ল্যাংটাং ভ্যালি নেপাল তিব্বত সীমান্তে জনপ্রিয় ট্রেকিং রুট। এ পথে রয়েছে বেশ কটি চমৎকার ট্রেকিং ডেষ্টিনেশন, যেমন ৩৫০০ মিটার উচ্চতায় ল্যাংটাং ভিলেজ, প্রায় ৪০০০ মিটার উচ্চতায় চারিদিকে বরফের রাজ্য নিয়ে চমৎকার পাহাড়ি বসতি কিয়ানজিন গোম্পা, আছে গোসাইকুন্ড নামে্র হাই আলটিচ্যুড লেক। এছাড়াও আছে জনপ্রিয় ট্রেকিং পিক কিয়ানজিন রি, সেরগো রি, ইয়ালা পিক সহ বেশ কিছু ট্রেকিং পিক যেখানে কোন রকম টেকনিক্যাল ক্লাইম্বিং ছাড়াই প্রায় ৫০০০-৬০০০ মিটার পর্যন্ত উচু চূড়া আরোহন করা যায়। এই ল্যাংটাং রেঞ্জেই আছে ৬৫০০ মিটার উচ্চতার সেই বিতর্কিত লাংশিসা রি যেখানে আমাদের দেশের শুরুর দিককার পর্বত আরোহীদের আরোহন নিয়ে বিস্তর কাঁদা ছোড়াছুড়ি হয়েছে। প্রতি বছর নানা দেশের বহু ট্যুরিষ্ট ল্যাংটাং ভ্যালিতে ট্রেক করতে আসে, আমরাও ট্রেকিং প্রিয় চারজন ২০১৪ এর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে গিয়েছিলাম ল্যাংটাং ভ্যালি ট্রেক করতে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো ল্যাংটাং ভিলেজ ও কিয়ানজিন গোম্পায় রাত্রি যাপন করে কিয়ানজিন রির চুড়ায় আরোহন এবং একই পথে ফিরে আসা। এই ট্রেকের ডিফিকাল্টি গ্রেড বি-প্লাস মানে মডারেট। সেই ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়েই এই লেখা।
ঢাকা-কাঠমন্ডু-
যাত্রার কথা ছিলো অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে যেটি সবচেয়ে ভালো ট্রেকিং পিরিয়ড কিন্তু সবার একসাথে ছুটি ম্যানেজ হলো নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। যেহেতু নভেম্বরের মাঝামাঝি যাচ্ছি তাই একটু বেশী নিম্ন তাপমাত্রা আশা করছি। সেই মতো মানসিক এবং লজিষ্টিক প্রস্তুতি নিয়ে বাক্স পেটরা গুছিয়ে নভেম্বরের ১৫ তারিখে রৌদ্রজ্জ্বল এক দুপুরে বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭ চেপে পয়তাল্লিশ মিনিটেই কাঠমন্ডু গমন। ইমিগ্রেশনের ক্লান্তিকর নিয়মকানুন সম্পন্ন করে কাঠমন্ডুতে আমরা উঠলাম আগে থেকেই নেপালী বন্ধু নিজানের ট্রাভেল এজেন্সীর মাধ্যমে ঠিক করে রাখা হোটেল মুনলাইটে। গাইড ও পোর্টার ঠিক করে রেখেছে সেই ই। হোটেলটি থামেলে হলেও অপেক্ষাকৃত নির্জন জায়গায়। খরচ যথাসম্ভব কমানোর জন্য চারজনের জন্য একটি রুম নেয়া হলো, এক সারিতে চারটি খাট। অন্যান্য ব্যাবস্থা ও চলনসই। ব্রেকফাষ্ট দাম অনুযায়ী বেশ ভালো। চেক ইন করার কিছুক্ষন পরেই নিজান আসলো সবার টিমস্ কার্ড আর দুঃসংবাদ নিয়ে। নেপালে তখন নির্বাচন মৌসুম, মাওবাদীদের ডাকা বনধে্র কারনে বাস চলবেনা। তাই বাস কতৃপক্ষ টিকেটের টাকা রিফান্ড করেছে। এখন উপায় একটাই, প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করতে হবে, এর চাহিদাও তুঙ্গে। অতএব, পনর হাজার রুপি গচ্চা দিয়ে নিশান পেট্রোল ফোর হুইলার ভাড়া করলাম আমাদেরকে কাঠুমন্ডু থেকে সাইপ্রুবেসি নামক ট্রেকিং এর প্রারম্ভিক ঘাঁটি পর্যন্ত নিয়ে যাবার জন্য। এরপর নিজানকে সাথে নিয়ে বের হলাম ট্রেকিংয়ের যেসব জিনিসপাতি নেপাল থেকে সংগ্রহ করতে হবে সেসবের জন্য। নিজানের পরিচিত দোকান থেকে ডাউন স্লিপিং ব্যাগ, ডাউন জ্যাকেট ভাড়া করলাম সঙ্গে আরো কিছু আনুষংগিক জিনিসপত্র যেমন ওয়াকিং ষ্টিক, ফ্লিসের আস্তরন দেয়া পায়ের মোজা, হাত মোজা, ফ্লিসের কানটুপি, হেডল্যাম্প ইত্যাদি কেনা হলো। জিনিসপত্র নিজানের পরিচিত জায়গা থেকে ভাড়া করাতে অনেক সস্তা পড়েছে তাই আরো কিছু টাকা বাঁচানো গেলো। পরদিন খুব ভোরে রওনা দিতে হবে তাই নিজানকে বিদায় দিয়ে ডিনার হোটেলে ফিরে দ্রুত ঘুম।
১। লেসার হিমালয় (বিমান থেকে)-
২। বিমানে থেকে এভারেষ্ট রেঞ্জের ছবি (ছবিতে দেখা যাচ্ছে এভারেষ্ট, মাকালু, লৎসে, নাপ্তসে, পুমরি, আমাদাবালাম)
৩। থামেলে হ্যান্ড গ্লাভসের সন্ধানে দুই সঙ্গী-
৪। স্লিপিং ব্যাগের পসরা-
৫। শেষ মুহুর্তের কেনাকাটা-
কাঠমন্ডু-সাইপ্রুবেসি
খুব ভোরে ঘুম থকে উঠে নাস্তা না করেই ৭টার মধ্যে রওনা হলাম। আমাদের সঙ্গে যাচ্ছে দুজন শেরপা পোর্টার আর একজন গাইড, নাম অর্জুন। বেশ অভিজ্ঞ ট্রেকিং গাইড, হিমালয়ের মোটামুটি সকল ট্রেক রুটের অভিজ্ঞতা আছে। কাঠমন্ডু থেকে সাইপ্রু দশ থেকে বারো ঘন্টার জার্নি, শেষের অংশটুকু খুবই খারাপ আর বিপদজনক। তাই আলো থাকতে থাকতে পৌছতে হবে। বনধে্র কারনে হাইওয়ে প্রায় ফাকা। একটু পর পর আর্মির ট্রুপ ক্যারিয়ার দেখা যাচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য বেশ কয়েকটি ট্যুরিষ্ট গাড়ি এক সাথে ছেড়েছে। প্রত্যেক গাড়ির সামনে কাপড়ে লেখা ‘ট্যুরিষ্ট অনলি’। ঘন্টা খানেক চলার পর রাস্তার ধারের এক হোটেলে গরম গরম আলু পরটা, ডিম আর ঝাল চাটনি দিয়ে চমৎকার নাস্তা সেরে ঝটপট আবার পথ চলা। আমাদের সামনের গাড়িতে নেদারল্যান্ডের একদল ট্রেকার। নাস্তার সময় কিছুক্ষন আড্ডা হলো তাঁদের সাথে। ওরাও একই রুটে ট্রেকিং করবে। গাড়ি চলছে কাঠমন্ডু-পোখারা হাইওয়েতে। গাড়ি পোখারার দিকে কিছুক্ষন চলার পর ডান দিকে বাক নিয়ে আলাদা হয়ে গেলো।
চারপাশের ভু-প্রকৃতি অসাধারন। অনেক নিচে চওড়া খরস্রোতা দুধকোশী নদী আরেকদিকে সুউচ্চ পাহাড় সারাক্ষন সঙ্গ দিলো আমাদের। দুপুর গড়িয়ে আসলে মাঝপথে গাইড আর দুই পোর্টারের জন্য লাঞ্চ ব্রেক নেয়া হলো। আমরা লাঞ্চ করলাম না। সঙ্গে থাকা চিপস্, আপেল, কমলা দিয়েই লাঞ্চ হয়ে গেলো। লাঞ্চের পর আবার পথে। বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ পৌছলাম ধুনচে নামক জায়গায়। এখান থেকে ল্যাংটাং ন্যাশনাল পার্কের এন্ট্রি ফি জমা দিয়ে পারমিট নিতে হবে। সার্ক দেশভুক্ত ট্রেকারদের জন্য এন্ট্রি ফি অনেক কম দেড় হাজার রুপি, অন্যদের তিন হাজার। ধুনচে থেকে চোখে পড়ে ল্যাংটাং ভ্যালির সর্বোচ্চ চূড়া ল্যাংটাং লিরাংয়ের। প্রায় ২৫ হাজার ফিট উচু বরফে আবৃত পিরামিড আকৃতির বিশাল ম্যাসিফ, চারপাশ ছাড়িয়ে অনেক উচুতে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। এরপর থেকে রাস্তা খুব বিপদ জনক। সরু ট্রেইল, গাড়ির চাকা যেখানে শেষ হয়েছে তার ঠিক পর থেকেই প্রায় হাজার ফুটের খাদ, অন্য পাশে পাথুরে গা উঠে গেছে অনেক উপরে। জায়গায় জায়গায় পাথর ধ্বসের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। বেশ কয়েক জায়গায় আমরা ভয়ে গাড়ি থেকে নেমে হেটে পার হয়ে তারপর আবার গাড়িতে উঠেছি। অবশেষে শেষ বিকেলে আমাদের শেষ গন্তব্য ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ সাইপ্রুবেসি পৌছলাম।
৬।সাইপ্রুর উদ্দেশ্যে রওনা-
৭।দুধকোশী নদী (সাইপ্রুর পথে)-
৮। ধুনচে চেকপোষ্ট এবং আরামের রাস্তার সমাপ্তি (সাইপ্রুর পথে)-
৯। বিপদজনক রাস্তা শুরু (সাইপ্রুর পথে)-
১০।
১১। চাকা পিছলে গেলেই ঐ খাদে (সাইপ্রুর পথে)-
১২। পথের বাপ (সাইপ্রুর পথে)-
১৩। প্যানোরামা-লোয়ার ল্যাংটাং ভ্যালি (সাইপ্রুর পথে)-
১৪। ধুনচে থেকে দেখা ল্যাংটাং পর্বতশ্রেনী (সাইপ্রুর পথে)-
১৫।
১৬।
সাইপ্রু টু লামা হোটেল-
সাইপ্রু একটি ছোট্ট জনপদ, গিরিখাতের মধ্যে অবস্থিত। প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা একটি সরু রাস্তার দুপাশে দোকানপাট, বাড়িঘর আর টি-হাউস মিলে জায়গাটি। দুদিক থেকেই সুউচ্চ পাহাড় শ্রেনী চেপে রেখেছে, যেন পিষে ফেলার পায়তারা করছে। ফেনিল ঝর্না যা কোশী নদীর একটি শাখায় রূপ নিয়েছে, সগর্জনে বইছে পাহাড়ের পাদদেশ ঘেষে। আমরা উঠলাম তিব্বত হোটেলে। ঝর্নার পাশ ঘেষে ছোট্ট একটি তিনতলা হোটেল। দোতলায় জায়গা হলো আমাদের। ছোট্ট রুমে দুটি করে স্কিন টাইট খাট আর একটি ছোট টেবিল। প্রতি ফ্লোরে চারটি করে রুম। কমন বাথরুম কিন্তু বেশ পরিষ্কার। সন্ধে ঘনিয়ে আসছে, ঠান্ডা ও জাঁকিয়ে বসেছে। তাপমাত্রা অনুমান পাঁচ/ছয় ডিগ্রি। কুলি করতে গিয়ে ঠান্ডায় দাঁত খুলে পড়ার জোগাড়, অনুমান করলাম তাপমাত্রা আরও কম হবে। রাতের খাবারের অর্ডার দিয়ে এলাকা রেকি করতে বের হলাম, সঙ্গে কিছু শুকনো খাবার ও কিনতে হবে সামনের দিনগুলোর জন্য। রাতে গরম গরম মোমো আর ডাল, ভাত, তরকারীর নেপালী থালী দিয়ে ডিনার শেষ করে সাড়ে সাতটা নাগাদ সোজা বিছানায়। সাড়ে আটটা মানে এখানে প্রায় মাঝরাত। লেপ আর কম্বলের মিলিত উষ্ণতায় আড্ডা দিতে দিতে আর ঝর্নার প্রচন্ড গর্জন শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাতের তাপমাত্রা প্রায় শুন্যের কাছে নেমে যাওয়ায় ঠান্ডায় মাঝে মাঝেই ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছিলো।
ভোর সাড়ে ছয়টা নাগাদ গাইড অর্জুন সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলো। বিছানার আরামদায়ক উষ্ণতা ছেড়ে বের হতে নিজের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হলো। চারজনের চারটি ৮০ লিটারের বড় হ্যাভারস্যাক পোর্টাররা বহন করবে আর আমরা ছোট ডে-প্যাক। আমার নিজের সাথে আছে ৪৫ লিটারের ডে প্যাক যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা আছে। বাকিরাও তাই। নাস্তা সেরে লেমন টি দিয়ে শরীর চাঙ্গা করে পিচ ঢালা পথ ধরে ধীর গতিতে রওনা হলাম আমরা চারজন আর সাথে দুই পোর্টার আর গাইড মিলিয়ে মোট সাতজন। প্রথম দিনের গন্তব্য প্রায় সাত ঘন্টার হাটা পথ (পাহাড়ীদের হিসেবে), লামা হোটেল, প্রায় আটহাজার ফুট উচ্চতায়। পথিমধ্যে পড়বে দুটি পাহাড়ি বসতি নাম যথাক্রমে ডোমেন ও ব্যাম্বু। সাইপ্রুর পিচ ঢালা পথ শেষ করে পুলিশ চেকপোষ্টে নাম লেখাতে হলো। টিমস্ কার্ড আর পারমিট ও চেক করা হলো। চেক পোষ্ট লাগোয়া কোশী নদীর শাখা সগর্জনে বয়ে নিয়ে চলছে ফেনিল বরফ গলা জল। নদীর উপর ষ্টিল ক্যাবল দিয়ে বানানো সাসপেনশন ব্রিজ পার হয়ে পাহাড়ের গায়ে সরু পাথুরে ট্রেইল ধরে আমাদের ক্রমশঃ উঠে যাওয়া শুরু হলো।
১৭। ল্যাংটাং প্রটেক্টেড এরিয়া শুরু-
১৮। এই অঞ্চলের ট্রেকিং হাব ছোট্ট পাহাড়ী বসতি সাইপ্রুবেসি (হোটেল রুম থেকে তোলা)-
১৯। ঘুম ঘুম সাইপ্রু-
২০। সাইপ্রু থেকে দেখা-
২১। রেকি করতে বের হওয়া-
২২। হোটেলের পাশ দিয়ে বয়ে চলা দুধকোশী নদী-
২৩। যাত্রা হলো শুরু (গন্তব্য লামা হোটেল)-
২৪। জনপদ ছাড়িয়ে বুনো প্রান্তরে ঢুকে পড়া-
২৫। সাইপ্রুর সীমানা ছাড়িয়ে ডোমেনের পথে-
২৬।
২৭।
২৮।
২৯।
৩০।
কিছুক্ষন উর্ধধমুখী হন্ঠনের পর পাহাড়ি গ্রাম আর জনবসতি পার হয়ে ঘন জঙ্গলে প্রবেশ করলাম। পাহাড়ের খাড়া গা জুড়ে গভীর বন, সুর্যের আলোও ঢুকেনা কোথাও কোথাও। বনের ভিতর সরু ট্রেইল ধরে আমরা চললাম। অনেক নিচ দিয়ে বয়ে চলা গ্লেসিয়ার গলা ঝর্নার গর্জনে কান পাতা দায়। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই এই ঠান্ডায় ঘেমে নেয়ে একাকার সবাই। সুতরাং যাত্রা বিরতি হলো সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট উচ্চতায় ঝর্নার পাশে ছোট্ট গ্রাম ডোমেনে। কয়েক ঘর পরিবার আর ট্রেকারদের সার্ভ করার জন্য কয়েকটি ছোট দোকান নিয়ে জায়গাটি। ন্যুডল স্যুপ আর লেমন টি খেলাম আমরা সবাই। ফ্রান্সের এক দল ট্রেকারও যাত্রা বিরতি করেছে আমাদের সাথে। খেয়ে দেয়ে শক্তি অর্জন করে আবার যাত্রা। এ দফায় হাটা আরেকটু কষ্টকর হলো। উত্থান পতন আরেকটু বেশি। কখনো খাড়া নেমে যেতে হচ্ছে ঝর্নার পার পর্যন্ত পরক্ষনেই আবার খাড়া উপরে উঠা। জান বের হয়ে গেলো সবার। ইতিমধ্যেই লাঞ্চের সময় হয়ে আসলে ব্যাম্বু নামক অদ্ভুত কিন্তু অসাধারন সুন্দর জায়গায় লাঞ্চ করলাম। চারপাশে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝে ছোট্ট গ্রাম ব্যাম্বু, পাহাড়ের গায়ে ঘন বাঁশবন। উপর থেকে প্রচন্ড গর্জনে নেমে আসছে দুধকোশী নদীর উৎস। সুউচ্চ পাহাড়ের গা থেকে নেমে আসছে জলপ্রপাত, মিশেছে ঝর্নার সাথে। মাঝে মাঝে গাছের ফাক দিয়ে দেখা দিচ্ছে তুষার ঢাকা ল্যাংটাং পর্বত শ্রেনী। অপুর্ব এ জায়গায় বেশ কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলাম। এখান থেকে ব্যাম্বু আরো তিন ঘন্টার পথ শুনে সবার মন খারাপ হয়ে গেলো। দুপুরের খাবারের পর এমনিতেই শরীর ছেড়ে দেয় তাই পা দুটি চলতে চাইছেনা। কিন্তু সন্ধার আগে পৌছতে হবে। অগত্যা আবার যাত্রা। পথের অবস্থা দেখে আগের পথটিকে অনেক ভালো মনে হলো। অনেক খাড়া উঠতে হচ্ছে, কোথাও কোথাও পথ বলতে কিছুই নেই, স্রেফ পাহাড়ের গা বেয়ে ট্র্যাভার্স করতে হচ্ছে। স্থানে স্থানে পাথর ধ্বসের চিহ্ন ভয় ধরিয়ে দিচ্ছিলো। পথ যেন আর ফুরাতেই চায়না। সব কিছুরই যেমন শেষ আছে ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌছে গোধুলী নাগাদ পৌছলাম কাঙ্খিত গন্তব্য লামা হোটেল। উচ্চতা প্রায় ৮০০০ ফুট। ৭ ঘন্টার পথ আমাদের লেগেছে প্রায় ১১ ঘন্টা। পাহাড়ীদের এষ্টিমেটের সাথে ৫০% বাফার যোগ করে রাখা ভালো। শেরপা লজে উঠলাম আমরা। রুমে পৌছে এভাবেই এক দেড় ঘন্টা বিশ্রাম। সন্ধার পর শুন্যের কাছাকাছি তাপমাত্রায় লজের ডাইনিংয়ের আরামদায়ক উষ্ণতায় গরম গরম লেমন টি আর ভেজ মোমো খেতে খেতে এটাকেই জীবনের পরম সৌভাগ্য বলে মনে হচ্ছিলো।
৩১।
৩২।
৩৩।
৩৪।
৩৫।
৩৬।
৩৭।
৩৮।ডোমেন
৩৯। ডোমেনে গরম গরম ন্যুডল স্যুপ-
৪০। পাহাড়ি সারমেয়-
৪১।
৪২। ব্যাম্বুর পথে-
৪৩।
৪৪।
৪৪। ব্যাম্বু
৪৫।
৪৬।
৪৭। লামা হোটেল
৪৮। লামা থেকে দেখা ল্যাংটাং পর্বতশ্রেনীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ল্যাংটাং লিরাং (২৩,৭১১ ফুট)
আগামী খন্ডে সমাপ্য-
অচিন পাখি
মন্তব্য
চমৎকার!
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষমান।
শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
-অচিন পাখি
ভাল লেগেছে - বিস্তারিত জানা গেল - তথ্যগুলো আগ্রহীদের কাজে আসবে আশা করি।
*২০১৪ এর নভেম্বর টা মনে হয় ২০১৩ এর নভেম্বর হবে। তাই না?
ধন্যবাদ ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য। ২০১৩ হবে। বিশ্বকাপের উত্তেজনায় এডিটিং ভালো হয়নি।
শিরোনাম দেখে চমকে উঠেছিলাম, আসলে শুরুতে ল্যাংটাং এর 'ং' বাদ দিয়ে পড়ে ফেলেছিলাম যা হোক লেখা ভালো হয়েছে, চলুক।
-রূপালী দ্বীপ
ধন্যবাদ। নামটা একটু কেমন যেন
-অচিন পাখি
অসাধারণ! অসাধারণ! ইস আমি যদি এমন একটা জায়গায় ট্রেকিং করতে যেতে পারতাম
ফাহিমা দিলশাদ
যেতেই পারেন। মধ্যবয়সী এক ব্রিটিশ স্কুল শিক্ষিকার সাথে পরিচয় হয়েছে যিনি একা ট্রেক করতে এসেছেন। অন্নপুর্নাতে দেখা হয়েছিল সত্তরোর্ধ্ব একদল জাপানী বৃদ্ধের সাথে। হাই অলটিচ্যুড ট্রেকিংয়ে মনের জোরই আসল। ভালো থাকবেন।
- অচিন পাখি
ভাল লাগল। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ।
চমৎকার অভিযান অচিন পাখি। ছবিগুলো দুর্দান্ত এসেছে
ধন্যবাদ। এই ধরনের ট্রেকের বুনো সৌন্দর্য ছবিতে আসলে কিছুই আসেনা।
-অচিন পাখি
ছবি দেখে রীতিমত মাথা ঘুরাইতেছে, এত সুন্দর সব ছবি।
আপনাকে ফ্লিকারে ফলো করলাম। মনদিল উদাস হলে মেঘ-পাহাড়ের ছবি দেখে আসব।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
খাসা
আপনেরা জ্যাকেট জোকেট লাগায়া পাহাড় বায়া বাম্বুতে উঠলেন। আর ঐখানে দেখি বালিকারা কোমল ঠ্যাঙ বের করে বসে রোদ পোহায়! শীত লাগে না অগো?
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
লাগে তো অবশ্যই। আমাদের মতো না। আমরা এই ৫/৬ ডিগ্রীতেই কাইত, সাথে উইন্ড চিল থাকলে তো কথাই নাই। তবে এরা সুইস একটা গ্রুপ। এই ঠান্ডা নিশ্চই ওদের কাছে অনেক সহনীয় হবে। আর ট্রপিক্যাল রোদে চামড়া ট্যান করার সুযোগ কি কেউ ছাড়ে, একটু ঠান্ডা না হয় লাগলই।
আমিও একথা বলতে চেয়েছিলাম।
যাহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
...........................
Every Picture Tells a Story
আচ্ছা, আপনি বোধহয় সান্দাকফু-ফালুট এর গল্প বাকি রেখেছিলেন। নয়তো, আমি খুঁজে পাই নি।
কড়িকাঠুরে
ঠিকই ধরেছেন। আলসেমির কারনে বাকিটা আর লেখা হয়নি। অবাক হয়েছি আপনার মনে আছে দেখে। অনেক আগের কথা। এরপর আরো অনেক ট্রেকিং করেছি এবং করে যাচ্ছি সময় সুযোগ পেলেই।
- অচিন পাখি
নতুন মন্তব্য করুন