• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

ধ্বংসপ্রাপ্ত অডিও শিল্পঃ দায় সবার

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/০৫/২০১৪ - ৫:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পেশাগত কারনে গত সপ্তাহে ময়মনসিংহে যাই। সেখানে এক পূর্ব পরিচিত এক অডিও ব্যবসায়ীর সাথে দেখা হলো। দেখি তাঁর দুই যুগেরও অধিক পুরাতন অডিও ক্যাসেট--সিডির দোকান ফ্যানের দোকানে পরিণত হয়েছে। বললাম, “ভাই একি অবস্থা”! তিনি আক্ষেপ করে বললেন, “বহু চেষ্টা করলাম ভাই, কিন্তু পারলাম না। লাভ তো দূরে থাক, আজকাল দোকান খরচই তুলতে পারিনা। ভালবাসা আর মায়ায় এতদিন ধরে রেখেছিলাম কিন্তু আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়ে ব্যবসার এই হাল করতে বাধ্য হলাম। জানেন আমার প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্যাসেট ও সিডি ভাঙ্গারীর দোকানে বিক্রি করে দিতে হয়েছে। ভালই হয়েছে চোখের সামনে নাই তাই কষ্টও কমে গেছে”। আসলেই কি তাই? তাঁর অসহায় ও হতাশ দুই চোখ শূন্যে কী যেন খুঁজে বেড়ায়।

আমার মনে পড়ে ছোট বেলায় বাসায় দেখতাম আমাদের বাবা (পরে বড় ভাইয়েরা) ক্যাসেট কিনতেন বা রেকর্ডিং করে আনতেন। আব্বু মোহাম্মদ রফি’র খুব ভক্ত ছিলেন, এছাড়া মুকেশ, কিশোর কুমার, হেমন্ত, মান্না দে, সতীনাথ, মানবেন্দ্র, আশা, লতা কত কত শিল্পীর গান যে শুনতেন। আব্বুর আসাধারন এক ক্ষমতা ছিল। একটা গান বাজলেই তার গীতিকার-সুরকার কারা, কোন সিনেমার গান আব্বু এসব তাঁর স্মৃতি থেকে অবলীলায় বলে দিতে পারতেন। বড় দুই ভাইয়ের কারণে বাংলা ব্যান্ড ও পাশ্চাত্য সংগীতের সাথেও পরিচয় হয়। ভাইয়েরা এলিফেন্ট রোডের রেইনবো থেকে ক্যাসেট রেকর্ডিং করে নিয়ে আসত। সেই পরম্পরায় এক সময় আমিও একই কাজ করতে থাকি। স্কুলের টিফিনের পয়সা বা এর ওর কাছ থেকে যে ক’টাকা পেতাম তা দিয়ে প্রায় মাইল তিনেক হেঁটে গানের দোকান থেকে ক্যাসেট কিনে আনতাম। তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করতেম কবে নতুন কোন অ্যালবাম বের হবে। যেহেতু আমার মত আমার বন্ধুরাও সব নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা, তাই যদি কোন মাসে একাধিক অ্যালবাম রিলিজ হত বন্ধুরা ভাগ করে একেকটা কিনতাম, পরে অদলবদল করে শুনতাম। আজও আমাদের পৈতৃক ভিটায় যখন যাই দেখি আমার ঘরের আলমিরাতে প্রায় অর্ধ-সহস্রাধিক ক্যাসেট পড়ে আছে। আম্মু বলেন, “কিরে এগুলিকে কী করবি? এখন শুনিসনা আর শুনবিই বা কীভাবে”? ঠিক, ক্যাসেট শোনার যন্ত্রও তো এখন আর নাই। আমি বলি, “মা-জননী কিছুই করবনা। আমৃত্যু এভাবেই সাজিয়ে রাখবো। জানো এর প্রতিটা ক্যাসেটের আলাদা আলাদা গল্প আছে যা আমি তোমাকে এখনো দিব্যি বলে দিতে পারবো। এগুলি আমার সন্তানের মত”। এসব বলতে বলতে কেমন যেন নস্টালজিক হয়ে পড়ি।

কালের আবর্তে আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় ক্যাসেটের জায়গায় সিডি’র স্থান হয়েছে। আমিও বদলে যাই — ক্যাসেট কেনার পরিবর্তে সিডি কিনি বা রেকর্ডিং করতে থাকি। আমি পাশ্চাত্য সঙ্গীতের খুব ভক্ত। তাই এর সহজলভ্যতার অভাব খুব অনুভব করি। কিন্তু কী উপায়? কিভাবে পাবো? এক বন্ধুর মাধ্যমে খোঁজ পেলাম সারগামে সব ইংরেজী গানের অ্যালবাম পাওয়া যায় , ব্যাস কেনা চলল ধুমসে, সেই সাথে রেইনবো’তে রেকর্ডিং । হঠাৎ একদিন মনে হল আরে এরা সবাইতো পাইরেসি করছে আর আমি পয়সা দিয়ে তা কিনে পাইরেটদের আরো উৎসাহী করছি! ভাবলাম তাহলে এই অপকর্মটা নিজেই করি। শুরুও করলাম, কিন্তু শুধুই ইংরেজী গান কেননা আমি হিন্দী গান শুনিনা। তবুও সবসময় নিজেকে কেমন যেন চোর চোর মনে হয়। নিজেকে সান্ত্বনা দেই — আমার দেশে তো এগুলি সহজলভ্য না তাই এটা করা সম্ভবত যায়? একটা প্রতিজ্ঞা করি, আমার দেশের কোন শিল্পীর গানের বেলায় এই কাজ করবোনা। আজো এই প্রতিজ্ঞায় অবিচল আছি।

এতক্ষন এতো নিজের প্যাঁচাল কেন পারলাম? কারণ, এদেশের সঙ্গীতপ্রেমী মানুষদের গান শোনার গল্পটা কমবেশি আমার গল্পটার মতোই। দেশে যদি এতো সঙ্গীতপ্রেমী থেকে থাকেন যারা বাংলাদেশের শিল্পীদের গান সিডি কিনে শোনেন তাহলে কেন সিডি-ব্যবসায়ী দাবি করেন, সিডি বিক্রি হয় না? যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন — আপনার প্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কে? দেখবেন হাতে গুনে ৫জন সর্বোচ্চ ১০ জনের নাম বলবে। যদি এই ১০জনই প্রতি বছর অ্যালবাম রিলিজ করেন তবে গড়ে প্রতিমাসে একটাও হয়না। একটা সিডি’র দাম ৬০ টাকা হলে বছরে ৬০০ টাকা। এই সামান্য টাকাও আমরা খরচ করিনা। আমরা ব্যস্ত হয়ে পরি গান ডাউনলোড করতে। আবার আমরাই গলা ফাটাই — কেন ভাল গান হয়না? কেন অ্যালবাম রিলিজ হয়না? কিন্তু নতুন অ্যালবাম বের হলেই কি আমরা কিনবো? অন্যকে গাল দিয়ে কি নিজেদের দায় এড়ানো যায়?

আবার ময়মনসিংহের গল্পে ফিরে যাই। আমি সেই ব্যবসায়ী বড় ভাইকে বললাম,

- ভাই তাহলে ডাউনলোড-পাইরেসিতেই সব খেল।

- আরে না ডাউনলোড হয় আর কয়দিন ধরে। শোনেন কোম্পানিরা নিজেরাই তো পাইরেসি শুরু করেছে। ধরুন, আপনার কোম্পানির কোন অ্যালবাম ভাল চললে আমি তার কপি করলাম। আবার আমার বেলায় আপনি। এক আসিফের অ্যালবাম বিক্রি করে কত কোম্পানি কত টাকা কামিয়েছে অথচ যেই আসিফ নিজের ভাল বোঝা শুরু করল ব্যাস বলা শুরু হয়ে গেল, “এখন আর অ্যালবাম আগের মতো চলে না”, নানা তাল বাহানা। এমন ঘটনা অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর বেলায়ও ঘটেছে। আবার ধরুন, নতুন শিল্পী আসলে তাদের টাকায় অ্যালবাম বের করবে যদি কিছু বিক্রি হয়ও শিল্পী খোঁজ করলে বলবে সব পড়ে আছে। তবে ভাল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যে নাই তা না। এরা বাকি চোরদের যন্ত্রনায় লাটে উঠেছে। তাহলে বলুন এরাই তো নিজেরা নিজেদের ডুবাচ্ছে মাঝখানে পড়ে আমরাও ডুবছি।

তারমানে রেকর্ডিং কোম্পানিগুলির দায়ও কোন অংশে কম না।

এখন হরদম দেখবেন মানুষ কানে হেডফোনে গান শুনছে, কোথা থেকে গান শুনে? কিছু ভুঁইফোঁড় এফ এম রেডিও আছে যারা কারো কাছ থেকে কোন অনুমতির তোয়াক্কা না করে রাত-দিন গান শোনাচ্ছে আর নিজেরা লাভবান হচ্ছে। তাহলে মানুষ কেন পয়সা দিয়ে সিডি কিনবে? আবার এটাও অনেকে বলবে অন্যদেশে কি এফ এম রেডিও নাই? আছে, কিন্তু তারা শিল্পীকে রয়্যালিটি দেয়, আমাদের এমন নজির আছে কি?

আমাদের দেশে অনেক বিষয়ে আন্দোলন হয় কিন্তু দুই-একটা বিচ্ছিন্ন উদ্যেগ ছাড়া শিল্পীদের বা তাদের কোন সংগঠনের তেমন কোন কর্মকান্ড দেখিনি। বরং কিভাবে একে অন্যের পেছনে লেগে থাকবেন সেই চেষ্টায়ই রত থাকেন। তাহলে উপায় কি? সব কিছু কি এভাবেই চলবে? না, তা কিভাবে হয়! এর অবশ্যই সমাধান আছে। আর তা হচ্ছে প্রত্যেককে নিজেদের অবস্থানে সৎ থাকতে হবে।

আমার এ ব্যাপারে নিজস্ব প্রস্তাব আছে এখানে তাই বলছি।

শ্রোতাদের প্রতিঃ অনেক কাজেই তো আপনার কষ্টের অর্জিত অর্থ ব্যয় করেন, কখনো অপব্যয়ও। গান যদি না শোনেন তো কথা নেই, আর শুনলে যতটুকু শোনেন তা কিনে শুনুন। একটু ভেবে দেখুন আপনার কাছ থেকে ছিনতাইকারী যদি আপনার টাকাপয়সা কেড়ে নেয় তখন আপনার কেমন লাগবে? ডাউনলোড কি ছিনতাই ভিন্ন অন্য কিছু কি?

রেকর্ডিং কোম্পানিদের প্রতিঃ দেখেছেন তো অন্যের জিনিস চুরি করতে করতে কখন নিজের ঘরে চুরি হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। তাই এসব বাদ দিন। এখনও অনেক মানুষ সিডি কেনেন। নাহলে শিরোনামহীনের অ্যালবাম ফোন করে অর্ডার দিয়ে মানুষ কিনত না, বা রকস্ট্রাটার ২২ বছর পর অ্যালবাম রিলিজ হলে তা কেনার জন্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লাইন ধরবেই বা কেন, বা বছর জুড়ে যেসব কনসার্ট হয় সেখানে শ্রোতারা গাঁটের পয়সা খরচ করে টিকিটই বা কিনবে কেন। আর এসব যদি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে হয় তবে আপনারা পড়শী বা কণার মত শিল্পীদের অডিও অ্যালবামের সাথে সাথে ভিডিও অ্যালবাম রিলিজ করেন কেন?

শিল্পীদের প্রতিঃ এখনও সময় আছে আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন। অন্যের পেছনে লাগা বন্ধ করুন। নাহলে এখন হয়তো টিভি’তে লাইভ শো করে বা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে দিন পার করছেন, কিন্তু সেদিন বেশি দূরে নয় যে দিন গানকে পেশা হিসেবে নিলে আপনাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে গান গেয়েও জীবিকা নির্বাহ করতে হতে পারে।

সরকারের প্রতিঃ পাইরেসি নীতিমালা ও আইন কাগুজে না রেখে বাস্তবায়ন করুন। আপনারা মুহুর্তে ফেসবুক, ইউটিউব বন্ধ করতে পারেন অথচ বছরের পর বছর চলে আসা পাইরেট সাইটগুলি বন্ধ করতে পারেন না!

সবশেষে পাইরেট ভাইজানদের বলি, দেশে যদি নতুন গান না-ই হয় তবে নতুন কিছু আপলোড করবেন কোথা থেকে? মাথাটা সৃজনশীল কাজে লাগান। আর যদি কোন সাইটে গান আপলোড করতে চান, তাহলে সংশ্লিষ্ট শিল্পীর সাথে সমঝোতা করে ডাউনলোডের চার্জ নির্ধারণ করুন। এভাবে নিজেরা রোজগার করুন, শিল্পীদেরও বাঁচতে দিন।

অভিমন্যু
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

দায় আসলেই আমাদের সবার। লেখা ভালো লাগলো, আত্মোপলব্ধি আছে। ডাউনলোড প্রক্রিয়ার বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনলাইনে গান শোনানোর ব্যবস্থা করতে হবে শিল্পীদেরকে, এবং সেটার মাধ্যমে ইনকাম করার ব্যবস্থা করতে হবে।

আমার প্রস্তাব, একটা মাদার সাইট থাকুক। সেখানে প্রত্যেক শিল্পীর ওয়েবসাইট এম্বেড করার ব্যবস্থা থাকুক। যার যে শিল্পীর গান শুনতে ইচ্ছে হবে, সে ওর ওয়েবসাইটে গিয়ে গান শুনবে। প্রত্যেক নিজ নিজ ওয়েবসাইটে এড এর মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবে। সেটা সামান্য, তবু কিছুটা হলেও বেটার।

- ফরহাদ হোসেন মাসুম

অতিথি লেখক এর ছবি

উত্তম প্রস্তাব।
(ধইন্যা)

অভিমন্যু
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

(Y)

অতিথি লেখক এর ছবি

ব্যাপারটা হলো, সবাই শুধু এর ওর উপর দায় দিয়ে নিজের দায়িত্ব এড়াতে চায়। আর পাইরেসি! এটা বোধহয় এই দেশে বন্ধ হবে না। কোন শিল্পীর কোন অ্যালবামই এর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।

-রায়হান শামীম

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই তাই।

অভিমন্যু
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

মেঘলা মানুষ ও মরুদ্যান আপনাদের জন্য সচলের ফেইসবুক পেইজে এই লেখার মন্তব্যে Mervin Mondal অনেক সাইটের নাম বলেছেন আমি তার সাথে আরো দুইটি যোগ করলাম।

http://qineticmusic.com/shop/index.php?route=common/home
http://www.reverbnation.com/

অভিমন্যু
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

অনলাইনে বাংলা গান বিক্রি করে এমন কয়েকটি সাইটের তালিকা পেলে সবারই ভালো হত।

এফএম রেডিও যদি শিল্পিকে রয়ালটি না দেয় সেটা একটা বড় অন্যায়। এটারও একটা নীতিমালা থাকা দরকার।

শুভেচ্ছা :)

মরুদ্যান এর ছবি

গান ডাউনলোডের চার্জ করাটাও তো মনে হয় ঝামেলা দেশে। বিকাশ দিয়ে কি সম্ভব কোনভাবে?

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক এর ছবি

ডাউনলোড ঠেকানো খুবই দুরুহ ব্যাপার মনে হয়।

গোঁসাইবাবু

অতিথি লেখক এর ছবি

সরকারের স্বদিচ্ছা ও আমাদের সততা এই দুয়ের সংমিশ্রন হলে অবশ্যই সম্ভব।

অভিমন্যু
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ Mervin Mondal কষ্ট করে লিখাটা পড়ার জন্য সেই সাথে দরকারী কিছু তথ্য যোগ করার জন্য। আপনি বা আমি বা আমাদের যে কেউ লিখলেই হল, মুল বিষয় হচ্ছে সবাইকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

অভিমন্যু
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গানের পাইরেসি, কপিরাইট লঙ্ঘন, রয়ালটি না দেয়া সংক্রান্ত ব্যাপারে বাংলাদেশে ঠগ বাছতে গেলে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।

১. বাংলাদেশ বেতারে তার তালিকাভূক্ত শিল্পীদের গান বাজানো হলে সংশ্লিষ্ট শিল্পী রয়ালটি পান। কিন্তু বেতারে যে দিনমান সিনেমার গান বাজানো হচ্ছে যেখানে বেশিরভাগ প্লেব্যাক সিঙ্গার বেতারের তালিকাভূক্ত শিল্পী নয় তাদের ক্ষেত্রে রয়ালটির ব্যাপারটা কী হয়? এফএম চ্যানেলগুলোতে শিল্পী তালিকাভূক্তির ব্যাপার নেই বলে তাদের কাছে শিল্পীর রয়ালটি বলেও কিছু নেই। একই কথা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে পুনঃপ্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

২. বাংলাদেশ বেতার ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক’ নামের যে অনুষ্ঠান চালাচ্ছে, সেখানে সারা দুনিয়ার, বিশেষত ইংরেজি ভাষার গান বাজানো হচ্ছে। সেখানে কি শিল্পীকে রয়ালটি দেয়া হচ্ছে? না। একই কথা বাটেভিতে এক কালে প্রচারিত ‘সলিড গোল্ড’ জাতীয় গানের অনুষ্ঠানগুলোর জন্যও প্রযোজ্য।

৩. সেই আদি যুগের এলপি ডিস্কের আমলের পর ম্যাগনেটিক টেপ আবিষ্কৃত হবার পর থেকে গান রেকর্ডিং-এর দোকানে যা চলে আসছে তার সবই কপিরাইট লঙ্ঘন ও রয়ালটি ফাঁকি দেয়া।

৪. বিদেশী গানের ক্যাসেট/সিডি/ডিভিডি/এমপিথ্রি যা বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়ে আসছে তার প্রতিটি পাইরেটেড।

৫. আমাদের প্রত্যেকের ভান্ডারে বিদেশী যত গানের ক্যাসেট/সিডি/ডিভিডি/এমপিথ্রি আছে, সেগুলোর মধ্যে যে কয়েকটা দেশের বাইরে থেকে মূল অ্যালবাম কিনে আনা হয়েছে তার বাদে সবগুলো পাইরেটেড।

৬. মোবাইল ফোনে গান ডাউনলোড করার, গান শোনার ও টিউন সেট করার ব্যবস্থাগুলোর সবই কপিরাইট লঙ্ঘন ও রয়ালটি ফাঁকি দেয়া। লক্ষ করলে দেখা যায়, মোবাইল অপারেটররা নিজেরা সরাসরি এই কাজগুলো করে না। নাম-না-জানা সব থার্ড পার্টি দিয়ে এসব কাজ করানো হয়।

অর্থের বিনিময়ে গান ডাউনলোড করার ব্যবস্থা থাকলে কিছু মানুষ হয়তো টাকা দিয়ে গান কিনবেন, কিন্তু বাকিরা একজন আরেকজনের কাছ থেকে কপি করে নেবে। সমস্যাটা কমবেশি একই প্রকার থাকবে। প্রযুক্তির প্যাঁচ দিয়ে কিছু সাময়িক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান নয়।

সমাধানটা একেবারেই আমাদের হাতে। আমরা যদি গান কপি না করি বা পাইরেটেড ক্যাসেট/সিডি/ডিভিডি/এমপিথ্রি না কিনি তাহলে এই চর্চ্চা হ্রাস পাবে। এরপরেও রেডিও, টিভিতে কপিরাইট লঙ্ঘন ও রয়ালটি ফাঁকি দেয়া বন্ধ হবে না। সেটা করতে গেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সজাগ ও সক্রিয় করার জন্য শিল্পীদেরকে আন্দোলন করতে হবে। আমাদেরকেও শিল্পীদের সাথে যোগ দিতে হবে।

উপরের দুই অনুচ্ছেদে যা বললাম সেগুলো সবই কেতাবী কথা। বাস্তবে এগুলো হবে না। আইন না মানা যাদের মজ্জাগত, যাদের গল্প করার অন্যতম বিষয় হচ্ছে কে-কীভাবে-কখন আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে কাকে বোকা বানালো, যারা মেধাসত্ত্বের মতো বিষয়কে ‘মারফতী’ বলে মনে করে ও এর জন্য এক পয়সা খরচ করতে রাজী না তারা কোনদিন এসব পালন করতে যাবে না।

তাহলে এর কি কোন সমাধান নেই? আমার ধারণা, অচিরে বই-সঙ্গীত-চলচিত্র-ছবি’র ব্যক্তিগত সংগ্রহের কনসেপ্টটা উঠে যাবে। পৃথিবীর তাবৎ বই-সঙ্গীত-চলচিত্র-ছবি কোন সময়সীমার বাঁধন ছাড়াই আমাদের কাছে উন্মূক্ত হয়ে যাবে। সবাই এক বা একাধিক সেন্ট্রাল আর্কাইভের সাথে যে কোন সময় কোন না কোন উপায়ে যুক্ত হয়ে এ’সব উপভোগ করতে পারবেন। পাইরেসি-কপিরাইট-রয়ালটির বিদ্যমান সংজ্ঞার্থগুলোও তখন পালটে যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

যখন রাস্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান সরাসরি চুরি করে তখন তার নিকট আইনী প্রতিকার চাওয়া সত্যি বোকামি। কিন্তু ব্যক্তি আমি কেন চোর থাকব ? ব্যক্তি আমি’র সমষ্টিই আমরা তথা দেশ তাহলে ব্যক্তি থেকে এই শুরুটা হলে তা এখন হয়ত সংখ্যায় কম হবে, তবে ভবিষ্যতে তা বৃদ্ধি পাবে এই ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
“প্রযুক্তির প্যাঁচ দিয়ে কিছু সাময়িক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান নয়।“
একথা সত্যি, কিন্তু উন্নত বিশ্ব কি প্রযুক্তিতে আমাদের চেয়ে পিছিয়ে?!! তাহলে তারা কেন এখনও সিডি কেনে? মুল বিষয় হচ্ছে মানসিকতা যা আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।
হ্যাঁ আপনার ভবিষ্যৎ চিন্তা অমুলক নয় তবে শিল্পিকে তার পারিশ্রমিক প্রদানের অবশ্যই কোন বিধান থাকবে।
(ধইন্যা) আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য।

অভিমন্যু
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আমি চোর!!! এরকম লেখা পড়লে নিজের চোর সত্তাটাকে যেন আরেকবার দেখতে পাই।

তবে বুঝতে শেখার পরে চুরি করা বন্ধ করে দিয়েছি। জানি এতে হয়তো দেশ, সমাজ কিছুই পাল্টাবে না, কিন্তু একান্ত নিজের করে হলেও শুরু তো করেছি।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক তাই সবাই অধম বলে আমি উত্তম হইবনা কেন?
অভিমন্যু
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

সবাই চোর তা আমি মানিনা, এখন অনেকেই অনলাইনে গান কেনেন তাই এধরনের অনেক সাইট হয়েছে।

অভিমন্যু
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

এক লহমা এর ছবি

সেইটাই, দায় অনেকেরই। সান্ত্বনা এই, যেদিন থেকে পাইরেসির ব্যাপারটায় সচেতন হয়েছি, দূরে থেকেছি এই ভীষণ হাতছানি থেকে। অবস্থাও পাল্টেছে অনেক। আই-টিউন থেকে ইচ্ছেমত গান কিনতে পারায় অনেক সুবিধা হয়েছে। তবে ঐ, ষষ্ঠ পান্ডব যেমন বলেছেন, " আইন না মানা যাদের মজ্জাগত, যাদের গল্প করার অন্যতম বিষয় হচ্ছে কে-কীভাবে-কখন আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে কাকে বোকা বানালো, যারা মেধাসত্ত্বের মতো বিষয়কে ‘মারফতী’ বলে মনে করে ও এর জন্য এক পয়সা খরচ করতে রাজী না তারা কোনদিন এসব পালন করতে যাবে না।" :(

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনি যে অপরাধের কথা বললেন আমি নিজেও অপরাধে দায়ী। সম্ভবত বিশ্বের অধিকাংশ মানুষকে দায়ী করা যায়। কিন্তু উপায় কি? প্রযুক্তি যে পথে এগিয়েছে তাতে এই অপরাধ কমার কোন সম্ভাবনা নেই। এমনকি এটা যে একটা অপরাধ সেই ভাবনাটাও কোনদিন মাথায় আসেনি। কেন আসেনি? মানুষ মাত্রেই মজ্জাগতভাবে চোর বলে? মনে হয় না।

আমি মোবাইলে গান শুনি। আমার গান শোনার আর কোন যন্ত্র নাই। আমি ইউটিউব বা নেট থেকে গান নামিয়ে মোবাইলে কপি করে গান শুনি। যারা গানের ক্যাসেট সিডি ডিভিডি বের করেন সেগুলো আমি পয়সা দিয়ে কিনতে পারি, একসময় কিনেছিও প্রচুর। বইকেনার মতো গান কেনাও নেশা ছিল। একসময় গান শুনতাম ঘরে বসে। কিন্তু ক্যাসেটের যুগ শেষ। আমার পরিবারের ত্রিশ চল্লিশ বছরের কালেকশানের কয়েশো ক্যাসেট অকেজো হয়ে গেল প্রযুক্তি বদলে গেল বলে। সিডি ডিভিডি প্লেয়ারও সেকেলে প্রযুক্তি হয়ে গেছে। তাছাড়া এখন ঘরে বসে গান শোনার সময় নেই। অফিসে আসা যাওয়ার পথে কিংবা কোন ট্যুরে গেলে গাড়িতে বসে গান শুনি মোবাইলে। সিডি কিনে কি করবো আমি?

মোবাইলে গান শোনা সহজ একটা ব্যাপার। সেই সহজ প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। এটাকে পাইরেসির কথা বলে থামানো যাবে না। এটা অপরাধ হলেও এই অপরাধটা জনপ্রিয়। যদি এই অপরাধ থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করতে হয় তাহলে সমস্ত মোবাইলে গান শোনা নিষিদ্ধ করে দিতে হবে। সিডি ভিসিডি বাদে গান শোনা যাবে না তেমন আইন করতে হবে। সেটা কি কখনো সম্ভব?

প্রযুক্তির সাথে সাথে ব্যবসার ধরণও পাল্টে ফেলতে হয় মানুষকে। একসময় পাড়ায় পাড়ায় ভিডিও ক্লাব ছিল। ভিসিআর যুগে। মোটা মোটা ভিডিও ক্যাসেট ভাড়া করে ঝাপসা ছবি দেখে তৃপ্তি মেটাতাম। সেগুলো কি অরিজিনাল ছিল? সবগুলো পাইরেটেড। সেই ভিসিআর যুগ শেষ। তাদের ব্যবসা বদলে গেল। এরপর সিডি যুগ আসলো। ওটাও গেল। তারপর এল ডিভিডি যুগ। এটাও শেষ হবার পথে। কোথাও কি পাইরেসির কমতি আছে?

তাহলে কি শিল্পীরা গান গাওয়া ছেড়ে দেবে? কিংবা ছেড়ে দিয়েছে? আয় ইনকাম কমে গেছে? তাও তো দেখি না। সত্তর দশকে যারা গান গাইত তারা নেহায়েত দরিদ্র মানুষ ছিল। এখনকার শিল্পীদের শান শওকত চিত্র তারকাদের চেয়ে কোন অংশে কম না। তারা তো মনে হয় ভালো কামাই করছেন আগের যুগের শিল্পীদের চেয়ে। সুতরাং এই বিষয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ দেখি না। অডিও দোকানের ব্যবসা বসে গেলেও শিল্পীদের দুস্থ হবার আপাতত সম্ভাবনা দেখি না। অডিও থাকবে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন ফরমেটে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রযুক্তির সাথে সাথে অবশ্যই সবাইকে পরিবর্তিত হতে হবে তবে তাই বলে যার যা প্রাপ্য তা থেকে অবশ্যই বঞ্চিত না করে। আপনি যে কোনভাবেই গান শুনতে পারেন তা সিডি প্লেয়ার বা মোবাইল হোক কিন্তু আপনি অবশ্যই তা আইন সম্পন্নভাবে সংগ্রহ করবেন, অন্যে চুরি করবে বলে কি আমাদেরও তা করতে হবে তাহলে ঐ চোরের সাথে আমাদের কি তফাৎ রইল।

(ধইন্যা) মন্তব্য ও নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।

অভিমন্যু
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনি যে কোনভাবেই গান শুনতে পারেন তা সিডি প্লেয়ার বা মোবাইল হোক কিন্তু আপনি অবশ্যই তা আইন সম্পন্নভাবে সংগ্রহ করবেন

মোবাইলে গান শোনার সহজ উপায় হলো, এমপি থ্রি। আর এমপি থ্রি গান সংগ্রহ করার কোন আইন সম্পন্ন উপায় জানা নেই আমার। এটা আইন সম্পন্নভাবে বেচা বিক্রিও হয় না কোথাও। সুতরাং এখানে আইন সম্পন্ন কোন পথ খুঁজে পাই না আমি।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি সিডি কিনে তা এম পি থ্রি তে কনভার্ট করুন অথবা অনলাইনে এম পি থ্রি কিনুন। এরচেয়ে ভাল আইনসম্মত উপায় ভাই আমার জানা নাই।

অভিমন্যু
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।