সেন্ট মার্টিন: সাম্প্রতিক

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৬/০৪/২০১৪ - ৬:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আর কতো লাশ দেখবো আমরা? সেন্ট মার্টিন-এর ওই জায়গাতে আমিও নামতে চেয়েছিলাম। ওই জায়গাটা একটা কোনায়। দাঁড়ালে মনে হয় আশে পাশে সমুদ্র ছাড়া আর কিছু নেই। নামার আগে এক পিচ্চি বলল, এই জায়গাটায় মানুষ মরছে কদিন আগে। ভয় পেয়ে আর নামিনাই। অথচ হোটেলে জিগ্যেস করেছিলাম যে কোথাও চোরাবালি বা বিপদজনক জায়গা আছে কিনা। তারা হেসে বলল, এই দ্বিপে চোরাবালি নাই কোথাও। আরও বলে দিলো প্রবালে পা কাটলে যেন বালি দিয়ে কাটা জায়গা ঘষি। এই দ্বিপের বালিতে নাকি ঔষধি গুনাগুন আছে (!!!)

কক্সবাজার সৈকতে আগে কোন লাইফগার্ড ছিলোনা। এখন ইয়াছির লাইফগার্ড নামে বেসরকারি ও সম্পূর্ণ নিজ খরচে পরিচালিত একটি লাইফগার্ড সার্ভিস আছে। এর পিছনেও আছে স্বজন হারানোর ব্যাথা। ১৯৯৫ সালে মিনহাজ ইয়াসির নামে একটি ছেলে মৃত্যুবরন করে কক্সবাজারে সাগরে গোছল করতে গিয়ে। তার বাবা পরে নিজ উদ্যোগে চালু করেন এই সার্ভিসটি।

আর কি কেউ নেই আমাদের দেশে ইয়াসির-এর বাবার মতন হৃদয়বান মানুষ যিনি সেন্ট মার্টিনে একটা লাইফগার্ড সার্ভিস চালু করতে পারেন? আমরা প্রয়োজন এ চাঁদা দিবো কিন্তু ওই এলাকার কেউ বা ওখানে স্থানীয়দের ভালো চেনেন এমন কেউ কি আছেন যিনি এগিয়ে আসবেন? দয়াকরে সরকার আর সরকারী উদ্যোগ এর কথা বলবেন না। ওই ভরসায় থাকলে আজ ইয়াসির লাইফগার্ড শতশত মানুষের জীবন বাঁচাতে পারতনা। শুনেছি মোবাইল অপারেটর "রবি" রও লাইফগার্ড আছে কক্সবাজার এ। রবি অথবা আর কোন মোবাইল অপারেটর বা অন্যকোন কর্পোরেট ফার্ম কি এগিয়ে আসতে পারেন তাদের CSR এর অংশ হিসাবে?

আর যারা সেন্ট মার্টিন যাচ্ছেন তাদের বলছি, সাঁতার না জানলে হাঁটু পানির বেশি কখনই নামবেন না। হোটেল থেকে জোয়ার- ভাটার সময় যেনে নিন। সৈকতে অনেক স্থানীয় মানুষ থাকেন, তাদের জিগ্যেস করুন প্রয়োজনে। রাতে কখনই পানিতে নামবেন না।

যে জায়গাটা এখন মৃত্যুফাঁদ সেটার ছবি দিয়ে দিলাম। পরিচিত সবাইকে দেখান, জানান ও সতর্ক করুন।

খোদা আমাদের সবাইকে দয়া করুন।

তেহজীব

[লেখাটি এর আগে ফেসবুকে প্রকাশিত]

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

হিমু এর ছবি

যেহেতু জোয়ার-ভাটা একটা পর্যায়ক্রমিক ব্যাপার, এবং সুনির্দিষ্ট সময় ধরে হয়, কোনো সহৃদয় প্রোগ্রামার কি একটু কষ্ট করে একটা মোবাইল অ্যাপ তৈরি করতে পারেন, যেটা সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা নির্দেশ করবে, এবং ভাটার সময় অ্যাপ ব্যবহারকারীকে সুস্পষ্ট সঙ্কেত (লাল রং) দিয়ে সাগরে নামতে মানা করবে? যেহেতু বাংলাদেশে সব সৈকতে সর্বক্ষণ সব পর্যটককে এখনও জোয়ার ভাটার ব্যাপারে সঙ্কেত দেওয়ার কাজটা কর্তৃপক্ষ করছে না বা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের মধ্যে পড়ছে না, তাই এ ব্যাপারে অন্তত একটা অ্যাপের মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত রাখার কাজটা পর্যটকেরা নিজেরাও করতে পারবেন।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রতি বছরই এরকম ঘটনা ঘটছে, এবং একই জায়গায়! এটা খুবই দুঃখজনক। মেনে নিতে কষ্ট হয়। একেকটা প্রাণ কত মূল্যবান, কত সম্ভাবনাময়! চলে যাওয়া ছেলেগুলোর কথা ভাবতেই কষ্ট লাগে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সব গ্রহণ করা হবে, সবাই সতর্ক ও সচেতন হবে, এই প্রত্যাশাই করি শুধু।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ছবিটা দেখে প্রথমেই মনে পড়ল কানাডার পয়েন্ট পিলি ন্যাশনাল পার্কের কথা। পিলি পয়েন্ট হল কানাডার সর্বদক্ষিণ ভূখন্ড যা মেইনল্যান্ডের সাথে যুক্ত।

ছবিতে দেখুন আমাদের সেন্ট মারটিনের সাথে কীকরম মিল।

সূত্র: কানাডা.কম

সেখানে ঠিক একই রকম বাঁক আছে এবং পানি খুব কম যা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। কিন্তু সেখানে রয়েছে ভয়ংকর স্রোত। সে কারণেই এরকম সতর্কতামূলক সাইন সেখানে দেয়া আছে। যারা সাইনগুলো পড়বে তারা পানিতে নামার আগে দুইবার ভাববে।


চূড়ায় দাঁড়িয়ে মূল ভুখন্ডের দিকে তাকিয়ে তোলা ছবি। দুইপাশেই লেক ইরি (Lake Erie)।


বিপদজনক স্রোতের কথা বলা হয়েছে। সাঁতার কাটা বা পানিতে নামতে নিষেধ করা হয়েছে।


জুলাই ১৯, ২০০৩ -- দুই ভাই পানিতে নেমেছিল। স্রোতের টানে দুই জনই ভেসে যায়। একজন দর্শনার্থী সাহস করে একজনকে উদ্ধার করতে পেরেছিল। বাংলাদেশের ঘটনাটি যেন ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।


সেখানে যাওয়ার আগেই এই সাইনটি বসানো। সাথে একটি বয়া দেয়া আছে।

প্রথমটা বাদে বাকীগুলো আমার ছবি। এখানে দিলাম যাতে একটা আইডিয়া পাওয়া যায় আর সেই সাথে কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়।।

সাফি এর ছবি

বন্ধু আতিফের সোজন্যে প্রাপ্ত একটা ভিডিও শেয়ার করলাম -

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

মিনহাজ ইয়াসির আমার প্রিয় একজন সহপাঠী ছিল, ১৮ বছর বয়সেই চিরতরে ওকে হারানোর বেদনা ক্লাসের সবাই আজও বয়ে বেড়াচ্ছি!

পত্রিকার পাতায় সাগরে ভেসে যাওয়া ছেলেগুলোর ছবি দেখে মনটা হুহু করে উঠে; কত স্বপ্ন, কত ভালবাসা, কত হাসিমুখ মুহুর্তেই থমকে যাচ্ছে একটুখানি অসাবধানতায়! মন খারাপ

.......জিপসি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

খুবই খারাপ লেগেছে খবরটা শুনে, আর এরকমটা না হোক, সেই প্রত্যাশা করি।
ফেসবুক থেকে পেলাম:

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।