মুমিনের জিহাদ যাত্রা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১৮/০৭/২০১৪ - ১:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বৈশাখ মাসে যেমন সুর্যের তেজ বেশি থাকে,
মাঘ মাসে যেমন শীতের তেজ বেশি থাকে,
তেমনি রমজান মাসে মুমিনের ইমানী তেজটা একটু বেশিই থাকে ।

বাংলার মুমিনদের জিহাদী জোশ ব্যপারটা অনেকটা ১২ মেসে বাতের মতই । সাথে থাকে সারা বছরই, তবে বাত যেমন শীতের মাসে একটু বেশী চাগিয়ে উঠে , প্রতি রমজানেই আমাদের মুমিন ভাইদের জিহাদের জোশটাও আর ৮/১০ টা মাসের চেয়ে একটু বেশিই পীড়া দেয় । তবে গত কয়েকটা বছর বেশ পানসে রমজান মাস কাটাতে হয়েছে তাদের । মনের মত কোন জিহাদের ভেন্যু না পাওয়ায় ফেসবুকে ডিজিটাল জিহাদ করেই কাটিয়ে দিতে হয়েছে অগুনিত মুমিনকে ।

এই মরার দেশে জিহাদ করার সুযোগই বা কোথায় ? চারিদিকে শুধু খুন, ধর্ষন, ফলে ফর্মালিন । আজ মুসলিম ব্রাদার এক ১০ বছরের মুসলিম সিস্টারকে ধর্ষন, কাল এক ব্রাদার আরেক ব্রাদারের গলায় ছুরি । এই দেশে কি জিহাদ হয় নাকি ? বাড়ির উঠানে ছোট ভাইকে ১০ গোল দেয়ার মাঝে যেমন কোন সম্মান নাই, তেমনি দেশের ভিতরে জিহাদেও তেমন কোন ফজিলত নেই । খুন ধর্ষ্নের আসামীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে যাওয়ার মাঝে কোন গৌরব নেই । মশা মেরে হাত নোংরা করার মতই । আর হতভাগা বাকশাল সরকার কি এই দেশে জিহাদ করার মত কোন পরিবেশ রেখেছে নাকি ? জিহাদের নাম শুনলেই হয়তো জেএমবি, হুজি কিংবা হিজবুত তাহরীর ট্যাগ লাগিয়ে সোজা গারদে চালান করে দেবে । জিহাদ হতে হবে আন্তর্জাতিক অংগনে । এ-কে ফর্টিসেভেন কিংবা বাজুকা কাঁধে নিয়ে তপ্ত বালুময় মরুভুমিতে নায়কের মত ঘোরাঘুরি করতে হবে । গায়ে থাকবে লম্বা আলখাল্লা । মাথায় থাকবে পাগড়ি । মরুভুমির লু হাওয়ায় খোলা পাগড়ি ইখওয়ানদের পতাকার মত পতপত করে উড়বে । আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকার দিয়ে পশ্চিমা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চোখ বন্দুকের নল তাক করতে হবে । তবেই না জিহাদ ।

তবে সেম সাইডের ব্যপারটার দিকেও খেয়াল রাখা চাই । কুকুরে কুকুরে কামড়া কামড়ি চলে । মুমিনে মুমিনে তো আর কামড়া কামড়ি চলে না । তাই ইমানী জোশটাকেও জায়গা বুঝে সামলে রাখা চাই । তাই আল-শাবাব ধর্মের নামে হাজার হাজার মুসলমান সাবাড় করে দিলেও ইমান তেমন একটা জোশ পায় না । জোশ পায়না বোকো-হারাম শয়ে শয়ে মুসলিম মেয়ে অপহরন করে নিয়ে চলে গেলেও । নাই বা পেল । তাতে কি আর এসে গেল ? ওসব যায়গায় কোন ভদ্রলোক জিহাদ করতে পারে নাকি ? কেলো ভুতেদের দেশ । মরে মরুক । এইদিকে আবার সিরিয়ার কথাই ধরুন । জিহাদ করতে যাবেন ? লাখো লাখো মুসলিম । কে যে কখন কাকে বোমা মারছে তার কোন হদিস নেই । জিহাদের কনসেপ্টটাই এরা এখনো ঠিক ধরতে পারলো না ।

এমন অনেক বিবেচনায় এই রমজান মাসটা একেবারে সোনায় সোহাগা । একে ফুটবল । তার উপর প্যালেস্টাইনে ইজরাইলের বোমা । ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার বিদায়ে নেতিয়ে পড়া মুমিনের ইমান এক ধাক্কায় যেন দাড়িয়ে গেল । রমজান মাসের শুরু থেকেই তাই অনেক মুমিন ভাই প্যালেস্টাইনের হয়ে জিহাদে যাওয়ার জন্য হম্বি তম্বি শুরু করেছেন । রমজান মাসে বেশি বেশি খেয়ে তারা যখন জিহাদী জোশে হুংকার ছাড়ছেন, ঠিক তখনই হয়তো সোমালিয়ায় কিংবা সুদানে দীর্ঘদিনের অনাহারে থাকা এক শিশু মায়ের কোলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে এই ধরাধাম ছেড়ে যাচ্ছে । মা যখন তার মৃত সন্তানের চোখ বুজিয়ে দিচ্ছে, মুমিন তখন আয়েশী ইফ্তার সেরে ইহুদী নাসারাদের অত্যাচারে বিহবল মুসলিম উম্মার ত্রান কামনা করে চোখের জলে পাঞ্জাবি ভাসাচ্ছেন । বিশ্বজুড়ে অনাহারে থাকা কোটি কোটি মুসলিম মুমিনের ইমানে নাড়া দেয়া তো দুরের কথা, হালকা সুড়সুড়িও দেয় না । সেটাই স্বাভাবিক । এসব ছোটখাটো বিষয়ে বিচলিত হলে মুমিন জিহাদ করবে কি করে ? ক্ষুধার্ত মুসলিম আর ইহুদী/নাসারা আক্রান্ত মুসলিম কে এক পাল্লায় মাপলে তো আর চলে না । ভুখা নাংগা মুসলিম নিয়ে তো আর জিহাদ হয় না । জিহাদের জন্য চাই তরতাজা সাচ্চা মুমিন ।

তা জিহাদে যেতে চান, যান । তবে কিনা জিহাদের ঝক্কিটাও নেহায়েত কম না । রমজান মাস কিন্তু আর বেশি বাকি নেই । ইদের বাঁকা চাঁদ এলো বলে । চারদিকে ইদ শপিং এর হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে । দেখবেন প্যালাস্টাইনের ঐ বোমা খাওয়া শিশুদের কথা ভুলে গিয়ে, ডিজাইন করা পাঞ্জাবি কেনার উদ্দেশ্যে নিউমার্কেট রওয়ানা দিয়েছেন । কয়টা দিনেরই তো ব্যপার । দাড়িয়ে যাওয়া ইমানটাকে কষ্টেসৃষ্টে ঢেকে চেপে রাখুন । লাভ আছে ।

আর যদি একান্তই না ঠেকিয়ে রাখতে না পারেন, তাহলে আর কি করা । সহী ইমানী ডাক তো আর সকলের কপালে জোটে না । আপনি হয়তো তেমন অতি সৌভাগ্যবানদের একজন । আপনাকে আটকায় কার সাধ্য । জালিম ইহুদী সরকার প্যালেস্টাইনের সবকটা এয়ারপোর্ট গুড়িয়ে দিয়েছে । "এয়ারবাস ৩৮০ এর বিজনেস ক্লাস চড়ে যাবেন, কয়টা ইহুদী মারবেন, আবার এয়ারবাস ৩৮০ তে চড়ে ঠান্ডা খেতে খেতে চলে আসবেন" , জিহাদের এই রুটটা আপাতত বন্ধ আছে । তবে নিয়ত সহী হলে, উপায় বের হয়েই যায় । মাত্র ৬০,০০০ টাকায় ঢাকা - ইজিপ্টের টিকেট পাওয়া যাচ্ছে । কায়রোতে নেমে বাস ধরে সোজা চলে যান রাফা । ইজিপশিয়ান অথরিটি অহরহ ঘুষ খায় । কিছু টাকা হাতে গুজে দিয়ে রাফা হয়ে ঢুকে যান প্যালেস্টাইন । ওয়ান-ওয়ে টিকেট কেটেই যান । জিহাদ করতে যাবার সময় বাড়ি ফেরার কথা ভাবলে পাপ হতে পারে । ৭২ টা হুরপরীর কথা ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যান । তাছাড়া এমনিতেও আসার সময় তো কারগো হোল্ডে করেই আসবেন । টিকেটের পয়সাটা অন্তত বাঁচুক ।

জিহাদের সম্ভাব্য ফ্লো-চার্টটা দেখে নিতে পারেন । কাজে আসবে ।

গাজা ট্রাভেল গাইড ঃ
http://wikitravel.org/en/Gaza

=============================================

দস্যু ঘচাং ফু

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

কল্যাণ এর ছবি

ওহে দুর্ধর্ষ চৈনিক দস্যু ঘচাং ফু আপনি একটু ভুল করে ফেলেছেন। এখানে জিহাদের লৌক্ষ্য ফেইসবুকে লাইক কৌমানো,পত্রিকায় লেইখা ছৌপানো, ফিলিস্তিনি মানুষের জন্যে টাকা তৌলায় সীমাবদ্ধ। এর বাইরে কৌন দায় আপাতত নেয়া হচ্ছে না।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

সামস এর ছবি

এই পোস্টের লক্ষ্য উদ্দেশ্য গন্তব্য কিছুই বুঝতে পারলাম না।

অরফিয়াস এর ছবি

ব্লো চার্ট থুক্কু ফ্লো চার্ট এর সাথে ট্র্যাভেল গাইড দেয়া, তারপরেও না বুঝলে হবে ভাইটু?

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

উনি বোধহয় কর্ণকুহরে গলিত সীসা ঢালিয়া রাখিয়াছেন খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

তার মানে আপনি এখনো সহী ইমানী ডাক পান নাই ।

=========
দস্যু ঘচাং ফু

দীনহিন এর ছবি

মা যখন তার মৃত সন্তানের চোখ বুজিয়ে দিচ্ছে, মুমিন তখন আয়েশী ইফ্তার সেরে ইহুদী নাসারাদের অত্যাচারে বিহবল মুসলিম উম্মার ত্রান কামনা করে চোখের জলে পাঞ্জাবি ভাসাচ্ছেন ।

চলুক
সমালোচনার তীরগুলো স্পষ্ট, কিন্তু লেখাটা গোছানো নয়। সামনে আরও সুসংঘবদ্ধ হবে, সেই প্রত্যাশা!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ । চেষ্টা থাকবে ।
=============
দস্যু ঘচাং ফু

আয়নামতি এর ছবি

এ ব্যাপারে
ঈমানী জোশ কী বলে???

অতিথি লেখক এর ছবি

ইমান এখানে নীরব । ভাইয়ে ভাইয়ে ভুল বোঝাবুঝি, তা থেকে হালকা হাতাহাতি, অতঃপর বোমা মারামারি । খুবই স্বাভাবিক । তাতে দোষের কিছু দেখি না । তাই বলে ইহুদী এসে বোমা মেরে যাবে, এটা তো মানা যায় না ।
=========
দস্যু ঘচাং ফু

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ঈমান অনেক দামি জিনিষ,
বুঝে-শুনে খরচ করতে হয়,
যেখানে সেখানে নষ্ট করতে হয় না। চাল্লু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ইসলামের নতুন বাগদাদী খলিফা মুসলমান হত্যাকে জিহাদ ঘোষণা করলেও কাফের ইহুদিদের হাত থেকে মুসলমানদের হেফাজত করার ব্যাপারে নীরব!!!

http://www.independent.co.uk/news/world/middle-east/isis-leader-preaches-holy-war-abu-bakr-albaghdadi-puts-persecution-of-shiasat-heart-of-his-ideology-ahead-of-push-on-baghdad-9590571.html

Emran

অতিথি লেখক এর ছবি

গাজায় নির্বিচারে মানুষ হত্যার প্রতিবাদের সবটুকু মানবতাবোধ থেকে জন্মগ্রহন করছে বলতে পারলে আমার ভালো লাগত। কিন্তু সত্যি হলো বেশিভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এ প্রতিবাদ মানবতাবোধ থেকে জন্মায়নি। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি নির্বিশেষে যে কোন মানুষের জন্যে যে বোধ জন্মায় তাকেই তো মানবতাবোধ বলে। কিন্তু ফেবুতে এখন যারা মানবতাবোধের জন্ম দিচ্ছে তা নিজে ধর্মের, নিজে সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যে। এটা কোনভাবেই সর্বজনীন মানবতাবোধ হতে পারে না। মানবতাবোধের আড়ালে বলা যায় অন্ধ ধর্মপ্রেম প্রকাশ করছে।বিশ্বের আর কোথাও অন্য কোন ধর্মের মানুষ মারা গেলে আজকের বেশিভাগ মানবতাবাদীদের মাঝে এই মানবতা বোধ জাগ্রত হয়না। যেমন শ্রীলংকার সেনাবাহিনী যখন নির্বিচারে তামিলদের হত্যা করলো তখন মানবতাবোধ জাগেনি। বেশিভাগ-ই সেই খবর রাখেনি কিন্তু যখনি মায়ানমারে মুসলমান রোহিঙ্গাদের হত্যা করা হচ্ছে তখনি আবার ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় উঠলো, মানবতাবোধ জাগ্রত হলো। অন্য ধর্মের মানুষ মারা গেলে এমন মানবতাবাদীরা ব্যাথিত হয় না বরং খ্রিষ্টান-ইহুদি মারা গেলে মনে মনে খুশিই হয়। হয়তো ভাবছেন এটাও বাড়াবাড়ি রকমের সরলীকরণ? তাহলে বলি, গাজায় মুসলমানদের হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বেশিভাগ ফেসবুক মানবতাবাদী “হিটলার” কে নায়কের মর্যদা দিচ্ছে। এর কারণ কি? এর কারণ হিটলার ইহুদিদের হত্যা করেছে। হিটলার নাকি বলেছে ”আমি সব ইহুদি মেরে ফেলতে পারতাম কিন্তু আমি কিছু ইহুদি রেখে দিয়েছি কারন মানুষ যাতে বুঝতে পারে আমি কেন এদের হত্যা করেছিলাম”। অর্থাৎ ভিনধর্মের নিরাপরাদ ৬০-৭০ লক্ষ মানুষকে(ইহুদি) নির্বিচারে হত্যা করার পরও হিটলার এদের কাছে নায়ক। কারণ ইহুদিরা মুসলমানদের বড় শত্রু। যাদের কাছে ৬০-৭০ লক্ষ নিরাপরাদ ইহুদি(এদেরকে এরা মানুষ মনে করে না)মারার পরও হিটলার নায়ক হতে পারে তাদের কাছে মানবতা আশা করা লজ্জা জনক এবং বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।

তাই ফিলিস্তিনে হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশে যে ক্ষোভ ঝরছে তার বেশিভাগ-ই নিরপেক্ষ মানবতাবোধ থেকে নয়, ধর্মান্ধবোধ কিংবা অন্ধ ধর্মপ্রেম থেকে। ধর্ম সকল মানুষের মাঝে সম্প্রীতি আর সকলের জন্যে সমান মানবতাবোধ শেখায় না, শেখায় নিজ গোষ্ঠি আর সম্প্রদায়ের প্রতি একনিষ্ঠতা আর তার আধিপত্য বিস্তারের জন্যে কাজ করা।

মাসুদ সজীব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।