সৎ কাকে বলে?
সহজ করে বললে সুযোগ থাকার পর ও যে দুর্নীতি করে না সেই সৎ। সৎ মানুষের সংজ্ঞা হিসাবে খোঁজ করলে বাংলাদেশে সৎ মানুষের সন্ধান পাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজে পরিণত হবে। কিন্তু আপনি কথা বলতে যান দেখবেন সবাই অসম্ভব সৎ, অসততাকে প্রচন্ড ঘৃনা করছে। ঘরে বাইরে, চায়ের দোকানে কিংবা অফিসে সবাই অসৎ লোকের সমালোচনায় আর দেশটা অসৎ লোকে ভরে গেল এই আলোচনায় মেতে আছে। যে দেশে সবগুলো সেক্টর অসততারর আদর্শ কারখানা, যে দেশে রাস্তার ফকির থেকে অফিসের সবচেয়ে বড় কর্তাটি অসৎ, যে দেশে-যে সমাজে, অসৎ লোকটি অধিক সম্মান আর স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করে সেই দেশের মানুষ অসৎ হওয়াই স্বাভাবিক। যে সন্তান দেখে তার বাবা অসৎ আয়ে ক্ষমতাবান হচ্ছে, যে ছেলেটি দেখছে তার ভাইয়ের একটি ফোনে তিনদিনের কাজ এক ঘন্টায় হয়ে যায়, তারা কি করে সৎ হবে?
রাত একটু বেশি হলে, রোদ একটু প্রখর হলে, মানুষ একটু বেশি হলে রিক্সা-সিএনজির ভাড়া দ্বিগুন হয়ে যায়। কাউন্টারে ট্রেনে টিকেট আপনি কখনো পাবেন না, অথচ একটু খোঁজ করলেই ষ্টেশানের দোকানগুলো পেয়ে যাবেন তবে সেখানে দুইশ টাকার টিকেট পাঁচশ টাকায় নিতে হবে এই যা ! রেলওয়ের প্রতিটি টিটির ঢাকা-চট্রগ্রাম বাড়ি আছে, শুধু টিটি না, রেলওয়ে পুলিশদের ও আয় খারাপ না। সবাই একহয়ে মেতে ওঠেছে ঘুষের স্বর্গরাজ্যে. অথচ প্রতিবছর সরকার কোটি কোটি টাকা ক্ষতি দেয় রেল যোগাযোগে. ঈদ আসলে বাসের ভাড়া হয়ে যায় দ্বিগুন। এগুলো দেখার কেউ নেই, দুই-একদিন পত্রিকায় লেখালেখি তারপর সবাই চুপ। পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থাটাই দুর্নীতির মহাসাগরে ভাসছে আমাদের দেশে।
গতছুটিতে বাড়ি গেলাম, অনেকদিন পর এক বন্ধুর সাথে দেখা. এইচ এসসি পাশ করতে পারে নাই, পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছিলো। এখন ভূমি অফিসে চাকরি করে, শুনলাম তার ব্যাংকে এখন আছে কয়েক কোটি টাকা! ১০-১২ বছর চাকরি করে, দলিল লিখে এত টাকা আয়! পৃথিবীর আর কোন রাষ্ট্রে এমন টা কল্পনাও করা যায় না। ভূমি অফিসে যান, দু্র্নীতিই সেখানে নীতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। জমা-খারিজের কাজ করাবেন, হাজার টাকার কাজ করতে আপনার লাগবে ছয়-সাত হাজার টাকা। জমি কিনবেন, সেখানে ও দলিল লেখককে দিতে হবে দশ-পনের হাজার টাকা। যে জমির দাম দুই লক্ষ দলিলে উল্লেখ করবে সেই জমির দাম বিশ-ত্রিশ হাজার শুধু সরকারী ট্যাক্স না দিতে। এভাবে দেশকে সবাই ঠকিয়ে, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় দেশ নিয়ে তাদের দরদ আর ভালোবাসা উগড়ে দিয়ে আসে। অথচ সত্যিটা হলো সুযোগ পেলে এরাই দেশটাকে ধর্ষন করে অলিতে গলিতে, অফিসে-কাচারিতে। এমন সুবিধাবাদী আত্নকেন্দ্রিক দেশপ্রেমিকদের দেশ দুর্নীতিতে প্রথম দিকে থাকবে সেটা মোটেও বিস্ময়কর নয়।
ছোটবেলায় যে হুজুরটিকে দেখতাম মসজিদের ইমামতির পাওনা টাকা দিয়ে কোন মতে সংসার চালাতো, যার জন্যে গ্রামে ঘরে ঘরে চাল তুলে, সেই চাল বিক্রি করে বেতন দেওয়া হত, বছর দশ পরে গিয়ে দেখি সেই হুজুর এখন আড়াই লক্ষ টাকার পালসার চালায়, ঘর বিল্ডিং করছে. এর চেয়ে বড় বিস্ময় আর কি হতে পারে? কোথায় পেল এত টাকা? উত্তরটা সবাই জানেন। আপনি আপনার জেলার, কিংবা থানার রাজনীতিক দলের খুব ছোট একটি পোষ্ট চান? আপনার লোকবল লাগবে না, সততা লাগবে না, দলের জন্যে নিবেদিত প্রাণ লাগবে না, শুধু কয়েক লক্ষ টাকা লাগবে। যত উপরের দিকে যাবেন টাকার পরিমান ততই বাড়তে থাকবে। এর সাথে মারামারি-খুন খারাবিতে একটু দক্ষ হলে সেটা আরো বেশি সহায়ক হয়ে উঠবে পদটি পেতে। যে দেশে গ্রামের ম্বেবার হতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করতে হয় সেই দেশে একজন সাংসদ সৎ হবে এটি আপনি কিভাবে আশা করেন? ধর্মীয় লেবাছ এখন সৎ থাকার সবচেয়ে সহজ পন্থা। ভোটের সময় আল্লাখাল্লা/পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি হয়ে উঠে মূল পোশাক। হাতে তবজি, মাথায় হিজাবও আসে সময় সুযোগ বুঝে। আর নিজেকে আস্তিক প্রমাণ করতে দু-চারজন হুজুর নিয়ে এখন জনসংযোগ করতে হয়। এত আস্তিকের দেশ কি করে দুর্নীতিতে, অনিয়মে, ব্যভিচারে, ভন্ডামিতে, নষ্টামিতে, আর অসততায় স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠে সে কথা কেউ জানে না!
থানা পুলিশের কথা না বলি, উকিল মোক্তার তো অনেক আগেই প্রতিযোগিতা দিয়ে দুর্নীতি করছে এই দেশে। ডাক্তার রা কেমন? সেখানেও একি চিত্র, অকারণে এই রিপোর্ট, সেই রিপোর্ট, এই টেষ্ট না হয় ওই টেষ্ট তো আছেই। তার সাথে এখন যোগ হয়েছে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, যেই রিপোর্ট দিয়ে কারো নামে মামলা ঠুকে দেওয়া হয় নানা ধারা উপধারায়। স্কুল-কলেজে সেই আগের চিত্রই, যে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়বেন, পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাবেন না হলে পাবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ সে তো এখন পুরোটাই রাজনৈতিক, লাল দল না নীল দল আপনি? দল ছাড়া মেধার মূল্যায়ন বলতে কিছু নেই। মেধার পাশাপাশি এখন দল চর্চাও করতে হয়। ব্যবসায়ী? সব ফলে ফরমালিন-কার্বাইড মিশিয়ে খাওয়ার যোগ্য রাখে নাই কিছু, ওজনে কম দেওয়া, ভেজাল দেওয়া এগুলো এখন ব্যবসার মৌলিক ধর্ম হয়ে গেছে। কোন কারন ছাড়া সিন্ডিকেটরা মন চাইলেই বিশ টাকার পেঁয়াজকে করে দেয় একশ টাকা। ওদেরকে ধরার ক্ষমতা কারো নেই এই দেশে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের রমরমা ব্যবসায় এখন ভাসছে দেশ। কি হবে যারা ফাঁসের সাথে জড়িত? কিছুই হবে না, হয়নি কোনদিন। একটা তদন্ত কমিটি তারপর উইপোকায় খাবে সেই তদন্ত রিপোর্ট। মাঝখান দিয়ে কতগুলো সরল মেধাবীদের ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে গুটিকয়েক মানুষ হঠাৎ করে কোটিপতি। আমলাদের দিকে না যাই, তাদের নি:শ্বাস প্রশ্বাস ও অসৎ হয়ে গেছে বহুকাল আগে।
বিদুৎ অফিসে যান, সেখানেও একি চিত্র। প্রতিটি বাজারে যান দেখবে অসংখ্য অবৈধ সংযোগ, কম বেশি প্রতিটি দোকানে বৈধ লাইনের পাশাপাশি একটি করে অবৈধ সংযোগ আছে. রাষ্ট্রকে ফাঁকি দিয়ে কার পকেটে যায় এই টাকা? বিদুৎ বিলের কাগজের সাথে মিটারের কোন মিল নেই, মিটার না দেখে ইচ্ছেমত একটা বিল বসিয়ে দেওয়া হয়। বাসায় বাসায় গিয়ে মিটার দেখার কষ্ট কে করবে? এরপর আছে মিটার কারসাজি! দুর্লভ গ্যাসের ক্ষেত্রেও সেই পুরানো গল্প, দুই লক্ষ-তিন লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে সংযোগ। সেখানেও টাকা দিলে মিলছে না সংযোগ, মামা-কাকা আর হ্যালোর জোর আছে যার সেই পাচ্ছে সংযোগ। খাদ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তারাও এই দেশে রাস্তায় গাড়ি হাঁকায়, ঢাকা-চট্রগ্রামে ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকে, বাড়ীতে থাকে বিঘা বিঘা জমি-জামা। এভাবে লিষ্ট করলে দেখা যাবে কেউ বাদ যাবে না, সবগুলো খাতের নাম ওঠছে দুর্নীতির তালিকায়.
আপনি ভাবছেন বেসরকারি খাত কিছুটা সৎ আছে। সেখানে সৎ আছে তবে তা নিজ আদর্শ থেকে যতটুকু তার চেয়ে বেশি হলো সুযোগের অভাবে। তবে বাঙালি সুযোগ সবখানেই সৃষ্টি করতে পারে তাই সেখানেও দুর্নীতি এখন রক্তের সম্পর্কীয় আপন হয়ে ওঠছে। বড় লোন পাস করাবেন, ৫-১০% ঘুষ লাগবে. ব্যাংকের টাকা আত্নসাৎ এটা কোন ঘটনাই নয় এখন। নিয়োগ দুর্নীতি, বদলি, পদন্নোয়ন দুর্নীতি এগুলো প্রকাশ্য। ঔষুধ কোম্পানিগুলো তো আরও মহৎ, ঔষুধ পাস করুক না করুন একবার তৈরি হয়ে গেলে ছেড়ে দাও মার্কেটে। মরলে মরবে গরীবে রা, কোন আওয়াজ হবে না ! গরীব দেশে কে কি কারনে মারা গেছে তা খোঁজ নিবে কে? গার্মেন্টস, ”শ্রমিক আইন “ কে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে শ্রমিকদের জীবনীশক্তি চুষে নিয়ে টাকার ইমারত গড়ছে সমাজের বিশিষ্ট শিল্পপতিরা। তাদের সৃষ্ট বর্জ্য নিক্ষেপ করছে সরাসরি নদীতে, দেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের সৎ দেশপ্রেমিক কর্মীরা বছরে একবার প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে বাৎসরিক নিজেদের চাঁদা টা নিয়ে আসে বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্নক পরিবেশ বান্ধব বলে একখান সার্টিফিকেট দিয়ে আসে।
গত কয়েক বছরে যে প্রতিষ্ঠান উসাইন বোল্টের মতো দৌড়ে দুর্নীতির প্রথম কাতারে চলে এসেছে তার নাম এনজিও সংস্থা। ব্যাঙের ছাতার মতো দেশে গড়ে ওঠেছে এনজিও সংস্থা। বিদেশি দের টাকায় পরিচালিত এই সকল সংস্থার কাজ হলো তাদের গুরুদের ইচ্ছেমতো, সরকারের বিরুদ্ধে একটা রিপোর্ট তৈরী করো, শহরে বসবাস করা শ-খানেক মানুষকে জিজ্ঞেস করে বলে দেয় দেশের ৯০% মানুষ এটা চায় না, ওটা চায় না। এমন অদ্ভুত জরিপ পৃথিবীর আর কোথাও হয় না। আবার তথ্যের প্রমাণ চাইলে তা দিতে অস্মতি প্রকাশ করাও তাদের গনতান্ত্রিক অধিকার! এত গনতান্ত্রিক অধিকার সচেতন মানুষ বোধহয় পৃথিবীতে আর নেই। ক্ষমতা আর প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকা এবং সুযোগের অভাব সৎ কিংবা অসৎ কতগুলো অবসরপ্রাপ্ত লোককে সুশীল বানিয়ে সমাজের বিবেক বলে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। এদের চুশীলতায় মুগ্ধ বাঙালি। এরা রাতে টেলিভিশনের নানান টকশোতে টকমারানির ভূমিকায় অবর্তীন হয়, আমি হেফাজতকে পছন্দ করিনা আবার শাহবাগের এই আন্দোলনকেও সমর্থন করিনা, বলে নিজেকে মহান নিরপেক্ষ আর দেশপ্রেমিকের উ্জ্জ্বল দৃষ্টান্তরুপে স্থাপনক করে অসংখ্য ছাগুর কাছে। এরা থাকে বারিধারা-গুলশান আর ধানমন্ডিতে, এদের সন্তানরা পড়ালেখা করে বিলেতে অথচ এরাই মুখে বলে যায় সততার হাজার হাজার বুলি। এসি ঘরে বসে তাদের প্রাণ কেঁধে উঠে রোদে পোড়া কৃষকের জন্যে! এ কি সেকুলাস!
প্রশ্ন আসবে কেন এই দেশের মানুষ এত অসৎ হয়ে উঠছে দিনে দিনে? কেন এখনকার আলো-বাতাস-জল সব কিছুই দূষিত হয়ে যাচ্ছে অসততার ছায়ায়? উত্তরটাও একেবারে সহজ.. এই দেশে অসৎ হয়ে বেঁচে থাকার রয়েছে অজস্র উপকার. অসৎ মানেই আপনি ক্ষমতাবান আর ক্ষমতাবান হলেই আপনি ধনবান. অসৎ হলে আপনি একরাতে মন্ত্রী হতে পারবেন, সৎ হলে কিছুই হতে পারবেন না। অসৎ হলে ইচ্ছে করলে গরীবের উপকার করতে পারবেন, নিজেকে দারুন সমাজ সেবী আর মহৎ লোকের কাতারে নিয়ে যেতে পারবেন। অসৎ আয় দিয়ে গ্রামে মায়ের নামে হাসপাতাল করে বেহেস্তে যাওয়ার টিকেট কেটে ফেলতে পারবেন। অসৎ হলে গড়ে তুলতে পারবেন এতিম খানা, মক্তব, মসজিদ, স্কুল সব কিছুই। আর আপনি সৎ হলে এসব কিছুই করতে পারবেন না। ভাল কাজ করতে ক্ষমতা আর অর্থ দুটোই লাগে, যে দুটো সৎ পথে থেকে অর্জন করা সম্ভব নয় এই দেশে। সততা দিয়ে আজ আর কিছুই হয়না. কোন কালে কি হতো? তবে আজ হয় না, আপনি হয়তো বলবেন, না হয়- তবে সেগুলো নিছক দুর্ঘটনা. উদহারণ মাত্র, উদহারণ কখনো দৃষ্টান্ত হয় না। আপনার এলাকায় সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তিটি, সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তিটি কি সৎ? মোটেও না, খ্যাতিমানদের দেখুন তাদের মুখে অজস্র অসততার দাগ। অসততার উপকারিতার শেষ নেই এই দেশে, লিখে শেষ করা যাবে না. আপনি সৎ হলে মায়ের চিকিৎসাটাও করাতে পারবেন না ঠিক মতো, নিজের সন্তানের আধুনিক চলমান জীবনের চাহিদাগুলো মেটাতে পারবেন না, বউকে পারবেন না কোন শাড়ি কিংবা গয়না বানিয়ে দিতে, পারবেন না বছর বছর দেশ-বিদেশে ভ্রমণে যেতে। সৎ হলে আপনি শুধু দেখে যাবেন ক্ষমতাধর অসৎদের জয় উৎসব, এবং শেষ বয়সে এসে ভাববেন বোধহয় ভুল ই করলাম এই জীবনে!
অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিলো না, অনুশোচনায় ভোগার কথা ছিলো যাদের তারা কেউ না হয়ে অনুশোচনায় ভুগছে সৎ মানুষটি. এমনটা কাদের জন্যে হয়েছে? উত্তরটা বোধহয় এখানেও সহজ, রাজনীতিকদের জন্যে, সরকারের জন্যে অসৎদের এত উল্লাস আর জয়ধ্বনি. তারাই অসৎদের পুরষ্কার দিয়েছে, তারাই ছাড় দিয়েছে। তাদের ছাড়ের কারনেই অসৎরা বুক ফুলিয়ে চলে এই সমাজে, এর রাষ্ট্রে, এরাই সবচেয়ে বেশি সম্মান পাচ্ছে। যদি আইনের সঠিক প্রয়োগ থাকতো তাহলে দুর্নীতির এই মহাস্রোতে সবাই ভাসতে পারতো না। শিক্ষা দিয়ে, নীতি কথা দিয়ে সমাজ পরিবর্তন করা যায় না, সমাজ পরিবর্তন করতে আইনের সঠিক প্রয়োগের কোন ব্যাতিক্রম নেই। মানুষ মাত্রই লোভী, তারপরও পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রের মানুষ এতটা অসৎ নয়, কারণ সেখানে অসততার জন্যে শাস্তি অবধারিত। অসৎ লোকদের শাস্তির আওতায় আনুন দেখবেন দেশ থেকে দুর্নীতির মহাপ্রলয় কমে আসবে। যদি শিক্ষা আর নীতি বাক্য দিয়ে অসততা দূর করার আশা করবেন তো শত বছর পেরিয়ে গেলেও সেটি বিন্দুমাত্র কমবে না। বরং চলবে অসৎদের জয় উৎসব আর সৎ থাকার অপরাধে আপনাকে, আপনার সন্তানকে প্রতি মহুর্তে সীমাবদ্ধতার কষ্টে ধুকতে হবে ঘরে বাইরে প্রতিটি ক্ষেত্রে।
মাসুদ সজীব
মন্তব্য
প্রতিটা প্যারা পড়তেই দমবন্ধ দমবন্ধ লাগছিল। দুঃখ হল এটাই বাস্তব। আমাদের প্রতিবেশি ছিল একজন কাস্টমসের লোক, যার ঢাকায় তিনটা পাঁচতলা বাড়ি ছিল। কই কেউ তো তাকে জিজ্ঞেস করেনি, তার টাকা কোথা থেকে আসছে?
চারদিকে খালি টাকা আর টাকার মহোৎসব, সৎ হবার সময় কই
আপনাকে ধন্যবাদ, মাসুদ সজীব, এই লেখাটার জন্য।
শুভেচ্ছা
প্রতি সাপ্তাহে আমি বাড়ি যাই ট্রেনে করে এবং প্রায় প্রতি সাপ্তাহে দেখি ট্রেনে জানালার পাশে কারো না কারো মোবাইল কিংবা ব্যাগটি টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্টেশানে থাকা ছিনতাই কারীরা( আমার নিজেরও একবার গিয়েছে)। এর কোন প্রতিকার নেই । কেউ নেই এগুলো দেখার, কারো কোন দায়িত্ব নেই, আসলেই দেশটাকে আমার মনে হয় মাঝে মাঝে স্বপ্নপুরী, যে যার মতো নিজেকে নিয়ে থাকি। এ লেখাটি চরম হতাশা থেকে লেখা, এমনটা হয়তো লেখতাম না। গত সাপ্তাহে কুমিল্লায় ট্রেনের জানালার পাশে এক মহিলার হাত থেকে টান দিয়ে দামী মোবাইল নিয়ে গেছি সুযোগ সন্ধানী ছিনতাইকারী। আর সঙ্গে সঙ্গে মহিলাটির স্বামী, স্ত্রীকে বগি ভর্তি মানুষের সামনে একটা থাপ্পড় বসি দিলো। সেই ঘটনা আমাকে এতটা মর্মাহত করেছে যে আমি কয়েকদিন বিষন্নতা আর ক্রোধের দহনে জ্বলেছি। আর ভেবেছি এই তুচ্ছ ছিনতাইয়ের ঘটনা সেই মহিলার জীবনে সবচেয়ে বিষাধের গল্প হয়ে থাকবে, হয়ত কোনদিন ই স্বামীর প্রতি ক্ষোভ মুছবেনা।
ভালোথাকবেন, সাবধানে থাকবেন
মাসুদ সজীব
অসৎ হয়ে পড়াটা কেবল পরিণতি, সমস্যার মূলে রয়েছে সমস্যা ধরতে না পারা কিংবা সমাধান করতে না জানা অথবা সমাধান করতে না চাওয়ার মানসিকতা। প্রথম দুটি অজ্ঞতার ফসল, শেষেরটা ব্যক্তি/শ্রেণীস্বার্থপরতার। কই যাবেন?
আপনার লেখাটা ভালো লাগলো।
যাওয়ার আসলে সত্যি কোন জায়গা নেই, ক্ষমতালোভী আর ক্ষমতাভোগীদের এই কদাকার রাজনীতিতে পড়ে হুমায়ূন আজাদের মতো বলতে হয় “ আমি যে পৃথিবীকে চেয়েছিলাম , তাকে আমি পাইনি। মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
মাসুদ সজীব
বাংলাদেশে আমিই মনে হয় একমাত্র সৎ(!) অফিসার। অমুকের মতো দিবালোকে মানুষের গলা কাটি না।
যাই হোক, আসল কথায় আসি। দুর্নীতির ফোড়া অনেক দেশেরই বগলে, কুঁচকিতে কমবেশী লুকিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দুর্নীতি হলো সর্বাঙ্গ ছাওয়া জ্যৈষ্ঠ মাসের ঘামাচির মতো। রিকশাওয়ালা থেকে শীর্ষ ধনী পর্যন্ত সবাই কমবেশি দুর্নীতি সন্ধানী। কে যেন বলেছিল দুর্নীতি যতক্ষণ টেবিলের নীচে থাকে ততক্ষণ ঠিক আছে। আমাদের দেশে দুর্নীতি টেবিলের নীচের লজ্জা ছেড়েছে বহুবছর আগে। আমি একবার লুকিয়ে ঘুষ দিতে গিয়ে ধমক খেয়েছিলাম এক অফিসারের কাছ থেকে। বলেছিল, সামান্য কটা টাকা আপনি টেবিলের উপরে দিতে সাহস করছেন না?
বাংলাদেশে দুর্নীতি কমবে না। আমাদের বরং দুর্নীতি সহিষ্ণুতাই বাড়িয়ে যেতে হবে। যেমন এখন দেশে রাস্তায় বেরোলেই ভাবি - অবশেষে এই উপদ্রত বিশৃংখলারেই ভালোবাসিলাম।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
দু্র্নীতি কে সহনীয় মাত্রা নিয়ে আসা কি খুব কঠিন ? রাজনৈতিক দলগুলো আর সরকার চাইলে অবশ্যই সম্ভব, কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল আর সরকার কোনদিন ই তা চাইবে না বলে কমবে না। ধর্ম আর দুর্নীতি দুটোকে ভালো করে গুলিয়ে খাওয়াতে না পারলে কি আর মানুষের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খাওয়া যাবে, বারবার ক্ষমতায় আসা যাবে?
মাসুদ সজীব
আচনি টেবিলের নিচে দিয়ে দিতে গেলে তো ধমক খাবেনই, ঐ অফিসের সবাই ঘুষ খাচ্ছে টেবিলের ওপর দিয়ে, আপনি নিচে দিয়ে দিলে ঐ লোকের প্রস্টিজে লাগারই কথা!
আর, ঘুষ দিতে হয় যে কেবল অন্যায় সুবিধা নেবার জন্য তা নয়, আপনার প্রাপ্য পেতেও ঘুষের আশ্রয় নেয়া লাগে।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের কোন বইতে যেন পড়েছিলাম; মুহম্মদ ইউনূস প্রমাণ করেছেন যে বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ লোক সৎ। বিনা জামানতে ঋণ নিয়ে ৯৮ জন মানুষ তাদের ঋণকৃত অর্থ ফেরত দিয়েছিল। কৈশোরে এই তথ্য পড়ে খুবই আশ্চর্য হয়েছিলাম। এখন অবশ্য এই ঘোর কেটে গেছে। সুন্দর একটি লেখার জন্য ধন্যবাদ।
গোঁসাইবাবু
আপনাকেও ধন্যবাদ গোঁসাইবাবু
মাসুদ সজীব
গভীর ভাবে সংবেদনশীল আপনার লেখা পড়লাম । বাস্তব এত অনভিপ্রেত, যে বাস্তব এমন কেন, এ নিয়ে প্রশ্ন করতেও ভুলে যাই ।
অনেকেই বলে, আমাদের দেশটা নাকি একটি নিমজ্জিত টাইটানিক, তলিয়েই যাবে শুধু । তাই আর প্রশ্ন করে, মানুষের মনে সত্যের বীজ ও সংবেদনশীলতা বপন করে লাভ কি?
এই সব হতাশা যখন কষ্ট দেয়, তখন, আপনাদের মত সতেজ স্বাভাবিক সুন্দর কয়েকটি লেখা পড়ে আবার প্রাণ পাই। যা অন্যায় তাকে সহ্য করা হবে না, প্রতিবাদ হবে, এই বিশ্বাস জাগে।
-আনন্দময়ী মজুমদার
প্রতিবাদ, প্রতিরোধ হবেই এ বিশ্বাস আমারও আছে। মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
মাসুদ সজীব
নতুন মন্তব্য করুন