১।
'রোগী আসিবার পূর্বেই ডাক্তার ক্লিনিকে পৌঁছাইল' 'র একটা রেকর্ড করেছি আজ। তাও আবার একটানা প্রায় দুই ঘণ্টা ড্রাইভ করে। রোগীর জন্য অপেক্ষা করা বেশ বিরক্তিকর কাজ, অন্যপক্ষের অপেক্ষাটাও যে খুব সুখকর নয় সেটাও জানা আছে। সময়ের মধ্যেই ক্লিনিক শেষও হোয়ে যাওয়ায়, জীনের আছর লাগল। প্রিয় একটা দোকান আছে এই ছোট্ট শহরে, সেটাতে একটু ঢুঁ মারার লোভ সামলাতে পারলাম না।
দোকানে ঢুকতেই প্রসাধনীর পশরা সাজিয়ে বসা সেলস গার্লের নজরে পড়ে গেলাম। অপূর্ব প্রসাধনে উর্বশী মেয়েটি এগিয়ে এসে বলল, ওদের 'টু মিনিটস টাচ-আপ' বলে একটা প্রমোশন চলছে, আমার মেকাপ টাচ-আপ করে দেবে কিনা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, টাচ-আপের পর কি আমাকে তোমার মত লাগবে দেখতে? উর্বশী একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও সামলে নিয়ে বলল, তোমাকে তোমার মতোই লাগবে, কিন্তু আরো ঝকঝকে। আমি আমার মতোই আছি আজ, আরেকদিন নাহয় সাজিয়ে তোমার মতো ঝকমকে বানিয়ে দিও, বলে ধন্যবাদ দিয়ে চলে এলাম।
বলা কি যায়, কবে আবার উর্বশী হইবার সাধ জাগ্রত হয়!
২।
প্রসাধনী ফেলে একটু এগুতেই চোখ কেড়ে নিলো চকোলেটের সমাহার। এমনিতেই লাঞ্চ টাইম, পেটে ছুঁচোর নর্তন-কুর্দন। তাতে মনোহারী চকোলেট, তাও আবার 'গডাইভা'র, মাথা খারাপ হবার যোগার। আজরাইলের আছরে এমন-ই হয়। কাছে গিয়ে দেখি, চকোলেটদের-ও সাজগোজ করানো হয়েছে বেশ। যদিও 'গডাইভা' নামটাই যথেষ্ট চকোলেট বিক্রয় এর জন্য তবু এই প্যাকেট গুলিও পুরোপুরি শিল্প কর্ম। বুড়ো ঠাকুর শুধু শুধু-ই বলেছিলেন, "রূপে তোমায় ভোলাব না, ভালোবাসায় ভোলাব, হাত দিয়ে দ্বার খুলব না গো, গান দিয়ে দ্বার খোলাব"।
শুধু গুনে বা ভালোবাসায় ভোলানো কি দুরূহ কাজ তাহা 'গডাইভা'র সাজসজ্জার বহর দেখিয়া আবারও বুঝিলাম।
বিকেলে ডায়ালাইসিস জায়ান্ট এক কোম্পানির কিছু হোমরাচোমরা সাথে একটা মিটিং আছে। উর্বশী'র কাছে টাচ-আপ এর জন্য ফিরে যাব কিনা ভাবছিলাম...!
৩।
দোকান থেকে প্রায় বেরিয়ে এসেছি, ঠিক তক্ষুনি বেজে উঠল আমার আজকের গান। অনেক দিন পরে হারিয়ে যাওয়া পুরনো কোন বন্ধুকে ফিরে পেলাম যেন। এই গানটির সাথে অনন্য কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সে কথা আরেকদিন বিস্তারিত বলব, আজ শুধু এটুকু বলি, বিদেশ-বিভূঁইয়ে একাকী কাটানো অমানবিক মেডিসিন রেসিডেন্সির প্রথম ছয় মাসে এই গানটি অসংখ্য নিঃসঙ্গ মুহূর্তকে অর্থময় করে তুলেছিল। সুর এবং একটা লাইন ছাড়া সব ভুলে যাওয়ায় অনেক চেষ্টা করেও গানটি খুঁজে পাইনি এতো বছর।
দৌড়ে ফিরে গিয়ে উর্বশীকে জিগ্যেস করতেই সে বলে দিল, গানটি 'কাউন্টিং ক্রোজ' এর 'বিগ ইয়েলো ট্যাক্সি'। এবার তাকে অন্তর থেকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে এলাম।
আমার আজটি কাটালাম 'বিগ ইয়েলো ট্যাক্সি'তে চড়ে'। মিটিং শেষ করে ঘরে ফেরার পথে শুনছি..., 'দে পেভড প্যারাডাইস এ্যান্ড পুট আপ এ পার্কিং লট"...
"...
লেট লাস্ট নাইট, আই হার্ড দ্য স্ক্রিন ডোরা স্ল্যাম
এ্যান্ড আ বিগ ইয়েলো ট্যাক্সি টুক মাই গার্ল এওয়ে
ডোন্ট ইট অলওয়েজ সিম টু গো
দ্যাট ইউ ডোন্ট নো হোয়াট ইউ গট আনটিল ইটস গন
দে পেভড প্যারাডাইস এ্যান্ড পুট আপ এ পার্কিং লট
ওয়েল, ডোন্ট ইট অলওয়েজ সিম টু গো
দ্যাট ইউ ডোন্ট নো হোয়াট ইউ গট আনটিল ইটস গন
..."
রীতু
মন্তব্য
হা হা...কি কো-ইন্সিডেন্ট! আমরা একইদিনে যার যার 'একদিন' লিখে দুই ঘন্টার ব্যবধানে একই সাথে পোস্ট করে ফেললাম?
ভাল লেগেছে আপনার লেখা
-অপ্রকৃতিস্থ
------------------------------------
অপ্রকৃতস্থ আপনার পোষ্ট টা কই? দেখছি না যে, ধন্যবাদ।
আমার পোস্ট টা বেশ পড়ে ছাপা হয়েছিলো আপনারটার! অনীলের একদিন এখানে
ভালো থাকবেন।
-অপকৃতিস্থ
------------------------------------
আগে ছিলো যা-ই, এখন শুধু ছাই-ই!
পড়ে এলাম।
রীতু
ইন জেনারেল রূপেই দুয়ার খোলে আসলে, ভালবাসার মতো কঠিন সত্যের ভারে ভোলার মতো ভবে আছে কয়জনা?
আপনার লেখার হাত ঝরঝরে। আশা করি সচলে নিয়মিত হবেন।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
রূপে দুয়ার খুললেও ভালোবাসা বা গুন না থাকলে সে দুয়ার বন্ধ হতেও বেশি সময় লাগে না। তবে আপানার সাথে একমত কঠিন সত্যরে ভালোবাসার মতো লোকের সংখ্যা সত্যি নগন্য সংখ্যক।
চেষ্টা করছি, দেখা যাক। আপনারা পড়লে নিয়মিত লিখবো নিশ্চয়। অনেক ধন্যবাদ ।
এ বার ও ভাল লাগল। তবে আগের বারেরটা আরো ভাল লেগেছিল। পরের বারের অপেক্ষায় থাকলাম।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নিশ্চয়, সরব উপস্থিতির জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা জানবেন।
রীতু
ইমরান ওয়াহিদ,
ধন্যবাদ। চেনাজানা কাউকে দেখে অনেক ভালো লাগলো। আপনি বকেয়া একটা ধন্যবাদ পাওনা, সেটাও দিলাম পরবর্তী লেখা থেকে চেষ্টা করবো। ভালো থাকুন, শুভেচ্ছা।
রীতু
রীতু,
সচলায়তনে স্বাগতম। এই বেশ ভাল হয়েছে। আমু এখন প্রায় ডাস্টবিন। আপনার লেখার পড়ে তার সমাদর করার মত তেমন আর কেউ সেখানে অবশিষ্ট নেই। এখন অন্তত আগের মত আবার নিয়মিত লিখবেন আশা করি।
ক্যাটেগরি সেকশনে আপনার নামটা যোগ করে দিলে ভাল হয়। পরে যখন আপনি হাচল হয়ে যাবেন, তখন সহজেই সেগুলো বের করে আপনার একাউন্টে যোগ করে দিতে পারবেন। নয়তো অনেক খুঁজতে হবে।
----ইমরান ওয়াহিদ
আপনার পর পর দুইটা লেখারই দেখি একই শিরোনাম! এই লেখা দেখে প্রথমবার মনে হচ্ছিলো, দে-জা-ভুঁ! তবে, দুইটা লেখাতেই একই সুর, যদি ভুল না করে থাকি ধরতে, বিষাদ!
বাংলালিংকের (নাকি গেঁয়োফনের!) একটা এড দেখছিলাম টিভিতে, 'য্যাতে গ্যাছে, যাইতে দ্যান। হ্যাতেরে ফিরায়া আনতে হবে না।' কালো ক্যাবেই যাক, ইয়েলো ক্যাবেই যাক আর দুম করে আরেকজনের কোলে বসে এ্যামিরেটসে করেই যাক। গেছে, সেটাই বাস্তবতা। নিজেকে প্রায়োরিটি দিয়ে চলে যাওয়া কাউকে নিয়ে বিষাদে ডুবে থাকলে দীন-দুইন্যা কিছুই হয় না। আংরেজিতে একটা কথা আছে, জীবন হালায় বহমান। পরের লেখায় তাই হরিষের কীর্তন শুনতে চাইবো পাঠক হিসেবে, বিষাদের নয়।
আর হ, আপনার জন্য একটা গান। মানে ঠিক আপনার জন্য না, আপনার লেখাটার জন্য...
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুসর গোধূলি,
আমি একটা দিনপঞ্জী লিখছি, তাই নাম এক রেখেছি। ইচ্ছে আছে এটা চালিয়ে যাবার, দেখা যাক।
আসলে ইয়েলো ট্যাক্সি করে চলে যাওয়াটা কষ্টের তখনই, যখন অবহেলায় চলে যায় কেউ এবং চলে যাবার পরই শুধু সেটা বোঝা যায়। যিনি গেছেন তাকে ধরে রাখাটািখুব কঠিন কিছু হয়তো ছিলনা, তিনি তার প্রায়োরিটিতে কিন্তু যান নি, সেটাই গান্টী বুঝাতে চেয়েছে!
গানের জন্য ধন্যবাদ, এর পরে হেসে-খেলে-গেয়ে যেতে চেষ্টা করব। আপনার জন্য 'বিগ ইয়েলো ট্যাক্সি'
http://www.youtube.com/watch?v=tvtJPs8IDgU
পুরনো লেখা পড়লাম।
ভালো লেগেছে আমার।
ভালো থাকবেন রীতু।
অনেক শুভকামনা।
------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
নতুন মন্তব্য করুন