১
মৃত্যু খুব কঠিন জিনিশ । পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ গুলোর একটি হল মারা যাওয়া । আপাত দৃষ্টিতে এই দাবির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে । কারন এরকম বহু উধাহরন পাওয়া যাবে যেখানে মানুষ সহজে মরে গেছে । প্রায় শুনা যায় ঘুমান্ত অবস্থায় অনেকের মৃত্যু ঘটেছে । আবার এরকমও আছে বিছানা থেকে পরে গিয়ে অকাল মৃত্যু । কিন্তু এখানে কিছু প্রশ্ন চলে আসে । যেমন ঘুমের মধ্যে মারা যাওয়াটা যে কষ্টহীন এর সপক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমান নেই । যে ঘুমের মধ্যে মারা গেল দুরভাগ্যবশত তারপক্ষে এসে বলা সম্ভব না যে ভাই অনেক আরামে মারা গেছি । জীবন মরনের সন্ধিখন সে এক সেকেন্ড হউক কিম্বা দশ মিনিট হউক কষ্টের তিব্রতা হয়ত তখন এত ভয়ঙ্কর যে এর স্থিতিকাল কতটুকু হল সেটা গৌন । ছোট একটা উদাহরন দিয়ে বেপারটা খোলসা করা যেতে পারে । গুলির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত যায়গায় একটা চিমটি কাটলে সেটা অনুভব করার সমভাবনা কম । সেটার স্থায়িত্তকাল এখন যাই হউক না কেন । হঠাত তীব্র আঘাতের কারনে আঘাতের জয়গা বোধশুন্য হয়ে যায় । মৃত্যুর ঠিক আগে যন্ত্রনা হয়ত এতটাই তীব্র যে সেটা দিরঘক্ষন অনুভব করার ক্ষমতা মানুষের মধ্যে নেই ।
"মরন সহজ নহে" কবির এই কথা সত্যি প্রমানিত করে চতুরথ বারের মতন শাহ আলম মামা মারা গেলেন না । মারা যাবার জন্য তিনি যারপর নাই চেষ্টা করেছিলেন । চলন্ত বাসের নিচে ঝাপ দিয়েছিলেন এবার । বাস এর ড্রাইভার শেষ মুহুরতে দেখে ফেলায় গাড়ি সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল । তবে গাড়ীর সাথে ধাক্কা লেগে তার বাম হাত ভেঙ্গে গেছে । হাতে প্লাস্টার বাধিয়ে কিছুখন আগে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে ।
এই নিয়ে চারবার শাহ আলম মামা আত্তহত্যার চেষ্টা করে ব্যারথ হলেন । প্রথম বার তিনি গলায় দড়ি দিয়েছিলেন । মামা এম্নিতেই খুব ভীতু প্রকৃতির । আত্তহত্যা করার ভয়ে এবং উত্তেজনায় তিনি বোধ হয় ফ্যান এর সাথে দড়ি ঠিক মতন বাধতে পারেন নি । কারন গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পরা মাত্রই দ্রিম করে মেঝেতে আছড়ে পড়লেন । মরলেনতো না ই মাঝখান থেকে বেকায়দায় পরে তার পা ভেঙ্গে গেল । পা এ প্লাস্টার বাধিয়ে দেড় মাস বিছানায় পড়ে রইলেন । দ্বিতীয় বার তিনি ইদুর মারার বিষ খেলেন । এবারও মরলেন না । তবে তীব্র বেগে তার রক্ত আমাশা শুরু হয়ে গেল । যখন তখন অবস্থা । তাকে হাস্পাতালে থাকতে হল দুই সপ্তাহ । বাংলাদেশের সব কিছুতে ভেজাল । ইদুর মারার বিষও তার বাইরে নয় । তৃতীয় বার দুলা ভাই এর হাতে মার খেয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি । উচু ব্রীজ থেকে লাফিয়ে পরেছিলেন নদীতে । নদীতে পরা মাত্রই নিজের চরম ভুল বুঝতে পারলেন । তিনি সাতার জানেন । যে সাতার জানে তারপক্ষে ইচ্ছাকৃত ভাবে পানিতে ডুবে মরা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার । একটা ইঞ্জিন এর নৌকা তার উপর দিয়ে চলে যাওয়ায় তার পিঠ কেটে গেল সেবার। কিন্তু তিনি দিব্যি বেচে রইলেন ।
মামার জীবনে কোন কিছুই কখনো সহজে আসেনি । তিনি ম্যাট্রিক পাস করেছেন তিন বারের চেষ্টায় , আর ইন্টারমেডিয়েট লেগেছিল দুইবার । বাংলাদেশের মোটামুটি সকল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে ভরতি পরীক্ষা দিয়েছেন । কিন্তু চ্যানস পাননি । দুলাভাই (মহসীন আলি) এর খরচে তার লেখা পড়া চলে । তার থাকা খাওয়ার ব্যয় ভারও দুলাভাই বহন করেন । মহসীন আলি কঠিন মানুষ । মানসিক ভাবে মামাকে অবিরাম অত্যাচারের ভিতরেই শুধু রাখেননি মাঝে মধ্যে টুক টাক শারীরিক শাসনও তিনি করতেন । প্রথম বার ইন্টার মেডিয়েট এ ফেল করার পর মহসীন আলি ছোট একটা মুলি বাশ এক বারিতে মামার পিঠে ভেঙ্গেছিলেন ।
সন্ধ্যায় মামা যখন বাসায় আসলেন মহসীন আলি তখন টিভিতে আবুল কালাম আযাদের "আপনার জিজ্ঞেশা" অনুষ্ঠান দেখছিলেন । জনৈক প্রশ্নকর্তা চিঠিতে লিখেছেন ,
আল্লাহ যেহেতু সর্বেসর্বা তার পক্ষে কি নিজের থেকেও বড় কিছু সৃষ্টি করা সম্ভব ? তিনি যেহেতু সব কিছু করার ক্ষমতা রাখেন তার পক্ষে নিশ্চয় তা সম্ভব । কিন্তু তখন প্রশ্ন আসে তার থেকে বড় কিছুতো হতে পারে না । এই ব্যাপারে আপনার কি মত?
এই ধরনের প্রশ্নের জন্য আবুল কালাম আযাদ সাহেব সম্ভবত তৈরি ছিলেন না। তিনি অনেকটা বিরক্ত হয়ে বললেন,
ধর্ম হল বিশ্বাস এর ব্যাপার । এই ধরনের প্রশ্ন মাথায় আসা ঠিক না ।
মহসীন আলি তখন প্রশ্নকর্তার উদ্দ্যেশে বললেন,
আল্লাহ কি করবেন না করবেন সেইটা জাইনা তুই কি করবি ? হারামজাদা কোনখানকার ।
বসার ঘরে মামা ঢুকা মাত্রই মহসীন আলি বললেন,
শাহ আলম ।
জ্বী দুলাভাই ।
হাতে কি হইছে ?
হাত ভাইঙ্গা গেছে দুলাভাই ।
কেমনে ভাংলো ?
বাস এর সাথে ধাক্কা খাইছিলাম ।
ধাক্কা খাইছিলা নাকি বাস এর ছেমায় (মহসীন আলির কথায় মাঝে মধ্যে টাঙ্গাইলের টান চলে আসে । তার দেশের বাড়ি টাঙ্গাইল) লাফ দিছিলা ?
শাহ আলম মামা কোন উত্তর দিলেন না । মাথা নিচু করে ফ্লোর এর দিকে তাকিয়ে রইলেন । জলিল সম্ভবত হাসপাতালে থাকতেই এই ব্যাপার মহসীন আলিকে বৃত্তান্ত জানিয়ে দিয়েছে । জলিল এ বাড়ি কাজের লোক । তাকে পাঠানো হয়েছিল মামা কে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসার জন্য । শাহ আলম মামা তাকে বেশ কয়েকবার না করে দিয়েছিলেন আসল ঘটনা যেন কনোমতেই দুলাইভাই এর কানে না যায় । কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে হারামজাদাটা কথা রাখেনি ।
মহসীন আলি জলিল কে ডাকলেন ।
জ্বী খালু ।
শোয়ার ঘরের আলনায় দেখ আমার মোটা চামড়ার বেল্টটা আছে । নিয়া আয় ।
জলিল চামড়ার বেল্ট নিয়ে এল । কথা শুনতে পেয়ে আলেয়া বেগম বসার ঘরের দরজায় এসে দাড়িয়েছিলেন । পরিস্থিতি আচ করতে পেরে তিনি স্বামীর দিকে এগিয়ে গেলেন ।
ওরে আজকের মতন মাফ কইরা দেন । বেচারা হাতে অনেক দুক্কু পাইছে ।
তুমি সর আলেয়া । আর নয়তো তোমারে সহকারে পিটামু । তুমি যেমন তোমার ভাইও ওই রকম ।
মারতে মারতে মামাকে ফ্লোর এ চিত করে ফেললেন মহসীন আলি । চিৎকার করে বলতে লাগলেন,
তোমার মরন এর এত শখ আমারে বললেইতো পারো । ব্যাবস্থা কইরা দেই ।
মামা মেঝেতে পড়ে গোংগাতে লাগলেন । মার এর চোটে তার সম্ভবত পেশাপ হয়ে গিয়েছিল । মেঝের এক অংশে পানির মতন দেখা গেল ।
জলিল এসে মামাকে কোলে করে তার রুমে নিয়ে গেল । আলেয়া বেগম তখন ইনিয়ে বিনিয়ে কাদছেন ।
শেফার বয়স ষোল । এবছর এইচ এস সি দেবে । তার শুকনা, পাতলা এবং ফরসা শরীর । দেখে মনে হয় পেট ভরে ভাত খেতে পায় না অনেক দিন। চেহারা কেমন দুরবল দুরবল । শুকনা মানুষটার শরীরে আল্লাহ যে জিনিশ ছাপ্পড় ফারকে দিয়েছেন তাহল তার মাথার চুল । ঘন, কালো, এবং দীঘল কুন্তল । তার মাথায় এত চুল যে কপাল এর যেখান থেকে হেয়ার লাইন শুরু হয় তার আশ পাশ দিয়েও ছোট ছোট চুল আছে । শেফা এগুলোর নাম দিয়েছে বাবু চুল । বাচ্চাদের মতন ছোট বলে । ধনীদের মাথা ভরতি টাক থাকে । একমাত্র বিল গেটস ছাড়া পৃথীবির আর কোন ধনী মানুষের মাথায় চুল নেই । আর অন্য দিকে আল্লাহ গরীব মানুষদের টাকার বদলে মাথায় অনেক চুল দেন । শেফারা ছয় ভাই বোন । সবার মাথায় সুন্দর বন এর মত ঘন চুল । মাসাল্লাহ ।
মামার ঘরটা শেফার ঘরের পাশেই । কান পেতে শেফা শুনতে পেল শাহ আলম মামা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছেন । শাহ আলম শেফার আপন মামা নন । আসলে এই বাড়ির কেউই শেফার আপন নয় । শেফার বাবার সাথে মহসীন আলির বহু দূরের কেমন যেন একটা সম্পরক আছে । এত দূরের যে তাকে সম্পরক না বলাই ভালো । একদম অচেনা মানুষও বোধকরি তার থেকে কাছের হয় । তারা একই গ্রামের অধিবাসী এই যা । গ্রামে বখাটে ছেলেরা শেফাকে তুলে নিয়ে যাবার হুমকি দিচ্ছিল । শেফার বাবা লোকমান মিয়া ঢাকায় এসে মহসীন আলির পায়ে হুমড়ি খেয়ে পরলেন । শেফার বাবা প্রায় হত দরিদ্র কৃষক মানুষ । গ্রামের ভিখারীরা শহরের ভিখারীদের থেকেও গরিব হয় । শেফারা ধন সম্পত্তির দিক থেকে প্রায় শহরের ভিখারীদের কাছাকাছি । একটু উপরেও হতে পারে । যে বছর লোকমান মিয়ার স্বল্প জমিতে আবাদ একটু ভাল হত সে বছর শেফারা একটু ভাল মন্দ খেতে পরতে পারত । যাহোক যাদের কোন ক্ষমতা নেই তাদের সহজে কান্না আসে । হাত পা ধরতেও তাদের বিন্দু মাত্র বাধে না । সব কিছুতে অক্ষম বলে তাদের গলার স্বরও হয় মিন মিনে । লোকমান মিয়া কোন মতেই মহসীন আলির পা ছাড়েন না । কাদতে কাদতে বিড়বিড় করে কি যেন বলতে লাগলেন । মহসীন আলি পা ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য কয়েকবার ব্যারথ চেষ্টা করে বললেন,
আরে কি যন্ত্রনা ! পা ছারেন ।
মহসীন আলি যত পা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন শেফার বাবা তার চেয়েও জোড়ে তার পা চেপে ধরেন । যাহোক শেষ পরযন্ত অনেক টানা টানির পর মহসীন আলি পা ছুটিয়ে নিতে পেরেছিলেন । শেফার বাবার কাছে ঘটনা জানার পর তিনি বললেন,
মেয়ে রাইখা এই মুহুরতে আপনি বিদায় হন । এক্ষন ।
মেয়েকে শেষ বিদায় জানানর জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন লোকমান মিয়া । কিন্তু মহসীন আলি চেচিয়ে উঠলেন,
আবার কি ? কান দিয়া যায় নাই কি বললাম ?
লোকমান মিয়া তখুনি মেয়েকে রেখে বিদায় হয়ে গেলেন । এই ছিল শেফার গ্রাম থেকে ঢাকায় হিজরত এর কাহিনী ।
মামার কো কো শুনে শেফার খুব মন খারাপ হয়ে গেল । বেচারা শান্ত শিষ্ট গোবেচারা টাইপ এর মানুষ । তাকে যা বলা হয় রোবট এর মতো তিনি তাই করেন । কখনো কোন না নেই । আর এই মানুষটার উপর দিয়েই নিয়মত হারিকেন কিংবা টরনেডো টাইপ এর ঝড় বয়ে যায় ।
শেফা এন্টিবায়োটিক ক্রীম এর টিউবটা নিয়ে মামার ঘরে ঢুকল । মৃদু স্বরে শেফা ডাকল,
মামা ?
কাদতে কাদতে মামা বললেন,
আম্মা ও আম্মা গো......পিঠ আমার আর নাইগো আম্মা ।
মামা আমি শেফু ।
মামা চুপ করে গেলেন । এতক্ষন তিনি ফোপাচ্ছিলেন । তার ফোপানি থেমে গেল । শেফার চোখে পানি চলে আসল। বেচারা কষ্টে থাকতে না পেরে এতখন তার মৃত মা কে ডাকছিলেন ।
মামা কে চিত করে শুইয়ে দিল শেফা । পিঠের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল । বেল্ট এর বারিতে ফেটে ফেটে গেছে পিঠ । আস্তে আস্তে করে মামার পিঠে মলম লাগিয়ে দিল শেফা । মামা আর থাকতে পারলেন না । ব্যাথায় হাউ মাউ করে কাদতে লাগলেন ।
মহসীন আলির হাত মালিশ করে দিচ্ছিল জলিল । শাহ আলম কে ইচ্ছে মতন মারপিট করে তার হাত ব্যাথা হয়ে গিয়েছিল । রান্না ঘরে আলেয়া বেগম এর ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না তখনও থামেনি ।
আমার মা মরা ভাইডারে মাইরা কিচ্ছু রাখল না রে ।
বসার ঘর থেকে মহসীন আলি চিৎকার করে বললেন,
চুপ একদম চুপ । একটা কথা বলবা না ।
বাসার পরিস্থিতি খারাপ । মহসীন আলির মাথা যেদিন এক্সট্রা গরম থাকে সেদিন তিনি মাউন্ট ভিসুভিয়াস হয়ে যান । ভয়ঙ্কর শব্দ সহকারে অগ্নিতপাত ঘটতে থাকে । ডাইনিং রুম এ বসে পড়ছিল শেলী । মহসীন আলির ছোট মেয়ে । শেফা আর শেলী দুজনেই এই বছর এইচ এস সি পরক্ষারথী । বাবার বিপদজনক টেম্পারমেন্ট সম্পরকে সে অবহিত । কখন কোন দিকে মোড় নেয় তার নেই ঠিক ঠিকানা । দেখা গেল একটু আগে যে বিষ তিনি মামার উপর ঢালছিলেন । এখন সেটা বামে মোড় নিয়ে শেলীর দিকে গড়িয়েছে । মারামারির ব্যাপারে নারী পুরুষে কোন ভেদাভেদ রাখেন না মহসীন আলি । এতখন আস্তে আস্তে পড়ছিল শেলী । এবার সে গলার ভলিউম আরও দুই দাগ বাড়িয়ে দিল, কবি এখানে বলতে চেয়েছেন...কবি এখানে বলতে চেয়েছেন......। কবি এখানে কি বলতে চেয়েছেন সেটা অবশ্য পরিষ্কার না। শেলী অনেকখন ধরে এই একটা কথাই বলে যাচ্ছে ।
রাত নয়টার দিকে বাসায় ঢুকল মামুন । মামুন শেলীর ছোট ভাই । ক্লাস নাইন এ পড়ে। ছেলেকে এত রাতে বাসায় ঢুকতে দেখে মহসীন আলি জিজ্ঞেস করলেন,
আপনে কই থেইক্কা আসলেন ?
মাথা নিচু করে মিন মিন করে মামুন বলল,
শরিফ এর কাছে নোট আনতে গেছিলাম ।
মহসীন আলিঃ সারাদিন কি করছেন আপনে ? নাকি শরিফ নিশাচর প্রানী ? শুধু রাইতের বেলায় তার সাক্ষাত মেলে ?
মামুন জানে মহসীন আলি যখন এভাবে কথা বলেন তখন অবস্থা খুবি বেগতিক । এখন কথা বলা মানে পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তোলা । মামুন চুপ করে থাকল । মহসীন আলি জলিল কে ডাকলেন,
জলিল ?
জ্বি খালু ?
ডাইনিং রুম থেইক্কা একটা চেয়ার নিয়া আয় ।
জলিল চেয়ার নিয়ে আসল । মহসীন আলি বললেন,
জলিল এইবার অরে শক্ত কইরা ধর । ছুটলে কিন্তু তোর কপালে দুখ আছে ।
জলিল মামুন কে শক্ত করে চেপে ধরল । মহসীন আলি চেয়ার এর উপরে দাঁড়িয়ে মেশিন গান এর ব্রাস ফায়ার এর মতন দ্রুত গতিতে মামুনের গালে গোটা দশেক চর বসিয়ে দিলেন । মামুন এর বয়ষ মাত্র চৌদ্দ বছর । কিন্তু সে এখুনি প্রায় তাল গাছের মতন লম্বা । ছয় ফুট এর কাছা কাছি । আর অন্য দিকে মহসীন আলি ছোট খাট মানুষ । টেনে টুনে হয়তো পাচ ফুটের মতন লম্বা হবেন । এমন মানুষের ঘরে হিমালয় পরবত এর মতন বাচ্চা পয়দা হল কি করে তা গবেষনার বিষয় । ছেলের গালের নাগাল পাওয়া যাবে না জেনেই চেয়ার এর ব্যাবস্থা করেছেন মহসীন আলি ।
চর এত দ্রুত গতিতে হয়েছিল যে তা অনুধাবন করতে মামুন এর সেকেন্ড পাচেক এর মতন লাগল । তারপর সে "আম্মা গো" বলে বিকট চিৎকার দিয়ে মূরছা গেল । সৌভাগ্যবশত জলিল তাকে আগে থেকেই চেপে ধরে রেখেছিল । আর নয়ত নিরঘাত মাথা ঘুরে মেঝেতে পরে যেত মামুন ।
রান্না ঘর থেকে ঝড় এর গতিতে ছুটে এসে ছেলের উপর হুমড়ি খেয়ে পরলেন আলেয়া বেগম ।
হায় হায় গো আমার পুলাডারে মারডার কইরা ফালাইছে রে...। ডাকাইত এর ঘরে ডাকাইত আমার পুলাডারে শেষ কইরা ফালাইছেরে... বলে মরন কান্না শুরু করলেন আলেয়া বেগম ।
ক্ষুধায় পেট চো চো করছিল শেফার । তার মনে হল এই পরিস্থিতিতে আজকে রাতের খাওয়া হবে না । হলোও তাই । সবাই যে যার ঘরে যেয়ে শুয়ে পড়ল । শেফা আর শেলী একি বিছানায় ঘুমায় । শেলী দুই মিনিট এর মাথায় ফুরুত ফুরুত করে নাক ডাকতে লাগল । পেটে ক্ষুধা নিয়ে শেফা ঘুমাতে পারে না । একটা বিস্কিট হলেও তাকে খেতে হবে । আষাড় মাসের প্রথম বৃষ্টিতে যেমন চার দিক থেকে কোলা ব্যাং এর দল ক্যা কো করে ঠিক তেমনি চার দিক থেকে শব্দ আসতে লাগল । মার খেয়ে শহ আলম মামা আর মামুন কো কো করছিল । ওই দিকে অন্য ঘরে আলেয়া বেগম তখন ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাদছেন । আর মহসীন আলি ছেলে আর শালাকে মারধর করে হাতের ব্যাথায় আহ উহ করছেন ।
২
এই বাড়ীতে কাজের মেয়ে নেই । রান্নাঘরের যাবতীয় কাজ শামাল দেন আলেয়া বেগম আর শেফা । নিজের মেয়ে কে রান্না ঘরে ঢুকতে দেন না আলেয়া বেগম। চুলার গরম আর ধোয়ায় মেয়ের গাঁ এর রঙ কালো হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে । এখানে বলে রাখা ভাল যে শেলীর গাঁ এর রঙ পাতিল এর তলা থেকে একটু পরিষ্কার হতে পারে । কিনতু আলেয়া বেগম এর কাছে সেটাই দুধে আলতা । শেফার ফরসা গায়ের রঙে আলেয়া বেগম যারপর নাই ঈর্ষান্বিত । সুযগ পেলেই শেফার টিকটিকির মতন হলুদ চামড়া দেখলে উনার কেমন বমি বমি ভাব হয় সেটা মনে করিয়ে দেন ।
রান্না ঘরে সকাল বেলায় আলু আর পরোটা ভাজছিল শেফা । ঠান্ডা হয়ে যায় বলে চা টা সে পরে বসায় । এমন সময় বসার ঘর থেকে মহসীন আলির চিৎকার শোনা গেল,
কই রে শেফু? চা দিবি না কি?
শেফা উত্তর দেয়,
আনতেছি খালু ।
প্রায় আধা ঘন্টা আগে চা চেয়েছিলেন মহসীন আলি । এখন পরযন্ত তা না আসায় তার ধরযের সীমা প্রায় ছাড়িয়ে যাচ্ছিল । অবশ্য মহসীন আলির ধরযের সীমানা খুবি ছোট । তিনি বদ রাগি মানুষ । লোক মুখে শোনা যায় এই গুন পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত । তার বাবাও নাকি সম পরিমান বদরাগি ছিলেন । আলু আর পরোটা ভাজা হয়ে যেতেই চা নিয়ে এল শেফা । মহসীন আলি গজ গজ করতে করতে বললেন,
এক কাপ চা বানাইতে এক দিন লাগে?
শেফা বলল,
চুলা খালি ছিল না খালু ।
এই রকম আকাইম্মা হইলে কপালে দুঃখ আছে তোমার । বিবাহতো এখনো হয় নাই । বিবাহের পরে যখন জামাই এর লাত্থি পিঠে পড়বে তখন বুঝবা সংসার ধরম কত প্রকার এবং কি কি ।
চা নিতে গিয়ে কাকিয়ে উঠলেন মহসীন আলি । কাওকে মারলে যে মার খায় তার থেকে আরো বেশি ব্যাথা পায় মার প্রদান কারি ব্যাক্তি । মহসীন আলির হাতের ব্যাথা মনে হচ্ছে আরো বেড়েছে । মালিশ করে দেওয়ার জন্য শেফা মহসীন আলির গায়ে হাত দিতেই তিনি খেকিয়ে উঠলেন,
তোমার পিরিত দেখানোর প্রয়জন নাই । এখন দয়া কইরা আমার ছেমা থেইক্কা দূর হউ ।
শাহ আলম মামার বিছানা থেকে উঠার অবস্থা ছিল না । নাস্তা নিয়ে তার রুমে গেল শেফা । মামা বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে ছিলেন । শেফা বলল,
মামা নাস্তা ।
কোকাতে কোকাতে মামা বললেন,
শেফা তুমি একটু জলিল রে ডাইকা দিবা ? হারামজাদাটারে কতখন ধইরা ডাকতেছি । কোন সাড়া শব্দ নাই ।
শেফা বলল,
জলিলকে আমি ডেকে দিচ্ছি মামা ।
জলিল কে কোথাও না পেয়ে ছাদে গেল শেফা । ছাদে বসে সিগারেট টানছিল জলিল । শেফা কে দেখা মাত্রই ফেলে দিল ।
জলিল এখানে কি কর ?
আপা গতরে হাওয়া লাগাই । সকাল বেলার হাওয়া খুব ফ্রেশ । শরীল সাস্থ্য ভাল থাকে ।
জলিল ধুরন্ধর টাইপ এর মানুষ । ঊপর দিয়ে সহজ সরল । কিন্তু ভিতরে প্রচন্ড চালবাজ । প্রায় সমস্ত কিছু থেকে ফায়দা লোটার আকাঙ্ক্ষা তার ভেতর আছে । সেটা যত নগন্য সুবিধাই হোক ।
শেফা বলল,
মামা তোমাকে এতক্ষন ধরে ডাকতেছে যাও না কেন ?
জলিল উদাস গলায় বলল,
ডাকুক ।
শেফা জানে এই বাড়ির কেও না বলে জলিল বেশির ভাগ সময় তার কথায় তোয়াক্কা করে না । তাকে দোকান থেকে কিছু একটা এনে দিতে বললে বেশির ভাগ সময় বলে সে ব্যাস্ত । তার টাইম নাই । শেফা বলল,
ডাকুক মানে ? তুমি শুনবা না সে কি চায় ?
জলিল বলল,
আপা আমি জানি সে কি চায় । কইতে শরম করে । তাই আপনারে কইতে পারতাছি না ।
কি কইতে শরম করে, শেফা জিজ্ঞেশ করে ।
আপা হেয় বাথরুমে যাইব ।
বাথ রুমে যাবে তাকে বাথরুম এ নিয়া যাও । তার হাত ভাঙ্গা । তার উপর কালকে যে ধকল গেছে বেচারাতো সোজা হয়ে দাড়াতে পারছে না ।
আপা, সমইসসা তো সেইটা না । সমইসসা অন্য খানে ।
বিরক্ত হয়ে জলিল এর মত করে শেফা বলল,
সমইসসা কোন খানে ?
কিছুখন চুপ করে থেকে জলিল বলল,
আপা হের বাম হাত ভাংছে । হাইগা সুচতে পারে না । আমারে কয় সুচাইয়া দিতে । আপা আমি গরিব মানুষ বইলা কি আমার মইদ্দে ঘিন্না নাই ? মাছুম বাচ্চা হইলে এক কথা ছিল । বুইরা একটা বেডা । হের পুটকিত কেমনে আমি হাত দেই ?
জলিল এর কথা শুনে থ মেরে গেল শেফা । কি বলবে বুঝে পেল না ।
৩
বাইরে কঠিন রোদ । বাতাসে আদ্রতা বেশি বলে ভ্যাপসা গরম । এ গরম যা তা গরম নয় । কারখানার দূষন, গাড়ির ধোয়া, ধুলা , রাস্তার আবরজনা আর লাখ লাখ মানুষের শরীরের তাপের মিস্রনে সৃষ্ট এ অন্য রকম গরম । যেন হাবিয়া দোযখ থেকে এক টুকরা গরম আল্লাহ বাংলাদেশের দিকে ছুড়ে দিয়েছেন । এরকম দিনে উরন্ত অবস্থায় হিট স্ট্রোক করে গলন্ত পিচের রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে পাতি কাক । এই গরমে পারত পক্ষে মানুষ বাইরে বের হয় না । যারা দিন আনে দিন খায় সেই রিক্সাওালারাও এই গরমে হুড তুলে দিয়ে ঝিমায় ।
ক্লাস শেষে বাসায় যাচ্ছিল শেফা । রাস্তায় কোন রিক্সা নেই । তেজগাও সরকারি কলেজ থেকে নাখাল পাড়া খুব বেশি দূরে নয় । রিকশায় পনের টাকা লাগে । কিন্তু এই গরমে এতটুকু রাস্তা হেটে যাওয়া মানে পুলসিরাত পার হওয়ার মত । দর দর করে ঘামছিল শেফা । এমন সময় কালো রঙের একটা টয়োটা স্পোর্টস কার পাশে এসে থামল । জানালার কাচ নেমে আসতেই ভিতরে শেলীকে দেখা গেল ।
শেফু ভিতরে আয়, ডাকল শেলী ।
উঠবে কিনা দ্বিধায় ছিল শেফা । কিন্তু শেলী আবার ডাকতেই চরে বসল গাড়িতে । নাখাল পারার দিকে না গিয়ে গাড়ি ছুটল পূর্ব রাজা বাজারের দিকে । গাড়ির চালাচ্ছিল যে তাকে চেনে শেফা । তেজগা কলেজেই পড়ে । নাম রাকেশ । নামটা হিন্দু । দেখে মনে হয় অনেক বড় লোকের বখে যাওয়া তনয় । মাথার চুল সব সজারুর কাটার মতন হেয়ার জেল দিয়ে আকাশ মুখী করা । বাম কানে দুল । গায়ে লাল রঙ এর লা কোস্ট এর পোলো শার্ট । কোমড়ে ব্লু ডেনিম । পেছনের প্যাসেঞ্জার সিট এ আরেকটা ছেলে বসা । এক চেনে না শেফু । আগে দেখেনি কখনো । শেলী পরিচয় করিয়ে দিল । জানা গেল শেফার পাশে যে বসেছে তার নাম জাহিদ ।
জাহিদ বলল,
ইউ আর সো প্রেটি । ইউ হ্যাভ বিউটিফুল আইজ ।
সরাসরি প্রশংসায় অপ্রস্তুত হয়ে গেল শেফা । কোনমতে বলল,
থ্যাঙ্কস ।
তোমার ফেইসবুক এ একাউন্ট আছে ?
শেফার কাছে ফেইসবুক জিনিশটা নতুন । ক্লাসের অনেকের কাছেই শোনা যায় তারা ইন্টারনেট এ ফেসবুকে কি না কি করে । এই মোবাইল ফোন এর যুগে শেফার নিজের কোন ফোন নেই । বাসায় সবার কাছে নিদেন পক্ষে একটা হলেও সেল ফোন আছে । এমন কি জলিল যে কাজের লোক তারও ফোন আছে । কিন্তু শেফার নেই । কে কিনে দেবে ? শেফার বাবা শেফাকে ঢাকায় ফেলে দিয়ে সেই যে গেছেন তারপর আর কোন হদীস নেই । শেফা মাঝে মধ্যে চিঠি লেখে । সেসব চিঠির উত্তরও কালে ভদ্রে পাওয়া যায় না । যে বাড়িতে এত গুলো খানে ওয়ালা সেখানে একজন কমে যাওয়া মানে ঘাড়ের উপর থেকে বিরাট বড় বোঝা নেমে যাওয়া । শখ করে কেইবা সে বোঝা টেনে আবার ঘাড়ে উঠাতে যাবে ?
শেফা উত্তর দিল,
আমার ফেইসবুক নেই ।
জাহিদ বলল,
আর ইউ কিডিং ? ফেইসবুক ছাড়া আজকাল চলে নাকি ?
শেফা চুপ করে থাকল । সামনের সিট থেকে শেলী বলল,
ও এত কিছু বোঝে না ।
তারপর রাকেশ এর উদ্দেশ্যে বলল,
রাকেশ তুমি কি আবার ইউ কে তে যাচ্ছ?
রাকেশ বলল,
হ্যা । আমার কাজিন এর বিয়ে এটেন্ড করব । কেন কিছু লাগবে তোমার ?
শেলী বলল,
আমাকে ভেরা ওয়াং এর প্রিন্সেস পারফিউমটা এনে দিবা ? প্রেটি প্লীজ ।
রাকেশ বলল,
সিওর । বাট দেয়ার ইজ এ প্রাইস টু পে ।
বলে চোখ টিপল । শেলী রাকেশের হাতে থাপ্পড় দিয়ে বলল,
বদ ।
কি ধরনের মূল্য শেলীকে দিতে হবে বুঝল না শেফা । রাজা বাজারে এক আলিশান বাড়ির সামনে গাড়ি থামল । বাড়ির নেম প্লেট এ লেখা আল্বাট্রস । নিচে মারবেল পাথরে খোদাই করা একটা ডানা মেলা পাখির ছবি । বাড়িতে ঢুকে থতমত খেল শেফা । বাড়ির ড্রইং রুম দেখে মনে হচ্ছে ছোটখাট একটা যাদুঘর । এধরনের ফারনিচার আগে কখনো দেখেনি । অনেক দামি হবে দেখলেই বোঝা যায় । এক কোনায় একদম সত্যিকারের একটা পালকিও রাখা আছে । সে পালকি তে অনেক কারু কাজ করা । দেয়ালে ঝোলানো বিশাল একটা এল সি ডি টিভি । দেখতে ছবির ফ্রেম এর মতন । রাকেশ টিভি ছেড়ে দিয়ে বলল,
কি খাবা ?
শেলী শিষ দিতে দিতে বলল,
আমি ওয়াইন খাব । তোমার সেই ওয়াইন আছে এখনো ?
রাকেশ বলল,
আছে । তবে অন্য ব্র্যান্ড । এটা আরো ভাল ।
শেলী বলল,
জোস !
আর তুমি ? শেফাকে উদ্দেশ্য করে বলল রাকেশ ।
শেফা বলল,
আমি কিছু খাব না।
রাকেশ একটা ওয়াইন এর বোতল নিয়ে এল । সাথে কিছু পেস্ট্রি । আর শেফার জন্য স্প্রাইট । শেলী বলল,
শেফা তোরা গল্প কর । আমি আর রাকেশ পাশের রুমেই আছি ।
বলে শেলী আর রাকেশ পাশের একটা রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল ।
শেলী কি গল্প করবে ভেবে না পেয়ে চুপ করে থাকল । জাহিদ জিজ্ঞেস করল,
তোমরা কয় ভাই বোন ?
শেলী বলল,
আমরা পাচ বোন এক ভাই ।
বাপস! বাংলাদেশের অরধেক জনসংখ্যাতো তোমরাই ।
অনেকটা ঐ রকমি । আমরা গ্রাম এ থাকিতো । জমি দেখা শোনা করার জন্য লোক লাগে । তাই গ্রাম এলাকায় মানুষ বাচ্চা কাচ্চা বেশি নেয় । তবে আমারা মেয়ে হয়ে বাবাকে অনেক বিপদে ফেলে দিয়েছি ।
জাহিদ গ্লাসে ছোট ছোট চুমুক দিয়ে ওয়াইন খাচ্ছিল । জাহিদের লম্বা গড়ন । গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা । চেহারাটা সুন্দর । বদখত ছেলেরাও টি শার্ট আর জিন্স পড়লে ভাল লাগে । টি শারট আর ফেডেড জিন্সে জাহিদ কে খুব স্মার্ট লাগছিল । জাহিদ বলল,
তোমাকে দেখে মনে হয় না গ্রামের মেয়ে ।
তাই ?
হ্যা । যাহোক ওয়াইন খেয়েছ কখনো ?
না ।
খেয়ে দেখ । এটা গ্রেপস থেকে বানানো । আঙ্গুরের জুস খাওয়া আর ওয়াইন খাওয়া একি জিনিশ ।
শেফা বলল,
নো থ্যাংকস । এসব জিনিশে আমার আগ্রহ নেই ।
জাহিদ মৃদু হেসে বলল,
তোমার বয় ফ্রেন্ড আছে ?
শেফা বলল,
না নেই ।
জাহিদ অবাক হয়ে বলল,
কি বল তুমি ? তুমি দেখতে এত কিউট । তোমার পেছনে তো ছেলেদের লম্বা লাইন লেগে থাকার কথা ।
শেফা বলল,
কলেজে কিছু ছেলে খুব ডিস্টারব করে । অতটুকুই । আমি পাত্তা দেই না ।
জাহিদ বলল,
মেক আউট করেছ কখনো কোন ছেলের সাথে?
শেফা বলল,
মানে?
মেক আউট মানে জানো না ?
না ।
ওই রুমে রাকেশ আর শেলী এখন কি করছে তোমার কাছে মনে হয় ?
শেফার বুক ধুক পুক করছিল । শেফা ধারনা করতে পারে শেলী আর রাকেশ কি করতে পারে ওই রুম এ । শেফা চুপ করে থাকল । সম্পূরন হতবাক করে দিয়ে জাহিদ উঠে এসে শেফা কে চুমু খেল ।
৪
আলেয়া বেগম নিয়মিত নামাজ কালাম পড়েন না । কিন্তু পীর ফকিরে তার অগাধ বিশ্বাস । পীরে নবাবজাদা ফরিদপুরীর তিনি একজন মুরিদ । ফরিদপুরী সাহেব ঢাকায় এসেছেন কিন্তু তিনি তার সাথে দেখা করেননি এরকমটা হয় না। দেখা করার সময় অনেক ধরনের হাদিয়া নিয়ে যান তিনি । একবার নিজের কিছু গহনা বিক্রি করে দিয়ে ফরিদপুরির খাদেমদের জন্য দুটি স্বাস্থ্যবান গরু কিনে দিলেন । ফরিদপুরী সাহেব দিলখুশ হয়ে আলেয়া বেগম এর জন্য স্পেশাল দোয়ার ব্যাবস্থা করলেন । আলেয়া বেগমের সাথে একান্তে কিছুখন ইহকাল পরকাল নিয়ে আলোচনাও করলেন । ফরিদপুরী সাহেব এর দর্শন লাভের আশায় অনেক কিসিম এর মানুষ ধরনা দেয় । বলা নেই কওয়া নেই যখন তখন অনেক মুরিদরা তার ঘরে ঢুকে যেতে পারে বলে খাদেমরা দরজায় দাঁড়িয়ে রইল । আলেয়া বেগম ফরিদপুরী সাহেবের নেক নজড় লাভ করে
আত্তহারা । গহনা বিক্রির ব্যাপারে মহসীন আলি অবশ্য কিছু জানলেন না । জানলে তুলকালাম কান্ড বেধে যেত ।
পীরে নবাবজাদা ফরিদপুরী নারায়ানগঞ্জে এসেছেন । অন্য কোন সময় হলে আলেয়া বেগম তখুনি ছুটে যেতেন । কিন্তু আগামিকাল শেলী কে দেখতে আসবে এক ছেলে পক্ষ । মেয়েকে এখুনি বিয়ে দেবার পক্ষপাতি নন মহসীন আলি । কিন্তু আলেয়া বেগম গগন বিদারী চিৎকার চেচামেচি করতে লাগলেন । তার বড় ভাই (ইনি পুরান ঢাকায় থাকেন) এক সুপাত্রের সন্ধান নিয়ে এসেছেন । ছেলে আমেরিকায় নাসা'র বৈজ্ঞানিক । পেয়াজ ডিম (আসলে পি এইচ ডি ) ডিগ্রী ধারী । উচু লম্বা । বিদেশিদের মতন চেহারা । এমন সম্মন্ধ হাত ছাড়া করা মানে হীরার টুকরা শুধু পানিতে না একদম গুয়ের টাঙ্কির মধ্যে ফেলে দেয়া । মহসীন আলি বললেন,
এই রকম গুনধর পুত্র তোমার পাতিলের মতন চেহারার মেয়েকে বিয়ে করতে যাবে কেন ?
উত্তরে আলেয়া বেগম চেচিয়ে অনেক কিছু বললেন । যার সারমর্ম হল মহসীন আলি হলেন ফকিন্নির জাত । তার ভাই পুরান ঢাকার নামি দামী ব্যাবসায়ী না হলে এরকম ফকিন্নির ঘরের ফকিন্নির মেয়ের সাথে কেও বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে আসত না । স্ত্রীর ক্যাচ ক্যাচানিতে মহসীন আলি রাজি হলেন এক শর্তে । ছেলে পক্ষ মেয়ে কে পছন্দ করলে এখন শুধু এনগেজমেন্ট হবে । এইচ এস সি পরিক্ষার পর আকদ হতে পারে । আর ওয়ালিমা হয়ে যাবার পর শেলীকে অতি অবশ্যই ইউনিভারসিটিতে পড়তে দিতে হবে ।
আলেয়া বেগম এর উৎসাহ দেখে কে ? তিনি তা তা থৈ থৈ নৃত্তের তালে সব কিছুর দিক নিরদেশনা দিতে লাগলেন । বাইশ পদের রান্না হবে । মেনু দেখে বর পক্ষের চোখ শুধু ছানা বড়া নয় যেন টাঙ্গাইলের এক্সট্রা লারজ চমচম হয়ে যায় সে ব্যাবস্থা করতে হবে । একফাকে তিনি হাজার দশেক টাকা দিয়ে শাহ আলম কে নারায়ন গঞ্জে পীরের কাছে পাঠিয়ে দিলেন । এত বড় একটা বিষয় । উনার নেক দৃষ্টি থাকলে ছেলে শেলীর পায়ের কাছে এসে গড়াগড়ি দিতে বাধ্য ।
শেলী ঘরে সিটকিনি দিয়ে বসে আছে । বিয়ে করবে না । আলেয়া বেগম কিছুখন পর পর এসে আদুরে গলায় মেয়েকে গলানোর চেষ্টা করছেন ।
মা, মা আমার...তোরে এখুনি বিয়া করতে হইব না । কালকে ছেলেরা আসুক । তোরে দেইখা যাক । তুই শুধু সাজু গুজু করে পুতুল সাইজা বইসা থাকবি । এরপর ছেলেরে তোর পছন্দ হইল কিনা কিম্বা ছেলেরা তোরে পছন্দ করল কিনা সেইটা পরের বিষয় ।
শেলীর মধ্যে দরজা খোলার কোন লক্ষন দেখা গেল না । আলেয়া বেগম দমবার পাত্রি নন । তিনি ফুড়ফুড়ে মেজাজে ঘোরা ফেরা করতে লাগলেন । তবে শেফার জান বেড়িয়ে যাবার উপক্রম হল । রান্না বান্না সব তাকেই করতে হচ্ছে । রাতে শেলী দরজা খুলল । আলেয়া বেগম এসে মেয়েকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলেন । শেফু যখন শোবার আয়জন করছিল তখন আলেয়া বেগম ডাকলেন,
শেফু ।
জ্বি খালা ।
একটু বাইরে আয় ।
শেফু ঘর থেকে বের হতেই আলেয়া বেগম তাকে রান্না ঘরে নিয়ে গেলেন ।
শোন শেফু, তোরে যা যা বলব তুই একদম সেটাই করবি ।
কি করব খালা? শেফা জানতে চাইল ।
আলেয়া বেগম বললেন,
তার আগে বল তোরে এতখন কি বললাম ?
শেফা বলল,
খালা আপনিতো তেমন কিছু বলেন নাই । শুধু বলছেন আপনি যা যা বলবেন আমি যেন তা তাই করি ।
হ্যা, খালা বললেন, বল তাই করবি ?
শেফা বলল, খালা আপনি যা বলবেন আমি এক্সাক্টলি তাই করব ।
ঠিক আছে ।
সন্তুষ্ট হলেন খালা । বললেন,
প্রথম হইল, শেলী রে আগামিকাল দুপুর পরযন্ত এক মুহুরতের জন্য চোখের আড়াল করবি না । ছেলেরা দুপুরে আসব । তার আগ পরযন্ত তুই শেলীর সাথে ছায়ার মত লাইগা থাকবি । কি করবি বল?
শেলী কে আগামিকাল দুপুর পরযন্ত চোখের আড়াল করব না । শেলীর সাথে পেটিকোট এর মতন লেগে থাকব । খালার কথার রিপিট করল শেফা ।
খালা বললেন, পেটিকোট এর মতন লাইগা থাকবি মানে কি ?
শেফা বলল, আপনি না বললেন ছায়ার মতন লেগে থাকতে ।
খালা রেগে গিয়ে বললেন, আমার সাথে ইয়ারকি । আমি কি তোমার ইয়ার বান্ধবী ? বেয়াদপ জানি কোনখানকার ।
শেফা বলল, ভুল হয়ে গেছে খালা । সরি । আপনি বলেন ।
আলেয়া বেগম শান্ত হলেন । বললেন,
দুই, আগামিকাল যখন ছেলেরা আসব তখন তুই ঘরে দরজা দিয়ে বসে থাকবি । কোন মতেই যেন তোর চান বদন দেখা না যায় । কি করবি বল ?
তার চেহারা নিয়ে খালা যারপর নাই ভীত বুঝতে পারল শেফা । মাথা দুলিয়ে শেফা বলল,
ঘরে খিড়কি চেপে বসে থাকব খালা । ভয়ের কিছু নাই ।
ভয়ের কিছু নাই মানে কি ? তোরে দেখে আমি ডরাই নাকি ? যেই না আমার ঘোরার পাছার মতন চেহারা ...। যাহোক যদি তোর খোমা দেখিরে খোদার কসম তোর চোখ খুন্তি দিয়ে গেলে দিব আমি ।
থ্রেট দিয়ে স্টার জলশায় 'ভালবাসা ডট কম' দেখতে গেলেন আলেয়া বেগম । ঘরে ঢুকে বাতি নিভিয়ে দিয়ে শেলীর পাশে শুয়ে পড়ল শেফা । শেলী মরার মতন পড়ে ছিল এতখন । এবার নড়েচড়ে বলল,
শেফু ঘুমিয়েছিস ?
শেফা বলল, না ।
ওই দিনের ঘটনার পর শেলীর সাথে ঠিক মতন কথা বলেনা শেফা । জাহিদ জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করতেই এক ধাক্কায় তাকে সরিয়ে দিয়ে ছুটে বের হয়ে এসেছিল সে । শেফা জানে শেলী জাহিদের জন্যই তাকে তুলে নিয়েছিল । নিজেকে এর আগে এত ছোট আর কখনই মনে হয়নি ।
শেফু তুই আমার উপর অনেক রেগে আছিস না ?
শেফা কোন উত্তর দিল না । বড়াই করার মতন কিছু না থাকলেও কিছু মানুষ খুব আহংকারী হয়ে জন্মায় । শেলী এমন । শুধু তাই নয় সে প্রচন্ড রকম ম্যাটেরিয়ালিস্টিকও । দামী জামাকাপড় না হলে তার চলে না । দামী ব্র্যান্ডের পারফিউম ছাড়া অন্য কিছুই সে ইউজ করবে না । মহসীন আলী সোনালি ব্যাংক এর একাউন্টেন্ট । শেফা নিশ্চিত মহসীন আলি যত বেতন পান শেলী এক মাসে তারও দ্বিগুন খরচ করে । এত টাকা শেলীর কাছে কোত্থেকে আসে সেটা শেফার কাছে আর অজানা নয় ।
শেফু, পারলে আমাকে মাফ করে দিস । তুই আমাকে যতটা খারাপ মনে করিস আমি ততটা খারাপ না ।
শেফা বলল, আমি তোমাকে খারাপ মনে করি না শেলী ।
শেলী বলল, শোন আমি রাকেশকে ছাড়া আর কাওকে বিয়ে করব না । রাকেশ এর বাবা ইউ কে তে থাকেন । বিয়ের পর আমরাও ওখানে চলে যাব । ওদের নিজস্ব বিজনেস আছে ওখানে । জানিশ ওদের দুইটা মারসিডিজ গাড়ী আছে ? রাকেশ আমাকে গত সপ্তাহেও একটা শ্যানেলের লেদার পার্স দিয়েছে । দাম শুনলে তোর পিলে চমকে যাবে ।
শেফা বলল, খালা খালু কে বলছ না কেন এসব ? রাকেশদের এত ভাল অবস্থা । তার সাথে বিয়ে দিতে তো খালা খালুর কোন আপত্তি থাকার কথা না ।
শেলী বলল, এখুনি বিয়ে করার কোন প্ল্যান রাকেশ কিম্বা আমার নেই । এই কথা মা কে বোঝাবে কে ?
শেফা বলল, খালা একটু আগে আমাকে বলে গেছেন আগামিকাল দুপুর পরযন্ত তোমার সাথে পেটিকোট এর মতন লেগে থাকতে । স্ট্রিক্ট অরডার । দয়া করে আমাকে বিপদে ফেল না শেলী ।
কথা বলতে বলতেই নাক ডাকতে শুরু করল শেফা । সারাদিন গাধার খাটুনি খেটেছে সে । রাতে ঘুমিয়ে পড়ার আগে কারো মনে হল না যে শাহ আলম আজ বাসায় ফেরেনি ।
৫
না, শেলী পালিয়ে যায়নি । সকালে উঠে সে দিব্যি ঘুরাফিরা করতে লাগল । জলিল কে নিয়ে মহসীন আলি দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলেন । দই মিষ্টি কিনে আনা । ঘর গোছান । কোন কিছুই মহসীন আলির মনমত হয় না । এর মধ্যে জলিল তিন বার চর খেল । মহসীন আলি চিৎকার করে বলতে লাগলেন, নটির ঘরের নটি তরে না কইছি ভাল চেয়ার গুলান ওই ঘরে নিয়া রাখতে ? চর খেয়েও জলিল ফ্যাক ফ্যাক করে হাসতে লাগল । সকাল নয়টার দিকে সাজুগুজু করতে শেলী কে নিয়ে পার্লার এ চলে গেল শেফা ।
ছেলে পক্ষ চলে এসেছে । প্রধান মন্ত্রী যখন বিদেশ সফরে যান তার সাথে যেমন সাংগ পাংগদের বিশাল বাহিনী থাকে ছেলে পক্ষও তেমনি বিশাল এক ব্যাটেলিয়ন নিয়ে হাজির । ছেলের মা , খালা-খালু, বড় চাচা, মেঝ চাচা , ছোট চাচা, দূর সম্পরকের এক মামা, ফুফাতো বোন, মামাতো বোন, ছোট বেলার এক বন্ধু । ধরতে গেলে চৌদ্দ গুষ্ঠির সবাই । শুধু বাবা আসেননি । তার বাত জ্বর । বাতের ব্যাথায় তিনি কাহিল । তবে দূর আলাপনি মানে মোবাইলে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ তিনি রেখেছেন । মুহুরতে মুহুরতে তার ফোন আসছে । "জ্বী আব্বা জ্বী আব্বা" বলতে বলতে ছেলের মুখে ফেনা উঠে গেল ।
আলেয়া বেগম ছেলের রুপের যে বর্ণনা দিয়েছিলেন দেখা গেল ছেলে তার কিছুই না । ছেলে খাটো । পাচ ফুট দুই এর আশে পাশে হবে । গায়ের রঙ ময়লা । মুখ ভরতি গোটার দাগ । দেখে মনে হয় নখ দিয়ে খোটার কারনে দাগ গুল পারমানেন্টলি চেহারায় স্থান করে নিয়েছে । নাক বিশাল মোটা এবং থ্যাবড়ানো । দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে একটা কোলা ব্যাং নাকের জায়গায় মাথা উচিয়ে বসে আছে । ছেলের বিশাল বপু । নয় মাসের পোয়াতি মেয়েদের পেট এর সাইজ এমন হয় । ছেলে কিছুক্ষন পর পরই তার কনিষ্ঠ আঙ্গুল খানি নাকের মধ্যে সেধিয়ে দিয়ে কিছু একটা বের করে আনার চেষ্টা করছিল । একাবার উকি দিয়ে দেখে গেছে শেফা । দেখে তার গাঁ গুলিয়ে গেল । ঠিক সে সময় আলেয়া বেগম এর সামনে পরে গেল শেফা । আলেয়া বেগম চোখমুখ পাকিয়ে শেফাকে রুমের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে সিটকিরি মেরে দিলেন ।
শেলীর চেহারা তেমন অহমারি কিছু নয় । কিন্তু পার্লার থেকে সাজিয়ে আনার পর শেলীকে দেখে চেনা যাচ্ছিল না । পার্লার এর মেয়ে গুল কিছু একটা করেছে । শেলী কে এত সুন্দর লাগছিল যে শেফার নিজেরি খুব বিয়ে করার সাধ জাগছিল । শেফার খুব হোমড়া চোমড়া কোন বর না হলেও চলবে । ডাল-ভাত, মাঝে মধ্যে মাছ আর সপ্তাহে একবার গোশত খাওয়ার মত টাকা তার বর আয় করতে পারলেই শেফা খুশি থাকবে । আর মিরপুর কিম্বা রায়ের বাগের দিকে দুই বেড রুম এর বাসা ভারা দেবার মতনও ক্ষমতা থাকতে হবে । মিরপুর কিম্বা রায়ের বাগের দিকে বাসা ভাড়া কম হয় । বরকে অযাচিত কষ্টের মধ্যে ফেলতে চায় না শেফা । উচ্চাকাঙ্ক্ষা যত কম রাখা যায় জীবনে ততই শান্তি। মনে বাসনা না থাকলে বাসনা পূরন হলো কিনা তা নিয়ে নির্ঘুম রাত্রি যাপনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ছেলে পক্ষ শেলীর জটিল ইন্টারভিউ নিল ।
ছেলের বড় চাচাঃ মা, তোমার কি নামাজ ঠিক মতন পড়া হয় ?
শেলী এমন ভাবে মাথা নাড়ল যা থেকে বোঝা গেলো না উত্তর হ্যা বোধক নাকি না বোধক । আলেয়া বেগম গদ্গদ হয়ে বললেন,
ভাই সাহেব, আমার মেয়ে পাচ ওয়াক্ত নামাজ হয়তো সব সময় পড়তে পারে না কিন্তু যখনি সময় সুযোগ পায় তখুনি পড়ে ।
ছেলের বড় চাচাঃ তাহলেতো হবে না । নামাজ সব ওয়াক্তেই আদায় করতে হবে । যাহোক বলতো মা এশার নামজ কয় রাকাত ?
এবার শেলী ঘোমটার নিচ থেকে বিড় বির করে কি যেন বলল ।
ছেলের বড় চাচাঃ মা একটু শব্দ করে বল যেন আমরা সবাই শুনতে পাই।
শেলী আবার বিড়বিড় করে কি যেন বলল ।
আলেয়া বেগমঃ আমাদের শেলী খুবি লাজুক মেয়ে । ওই শেলী এশার নামাজ যে সতের রাকাত তা তো তুই জানিশ । বল না । ভাই সাহেব জানতে চাচ্ছেন । এত লজ্জা পেলে কি চলে ।
শেলী খুব অস্পষ্ট ভাবে বলল, সতের রাকাত ।
ছেলের বড় চাচাঃ মাসাল্লাহ ।
এবার ছেলের খালু জিজ্ঞেশ করলেন,
বলতো মা, রোগী আসিবার পূর্বে ডাক্তার মারা গেলেন এর ইংরেজি কি হবে ?
প্রশ্ন করে ছেলের খালু বিজ্ঞের মতন মাথা দোলাতে লাগলেন । ভাব খানা এমন যেন এবার যাবে কোথায় চান্দু, মডার্ন এপ্লাইড দেখে যা মুখস্থ করেছ এটা তার উল্টা । মহসীন আলি মনে মনে বললেন, তোরে সবার আগে গলা টিপে মেরে ফেলা দরকার । এর পর ডাক্তার আসল কি না আসল সেইটা পরের ব্যাপার । ইতর জানি কোনখানকার ।
(বাকি অংশ পরের পর্বে)
সোহেল লেহস
মন্তব্য
ক্লান্তিকর!!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
ভুল ধরার জন্য আগে ধন্যবাদ দিয়ে নেই । দীনহিন ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ ।
এবার হাজার খানেক বানান ভুলের পেছনে খুব যুক্তিসঙ্গত যে কারনটি রয়েছে সেটা বলা যাক । ভাই, আমি চরম অলস মানুষ । এসব ভুল ঠিক করার মতন ধৈর্য শক্তি কিম্বা মনোবল এর কোনটাই আমার নেই । এছাড়াও আরো কিছু ব্যাপার আছে । প্রায় ১৯ বছর ধরে বাংলা লেখালেখি না করার কারনে বাংলা বানানের অনেক কিছুই আমি ভুলে গেছি । কোনটার বানান যে কি সেটা নিয়ে প্রায়ই আমাকে দ্বন্দে ভুগতে হয় । অন্য আরেকটি কারন হল, আমি ধরেই নিয়ে ছিলাম আমার এই লেখা পাবলিশ করা হবে না । এর আগেও আমি বেশ কিছু লেখা দিয়েছিলাম যেগুলো পাবলিশ হয়নি । সম্ভবত মান সম্মত লেখা নয় বলে । সে জন্য বানানের ব্যাপারে কোন গুরুত্ব দেইনি ।
যাহোক অনেক কষ্ট করে আমার লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
সোহেল লেহস
খুব সাধারণ ভাবে অসাধারণ কিছু কথা বলেছেন আপনি। বানান ভুল নিয়ে কিছু বলার নেই, ধারণা করছি অভ্র ব্যবহার করেছেন- তাই এমনটা হতেই পারে। কিন্তু আপনার লেখার স্টাইল টা খুব সহজ, প্রাঞ্জল। তবে একদম নতুন বোধহয় না, কোন একটা কারণে হুমায়ূন আহমেদ এর সাথে মিল পাচ্ছি; বিশেষত শব্দ চয়নে, বাক্য গঠনে... তবে সবচে বেশী হয়ত গল্প বলার ঢং-এ। তবে শেষ টা জানার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। আরো লিখবেন। নিশাচর জীব।
ধন্যবাদ নিশাচর জীব । আপনি ঠিক ধরেছেন । আমি অভ্র ব্যাবহার করি । আমি আনকোরা নতুন লেখক । নিজস্ব লেখার স্টাইল এখনো রপ্ত করতে পারিনি । তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি । দোয়া রাখবেন । সব লেখকেরই উৎসাহ প্রয়োজন । উৎসাহ ছাড়া লেখালেখি করা কষ্টকর ব্যাপার । আপনার ফিডব্যাক আমাকে অনেক উৎসাহ জোগাবে । আপনাকে অনেক ধন্যবাদ !
সোহেল লেহস
আমিও নতুন লেখক, আপনার অনুভূতি খুব সহজেই বুঝতে পারছি। উৎসাহ ছাড়া লেখালেখি করা আসলেই খুব কষ্টকর ব্যাপার; কবিতা হয়তো তবু লেখা যায়, কিন্তু গল্প-উপন্যাস লেখা প্রায় অসম্ভব। একজন আনকোরা লেখকের সবচে’ বড় প্রয়োজন একজন বন্ধু, কিন্তু এমন একজন বন্ধু পাওয়া কী দুঃসাধ্য!! নিশাচর জীব।
নিশাচর জীব, যদি আপনার কোন অসুবিধা না থাকে আমি আপনার লেখক বন্ধু হতে পারি। কখনো আপনার কোন লেখার ব্যাপারে মতামত জানতে চাইলে আমাকে ইমেইল করতে পারেন। আমার ইমেইল ঠিকানা আমার এই গল্পের সবার শেষে আমার নামের নিচেই দেয়া আছে।
সোহেল লেহস
ধন্যবাদ, আপনার আমন্ত্রণের জন্য। নিঃসন্দেহে। আমি আমার একাউন্ট থেকে আপনাকে মেইল করব। নিশাচর জীব।
পূর্ব অনুমানের ভিত্তিতে আগেই পাবলিশ হবে না ধরে নিয়ে যদি অসংখ্য বানান ভুলসহ একটি বড়সড় আকৃতির লেখা সেভাবেই পাঠকের পাতে তুলে দেন, ব্যাপারটা বোধহয় ঠিক হয় না।
টাইপো এবং অযত্নে মোড়া সাপ্তাহিক ছ' সাতটা লেখার চাইতে গুছিয়ে লেখা একটা পোস্ট উত্তম। পাঠক হিসেবে আমিও তো লিখিয়ের ঈষৎ মনোযোগ দাবি করি, তাই না?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তিথীডোর, আপনার কথা যুক্তি সঙ্গত । এরপর থেকে অবশ্যই বানানের দিকে খেয়াল রেখে লেখা জমা দেব । শুধু সামান্য একটা প্রশ্ন করতে চাই । আপনি কি আমার লেখাটা পড়েছেন? বানান ভুলের কারণে লেখাটা পড়তে কি খুব অসুবিধা হয়েছে? কিম্বা লেখার বিষয়বস্তু বুঝতে কষ্ট হয়েছে? লেখার বিষয় অথবা ঘটনা বুঝতে যদি কোন অসুবিধা না হয়ে থাকে তবে বানান ভুল সত্ত্বেও আমি মনে করি আমার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে । যাহোক কথা দিচ্ছি পরের লেখায় বানান ভুলের পরিমান অবশ্যই অনেক কম থাকবে।
সোহেল লেহস
গল্পটা আমার ভাল লেগেছে। বেশ সাবলীলভাবে এগিয়েছে কাহিনী। বানানের ব্যাপারে আরো সচেতন হওয়ার অনুরোধ থাকল।
এই গল্পের বাকি অংশ কোথায়?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ধন্যবাদ কল্যান! বানানের ব্যাপারে সচেতন হবার চেষ্টা করছি।
এই গল্পের বাকি অংশ এখনো আমার মাথায়। শেষ হয়নি
সোহেল লেহস
এইবার তাইলে মাথা থিকা বোঝা নামায়া হাল্কা হন তাড়াতাড়ি।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ভাই, হাল্কা হইতে একটু সময় লাগবে। উপন্যাস লিখতেছি। কোন দিন যদি শেষ করতে পারি সচলেই সবার আগে পড়তে পারবেন
সোহেল লেহস
নতুন মন্তব্য করুন