( আজকের পোস্টের সাথে পুলিশি ব্যাপার- স্যাপারের খুব একটা যোগাযোগ নেই, ব্যস্ত পাঠক চাইলে এটি বাদ দিতে পারেন)
সুপ্রিয় নাগরিকবৃন্দ,
গত ক’দিন কাজের বেশ চাপ গিয়েছে, আজ বৃষ্টির সাথে সাথে ইচ্ছে করছে খানিকটা হালকা মেজাজে আপনাদের সাথে কথা বলতে।পুলিশের কঠোর জীবনে হালকাভাবে কথা বলার সুযোগ খুব বেশি আসেনা,তবে আপনাদের ভালোবাসা পেয়ে পেয়ে আমার সাহস বেড়ে গিয়েছে।
ক’দিন আগে Ask.fm ওয়েবসাইটে আমার প্রোফাইল উন্মুক্ত করেছিলাম আপনাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্যে। বিভিন্ন বিচিত্র সব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি।“ভাই আমার শরীরের একটি অংশ খুব ছোট, আমি কি পুলিশে চান্স পাবো”- বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, এমন প্রশ্নও আমাকে করেছে লোকজন (দয়া করে এর বেশি কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না!)
আরেকটি প্রশ্ন শেয়ার করিঃ
vai apnar home district , school,college & university konta ? amr o apnar moto hote mone chay but amar porte mone chay na....ektu suggestions dile valo hoto..... amar B.sc Engg. complete...BCS kivabe dibo
আমার উত্তরঃ বিসিএস পাশ করে এএসপি হতে মনে চায় কিন্তু পড়তে মন চায়না- "পিতা হতে চাই কিন্তু রমণে উৎসাহ নেই", এমন হয়ে গেল না ব্যাপারটা? পড়তে মন না চাইলে বিসিএস পরীক্ষা না দেয়াটাই আপনার জন্যে উত্তম, সাফল্যের কোন শর্টকাট রাস্তা আমার জানা নেই।
কি অদ্ভুত আমরা, তাইনা??? পড়তে চাইনা, কিন্তু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চাই। সাফল্য নামের আইসক্রিমের স্বাদ চেটেপুটে আস্বাদন করতে চা্ই , কিন্তু তার জন্যে দাম দিতে প্রস্তুত নই!
গত সপ্তাহে পাঠক সমাবেশ থেকে একটি বই কিনেছিলাম-যেটি গত দু’দিন মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ছি। বইটির নাম “এ শট এ্যাট হিস্টরি”- ভারতের ইতিহাসে সর্বপ্রথম অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী শ্যুটার ( বেইজিং,২০০৮) অভিনব বিন্দ্রার আত্মজীবনী।
বইটি পড়তে পড়তে পরিচিত হলাম প্রফেশনাল শ্যুটিং-এর নিষ্ঠুর জগতের সাথে, যার কিছু অংশ আপনাদের জন্যে অনুবাদ করে দিচ্ছিঃ
……আমাদের জন্যে খুব বেশি পুরষ্কার অপেক্ষা করে নেই, শুধু আছে কাগজের সার্টিফিকেট আর টিনের মেডেল। আমাদের ভক্তদের সংখ্যা সীমিত, স্পন্সর আরো সীমিত।…ক্রিকেটার সারা বছর টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পান, টেনিস খেলোয়াড় বারো মাসে চার বার গ্র্যান্ড স্লাম ইভেন্টে অংশ নিতে পারেন, গলফারদের ক্ষেত্রেও সংখ্যাটা একই। প্রতিনিয়ত তাঁদের সামনে সুযোগ থাকে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় তুলে নেবার; একটাতে খারাপ করলেও পরের ইভেন্টে সেই ক্ষতি সামলে ওঠার।
………হায়, একজন শ্যুটার হিসেবে আমার সেই সুযোগ কোথায়!নিজেকে প্রমাণ করতে আমাদের সুযোগ আসে প্রতি চার বছরে একবার। প্রতি চার বছর পর পর ১২৫ মিনিটে সত্তরটি শট- এই হচ্ছে আমার একমাত্র সুযোগ।
……… নির্বানলাভের আশায় বৌদ্ধ সন্ন্যাসী যেমন বছরের পর বছর সাধনা করে, আমাদের সাধনাটা অনেকটা সেরকম।এই সাধনা আমাদেরকে পুরোপুরি গ্রাস করে নেয়, করে তোলে খানিকটা ছিটগ্রস্ত। আমি একবার চীনদেশের চমরি গাইয়ের দুধ আনিয়ে খেয়েছিলাম( শুনেছি ওটা নাকি মনোযোগ বাড়ায়- পুরোপুরি বাজে কথা!), আরেকবার নিজের মাথায় ইলেকট্রোড লাগিয়ে মস্তিষ্কের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছিলাম- ভালো শ্যুটিং-এর সময় মস্তিষ্কের কোষগুলো কিরকম আচরণ করে তা দেখতে।
প্রিয় পাঠক, উপরের কথাগুলো অভিনব বিন্দ্রার। পুরো বই জুড়ে দেখতে পাই সাফল্য লাভের উদগ্র বাসনা, নিজের শেষ রক্তবিন্দুটুকু নিংড়ে দিয়ে পারফেকশনের সর্বোচ্চ শেখরে ওঠার পরম আকুতি।মজার ব্যাপার কি জানেন? এই অভিনব বিন্দ্রা কিন্তু সাফ শ্যুটিং-এ বাংলাদেশের শ্যুটারদের কাছে একবার না, বেশ কয়েকবার পরাজিত হয়েছিলেন। প্রতিভার দিক দিয়ে আমাদের শ্যুটারদের চাইতে কোন দিন দিয়েই তিনি এগিয়ে নেই-নিজের বইতে বার বার তিনি বলেছেন কি অদম্য সাধনা এবং কঠোর ব্রত তিনি পালন করেছেন।
এরকম ভয়াবহভাবে নিজেকে যে নিংড়ে দিতে পারে, সে যে ইতিহাস গড়বে তাতে কি অবাক হবার কিছু আছে?
আমি অতি ক্ষুদ্র মানুষ, তবে পেশাগত কারণে বেশ কিছু অসাধারণ সফল মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। এদের মধ্যে আছেন আমার পর্বতারোহী বন্ধু ওয়াসফিয়া নাজরীন, নিশাত সুলতানা আর মির্জা মুহিত, গায়ক আইয়ুব বাচ্চু, শিল্পী হাশেম খান , নোবেলজয়ী ডঃ মুহম্মদ ইউনুস প্রমূখ। সুযোগ পেলেই আমি তাঁদের এই প্রশ্নটা করি- “কিভাবে এতদূর এলেন?”
এঁদের সবার কথাগুলো মিলিয়ে দেখলে সক্রেটিসের গল্পের ভেতরে উত্তরটা পাই।
সক্রেটিসের কাছে একবার এক যুবক এসে সাফল্যলাভের উপায় জানতে চাইলো। সক্রেটিস বললেন, আমার সাথে নদীতে চলো। নদীতে নেমেই বলা নেই কওয়া নেই তিনি ওই যুবকের মাথা পানির নীচে চেপে ধরলেন। ওই যুবক উঠতে চেষ্টা করল কিন্তু শক্তিশালী সক্রেটিসের সাথে সে পেরে উঠছিলো না। অবশেষে ওই যুবকের যখন প্রাণবায়ু বেরিয়ে যায় যায় অবস্থা, সক্রেটিস তাকে রেহাই দিলেন। যুবক কিছুটা সামলে ওঠার পর তিনি প্রশ্ন করলেন,
“পানির নীচে কোন জিনিসটা তুমি সবচাইতে বেশি চাইছিলে?” যুবক উত্তর দিলো- “বাতাস”।
বিজ্ঞ সক্রেটিস বললেন, সাফল্যের সূত্র ঠিক এটাই।“When you want success as badly as you want air under water, success will be yours.”- পানির নীচে থাকলে বাতাসের জন্যে যে আকুতি, সাফল্য পাওয়ার জন্যে তোমার আকুতি যদি ঠিক তেমনটা হয়, তবেই সাফল্যলক্ষ্মী ধরা দেবেন, নচেৎ নয়।
আমার সাফল্যজনিত কথোপকথন এখানেই শেষ।চলে যাবার আগে একটি প্রশ্ন, আমাদের বাংলাদেশের কোন শ্যুটার কি আমার এই অলিম্পিক আফসোস দূর করবেন? প্লিজ!?
সবাইকে ধন্যবাদ।
মাসরুফ হোসেন
মন্তব্য
নিজের অন্তরের গভীর চাওয়াকে হাতে পাওয়াই যদি সাফল্য হয়, তবে গভীর চাওয়াকে বোঝাও কম প্রয়োজন নয় । আমাদের সিস্টেমে কিন্তু আমরা আমাদের গভীর চাওয়াগুলির সঙ্গে আত্মিক ভাবে জড়িত নই, আমাদের পরিবার পালন করা, ও নিজে বেঁচে থাকার জন্য রুটি উপার্জন ছাড়া অন্য কোনো বিষয় যে গুরুত্বের, তা কেউ মনে করে না । অমুক গান করতে চায়, ছবি আঁকতে চায়, পাহাড়ে উঠতে চায়, ফিল্ম বানাতে চায়, বই এর দোকান দিতে চায়, কবি হতে চায় --- এগুলি 'শখ' --- গুরুত্বের নয়।
আমাদের প্যাশন থেকে আমাদের এই হার্দিক নির্বাসন কবে মিটবে?
সুন্দর লিখেছেন - বইটি পড়তে ইচ্ছে করছে!
-আনন্দময়ী মজুমদার
আপনাকে বোধ হয় বই পড়ুয়া গ্রুপে দেখেছি এবং আমার এক কলিগের কাছে খুব সুনাম শুনেছি।
হাশেম খানের সাথে ছেলেবেলায় আলাপের সুযোগ হয়েছিল।
ভালো লাগলো বইটা সম্পর্কে জেনে। সফল্যের জন্য আসলেই 'ক্ষুধা' দরকার।
শুভেচ্ছা
নতুন মন্তব্য করুন