্ড আমরা মোটামুটি প্রতিদিনই দেখতে পাই।“পুলিশ” নাম শুনলেই সাধারণ জনগণের সামনে যে মূর্তিটি ভেসে ওঠে তা কিন্তু মোটেই সুখকর নয়।কাজেই,পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করামাত্র আপনাকে আপনার সার্ভিসের কুলাঙ্গারদের কৃতকর্মের দায়ভার বহন করতে হবে,এটা মোটামুটি নিশ্চিত থাকুন।ইউনিফর্ম চাকুরির এটি একটি খারাপ দিকঃ অন্যান্য চাকুরিতে কোন ব্যক্তি অপকর্ম করলে তার দায় বর্তায় ওই ব্যক্তির উপর,কিন্তু ইউনিফর্মধারী কেউ সেই একই অপকর্ম করলে তার দায় পড়ে গোটা সার্ভিসের উপরেই।মজার ব্যাপার হচ্ছে,ইউনিফর্ম পরে আপনি যখন কোন ভালো কাজ করবেন তখন কিন্তু কেউ পুরো সার্ভিসকে বাহবা দেবেনা।এর জন্যে আসলে কাউকে দোষ দিয়েও লাভ নেই।বিগত ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানি শাসন এবং স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসন-মোটামুটি গত আড়াইশ বৎসর ধরে এই পুলিশ বাহিনী ব্যবহৃত হয়েছে সাধারণ মানুষকে দমিয়ে রাখতে।আড়াইশ বছর ধরে যে ট্রেডিশন গড়ে উঠেছে তা রাতারাতি দূর হবে এমনটি আশা করা অনুচিত।আপনি যত ভালো মানুষই হয়ে থাকেননা কেন,পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করার পর মানুষ আপনাকে বাঁকা চোখে দেখবে-এটি শুরুতেই জেনে নিন।


২) কর্কশ কাজের পরিবেশ(Harsh working environment):
পুলিশের চাকুরিতে আপনার দিন শুরু হবে খুনের সংবাদ নিয়ে,লাঞ্চ করবেন রায়টের খবরের সাথে, বৈকালিক নাস্তার সময় শুনবেন ধর্ষণের মামলার কথা,ডিনারের সময় ডাকাতির খবর আর রাত ৪টায় ঘুম ভাংবে থানার ওসির ফোনের শব্দে-“স্যার, ওমুক জায়গায় সশস্ত্র দস্যুরা ৫ জনকে হত্যা করে মালামাল লুট করেছে-শিগগির আসুন”।সমাজের অন্ধকার দিকটার সাথে আপনার পরিচয় হবে ওতপ্রোতভাবে।মনে রাখবেন,এটি কোন হোয়াইট কলার চাকুরি নয় যে আপনি ৯টা-৫টা স্যূট টাই পরে অফিসে গেলেন এবং ফিরে এসে পরিবারের সাথে সময় কাটালেন।আপনার কাজের সামান্য বিচ্যুতিতে টলে উঠতে পারে সরকারের আসন,হতে পারে ভয়াবহ প্রাণহানি।এই কর্কশ পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা ক্যাডার পছন্দক্রমে পুলিশ রাখার আগে বার বার ভেবে দেখুন।

৩)ব্যক্তিগত সময়ের অভাব(Lack of personal time): আমার কাছে পুলিশের চাকুরির এটি সবচাইতে কঠিন দিক বলে মনে হয়।পুলিশিং একটি ২৪/৭ চাকুরি-এর যুদ্ধকাল বা শান্তিকাল বলে কিছু নেই-Cops are always in the line of fire.এমনও হবে যখন আপনি নিজের অতি নিকটাত্মীয়ের বিয়েতে যোগ দিতে পারবেননা,খুব কাছের কেউ মারা গেলেও শেষ দেখাটি দেখতে পারবেননা।সারাদিন ব্যস্ততার পর অফিস থেকে এসে সবেমাত্র নিজের ছোট মেয়েটিকে কোলে নিয়েছেন,এমন সময় দায়িত্বের আহবানে সাড়া দিতে আপনাকে ছুটে যেতে হবে দূর-দুরান্তের কোন অপরাধের ঘটনাস্থলে।দিন নেই,রাত নেই,ঈদ নেই,পহেলা বৈশাখ নেই,বিশ্বকাপ নেই-পুরোটা সময় আপনি থাকবেন দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে।কদিন আগে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সারাদেশ যখন আনন্দে মেতে উঠছে-পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের তখন ছুটতে হয়েছে ভেন্যু নিরাপত্তায়।হরতালের সময় পুরো অফিসপাড়ায় যখন ছুটির আমেজ,আপনার তখন রায়ট গিয়ার পরে মিছিলের সাথে থাকতে হবে।আর এরকমটি একদিন নয়,দুদিন নয়,মাসের পর মাস,বছরের পর বছর চলবে-যতদিন আপনি মোটামুটি সিনিয়র পর্যায়ে না যান।কাজেই,নিজেকে ভালোভাবে প্রশ্ন করুন এই জীবন আপনি চান কি-না।

৪)সীমিত সম্পদ এবং জনবল(Limited resources and manpower):

সারদাতে “ট্রেনিং অফ ট্রেইনারস” নামের একটি ওয়ার্কশপে প্রশিক্ষন দিতে এফবিআই(FBI)এবং আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে রিটায়ার্ড পুলিশ অফিসাররা এসেছিলেন।এদের একজন,সিয়াটল পুলিশ ডিপার্টমেন্টের শেরিফ জনাব স্টিভেনসের সাথে আমার কিছুদিন কথা হয়েছিলো।এই ভদ্রলোক খুব মজার একটা কথা বলেছিলেন আমাকে-“ দেখো মাসরুফ,বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে তোমাদের খুব গর্বিত হওয়া উচিত।যেরকম ভয়াবহ চাপ এবং সীমাবদ্ধ রিসোর্স নিয়ে তোমরা কাজ করছ-আমাদেরকে এরকম পরিবেশে কাজ করতে হলে তোমাদের সিকিভাগ সার্ভিসও আমরা দিতে পারতাম কিনা সন্দেহ”।এটি একটি নির্মম সত্য-যেসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে বাংলাদেশের পুলিশকে কাজ করতে হয় তা প্রায় কল্পনাতীত।উদাহরণ হিসেবে পুলিশ-পিপল রেশিওর দিকে তাকানো যেতে পারে।বাংলাদেশে প্রায় ১২০০ জন মানুষের জন্যে রয়েছে মাত্র একজন পুলিশ,যেখানে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে প্রায় ৭০০ জনের জন্যে একজন পুলিশ বরাদ্দ।অর্থাৎ,যদি ভারতের মানেও আমরা পৌঁছতে চাই,সেক্ষেত্রেও পুলিশের জনবল প্রায় দ্বিগুণ করতে হবে।অসৎ পুলিশ অফিসারদের বিত্ত-বৈভবের কথা আমরা পত্রিকায় প্রায়ই দেখতে পাই,কিন্তু এটা খন্ডিত চিত্রমাত্র।কখনো সুযোগ হলে এলাকার পুলিশ ব্যারাকগুলো একবার ঘুরে দেখতে পারেন,দেখবেন কি অমানবিক অবস্থায় সাধারণ পুলিশ সদস্যরা জীবনযাপন করে।গরীব দেশ,যা সম্পদ আছে তাতে এর চাইতে বেশি দেবার সামর্থ্যও নেই। দেড় লাখ সদস্যবিশিষ্ট এই বাহিনীতে বিসিএস অফিসার মাত্র দুহাজার,বাকিরা সবাই কন্সটেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত পদে নিয়োজিত।পুলিশ বাহিনীতে দুর্নীতিবাজদের অস্তিত্ব এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রতিপত্তির কথা আমরা সবাই জানি।কিন্তু জনগণকে একটা মোটামুটি মানের সার্ভিস দিতেও যে অবকাঠামোগত সহায়তা প্রয়োজন,আমাদের এই গরীব দেশ প্রায়শঃই তা সরবরাহ করতে পেরে ওঠেনা।কর্তব্য করতে গিয়ে হাজারটা বাধার সম্মুক্ষীন হবেন এবং লড়াইটা অধিকাংশ সময়ে একাই করতে হবে-পুলিশ প্রথম পছন্দ দেবার আগে এটি অবশ্যই মাথায় রাখুন।

৫)কঠোর শারীরিক প্রশিক্ষণ(Rigorous Physical Training): পুলিশ ক্যাডারে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হবার পর এক বৎসর আপনাকে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী,সারদায় মৌলিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে।“সারদার ঘোড়াও দুর্নীতি করে,পয়সা দিলেই সব ঠিক” জাতীয় আজগুবি কথাবার্তায় কান না দিয়ে মনে রাখবেন, এই প্রশিক্ষণটি যথেষ্ট কঠিন।ঘোড়ায় চড়া,এগারো ফিট উঁচু দেয়াল লাফিয়ে পার হওয়া(surmounting wall) ইত্যাদির জন্যে এখানে শারীরিকভাবে আপনাকে তৈরি করে নেয়া হবে।এই তৈরি করার পদ্ধতিটি যথেষ্ট কষ্টসাধ্য,ভোর চারটায় উঠে আপনাকে দৌড়াতে হবে পিটি গ্রাউন্ডে,দৈনিক মোটামুটি পাঁচ কিলোমিটার পথ দৌড়ে পার হতে হবে।এছাড়া প্যারেড,অবস্টাকলস,মার্শাল আর্ট,ফায়ারিং ইত্যাদি তো আছেই।আপনি যদি মনে করেন আউটডোর ট্রেনিং আপনার জন্যে নয়-তাহলে পুলিশে না আসাই ভালো।

৬)প্রতিকুল সামাজিক পরিবেশ(Adverse social environment): একটি সমাজে পুলিশ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য মোটামুটি এরকমঃ সমাজের শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আইন মেনে চলবে;মাত্র দশ ভাগ মানুষ হবে বিপথগামী এবং পুলিশ তাদেরকে নিয়ন্ত্রন ও দমন করবে।হলিউডের Righteous Kill সিনেমাটিতে পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয়কারী রবার্ট ডি নিরোর একটি সংলাপ এখানে প্রনিধানযোগ্য-“Our job is to protect 90 percent people of the society from the rest 10 percent”.

বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর দিকে আমরা যদি তাকাই-আসলেই কি নব্বইভাগ মানুষ আইন মেনে চলে,বা চলার মত পরিবেশ এখানে রয়েছে?একটি ছোট উদাহরণ এখানে টানা যেতে পারে।রাস্তায় দুটি প্রাইভেট গাড়ির মধ্যে ছোটখাটো ধাক্কা লাগলে যার দোষে ধাক্কা লেগেছে সে কি বের হয়ে এসে ক্ষমা চায় আমাদের দেশে? বরং দুই পক্ষ গাড়ি থামিয়ে রাস্তায় নামে এবং কার পরিচিত কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছে তা নিয়ে গলাবাজি শুরু করে দেয়।

সাবেক আইপিএস অফিসার নটরাজনের ভাষায়, একটি দেশের পুলিশ বাহিনী সেদেশের মানুষের চমৎকার একটি প্রতিচ্ছবি হিসেবে কাজ করে।যেদেশের মানুষ যেরকম,সেদেশের পুলিশ বাহিনীও ওরকমই হয়-তারা কেউ আকাশ থেকে আসেনা।

এরকম একটি দেশে পুলিশের চাকুরি করা খুবই কঠিন কাজ।আপনি ন্যায়,অন্যায় যা-ই করুন না কেন আপনার শতকরা পঞ্চাশভাগ ক্লায়েন্ট সবসময় আপনার উপর অসন্তুষ্ট থাকবে।আপনার কাজ যদি আপনি ঠিকভাবে করেন তাহলে অন্যায়কারী পক্ষের লোকেরা আপনার কুৎসা গাইবে,আর অন্যায়ভাবে করলে হবে তার উল্টোটা।যে কোন ক্ষেত্রেই পুলিশ হচ্ছে সবার প্রিয় “ভিলেইন”।জওহরলাল নেহরু তাঁর একটি পার্লামেন্টারি ভাষণে বলেছিলেন-“একটি জঙ্গী মিছিলে যে লোকটি ইঁট দিয়ে পুলিশের মাথা ফাটালো সে হয়ে যায় নায়ক,মিডিয়াতে তাকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়।কিন্তু যে গরীব কন্সটেবলটি তার কর্তব্য করতে গিয়ে আহত হল-তার খোঁজ কাকপক্ষীতেও নেয়না”।

এর মানে এই নয় যে পুলিশের লোকেরা অন্যায় করেনা।বাকি সব সার্ভিসের মতই এখানেও দুষ্টলোক আছে যারা ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করে।কিন্তু যারা এরকম নয়,তাদের পক্ষেও আপনি কাউকেই পাবেননা।পুলিশ সার্জেন্ট দশটাকা ঘুষ খেলে যতটা শোরগোল হয়,স্যুট-টাই পরা বড় বড় হোয়াইট কলার অপরাধীরা কলমের খোঁচায় দশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করলে তার সিকিভাগও হয়না।বরং কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই হোয়াইট কলার অপরাধীরাই আপনার দিকে আঙ্গুল তুলে বলবে-“পুলিশ খারাপ,বাংলাদেশে পুলিশের কোনও দরকার নেই”।এরকম পরিস্থিতিতে আপনার একমাত্র জবাব হতে পারে কবিগুরুর দু-চরণঃ

“আমি শুনে হাসি,আঁখিজলে ভাসি,এই ছিলো মোর ঘটে,
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ,আমি আজ চোর বটে!”

পুলিশ ক্যাডার প্রথম পছন্দ দেবার আগে উপরের দুলাইন ভালোভাবে মুখস্ত করে নিন, মোটামুটি নিয়মিতই আপনাকে এটি ব্যবহার করতে হবে!

এতক্ষণ অনুজ্জ্বল দিকগুলো মোটামুটি তুলে ধরলাম-এপর্যন্ত যাঁরা পড়েছেন,সম্ভবত আপনাদের পুলিশ হবার শখ মিটে গিয়েছে।দাঁড়ান!খারাপ দিকগুলো যখন জানলেন এবার ভালো দিকগুলোও কিছুটা শুনে তারপর সিদ্ধান্ত নিন,কেমন?

১)সামাজিক নিরাপত্তাঃ আপনি পুলিশে যোগদান করার পর দেখবেন আপনার সব আত্মীয়ের ভেতরেই একটা অন্যরকম আত্মবিশ্বাস কাজ করছে।আমাদের সমাজে দুষ্টলোকের অভাব নেই।এই দুষ্টলোকের দল যদি জানে যে আপনি পুলিশ,আপনার সাথে ঝামেলা করার আগে দশবার ভাববে।বাংলাদেশের মত দেশে আমার মনে হয় এটি একটি বিশাল সুবিধা।আশা করি এমন দিন আসবে যেদিন নিরাপত্তার জন্যে কারো পুলিশ আত্মীয় থাকা লাগবেনা,প্রতিটি মানুষই পুলিশের কাছে যথাযথ নিরাপত্তা পাবে।কিন্তু যতদিন এটি না হচ্ছে,আপনার পুলিশ হওয়া আপনার গোটা পরিবারের জন্যে আশীর্বাদস্বরূপ।

২)আর্থিক নিরাপত্তাঃ আমার পুলিশে যোগদানের পেছনে এটি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে,যে কারণে আমি ফরেন সার্ভিসের পরেই অন্য ক্যাডারের বদলে পুলিশ পছন্দ দিয়েছিলাম।সিভিল সার্ভিসগুলোর মধ্যে পুলিশেই একমাত্র সব বিসিএস অফিসারের পক্ষে ইউএন মিশনে যাওয়া সম্ভব।ইউএন মিশন দুপ্রকারঃ ফর্মড পুলিশ ইউনিট(এফপিইউ) এবং সিভিলিয়ান পুলিশ(সিভপোল)।এফপিইউ মিশনে গেলে এক বৎসরে আপনি আয় করবেন ২০ লক্ষ টাকা,আর সিভপোলে গেলে এর দ্বিগুণ অর্থাৎ ৪০ লক্ষ টাকা।মোটামুটি তিনটি মিশন করার সুযোগ সবাই পায়-এবার হিসেব করুন সম্পূর্ণ হালাল উপায়ে কত টাকা আপনি উপার্জন করতে পারছেন।এক্ষেত্রে আরেকটি তথ্য সংযোজন করা যেতে পারে,বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসের(আর্মি,নেভী,এয়ারফোর্স) সদস্যদের ক্ষেত্রেও মিশন থেকে আয় এতটা নয়।বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারের যে বেতন তাতে পরিবার নিয়ে সম্পূর্ণ স্বাচ্ছন্দে চলা খুবই কঠিন।যে কয়টি ক্যাডার এর ব্যতিক্রম,এর মধ্যে পুলিশ সর্বপ্রথমে আসবে।সৎভাবে এত অল্প সময়ে এই পরিমাণ অর্থ উপার্জনের সুযোগ একমাত্র পুলিশ ক্যাডারেই রয়েছে।মিশন ছাড়াও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যোগ্যতা অনুযায়ী ইউএন এর বিভিন্ন উচ্চপদে নিয়োজিত হন-সেক্ষেত্রে বেতনটা প্রায় অবিশ্বাস্য পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে।

৩)অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধাঃ একজন এএসপি প্রশিক্ষণ শেষ হবার সাথে সাথেই শুধুমাত্র তাঁর জন্যে বরাদ্দ হিসেবে বাড়ী,গাড়ী,ড্রাইভার,বডিগার্ড ইত্যাদি পেয়ে থাকেন যদি তিনি কোন সার্কেল বা জোনে পোস্টিং পান।এছাড়া অন্যান্য যে জায়গাতেই পোস্টিং হোক না কেন,থাকা এবং যাতায়াতের সুবিধা তাঁকে সরকারীভাবে প্রদান করা হয়।চাকুরির শুরু থেকেই এরকম অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা পুলিশ ক্যাডারের একটি অন্যতম ভালো দিক।

৪)বিদেশে প্রশিক্ষণ এবং ভ্রমনঃ পুলিশ ক্যাডারের সদস্যরা আমেরিকার এফবিআই,ইতালির কারাবিনিয়ারি,ইংল্যান্ডের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড,মালয়েশিয়ার রয়াল পুলিশসহ পৃথিবীর মোটামুটি অধিকাংশ উন্নত দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়ে থাকেন।চাকুরির সুবাদে প্রায় প্রতিটি সিনিয়র অফিসারই বিশ্বের প্রধান প্রধান দেশগুলো ভ্রমন করেন।ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত এফবিআই একাডেমীর সরাসরি গ্র্যাজুয়েট হবার সুযোগ বাংলাদেশ পুলিশ ক্যাডারের একটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় দিক।

৫)উচ্চতর পড়াশোনার সুযোগঃ পুলিশ ক্যাডারে নির্বাচিত হবার পর সারদায় এক বৎসর প্রশিক্ষণ শেষে আপনি বেসিক ট্রেনিং সার্টিফিকেটের পাশাপাশি আরেকটি সার্টিফিকেট পাবেনঃরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাস্টার অফ পুলিশ সায়েন্স ডিগ্রির সার্টিফিকেট।কাজেই,আপনি যে বিষয়েই মাস্টার্স করুন না কেন এই ডিগ্রিটি আপনার ক্যারিয়ারে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চাকুরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে এই ডিগ্রিটি আপনার বেশ কাজে আসবে।এছাড়া বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে আপনি বিশ্বের যে কোন দেশে মাস্টার্সের জন্যে যোগ্যতার ভিত্তিতে স্কলারশিপ পাবেন।বিশেষ করে জাপান,অস্ট্রেলিয়া,ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আপনি পড়তে চান,সে পথ আপনার জন্যে খুবই সুগম।আপনি যদি এমনকী পাঁচ বছরের ছুটি নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জন করতে চান সেই সুযোগও আপনাকে পুলিশ বিভাগ করে দেবে।বর্তমানে পুলিশিংকে ধরা হয় একটি আন্তর্জাতিক পেশা হিসেবে,এ কারণে বাইরে পড়াশোনা করাটাকে এ বিভাগে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়।“পুলিশ হওয়া মানেই পড়াশোনার ইতি ঘটা”-প্রচলিত এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

৬)মেয়েদের অগ্রাধিকারঃ পুলিশ সার্ভিসে মেয়েদের বেশ কিছু ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়ে থাকে।যেমনঃইউএন মিশনগুলোতে নারী অফিসাররা পুরুষ অফিসারদের চাইতে আগে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন।পোস্টিং-এর ক্ষেত্রেও নারী পুলিশ অফিসারদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করা হয়।এছাড়া অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে নারী অফিসারদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়।আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারী পুলিশ অফিসারদের জন্যে প্রচুর ঈর্ষনীয় চাকুরি রয়েছে যেগুলো তাঁরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেয়ে থাকেন।

৭)আন্তঃবাহিনী পর্যায়ে কাজ করার সুযোগঃ স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স(SSF) অর্থাৎ ভিআইপিদের(প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী) বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীতে পুলিশ অফিসাররা প্রতিরক্ষা অফিসারদের সাথে একত্রে কাজ করতে পারেন।এর ফলে একদিকে যেমন তাঁদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পায়,অন্যদিকে তাঁরা এই এলিট বাহিনীর বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারেন।এছাড়া অনেকেই জানেন না যে রেপিড একশন ব্যাটালিয়ন(RAB)একটি পুলিশ ইউনিট যার প্রধান এডিশনাল আইজি পদমর্যাদার একজন পুলিশ অফিসার।এখানেও পুলিশ অফিসাররা আন্তঃবাহিনী পর্যায়ে কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন।

৮)পদোন্নতি এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতঃ কিছুদিন আগেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এএসপি থেকে আইজি পদমর্যাদার ৬৭৩টি নতুন পদ সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন যা খুব শিঘ্রি কার্যকর হবার পথে রয়েছে।এছাড়া “পুলিশ ন্যাশনাল ব্যুরো ফর কাউন্টার টেররিজম”,”পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন” ইত্যাদি নতুন নতুন পুলিশ ইউনিটও সৃষ্টি য়েছে।আইজি পদমর্যাদার দশটি পদ সৃষ্টি হওয়া, সেনা জেনারেলের পদমর্যাদার “চিফ অফ পুলিশ” পদ সৃষ্টি-এগুলোও বর্তমানে সময়ের ব্যাপার মাত্র।বাংলাদেশের পুলিশের জনবল প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল,তাই সরকার এই সার্ভিসের প্রসারণ এবং উন্নতিতে বদ্ধপরিকর।এ কারণে পুলিশ সার্ভিস ক্যারিয়ার হিসেবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি পথ।

৯)অন্যত্র কাজ করার সুযোগঃ পুলিশে চাকুরি করেন বলে যে অন্য কোথাও আপনি কাজ করতে পারবেননা এটিও একটি ভ্রান্ত ধারণা।বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে অন্যান্য ক্যাডারের মত আপনি যে কোন মন্ত্রনালয়ে ডেপুটেশনে কাজ করতে পারবেন।উদাহরণস্বরূপ,বর্তমানে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে ডেপুটি হাই কমিশনার হিসেবে একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার কর্মরত রয়েছেন।এছাড়া মরক্কোর এম্বাসাডর হিসেবে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ স্যার কাজ করছেন।এই অল্প কদিন আগেই পার্বত্য চট্যগ্রাম বিষয়ক সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এডিশনাল আইজিপি নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা স্যার।পুলিশ সার্ভিসে দশ বছর চাকুরি করার পর আপনি যদি দেখেন যে এ সার্ভিস আপনার ভালো লাগছেনা,সেক্ষেত্রে ৩০% অন্য সার্ভিসের কোটায় আপনি পুলিশ থেকে সেক্রেটারিয়েটে ডেপুটি সেক্রেটারি হিসেবে স্থায়ীভাবে চলে যেতে পারবেন।সেক্ষেত্রে আপনার সিরিয়াল হবে পিএসসির সিরিয়াল অনুযায়ী-আপনাকে অন্য ক্যাডারের আপনার ব্যাচমেটদের সবার পেছনে পড়তে হবেনা।এছাড়া এনএসআই,পাসপোর্ট অথরিটি,মাদক অধিদপ্তর ইত্যাদি জায়গায় আপনি উচ্চপদে কাজ করতে পারবেন।আর দেশের বাইরে ডেপুটেশনে আপনি ইন্টারপোল,ইউএন পুলিশ,ইউএন হেডকোয়ার্টার্স ইত্যাদি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন।

১০)বৈচিত্রময় কাজের সুযোগঃ মূলধারার পুলিশিং যদি আপনার ভালো না লাগে সেক্ষেত্রে পুলিশে বিভিন্ন বিশেষায়িত ইউনিট রয়েছে যেখানে আপনি কাজ করতে পারবেন।যেমনঃডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ,স্পেশাল ব্রাঞ্চ,সিআইডি ইত্যাদি।পুলিশের বিশেষায়িত কমান্ডো ইউনিট সোয়াট(SWAT-Special Weapond And Tactics), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন(সেনাবাহিনীর ইনফ্যান্ট্রি ইউনিটের আদলে গড়ে তোলা বিশেষ পুলিশ বাহিনী),রেলওয়ে পুলিশ,টুরিজম পুলিশ প্রভৃতি বিচিত্র ধরণের পুলিশ ইউনিটে কাজ করার সুযোগ আপনাকে একঘেয়েমি থেকে রক্ষা করবে।


১১) অবাধ বিচরণঃ
একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে বস্তি থেকে রাজপ্রাসাদ-সব জায়গায় আপনার অবাধ বিচরণের সুযোগ রয়েছে।আপনার উপর যে ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে তা দিয়ে আপনি সমাজের তৃণমূল থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ নাগরিক-সবারই সরাসরি উপকার করতে পারবেন।আপনার সৎকর্মের সুফল দেশের জনগন তাৎক্ষণিকভাবে পাবে-যা আপনাকে অপরিসীম মানসিক তৃপ্তি এবং সম্মান এনে দেবে।

১২) গৌরবময় ঐতিহ্যঃ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বপ্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে।মুক্তিযুদ্ধে প্রায় সতের হাজার পুলিশ অফিসার বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন।যুদ্ধের সময় থানার যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের কাজে ব্যবহার করেন-যা মুক্তিযুদ্ধের গতিকে দারুণভাবে ত্বরান্বিত করেছিলো।প্রায় ১২০০ পুলিশ সদস্য মহান মুক্তিসংগ্রামে শহীদ হন।পুলিশ বাহিনীর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে এবছর বাংলাদেশ সরকার এ বাহিনীকে “স্বাধীনতা পদকে” ভূষিত করেছে।

দেশের ভেতরে পুলিশদের নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয় এ কারণে হয়তো সব সময় জনগণের প্রত্যাশিত মানের সেবা আমরা দিতে পারিনা।আপনারা হয়তো অনেকেই এটি জানলে অবাক হবেন যে ইউএন পুলিশে সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংখ্যাক সদস্য কাজ করেন।বাংলাদেশ পুলিশের পেশাগত দক্ষতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের জন্যে প্রভূত সম্মান বয়ে এনেছে।

উপসংহারঃ দেশের মাটিতে আড়াইশ বছরের ঔপনিবেশিক প্রথার উপস্থিতি এবং নানাবিধ সীমাবদ্ধতার কারণে পুলিশ কোন কোন ক্ষেত্রে আশানুরূপ দক্ষতা প্রদর্শনে সক্ষম হচ্ছেনা।পুলিশের ভূমিকাও বিভিন্ন কারণে হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ।বাংলাদেশের একজন সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে পুলিশ বাহিনীর এই সীমাবদ্ধতাগুলো দূরীভূত করবার দায়িত্ব আপনার কাঁধেও বর্তায়।কাজেই,অন্ধভাবে বিষেদগার না করে এই বাহিনীতে যোগদান করুন।এই পুলিশ বাহিনী আপনারই বাহিনী,এর কোনকিছু অপছন্দ হলে তার পরিবর্তন আপনিই আনতে পারবেন।পুলিশ সার্ভিসে আপনার আগমন স্বার্থক হোক।

স্বাগতম!

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

১) লেখাটি যদিও বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্যে লেখা হয়েছিল, তবে পুলিশ জীবনের মোটামুটি চিত্র এতে তুলে ধরতে চেষ্টা চেষ্টা করেছিলাম। সচলে যেহেতু বেশ কিছু বিসিএস পরীক্ষায় আগ্রহী ব্যক্তি নিয়মিতই আসা যাওয়া করেন ( এঁদের মধ্যে অসাধারণ কয়েকজন নিয়মিত ব্লগারও আছেন, নাম উল্লেখ করছিনা), তাই লেখার ঢং পরিবর্তন করলাম না। উল্লেখ্য, এই লেখাটি ফেসবুক ছাড়া কোন পাবলিক ব্লগে প্রকাশিত হয়নি।

২) এই লেখাটি কোনভাবেই পুলিশের দুর্নীতি বা অপকর্মের সাফাই গায় না। একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে দুর্নীতিবাজ পুলিশ বা “রক্ষক হয়েও ভক্ষক” জাতীয় “প্রাণী”-দের আমি ক্রিমিনালদের চাইতেও বেশি অপছন্দ করি। তবে পুরোপুরি নিরপেক্ষ বলে এটিকে দাবী করছিনা, নিজের পেশার প্রতি কিছুটা পক্ষপাতিত্ব হয়ত অজান্তেই চলে এসেছে।

৩)লেখাটির যে কোন গঠনমূলক সমালোচনা সাদরে আমন্ত্রিত

মাসরুফ হোসেন
সহকারী পুলিশ কমিশনার
ক্যান্টনমেন্ট জোন
গুলশান অপরাধ বিভাগ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ
০১৭১৩৩৯৮৩৪২


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

মাসরুফ ভাই,

অনেক ধন্যবাদ এত চমৎকার করে গুছিয়ে লেখার জন্য। যাক, সচল পরিবার তাহলে এখন থেকে একজন সৎ পুলিশ অফিসারের নিয়মিত সেবা পাবে (নিয়মিত লেখাকেও একপ্রকার সেবা হিসাবে ধরছি) দেঁতো হাসি

নির্ঝরা শ্রাবণ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার ক্ষুদ্র সামর্থ দিয়ে যেটুকু পারি চেষ্টা করব, ভাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লেখা। আরো লিখুন।

একটা কথা, কোনো সরকারী চাকুরে গণমাধ্যমে লেখালিখি করতে পারেন কিনা, সে বিষয়ক কিছু আইন/সীমাবদ্ধতা আছে শুনেছিলাম, আশা করে আপনি সেটা জেনে-বুঝেই লিখছেন।

---দিফিও

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনার সচেতনতার জন্যে, ভাই।

সাম্য এর ছবি

হাততালি

ইউএন মিশনে বেশ ভাল রোজগার হওয়ার পরেও কেন পুলিশ বাহিনীতে এত দুর্নীতির খবর শোনা যায়?

--------------------------------
বানান ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন!

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই, অভাবের শেষ আছে কিন্তু লোভের কি শেষ আছে? দুর্নীতি পুলিশ বাহিনী শুধু নয়, গোটা সমাজের একটা ক্যানসারের মত।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক হাততালি

আমার বাবা পুলিশ অফিসার ছিলো বলেই হয়তো সমাজের অন্য দশজন যেভাবে দেখে আমি ঠিক সেইভাবে পুলিশকে দেখিনা। অর্থাৎ পুলিশ মানেই খারাপ এমন একটা ধ্যান ধারণা অামাদের সমাজে সবার মনের মাঝেই আছে। কিন্তু আমি আমার বাবাকে দেখেছি, বাবার পাশে আরো অসংখ্য সৎ অফিসার কে দেখেছি। তাই আমি কখনো মোটা দাগে বলতে পারিনা বাংলাদেশের পুলিশ মানেই খারাপ।

পুলিশের জীবন যে কত কষ্টের-কতটা ত্যাগের সেটা পুলিশ পরিবার আর পুলিশে চাকরি করে এমন মানুষ ছাড়া কারো পক্ষে বুঝতে পারা কোনদিন ই সম্ভব না। দিন নেই-রাত নেই, সময় নেই-অসময় নেই, ঈদ নেই-পূজো নেই, ব্যাক্তিগত জীবন নেই এখানে। এর প্রতিদানে যে সম্মানি রাষ্ট্র দেয় সেটা রীতিমতো অন্যায়। যেমন একজন ট্রাফিক পুলিশ গ্রীষ্ম-বর্ষায় সারাদিন রাস্তায় যেভাবে অমানবিক পন্থায়(বসায় জায়গা নেই, বাথরুম নেই, খাওয়ার ব্যবস্থা নেই) দায়িত্ব পালন করে তার প্রতিদানে সম্মানি কতটুকু পায়? দৈনিক ১০০টাকাও পায় না আমার জানা মতে। তাই অনেকটা বাধ্যতা মূলকভাবেই ঘুষ খেতে হয়। এর উপর রাজনৈতিক চাপ, নিজের ডিপার্টমেন্টের বড় স্যারদের চাপ সহ নানান প্রকার চাপে সৎ ভাবে টিকে থাকা সত্যিই দুরুহ।

সৎ রাজনীতিক শাসক আর শাসন ব্যবস্থা ছাড়া পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে সততার উপর দাঁড় করানো সম্ভব না আমার দৃষ্টিতে।

মাসুদ সজীব

নির্ঝর অলয় এর ছবি

"পুলিশের জীবন যে কত কষ্টের-কতটা ত্যাগের সেটা পুলিশ পরিবার আর পুলিশে চাকরি করে এমন মানুষ ছাড়া কারো পক্ষে বুঝতে পারা কোনদিন ই সম্ভব না। দিন নেই-রাত নেই, সময় নেই-অসময় নেই, ঈদ নেই-পূজো নেই, ব্যাক্তিগত জীবন নেই এখানে।"

আচ্ছা ভাই, কোন রোটা থাকে না? মানে সবাইকেই কি সব সময় 'অন কল' থাকতে হয়? এটা হওয়া তো উচিত নয়। আমি তো জানি রোটা থাকে। যেমন সায়েদাবাদে একবার আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে হাতে-পায়ে ধরেও কোন সি,এন,জি-চালককে রাজি করাতে না পেরে শেষে ৪-৫ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে অনুরোধ করলাম। সবাই কিন্তু বললেন, "এখন আমি ডিউটিতে নেই" হাসি - কাজেই পুলিশদেরও ডাক্তার-নার্সদের মত রোস্টার থাকার কথা। প্রতিদিনই সবাই ২৪ ঘণ্টা অন কল অবশ্যই থাকে না।

সি,এন,জি-চালকদের এই দৌরাত্ম্য চলছিল ঠিক সেন্ট্রাল ট্র্যাফিক কনট্রোল রুমের সামনেই, অজস্র অন-ডিউটি এবং অফ-ডিউটি অফিসারের নাকের ডগাতেই! হাসি

সুলিখিত প্রবন্ধ।

অতিথি লেখক এর ছবি

অবশ্যই পুলিশের নিদিষ্ট ডিউটি সময় আছে, কিন্তু সেটা অন্য সবার মতো নয়। বিষয়টা এমন, একজন পুলিশ অফিসার ডিউটি শেষে বাসায় আসলো সাথে সাথে খবর এসেছে অমুক জায়গায় একটা সমস্যা হয়েছে আপনাকে আসতে হবে। তখন তাকে আবার ছুটতে হয়, অন ডিউটি আর অফ ডিউটি বলে তখন কিছু থাকে না। এবং এটি যে মাঝে মধ্যে হয় এমন না, বরং এটি খুব নিয়মিত হয়। আমি হাজার বার দেখেছি এমন, তাই বলেছি সময় নেই-অসময় নেই। এমন ও হয়েছে আমার বাবাকে ঈদের দিনও ছুটতে হয়েছে আসামি ধরতে।

আর সিএনজির যে প্রসঙ্গ নিয়ে আসলেন অর্থাৎ কর্তব্যে অনীহা কিংবা অসততা এগুলো তো আমি অস্বীকার করছি না, এই পোষ্টের লেখকও নয়। অসংখ্য পুলিশ অসৎ কাজে জড়িত, দায়িত্বে সততা নেই অসংখ্য জনের। কিন্তু ভালো ও আছে। ভালো নিয়ে কতজন লেখে, কতজন প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়?

মাসুদ সজীব

নির্ঝর অলয় এর ছবি

আমি কি সেসব বলেছি?
আমি নিজে পেশাগত জীবনে এসবই ফেস করি। হাসি
আপনি প্রশ্নটা ঠিক ধরতে পারেন নি। আমি বলতে চাইছি যে, ঈদের দিনে নির্দিষ্ট রোস্টার থাকে না?

আমি কিন্তু কর্তব্যে অনীহার কথা বলিনি। তাদের সে সময় ডিউটি ছিল না বলেই ধরে নিয়েছি সরল মনে। হাসি অনীহা ছিল হয়ত তখনকার কর্তব্যরত অফিসারের যাঁকে দেখিই নি! আর বাঙালির ডিউটি আওয়ার সম্পর্কে এখনো খুব কমই ধারণা আছে।

ঈদের সময় আপনার বাবাকে ছুটতে দেখেছেন, এর থেকে ধরে নেয়া যায় যে, উনি খুবই দায়িত্বশীল পদে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে যদি থানার সব পুলিশ গিয়ে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে যে, ডিউটির কোন বালাই নেই। সেটা হয়েছে কি? হবার কথা না।

যতদূর জানি, ৭ দিন ২৪ ঘণ্টার যেসব সার্ভিস আছে , যেমন হাসপাতাল, থানা বা পাওয়ার প্ল্যান্ট- সবই রোটেশনের ভিত্তিতে চলে। জনস্বল্পতার জন্য কোথাও কোথাও খুব বেশি কাজের চাপ থাকে, কিন্তু সেটা নিয়ম না।

খারাপ নিয়েও কিন্তু খুব বেশি লেখা হয় না! এমন বহু ঘটনার সাক্ষী যা কোন পত্রিকায় আসে নি। মন খারাপ
তবে সেসব নিয়ে আলোচনার কোন আগ্রহ নেই। শুধু ডিউটি রোস্টারের টিপিক্যাল প্যাটার্নটা জানতে চাই। মাসে ৩০ দিনই নিশ্চয়ই একজন অফিসার রাতে অন কল থাকে না? নিশ্চয়ই সেটার ভাগ আছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

১) পুলিশ আইন অনুযায়ী যে কোন পুলিশ অফিসার যে কোন সময়ে কর্তব্যের ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য।ছুটিতে এলাকার বাইরে না থাকলে " আমার ওইদিন ডিউটি ছিলোনা" বলে পার পাবার কোন সুযোগ নেই। আর ছুটি পুলিশের চাকুরিতে মরুভূমিতে জলের মতই দুষ্প্রাপ্য, বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের অফিসারদের জন্যে। উপরে যেমন বলছি, ১২০০ জনে একজন পুলিশ রেশিও- এটা পৃথিবীর সবচাইতে কম পুলিশ রেশিওর উদাহরণগুলোর অন্যতম। লিখিত ডিউটি রোস্টার দেখে পুলিশের কাজের ধরণ বুঝতে যাওয়াটা অনেকটা বই পড়ে ড্রাইভিং শেখার মতই হবে। মিরপুরে পাবলিক অ্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পুলিশ সদস্যদের সাথে কথা বললে হয়ত বাস্তব কিছু ধারণা পাবেন।

২) "খারাপ নিয়েও কিন্তু খুব বেশি লেখা হয় না! "

আপনার এই মন্তব্য নিয়ে আর কথা না বলি। পুলিশ নিয়ে প্রতিদিন পত্রিকায় কি লেখা হয় এটা পাঠকরাই ভালো বলতে পারবেন।

নির্ঝর অলয় এর ছবি

ধন্যবাদ। তবে আপনার কথার পেছনে রেফারেন্স দিতে পারবেন কি? কারণ আমি যতদূর জানি কর্তব্যের সুস্পষ্ট ভাগ থাকে। প্রতিদিনই যেকোন সময় কর্তব্যের ডাক আসতে পারে, দিনের পর দিন - বছরের পর বছর- এটার রেফারেন্স পেলে ভালো হয়।

আপনার এই মন্তব্য নিয়ে আর কথা না বলি। পুলিশ নিয়ে প্রতিদিন পত্রিকায় কি লেখা হয় এটা পাঠকরাই ভালো বলতে পারবেন।

ভাই আমি মন্তব্য কমই করি। কথা না বললে সেটা আপনার ইচ্ছে! হাসি কোন পত্রিকায় এটা আসে নি- কীভাবে বিনা দোষে আমার বন্ধু আশিস আড়াই মাস হাজত খেটে বিসি,এস এর রিটেন দিতে পারে নি। কোন পত্রিকায় এটা আসে নি কীভাবে বিনা মামলায় সন্দেহের ভিত্তিতে নির্দোষ ছাত্রদের ওপর গ্রেফতার-নির্যাতন চালানো যায়! কোন পত্রিকায় আসে নি! ঘটনার সময়টা ২০১০ এবং ২০১১! আমি কিন্তু আক্ষেপ করছি না। অভিযোগও করি নি। অজস্র অপকীর্তির কথা পত্রিকায় আসে না- সেই নির্মম সত্যটাই বলেছি। নানা রাষ্ট্রীয় কাজে ওনেক পুলিশ যেটা করছে- সে নিয়েও অভিযোগ করি নি। ছোট ভাইয়ের নিয়োগের সময় যেটা হল সেটা আর না বলি! পত্রিকায় সব কিছু আসে না! আসা সম্ভব না।

ফেসবুকে বি,সি,এস প্রার্থীদের বিভিন্ন পেজে একটু দেখবেন- তাঁদের সাথে কী করা হয়েছে- সেগুলোও পেপারে আসে নি! আপনাকে আহত করা আমার উদ্দেশ্য না। সোজা পয়েন্ট- রোস্টার হয় না- এটা আমাকে একটু রেফারেন্স সহ বলেন দয়া করে!

অতিথি লেখক এর ছবি

১) ডিউটি রোস্টার হয়না এটা আমি বলিনি, বলেছি রোস্টারের বাইরেও নিয়মিতভাবেই অতিরিক্ত ডিউটির কথা। "রেফারেন্স" চাইলে যদি প্রথাগত এ্যাকাডেমিক জার্নাল চান সেক্ষেত্রে দিতে পারবোনা। বাংলাদেশের একজন পুলিশ সদস্য গড়ে কত ঘন্টা ডিউটি করে এটা নিয়ে এ্যাকাডেমিক গবেষণা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই ( এটি আমার সীমাবদ্ধতা বলে স্বীকার করে নিচ্ছি)। তবে "প্র্যাকটিকাল এক্সপেরিয়েন্স" যদি চান আমার সাথে যোগাযোগ করুন- মিরপুরে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট ( ভূতপূর্ব নাম দাঙ্গা পুলিশ) ব্যারাকে আপনাকে একদিন নিয়ে যাবো। পুলিশ রেগুলেশন্স অনুযায়ী কতক্ষণ ডিউটি করার কথা আর পুলিশ সদস্যরা কতক্ষণ বেশি করে- এর একটা চমৎকার চিত্র পাবেন। আমার নম্বর ০১৭১৩৩৯৮৩৪২।

২) এটা ঠিক বাংলাদেশ পুলিশের অজস্র অপকর্মের কথা হয়তো পত্রিকায় আসেনা। কিন্তু সবগুলো সরকারী-বেসরকারী ডিপার্টমেন্ট মিলিয়ে যে বিভাগটির অপকর্মের কথা সবচাইতে বেশি পত্রিকায় আসে সেটি কিন্তু ওই পুলিশ বিভাগই। এটার পেছনেও এ্যাকাডেমিক রেফারেন্স দিতে পারবোনা , সম্বল প্রতিদিনের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস। মিডিয়াতে আরো একটা জিনিস আসেনা, সেটা হচ্ছে কি পরিমাণ পুলিশ সদস্য প্রতিবছর নানারকম সাজা ভোগ করে কৃতকর্মের দায় মাথায় নিয়ে।

৩) ফেসবুকের বিসিএস প্রার্থীদের সবচাইতে বড় দুটো পেইজে এই অধম ২০১০ সাল থেকেই ( চাকুরিতে জয়েনের সময়) অংশগ্রহণ ও প্রস্তুতি নির্দেশনা দিয়ে আসছি। তাঁদের কারো কারো সাথে যা করা হয়েছে ( ভেরিফিকেশনের সময় উৎকোচ দাবী) সেগুলো সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। মোদ্দাকথা, জাতি হিসেবে আমাদের প্রত্যেকটা সেক্টর যেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত, সেখানে শুধুমাত্র আলাদা করে পুলিশকে ফেরেশতাতূল্য আশা করাটা প্রকারান্তরে নিজের সাথে প্রতারণার সামিল। কি পরিমাণ সীমাবদ্ধতা নিয়ে বাংলাদেশের পুলিশকে কাজ করতে হয় সেটা যদি জনগণ জানত তাহলে পুলিশকে হয়ত সেভাবে দোষারোপ করা হত না। তবে এই সীমাবদ্ধতাগুলোর উপস্থিতিতে আমরা থেমে নেই, এক পা দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছি হোঁচট খেতে খেতেই।

আমাদের সঙ্গে থাকুন!

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

মাসুদ সজীব

নির্ঝর অলয় এর ছবি

ধন্যবাদ।
না আপনি তো বলেন নি। কিন্তু মন্তব্যে বলা হল যে, একেবারেই ব্যক্তিগত জীবন থাকে না, যখন-তখন ডাক সারা বছরই- এরকম তো হবার কথা না। আপনি সঠিকটা জানেন, আমিও জানি! মিলিয়ে নেবার জন্যই জিজ্ঞাসা! হাসি আমরা যারা অভ্যস্ত তারা জানি যে, রোস্টার এবং রোস্টারের বাইরের কাজ আসলে কী ও কতখানি। অন্য লোকেরা স্বভাবতই অতিরঞ্জন করে ফেলে।

সুন্দর পোস্ট।

অতিথি লেখক এর ছবি

মাসুদ সজীব ভাই,

পুলিশ জীবনের দুঃখকষ্ট দেখেই যখন বড় হয়েছেন- আপনাকে আর নতুন কি বলব ভাই! আমাদের জন্যে দোয়া করবেন যেন একটি সত্যিকারের সেবামুখী পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে পারি।

অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।

Akash এর ছবি

Thank you for writing something on police. However, most of the information are given in this write up are misleading. The role of police is as same in the democratic regime as it was during the British or autocratic or military regime. The role of police has not been changed at all. You can say that the dimension of police torture has been changed. Extra judicial killing, kidnapping and such other activities were never been at present scale. You need to point out all these issues if you really want to address the image issue of Bangladesh police.

Further, for foreign training, there exist thousands of anomalies. Only the politically influential officers or officers close to high rank police personnel get the opportunity for foreign training. It is never awarded on merit or performance basis.

Moreover, the transport facilities for police officers working in non-crime units are very poor and they don’t get individual transport facilities. The drop and pick-up transport service is very common to any government job in Dhaka.

Anyway, thank you for your nice written article. Hope to see you write the facts rather than fictions in future.

অতিথি লেখক এর ছবি

জনাব আকাশ,

১) ট্রান্সপোর্ট ফ্যাসিলিটির ক্ষেত্রে আমার লেখাটি আরেকবার পড়ুনঃ আমি লিখেছি সার্কেল বা জোনে পোস্টিং-এর কথা। এগুলো দুটোই ক্রাইম ডিভিশন ; নন-ক্রাইম ডিভিশনে ইনডিভিজুয়াল গাড়ি সব সময় পাওয়া যায় আমি এধরণের তথ্য দিইনি। তবে এটুকু বলতে পারি, নন-ক্রাইম ডিভিশন গুলোতেও গাড়ির অবস্থা বাংলাদেশের বাকি সরকারী ডিপার্টমেন্টগুলোর চাইতে ভালো ( প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল যদিও)।গাড়ী শেয়ার করা সরকারী চাকুরিতে কমন ঘটনা এতে দ্বিমত নেই, বাংলাদেশ পুলিশ তো সরকারী চাকুরি-ই!

২) আপনি যে “এ্যানোমালি” গুলোর কথা বললেন সেগুলো শুধু বাংলাদেশ পুলিশ নয়, এদেশের প্রত্যেকটা সরকারী বিভাগের জন্যে প্রযোজ্য হতে পারে( ডিফেন্স বাদে)।তবে আমি অনুভব করি, অবস্থা আগের চাইতে অনেক ভালো। আপনি পুলিশে কর্মরত আছেন কিনা জানিনা, তবে বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান সময়ে থেকে আমার কাছে এরকমটিই মনে হয়েছে ( আপনি দ্বিমত করতে পারেন)।

৩) উপরে যে পয়েন্টগুলো লিখেছি সেগুলো কিছুটা পরিমার্জিত হতে পারে ( সরকারী নীতিমালার কারণে), তবে কোনটিই “ফিকশন” নয়।

পরিশেষে আপনার মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।

মাসরুফ হোসেন

মেঘলা মানুষ এর ছবি

লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো। যেকারোরই বিসিসএস এ চয়েস দেবার আগে মুদ্রার দুদিকের সাথেই পরিচয় থাকা ভালো।
আর, সত্যি বলতে অনেক নতুন কিছু জানলাম।

শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

বিসিএস পরীক্ষা দিতে চাইলে আমাকে জানিয়েন, প্রস্তুতি নিয়ে বেশ কিছু আর্টিকেল লিখেছিলাম- অনেকেই নাকি ওগুলো পড়ে কিছুটা লাভবান হয়েছে। ্মেইল এ্যাড্রেস দিলেই হবে, পঠিয়ে দেব।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

চমৎকার একটা পর্যালোচনা লিখেছেন। এভাবে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ একসাথে দেখার সুযোগ খুব কমই হয়েছে। পুলিশের চাকরী সম্পর্কে একটা ওভারঅল ধারণা পেলাম।

মানুষের কাছে আসার জন্য এইসব উদ্যোগ নেয়ায় আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার প্রতিও কৃতজ্ঞতা রইলো, ভাই!

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

মাসরুফ ভাই, অনেক কিছু জানলাম, আমরা সাদা চোখে পুলিশকে যেভাবে দেখতে অভ্যস্থ্, আপনার মতো আরও কিছু পুলিশ অফিসার পেলে, সেই অভস্থতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারতাম।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

রনি ভাই,

এই অভ্যস্ততার বলয় থেকে আমরাও বেরিয়ে আসতে চাইছি। আমাদের ট্যাক্সপেয়াররা আরো ভালো সার্ভিস ডিজার্ভ করেন বলেই আমি মনে করি। আমাদের সঙ্গে থাকুন!

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

ধরেন প্রতি জেলায় আপনার মত সৎ মেধাবী শুভবোধসম্পন্ন পুলিশ থাকলো, তাহলে দেশটা কেমন স্বর্গ হয়ে যাইতো স্বপ্ন দেখতেছি!


_____________________
Give Her Freedom!

নির্ঝর অলয় এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার চাইতে হাজারগুণে দক্ষ অফিসার আছেন, এমনকী আমার ব্যাচমেটদের মধ্যেও আছেন- তাঁরা সচলে লেখেন না বলে হয়ত এখনো আপনাদের সাথে পরিচয় হয়নি। আপনার প্রতিও শুভকামনা রইলো ভাই!

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

সাফি এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক কিছু জানা গেল; ধন্যবাদ।

সদস্যনাম: Jon Rulz

স্যাম এর ছবি

পরপর দুটো লেখাই পড়লাম, দারুণ। চলুক।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ স্যাম দা!!!

হাসিব এর ছবি

পুলিশ সার্জেন্ট দশটাকা ঘুষ খেলে যতটা শোরগোল হয়,স্যুট-টাই পরা বড় বড় হোয়াইট কলার অপরাধীরা কলমের খোঁচায় দশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করলে তার সিকিভাগও হয়না।

এরকমটাই হওয়া উচিৎ নয় কি? আর্মি/পুলিশ, শিক্ষক, ডাক্তার - এরা অন্য পেশার মতো না। এদের পেশা অন্য পেশা থেকে অতিরিক্ত কিছু দাবি করে। এই কারণে একজন পুলিশ, শিক্ষক, ডাক্তার এদের পেশার লোকেরা চাকুরিজীবি আমলা থেকে ভিন্ন।

অতিথি লেখক এর ছবি

না ভাই, আমার মনে হয়না এরকমটি হওয়া উচিত। হোয়াইট কলার ক্রিমিনালরা ওই দশ টাকা ঘুষ খাওয়া সার্জেন্টদের চাইতে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর, অনেক বেশি ক্ষতিকারক। অপরাধের মাত্রানুযায়ী বিচার হওয়া উচিত, বৈষম্য নয় ( আমি বলছিনা পুলিশের অপরাধ এড়িয়ে গিয়ে ওদেরকে ধরতে- দুটোরই সমানভাবে বিচার হওয়া দরকার)।

আপনার সাথে এই বিষয়ে আমি একমত যে এই পেশাগুলো অন্য পেশার মত নয়। উন্নত দেশে এই তিনটি পেশাকে ওরা টাকাপয়সা/সম্মান/ক্ষমতা ইত্যাদি দিয়ে সন্তুষ্ট রাখে, যেন এদের দুর্নীতির "অপর্চুনিটি কস্ট" খুব বেশি হয়।এ কারণে এই তিন পেশার লোক দুর্নীতি করার আগে দশবার ভাবে।

আর আমাদের দেশে সবচাইতে অবহেলিত তিনটি পেশা হচ্ছে ডাক্তার, পুলিশ আর শিক্ষক।দয়া করে একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন একজন কন্সটেবল কয় টাকা বেতন পায়, কিভাবে তার দিন কাটে, সে কত ঘন্টা ডিউটি করে।

বাংলাদেশের পুলিশের পেছনেও উন্নত দেশের মত একই রকমের বিনিয়োগ করুন, ফলাফল দেখে নিজেই চমকে উঠবেন। উদাহরণঃ দেশে যেই পুলিশের এত বদনাম, ইউ এন মিশনে সেই পুলিশকে নেবার জন্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বের সবগুলো দেশের মধ্যে পুলিশ কন্ট্রিবিউটিং অর্গানাইজেশন হিসেবে প্রথম তিনের ভেতরে আছে।

ধন্যবাদ।

rubai এর ছবি

পুলিশদের সুযোগ সুবিধাও আমলাদের ফাইল ের ঘেরাটোপে বন্দী পরে আছে।
বুঝিনা সরকার কেন এইসব সেবাধর্মী পেশার সুযোগ সুবিধা বাড়ায় না।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সাথে আছি। আপনিও সচল থাকুন। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, ভাই!

জাদুকর এর ছবি

মাশরুফ ভাই,

১) পুলিশ চাকুরীজীবনে ঢাকায় পোস্টিং/ ঢাকায় থাকার সম্ভবনা কত ?
২) ৩০% কোটায় ডেপুটি সেক্রেটারী - কথাটির মানে কি? আমি যদি পুলিশে ১০ বছর থাকি পরবর্তীতে কি যে কোন মিনিস্ট্রিতে চাকুরী করার যোগ্যতা অর্জন করবো ??
৩) আর ১ বছরের ট্রেনিং পিরিয়ডের শিডিউলটা সম্বন্ধে একটু আইডিয়া দেয়া যায়?? (মানে- প্রতিদিনের শিডিউল, ছুটি ছাটা ইত্যাদি ...)

অতিথি লেখক এর ছবি

১) পুরো চাকুরিজীবন ঢাকায় কাটাতে পারবেন না, আমি নিজেই শুরু করছি চুয়াডাঙ্গাতে। " সারাজীবন ঢাকায় থাকব" এরকম ইচ্ছে থাকলে পুলিশে না আসাই উত্তম। তবে হ্যাঁ, ঢাকায় প্রচুর পুলিশ ইউনিট রয়েছে, চাইলে দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকা সম্ভব।

২) ডেপুটি সেক্রেটারি পর্যায়ের পোস্টের ৭০ ভাগ আসে এ্যাডমিন ক্যাডার থেকে, বাকি ত্রিশ ভাগ বাকি সব বিভাগের জন্যে উন্মুক্ত। এই কোটায় আপনি অন্য যে কোন সা্ভিস থেকে ডেপুটি সেক্রেটারি হিসেবে পার্মানেন্টভাবে সুইচ করতে পারবেন ও পরব্তীতে সচিব প্যন্ত হতে পারবেন। বহু পুলশ অফিসার ছেন যারা এভাবে বছর দশেক পুলিশে চাকুরি করার পরে ডিএস পুলে সুইচ করে সচিব হয়ে রিটায়ার করছেন।

৩) নব্যনির্বাচিত এএসপিদের নিয়ে "সারভাইভং সারদা" নামে একটা লেখ লিখেছিলাম, খুঁজে পাচ্ছিনা। ভোর ৫ টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত প্রতিদিন-এভাবে সপ্তাহে ৬ দিন আপনাকে ট্রেনিং এ্যাকটিভিটিতে ব্যস্ত রাখা হবে, ওই এক ছর ছুটি নেই বললেই চলে( সব মিলিয়ে এক মাসের মত)। পিটি, প্যারেড, শুটিং, হর্স রাইডিং, অবস্টাকল কো্স ইত্যাদি শারীরিক প্রশিক্ষণের পাশাপশি আপনাকে পুলিশ সায়েন্সের উপর ১ বছরের মাস্টার্স করতে হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরু গুরু
ছোটবেলায় স্কুলে আসা যাওয়ার পথে সদ্য জেলা শহরে উন্নীত গাইবান্ধার পুলিশ সুপারের কার্যালয় পার হতে হতো। সেই দপ্তরের বাইরের ঘরে একটি বাঁধানো কাগজে লেখা বা ছাপানো POLICE শব্দের প্রতিটি অক্ষরের সম্প্রসারিত (Elaborate) শব্দগুলো প্রতিদিনই পড়তাম। তা ছিলো এমন -

P - Polite (ভদ্র)
O - Obedient (অনুগত)
L - Loyal (বিশ্বস্ত)
I - Intelligent (বুদ্ধিমান)
C - Courageous (সাহসী)
E - Efficient (দক্ষ)
তো এটা প্রতিদিন পড়তে পড়তে মাথায় গেঁথে গেলো। বন্ধুদের সাথে এটা নিয়ে একদিন কথা বলার সময় একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলো যে, বাংলায় 'পুলিশ' শব্দের অর্থ আমি বা অন্য কেউ জানি কি না। আমরা 'না' বলতেই সে আমাদেরকে শিখিয়ে দিলো যা, তা এমন -

পু এর 'প' মানে পাজী
লি এর 'ল' মানে লুচ্চা
শ এর 'শ' মানে শয়তান

তারমানে 'পুলিশ' হলো গিয়ে পাজী, লুচ্চা আর শয়তান (!) অনেক হাসলাম আমরা সবাই। খুঁজতে লাগলাম কে পুলিশের সন্তান। সেই সন্তানকে তার বাবার বিশেষনগুলো জানানোর আগে আমাদের শান্তি হছিলো না। কিন্তু, বন্ধুদের কারো নামে ঐ অক্ষরগুলো আছে কিনা খুঁজতে যেয়ে আমি অবাক, লজ্জিত, ভীত হয়ে খেয়াল করলাম আমার নিজের ডাকনাম এ ঐ তিনটি অক্ষরই আছে এবং তা একই ধারাবাহিকতায়। আমার নাম 'পলাশ'

অনেক কষ্ট হলো, লজ্জা হলো, বাবা-মা এর উপর অভিমান হলো এমন নাম রাখার জন্য। নিজের ব্যপারে একসময় তা মিলিয়েও গেলো, কারণ আমি অমন বিশেষনের মত কিছু হতে পারিনি । কিন্তু ভদ্র, অনুগত, বিশ্বস্ত, বুদ্ধিমান, সাহসী, অনুগত একজন 'পুলিশ' দেখার সাধ যুবাকাল পার করার পরও আর মিটলো না।
তবে, এখন বোধহয় বাংলাদেশের সময়।
এখন এই দেশ এর প্রতিটি ঋণ শোধবার সময়।
এখন 'মাসরুফ হোসেন'দের সময়।
বাংলা নয়, এখন ইংরেজী অক্ষরের POLICE দেখার সময়।

*****************
অনেক ভালো লেখা, প্রয়োজনীয় লেখা।
অনেক ধন্যবাদ মাসরুফ হোসেন।
আপনার জন্য অনেক শুভকামনা। ভালো থাকবেন।

-------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

ইমতিয়াজ আহমেদ মোরশেদ এর ছবি

এখন 'মাসরুফ হোসেন'দের সময় বাংলা নয়, এখন ইংরেজী অক্ষরের POLICE দেখার সময়... স্যালুট ভাই। আপনাদের হাত ধরেই আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি। দেশের যে কোন প্রয়োজনে সাথে আছি, থাকব ইনশাআল্লাহ...

মো: ফেরদৌস আলম এর ছবি

আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি ক্যাডেট কোচিংয়ে ভর্তি না হয়ে । আচ্ছা ক্যাডেট এ চান্স না পেলে আর অন্য কোনো উপায়ে কি পুলিশ অফিসার হওয়া যাবে দয়া করে বলবেন

JABEDUL ANWAR এর ছবি

ভাই আপনি বিষয়গুলো খুব সুন্দর করে উপস্হাপন করেছেন বাট কিছু জিনিস একটু বেশি বলে ফেলেছেন অভাব পুলিশের কোন অভাব নেই বেচে থাকার প্রধান উপকরণ খাদ্য,বস্ত,বাসস্হান সব পাচ্ছে তার পড়ও কিসের অভাব এগুলা অাসলে জাতে বেহায়া।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।