দেশের মাটিতে বিদেশী পতাকা ওড়ানোর বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটা নীতিমালা আছে। বাংলাদেশে আরো দশটা আইনের মত এই নীতিমালাকে-ও আগে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হয় নি। এই নীতিমালা না মানার অর্থ এই নয় যে তা বাতিল হয়ে গিয়েছে। আগে কখনো অনুসরণ করা হয়নি বলে ভবিষ্যতেও করা হবে না, এটা ভেবে নেওয়ার কোন অর্থ নেই। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সাধারণ মানুষ এখন এই সব নীতি নিয়ে সোচ্চার হচ্ছে। গণদাবীর মুখে প্রশাসনকে সেই সব নীতির লঙ্ঘন বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। ঠিক এই ঘটনাটাই ঘটেছে এই বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া টি২০ বিশ্বকাপে। বেশ কিছু মানুষ যখন জোড় গলায় দাবি তুলেছিলো দেশের মানুষের হাতে বিদেশী পতাকা নিয়ে নির্লজ্জ্ব মাতামাতি বন্ধের, তখন সরকার সেই দাবির সাথে সংহতি জানিয়ে স্টেডিয়ামে বাংলাদেশীদের হাতে অন্যদেশের পতাকা নিয়ে ঢোকা বন্ধ করেছিলো। সরকার এর জন্য নতুন কোন আইন তৈরী করেনি, বরং পুরানো একটা আইনকেই খানিকটা প্রয়োগ করেছে।
সব দেশে সবসময়েই এক ধরনের মানুষ থাকে যারা কোন পুরানো আইনের নতুন করে প্রয়োগকে 'বাড়াবাড়ি' হিসেবে নেয়। তাদের ধারনা যেহেতু "তেল নাই-গ্যাস নাই-পানি নাই-কাজের বুয়া নাই", সুতরাং সরকারের এই সব "আজাইরা" কাজের কোন প্রয়োজন নেই। নিঃসন্দেহে খুবই হাস্যকর যুক্তি। সোসাল নেটওয়ার্কিং এর এই যুগে এই চিন্তার মানুষেরা একসাথে জোট পাকাতে শুরু করেছে। তারা হাবিজাবি লিখে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে তাদের যুক্তি কতটা যৌক্তিক! গত টি২০ বিশ্বকাপে এই ধরনের মানুষের একাংশ উচ্চবাচ্য করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু সুস্থভাবে চিন্তা করতে পারা মানুষের চাপে তাদের কু্যুক্তি ধোপে টিকেনি। সে কু্যুক্তি দেখানো দলের আরেক অংশ ঘাপটি মেরে ছিলো ফুটবল বিশ্বকাপের আশায়। কারন পূর্বের অভিজ্ঞতা অনুসারে এই সময় সারা দেশের ছাদ ভরে ওঠে বিদেশী পতাকা দিয়ে। সেই সময় তারা বিদেশী পতাকার বিরোধীদের একহাত দেখে নেবার অপেক্ষায় ছিলো। গত কয়েকদিন হল এই জাতীয় মানুষের আহাজারিতে ফেসবুক নিউজফিড ভেসে যাচ্ছে।
এই আহাজারি করা মানুষেরা হল মেরুদন্ডহীন জীব। নিজেদের কিছু করার ক্ষমতা তো নেই-ই, বরং অন্য কেউ কোন ভালো কাজ করলে তাদের পিছে লাগাই এদের কাজ। কোন আইন যদি না মানা হয়, তবে সেটা কার্যকর করার জন্য প্রশাসনকে চাপ দেয়া একজন সচেতন নাগরিকের কাজ। তা না করে এই মেরুদন্ডহীন প্রাণীরা প্রশাসনকে আরো পিছিয়ে নেবার চেষ্টা করছে। বিষয়টা অনেকটা এই রকম- যেহেতু দেশের সব অপরাধীকে একই সাথে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব নয়, সুতরাং সব জেলখানা ফাকা করে অপরাধীদের ছেড়ে দেয়া হোক!
জানি মেরুদন্ডহীন প্রাণীকে শুধুমাত্র বুঝিয়ে মেরুদন্ড গজানো সম্ভব নয়, তবে তরুণ প্রজন্মের অনেক স্বাভাবিক মানুষ আছে যারা ঐ মেরুদন্ডহীন প্রাণীকেই আদর্শ হিসেবে ধরে নেয়। তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এছড়া আরো এক ধরনের মানুষ আছে, যারা পতাকা সংক্রান্ত নীতিমালা না জানার কারনে এই ধরনের ভূল করে এসেছে, তবে সঠিক আইন জানলে অবশ্যই তাদের ভূল বুঝতে পারবে। তাদের জন্যই ছবিতে বাংলাদেশের পতাকা নীতিমালা দিয়ে দিচ্ছি। মূল ডকুমেন্টটার লিঙ্ক-ও দিয়ে দিচ্ছি।
লিঙ্কঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২
link: People's Republic of Bangladesh flag rules, 1972 (English)
এতো আইন কানুন দেখানোর পরেও অনেকের চিন্তাধারার পরিবর্তন হবে না। তারা সেই আগের মতই ভিনদেশী পতাকা ওড়াবেই। তাদের জন্য কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ, তা এই ভিডিও ক্লিপ থেকে দেখে নেয়া যেতে পারে!
(ভিডিওটি An Inconvenient Truth ডকুমেন্টারির অংশবিশেষ)
আপনি জেনে শুনে আইন অমান্য করে নিজের নিজের দেশের অসন্মান করছেন, তখন আপনি আর যা-ই হোন না কেন, সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ নন। আপনাকে এই কাজ থেকে বিরত রাখা সরকারের দায়িত্ব। সম্প্রতি আমরা দেখেছি যশোরের জেলা প্রশাসক আইন অমান্য করে ভিনদেশী পতাকা ওড়ানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেবার কথা বলেছেন। আশা করি দেশের অন্যান্য জেলাগুলোতেও এই একই উদ্যোগ নেয়া হবে।
আমার মনে হয় এই বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করাটাই আসল কাজ হবে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর এই সময়ে এই কাজটা আমরা সবাই করতে পারি। ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ যে যেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে এক্টিভ আছেন, নিজের আওতার মধ্যের মানুষগুলোকে এই সব আইন জানিয়ে দিন। শুধু একবার জানিয়েই শেষ করবেন না, বিশ্বকাপ চলাকালীন সময় কিছুদিন পরপর সেগুলো বারবার পোষ্ট করতে থাকুন। কেউ বিদেশী পতাকা উড়িয়ে সেটা নিয়ে গর্ব করে ছবি/স্ট্যটাস দিলে সেখানে তার ভূলগুলো দরিয়ে দিন। দেখবেন মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। আইন অমান্য করে অন্য দেশের পতাকা নিয়ে মাতামাতি যে একটা অশোভন কাজ, এটা বুঝতে সারা দেশের মানুষের হয়তো একটু সময় লাগবে। তবে হয়তো আরো ১০ বছর পর পরিস্থিতি এমন থাকবে না। ঘরের ছাদে বিজাতীয় পতাকা ওড়ানো মানুষকে সবাই ঘৃণার চোখে দেখবে। সেই পরিবর্তন ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। গত টি২০ বিশ্বকাপের পরে অনেকেই নিজেদের পরিবর্তন করেছে। আমিও ছোটবেলা না জেনে হাতে ব্রাজিলের পতাকা একে ঘুরেছি, এখন আইনকানুন জানার পর থেকে তা আর করছি না। সারা দেশে আমার মত মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম হবার কথা নয়।
ফুটবল বিশ্বকাপের মত আন্তর্জাতিক একটা আসর আমরা অবশ্যই উপভোগ করব, তবে জাতি হিসেবে নিজের অবস্থান দৃঢ় করে তবেই করব।
-- কাজী ফয়সাল রানেল
মন্তব্য
১৫ কোটি মানুষের দেশে পরিবর্তন একটু ধীরে হবে এটাই স্বাভাবিক। ১০ না হয়ে ৫০ হলেও হবে, হতেই হবে.................................
হ্যা, হতেই হবে।
-- কাজী ফয়সাল রানেল
দরকারী লেখা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এক লহমা, ধন্যবাদ।
পাঁচ তারা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ তিথীডোর।
-- কাজী ফয়সাল
জরুরি লেখা
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
শাব্দিক, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। নিজেদের পরিচিতদের মাঝে এই বিষয়টা ছড়িয়ে দিতে পারলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অবস্থার পরিবর্তন আসতে বাধ্য।
-- কাজী ফয়সাল
গত কয়েকদিন আগে আমি একজনকে বললাম - আপনিযে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়েছেন এটা কিন্তু ঠিক নয়। উত্তরে তিনি আমাকে বললেন – আরে এটাতো পতাকা না, পতাকার তো অনেক মাপঝোক আছে; আমিতো এক টুকরো কাপড় টানিয়েছি।
বুঝুন অবস্থা। যাইহোক, খুব ভালো লাগলো আপনার লেখাটি পড়ে, আইনগুলোও জানতে পারলাম।
-আরাফ করিম
কুযুক্তির কোন সীমানা নেই!
--কাজী ফয়সাল
দেশের প্রধান যখন বলেন বিদেশি পতাকা উড়াতে সমস্যা নেই তখন হতাশার সাথে সাথে ধিক্কারও জাগে মনে। দেশের প্রধান কি তাহলে পতাকা আইন জানেন না? জানেন তো অবশ্যই, তা না হলে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ঠিকি তো বিদেশী পতাকা (বিশেষ করে পাপিস্থানের পতাকা) নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিলো? তাহলে এখন কেন নয়? এখানে সুক্ষ রাজনীতি আছে, দেশের বেশিভাগ মানুষ ভিনদেশী পতাকা উড়িয়েছে অজ্ঞতা সূচক ভালোবাসা প্রকাশে। সেই বেশিভাগ মানুষের পক্ষে কথা বলে জনমনে নিজের প্রতি এবং দলের প্রতি সাপোর্ট টা বাড়িয়ে নেওয়ার নোংরা একটা রাজনীতি এটি।
ফুটবল বিশ্বকাপে যদি পাপিস্থান খেলতো এবং আর যদি তাদের পতাকা কিছু মানুষের ছাদে উঠতো তাহলেই এ আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগটা হয়ে যেত আর দেশের প্রধানমন্ত্রীও তখন ভিনদেশী পতাকা উড়ানো ঠিক নয় বলে লোক দেখানো দেশপ্রেমী এক বক্তিতা দিয়ে দিতো। এভাবেই তো চলছে।
মাসুদ সজীব
প্রধানমন্ত্রীর এও কথা জানার পর প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হল, এমন আজগুবি মন্তব্য তার কাছে আশা করা যায় না। রেকর্ড হিসেবে সেই মন্তব্যের ভিডিও ফুটেজ থেকে যাক এই ব্লগ পোষ্টের সাথে।
No Embargo on Foreign Flags-PM by prothom-alo
আশা করছি ভবিষ্যতে কোন একদিন তিনি তার ভূল বুঝে এই কথা তুলে নেবেন।
--কাজী ফয়সাল
"ই-প্রথম আলো" ছাড়া, নির্ভরযোগ্য কোনও লিঙ্ক হলে ভালো হত
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এই খবর তো অনেক জায়গাতেই এসেছে।
আরো কিছু লিংক-
১। যে যে দেশের সমর্থক সে সে দেশের পতাকা তুলবে না এ কেমন কথা?
২। বিদেশী পতাকা তোলার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী
আমার মনে হয় ভিডিওটাই সব থেকে নির্ভরযোগ্য।
--কাজী ফয়সাল
খুবই জরুরী লেখা। একটা সময় ছিল আমিও পাড়ার সবচেয়ে বড় আরজেনটিনার পতাকা উড়াতাম। কিন্তু যখন আমার মধ্যে দেশাত্তবোধ ঘুম থেকে জেগে উঠেছে আর দেশের পতাকা বিষয়ক আইন সম্পর্কে জানতে পারি, তখন থেকে সব ধরণের বিদেশি পতাকা উড়ানো বাদ। খেলা দেখি, আনন্দ করি, কিন্তু ভীন দেশি পতাকা উড়াই না। আশা করি একদিন সবাই আমার মত ভূল বুঝতে পারবে। আর সেই দিন হয়তো বেশি দূরে নয়।
এ এস এম আশিকুর রহমান অমিত।
দরকারি লেখা
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন