অরগ্যানিক ইলেক্ট্রনিক্সঃ ভবিষ্যতের পরশ পাথর (পর্ব-৩)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০১/০৬/২০১৪ - ১:৩৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১ম পর্বের গল্পটা শেষ হয়েছিল সিলিকনের বিকল্প কি আসলেই সম্ভব-সেই প্রশ্ন রেখে

গল্পের ২য় পর্বে ছিল সেই বিকল্পটা খুঁজে পাওয়ার প্রথম ধাপ, মানে কিনা, বস্তুর পরিবাহিতা কিভাবে হয় সেটা বোঝার চেষ্টা

আমরা জেনেছিলাম, কোন বস্তু বৈদ্যুতিকভাবে পরিবাহি, উপ-পরিবাহি বা কুপরিবাহি হতে পারে। পরিবাহি বস্তুগুলোর দুমাথায় ভোল্টেজ পার্থক্য তৈরী করে দিলেই ইলেকট্রনগুলো প্রবাহিত হতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ ভোল্টেজ পার্থক্য বজায় রাখা হয় ততক্ষণ এই প্রবাহ চলে। আর কুপরিবাহি বস্তুগুলো থেকে এমনি করে কোন ধরনের পরিবাহিতা পাওয়া যায় না। উপ-পরিবাহিগুলো থেকে কিছু পরিবাহিতা পাওয়া যায় ঠিকই, তবে এর চেয়ে পরিবাহি বস্তুগুলো অনেক বেশি কাজের। কিন্তু পরিবাহিতা নিয়ন্ত্রণ করার প্রশ্ন যখন আসে তখন এই পরিবাহি বস্তুগুলো তেমন কোন কাজে আসে না। কেন? কেননা, পরিবাহিতা তাদের সহজাত আর তাই সেই পরিবাহিতা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আমরা জেনেছিলাম, ডোপিং নামে এক ধরনের পদ্ধতি, যেটা আসলে 'খাঁটি বস্তুর সাথে ভেজাল মিশ্রণের পদ্ধতি', সেই পদ্ধতিতে উপ-পরিবাহি, যেমন সিলিকনের পরিবাহিতা চমৎকার ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় আর উপ-পরিবাহির পরিবাহিতাও বাড়ানো যায় পরিবাহি বস্তুগুলোর মত।

তো কেন এই বিভিন্ন বস্তুর পরিবাহিতা বিভিন্ন রকম? সেটা বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম আমরা এইভাবেঃ যেকোন পরমানুর ইলেকট্রনগুলো প্রোটনকে (আর নিউট্রনকে) কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে, যেখানে ইলেকট্রন আর প্রোটন সংখ্যা সমান থাকে। সর্ব প্রথম পরমানু হচ্ছে হাইড্রোজেন, যেটা পর্যায় সারণিতে স্বভাবতই প্রথমস্থান দখলকারী, সেটা সবচেয়ে সহজ ব্যবস্থা; ১ জোড়া ইলেকট্রন-প্রোটন ব্যবস্থা, মানে কিনা, ১টি প্রোটনকে কেন্দ্র করে ১টি ইলেকট্রনের ঘূর্ণন। এর পরবর্তী পরমানুর অর্থাৎ পর্যায় সারণির দ্বিতীয়স্থান দখলকারী পরমানুর আছে ২ জোড়া ইলেকট্রন-প্রোটন। এভাবে, ৩য় পরমানুর আছে ৩ জোড়া ইলেকট্রন-প্রোটন, ৪র্থ পরমানুর আছে ৪ জোড়া ইত্যাদি। এই ইলেকট্রনগুলো কোয়ান্টাম বিদ্যার শর্ত অনুযায়ী প্রোটনকে কেন্দ্র করে 'নির্দিষ্ট' দূরত্ব বজায় রেখে ঘুরতে থাকে। উদারহরণ হিসেবে বলা যায় কার্বন পরমানুর কথা যার ৬টি ইলেকট্রন ৬টি প্রোটনকে কেন্দ্র করে ঘোরে। ১ম ইলেকট্রনটি কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে কাছে থাকে, কেন্দ্রের সাথে তার মিল মহব্বতও বেশি থাকে। আর ৬ নম্বরটি থাকে সবচেয়ে দূরে, কেন্দ্রের সাথে তাই মিল মহব্বত স্বভাবতই কম থাকে। তাই, বাইরে থেকে যে কোন ধরনের ইন্ধন দিয়ে, যেমন ভোল্টেজ পার্থক্য কিংবা রাসায়নিক বিক্রিয়া ইত্যাদি, শেষের ঐ ইলেকট্রনকে সহজেই 'মোটিভেট' করা যায়। মানে কিনা, পরিবাহিতা বা রাসায়নিক বিক্রিয়া ইত্যাদি যেকোন ধরনের ইলেকট্রনিক কর্মকান্ডের জন্য দায়ী ঐ শেষের ইলেকট্রন চাঁদু! (ক্ষেত্রবিশেষে, শেষের দিককার একাধিক ইলেকট্রন)। তাহলে, ইলেকট্রনের পরিবাহিতার জন্য ঐ শেষের ইলেকট্রনটি ভোল্টেজ পার্থক্য পেলেই পরিবাহি হতে পারে।

তারমানে, যেকোন বস্তুর শেষের ইলেকট্রন উপযুক্ত ভোল্টেজ পার্থক্য পেলেই প্রবাহিত হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় না! পরিবাহি বস্তুর এমনটা হয়, কুপরিবাহি বস্তুর হয় না। কেন হয় না? এর কারণ হিসেবে আমরা জেনেছিলাম, প্রবাহিত হতে হলে শেষের ঐ ইলেকট্রনটিকে একটি শর্ত মানতে হয়। শেষের ইলেকট্রনটি যেখানে থাকে, যেটার নাম দিয়েছিলাম শুন্যপথ/জড়ো-হওয়ার-পথ/ভ্যালেন্স ব্যান্ড, সেখান থেকে প্রবাহিত হতে পারে না। যেই রাস্তা ধরে ইলেকট্রনটি প্রবাহিত হয়, যেটাকে আমরা বলছিলাম প্রবাহপথ/ফ্লাইওভার/কন্ডাকশন ব্যান্ড, সেই রাস্তায় ইলেকট্রনটিকে আগে উঠতে হয়, তারপর প্রবাহের পালা। আর ঐ রাস্তায়/ফ্লাইওভারে উঠতে দরকার শক্তি। যে বস্তগুলোর শেষের ইলেকট্রনটির জন্য এই ফ্লাইওভারে ওঠার শক্তি একদমই লাগে না বললেই চলে, সেগুলোই পরিবাহি। আর যেগুলোর ফ্লাইওভার এত উপরে যে ইলেকট্রনটি উঠতেই পারে না, আর তাই প্রবাহিতও হতে পারে না, সেগুলোই কুপরিবাহি। অন্যদিকে, উপ-পরিবাহি বস্তু যেমন সিলিকনের এই ফ্লাইওভারটি পরিবাহির মত অত নিচুতেও না আবার কুপরিবাহির মত অত উঁচুতেও না, মাঝামাঝি। তাই, 'উপযুক্ত' ব্যবস্থায় কিছু ইলেকট্রনকে ফ্লাইওভারে উঠিয়ে দেয়া যায়, আর কিছুটা পরিবাহিতাও পাওয়া যায়।

এখন যদি এমন হয় যে, কোন একটা বস্তু তৈরী করা যায় যেটাতে এই ফ্লাইওভারটা নিচে নামিয়ে আনা যায় কিংবা অন্যভাবে বললে, শেষের ইলেকট্রনটির জন্য 'এবড়া-কা-ড্যাবড়া' জাদু দিয়ে এমন কোন বিশেষ ব্যবস্থা করা যায় যাতে করে ইলেকট্রনটির ঐ ফ্লাইওভারে উঠার জন্য যে কষ্ট করছে সেটা কমিয়ে ফেলা যায়, তাহলে ঐ বস্তুটি থেকে পরিবাহির মতই প্রবাহ পাওয়া যাওয়ার কথা! কষ্টটা কতটুকু কমিয়ে ফেলতে হবে সেই প্রশ্নে আমরা জেনেছিলাম, যেহেতু সিলিকনের জন্যে ফ্লাইওভারে উঠার এই শক্তির মাত্রা ১.৫ ইলেকট্রনভোল্টের মত, তাই সিলিকনের বিকল্প বস্তুটারও ফ্লাইওভারের শক্তিমাত্রা এইরকম ১.৫ ইলেকট্রনভোল্ট বা এর কাছাকাছি হতে হবে; মানে কিনা, ঐ প্রবাহপথ আর শুন্যপথের শক্তিপার্থক্য হবে ১.৫ ইলেকট্রনভোল্ট বা এর কাছাকাছি। এর চেয়ে কম মাত্রার ফ্লাইওভার তৈরী করা অসম্ভবই বলা চলে। মোটা দাগে বললে বলা যায়, নতুন কোন বস্তু তৈরী করলে কুপরিবাহিতা 'সহজেই' পাওয়া যায়; পরিবাহি করতে গেলেই ঝামেলার শুরু!

এখন, কি সেই বিকল্প বস্তু? সেই প্রশ্নের উত্তরে আমরা জেনেছিলাম, খাঁটি যতগুলো বস্তু আছে সেগুলো কোন বিকল্প নয়, সেগুলোর পরিবাহিতা আমরা জানি। তাহলে, আমাদের এই বিকল্প বস্তু অবশ্যই হতে হবে খাঁটি বস্তুগুলোর মিশ্রণ কিংবা একাধিক মিশ্রণ দিয়ে তৈরী নতুন কোন মিশ্রণ। যখন এই মিশ্রণের কথা আসে, আমরা জেনেছিলাম, বস্তুগুলো পাশাপাশি রাখলে তাদের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া হতে পারে, তারা কোনটা কঠিন-কোনটা বায়বীয় হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি; এর পরও যদি ২টা বস্তু পাশাপাশি রাখা যায় তাহলেও ঐ ২টা বস্তুর ফ্লাইওভার একইরকম শক্তির হবে, সেই নিশ্চয়তা নেই। তাহলে আমরা আমাদের প্রাণভোমরাটা কি করে তৈরী করবো? কি জাদুটোনা করবো ঐ বস্তুটা তৈরী করতে? -২য় পর্ব সেই প্রশ্ন রেখে শেষ করেছিলাম। আসুন তাহলে, এরপর থেকে শুরু করা যাক!

আমরা এতক্ষণ বলছিলাম অনু-পরমানু পর্যায়ে ইলেকট্রনের আচরণ কেমন হয়, কি বৈশিষ্ট্যের কারণে তারা ভিন্ন ভিন্ন পরিবাহিতা প্রদর্শন করে-সেসব কথা। এখানে একটা ব্যাপার একটু বলে রাখি। ধরুন, এতক্ষণ যে বলছিলাম সিলিকনের শেষ ইলেকট্রনটির প্রবাহিত হওয়ার গল্প-সেটা কিন্তু একক একটা সিলিকনের। কিন্তু আমরা কি আসলে ঐ একক ইলেকট্রন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারি? তা আসলে সম্ভব না। অনু-পরমানু পর্যায়টা এত-এত ছোট যে আমরা ঐ পর্যায়ে পৌঁছে কিছু করতে পারি না। একটা অতি সামান্য বালুর কনাতে যে কটা 'একক বালুর কণা' থাকে তা বিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। তো আমরা যখন বলছি, '১০টা সিলিকন পাশাপাশি', সেটা আলোচনার সুবিধার্থে ঠিক আছে কিন্তু সত্যি সত্যি ১০টা সিলিকন হাত দিয়ে পাশাপাশি বসিয়ে দেয়া যায় না। এই ১০টা সিলিকনের শিকল তৈরী করার উপায় হচ্ছে রাসায়নিক বিক্রিয়া। বস্তুর শিকল তৈরীর কথাই বলুন বা একাধিক বস্তুর মিশ্রণ তৈরীই বলুন কিংবা একাধিক মিশ্রণের মাধ্যমে নতুন কোন মিশ্রণের কথাই বলুন, সবই বিক্রিয়ার মাধ্যমে হয়। আমরা যেটা করি সেটা হচ্ছে এই বিক্রিয়াগুলোকে 'কন্ট্রোল' করা। পরীক্ষাগারে এই চমৎকার 'কন্ট্রোল্ড' বিক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের কাঙ্খিত বস্তুটি হাতে পাই।

তাহলে বুঝতেই পারছেন, আমাদের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমেই এমন একটা বস্তু তৈরী করতে হবে যার ঐ প্রবাহপথ হবে শুন্যপথের কাছাকাছি। তো এমন শর্তে কোন বস্তু তৈরী করা আসলেই খুব কঠিন। একটা উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, গ্যালিয়াম আর আর্সেনিকের মিশ্রণ, গ্যালিয়াম আর্সেনাইডের কথা। এর প্রবাহপথ-শুন্যপথের শক্তির পার্থক্য ১.৪২ ইলেকট্রনভোল্টের মত। এটা সিলিকনের বিকল্প হিসেবে বেশ ভালভাবেই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা আসলে সিলিকনের সাথে পাল্লা দিয়ে পেরে ওঠে না। এটি তৈরী করার খরচ সিলিকনের চেয়ে বেশি-সেটাই একমাত্র কারণ নয়। সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, সিলিকন খুব সহজে অক্সিজেনের সাথে সিলিকন অক্সাইড তৈরী করে যেটা এই গ্যালিয়াম আর্সেনাইড পারে না। সিলিকন অক্সাইড দিয়ে কি হবে-এই প্রশ্ন আপনি করতেই পারেন। মনে আছে ১ম পর্বে বলেছিলাম, সিলিকন অক্সাইড একটি কুপরিবাহি? আর ঐ ০/১ এর নকশা? ঐ যে, ইলেকট্রন এই পথে গেলে হবে ১ আর না গেলে হবে ০-সেই নকশার কথা? ঐ নকশা তৈরীতে সিলিকন অক্সাইডের কুপরিবাহিতা কাজে লাগানো হয়, ইলেকট্রন যাতে উল্টাপাল্টা যেতে না পারে, সেজন্য আর কি! আর অক্সিজেন তো বাতাসেই আছে; তাহলে কোন ইলেকট্রনিক 'সার্কিট বোর্ডের' যেখানটাতে কুপরিবাহিতা দরকার সেখানকার সিলিকন অংশটা 'বাতাসে মেলে ধরলে' আপনা আপনি সিলিকন অক্সাইড তৈরী হয়ে ঐ অংশটা কুপরিবাহি হয়ে যায় আর যেখানটাতে পরিবাহিতা দরকার, সেখানটা 'বাতাস' থেকে ঢেকে রাখলেই চলে! সিলিকন যে দুনিয়াটা পাল্টে দিল, সে কি এমনি এমনি! পাগলা মানুষগুলোর কাছে তাইতো সিলিকন এত আরাধ্য! আপনার হাতের মোবাইলটা দিয়ে এত এত সুবিধা পাচ্ছেন, একটিবার ও কি ভেবে দেখেছেন কি জাদুবলে এমনটা হলো? একবার ও কি মনে করেছেন এর পিছনের সেইসব পাগলা মানুষগুলোর কথা?

যাই হোক, এতক্ষণে বোঝা গেল, রাসায়নিক বিক্রিয়া করে তাহলে সিলিকনের বিকল্প তৈরী করা সম্ভব। তো আসুন, মিশ্রণ তৈরীতে লেগে পরি! বিভিন্ন খাঁটি বস্তুগুলোর মধ্যে বিক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন নতুন সব মিশ্রণ তৈরী করা হচ্ছে প্রতিনিয়তই, বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে। এখন পর্যন্ত তৈরী বস্তুর সংখ্যা ১০ মিলিয়নেরও বেশি। কিন্তু আপনি যদি কেবল একটি পরমানু বাদ দেন, তাহলে এই সংখ্যা নেমে আসবে ১ মিলিয়নে। তাহলে বাকি ৯ মিলিয়ন বস্তু তৈরী হচ্ছে/হয়েছে কেবলমাত্র একটি পরমানুর কল্যাণে। বিষ্ময় পরমানুটির নাম কার্বন। সাধারনভাবে বলছি, কার্বনের সাথে বিক্রিয়াগুলোকেই বলে জৈব (অরগ্যানিক) আর বাকিগুলো অজৈব (ইনঅরগ্যানিক)। গল্পের নামেই বুঝতে পেরেছেন, আমাদের ঐ পরশপাথরটি অরগ্যানিক; মানে কিনা, সেটা এই কার্বন দিয়েই তৈরী। সিলিকন সেবিচারে ইনঅরগ্যানিক। তো পরশপারথ খানা কেন অরগ্যানিক হতে হবে? সিলিকনের বিকল্প হিসেবে ইনঅরগ্যানিক ই তো হওয়ার কথা! এর উত্তরটা সহজ। প্রথমত, ঐ ১ মিলিয়ন ইনঅরগ্যানিক বস্তুর মধ্য হতে হাত্গোনা দু-একটি বস্তু তৈরী করা সম্ভব হয়েছে যার ঐ প্রবাহপথ-শুন্যপথের শক্তির পার্থক্য সিলিকনের মত। দ্বিতীয়ত, অরগ্যানিক বস্তু অনেক অনেক বেশি, ইচ্ছে করলেই নতুন কোন কিছু তৈরী করে ফেলা সম্ভব খুব সহজেই। তবে, যে কারণটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে, কার্বন নিয়ে অনেক ভাল ভাবে 'কন্ট্রোল' বিক্রিয়া করা যায়, প্রয়োজনমত বিক্রিয়া 'টিউন' করার সুযোগ অনেক বেশি থাকে আর তাতে করে ঐ কাংখিত শক্তিমাত্রা সম্পন্ন বস্তুটি খুঁজে পেতে অনেক সুবিধা হয় যেটা ঐ ইনঅরগ্যানিক বিক্রিয়া থেকে পাওয়া যায় না বললেই চলে। এছাড়াও অরগ্যানিক হলে আরও অনেক সুবিধা পাওয়া যায়, সেগুলো আমরা গল্পের সাথে সাথে জানতে পারবো।

তো, এখন তাহলে এই কার্বন থেকে আমাদের প্রাণভোমরাটা তৈরী করে ফেললেই তো ল্যাঠা চুকে যায়, কি বলেন? কিন্তু বললেই তো হচ্ছে না! অনেকগুলো 'কিন্তু' আছে। এই যেমন ধরুন, কার্বন তো একটি অপরিবাহি, সেখানে ইলেকট্রন প্রবাহ আসবে কি করে? আবার ধরুন, ইলেকট্রনের প্রবাহের কথা। এটা সিলিকন বা লোহার মধ্যদিয়ে চলার পথে কোন বাঁধাই পায় না। এমন বাধাঁহীন চলাচল হতে হবে তো! কার্বনের মধ্যদিয়ে কতটা বাঁধাহীন চলাচল সম্ভব? আবার ধরুন, ভোল্টেজ পার্থক্য দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু ইলেকট্রন প্রবাহিত হওয়ার বদলে কোন 'বিশ্রাম' নেয়ার জায়গা পেয়ে টুপ করে বসে পরলো, তেমন হলেও তো চলবে না, না? তাহলে বুঝতেই পারছেন, আসলেই অনেকগুলো 'কিন্তু' আছে। এসব অনেক 'কিন্তু'গুলোকে মাথায় রেখেই বিক্রিয়া 'টিউন' করতে হবে বস্তুটা বানাতে হলে। তো এসব নিয়ে আলোচনাটা সামনের পর্বের জন্যে তোলা থাক। আর ততদিন অপেক্ষা করিয়ে রাখবো বরাবরের মতই, সেজন্যে আশাকরি ক্ষমা করবেন।

যেতে যেতে আরেকটি কথা বলে যাই, যেমনটি বলি আর কি! এটা আমার কথা, এই গল্পটা লেখার পেছনের কথা। আমি আইন্সটাইনের মতই রিচার্ড ফাইনমান বা কার্ল স্যাগানের ও ভক্ত। এর কারণটা হচ্ছে, এঁরা বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে অসম্ভব ভূমিকা রেখেছেন। স্যাগানের কসমস সিরিজের নামতো আপনি শুনেছেনই। ১৩ পর্বের ৮০ দশকের এই টিভি সিরিজটি না দেখে থাকলে বিনীত অনুরোধ রইলো দেখে ফেলার জন্য। ইউটিউবে দেখুন, এখানে পাবেন। বিজ্ঞানে কিছুমাত্র আগ্রহ থাকলে এটা দেখে পস্তাবেন না, সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায়, স্যাগানেরই শিষ্য, বর্তমানে American Museum of Natural History, New York এর Hayden Planetarium এর প্রধান জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী নীল ডি-গ্রেস টাইসন নতুন করে কসমস তৈরী করেছেন Cosmos: A Spacetime Odyssey নামে। এ বছরই মার্চে শুরু হওয়া ১৩ পর্বের এই সিরিজের ১২ তম পর্ব হতে যাচ্ছে এ সপ্তাহে, ফক্স আর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক দেখাচ্ছে। ট্রেলার দেখুন এখানে। এটাও দেখে ফেলার অনুরোধ রইলো, 'বিফলে মূল্য ফেরত' নিশ্চয়তা দিচ্ছি। যাই হোক, আমি এই নীল টাইসনের ভক্ত, তেমনই ভক্ত রিচার্ড ডকিন্সের। এই তালিকা অনেক দীর্ঘ হবে, আর না বাড়াই। তো এগুলো বলার কারণ হচ্ছে এই যে, আমার এই লেখার উদ্দেশ্যও বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ। কি হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে সে সম্বন্ধে কোন 'এ-প্রিওরি' ধারণাও নেই যাদের, তারাও যেন জানতে-বুঝতে পারে কি দারুন সব গবেষণা হচ্ছে, তারা যেন আরও বেশি বেশি আগ্রহ পায়, তারা/তাদের কাছের মানুষজন যেন আরও বেশি অনুপ্রাণিত হয়-সেটাই এই লেখার পেছনের অনুপ্রেরণা। হাতের মোবাইলটা কোন আলাদ্বীনের যাদুর দৈত্য দিয়ে যায় নি! এটা ব্যবহার করে এত এত সুবিধা পাচ্ছি সবাই-তার জন্য যেন বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাটা প্রকাশ পায় আমাদের-এটা লেখক হিসেবে পাঠকের কাছ থেকে আমার ব্যক্তিগত চাওয়া। আর এই উদ্দেশ্যগুলোকে যতটা সম্ভব সফল করা লেখক হিসেবে আমার দায়িত্ব। সেজন্যেই বিজ্ঞানের 'জটিল' সব নাম-ধাম-টার্ম-স্টেট-মডেল সবকিছু বাদ দিয়ে যতটা পারছি সহজভাবে একটা 'ওভারওল' ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করছি এবং বুঝতে পারছি অতি সরলীকরণও হয়ে যাচ্ছে কখনও কখনও। কিন্তু ঐদিকটার চেয়ে বরং পাঠকের মধ্যে আগ্রহ তৈরী করতে পারছি কিনা-লেখক হিসেবে সেদিকটাতেই গুরুত্ব দিয়ে লিখছি। বলা ভাল, লেখার চেষ্টা করছি। সেদিক বিবেচনায় লেখক হিসেবে আমার চেষ্টা কতটুকু সার্থক হচ্ছে, সেটা বিচারের ভার অবশ্যই পাঠক হিসেবে আপনার উপরেই রইলো।

ভাল থাকুন। ধন্যবাদ।
-স্বপ্নচারীর স্বপ্ন


মন্তব্য

মন মাঝি এর ছবি

হা হা হা - এই প্রথম শুধু চুম্বক অংশ না আস্ত পোস্টই নীড়পাতাতে প্রকাশিত হতে দেখলাম! এক কাজ করা যেতে পারে - এখন থেকে পুরো পোস্ট নীড়পাতাতে দিয়ে ভিতরে চুম্বক দেয়া যেতে পারে। কারও চুম্বক দেখার ইচ্ছা হলে মূল পোস্টটা পড়ার পর ভিতরে ঢুকে চুম্বকটাও দেখে নিতে পারবেন। চাল্লু খাইছে

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

হায় হায়! তাই তো! কেম্নে কি? চিন্তিত
ঠিক বুঝতাম পারতাছি না, দুষটা কি আমার? তাহলে তো অনেক লইজ্জা পাব! ইয়ে, মানে...
'কার্সার পর্যন্ত সারসংক্ষেপ করুন' অপশনটির কি চুম্বক অংশে যতটুকু থাকবে তার সাথে সম্পর্কিত? মন খারাপ

বি দ্র/ মডুভাইরা হেল্পাবে না এটা ঠিক করতে?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পুরা পোস্ট দেখি প্রথম পাতায়!

মেঘলা মানুষ এর ছবি

সাথে আছি। চালিয়ে যান। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

এক লহমা এর ছবি

যেটুকু বুঝলাম তা এই যে, খুবই সম্ভাবনাময় এই সিলিকন-বিকল্প, তবে সামনের পথ ও বেশ লম্বা।
পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক তাই, সম্ভবনাময় হাসি
তবে যেতে হবে বহুদূর। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

এই পর্ব বেশ সহজ পাঠ্য হয়েছে। দেখি এক ফাঁকে আপনার দেয়া লিঙ্ক গুলো দেখে আসব। আজকে টাইম কম দেঁতো হাসি

সোহেল লেহস

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আমার এই লেখার উদ্দেশ্যও বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ। - ভাই এই একটা কারনেই আপনাকে সালাম।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি
ধন্যবাদ। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমাদের পরিবার-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা-সমাজ-দেশ-প্রেক্ষাপট এমনই যে বেশিরভাগ সময়ই এগুলো আপনার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে 'নেগেটিভ ফোর্স' হিসেবে কাজ করে। আপনার চেষ্টা-শক্তি-মনযোগ-মেধা ইত্যাদির অর্ধেকের বেশিই খরচ করতে হয় ঐ নেগেটিভ ফোর্সটাকে 'জিরো' করতে। বাকি অর্ধেক দিয়ে আসলে সামনে আগানো! বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে তো কথাই নেই! মনে হয়, বিজ্ঞান বিষয়ে ১০০ ভাগ ক্ষেত্রেই আমার এই ব্যক্তিগত মতামত প্রযোজ্য হবে। আমি মনে করি, একজন ব্যক্তিমানুষ যদি একটা বিষয় জানে, সে অন্তত তার কাছের কেউ যখন সে বিষয়টাকে পেশা/শিক্ষা হিসেবে বেছে নিতে চাইবে, তাকে অনুৎসাহিত করবে না, ঐ নেগেটিভ ফোর্সটা দেবে না। বরং অনুপ্রাণিত করবে; টেনে না ধরে বরং সামনের দিকেই ধাক্কা দেবে। আর তার জন্যেই জনপ্রিয়করণটা খুব-খুব দরকার। এক্ষেত্রে আমার ভূমিকাটা কোথায়-সেই উত্তর খুঁজতে যেয়ে মনে হলো ব্লগ দিয়েই শুরু করা যায়। তাই শুরু করা।
সাথে থাকছেন দেখে ভাল লাগছে হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চালিয়ে যান চলুক

কিছু শব্দ, যেমন কন্ট্রোল= নিয়ন্ত্রণ, ওভারঅল= সামগ্রিক করে দেয়া যায় কি?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লিখেছেন "স্বপ্নচারীর স্বপ্ন" - আমি পুরোপুরি বাণিজ্যিক মানুষ (মানে কমার্স লাইন এ পড়া আর কি) - কিন্তু বিজ্ঞান পরতাম ছোটবেলায় (১২ ক্লাস অব্দি)। এখনো মোটা দাগে কিসু কিসু বুঝি - যখন আপনার মত বিজ্ঞান লেখকরা অনেক সহজ করে লিখেন। চালিয়ে যান দাদা - নতুন প্রজন্মকে আপনারাই পারবেন আরো বিগ্জ্ঞান্মনস্ক করতে। .

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।