উইলো আর বার্চ বনকে পাশে রেখে, পোলিশ ছোট ছোট খামার বাড়ি গুলোকে পেছনে ফেলে আমাদের ট্রেন ছুটে চলেছে লুব্লিনের পানে। "লুব্লিন", পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশর দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এক-রত্তি বিন্দুর মত এক শহর। ইউরোপে এসেছি দু' সপ্তাহের জন্যে, মূলত দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধ আর সেই সময়ে নাৎসিদের তৈরি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প গুলোর প্রতি আমার আগ্রহ আমাকে টেনে নিয়ে এসেছে সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশ এই পোল্যান্ডে। লুব্লিনে যাবার ক’দিন আগেই আমি গিয়েছিলাম কুখ্যাত নাৎসি ক্যাম্প আউসভিত্জে। কিন্তু আউসভিত্জে যাবার পর আমার মনে হয়েছে আমি এমন একটি ক্যাম্প দেখতে চাই অনেকটা আমার নিজের মত করে। গাইডের পায়ের পেছনে পা ফেলে, হাজার হাজার পর্যটকের মাঝে হারিয়ে গিয়ে নয়। ইন্টারনেট ঘেঁটে জানতে পারলাম লুব্লিনের মায়্দানেক ক্যাম্পটি পোল্যান্ডের ছ’টি নাৎসি ক্যাম্পের মধ্যে একমাত্র ক্যাম্প যেখানে পলায়নপর জার্মান বাহিনী যুদ্ধের শেষ সময়ের ডামাডোলে সময় পায়নি ক্যাম্পটি ধংস করে তাদের কুকর্মের ইতিহাস মুছে দেবার, আর এ ক্যাম্পটি ঠিক পর্যটকদের কাছে ততটা সুপরিচিতও নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম ওয়ারশতে যেহেতু আছি আরও দুদিন, এর মাঝেই একদিন সময় করে ঘুরে আসবো লুব্লিনের মায়্দানেক ক্যাম্প।
ওয়ারশ থেকে লুব্লিনের দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার, পোলিশ রেলওয়ের ট্রেনে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টার মত। মে মাসের শেষ সপ্তাহের এক শীতের সকালে চেপে বসলাম পি-কে-পি ইন্টার-সিটি ট্রেনে। গুনে দেখলাম ট্রেনটির কামরা মাত্র পাঁচটি, আর যাত্রীদের অধিকাংশই মনে হল লুব্লিনের বাসিন্দা। পুরো ট্রেনে একমাত্র আমাকেই মনে হলো বিদেশী। হোটেল থেকে জানিয়েছিল সকাল ছটায় আছে লুব্লিন যাবার প্রথম ট্রেন আর তার পরেরটি পাক্কা তিন ঘণ্টা পর সকাল দশটায়, কিন্তু আমার হোটেলটি স্টেশন থেকে বেশ দূরে হওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সকাল দশটার ট্রেনই ধরবো।
ট্রেনের সুপরিসর জানালা দিয়ে বাইরের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে অনেকটা তন্দ্রা মত চলে এসেছিল, হটাৎ চোখে পড়ল সামনের টেবিলে রাখা একটি পোলিশ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের উপর। প্রচ্ছদটি করা হয়েছে কয়েকজন ইহুদি অর্থোডক্স রাব্বির ছবি দিয়ে, যা কৌতূহলী করে তুলল আমাকে। পাশের সহযাত্রী মেয়েটিকে শুধালাম, "তুমি কি আমায় বলতে পর, কি লেখা আছে এতে?"। "নিজেকে প্রশ্ন করে দেখো তুমি ইহুদি বিদ্বেষী কিনা, এই লেখা আছে এখানে" কিছুটা ইতস্তত করে মেয়েটির উত্তর। "কিছুদিন আগে খবরে দেখেছিলাম বেলজিয়ামের এক সিনাগগ আক্রান্ত হয়েছে স্থানীয় কিছু উগ্রপন্থীদের হাতে, পোল্যান্ডেও কি এমন কিছু ঘটেছে সমসাময়িককালে, যা কিনা এই লেখাটির ব্যুৎপত্তি ঘটিয়েছে?"- মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলাম।"না, ঠিক তেমনটি নয়, আসলে এই লেখাটি লেখা হয়েছে পুরো ইউরোপে ইহুদি-বিদ্বেষের একটি একক চিত্র বোঝাবার জন্যে, ঠিক শুধুমাত্র পোল্যান্ডকে উদ্দেশ্য করে এই লেখাটি লেখা হয়নি" মেয়েটির উত্তর। "কিন্তু এই লেখাটির একটি গ্রাফে তো দেখতে পাচ্ছি তোমাদের দেশে শতকরা ৪৫ ভাগ মানুষই ইহুদি-বিদ্বেষী, আমার তো ব্যক্তিগত ধারণা ছিল পোল্যান্ডের নাৎসি ক্যাম্পগুলোতে দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধকালীন সময়ে লক্ষ লক্ষ ইহুদির মৃত্যুবরণ করার কারণে বরং পোলিশরা ইহুদিদের প্রতি বেশ সহানুভূতিশীল, কিন্তু এই পরিসংখ্যান তো আমার সেই ধারণাকে পাল্টে দিল"। মেয়েটি যেন কয়েক মুহূর্ত সময় নিলো নিজের কথাগুলো গুছিয়ে নেবার জন্যে, তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "সত্যি কথা বলতে কি জানো, আমাদের নবীন আর প্রবীণ প্রজন্মের মানুষদের মাঝে কিন্তু চিন্তা-ধারার পার্থক্য তা মোটামুটি বিশাল। আমার প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ভিনদেশী, পর-মত, পর-ধর্মের প্রতি অনেক বেশি সহনশীল আর উদার আমাদের আগের প্রজন্মের চেয়ে। অন্যদিকে আমাদের প্রবীণ প্রজন্মগুলো পর্যন্ত ইহুদিদেরকে বহিরাগত বিদেশী হিসেবেই দেখা হত, আমি একসময় আমার বাবাকেও জিজ্ঞাসা করেছি কেন কিছু পোলিশ দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধের ওই সময়টাতে বরং জার্মানদের গলায় গলা মিলিয়ে ইহুদি নিধনের বিষ-বাষ্প ছড়িয়েছিল। বাবা বলেছেন সেসময়টাতে ইহুদিরা ছিল ধনী, পরিশ্রমী আর কর্মোদ্যমী। অন্যদিকে পোলিশরা ছিল অলস আর কর্মস্প্রিহাবিহীন, আর সেটাই হয়ত ছিল কিছু কিছু পোলিশের ইহুদি বিদ্বেষের প্রধান কারণ সেই সময়টাতে। আর এখনকার সময়ের যে ৪৫ ভাগের কথা তুমি বললে তারা সেই পুরনো প্রজন্মেরই একটা অংশ যারা বরং বিশ্বাস করে পোল্যান্ডে এই ক্যাম্পগুলো স্থাপিত হবার কারণেই বরং পোল্যান্ডে জার্মান বাহিনীর আনা-গোনা গিয়েছিল বেড়ে, অর্থাৎ ইহুদিদেরকেই তারা অনেকাংশে দায়ী করে যুদ্ধকালীন পোল্যান্ড এর দুর্দশার জন্যে"। বেশ খানিকটা হোঁচট খেলাম ওর কথা শুনে, মনে পড়ল হাঙ্গেরি থেকে পোল্যান্ডে আসার পথে ট্রেনে পরিচয় হওয়া পোলিশ মেয়ে অন্তনার কথা। অন্তনা হলোকাস্ট নিয়ে আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটিতে এক বছর পড়াশুনো করে গেছে। কথায় কথায় ও বলছিল, "একজন পোলিশ হয়েও আমি এই ইতিহাসটাই জানতামনা যে কিছু কিছু পোলিশ দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধের ওই সময়টাতে যুক্ত হয়ে পরেছিল ইহুদি নিধনে, বিশেষ করে পোল্যান্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। এই ইতিহাসগুলো আমি কিন্তু জানতে পারি আমেরিকাতে পড়তে যাবার পর, আমার নিজের দেশের ইতিহাসবিদরা কিন্তু সবসময় এই রুঢ় সত্য ইতিহাসটাকে চেপে যায়। ধাবমান জার্মান বাহিনীর নেক নজরে পড়বার আশায় কিংবা যাদের পূর্ব আক্রোশ ছিল ইহুদিদের প্রতি , প্রত্যন্ত এলাকার তেমন অনেকেই সেই সময়টাকে কাজে লাগিয়েছিল নিজেদের বিষ-দাঁত দিয়ে ছোবল দেয়ার কাজে। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জার্মানদের কুকীর্তির বিশাল ইতিহাসের পেছনে এই ক্ষুদ্র ইতিহাসগুলো অনেকটাই ধামা-চাপা পরে যায়। কিন্তু ইতিহাস তো ইতিহাসই, তা ছোটই হোক আর বড়ই হোক, তাকে কি ধামা-চাপা দেয়া যায়, না তাকে অস্বীকার করা উচিত? আমার নিজের দেশের অনেক ইতিহাসবিদের এমন আচরণ আমি নিজেই সমর্থন করতে পারিনা, আমার লজ্জা হয়, অনুশোচনা হয়"। আসলে একটা দেশের বা জাতির সাম্প্রদায়িক মন-মানসিকতার মূলোৎপাটন হয়ত ততোটা সহজ নয়, তার জন্যে হয়ত প্রয়োজন কয়েক প্রজন্মের শুদ্ধিকরণ। পাশের সেই সহযাত্রী মেয়েটিকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম ,"আচ্ছা যুদ্ধের আগে যেখানে পোল্যান্ড ছিল ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ ইহুদি-আবাসস্থল, আজ সেই পোল্যান্ডের জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ ইহুদি জনগোষ্ঠী। যুদ্ধের পর জার্মানি তার পাপ মোচনের জন্যে আশির দশকে ইহুদিদের জন্যে বিশেষ ইমিগ্রেশন আইন প্রণয়ন করেছিল, যাতে দেশত্যাগীদের অনেকেই আবার ফিরে আসে পিতৃপুরুষের ভূমিতে, তো পোল্যান্ড কি কখনো কিছু করেছে পোল্যান্ড ছেড়ে যাওয়া ইহুদিদের আবার পুনরায় ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে?" কিছুটা সংশয় নিয়ে ঈষৎ মাথা দুলিয়ে মেয়েটি জবাব দিল, "না, তা মনে হয়না, তবে একটা ব্যাপার কি জানো, এর দায় কিন্তু পুরোটা পোল্যান্ডের নয়, সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণের সেই পুরোটা সময়ে সোভিয়েতরাও কিন্তু ইহুদিদের প্রতি ততটা সমব্যথী ছিলনা, আর সোভিয়েতদের পাশ কাটিয়ে পোল্যান্ডের এককভাবে কিছু করা ছিল চিন্তারও অতীত। তবে আমি আশাহত নই, সময় বদলে যাচ্ছে, সময়কে বদলাতে হবেই। তুমি আজ যেই পোল্যান্ড দেখছ, পনের বছর আগের পোল্যান্ডের সাথে কিন্তু তার অনেক অমিল। হয়তো আর পনের বছর পর আমরা আরও আরও বদলে যাব, বদল হবে নীতির, বদলে যাবে মানুষের পুরনো ঘুণে ধরা মানসিকতা"। আমার সাথে কথা শেষ করে মেয়েটি মন দিল ওর এক রিপোর্ট লেখা শেষ করার কাজে আর আমি ভাবতে লাগলাম ওর বলা কথাগুলো। যে অন্ধকার দিকগুলো আমরা আলোচনা করছিলাম, তার বাইরে অনেক আলোকিত দিক কি একেবারেই নেই? আছে নিশ্চয়ই, পোল্যান্ডেও আছে সহানুভূতিশীল আর মানবতাবাদী অনেক মানুষ, তাদের সক্রিয় সহযোগিতাতেই তো সম্ভব হয়েছিল মায়্দেনাস্ক ক্যাম্পের ৫০০ ইহুদী বন্দীর পলায়ন। আমার এইসব ভাবনার দোলাচলের মধ্যেই ট্রেন এসে পৌছুলো লুব্লিন স্টেশনে।
এক ছোটখাটো, ছিমছাম শহর লুব্লিন। স্টেশনের বাইরে এসেই পেয়ে গেলাম ২৮ নম্বর বাস, যা কিনা সোজা পৌঁছে দেয় মায়্দেনাস্ক ক্যাম্প জাদুঘরে। মায়্দেনাস্ক ক্যাম্পটি পোল্যান্ডের অন্য নাৎসি ক্যাম্পগুলোর চেয়ে একটি কারণে স্বতন্ত্র, আর তা হল একমাত্র এই ক্যাম্পটিই ছিল মূল শহরের উপকণ্ঠে, অন্য সব ক্যাম্পগুলোই বানানো হয়েছিল মূল শহর থেকে বেশ খানিকটা দুরে, লোকচক্ষুর অন্তরালে।
ক্যাম্পটি আকারে আয়তকার। বাস থেকে নেমে ক্যাম্পে ঢোকার মুখেই চোখে পরে বিশাল এক মনুমেন্ট, যা বানানো হয়েছিল ১৯৬১ সালে, এই ক্যাম্পের মুক্তির ২৫’তম বার্ষিকীতে। মনুমেন্টের বিশাল বেদিতে দাঁড়িয়ে পুরো ক্যাম্পটি নজরে আসে এক মুহূর্তেই। মূল বেদী পেরিয়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নামার পরই হাতের ডান দিকে চোখে পরে সারি সারি কাঠের তৈরি ব্যারাক। এই ডান দিকেই একটি সোজা পিচ ঢালা পথ চলে গেছে ক্যাম্পের আদি মূল ফটক অবধি, যে ফটকের সামনে থামান হতো বন্দীদের বহনকারী যানবাহনগুলোকে, যেখানে সম্পন্ন হত প্রাথমিক বন্দী-বাছাই। প্রথম মনুমেন্টের নাক-বরাবর আরেকটি সোজা রাস্তা চলে গেছে ক্যাম্পের শেষ সীমানা অবধি, যেখানে রয়েছে ক্যাম্পের দ্বিতীয় মনুমেন্টে, যেটা বানানো হয়েছিল এই প্রথম মনুমেন্ট এর সাথেই, একই সময়ে। দ্বিতীয় মনুমেন্টে যাবার এই সোজা পিচ ঢালা রাস্তাটি ক্যাম্পের আদি সীমানার বাইরে অবস্থিত, এই পথে হাঁটলে ডান দিকে তাই চোখে পরে প্রায় ৩০ ফুট পর পর পর্যবেক্ষণ চৌকি আর কাঁটা তারের বেড়া। প্রায় প্রতিটি পর্যবেক্ষণ চৌকি আজও প্রায় পুরোপুরি অক্ষত, এতটাই অক্ষত আর জীবন্ত যে মনে হয় এই বুঝি কিছুক্ষণ আগেও সঙ্গিন হাতে এখানে ছিল একদল সৈনিক, হয়তোবা তারা কোথাও গেছে পালা-বদলের সময়টাতে, এখুনি বুঝি আসবে পরের পালার সৈনিকেরা। ক্যাম্পে ঢোকার পর আমি প্রথমে হাঁটতে শুরু করলাম অদ্ভুত নির্জনতায় ভরা এই পথটি ধরেই।
মায়দানেস্ক ক্যাম্পটি কিন্তু প্রথমে যাত্রা শুরু করেছিল শুধুমাত্র রাশান যুদ্ধ-বন্দীদের রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে, সেটা সেই ১৯৪১ এর শরৎকালের কথা। শুরুতে এই ক্যাম্পটির ধারণক্ষমতা ছিল মাত্র ৫০,০০০ বন্দী। কিন্তু পূর্ব ফ্রন্টে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এ ক্যাম্পেও নামে যুদ্ধ-বন্দীদের ঢল। শুরুতে অন্য ক্যাম্প থেকে আনা ইহুদিদেরকে ক্যাম্পের ব্যারাক নির্মাণে লাগানো হলেও পরে রাশান যুদ্ধ-বন্দীদেরকেও এ কাজে লাগানো হয় দ্রুত ক্যাম্প স্থাপনের কাজ শেষ করার নিমিত্তে। ৪২'এর শীতকালের মধ্যেই এই বন্দী শ্রমিকদের মোটামুটি সবাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে সংক্রামক টাইফাস রোগের আক্রমণে।
৪২'এর মধ্যভাগ থেকেই পুরোদমে যাত্রা শুরু করে মায়দানেস্ক। এই ক্যাম্পটিতে ঢোকার পর প্রথমেই আমার যেটি নজরে পরেছে তা হল প্রধান গ্যাস চেম্বার ভবনটি ক্যাম্পের আদি মূল-ফটকের ডান দিকে, আর দাহন-ভবনটি ক্যাম্পের একেবারে শেষ মাথায়। তবে কি মৃতদের অন্য বন্দীদের সামনে দিয়েই নেয়া হত দাহন-ভবনে? আউসভিত্জে আমি দেখেছিলাম গ্যাস চেম্বার আর দাহন চুল্লি একই ভবনে অবস্থিত এবং মূল ক্যাম্পের বেশ খানিকটা বাইরে এক কোণায় ছিল সেই ভবন, সেখানে বরং অন্য বন্দীদের কাছে আড়াল করা হত গ্যাস চেম্বারে তাদের সহ-বন্দীদের মারবার ব্যাপারটা। কিন্তু মায়দানেস্ক-এ জানলাম এবং দেখলাম, অন্য বন্দীদের সামনে কোনও রকম রাখ-ঢাক না রেখেই গ্যাস চেম্বারে মানুষ খুন করে এক ঘোড়ার গাড়ির শকটে করে সেই মৃতদেহগুলোকে নেয়া হতো ক্যাম্পের পেছনের অন্য প্রান্তে অবস্থিত দাহন-ভবনে।
ছবি : দাহন-ভবন
৪১/৪২’র সময়টা ছিল সেই সময়, যে সময়ে দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধ তুঙ্গে, তুমুল লড়াই চলছে রাশান ফ্রন্টগুলোতে, আর আমেরিকাও ততদিনে যোগ দিয়েছে এই মহাযুদ্ধে। বিশাল এই যুদ্ধ-যজ্ঞে জার্মান যুদ্ধ-শিল্পের প্রয়োজন হয়ে পড়লো বিপুল যুদ্ধ-বন্দীর, যাদেরকে দিয়ে বিনে পয়সায় অমানবিক ভাবে খাটানো যাবে উদয়াস্ত। যুদ্ধের এই প্রেক্ষাপটে মায়্দানেক ক্যাম্পটি হয়ে দাঁড়ালো এক বন্দী বাছাই, সনাক্ত-করণ এবং নির্মূলীকরণ ক্যাম্পে। ক্যাম্পে আগত বন্দীদের মাঝ থেকে প্রথমেই শনাক্ত করা হত সক্ষমদের, আর অক্ষম কিংবা শিশুদের ঠিকানা হত সরাসরি দাহন ভবনের চুল্লি। এ ছাড়াও আরেকটি বিশেষ কাজে এই ক্যাম্পটি ব্যবহৃত হত, আর তা হল আশেপাশের অন্যান্য ক্যাম্পের ইহুদি-বন্দীদের কাছ থেকে লুট করা আনা সম্পদ বাছাই এবং সংরক্ষণ। আর এই ব্যাপারটিই এই ক্যাম্পের অনেক এস.এস কম্যান্ডারকে করে তোলে দুর্নীতি-গ্রস্থ, যুদ্ধ শেষ হবার আগেই যাদের দু’জন ফাঁসির দড়িতে ঝোলে নিজ বাহিনীর হাতেই।
নভেম্বর ৩, ১৯৪৩। এর কিছুদিন আগে থেকেই ক্যাম্পের বন্দীদের জানানো হল রাশানরা যুদ্ধ করছে খুব কাছেই, আর তাই প্রতিরোধের জন্য জার্মানদের প্রয়োজন কিছু পরিখা খনন। প্রায় ৩০০ বন্দীকে লাগানো হল দিন-রাতের দু-পালায় পরিখা খননে, যেন যুদ্ধ প্রায় সমাগত। এই বন্দীদের কেউ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি কি ঘটতে চলেছে তাদের ভাগ্যে আর মাত্র ক’দিন পর। অবশেষে এলো হেমন্তের সেই সকাল, খুব ভোরে বন্দীদের ঘুম ভাঙল লাউড-স্পিকারের বিকট শব্দে। বন্দীরা ভাবল নিছকই রোল-কল বুঝি। কিন্তু না, লাউড-স্পিকারে ঘোষণা করা হল ইহুদি বন্দীদের মার্চ করে সেই পরিখাগুলোর সামনে যেতে হবে, তার আগেই অবশ্য জল্লাদ্রুপী ১০০ এস.এস সৈনিককে আনা হয়েছিল আউসভিত্জ থেকে "অতিরিক্ত শক্তির" জন্যে। পথের দু-পাশে নিশ্ছিদ্র বুহ্য রচনা করলো এস.এস সৈনিকরা, আর কলামের পর কলাম ইহুদি বন্দী এগুতে লাগলো সেই পরিখাগুলোর দিকে। ততক্ষণে লাউড-স্পিকারে শুরু হয়ে গেছে নৃত্য-সঙ্গীত, গুলির শব্দকে ধামা চাপা দেবার জন্যে। সকাল থেকে সন্ধ্যা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে শুধু চলল গুলি আর একের পর এক লাশ লুটিয়ে পড়ল সেই পরিখাগুলোতে। ক্যাম্পের পাশের বসতির মানুষদের আর বুঝতে বাকি রইলোনা, কিছু একটা অঘটন আজ ঘটেই চলেছে এই ক্যাম্পে। ১৮,৪০০, হ্যাঁ গুনে গুনে ঠিক ১৮,৪০০ মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয় সেদিন। বিকেলের দিকে আরও ৬০০ ইহুদি বন্দীকে কাজে লাগানো হয় মৃতদেহগুলোতে আগুন ধরবার কাজে, এই ৬০০ জনের ভাগ্যেও দিন শেষে "মৃত্যু"ই লেখা ছিল। ইতিহাসে এমন বিষাদময় করুণ দিন আর আছে কি? থাকলেও খুব বেশি নেই হয়ত, যে দিনে একসাথে এতগুলো নিরাপরাধ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিল। সেদিনের সেই পরিখাগুলো আজ বুজে গেছে অনেকটাই, তবুও গভীর এক ক্ষতের মত আজও তার তার অনেকটাই দৃশ্যমান, যুদ্ধের পর এই পরিখাগুলোতে পাওয়া মানুষের দেহাবশেষ কংক্রিটের সাথে মিশিয়েই তৈরি করা এই ক্যাম্পের দ্বিতীয় মনুমেন্টটি, যেটি এই পরিখাগুলোর ঠিক পাশেই অবস্থিত।
ছবি : এই পরিখাগুলতেই এক দিনে খুন করা হয় ১৮,৪০০ বন্দীকে
"আমার পরিবারের ঠিক ষোলো জনকে মেরে ফেলা হয়েছিল ঠিক এখানে", সেই মৃত্যু পরিখাগুলোর সামনে আমি যখন হত-বিহ্বল হয়ে দাড়িয়ে আছি ঠিক সেসময় পাশে দাঁড়ানো এক ভদ্রমহিলা বললেন। ভদ্রমহিলা লুব্লিনের আদি বাসিন্দা, যদিও এখন ব্রিটিশ স্বামীর সাথে ব্রিটেনেই বসবাস করেন। স্বামী আর ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এসেছেন নিজ শহরে অবস্থিত এই ক্যাম্প দেখাতে, আর ছেলে-মেয়েদের নিজ পরিবারের ইতিহাস জানাতে। ক্যাম্পে থাকার পরের সময়টাতে এই ভদ্রমহিলাই হয়ে গেলেন যেন আমার গাইড, নিজ উদ্যোগে আমাকে দাহন-ভবনটি ঘুরিয়ে দেখানোর সময় জানালেন ত্রিশ বছর আগে যখন তিনি শেষ বার এসেছিলেন এই ক্যাম্পে, তখনও নাকি কিছু দৃশ্যমান দেহভস্ম অবশিষ্ট ছিল এই চুল্লিগুলোতে। গভীর এক কষ্ট বুকে চেপে ধরে ভদ্রমহিলা বললেন, "যুদ্ধের ঠিক ষোলো বছর পর আমার জন্ম, কিন্তু আমার কাছে যুদ্ধের স্মৃতি যেন অনেকটাই জীবন্ত, জন্মের পর থেকেই মার মুখ থেকে শুনতাম আমার পরিবারের হারিয়ে যাওয়া মানুষদের কথা, মা কখনো ভুলতে পারেননি সেসব এক মুহূর্তের জন্যও, এক বুক যন্ত্রণা আর কষ্ট মাকে তাড়া করে গেছে তার জীবনের শেষ দিন অবধি। আমার মা-বাবার দু-কূলের মধ্যে কেবল এক কাকাই পালাতে পেরেছিলেন ক্যাম্পে আনার পথে, কাকা বেঁচে আছেন এখনো, গত গ্রীষ্মে আমার ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলাম কাকার সাথে দেখা করাতে, আর এই গ্রীষ্মে ওদের নিয়ে এলাম এখানে।"
ঠিক কত জন মানুষ প্রাণ দিয়েছিল এই ক্যাম্পে? ৪৪'এর ২৪শে জুলাই লাল ফৌজ এই ক্যাম্পের মূল ফটকে ঢোকার আগেই জার্মানরা শেষ করে দেয় প্রায় এক লক্ষ ইহুদি আর আর প্রায় দু-লক্ষ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী ভুক্ত মানুষের প্রাণ। যদিও নিহতের এই সংখ্যাটি নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে কিছু মতভেদ বিদ্যমান, আসলে যুদ্ধের শেষ দিকটায় জার্মানরা বন্দী নিধনে এতটাই উন্মত্ত হয়ে পড়েছিল যে শেষ দিকটায় তারা আর কাগজে-কলমে বন্দী-নিবন্ধন করতনা, কিংবা করলেও ক্যাম্প গুটিয়ে ফেলার সময় তারা ধ্বংস করে যায় সেইসব কাগজপত্র, তাই নিহতদের সঠিক হিসেবটা অনেকটাই অনুমান-নির্ভর। তবে হিসেবটা কোনও ভাবেই তিন লক্ষের নিচে নয়, বরং ঊর্ধ্বে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। এমনকি লাল ফৌজ যদি আর মাত্র দুটো দিন আগেও পৌঁছুত এই ক্যাম্পে, তাহলেও হয়ত বাঁচানো যেত আরও কয়েকশ মানুষের প্রাণ, কারণ ২২শে জুলাই দিনটিতেও ঘটানো হয় ক্যাম্পের ইতিহাসের শেষ হত্যা-যজ্ঞ।
ছবি : বন্দীদের থাকবার ব্যারাক
মায়দানেস্ক ক্যাম্পটিতে এমনিতেই পর্যটকদের আগমন কম, তায় আবার মেঘলা কনকনে শীতের দিন হউয়ায় পর্যটকের সংখ্যা ছিল যৎসামান্য। রোদে, বৃষ্টিতে বিবর্ণ হওয়া সারি সারি ব্যারাক ভবনগুলোর মাঝ দিয়ে যখন হাঁটছিলাম তখন কেমন যেন এক অশরীরী আতঙ্ক ভর করছিলো আমার মনে, যেন মনে হচ্ছিলো হারিয়ে যাওয়া সেই মানুষগুলো যেন হারিয়ে যায়নি, হয়ত তারা এখনো আছে এই জং-ধরা তালাবন্ধ ব্যারাকগুলোর কোনও কোনটিতে। এই ব্যারাকগুলোর সবগুলোই আজ উন্মুক্ত নয়, মাত্র কয়েকটি খুলে রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্যে। দু-একটি ভবন ব্যবহৃত হচ্ছে জাদুঘর হিসেবে, যার একটিতে দেখতে পেলাম মৃত বন্দীদের ব্যবহৃত সাত হাজার জোড়া জুতো। আরেকটি ভবনে দেখলাম বন্দীদের ব্যবহৃত ত্রিতল বাংক-বেডগুলো, ৪২’ এর শরৎকাল থেকে বন্দীরা ব্যবহার করা শুরু করে এই বিছানাগুলো, তার আগে পর্যন্ত শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় তাদের ঘুমোতে হতো মেঝের উপরি খড়ের বিছানা পেতে। আলো-বাতাসবিহীন স্যাঁতসেঁতে এমন একটি ঘরেই রাখা হত প্রায় ৫০০ বন্দীকে গাদাগাদি করে, পশুকেও বোধয় এর চেয়ে ভালো অবস্থায় রাখা হয়। ক্যাম্পের মূল জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে বন্দীদের ব্যাবহৃত থালা, চামচ, পোশাক, আর কিছু ছবি। মায়াময় হাসির এক কিশোরীর ছবির সামনে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ, ছবির নিচে কোন নাম নেই, শুধু কিশোরীর জামায় লেখা একটি নম্বর “১৩২০”।
ছবি : বন্দীদের জুতো
ব্যারাকগুলো পার হয়ে ঢুকলাম ক্যাম্পের সেই কুখ্যাত গ্যাস চেম্বার ভবনে, যেখানে বন্দীদের স্নানাগারে নেবার কথা বলে মারা হত "জাইক্লন-বি" নামক এক প্রাণঘাতী গ্যাস দ্বারা। গ্যাস চেম্বারের মূল দরজাটি পুরু লোহার তৈরি, মরচে ধরা হাতলে লেখা “অয়ারত বার্লিন”। একেবারে মাঝ বরাবর এক গোলাকার শক্ত পোর্ট-হোল আকারের কাঁচ, গ্যাস নিঃসরণের কিছুক্ষণ পর এই কাঁচে চোখ রেখে দেখা হতো বন্দীদের শেষ অবস্থা। যখন সকল বন্দীর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া যেত তখনি কেবল খোলা হত এই ভারী পাতের দরজা, তারপর মৃতদেহগুলোকে এক শকটে করে নেয়া হত সেই অন্য প্রান্তের দাহন-ভবনে। সেখানে গিয়েই যে এই মৃতদের শেষ নিস্তার মিলত তা নয়, দাহ করার পূর্বে প্রতিটি মৃতদেহকে একটি কংক্রিটের টেবিলে শোয়ানো হত, তারপর দেখা হত কোনও মৃতের সোনায় বাঁধানো দাঁত আছে কিনা, আর যদি থাকে তবে তা উপড়ে ফেলা হত। যদি সন্দেহ আরও গাড় হত তবে এমনকি সেই মৃতদেহের অঙ্গহানি করেও খোঁজা হতো লুক্কায়িত সম্পদ। আর এই চরম নির্মম কাজটি সম্পন্ন করা হত অন্য বন্দীদের দ্বারা, এস.এস সৈনিকদের তত্ত্বাবধানে। কংক্রিটের সেই টেবিলটি আজো অক্ষত আছে নির্মমতা আর লালসার চূড়ান্ত সাক্ষী হয়ে।
ছবি : কাঠের এই ত্রিতল খাটগুলোতেই গাদাগাদি করে থাকতে হতো বন্দীদের
ছবি : ডান দিকে সেই শকট যাতে করে মৃতদেহগুলো নেয়া হতো দাহন ভবনে
ছবি : প্রধান গ্যাস চেম্বার, বাম দিকের নলগুলো দিয়ে প্রবেশ করানো হতো মারনঘাতি গ্যাস
মায়্দানেক থেকে ফেরার পথে কানে বাজছিল ক্যাম্পে পরিচয় হওয়া সেই ভদ্রমহিলার স্বামীর কিছু কথা। ভদ্রলোক বলছিলেন, "আমি ভালো, ও খারাপ, আমার দ্বারা কখনই এমনটি সম্ভব নয়-এমন কথা আমরা প্রায়শই বলি। আসলে ব্যাপারটা কি জানো, আমার কিন্তু মনে হয় আমাদের সবাইকে দিয়েই হয়ত সব কিছু সম্ভব, যদি আমাদের উপর প্রয়োগ ঘটে উপযুক্ত মনস্তাত্ত্বিক শুদ্ধিকরণের। কিছু কিছু সময়, পরিস্থিতি বা ভুল তত্ত্বের প্রয়োগ বদলে দিতে পারে যেকোনো মানুষকে, বহুকালের চেনা মানুষ হয়ে যেতে পারে অচেনা। দেখনি বলকানে কি ঘটেছিল? বহুকালের চেনা প্রতিবেশীরা অস্ত্র ধরেছিল একে অপরের বিরুদ্ধে, কিছুকাল আগেই যাদের হয়ত দেখা যেত একই বৈকালিক আড্ডায়। মানুষ হিসেবে আমরা যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করি তা কি আসলেই যৌক্তিক? সেটা কি অনেকটাই আত্ম-তুষ্টি পাবার জন্যে নয়?" হয়তবা তাই, তবে মানুষ হিসেবে অন্তত এতটুকু শপথ হয়ত আমরা করতেই পারি ফেলে আশা এই জঘন্য অতীতের ভুলগুলো পুনরাবৃত্তি না করার।
জীবনযুদ্ধ
মন্তব্য
অন্তহীন আতংক নিয়ে পড়লাম।
সময় নিয়ে লিখবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
সময় নিয়ে পড়বার জন্নেও ধন্যবাদ আপনাকে
কি ভয়াবহ! মানুষই পারে অন্য মানুষের উপর এমন নিষ্ঠুর হতে!
আপনার লেখা ও ছবির সমন্বয় ভালো হয়েছে। অতিথি লেখকের নামটা লেখার শেষে দিতে হত, (এবেলায় না হয় মন্তব্যেই জানিয়ে যাবেন) আর প্যারা ব্রেকে দুটো 'এন্টার' দিলে ভালো হয়।
ভালো থাকুন, শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ আপনাকে, পরের বার কিছু লিখলে আপনার মন্তব্যগুলো মাথায় রাখার চেষ্টা করবো
জীবনযুদ্ধ
লেখা ভালো হয়েছে। আরো কিছু ছবি দিতে পারতেন হয়তো।
জার্মানির বুখেনভাল্ডে কি গিয়েছিলেন? এই অঞ্চলের সবচে বড় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প ছিল।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
লেখা ভাল লাগায় ধন্যবাদ অনার্যদা, না বুখেনভাল্ডে যাইনি কখনও, তবে বুখেনভালড আর ডাখাউ দেখার ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে
জীবনযুদ্ধ
খুব ভালো লেগেছে লেখাটা। মর্মান্তিক কিছু ঘটনা জানতে পারলাম। জার্মানিতে থেকে এলাম অথচ পড়ার চাপে কখনো মনেও হয়নি ওদের নৃশংসতার ইতিহাস খুঁজে দেখার কথা। ধন্যবাদ আপনাকে।
ফাহিমা দিলশাদ
ভয়াবহ!
সকাল সকাল এ লেখা পড়া ঠিক হয়নি বোধহয়!
ছবিতে ক্যাপশান লেখার পর একবার এন্টার চাপতে হবে, স্পেসের জন্য।
আরো লিখুন।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আপনাদের প্রেরণা পেলে অবশ্যই লিখবো , ধন্যবাদ আপনাকে
জীবনযুদ্ধ
শ্রেষ্ঠত্বের দাবিটি একেবারে অযৌক্তিক নয়, তবে সে শ্রেষ্ঠত্ব আসলে ধূর্ততায়, নিষ্ঠুরতায়, শঠতায়! নইলে, দেখুন, খুব হিংস্র কোন পশুও কি পারত এভাবে ঠান্ডা মাথায় ১৮৪০০ নিরপরাধ মানুষকে মেরে ফেলতে? একইদিনে?
চলুক, জীবনযুদ্ধ!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
"শ্রেষ্ঠত্বের দাবিটি একেবারে অযৌক্তিক নয়, তবে সে শ্রেষ্ঠত্ব আসলে ধূর্ততায়, নিষ্ঠুরতায়, শঠতায়!"--ঠিক বলেছেন
জীবনযুদ্ধ
ভয়ানক ইতিহাস - যা বার বার জানা দরকার।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
একমাত্র সভ্যতার ধ্বজাধারী মানুষই পারে এরকম অসভ্য কাজ করতে। মাঝে মধ্যে নিজেকে মানুষ ভাবতে লজ্জিত বোধ করি। শুকর হয়ে জন্মালে হয়ত ভাল হত। কখনও শুনিনি শুকরেরা এক দিনে ১৮,৪০০ শুকরকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।
সোহেল লেহস
জানার শেষ নেই। এই বয়সেও একেবারেই নতুন কিছু জানলাম আপনার পোস্ট থেকে। এভাবে লিখে যান জীবনের অভিজ্ঞতা, দ্রষ্টব্য বিষয়াদি ইত্যাদি। অনেক অনেক শুভকামনা।
ধন্যবাদ আপনাকে, আরও লিখার ইচ্ছে রইল
জীবনযুদ্ধ
জীবনযুদ্ধ,
পড়ছিলাম আর বলতে গেলে "The Boy with Stripped Pajama" আর "Schindler's List" ছবির দৃশ্যগুলো আবার নতুন করে একে একে চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। আরও লেখা আর বেশি বেশি ছবির প্রত্যাশায় রইলাম।
নির্ঝরা শ্রাবণ
শিন্দলার সাহেবের কারখানাটিতেউ যাওয়া হয়েছিল, সে নিয়ে আরেকদিন লিখার ইচ্ছে রইল , ধন্যবাদ আপনাকে
জীবনযুদ্ধ
নতুন মন্তব্য করুন