ডিস্ক্লেইমার ১: আমি একজন অ্যালাম্নাস। কিন্তু যে কথাগুলো বলবো, সেগুলো ছাত্র থেকে অ্যালাম্নাস হওয়ার পরে মাথায় গজায় নাই। এই কথাগুলো আগে থেকেই ছিলো। ছাত্র থেকে অবস্থায় পরীক্ষা পেছানোর পক্ষে ছিলাম না, এখনো নাই। কাজেই, যাদের ছাত্র-অ্যালাম্নাই নিয়ে চুলকানি আছে, তারা পোস্ট নাও পড়তে পারেন।
ডিস্ক্লেইমার ২: উপরের ডিস্ক্লেইমার দেখে আবার ভেবে বসবেন না আমি টিচার ফাইটার জাতীয় কিছু ছিলাম। নিতান্তই সাধারণ এক ছাত্র আমি। একেবারেই সাদামাটা রেজাল্ট। আমাদের ব্যাচের মানুষজনের রেজাল্টের তুলনায় আমার রেজাল্ট বেশ খানিকটা নিচের দিকেই।
ডিস্ক্লেইমার ৩: অনেককেই ইদানিং বলতে শুনি/দেখি, আপনারা অনেক দিন আগে পাস করে গেছেন। আপনারা এখনকার অবস্থা বুঝবেন না। আপনাদের জন্য একটা গল্প। এক মেয়ে প্রেগন্যান্ট। খুব যন্ত্রণায় চিৎকার করছে! তার মা তার পাশে দাঁড়িয়ে সান্তনা দিচ্ছেন, "এই তো মা, আর কিছুক্ষণ পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে।" মেয়ের উত্তর, "তুমি বাচ্চা হওয়ার ব্যাথা কী বুঝবা?!" গল্প শেষ। এবার আপনি আসতে পারেন। স্লামালিকুম!
ডিস্ক্লেইমার ৪: যারা সব কিছুতেই মনে করেন সিস্টেমের দোষ, তাদের জন্য এই পোস্ট না। কারণ আমি কোন কিছুতেই সিস্টেমের দোষ দেয়ার পক্ষে না। সিস্টেম বলে কিছু নাই। আমরা নিজেরাই সিস্টেম। আপনার মানসিকতা যদি সিস্টেমের ঘাড়ে দোষ দেয়ার জন্য তিন পায়ে খাড়া থাকে, তাহলে আপনি নিচে অনেক কর্কশ কথা পড়বেন। কাজেই, নিজ দায়িত্বে, খুউব খিয়াল কইরা।
মূল কথা
বুয়েট থেকে পাস করেছি প্রায় বছর পাঁচেক হয়ে গেলো। আমাদের ব্যাচ মনে হয় খুব অল্প কিছু ব্যাচের মধ্যে অন্যতম, যারা তিনটি (বিএনপি-জামাত, তত্ত্বাবধায়ক, আওয়ামী লীগ) শাসনামলে বুয়েটে পড়েছে। সব ব্যাচের মতোই আমরাও বুয়েটে থাকতে একটি ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ পেয়েছিলাম, ২০০৬ সালে। মূলত বিশ্বকাপের জন্যই পরীক্ষা পেছাতে পেছাতে শেষমেশ স্যারদের বাসায় ঢিল ছোঁড়া, সোহরাওয়ার্দী হলের তৎকালীন প্রোভস্টকে জিম্মি করার মতো ঘটনাও ঘটে, সাথে হলের ভেতর টিয়ার গ্যাস ছোঁড়া, হল ভ্যাকেন্ট তো আছেই। অনির্দিষ্টকালের জন্য বুয়েট বন্ধ হয়ে যাবার পর বুয়েটের তৎকালীন সব ব্যাচের কিছু ছাত্র (আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম) মিলে সিদ্ধান্ত নেই, আমরা স্যারদের কাছে যাবো। তাঁদের সাথে খোলামেলা কথা বলে ছাত্র-শিক্ষক সবাই মিলে সিস্টেমের ভেতরের 'বাগ'গুলো সমাধা করার চেষ্টা করবো।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা স্যারদের কাছে গিয়েছিলাম। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, এতো ভাংচুরের পর স্যাররা হয়তো আমাদের মুখও দেখতে চাইবেন না। অথচ আমাদের অবাক করে দিয়ে বেশিরভাগ স্যারই আমাদের সাথে বসলেন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের ঘাড়েও অনেক দোষ নিয়ে নিলেন, যেখানে আমার মতে স্যারদের বাসায় ঢিল ছোঁড়ার মতো কাজের দোষ কোন যুক্তিতেই ছাত্র বাদে অন্য কারো ঘাড়ে বর্তায় না। হ্যাঁ, কিছু শিক্ষক তখনো অভিমান করে ছিলেন ঠিকই। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষকের আচরণ আমাদের সত্যিই তখন মুগ্ধ করেছিলো। যাই হোক, তখন আমরা কিছু যুক্তি স্যারদের কাছে পেশ করেছিলাম। স্মৃতির পাতা হাতড়ে যদ্দুর মনে পড়ে, ততোটুকুই বলতে পারবো।
আমাদের প্রথম যুক্তি ছিলো, ছাত্রদের পরীক্ষাভীতি। ঐ ভাংচুরের আগ পর্যন্ত পরীক্ষার সিস্টেম ছিলো অনেকটা এরকম: ২ সপ্তাহ পিএল, তারপর ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা। যেকোনো ব্যাচের পরপর দুই পরীক্ষার মধ্যে ৩ দিন বন্ধ। বলা বাহুল্য, ঐ ২ সপ্তাহ বেড়ে কখনোই ৪ সপ্তাহের কম হতো না। কাজেই পিএল আর পরীক্ষা মিলিয়ে মোট লাগতো প্রায় ৭ সপ্তাহের মতো। আমরা স্যারদের বললাম এই সিস্টেম পাল্টাতে। আমরা যুক্তি দিলাম, এতো অল্প সময়ের ব্যবধানে পরীক্ষা নেয়ার কারণেই ছাত্ররা ২ সপ্তাহ পিএলএ খুশি না। আমরা বললাম ২ সপ্তাহ পিএল দিতে এবং পরপর দুই পরীক্ষার মাঝে ১ সপ্তাহ বন্ধ দিতে। তাতে মোট সময় প্রায় ৭ সপ্তাহই লাগবে, কিন্তু পিএলটা ভাগ হয়ে যাবে পরীক্ষার মাঝের সময়টুকুতে। কাজেই ছাত্রদের পরীক্ষাভীতি কমবে, তারা প্রস্তুতি নেয়ারও সময় পাবে। আমাদের এই যুক্তি স্যাররা মেনে নিলেন। এরপর থেকে সিস্টেম পাল্টালো। সম্ভবত পরপর ২ টার্ম ২ সপ্তাহ পিএল ও ১ সপ্তাহ গ্যাপে পরীক্ষার সিস্টেমে টার্ম ফাইনাল দিলাম। ফলাফল, ১১ মাসে ২ টার্ম শেষ।
আমাদের দ্বিতীয় যুক্তি ছিলো, ৭০% মার্ক্সের পরীক্ষার নিয়ম পাল্টানো। টার্ম ফাইনালকে ভাগ করে একটা মিড-টার্ম নেয়া। এই যুক্তি শুরুতেই ধোপে তেমন একটা টিকে নাই, কারণ স্যারদের যুক্তি ছিলো, তাহলে ছাত্ররা মিড-টার্ম পেছানোর জন্যও আন্দোলন করবে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি স্যারদের এই আশংকার সাথে শতভাগ একমত।
আমাদের শেষ, কিন্তু সবচেয়ে বড় যুক্তি ছিলো, ডিপার্টমেন্ট ভাগ করে দেয়া। কারণ বেশিরভাগ ছাত্র, এমনকি অনেক শিক্ষকের মতেও কিছু কিছু ডিপার্টমেন্টের সম্মানিত শিক্ষকগণ ইচ্ছা করে পরীক্ষা পেছানোতে মদদ দেন, তাতে নাকি তাঁদের কন্সাল্টেন্সিতে সুবিধা হয়। ভেতরের খবর জানি না, তাই সত্য-মিথ্যা যাচাইও করতে পারছি না। তবে এই অভিযোগ সত্য হোক বা মিথ্যা, ডিপার্টমেন্ট ভাগ করে দিয়ে পরীক্ষা নিজ নিজ উদ্যোগে নিয়ে নিলে সমস্যা অবশ্যই সমাধান হবে, এ ব্যাপারে কোন শিক্ষকেরই দ্বিমত ছিলো না। ইইই এর শিক্ষকগণ ছিলেন এই প্রস্তাবের কট্টর সমর্থক। কারণ তাঁদের মতে তাঁদের ছাত্ররা কখনোই পরীক্ষা পেছাতে চায় না বা চাইলেও সেটা অনেক পরে গিয়ে, যখন পরীক্ষা পেছানোর গুজব রটে বুয়েটের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে গেছে, গুজবের চোটে পড়াশুনা চুলায় উঠেছে, তখন (আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে কথাটা অনেকাংশেই সত্যি)। কাজেই তাঁরা মনে করেন, ডিপার্টমেন্ট ভাগ করে দিলে তাঁদের ছাত্ররা ৩ বছর ৮ মাসে বেরিয়ে যাবে। আর যখন অন্য ডিপার্টমেন্টের ছাত্ররা দেখবে তাদের বন্ধুরাই এতো অল্প সময়ে বের হয়ে যাচ্ছে, তখন তারাও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দ্রুত পরীক্ষা দিয়ে দেবে। এভাবে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরীক্ষা পেছানোর কালচার থেকে বুয়েট বেরিয়ে আসবে। এই সিস্টেম প্রণয়নের বড় অন্তরায় ছিলো বুয়েটের ছোট ক্যাম্পাস ও সব ডিপার্টমেন্টের ভৌগলিক কাছাকাছি অবস্থান। ইইই এর শিক্ষকগণ আমাদের আশ্বস্ত করেন, পলাশীতে তাঁদের নতুন ক্যাম্পাস হয়ে যাওয়ার পরপরই তাঁরা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন। মূল ক্যাম্পাস থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ায় এবং বিশাল এক বিল্ডিং পাওয়ায় আলাদা ভাবে পরীক্ষা নিতে তাঁদের সুবিধা হবে। আর তাঁদের দেখাদেখি বাকি ডিপার্টমেন্টগুলোও 'লাইনে আসবে'।
এতক্ষণ কীভাবে সমস্যা সমাধান করা যায়, এসব নিয়ে আমরা কী কী চিন্তা করেছিলাম, স্যাররা কী ভেবেছিলেন, সেসব বললাম। এবার বলবো কিছু কর্কশ ও তিতা সত্য কথা। আসলে আমরা সমস্যার গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালছিলাম। সমস্যাটার গোড়া কী, সেটা তাহলে বলি।
পৃথিবীর কোন সিস্টেম ফুল-প্রুফ না। এমন কোন সিস্টেম নেই, যেটা দিয়ে শতভাগ মানুষের মন জয় করা সম্ভব। কাজেই, এরকম সিস্টেম বানানোর চিন্তাও বাদ দিতে হবে। সিস্টেম ইম্প্রিভ করা যায় অবশ্যই। তবে সেটা আসল সমস্যা ঠিক করে তারপর। আর আসল সমস্যা হচ্ছে "বুয়েটের পরীক্ষা পেছানো যায়", এই মাইন্ডসেট। আমাদের এই মাইন্ডসেট ঠিক করতে হবে। পৃথিবীর আর কোথাও পরীক্ষা পেছানোর কালচারটাই নেই। ছাত্ররা চিন্তাও করে না পরীক্ষা পেছানো সম্ভব। বুয়েটের ছাত্ররা ইদানিং বড় বেশি সিস্টেমের দোষ, স্যারদের দোষ বলে গলা ফাটায়। বিশ্বাস করুন, বুয়েটের সিস্টেম অন্যান্য অনেক সিস্টেমের চেয়ে অনেক ভালো। সমস্যা হচ্ছে আমাদের, ছাত্রদের। বেশি পেতে পেতে আমাদের লেহনাঙ্গের দৈর্ঘ্য বেড়ে গিয়েছে। কীভাবে বেড়েছে শুনবেন? পিএল ২ সপ্তাহ করে পরীক্ষার মাঝের গ্যাপ যখন স্যাররা বাড়িয়ে দিলেন, তখনো কিন্তু আমরা থামলাম না। মাত্র ২ টার্ম পরেই আবার পরীক্ষা পেছানো আন্দোলন শুরু। তাহলে কি আবার আগের সিস্টেমে ফেরত যাওয়া? উঁহু, সেটাও না। এবার আগের সিস্টেমের খারাপটুকু, আর নতুন সিস্টেমের খারাপটুকু নিয়ে আরো খারাপ একটা সিস্টেম। ৪ সপ্তাহ পিএল, আর পরীক্ষার মাঝেও ১ সপ্তাহ করে গ্যাপ। ৭ সপ্তাহের সময় বেড়ে হলো ৯ সপ্তাহ। কে করলো? আমরা, এই ছাত্ররাই। এটার দোষও অনেকেই স্যারদের উপর, সিস্টেমের উপর চাপাবেন। নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়ার মানসিকতা না থাকলে কিছুই আসলে বলার নেই তাদের।
তাহলে সমাধান কী? সমাধান হচ্ছে, পরীক্ষা পেছানো যায়, এই মাইন্ডসেটটা পাল্টানো। সেটা কীভাবে হবে? দুইভাবে করা যায়। এক, টিউশন ফি অনেক অনেক বাড়িয়ে। সহজ কথায়, পেটে লাথি দেয়া। বাইরের দুনিয়ার বেহেস্তী (!) সিস্টেমের যেসব উদাহরণ আমাদের ছাত্ররা দেন, সেসব জায়গায় টিউশন ফি সম্পর্কে কারো আইডিয়া আছে? টাকার ভয়েই তো ওরা পরীক্ষা পেছাবে না। তবে হ্যাঁ, আমাদের গরিব দেশে এটা সম্ভব না, সেটাও ঠিক। লাখ লাখ টাকা দিতে পড়তে চাইলে অনেক মেধাবী ছাত্রই ঝড়ে পড়বে। কাজেই, দ্বিতীয় উপায় ধরতে হবে। আর তা হচ্ছে প্রশাসনের কঠোরতা। শুনতে একটু খারাপ শুনালেও, বুয়েট প্রশাসনের নমনীয়তাই আমাদের লেহনাঙ্গের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আমার মতে পরীক্ষা পেছানোর মিছিল হলে কী করার উচিত জানেন? প্রাশাসন থেকে বলা উচিত, আমরা পরীক্ষা নেবো। তোমরা কেউ যদি পরীক্ষা দিতে না আসো, তাহলেও নেবো। তোমরা যদি গেট বন্ধ করে রাখো, তাহলেও নেবো। পরীক্ষার সময়ে শিক্ষকরা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবেন। পরীক্ষার নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলে তাঁরা চলে যাবেন। পরীক্ষায় যদি একজনও না আসে, তাহলেও পরীক্ষা হবে। যদি শতভাগ ছাত্র ফেল করে, করবে। কিন্তু আমরা পরীক্ষা নেবো। তোমরা যদি ভাংচুর করো, করতে পারো। কিন্তু বুয়েটের প্রতিটা ইট খুলে নিলেও আমরা পরীক্ষা নেবো। তারপর ২ বছর ধরে ক্লাস বন্ধ রেখে বুয়েট মেরামত করা হবে। যখন ছাত্ররা ক্ষতির পরিমাণ বুঝতে পারবে, তখন নিজেরাই 'লাইনে আসবে'।
এবার আসি বর্তমান সমস্যার কথায়। এবার পিএল হয়েছে ৪ সপ্তাহ। তারপরেও নাকি আরো ১ সপ্তাহ পিএল চাওয়া হয়েছে। পড়ার সময়ই নাকি পাওয়া যায় নাই! ভাই, বুয়েট তো আপনার মামা বাড়ি না। আপনি মাস্তি করে সময় নষ্ট করবেন, আর সেটার জন্য পরীক্ষা পেছাতে চাইবেন, আর সেটা না পেছালে স্যারদের দোষ? সিস্টেমের দোষ? যার লজিক লেভেল এই পর্যায়ে, সে আর যাই হোক, "বেস্ট অফ দ্য বেস্ট" না। অনেকে মিড-টার্ম পরীক্ষার জন্য বলছেন। ভাই, আপনাদের ইন্টেনশন মন্দ না, কিন্তু ঐ যে, সমস্যার গোড়ায় হাতটা যাচ্ছে না! যাদের লজিক লেভেল উপরে বলা লেভেলে, তারা মিড-টার্ম পরীক্ষা পেছানোর জন্যও আন্দোলন করবে। ঠিক যেমন আমাদের সময়ে ১ সপ্তাহ গ্যাপে পরীক্ষা নেবার পরেও ২ টার্ম পরেই আবার পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিলো।
এবার নতুন এক ধরণের যুক্তি দেখলাম। "ভাই, আপনারা অনেক মেধাবী। আপনারা ২ সপ্তাহ পিএলএ পরীক্ষা দিতে পারেন। আমরা পারি না। আমাদের মিনিমাম ৪ সপ্তাহ সময় লাগে।" তো আপনি যদি এরকম মেধাবী নাই হন, তাহলে আপনার বুয়েটে পড়ার দরকার কী? বুয়েট তো মেধাবীদের জায়গা, তাই না? যারা মেধার পরিচয় রাখতে পারবে না, তারা ঝরে পড়বে। এটা তো একটা প্লেন অ্যান্ড সিম্পল কথা। বুয়েটে আপনি মেধার সাক্ষর রেখে ঢুকেছেন। কিন্তু এরপর তো বুয়েট আপনার কাছে বন্ড সই করে নাই যে আপনাকে পাস করিয়েই ছাড়বে। বাইরের সিস্টেমের কথা যে বলেন, কতজন মানুষ পিএইচডি করতে গিয়েও পারে না, সে খেয়াল আছে? বুয়েটেও তাই হবে। একটা সিস্টেম আছে। আপনার উচিত সেই সিস্টেমের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া। যদি না পারেন, ঝড়ে পড়বেন, ব্যস্! আপনি তো আপনার জন্য সিস্টেম পাল্টাতে পারেন না। বাইরের দেশে যাওয়া লাগবে না। পাস করে দেশেই মোটামুটি ভালো একটা কোম্পানিতে জব নেন; তারপর বস যখন ২ সপ্তাহের একটা ডেডলাইন দিবে আর আপনি বলবেন, ২ সপ্তাহে পারি না, ৪ সপ্তাহ লাগবে, তখন বস কী বলে, আমাকে জানিয়ে যাবেন। আর বাইরে গিয়ে পিএইচডি সুপারভাইজরের কাছে এটা বললে কী হবে, সেটা আর নাই বা বললাম। আর বুয়েটের তো ১০০% পাস দেখিয়ে কোথাও কোন ক্রেডিট নেয়ারও দরকার নেই। বুয়েট তো রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ না যে পেপারে ১০০% পাসের খবর দেখিয়ে বাহবা নেবে, তাই না?
অতএব, সোজা হিসাব। মাইন্ডসেট পাল্টাতে হবে। লেহনাঙ্গ ছেঁটে দিতে হবে। আর এবার সেটার একটা মোক্ষম সুযোগ। ৪ সপ্তাহ পিএলএর পরেও ছাত্ররা পরীক্ষা দেয় নাই। কাজেই, জনাব প্রশাসন, আপনি পরীক্ষা নিতে থাকেন। যথাসময়ে রেজাল্ট পাবলিশ করে নতুন টার্মের ক্লাসও শুরু করেন। এরপরেও যদি ছাত্ররা বয়কট করতে থাকে, করুক। নতজানু হওয়ার সময় শেষ। এখন যদি পরীক্ষা আবার পিছিয়ে নতুন করে রুটিন দেন, তাহলে আপনার মেরুদণ্ডের অস্তিত্ব নিয়ে এতোদিন ধরে সবার মনে যে প্রশ্নটা আছে, সেটার জবাব চলে আসবে। পরীক্ষা পেছানোর একটা লজ্জাকর ব্যাপার 'সাফল্যের' সাথে 'শান্তিপূর্ণ'ভাবে আদায় করার জন্য ছাত্ররা একে অন্যের পিঠ চাপড়ে বেড়াবে। তখন দুদিন পরে এই ছাত্ররা আপনাকে ব্লো-জব দিয়ে দিতে বললেও অবাক হবেন না যেন!
বুয়েটের একজন ছাত্র
মন্তব্য
ভাইজান কি আইয়ুব শাহী আমলের ভক্ত? "বাঙ্গালির দরকার পাছায় লাথি" "মাইর না দিলে সিধা হইব না" "ডান্ডার উপর রাখতে হবে"- এগুলা কি আপনার প্রিয় বাক্য?
ভাই এখন আছেন কই? আপনি সব দোষ যে চাপায় দিলেন ছাত্রদের উপর, শিক্ষকেরা তাহলে কি? ছাত্ররা অবশ্যই অন্যায় একটা দাবি করে এবং গর্হিত কাজ করে।
সিস্টেমের কি কোন সমস্যা নাই? মিড-টার্ম বাদ দিলেও, এই ৭০% তো বদলানোর তো আরো উপায় আছে। আর শিক্ষকেরা কি পড়ান? কয়জন ছাত্রদের দায়িত্ব নেন?
বুয়েটে আমিও পড়সি, পরীক্ষা, প্রেজেন্টেসন দিতে হাগু-মুতু এক হয়ে যেত। এখন তো হয় না। এক টার্মে ১৪ টা প্রেজেন্টেসন দেই, নিজে আগ্রহ নিয়ে এক্সট্রা সেমিনারে যাই, কথা বলি, প্রশ্ন করি। বুয়েটে জীবনে ক্লাসে কিছু জিগাই নাই। এখন পরীক্ষা আগায় আনতে ক্লাসে হাত তুলি, কারন সামারে কোন ক্যাম্পে যাব হয়তো।
আমি বুয়েটের সিস্টেমরে দোষ দেই। এই সিস্টেম আমার প্রিয় বিষয় অঙ্কে ভয় ধরাইসে। আপনি আপনার 'ডান্ডা মেরে ঠান্ডা' নীতিতে একটা "'থার্ড রাইখ' ইউনিভার্সিটি" খুলে ফেলেন বরং। আপনাকে হিটলার হিসেবে মানাবে ভালো।
ধ্রুব
ভাই, আগে প্রায়োরিটি বুঝেন। যেহেতু বলেই ফেলছেন যে ছাত্ররা অনৈতিক দাবি করে, কাজেই সেটার সমাধান আগে হোক। 'সিস্টেমের' বাগ অবশ্যই সমাধান করা উচিত। কিন্তু তার আগে পরীক্ষা পেছানোর মাইন্ডসেট পাল্টাতে হবে। এটাই হচ্ছে 'বটম লাইন'। তারপরে পড়াশুনার মান কীভাবে বাড়ানো যায়, কীভাবে ভীতি দূর করা যায় এসব নিয়ে কথা হতে পারে। এবং ঐ বটম লাইনের বিরুদ্ধে কঠোরতার কোন বিকল্প নেই। মাইন্ডসেট না পাল্টালে যতোই 'সিস্টেম' পাল্টান, কোন লাভ হবে না।
আর আমার মনে হয় আপনার অংকে ভয় ধরিয়েছে সিস্টেম না। কতিপয় শিক্ষকের খারাপ পড়ানো। সেটার জন্য কোন সমাধান নেই, একমাত্র স্যারদের ভালো পড়ানো ছাড়া।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
- লেখক
আপনার দেয়া তথ্যের সাথে আপনার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
শিক্ষকদের (টেকনিক্যালি, বুয়েট অথোরিটির) সাথে আপনাদের আলোচনার যে 'তথ্য' দিলেন, সে অনুযায়ী ওই ৩টি বিষয়ে ব্যবস্থা নিলেই পরীক্ষা পেছানো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। প্রথম বিষয়টা, অর্থাৎ, ১ সপ্তাহ গ্যাপে পরীক্ষা দেয়ার সুফলও বর্ণনা করেছেন। ৩টা প্রস্তাবের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর যেটা (প্রায় সবাই একমত), তাহলো ডিপার্টমেন্ট আলাদা করে দেয়া। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ দিকগুলো আলাদা না করেও অন্তত পরীক্ষা নেয়ার দায়িত্ব ডিপার্টমেন্টের ওপর, বা আরো মাইক্রো-লেভেলে কোর্স-শিক্ষকের ওপর ছেড়ে দিলে পরীক্ষা পেছানোর সমস্যা থাকবে না। এ ব্যাপারে, নোতুন ক্যাম্পাস কেন দরকার, বুঝতে পারি নাই। সেশনাল কুইজ তো মোটামুটি এভাবেই নেয়া হয়। একই সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর। তখন একই সাথে কোর্সও চলে। তখন পারা গেলে পরীক্ষা নিতে তো সমস্যা হওয়ার কথা না। সুতরাং সমস্যা সমাধানের এরকম একটা উপায়, যে বিষয়ে আবার প্রায় সবাই এক মত, থাকার পরেও সেটা বাস্তবায়ন না করার দায় অবশ্যই বুয়েট অথোরিটির, বুয়েট ছাত্রছাত্রীদের না।
অথচ আপনি সিদ্ধান্ত হিসেবে উদে হোসেন সিস্টেম রেফার করলেন! টিউশন ফি বাড়িয়ে দিলে ছাত্ররা সুড়সুড় করে পরীক্ষা দিবে - এই সিদ্ধান্তের পক্ষে কোনো 'তথ্য' পোস্টে নাই। বিদেশের উদাহরণ দিতে গিয়ে বললেন,
হয়তো আপনার দেখা বিদেশের সিস্টেমে এতো বেশি টিউশন ফি থাকে যে, সেটা ম্যানেজ করতে গিয়েই ছাত্ররা পড়াশুনা লাটে উঠিয়ে উদয়াস্ত কামলা খাটতে বাধ্য হয়, পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন করা দূরে থাক, ঠিকমতো পড়াশুনা করার সময়ই পায় না। কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও আছে। যেমন, জার্মানিতে আমি পুরোপুরি টিউশন ফি বিহীনভাবে পড়েছি। এখানে পরীক্ষা পেছানোর জন্য আন্দোলন হয় না।
আর দ্বিতীয় যে সিদ্ধান্ত দিলেন, অর্থাৎ অথোরিটি পুরা অনড় থেকে ছাত্রশূন্য পরীক্ষা হলে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা - এটার পিছনেও কোনো তথ্য নাই। পরীক্ষা ছাত্রদের জন্য। সুতরাং তারা যাতে পরীক্ষাটা দেয়, সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে অথোরিটিকে। ছাত্রদের পিষে ফেলা নীতি কার্যকর হলে ইরাক এখন বিশ্ব ফুটবলে চ্যম্পিয়ন হতো, আর আয়ুব-ইয়াহিয়ারা বাংলাদেশ, থুক্কু পূর্ব পাকিস্তান চালাতো।
এ ব্যাপারে বটম লাইন হলো, যথাসময়ে পরীক্ষা নেয়া বুয়েট অথিরিটির দায়িত্ব। দশকের পর দশক ধরে সে দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন ইভেন্ট হলে ছাত্রদের দোষ দেয়া যেতো। বুয়েট তো আর কাশিমপুর কারাগার না, যে সব দাগী আসামী ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী, পরিশ্রমী, পড়ুয়া ছাত্ররা যখন পরীক্ষা পেছায়, তখন সেটা সিস্টেমের সমস্যা। সিস্টেম ঠিক করার দায়িত্ব অথোরিটির।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
টিউশন ফি বাড়ানোর কথা আমি নিজেই নাকচ করে দিয়েছি। ওটা ছিলো একটা যুক্তি পেশ ও তার খণ্ডন। ভালো করে খেয়াল করেননি বোধ হয়। আর আপনি জার্মানিতে পড়েছেন পোস্টগ্র্যাড লেভেলে। বিশ্বের বেশিরভাগ জায়গায় আন্ডারগ্র্যাডে পড়াশুনা ফ্রি না বলেই জানি।
আর হ্যাঁ, ডিপার্টমেন্ট ভেঙ্গে দেয়া সবচেয়ে কার্যকর নীতি। শেষে এটা বলতে গিয়েও ভুলে গেছি।
আর আপনার বটম লাইন (সব দোষ সিস্টেম/প্রশাসনের) বলার জন্য ধন্যবাদ। তবে আপনার এই কথার সাথে আমি একমত না। সেটা নিশ্চয়ই পোস্ট পড়েই বুঝেছেন। একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
- লেখক
অ.ট. জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, ফিনল্যাণ্ডে পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণে শিক্ষার কোন পর্যায়েই টিউশন ফী নাই।
অজ্ঞাতবাস
যদ্দুর জানি, সেই দিন আর নাই। ২০০৮/০৯ সাল থেকেই সম্ভবত ফি যুক্ত করা হয়েছে। আমার ধারণা ভুলও হতে পারে। কিন্তু ঐ সময়ে জার্মানির কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম। সে অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
- লেখক
আপনি যদ্দূর জানেনের ওপর ভিত্তি করে বলছেন, আর সুমন চৌধুরী নিজেই এখন জার্মানির ছাত্র।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ঠিক আছে, ভুল স্বীকার করে নিচ্ছি।
- লেখক
রাগিব স্যারের স্ট্যাটাসে একটা কমেন্ট করেছিলাম, সেটা মনে হয় এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হবে। (উনি ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ী করেছিলেন)
"স্যার ছাত্রদের দোষ দেয়া সবচেয়ে সোজা, কারণ তাদের দেখা যায়, তারা অনর্থের সৃষ্টি করে। শিক্ষকেরা আরাম-কেদারায় থাকেন অথবা বি আর টিসি তে টেস্ট করেন। আমাদের অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট রিপোর্ট, ডিসকাসন, ফিল্ড ট্রিপ কই? তাতে মার্ক কই?
আমি বাইরে এম এস করি এখন। একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আমাদের ফাইনালে মনে হয় ৩০% হবে (অনেক কোর্সে ফাইনালই নাই!)। একদিন ক্লাসে ঘুমাচ্ছি, বুয়েটিয়ান তো! ক্লাস শেষে যা পড়ানো হল, তার উপর পরীক্ষা (একটা প্রশ্ন ছিল, আজকের ক্লাসে তোমার সবচেয়ে ভাল লাগা টপিকটা লিখো!)। কোন প্রশ্নই কিন্তু কঠিন ছিল না। ক্লাস ওয়ার্কেও মনে হয় ৩০%।
আর ঘুমাই নাই কোনদিন!
তো আপনি বুয়েটের শিক্ষকদের কেন ছেড়ে দিবেন? আমি তো মনে করি তাদের দায়িত্ব অনেক অনেক বেশি। দেশে গন্ডগোল হলে মন্ত্রী পদত্যাগ করে, তার কেরানী তো করে না। যার ক্ষমতা যত বেশি, তার দায়িত্বও তো বেশি।"
আমি কিন্তু কোনভাবেই শিক্ষার্থীদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছি না। কিন্তু বিষয়টা এক-তরফাভাবে বিশ্লেষণ করা উচিত নয়।
ধ্রুব আলম
অছ্যুৎ বলাই বললেন:
এটা আপনার ধরে নেয়া বক্তব্য আমার মুখে চাপাচ্ছেন। এই ছাত্ররা অবশ্যই ভুল করতে পারে। এক সময়ের মেধাবী ছাত্র ব্যক্তি পর্যায়ে পরীক্ষাভিতিতে আক্রান্ত হতে পারে তার নিজের দোষে; কিন্তু যখন সামষ্টিকভাবেই বুয়েটের ছাত্ররা পরীক্ষা পেছায় এবং সেটা দশকের পর দশক ধরে চলতে থাকে, তখন সিস্টেমেই সমস্যা আছে, এটা ক্রিস্টাল ক্লিয়ার।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাই সাহেব, কাল তো আপনার প্রশ্নের জবাব দিলাম। আজ আপনি আমার কিছু প্রশ্নের জবাব দেন।
তো ভাই, যথাসময়ে পরীক্ষা দেয়াটা কার দায়িত্ব? পরীক্ষা যদি কেউ না দেয়, অথোরিটি পরীক্ষাটা নিবে কীভাবে? খুব যে সিস্টেমের দোষ দিচ্ছেন, '৭০-'৮০ এর দশকে তো সিস্টেম ছিলো আরো কঠিন। টার্মের কনসেপ্টই ছিলো না। বাৎসরিক পরীক্ষা হতো। তখন তো ঠিকই ছাত্ররা ৩ বছর ১০ মাসে বের হতো। আর তখন অথোরিটি ছিলো আরো বেশি আইয়ুব শাহী। আপনি যদি পরীক্ষা পেছানোর মিছিল করেন, তাহলে ঝামেলাটা ট্রিগার করছে কে? আপনি, না অথোরিটি? অথোরিটি পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে, আপনি পরীক্ষা দেবেন। ব্যাপারটা তো এতোটাই সহজ ও স্বাভাবিক, তাই না? মাঝ দিয়ে আপনি "জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো" বলে মিছিল বের করলেন, তারপর দিন শেষে বললেন, "অথোরিটি এত্তগুলো পচা!", ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেলো না?
কেন জানেন? সিস্টেমের দোষের জন্য না। ১-১ এ পড়ুয়া এক ছাত্রকে টেনে মিছিলে নিয়ে গিয়ে তাকে হাতে ধরে পরীক্ষা পেছানোটা শিখিয়ে দেয় বুয়েটের শ্রদ্ধেয় বড় ভাইরা। এটাও কি সিস্টেমের দোষ?
শেষ কথা, ৪ সপ্তাহ পিএল দিয়ে এক্সাম নেয়ার পরেও যদি আপনার মনে হয় বুয়েটে ছাত্রদের পিষে ফেলা হচ্ছে, তাহলে ঠিক কয় দিন পিএল দিলে মনে হবে, বুয়েটে ছাত্রদের পিষে ফেলা হচ্ছে না?
আপনার প্রশ্নের ভিতরেই উত্তর আছে। পরীক্ষা দেয়া ছাত্রদের দায়িত্ব। আর পরীক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা অথোরিটির দায়িত্ব। আপনি যদি পরীক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারেন, তাহলে ছাত্ররা পরীক্ষা দিবে কিভাবে?
আপনিই বলতেছেন, কেউ পরীক্ষা দেয় না। কেন দেয় না? কারণ, পরীক্ষা দেয়ার কনটেক্সট নাই।
১/২ জন ছাত্র খারাপ হতে পারে; যখন সামষ্টিকভাবে ছাত্ররা পরীক্ষা পেছানোর জন্য জ্বালাও-পোঁড়াও করে, তখন সেটা অথোরিটির প্রবলেম।
আপনার পোস্টেই প্রায় সর্বজনস্বীকৃত সমাধান আছে, পরীক্ষাকে ডিপার্টমেন্টের ওপরে ছেড়ে দেয়া। এটার সুফল ঢাকা ইউনিভার্সিটিও পেয়েছে। বুয়েটের ইনফ্রাস্ট্রাকচারেও এটা করা সম্ভব। কিন্তু তাহারা এটা করবেন না। যেহেতু ছাত্রদের ওপর দোষ দিয়ে বিনা পরিশ্রমে ছুটি উপভোগ করার স্কোপ আছে, সেহেতু অথোরিটি চাপে না পড়লে এটা করার সম্ভাবনাও নাই।
পরীক্ষার চাপ আর ঘড়ির কাঁটা মাপা সময় সমানুপাতিক না। সিস্টেমটাকে এমনভাবে ম্যানিপুলেট করা হয়, যাতে ছাত্ররা অনিশ্চয়তায় থাকে। এই অনিশ্চয়তার কারণে তারা পড়াশুনায় মনযোগ দিতে পারে না। যেমন, কেউ একটা বিষয় ৩/৪ দিন টানা ফাইট দিলো; কিন্তু পরীক্ষা গেলো পিছায়া, তখন ওই ৩/৪ দিনের পরিশ্রম প্রায় মাটি। পরীক্ষার আগে আবার ৩/৪ দিন টানা ফাইট দেয়া লাগে।
বুয়েটের অথোরিটি পৃথিবীর অন্যতম সৌভাগ্যবান এনটিটি। এরা সিস্টেমটাকে ম্যানিপুলেট করে, সেটা বুঝার মতো ক্ষমতা বুয়েটের ছাত্রদের থাকে না, ছাত্রদের ওপর দোষ চাপানো কিছু স্টেরিওটাইপড সুশীল কারণ, যেমন, টিউশনি, রাজনীতি, মিটিং-মিছিল, সবসময় রেডি থাকে, এবং এগুলোর পক্ষে ধনুক ভাঙ্গা পণ করে লড়ার মতো কিছু ফার্মের মুরগীও আছে। সুতরাং তাদের টেনশনের কিছু নাই। ছাত্ররা বাঁশ খেতে থাকবে, তারা ছুটি উপভোগ করতে থাকবে।
বুয়েটে পরীক্ষা নেয়ার দায়িত্ব কোর্স টীচারের ওপর ছেড়ে দিতে বলেন। এরপরও যদি পরীক্ষা পেছানোর সমস্যা থাকে, তাইলে আমার সাথে যোগাযোগ কইরেন। শুধু সওয়াল-জবাব না, ওটা বিফল হলে আপনি চাইলে আমারে বিশ্ব-বেকুব উপাধিও দিতে পারেন। এরকম একটা সর্বজন স্বীকৃত সমাধান থাকার পরেও সেটা ইমপ্লিমেন্ট না করে ধানাই পানাই বুঝানো ত্যানা প্যাচানি আলোচনাকে সময়ের অপচয় মনে হয়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই আপনার সাথে একমত যে, পরীক্ষা যদি ডিপার্টমেন্টের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়, পরীক্ষা পেছানো বন্ধ হবে। অ্যাট লিস্ট যারা চায়, তারা সময়মত পরীক্ষা দিতে পারবে। সেটা কেন হচ্ছে না, তার কারণ আমার কাছেও অজানা।
তবে আমি পরীক্ষা পেছানোর মাইন্ডসেট পরিবর্তনের যে কথাটা বলেছি, সেটা আপনি সুচারুরূপে এড়িয়ে গেছেন। "পরীক্ষা যে পেছানো যায়", এই চিন্তাটার মধ্যেই যে গলদ আছে, সেটা আপনি কেন ধরতে পারছেন না, আমার বোধগম্য নয়। এই খারাপ কাজটাকে আপনি সিস্টেমের দোষ দিয়ে হালাল করতে চাইছেন। উপরে আরেকজনকে করা একটা কমেন্টে বলেছি, সিস্টেমের দোষ অবশ্যই আছে, থাকবে এবং সেটা সমাধানের জন্য অবশ্যই চেষ্টা হবে। কিন্তু গোড়ার সমস্যা আগে সমাধান করতে হবে। আপনার দেয়া যুক্তিগুলো অনেকটা ইভ টিজারদের মতো শুনাচ্ছে। "ও খারাপ কাপড় পরছে, তাই আমি শিষ দিছি! দেশে ধর্মীয় পরিবেশ নাই, তাই এই অবস্থা।" "সিস্টেম পরীক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে পারে নাই। তাই আমি পরীক্ষা দিমু না!"
আপনি বুয়েটে পড়ে এসেছেন। হলে ছিলেন কিনা জানি না। থাকলে আশা করি ভালো করেই জানেন, কীভাবে পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলনে 'সামষ্টিকভাবে' ছাত্ররা অংশ নেয়। প্রথম মিছিলটা বের করে হাতে গোনা ২০-২৫ জন। তারপরেরটা ৫০ জনের মতো, তারপরেরটায় অনেক মানুষ। প্রথম মিছিলটা যারা বের করছে, তারা সিস্টেমের দোষে বের করছে বলে আমি মনে করি না। আর ছাত্ররা যাতে অনিশ্চয়তায় না থাকে, সেজন্যই তো সিস্টেমকে সোজা হতে বলছি। প্রথম মিছিলটা বের হওয়া মাত্রই একটা নোটিস দিয়ে পরীক্ষার রুটিন রি-ইনফোর্স করার জন্য বলছি (পোস্টের মূল বক্তব্য এটাই)।
এই ছাত্ররাই যখন এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষা দেয়, তখন তো তারা পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন করে না। এমন কি যতো সময় যাচ্ছে, পরীক্ষা ততো এগিয়ে আসছে। আমাদের সময় এইচএসসি হতো মে মাসে, এখন তা হয় এপ্রিলে। সেটা তো সবাই মেনে নিচ্ছে। এমনকি একেক কলেজে পড়াশুনার সিস্টেমও একেক রকম। নটর ডেম কলেজে মোট বড় পরীক্ষা হয় ২ বছরে ৩ টা, প্রতিটায় ৬ টা করে বিষয়, আর প্রতি বিষয়ে ২ বছরে ১০ টা করে কুইজ হয় (আমাদের সময়কার কথা বলছি)। অন্য দিকে ভিকারুন্নিসা কলেজে বড় পরীক্ষা হয় ৬ টা। দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন সিস্টেমের ছাত্র ছাত্রীরা ঠিকই কিন্তু একই সময়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। জানি, আপনি এখন আবারো 'সিস্টেম'এর দোষ দেবেন। হয়তো বলবেন, সিস্টেমই এই ছাত্রগুলোকে পরীক্ষা পেছানো শেখায়। কিন্তু আপনার এই কথার উত্তর আগেই দিয়ে রেখেছি। "কেন জানেন? সিস্টেমের দোষের জন্য না। ১-১ এ পড়ুয়া এক ছাত্রকে টেনে মিছিলে নিয়ে গিয়ে তাকে হাতে ধরে পরীক্ষা পেছানোটা শিখিয়ে দেয় বুয়েটের শ্রদ্ধেয় বড় ভাইরা।" দুঃখিত, এটা কোনভাবেই সিস্টেমের দোষ হতে পারে না।
ত্যানা তো আমি প্যাচাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে না। পোস্টের বিষয়বস্তু তো পরিষ্কার। "মাইন্ডসেটের পরিবর্তন ও প্রশাসনের নিয়মতান্ত্রিকতা।" এই বিষয়টাকে এড়িয়ে যাওয়া, সিস্টেমের ঘাড়ে নিজেদের অপকর্মের দোষ দেয়া এই টাইপের ত্যানা প্যাচানি ব্যাপারগুলো তো আপনার দ্বারাই হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
- লেখক
এটা জানার চেষ্টা করেন। পরীক্ষা পেছানো বন্ধ হওয়ার এরকম একটা উপায় কেন ইমপ্লিমেন্ট করা হচ্ছে না, এর কারণটা জানতে পারলে অনেক অপ্রয়োজনীয় আলোচনাই এড়ানো যাবে।
'পরীক্ষা যে পিছানো যায়', বা আরো স্পষ্ট করে বললে 'পরীক্ষা যে পিছানোর জিনিস' - এই মাইন্ডসেট তৈরি করে বুয়ের প্রশাসন। পরীক্ষার সিস্টেমকে এমনভাবে ম্যানিপুলেট করা হয়েছে, যাতে পরীক্ষা পেছানো প্রায় অবধারিত হয়।
আপনার দেয়া তথ্যগুলো চমৎকার; কিন্তু তার ওপর ভিত্তি করে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো আজগুবি। হ্যাঁ, পরীক্ষা পেছানোর সিনারিও এরকমই। প্রশাসন প্রথমে গা করে না; তারা চায় আন্দোলন আরো জমুক, অনিশ্চয়তা আরো বাড়ুক। তারা নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত দিতে দেরি করে বলে, ছাত্ররা পড়াশুনায় ঢিলা দেয়, এরপর পরীক্ষা পেছানোর মিছিল বড়ো হতে থাকে। এখানে দোষটা প্রশাসনের, ছাত্রদের না। ওই অনিশ্চয়তাটা সময়মতো দূর করলে মিছিল বাড়ে না, পড়াশুনার রিদম নষ্ট হয় না।
আপনি তথ্য দিবেন প্রশাসন সময়মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না; কিন্তু সিদ্ধান্তের সময় ছাত্রদের মাইন্ডসেট পরিবর্তনের প্রেসক্রিপশন, একটু কেমন না ব্যাপারটা? প্রশাসনকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বলুন, ছাত্রদেরকে গালি দেয়ার কাজটা তো কয়েক দশক ধরেই চললো, পরীক্ষা পেছানো তো থামলো না। টিউশনির দোহাই দেয়া হলো, ছাত্ররাজনীতির দোহাই দিয়ে ইউকসুকে হত্যা করা হলো, শিক্ষকদের ক্ষমতা ও হালুয়া-রুটির ভাগাভাগিতে এক সেমিস্টার বুয়েট পিছালো। প্রশাসন তো কাজের কিছুই করছে না। এবার প্রশাসনকে একটু ধরুন। পরীক্ষা পেছানো ঠেকানোর উপায় কেন তারা ইমপ্লিমেন্ট করছে না, সেটা নিয়ে ধরুন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমার ছাত্রদের মূল দোষ দেয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে, ক্ষতিটা দিন শেষে তাদেরই হয়। পাগলেও নিজের ভালো বুঝে, শুধু "বেস্ট অফ দ্য বেস্ট"রাই বুঝে না।
যাই হোক, আপনি আর আমি মূল সমস্যাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি। এখন আপনার দেয়া যুক্তিগুলোর পাল্টা যুক্তি দিতে গেলে আবার পুরনো কথাগুলোই বলতে হবে। আপনিও তাই করছেন, একই কথা বার বার হচ্ছে। কাজেই মনে হচ্ছে না আপনার সাথে আমার মতের মিল হবে, শুধু দুটি জায়গা ছাড়া, এক, ডিপার্টমেন্ট ভেঙ্গে দেয়া; দুই, আমরা দুজনই দিন শেষে বুয়েটের ভালো চাই। সেটা যেভাবেই হোক।
আপাতত এই দুই জায়গায় একমত হয়ে বিতর্কের শেষ করতে চাচ্ছি।
শুভকামনা আমার-আপনার প্রাণের বুয়েটের জন্য।
- লেখক
একটা বাজে উদাহরণ মনে পড়ে গেলো। ধর্ষণের ক্ষেত্রে ধর্ষিতা দায়ী, যেহেতু ক্ষতিটা তারই হচ্ছে। বুয়েট ছাত্ররাও এক অর্থে এই কেসে ধর্ষিত হচ্ছে প্রশাসন দ্বারা। আরেকটু কাছাকাছি উদাহরণ হতে পারে, ইভ টিজিংয়ের শিকার হওয়া মেয়েটি যখন গলায় ফাঁস দেয়, তখন দায় মেয়েটিরই, কারণ ক্ষতিটা তো তারই হচ্ছে!
কোনো ছাত্রই চায় না মাসের পর মাস পরীক্ষা পেছাক। সুকৌশলে তাদেরকে ওভাবে গাইড করা হয়। প্রথমে যেটা থাকে একটামাত্র পরীক্ষার সময় পরিবর্তনের দাবি, সেটা শেষমেশ ৩ মাসের হল ভ্যাকেন্টে গিয়ে দাঁড়ায়!
আমিও মনে করি, আমরা দুইজনই বুয়েটের ভালো চাই। ভালো থাকেন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাই ভাই, সিস্টেমেরই যদি সব দোষ থাকে, তাইলে সিস্টেম ঠিক করার জন্য টার্ম চলাকালীন আন্দোলন হয়না কেন? সিস্টেম খুব খারাপ এই কথাটা খালি পরীক্ষা শুরু হইলে মনে হয়??
২০০৬ এ স্যারদের কাছে আমিও গেসিলাম, ক্যান এই মাইন্ডসেট পরিবর্তন করা দরকার আমি তখনই বুঝছি, আপনি এখনো বুঝেন নাই। পরীক্ষা পেছানো যায় এই উদাহরণ বন্ধ করতে পারলে কাজের কাজ হবে। এস এস সি, এইচ এস সি পরীক্ষা পেছানো যায়না দেখেই কেউ এই চেষ্টাও করেনা।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
You just nailed it!
- লেখক
আন্দোলন করবে কে? অধিকাংশ ছাত্র বুয়েটে থাকা অবস্থায়ই বুঝে না কোনটা লাভ, কোনটা ক্ষতি। শিক্ষকদের হালুয়া-রুটির জন্যও তাদেরকে অনায়াসে ইউজ করা যায়।
আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। স্যারেরা সমস্যাটা বুঝার পরেও মাইন্ডসেট পরিবর্তনে কোনো কাজই করে না। কেন?
অবশ্যই কাজ হবে। কিন্তু উদাহরণ বন্ধ করার তরিকা কি? ছাত্রদেরকে প্রেশার কুকারে ঢুকাইয়া কুকারের মুখ আটকায়া দেয়া? উহু। ছাত্ররা যাতে অপ্রয়োজনীয় প্রেশার ফিল না করে, তার ব্যবস্থা করা। আমি যদি অথোরিটি হয়ে সেমিস্টার শুরুর আগে ৩ মাস ছুটি নিয়া এমনভাবে প্ল্যান করি, যাতে পিএল-পরীক্ষার সাথে ঈদ-পুজা-বিশ্বকাপের কনফ্লিক্ট হয়, তাইলে আপনি যতো বড়ো মাপের পড়ুয়া স্টুডেন্টই হন না কেন, আপনাকে প্রেশার কুকারে সিদ্ধ করা কোনো ব্যাপারই না।
শিক্ষক ও ফার্মের মুরগিরা কথায় কথায় মিছিল-মিটিং আর টিউশনির দোষ দেয়। পলিটিক্যাল মিছিল-মিটিং একটা পর্যায়ে কমাইয়া দেই; কিন্তু আড্ডা কখনোই কমে নাই। গড়ে ২টা থেকে ৪ টা টিউশনি করতাম। কোচিং সেন্টারেও পড়াইছি। তারপরেও রেগুলার ফার্স্ট বেঞ্চে বসে ক্লাসনোট তুলতাম। ওই ক্লাসনোট আমার নিজেরই ফটোকপি করে নেয়া লাগতো। অধিকাংশ ফার্মের মুরগি থিকা রেজাল্টও ভালো ছিলো। আমি এক্সেপশন না; এরকম টিউশনি ও আড্ডাবাজি করে যারা ফার্স্ট-সেকেন্ড হয়ে টীচার হয়েছে, ওরা এক্সেপশন হতে পারে। তবে টিউশনি আর মিটিং-মিছিলের জন্য বুয়েটে পরীক্ষা পেছায় না।
ছাত্রদের ওপর আর কোন দোষ চাপানো যায়? পরীক্ষা পেছানো বন্ধে অথোরিটি ঠিক কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে, তার একটা সুনির্দিষ্ট লিস্ট দিতে পারবেন? যদি আদৌ কোনো ব্যবস্থা নিয়ে থাকে, সেই ব্যবস্থাগুলো কেন কার্যকর হয় নাই?
এসএসসি-এইচএসসিও কালেভদ্রে পিছায়। আমি এইচএসসি পাস করি কোন এক বছরের ডিসেম্বরে, পুরা ১ বছর সিস্টেম লস। তবে সেটা রেয়ার কেস। বুয়েটের মতো সিস্টেম করে পাবলিক পরীক্ষা পেছায় না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
স্যার, এটা ত্যানা প্যাচানি না। আপনার দেয়া তথ্য থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, এই সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো আগ্রহ নাই।
আপনার সিদ্ধান্তগুলো এরকম হচ্ছে:
তথ্য:
৩ গুণ ৭ = ২১।
সিদ্ধান্ত:
অতএব, ২১ একটি মৌলিক সংখ্যা।
তথ্য:
প্রশাসন ডিপার্টমেন্টবেসিসে আলাদা পরীক্ষা নিলেই সমস্যা থাকতো না।
সিদ্ধান্ত:
অতএব, ছাত্রদের মাইন্ডসেটের পরিবর্তন আবশ্যক।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপাতত যেহেতু সেটা হচ্ছে না, তাই ছাত্র হিসাবে আমাদের কী করনীয়, সেই ব্যাপারগুলোই চিন্তায় এসেছিলো। যাই হোক, ভালো থাকবেন।
- লেখক
সেখানেও কিন্তু আবার একই সমস্যা হবে, ডিপার্টমেন্টের হেড স্যারের বাসায় গিয়া ঢিল মারবে পোলাপান তাই প্রশাসনের একটু কঠিন না হইলে আর চলতেসেনা।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ও আচ্ছা, আরেকটা ব্যাপার, বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। ডিপার্টমেন্ট ভেঙ্গে দিলে কেন পরীক্ষা পেছানো বন্ধ হবে জানেন? কারণ হচ্ছে, তখন "ডিভাইড অ্যান্ড রুল" সিস্টেম চালু হবে। ডিপার্টমেন্টের হাতে পরীক্ষার দায়িত্ব দিয়ে দিলে ৭০% কেন, ১০০% মার্ক্সের পরীক্ষা নিলেও কেউ টুঁ শব্দটি করবে না। কারণ মিছিলের লোকই তো হবে না! তখন কিন্তু পরীক্ষা-ভীতি, অ্যাসাইন্মেন্ট এসব কথাও কেউ বলবে না।
আপনি যেসব কারণ বলছেন, অনিশ্চয়তা, পরীক্ষার জন্য মানসিক চাপ, এসবের সাথে ডিপার্টমেন্ট ভেঙ্গে দেবার সম্পর্ক নেই। মারকিং পদ্ধতি পুরোপুরি এক রেখে ডিপার্টমেন্ট ভেঙ্গে দিলে এসবের কোনই পরিবর্তন হবে না। চাপ চাপের জায়গায়ই থাকবে। শুধু পালটাবে মাইন্ডসেট। পরীক্ষা পেছানো যায়, এই চিন্তা দূর হবে, আর কিছু না।
আপনার এই সহজ প্রেসক্রিশন ইমপ্লিমেন্ট করতে বলুন প্রশাসনকে। ছাত্রদেরকে হেদায়েত অনেক করা হয়েছে। প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার কারণেই মূল সমস্যার সমাধান হয় নাই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
প্রাইভেট ভার্সিটিতে টাইমলি পরীক্ষা নিতে অথরিটি সিনসিয়ার, তার একটা অন্যতম কারণ ইকোনমিক। টিউশন ফীটা সেই সেমিস্টারের ভার্সিটি'র খরচ তুলে আনে। যদি পরীক্ষা পিছিয়ে যায় ৩ মাস, তাহলে তো সেই সময়ের জন্য আলাদা টিউশন ফী নেয়া যাবে না -- তখন সেই তিন মাসের বেতন ও অন্য খরচগুলো চালানো সম্ভব হবে না। কাজেই পরীক্ষা পিছালে ইনকাম বন্ধ ফলে কলাপ্স।
অন্যদিকে বুয়েটের সমস্ত খরচ (শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ইত্যাদি) সরকারী টাকায় চলে। ছাত্রদের টিউশন ফী দিয়ে চলে না। কাজেই টিউশন ফী এখানে কোনো ফ্যাক্টর হবে না কোনোদিন। সমস্ত কার্যক্রম এক বছর পিছিয়ে গেলেও শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হবে না -- সুতরাং ... ... ... পিছাইলে পিছাইলো ...
পরীক্ষার ডিসেন্ট্রালাইজেশনটাই সম্ভাবনাময় সমাধান মনে করছে শিক্ষকগণও। ডিপার্টমেন্ট ওয়াইজ (এবং ডিপার্টমেন্টে ব্যাচ ওয়াইজ) পরীক্ষা নিলেই বাকীরা চাপে পড়ে ... ... ... বুঝতেই পারছেন।
আমি প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়াই। গত ডিসেম্বরে হরতালের ডামাডোলেও টাইমলি পরীক্ষা হয়েছে। আমার ডিপার্টমেন্টের (সিভিল) পোলাপান বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে পরীক্ষা পিছিয়েছে (মেস থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, অন্য ভার্সিটি বন্ধ করে দিয়েছে -- কারণগুলো কিছু ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত)। কিন্তু এর মধ্যেও ফাঁকে ফাঁকে ঠিকই ইলেক্ট্রিকাল আর বিবিএ, এমবিএ সবার পরীক্ষা হয়ে গেল। জানুয়ারীতে পরের সেমিস্টার শুরু করে রেজিস্ট্রেশন এবং ক্লাস শুরু করে দেয়া হল, আর প্রতি শুক্র-শনিবার করে ডিপার্টমেন্টের বকেয়া পরীক্ষা নিয়ে জানুয়ারীতেই গত টার্মের ব্যাকলগ ক্লিয়ার করে ফেলা হল। এসব না করলে তো বেতন বন্ধ থাকবে ... ... বুঝেনই ... ...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
মেডিকেল কলেজে ছুটির অভাবে প্রতি টার্মের আগে ৭ দিন পি,এল যোগ করা হয়েছে নতুন কারিকুলামে। কিন্তু প্রাচীনপন্থী অধ্যাপকগণ মত দিচ্ছেন যে, পি,এল মানে ছুটি না! ছাত্রদের আসতে হবে এবং শিক্ষকের সম্মুখে বৃন্দপঠনে অংশগ্রহণ করতে হবে। পরম করুণাময় ইহাদিগের মঙ্গল করুন!
কলেজ না বলে তাহলে টোল বলুন
ধ্রুব
মেডিকেল কলেজকে টোলও বলা চলে না, ইহা এক প্রকারের শিশুনিকেতন!
দ্বিমত পোষণ করলাম, শিশুনিকেতন বুয়েটও।
ধ্রুব
পরীক্ষা জিনিশটাই উঠায়ে দিয়ে সব বুয়েটিয়ানকে একটা ডাহা-মেধাবী সার্টিফিকেট ধরায় ৪ বছর পর বের করে দিলে হয়। মাঝের সময়ে ক্লাস হবে, যে শিখতে চায় শিখবে, যে মৌজ মাস্তি করতে চায়, মৌজ মাস্তি করবে, জীবনের পরীক্ষাতেই প্রমাণ হয়ে যাবে বুয়েটের শিক্ষা কই কাজে লাগাইতে পারলো কি পারলো না।
যত্তসব, এই ক্যাচাল আর ভালো লাগে না।
পুনশ্চঃ বুয়েটে চান্স পাবার বেদনা থেকেই এই কথা বলছি।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
সিস্টেমে সমস্যা বাংলাদেশের এবং পৃথিবীর সব জায়গাতেই আছে। এসব পরিবর্তনের জন্য সময়-আন্তরিকতা-অভিজ্ঞতা-যোগ্যতা প্রয়োজন।
“মাইন্ডসেট” পয়েন্ট টা পছন্দ হয়েছে।
বুয়েট বা দেশের অন্য যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যারা বিভিন্ন উছিলায় (মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য জাতীয় সংকটময় ঘটনা বাদে ) ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন থেকে শুরু করে ভাঙচুর ও অন্যান্য “বীরত্বপূর্ণ” কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকেন তারা কি কেবল বাংলাদেশের সর্বস্তরের প্রশাসনিক দুর্বলতার প্রভাবেই বিপ্লবী হতে পারেন? দেশের বাইরের কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (টিউশন ফি সহ বা ছাড়া ) তাদেরকে কখনো কোনও পরীক্ষা পেছানো বা অন্য কোনও কাজে সোচ্চার হতে দেখিনা। পৃথিবীর কঠিনতম পরীক্ষা পদ্ধতি বুয়েটে, বিদেশে লেখাপড়া খুব সহজ, বিষয়টা কি এমন ?
সামনে বিশ্বকাপ, বুয়েটে পরীক্ষা পিছাবে না?
-পিয়াল
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র
বুয়েটের ছাত্রদের অভিযোগ ফাইনালে বেশি নম্বর, চাপ ভাগ করে দেয়া, শিক্ষকদের আন্তরিকতা কম কারণ তারা বাইরের কাজে ব্যস্ত, প্রজেক্ট দেয়া হয় কম -এসব অভিযোগের র মাঝে ৪ বছরে পড়ে বের হবার জন্য যে স্পিরিটটা থাকা দরকার সেটা বুয়েটিয়ানদের কম। দেরি করার কুফল, সবাই বুঝতে পারে তবে বেশ খানিকটা দেরিতে।
শুভেচ্ছা
পরীক্ষা পেছানোর জন্য ছাত্রদের দোষ আছে সেটা সত্য। কিন্তু যে শিক্ষকেরা ছাত্রদের কথায় কথায় পরীক্ষা পেছায় তাঁদের কি কোনও দায় নেই?
২০০৬ সালের ঘটনার পর পর ২ টার্ম পরীক্ষা হয়েছিল ঠিকঠাক ২ সপ্তাহ পিএল এ। যতদূর মনে পড়ে এর পরেরবারও পরীক্ষা পেছানোর কোনো আন্দোলন হয় নি। শুধু, ০৩ ব্যাচের ভাইয়াদের ১ম পরীক্ষা নিয়ে সমস্যা ছিল। ওনারা স্যারদের সাথে দেখা করে ১ম পরীক্ষাটা পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। আর তাতেই পরীক্ষা ১ সপ্তাহ পিছিয়ে গেল। জুনিয়রদের কোনও আন্দোলন করা লাগে নি। ২০০৬ সালের ঘটনার পর আমাদের ধারনা ছিল পরীক্ষা হয়ত আর পেছাবে না। কিন্তু গুটিকয়েক ছাত্রের দাবির মুখে পরীক্ষা পিছিয়ে প্রশাসন আবারও প্রমাণ করল চাইলেই পরীক্ষা পেছানো যায়। এরপর অবস্থা আবার আগের মত।
আপনার মন্তব্যেই বুঝা যায়, অথোরিটি পরীক্ষা পেছানোর জন্য ছুঁতা খুঁজতে থাকে। ১টা পরীক্ষার সময় পরিবর্তনের আবেদনের ফলে পুরা ১ সপ্তাহ সব পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়ে ছাত্রদের পড়াশুনার রিদম নষ্ট হয়। সেটা পরীক্ষা আরো পেছানোর স্কোপ সৃষ্টি করে। অথচ ওই ১টা পরীক্ষাকে একদম শেষে একটা নোতুন ডেটে দিয়ে দিলেই কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয় না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
পরীক্ষা পিছিয়ে দিলেও শিক্ষকদের দোষ (যেবারের কথা আপনি বললেন), আর না পেছালেও শিক্ষকদের দোষ (এবার)। ভালো তো, ভালো না?
শিক্ষকদের হাতেই সবকিছু। তাঁদের হাতে ক্ষমতাও আছে। তাঁরা যদি নিজেদের সিদ্ধান্তের উপর স্থির থাকতে না পারে তাঁর দায় অন্তত শিক্ষকদের নিতে হবে। ছাত্রদের অযৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে পরীক্ষা পেছালে বার বার পরীক্ষা পেছাতেই থাকবে। আর যাই হোক পরীক্ষা পেছানোর নোটিশে কোনও ছাত্র স্বাক্ষর করে। সুতরাং দায়িত্ব থেকেই যায়।
সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন
সেটাই তো বললাম শেষে।
- লেখক
স্ববিরোধী কথা। ছাত্রদের এক্সাম পেছানোর পিছনে ৭০% ওয়েট একটা বড় কার্য্যকারণ কী? যদি কার্য্যকারণ হয়, তাহলে ওয়েট কমানো মাত্র কারণটার মৃত্যু ঘটে, সেই ক্ষেত্রে কার্য্য অর্থাৎ পরীক্ষা পেছানোর ফোর্সও কমে আসার কথা স্বতঃসিদ্ধ ভাবে।
পুরা লেখা জুড়ে সিস্টেমের দোষ দেয়া যাবে না, স্যারদের দোষ দেয়া যাবে না, ৭০% ওয়েট কমানো যাবে না, ডিপার্টমেন্ট ভাগ করা যাবে না। অর্থাৎ চলমান ব্যবস্থার কোন কিছুকেই দোষ দেয়া যাবে না, শুধু ছাত্রদের দোষ দেয়া যাবে। চলেন একটা থট এক্সপেরিমেন্ট করি। একটা সিস্টেমের ধরেন সবগুলা প্যারামিটার ধ্রুব, শুধু একটা প্যারামিটার চলক। কিন্তু সিস্টেমের বিহেভিয়ার ধ্রুবক। তাহলে সিস্টেমের বিহেভিয়ারের জন্য দায়ী মূল প্যারামিটার কি একমাত্র চলক, নাকি অনেকগুলা ধ্রুবক? ('৭০ থেকে অজস্র ব্যাচের ছাত্র পাশ করে বেরিয়েছে, স্থির থেকেছে শুধু পরীক্ষা পদ্ধতি আর প্রায় স্থির থেকেছে সিদ্ধান্তগ্রহীতা হর্তাকর্তা শিক্ষক-প্রশাসন।)
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
বিষয়টা মনে হয় ঠিক বুঝাতে পারলাম না। আরেকটু ব্যাখ্যা দেই।
শুরুতে আমাদের মনে হয়েছিলো, পরীক্ষার ওয়েট আরেকটু অন্যভাবে (৭০% কমিয়ে দিয়ে, মিডটার্ম পরীক্ষা নিলে ইত্যাদি) নিলে হয়তো পরীক্ষা পেছানো হবে না। কিন্তু স্যারদের যুক্তি ছিলো, তাহলে মিডটার্মও পেছানোর আন্দোলন হবে। বাকিদের কথা জানি না, এই যুক্তি আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। বিশেষ করে এখন তো আরো যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে। কারণ, এবারের পরীক্ষা পেছানোর কারণগুলো। ৪ সপ্তাহ পিএল দেয়ার পরেও ছাত্রদের মনে হয়েছে, যথেষ্ট সময় নেই। তাদের যুক্তিগুলোও বড় খাসা। সেসব আর বিতং করে বলতে চাই না। অতএব, আমার মতে ৭০%, পরীক্ষার সিস্টেম, এসব কোন কারণ না। বরং মূল কারণ ছাত্রদের মাইন্ডসেট এবং এটার পরিবর্তন আবশ্যক, যেটা পুরো পোস্টে আরো বিস্তারিত আছে।
চমৎকার অ্যাপ্রোচ। আসুন, অ্যানালাইসিস করি।
প্রথম কথা, আপনার স্বতঃসিদ্ধে হালকা ভুল আছে বলে মনে করি। সিস্টেমের সবগুলো প্যারামিটার ধ্রুবক হলে এবং আরেকটি প্যারামিটার চলক হলে সিস্টেমের বিহেভিয়ার ধ্রুবক হওয়ার কথা না।
খুব সহজ একটা সিস্টেম ধরি। সিস্টেমের ৫ টা প্যারামিটার, তার মধ্যে ৪ টা ধ্রুবক, ১ টা চলক। যদি সিস্টেমের আউটপুট হয় এই ৫ প্যারামিটারের যোগফল, তাহলে আমাদের সিস্টেম এরকম:
output = a1 + a2 + a3 + a4 + x
যদি x এর মান পরিবর্তন হয়, তাহলে অবশ্যই output এর মান পরিবর্তিত হবে, এবং সেক্ষেত্রে output এর মান একমাত্র x এর উপর নির্ভরশীল হবে।
বুয়েটের সিস্টেমে output হিসাবে ধরছি 'সময়মতো পরীক্ষা নিতে পারা'কে। '৭০, '৮০ এর দশকে একেক ব্যাচ ৪ বছরের মধ্যেই বের হতো (ভালো output)। আর আপনি নিজেই বলেছেন (আমিও আপনার সাথে একমত), স্থির থেকেছে প্রশাসন। কাজেই, একটা জিনিসই এখানে পরিবর্তন হয়েছে (সিস্টেমের চলক), আর সেটার কারণেই বুয়েটে সময়মতো পরীক্ষা নেয়া যাচ্ছে না (output এ পরিবর্তন)। আর সেই একটা জিনিস হচ্ছে ছাত্রদের মন মানসিকতা। আগে কেউ চিন্তাই করতো না যে পরীক্ষা পেছাবে। আর এখন আমরা ভাবি যে মিছিল হলেই পরীক্ষা পেছাবে। কাজেই, সমস্যার ট্রিগার করছি আমরা। পরীক্ষা পেছানোর মিছিল করে। আর এটা কীভাবে আসে বা ছাত্রদের মাঝে ছড়ায়, সেটার কথা উপরে এক কমেন্টে বলেছি। বড় ভাইরা ছোটদের হাতে ধরে শিখিয়ে দেয়।
- লেখক
এই যে গুলিয়ে ফেললেন। এত সিম্পলিফাই করে ফেললেতো হবে না। আমার প্রস্তাব ছিল f(x, a, b, c, ...) = ধ্রুবক, যেখানে x চলক, a, b, c, ... এইগুলো ধ্রুবক। এই সিস্টেমটা অনেক ভাবে সম্ভব, উদাহরণ দেখুনঃ
১। f(x, a, b, c) = A.a + B.b + C.c + 0.x
২। f(x, a, b, c) = g(a) + h(b) + k(c) + 0.l(x)
এখন বাস্তবে আউটকাম ধ্রুবক হয় না। তাই আদর্শ সমীকরণ হবে f(x, a, b, c) = g(a) + h(b) + k(c) + e.l(x) -- যেখানে e ইনফাইটসাইমালি স্মল। (বাই দ্য ওয়ে, ব্যাপারটা লিনিয়ার হওয়ার কোন কারণ নাই, ইভেন সাবফাংশনগুলার উপরেও না)
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আপনার ১ আর ২ নং সমীকরণ দেখে না হেসে পারছি না। x এর ওয়েট যদি এতোই কম (০ বা অনেক ছোট) হবে, তাহলে x কে সিস্টেমের প্যারামিটার ধরার দরকারটা কী, সেটাই বোধগম্য না (কাজেই x এর ওয়েট আরো বাড়বে এবং এর উপরেই সিস্টেম নির্ভরশীল হবে)! উপরন্তু, আমি যে সিস্টেম ধরেছি, সেখানে কিন্তু আউটপুট ধ্রুবক না। '৭০-'৮০ এর দশকে সিস্টেম ভালো আউটপুট দিতো (পরীক্ষা নেয়া যেতো সময়মতো), আর এখন দিচ্ছে না (পরীক্ষা পেছায়)। আপনি সিস্টেম ধরছেন গত ১৫ বছরের হিসাবে। আমি কিন্তু সেভাবে দেখছি না। আমি সিস্টেম ধরছি গত ৩৫ বছরকে।
যাই হোক, একটা গাণিতিক সমস্যাকে অনেকেই অনেকভাবে দেখে। আপনার পারস্পেক্টিভটা আমার কাছে ঠিক গ্রহণীয় মনে হচ্ছে না। হয়তো আমারটাও আপনার কাছে তাই।
- লেখক
বুয়েটে পরীক্ষা পেছালে প্রশাসন এবং শিক্ষকদের কোনো ক্ষতি নাই। যতোদিন পর্যন্ত না পরীক্ষা পেছালে ক্ষতিটা শিক্ষকদের ঘাড়ে গিয়ে না পড়ছে, ততোদিন পর্যন্ত পরীক্ষা পেছাবেই।
পরীক্ষামূলকভাবে টার্ম ফাইন্যাল পেছানো হলে শিক্ষক কোয়ার্টার ভ্যাকেট করে দিয়ে দেখা যেতে পারে। যদি শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষার রুটিন ঠিকমতো ধরে রাখতে না পারেন, তাহলে যেভাবে পুলিশ দিয়ে ছাত্রদের দাগী আসামীর মতো করে তাড়িয়ে হল ভ্যাকেট করে দেওয়া হয়, সেভাবে শিক্ষকদেরও কোয়ার্টার ভ্যাকেট করে দেওয়া হবে। পরীক্ষা শুরু না হলে তারা আর কোয়ার্টারে ফিরে আসতে পারবেন না। এই পদ্ধতি চালু করে দেখুন, ফল দিতে পারে।
আমি কিন্তু ছাত্রদের পুলিশ দিয়ে পেটানোর পক্ষে না। প্রশাসনের কঠোরতা আর পুলিশ দিয়ে পেটানো মনে হয় এক জিনিস না।
- লেখক
আপনি প্রশাসনের কঠোরতা পুরোটাই ছাত্রদের ওপর প্রয়োগের পক্ষপাতী। কারণ আপনার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বড় ভাইয়েরা ছোটো ভাইদের হাতে ধরে মিছিল করে পরীক্ষা পেছানো শেখায়। আপনি এটা বলছেন না যে বড় স্যারেরাও ছোটো স্যারদের হাতে ধরে এই পরীক্ষা পেছানোর আবদার রক্ষা করা শেখান। পরীক্ষা পেছানোর বেলায় বুয়েট প্রশাসন ষোলো আনা নমনীয়, এর বাইরে একটা কোনো দাবি করুক না ছাত্ররা, যেটাতে পরীক্ষা পেছাবে না কিন্তু সিস্টেম পাল্টাবে, তখন দেখবেন বুয়েট প্রশাসনের মাজা টাইটেনিয়ামের মতো মজবুত হয়ে গেছে।
ঝেড়ে কেশে বলেন যে পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে তখন বুয়েটের শিক্ষকবৃন্দ সে সময়টা কোন কাজে কীভাবে ব্যয় করেন, সেখানে তাদের ব্যক্তিগত লাভের অবকাশ আছে কি না। বুয়েটের পরীক্ষা পেছানো যদি শিক্ষকদের জন্য লাভজনক হয়, ছাত্রদের মাইন্ডসেট নিয়ে হাজার কথা বলেও লাভ নাই।
৮৭-৮৮ ব্যাচের কাহিনী জানা আছে? সেই আমলে সেমিস্টার সিস্টেম ছিল। পরীক্ষা পেছানোর জন্য আন্দোলন করতেই --- প্রশাসন বললো -- ধুর হালার পরীক্ষাই নিমুনা। তারপর পরের সেমিস্টার শুরু হয়ে গেল। বছর শেষে একসাথে দুই সেমিস্টারের সমস্ত পরীক্ষার বাম্পার বাঁশ। শুনেছি সেবার বেশ কয়েকজন পাগল হয়ে গিয়েছিলো।
==
আমাদের সম্ভবত সেটা ২য় সেমিস্টার ছিলো --- মারামারি চলছে রাতে। কয়েকজন মহা উৎসাহে নিচের (সোহরাওয়ার্দী হলে) বাগানের লাইট ভাঙলো। বাইরে পুলিশ, হলের ভেতরে টিয়ার গ্যাসের শেল এসে পড়লো। সবাই রিল্যাক্স -- পরীক্ষা বন্ধ নিশ্চিত। শুধু আমার রূমের ৪ জন দরজা জানালা টাইট করে লাগিয়ে (টিয়ার শেলের গ্যাস থেকে রক্ষা পেতে) ধুমায়া ফাইট দিয়ে গেলাম --- কারণ সিনিয়র দুইজন নেভীর লেফটেনান্ট -- বুয়েটের ভদ্র ছাত্র। পরের দিন সকালে হলের গেট থেকে মূল গেট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দুই লাইন পুলিশ দাঁড়িয়ে ... পরীক্ষা অন । ভিসি শাহজাহান স্যার রকস্।
এখনকার সময়ের ছাত্র হলে হয়তো দরজা-জানালা আটকিয়ে ধূমায়া মুভি দেখতাম/ ফেসবুকিং করতাম। সেই আমলে কম্পিউটারই ছিলো না, ইন্টারনেট বহুত পরের চিন্তা -- কাজেই পড়া ছাড়া উপায় ছিল না।
==
আমরাই সম্ভবত সবচেয়ে লম্বা সময়ে পাশকারী ব্যাচ (আমরা ৯২) -- সর্বমোট ৬ বছর ১০ মাস লেগেছিলো।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
নতুন মন্তব্য করুন