পানির অপর নাম যদি জীবন হয় তাহলে জীবনে বেঁচে থাকার অপর নাম হবে ঔষুধ। ঔষুধ এর প্রয়োজনীতা কিংবা এর গুরুত্ব কতটুুকু তা নতুন করে বলার কিছু নেই। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্যে ঔষুধের কাছে অসংখবার মানুষের সাহয্য নিতে হয়। আর একটা নিদিষ্ট বয়সের পর তো সেটা নিত্যদিনের সঙ্গী হয়। কিন্তু জীবনরক্ষাকারী এই ঔষুধ ও মৃতুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় যখন সেটি ভেজাল কিংবা মানহীন হয়। আমাদের বঙ্গদেশে প্রায় শোনা যায় ঔষুধে কারণে রোগীর মৃত্যু। অন্য সব বড় ঘটনার মতোই অল্প কিছুদিনের মাঝেই সেই ঘটনা হারিয়ে যায় অতলে। তাই মোটামুটি সবার চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত উৎপাদিত হচ্ছে মানহীন ভেজাল ঔষুধ। সেই মানহীন ভেজাল অ্যালোপ্যাথিক ঔষুধ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এই লেখা।
বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় শিল্পখাতের মাঝে ঔষুধ শিল্প অন্যতম। বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশে বাংলাদেশ ঔষুধ রপ্তানি করে। ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় সরকারী অনুমতি প্রাপ্ত ২৬৫ টির মতো ঔষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রয়েছে। প্রতি বছর-ই বাড়ছে সেই সংখ্যা। ঔষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্য যেকোন উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। মানুষের শরীরের ভেতর/রক্তের ভেতর ঔষুধ সরাসরি যায় বলেই অন্য যেকোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এখানে উৎপাদিত পণ্যের সর্বোচ্চ পরিমান মান এবং সঠিক উৎপাদন পরিবেশ বজায় রাখতে হয়। সেই মান বলতে আসলে কি বুঝায়, একটি ঔষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হলে কি কি বিষয় মেনে চলতে হয় এবং উৎপাদন পর্যায়ে কিভাবে মান রক্ষা করতে হয় তার নিদিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। ঔষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্যে কয়েকটি সংস্থা আছে যাদের প্রণীত নীতিমালা কে মেনে চললেই সেটি মানসম্মত বলে বিবেচিত হয় এবং তখনি একটি প্রতিষ্ঠান ঔষুধ উৎপাদনের সরকারী অনুমতি পায়। এদের মাঝে BP (british pharmacopoeia), USP (united states pharmacopeia), who guidelines for pharmaceuticals সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। একটা ফার্মাসিউটিক্যালসে কি কি থাকবে আর কি থাকতে পারবে না তার সব কিছুই এখানে উল্লেখ থাকে। এগুলো গাইড লাইন হিসেবে কাজ করে। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান সেই নিয়মাবলী মেনে চলবে না তাদের উৎপাদিত ঔষুধ মানহীন হবে সেটাই স্বাভাবিক। মানের সাথে জড়িত কিছু মূল বিষয় এখানে উল্লেখ করলাম।
১। সঠিক নকশায় স্থাপিত ভবন
২। শ্রেণী অনুযায়ী উৎপাদন পরিবেশ
৩। সঠিক প্রত্যয়নপত্র এবং পরীক্ষিত যন্ত্রপাতি
৪। দক্ষ জনবল
৫। উৎপাদন মান রক্ষার জন্যে গাইড লাইনের নীতামালা অনুসরণ
৬। সঠিক দলিল উপস্থাপন
৭। উৎপাদন প্রক্রিয়া বৈধকরণ
৮। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রত্যয়নপত্র
৯। Effluent Treatment Plant স্থাপন
১০। অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা
১১। GMP (Good Manufacturing practice) মেনে চলছে কিনা।
সবগুলো পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা না করে যেগুলো বেশি আলোচনার দাবি রাখে নিচে সেগুলোর কিছু আলোচনা করলাম:
সঠিক নকশায় স্থাপিত ভবন : ফার্মাসিউটিক্যালসের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ হলো তার ভবন কৌশল। অন্য যে কোন উৎপদান প্রতিষ্ঠান থেকে এটি আলাদা হতে হয় সব দিক দিয়ে। যেমন উৎপাদন এলকার প্রবেশ মুখ কেমন হবে, সেখানে কি কি থাকবে, বহিরাগমন পথ কেমন হবে, প্রতিটি কক্ষের সাথে অন্য কক্ষের সংযোগ কিভাবে স্থাপিত হবে সেগুলো যথাযথ নিয়ম মেনে করতে হয়। যদি শুধু ট্যাবলেট-ক্যাপসুল উৎপাদনে একটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হয় তাহলেও তাকে কয়েকটি ধাপে পোশাক পরিবর্তন করে, উৎপাদন এলাকায় নিদিষ্ট পোশাক পরে প্রবেশ করতে হয়। এ জন্যে প্রবেশ পথে কয়েকটি চেঞ্জ(পরিবর্তন রুম) থাকতে হবে। সেখানে প্রবেশের জন্যে নিদিষ্ট পোশাক, জুতা, হেড, মাস্ক থাকবে। নকশা এমন হতে হবে যেন সরাসরি ফর্মুলেশান রুমে প্রবেশ না ঘটে, সেখানেও কয়েকটি পরিবর্তন কক্ষ পেরিয়ে আসতে হবে। এভাবে কাঁচামালের কক্ষ থেকে ফর্মুলেশান হয়ে উৎপাদন এবং উৎপাদিত ঔষুধ প্যাকেজিং পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে সঠিক পরিকল্পনার স্থাপনা নির্মান করতে হয়।
শ্রেণী অনুযায়ী উৎপাদন পরিবেশ: স্থাপনার পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার ভেতরের পরিবেশ। পরিবেশ বলতে তাপমাত্রা-আদ্রতা-প্রতিটি কক্ষে বাতাসের চাপ এবং বাতাসে বস্তুকণা এবং অনুজীবরে অবস্থান বুঝায়। যখন একটি উৎপাদন কেন্দ্রের পরিবেশ তথা এই নিয়ামকগুলোর মান নিদিষ্ট সীমার ভেতরে থাকবে তখনি প্রতিষ্ঠানটি ঔষুধ উৎপাদনে যেতে পারবে। ঔষুধকে সাধারণ ভাবে দুভাগে ভাগ করা হয়, কঠিন (solid) এবং তরল (injection)। এ দুধরনের ঔষুধ উৎপাদনের পরিবেশও আলাদা হয়। দুটো কখনো একই কক্ষে কিংবা একই এলাকায় উৎপাদন করা যায় না। ফার্মাসিউটিক্যালসে ঔষুধ উৎপাদনের জন্যে তাপমাত্রা হতে হবে ২০-২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, আদ্রতা হবে ৪০-৬০% এবং বাতাসের চাপ হবে বিপরীতমুখি। আর এ তিনটি নিয়ন্ত্রন করে hvac system (heating ventilation and air conditioning system)। এই তিনধরনের মান মেনে চলা যে কোন প্রকার ঔষুধ তৈরীর স্থানের প্রধান শর্ত। কিন্তু বাতাসে বস্তুকণা আর অনুজীবের উপস্থিতি ট্যাবলেট আর ইনজেকশান উৎপাদনের ক্ষেত্রে হয় সম্পূর্ণ আলাদ। এ দুটোর উপর ভিত্তি করে পরিবেশকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো A, B, C, D। A=১০০, B=১০০০, C=১০,০০০, D=১,০০০০০ , ০.৫ মাইক্রন কিংবা তারচেয়ে ছোটবস্তুকণা থাকতে পারবে। আর অনুজীব(bacteria and fungi) থাকতে পারবে যথাক্রমে ১, ৫, ১০ এবং ১০০টির সমান কিংবা তারচেয়ে কম। তবে ৪ ধরনের রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া কিংবা তাদের প্রজাতি কোনভাবেই থাকতে পারবে না একটি ঔষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে। এই চারটি হলো Escherichia coli, salmonella spp, pseudomonas aeruginosa, staphylococcus aureus। কঠিন তথা ট্যাবলেট উৎপাদনের পরিবেশ হবে D শ্রেণীর। এবং তরল তথা ইনজাকশনের জন্যে পরিবেশ হবে A। আর যেহেতু পরিবেশের সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে hvac system। তাই প্রথমেই hvac system এর validation (বৈধ করণ) করে নিতে হয়।
[b] সঠিক প্রত্যয়নপত্র এবং পরীক্ষিত যন্ত্রপাতি: একটি ফার্মাসিউটিক্যালস এর সাথে অন্য যে কোন উৎপাদমুখী প্রতিষ্ঠানের পার্থক্য হলো তার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ধরনে। যেমন অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানে আপনি একটি যন্ত্র ক্রয় করে সেটা সরাসরি চালু করতে পারবেন। কিন্তু ঔষুধ প্রতিষ্ঠানে তা সম্ভব নয়। এখানে যে কোন যন্ত্রপাতিকে তিনটি ধাপ পেরিয়ে আসতে হয় ব্যবহার আগে এবং সেগুলোর তথ্য উপস্থাপন করতে হয়। ধারাবাহিক কর্মগুলো হলো IQ (installation qualification), OQ ( operational qualification )and PQ (performance qualification)। এছাড়া যন্ত্রের ধরন অনুযায়ী প্রতিদিন, সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক সময়ের ব্যবধানে calibration (ক্রমাঙ্ক) করে নিতে হয়। এবং বছর একবার অন্তত validation করতে হয়। calibration এবং validation, GMPর অন্যতম প্রধান শর্ত।এছাড়া প্রতিটি যন্ত্রের উৎপাদন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যায়নপত্র থাকতে হবে। এ জন্যে একটি ঔষুধ প্রতিষ্ঠানে সব যন্ত্রপাতির একটি তালিকা থাকতে হবে এবং সব যন্ত্রের ক্ষেত্রে সব ধরনের দলিল থাকতে হবে।
দক্ষ জনবল : একটি ঔষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি বিভাগে দক্ষ জনবল থাকতে হবে। এবং উৎপাদন থেকে মান নিয়ন্ত্রন পর্যন্ত অবশ্যই কয়েকটি আলাদা আলাদ বিভাগ থাকতে হবে। এগুলো হলো PD (Product development), Production, QC (Quality control), QA (Quality Assurance), Microbiology, Wearhouse (Ram materials +Finished product) বিভাগ। কঠিন কিংবা তরল যাই উৎপাদন করুন না কেন প্রতিটি বিভাগ থাকতে হবে এবং সেই বিভাগে দক্ষ জনবল লাগবে। দক্ষতা প্রমাণে শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিভিন্ন প্রশিক্ষনের কাগজপত্র এবং অভিজ্ঞতা প্রদর্শন করতে হয়।
Effluent Treatment Plant : এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিশেষ করে বাহিরের পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে প্রতিটি উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানে Effluent Treatment Plant থাকতে হয়। আর সেটি যদি হয় ঔষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তখন সেটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নানান ধরনের রাসায়নিক ক্ষতিকর পদার্থ এখানে ব্যবহার করা হয়। সেই ক্ষতিকর পদার্থ কিংবা ওষুধ মিশ্রিত পানি নিরপেক্ষ করে তারপর সেটি পরিবেশে উন্মু্ক্ত করা হয় যাতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে।
GMP (Good Manufacturing practice): GMP মেনে চলা হলো একটি ঔষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান শর্ত। GMPর পরিধি আসলে ব্যাপক, একেবারে কাঁচামাল থেকে শুরু করে উৎপাদনের শেষ ধাপ এবং তা সংরক্ষন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, দূষণরোধ সহ প্রতিটি কাজের সঠিক দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন বুঝায়।
মূলত এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ঔষধ প্রশাসন (ড্রাগ) নতুন প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়ে থাকে। এগুলোর একটি ও যদি ঠিক মতো মেনে না চলা হয় তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান ঔষুধ উৎপাদনের অনুমতি পেতে পারে না। নতুন কোন প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি পেতে হলে এই শর্তগুলো সঠিকভাবে পূরণ করার সাথে সাথে আরো কিছু কাজ করতে হয়। যেমন যেসব ঔষুধ তারা উৎপাদন করতে চাইছে তার তালিকা, ফর্মুলেশান( উৎপাদনের প্রণালী), পরিবেশের মান প্রমাণ স্বরূপ পরীক্ষার ফলাফল, সকল যন্ত্রের যোগ্যতার সার্টিফিকেট, IQ, OQ and PQ দলিল বা প্রমাণ , মাষ্টার প্ল্যান, যে পানি ব্যবহার করা হবে বুয়েট দ্বারা পরীক্ষলব্ধ মান এবং নিজস্ব ল্যাবে টানা ছয় মাস থেকে ১ বছরের পানি পরীক্ষার ক্যামিক্যাল এবং মাইক্রোবায়োলজিক্যাল মান উপস্থাপন প্রভৃতি। ড্রাগের অনুমতি পাওয়ার আগেই পরীক্ষামূলক ভাবে ঔষুধ উৎপাদন করে সেগুলো নিদিষ্ট তাপমাত্রা এবং আদ্রতার যন্ত্রে (stability chamber) ছয় মাস রাখতে হয়। ঔষুধ যখন বানানো হয় তখন সেগুলো মান নির্ণয়ের সকল পরীক্ষা করতে হয় এবং ঠিক ছয় মাস পরও সেই একি ঔষুধের একি মান নির্ণয় পরীক্ষাগুলো করতে হয়। দুই ক্ষেত্রেই ঔষুধের কার্যকারিতা একই থাকলে সেই ঔষুধ বাজারে যাওযার অনুমতি পায়। ঔষুধের জীবনকাল নির্ধারণ করা হয় এখানেই। মূলত দুটি ভিন্ন পরিবেশে ঔষুধ সংরক্ষন করা হয়। ৩০ ডিগ্রী তাপমাত্রা এবং ৬০% আদ্রতায় যদি কোন ঔষুধ তার কার্যকরিতা মান বজায় রাখতে পারে তাহলে সে ঔষুধের মেয়াদ হয় দুই বছর এবং ৪০ ডিগ্রী তাপমাত্রা এবং ৭০% আদ্রতায় যদি কোন ঔষুধ তার কার্যকরিতার মান বজায় রাখতে পারে তাহলে সে ঔষুধের মেয়াদ হয় তিন বছর। এই ছয়মাসের stability chamberর প্রতিদিনের তথ্য, ঔষুধের কার্যকরিতা প্রমাণের পরীক্ষার মান উপস্থাপন করতে হয় ড্রাগ অ্যাডমিনিষ্ট্রেশনের কাছে।
এখন কোন প্রতিষ্ঠান এগুলো সঠিক ভাবে মানছে কিনা সেটা এ বিষয়ের পড়ালেখা ছাড়া বাহিরের অন্য বিষয়ে যত বিদ্বান হোক তার বুঝার কথা না। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য বাংলাদেশে এই বিষয়ের বাইরের(ফার্মাসির ছাত্র/ছাত্রী নয়) লোক-ই এগুলো যাচাই করে। নতুন ফার্মাসিউটিক্যালস ভিজিটিং নূন্যতম তিন সদসস্যের হতে হয়। তাঁরা হলেন সেনাবাহিনীর ডিজি, ড্রাগের একজন পরিচালক এবং উক্ত এলাকার ড্রাগের প্রতিনিধি প্রধান। এ তিনজনের রিপোর্টের ভিত্তিতেই একটি নতুট প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পেয়ে থাকে। আর এখানেই প্রথম অনিয়ম আর দুর্নীতি টা হয়ে থাকে। প্রথম কারণ হলো সেনাবাহিনীর কোন অফিসার ফার্মাসিউটিক্যালসের/ওষুধের খুঁটিনাটি বিষয়ে জ্ঞান রাখে না, রাখা সম্ভব না। তাকে খুশি করাতে হয় অর্থ আর মুখের চাপা দিয়ে। বিশ্ব বেহায়া এরশাদ তার শাসন আমলে ড্রাগের কার্যকর্মের সাথে সেনাবাহিনীকে কোন প্রকার যুক্তি ছাড়া সংযুক্ত করে। এরপর অনেক গনতান্ত্রিক সরকার এসেছে কিন্তু এ ব্যবস্থার পরিবর্তন করেনি। আর এভাবেই ফাঁকি দিয়ে দিন দিন বাড়ছে নতুন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। বাকী যে দুজন ড্রাগের তাদের পড়ালেখা এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত হলেও নতুন একটা প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিতে এরা অনেক মোটা অংকের একটা টাকা ঘুষ নেয়। দুটো নতুন প্রতিষ্ঠানে চাকরির করে লাইসেন্স পাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে এমনটাই দেখেছি। এছাড়া প্রতিবছর একবার ড্রাগ অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন ফ্যাক্টরী পর্যবেক্ষনে আসার নিয়ম, সব কিছু ঠিক মতো হচ্ছে কিনা তা দেখে রিপোর্ট দেয়। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য বেশিভাগ ক্ষেত্রে তারা উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই ঢুকে না, অভ্যর্থনালয়ে এসে সেইরাম একটা খাওয়া দিয়ে তাদের জন্যে বরাদ্দ অর্থটুকু নিয়ে যায় এবং সব কিছু ঠিক চলছে বলে সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়। এভাবেই চলছে।
নতুন প্রতিষ্ঠান অনুমতি দেওয়ার সময় কর্মকর্তাদের যে বিষয়গুলো সর্বাদিক গুরুত্ব দেওয়ার কথা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এগুলো অনেক জায়গায় মানা না হলেও তারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সেগুলোর অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে। ফলে ঔষুধের মানকে নষ্ট করার প্রাথিমিক দরজাটা খুলে দেওয়া হয়, অনিয়মের মাঝে যার জন্ম আর বেড়ে উঠা সে কি আর নিয়ম মানে কখনো? আমি অনেক প্রতিষ্ঠান দেখেছি যাদের Effluent Treatment Plant নেই, কিংবা থাকলেও সেটি ব্যবহার না করে বর্জ সরাসরি পরিবেশে ছেড়ে দিচ্ছে। আবার ঔষুধ উৎপাদন করে stability chamber এ ছয় মাস না রেখেই সেই ঔষুধের জীবনকাল নির্ধারণ করে বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে। আর মিথ্যে কাগজ তৈরী করছে। আরো নানান জায়গায় ঔষুধের মানের সাথে আপোষ করা হচ্ছে কিংবা অসৎ পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। একটা বড় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাধীন অবস্থায় দেখেছি একেবারে নতুন একটি ঔষুধ stability chamber এ না রেখে, সঠিক উপায়ে জীবনায়ু নির্ধারণ না করেই মনগড়া দুই বছরের আয়ু নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর ড্রাগের কর্মকর্তারা যখন সেটা জানতে পারলো চলে আসলো প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিতে এবং যথারীতি পকেটপুরে তারপর বাড়ীর পথে রওয়ানা দিলো অথচ এমন অনিয়মে তারা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে দিতে পারতো! একটি ঔষুধ প্রতিষ্ঠানে কোন বিভাগের কি কাজ সেটা নিয়ে একটু সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি। তাহলে বুঝতে সহজ হবে কোথায় কোথায় সমস্যা হয় এবং কারা এর সাথে জড়িত।
PD (Product development) : PD হলো একটি ঔষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনের মূল বিভাগ। এরাই নতুন ঔষুধের ফর্মুলেশান (সূত্রবদ্ধকরণ) করে এবং সেটির প্রয়োগ ঘটায়। এটি অনেকটা টমি মিয়া বাবুর্চির মতো। কি কি উপাদান কোন কোন মাত্রায় দিলে ঔষুধ তার সঠিক মান ও গুণ বজায় রাখবে সেটির গোপন রহস্য আবিষ্কার করা এদের কাজ। উৎপাদন খরচ ও সময় কমিয়ে শ্রেষ্ঠ মানের ও গুণের ঔষুধ উৎপাদনের পথ সুগম করােই মূল কাজ এই বিভাগের। এটি ফার্মার্সি বিষয়ে পড়াশোনা করা ভাইবোনদের বিভাগ।
Production : এই বিভাগকে PDর ছোট ভাই বলা যায়। অর্থাৎ ওদের দেখানো নিয়ম মতোই সঠিক উপায়ে মান ও গুন বজায় রেখে ধারাবাহিকভাবে সেই ঔষুধ উৎপাদন করে যাওয়া এদের মূল কাজ। ফার্মাসি থেকে পাশ করা ভাইবোনদের দখলে এটিও।
QC (Quality control) : নাম দিয়েই বুঝার কথা একটি ঔষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে ঔষুধের মান যাচাইয়ের মূল দায়িত্ব ইহাদের। মূলত তিনটি ধাপে এই বিভাগ মান যাচাই করে থাকে। আসুন দেখি এরা একটা ওষুধের কি কি পরীক্ষা করে। উৎপাদিত ওষুধটি যদি কঠিন (ট্যাবলেট, ক্যাপসুল) হয় তাহলে সেখানে তার pH, hardness (কঠিনতার মাত্রা), thickness(পুরুত্ব), DT (দ্রবীভূত হওয়ার সময়) solubility (দ্রবণীয়তা), রাসায়নিক পদার্থ যেমন ক্লোরিন, কার্বাইড প্রভৃতির উপস্থিতি এবং পটেন্সি (কার্যকারিতা) পূর্ব নির্ধারিত মানের সাথে সামঞ্জস্য থাকতে হবে অর্থাৎ আদর্শ মানের ভেতরে থাকতে হবে। সবগুলো ধাপ-ই অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ঔষুধের গঠন বেশি শক্ত হলে সেটি দ্রবীভূত হতে সময় নিবে বেশি, ফলে সেই ওষুধ নির্ধারিত সময়ের মধে কাজ নাও করতে পারে। তবে এইসব পরীক্ষার মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এর পটেন্সী বা কার্যকরিতা পরীক্ষা। ধরা যাক একটি ঔষুধের কার্যকারিতার মান ৯৮-১০১%। এখন পরীক্ষালব্ধ ঔষুধের কা্র্যকারিতার মানও ঠিক এর ভেতর থাকতে হবে। বেশি কিংবা কম হতে পারবে না। বেশি বা কম হলেই সেটি মানহীন হয়ে যাবে। আর এটাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। মান নিয়ন্ত্রনের মূল কাজটি এদের বলে এদের সাথে Production এর সম্পর্কটা ঠিক বাঘে-মহিষের। কারণ Production চাইবে একটু এদিক সেদিক হলেও ঔষুধটিকে যেন চালিয়ে নেয় এরা। কিন্তু বিনা লাভে QC তাহা করতে চায়না বলেই জন্ম থেকেই এদের সাথে দ্বন্দ লেগেই আছে। দ্বন্দ যত বেশি ঔষুধের মান তত ভালো। রসায়ন থেকে পাশ করা ছেলেমেয়েরা এই বিভাগে প্রধাণত কাজ করে।
Microbiology : ইনাদের প্রথম কাজ হলো পরিবেশের শ্রেণী অনুযায়ী মান পরীক্ষা করা অর্থাৎ যে জায়গায় ঔষুধের উৎপাদিত হবে সেই জায়গার গ্রেড হিসাবে সবগুলো নিয়ামক ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে ফলাফল দেওয়া। তাহার পর যে পানি দিয়ে ঔষুধ উৎপাদন হবে সেই পানিতে অনুজীবের সংখ্যা নির্ধারিত মানের মাঝে আছে কিনা তাহা পরীক্ষা করা। কাঁচামাল আর উৎপাদিত ওষুধ দুটির মাঝে কোন ক্ষতিকারণ অনুজীব নেই সেটি নিশ্চিত করা। (ইনজেকটেবল কোন ঔষুধে কোন প্রকার অনুজীব নেই সেটি নিশ্চিত করা) ক্ষেত্রবিশেষে(যেমন: এন্টিবায়োটিকের) কার্যকারিতাও পরীক্ষা করা।
QA (Quality Assurance : ইহারা ঔষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করা সকল বিভাগের বড় ভাই। এই বিভাগের প্রধানের উপর শুধু প্ল্যান্ট ইন চার্জ একজন থাকে। সকলের কাজ তদারকি করা এবং সকল প্রকার সহযোগিতা করা ইহাদের কাজ। মূলত একটি ঔষুধের উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে মান নিয়ন্ত্রনের সকল দালিলিক প্রমাণ একসাথে করা সেটিকে সংরক্ষন করা মূল কাজ এই বিভাগের। QC এবং Microbiology বিভাগ এই বিভাগের অধীনস্থ। এটিও ফার্মাসির ভাইবোনদের দখলে থাকা বিভাগ, তবে মাঝে মধ্যে রসায়ন কিংবা অনুজীব বিজ্ঞানের অভিজ্ঞ সৌভাগ্যবান কেউ কেউ এখানে কাজ করার সুযোগ পায়।
Wearhouse : কাঁচামাল এবং সম্পূর্ণ প্রস্তুতকৃত ওষুধ রাখার জন্যে দুটি ভিন্ন ভিন্ন Wearhouse থাকে। সেখানে সঠিক তাপমাত্রা এবং আদ্রতায় নিয়ম মেনে সেগুলো সংরক্ষিত করাই মূল কাজ। এটি স্বাধীন বিভাগ, যে কোন বিষয়ের মানুষ এখানে কাজ করতে পারে, তবে বিজ্ঞান বিভাগ হলে সেটি অতীব উপকারী।
Engineering : সকল প্রকার প্রযুক্তিগত সহায়তা করা এই বিভাগের কাজ। এই বিভাগ ঔষুধের মান নিয়ন্ত্রন কিংবা পরীক্ষার সাথে সরাসরি সংযুক্ত নয়। তবে বিভন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত পরিবেশকে নিয়ন্ত্রনে এদের ভূমিকা বেশি, কারণ hvac system কাজ সঠিক উপায়ে পরিচালনা করার পুরো দায়িত্বটি তাদের।
এখন আসি মানহীন ওষুধ আর ভেজাল ওষুধ নিয়ে আলোচনায়। যেখানে আসার জন্যে এত লম্বা পরিচিতি পর্ব রচনা করলাম। মানহীন বলতে বুঝায় মান নিয়ন্ত্রনের নির্দিষ্ট পরীক্ষাগুলোর যে কোন একটি পরীক্ষার মান আদর্শ মান থেকে দূরে থাকা। আর ভেজাল বলতে বুঝায় একটির মাঝে আরেকটি অনুপ্রবেশ, কিংবা যা যা উপাদান দরকার তার ঘাটতি থাকা। মানুষের সু-স্বাস্থের জন্যে কোনটি গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষ টাকা দিয়ে মানহীন ঔষুধ ক্রয় করে কোন উপকার পাবে না এটি যেমন প্রতারণা আবার ভেজাল ওষুধের নামে বিষ খাওয়ানোও প্রতারণা এবং দুটোই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মূলত একটি ঔষুধের মান তিনটি ধাপে পরিক্ষীত হয়ে আসে কিংবা আসার কথা। সেগুলো হলো:
১। কাঁচামালের মান নির্নয়
২। সেমি বাল্ক কিংবা উৎপাদনের মধ্য অবস্থায়
৩। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেসে পরিপূর্ণ ঔষুধ রূপে
প্রথম ধাপে পাশ না করলে দ্বিতীয় ধাপে যেতে পারে না, দ্বিতীয় ধাপে পাশ না করলে তৃতীয় ধাপে যেতে পারে না আর তৃতীয় ধাপে পাশ না করলে সে ঔষুধ বাজারে যেতে পারে না।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ভেজাল ঔষুধ কখনো তৈরি করে না কিংবা করতে চায় না। তবে মানহীন ঔষুধ তৈরী করে। মানহীন ঔষুধ উৎপাদনের পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। সস্তা কাঁচামাল, উৎপাদন এলাকার পরিবেশ দূষণ, অদক্ষ উৎপাদণ ব্যবস্থাপনা সহ মান নিয়ন্ত্রনের তিনটি ধাপের যে কোন একটিতে ছাড় দেওয়া। এতো গেল বড় প্রতিষ্ঠানের কথা আর ছোটরা অর্থাৎ যদি ২০-২৫টি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে বাকী সবাই মানহীন ঔষুধ উৎপাদনে মোটামুটি প্রতিযোগিতা দিয়ে থাকে। অর্থাৎ যদি % হিসেবে আসে তাহলে ৮০% এর উপরে প্রতিষ্ঠান মানহীন ঔষুধ উৎপাদন করে। আর এই ৮০% বেশিভাগ ছোট প্রতিষ্ঠান যাদের জন্মটাই অনিয়মকে সাথী করে। নিদিষ্ট মানের উপযুক্ত ঔষুধ উৎপাদনের জন্যে সেইসব প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা এবং দক্ষ জনবল নেই। আর এই মানহীন কিংবা ভেজাল ঔষুধ উৎপাদনের দোষটা উক্ত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ঔষুধের নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থার (ড্রাগ) উপর বর্তায় যারা শুধু টাকার জন্যে এদেরকে লাইসেন্স দিয়েছে। এরা বাজারে চলমান ঔষুধগুলো তাদের ল্যাবে যত্ন সহকারে পরীক্ষা করে না।
ধরা যাক একটি বড় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত একটি ঔষুধ মান পরীক্ষায় ব্যর্থ হলো। ব্যর্থ হলে কি করা উচিত? উচিত হলো সেই ঔষুধ বাজারে না ছেড়ে ধ্বংস করা। এবং ঠিক কি কারনে সেটি ব্যর্থ হয়েছে তা অনুসন্ধান করে বের করা এবং পরবর্তিতে সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠা। কিন্তু আমাদের এখানে খুব ব্যাতিক্রম ছাড়া কখনো সেটি ধ্বংস করা হয় না, আর অনুসন্ধান তো হাজার বছর দূরের কথা। ব্যর্থ ঔষুধ ধ্বংসে বড় অংকের আর্থিক ক্ষতি সাধন হয়। লোভী ব্যবসায়ী মালিকেরা সেটা চায় না। তাই যদি সেটি ট্যাবলেট কিংবা ক্যাপসুল হয় তাহলে মিথ্যে কাগজপত্রে মান ঠিক করে দিয়ে ওরা চালিয়ে দেয়। কিন্তু সেটি যদি ইনজেকশন হয় এবং তাতে যদি কোন অনুজীবের উপস্থিতি থাকে তাহলে এত সহজে বাজারে ছাড়ে না। কারণ ইনজেকশন সরাসরি রক্তে চলে আসে এবং অনুজীবের উপস্থিতি মারাত্নক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে মৃত্যু ডেকে নিয়ে আসতে পারে। তাই অনুজীবের উপস্থিতি থাকলে লোভী বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সেটিকে sterilize (নিস্ফলা) করে তারপর বাজারে ছাড়ে। এ ধরনের ঔষুধ কোন উপকার যেমন করে না তেমনি ক্ষতিও করে না। কারণ উচ্চতাপমাত্রা ও চাপে নিদিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এর সকল প্রকার গুণাগুণকে নষ্ট করে দেওয়া হয়। অপরদিকে যাদের এতসব মান পরীক্ষা করার দক্ষ লোকবল নেই, সুযোগ সুবিধা নেই তারা কিছু না করেই সেটি বাজারে ছেড়ে দেয় আর ফলাফল স্বরুপ সেই ঔষুধ সেবনকারীর মৃত্যু।
তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে বাংলাদেশের ঔষুধ যদি এত মানহীন হয় তাহলে সেটি কি করে বিশ্বের ৯০ টি দেশে যায় এবং সেই তালিকায় ইউরোপ, আমেরিকাও আছে? এখানেই আসলে বাঙালির বুদ্ধির (অপকৌশল) বাহদুরি! উন্নত দেশে কখনো মানহীন ঔষুধ যায় না, যেতে পারে না। তাহলে কি করে রাতারাতি মানহীন ঔষুধ সঠিক মানের হয়ে যায়? উত্তরটা একটু বিশদ আকারে দেই, উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে ঔষুধ নেওয়ার আগে নিদিষ্ট প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে আসে। সেই পরিদর্শনের তাহারা অসংখ্য ভুল ধরে এবং অসংখ্য শর্ত দিয়ে একটা নিদিষ্ট সময় দেয়। সেই নিদিষ্ট সময় ফুরালে তাহারা আবার পরিদর্শনে আসে, দেখে তাহাদের শর্ত পূরণ করা হয়েছে কিনা। পূরণ হলেই তাহারা ঔষুধ নিয়ে যায়। সেই শর্তের মাঝে যা থাকে তার মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো নতুন ভবন সহ সব কিছু নতুন ভাবে করে তাদের শর্ত (GMP) মানা। বিস্ময়কর হলেও সত্যি প্রতিষ্ঠানগুলো তাই করে। যেমন একমি-স্কয়ার-রেনেটা গত ৫-৭ বছরে শুধু বিদেশে ঔষুধ রপ্তানি করার জন্যে নতুন প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। এবং দু:খজনক হলেও সত্য সেখানে বাংলাদেশের মানুষের জন্যে ঔষুধ উৎপাদিত হয় না। প্রাথমিক অবস্থায় ঔষুধের মান নির্ভর করে কাঁচামালের উপর। চায়না কিংবা ভারতীয় কাঁচামাল আর ইটালী-জার্মানীর কাঁচামালের ওষুধ কখনো একি মানের হবে না। তাই বিদেশে যে ঔষুধ যায় সেটির কাঁচামাল হয়ে থাকে ইউরোপের। সব শর্ত পূরণ করার পর তাহারা নমুনা ঔষুধ নিয়ে যায়, তাহাদের ল্যাবে পরীক্ষা করে পাশ করলেই তারপর সেই ঔষুধের রপ্তানিযোগ্য হয়। শুধু ইউরোপ নয় মালেশিয়া, ফিলিপাইন, থ্যাইল্যান্ড, সহ মধ্যম সারির দেশগুলোও ঔষুধ নেওয়ার আগে ওরাও মান পরীক্ষা করে নেয়। অথচ সেই একি প্রতিষ্ঠান যখন বাংলাদেশের জন্যে ঔষুধ উৎপাদন করছে তখন সস্তা কাঁচামাল আর মান নিয়ন্ত্রনের বেশ কয়েকটি ধাপকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছ্। পর মায়ের ঘরে দুটি শিশু যেমন দুরকম আদরে মানুষ হয়ে থাকে তেমনি বাংলাদেশে ঔষুধের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ও দু-ধরনের আচরণ করে থাকে। বাহির থেকে যাহা বুঝা সম্ভব নহে। ফলে যখন কেউ বলে বাংলাদেশের ঔষুধ বিশ্বমানের সেটি নিয়ে তর্ক করার কিছু নেই, তবে মোবাইল প্রতিষ্ঠানগুলো মতো ছোট্র করে শর্ত উল্লেখ করে দিতে হবে যখন বাংলাদেশের ঔষুধ শুধু বাহিরে যায় তখন সেটি বিশ্বমানের আর দেশীয় বাজারে সেটি নিম্নমানের।
এবার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। প্রায় ছয় বছরের চাকরি জীবনে দুটি একেবারে নতুন এবং দুটি দেশ সেরা ঔষুধ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ হয়েছে। এছড়া বন্ধু-বান্ধবের কর্মক্ষেত্র হিসেবে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখার সামর্থ্য হয়েছে। অভিজ্ঞতা সবখানেই মোটামুটি একিরকম। নতুন উৎপাদিত কোন কঠিন ঔষুধ মানে ব্যর্থ হলেও সেটি বাজারে চলে যায় আর ইনজেকশান হলে সেটি sterilize করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এটি ছাড়াও ভয়ংকর হলো ঔষুধের মেয়াদ শেষ অথচ বিক্রি হয়নি তখন সেটিও মান পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে sterilize করে মেয়াদ বাড়িয়ে চালিয়ে দেওয়া। এরচেয়ে জঘন্য কাজ হতে পারে না, কিন্তু এটি অহরহ হচ্ছে। দেশ সেরা এক ক্যান্সারের ঔষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করাকালীন সময় এমন অভিজ্ঞতার হয়েছিলো। প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্বে থাকা মানুষটিকে বললাম স্যার এটিতো ঠিক না। স্যার আমাকে জবাব দিয়েছিলো মাসুদ সাহেব, ক্যান্সার রোগী আজকে না হয় কালকে এমনিতে মারা যাবে আর এ ঔষুধ উপকার না করলেও ক্ষতি তো করবে না, তাই এটি আমারা ছাড়তে পারি এবং ছাড়তে বাধ্য। উপর থেকে সেই নির্দেশ আছে। উপরের যত নির্দেশি থাকুক উনি চাইলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সেটি বাতিল করতে পারতেন। করেননি, ফলাফল ছয়মাসের মাঝে উনি আরো একটি পদোন্নতি পেলেন। শুনেছি দিনে দিনে তাঁর পদোন্নতি বেড়েই চলেছে। এভাবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে সব প্রতিষ্ঠানে এমন লোকদের সাফল্য রচিত হচ্ছে। তাহলে কি আশার কিছু নেই, ভালো কেউ নেই? আশার কথা হলো পেয়েছিলাম দু-একজন মানুষকে। তাদের মাঝে একজন (মান নিয়ন্ত্রন বিভাগ QAর প্রধান) মানে ব্যর্থ ওষুধকে পাশ দেননি এবং ধ্বংস করেছেন। পুরষ্কার হিসেবে মাস দুয়েকের মাঝে উনাকে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রথম চাকরিতে আমিও তেমন প্রতিবাদ করেছিলাম বলে আমাকেও সেই প্রতিষ্ঠান ছাড়তে হয়েছে। যে দেশে সততার সাথে চাকরিতে টিকে থাকা যায় না সে দেশে চাকরি করে বেঁচে থাকা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। অথচ লোভী মালিকদের চাওয়া যতই থাকুক এই বিভাগে কাজ করা বড় বড় কর্মকর্তারা সততা আর নীতি আদর্শে অটল থাকলে এভাবে গণহারে মানহীন-ভেজাল ঔষুধ উৎপাদন করা সম্ভব হতো না মালিকদের পক্ষে।
মাসুদ সজীব
(ঔষুধ প্রতিষ্ঠানের সর্বত্র ইংরেজি ভাষার প্রয়োগ হয়ে থাকে। সময়ের অভাবে ইংরেজি শব্দগুলোর উপযুক্ত বাংলা ব্যবহার সর্বক্ষেত্রে করা হয়ে উঠেনি, আর লেখাটি সল্প সময়ে লেখা বলে কিছুটা অগোছালো মনে হতে পারে অনেকের, সে জন্যে লেখক ক্ষমাপ্রার্থী। আশা করি ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন এবং ঔষুধ খাওয়ার সময় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেছে নিবেন। সকলের মঙ্গল কামনা করছি।)
মন্তব্য
[ ]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ইটা আমার জন্যে না রাখিয়া তাহাদের অফিসের সামনে রাখিয়া আসেন, যাহারা চোখ বন্ধ করিয়া লাইসেন্স দিয়ে যাচ্ছে সবাই কে।
মাসুদ সজীব
আমরা উন্নত দেশে ওষুধ বেচি, এই একটা আত্মপ্রসাদ এতদিন অনুভব করতাম, অথচ তার মাঝে কত ফাঁক ছিল। একটা অজানা অথচ জরুরী বিষয় গোচরে আনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, তবে যে বিপদ এবং সমস্যা গুলো তুকে ধরেছেন, তার সমাধান কি করে হবে মাথায় আসছে না।
পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। চাইলে সমাধান আসলে খুব সহজ কিন্তু না চাইলে সেটি অসম্ভব। প্রশাসনের সব জায়গায় সততা আর জবাবদিহিতা থাকলে এই দূরাবস্থা কাটানো সম্ভব। কিন্তু সততা তো আমাদের দেশে দুর্লভ।
মাসুদ সজীব
পুরো লেখাটা পড়ে কেমন যেন অসহায় লাগছে। ঔষধ ক্ষেত্রের এত ভয়ঙ্কর অবস্থা জানা ছিল না। সব ক্ষেত্রে দূর্নীতি এমনভাবে ছড়িয়ে আছে যে চাইলেও হঠাৎ করে সব ঠিক করে ফেলা সম্ভব না। একসাথে দূর্নীতিবাজ সব ঔষধ কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব না। তাহলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। এই মুহূর্তেও যদি কোনও মিরাকেল ঘটে আর এই ক্ষেত্রের সব অনিয়ম দূর করা শুরু হয় তবুও সব কিছু লাইনে আনতে বহু বছর লেগে যাবে। আর সেরকম মিরাকেল ঘটারও কোনও সম্ভাবনা নেই!
--
ঘুমকুমার
মাসুদ সজীব
মাসুদ সজীব,
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই রকম একটা লেখার জন্য। ঔষধ উৎপাদনের দিক গুলো সম্পর্কে পাঠকরা অনেক কিছু জানতে পারবে আপনার লেখা থেকে। ঔষধ উৎপাদন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেক গুলো ধাপে হয়। এ ব্যাপারে লিখতে গেলে মোটা সোটা কোন বই হয়ে যাবে, তবে অল্প সময়ের ভেতর আপনি মোটামুটি সব গুলো দিক নিয়েই সংক্ষেেপে সহজ ভাষায় আলোচনা করেছেন। আমি ফারমাসিউটিক্যাল কম্পানিতে কাজ করি। আমি নিজে লিখতে গেলেও মনে হয়না আপনার মত সহজ করে লিখতে পারতাম।
যে দেশে সব কিছুইতেই দুর্নীতি সেখানে ঔষধ উৎপাদনের কঠিন নিয়ম মেনে তৈরী ঔষধ বাজার জাত করা হবে সেটা চিন্তা করা বোকামি। লোভ এবং লাভের আশা যেখানে আকাশ ছোঁয়া সেখানে গুটি কতক বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ কি ভাবল না ভাবল তাতে কি আসে যায়?
প্রশাসন থেকে শুরু করে একদম নিচের স্তর পর্যন্ত যত দিন পর্যন্ত না মানুষ সুশিক্ষার আলোকে আলোকিত হবে তত দিন পর্যন্ত এরকম চলতে থাকবে। কিন্তু সেই দিনের আশায় কি আমরা হাত পা গুটিয়ে বসে থাকব? আন্দোলন ছাড়া বাংলাদেশে যেহেতু কিছুই সম্ভব নয় সেহেতু এব্যাপারেও মনে হচ্ছে আমাদেরকে আন্দোলনে যেতে হবে।
কত তুচ্ছ ব্যাপারে রাস্তা ঘাট ছেয়ে যায় পোস্টার প্ল্যাকারডে। অমুক ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র এই স্লোগানে হাজার হাজার মানুষ মিছিল করে, কিন্তু বিষাক্ত ঔষধ খেয়ে ৭৬ শিশু মরে যায় এই নিয়ে কোন হই চই হয় না। একদম যে হই চই হয়না তাও না। হই চই হয় অল্প কয়েকদিনের জন্য। তারপর আগে যা ছিল তাই। অদল বদল নেই।
আসুন পোস্টার দিয়ে, মিছিল করে, মানুষের ঘরে ঘরে যেয়ে প্রচার করে দেইঃ আমরা ঔষধ খাই বাঁচব বলে, মরার জন্য নয়। আসুন কিছু করি।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা, সেই সচেতনতা সৃষ্টিতে আমার চেষ্টা থাকবে।
আপনিও এই লাইনের নাকি? কোন বিভাগে?
মাসুদ সজীব
কোয়ালিটি কন্ট্রল। আমি এনালিটিক্যাল কেমিস্ট। বাংলাদেশের কোন ঔষধ প্রতিষ্ঠানে অবশ্য কাজ করা হয়নি। বাংলাদেশের ঔষধ প্রতিষ্ঠান গুলোর ভেতরের খবর আপনি না বলে দিলে জানা হত না।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
হাচলত্বের অভিনন্দন!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ধন্যবাদ মরুদ্যান!
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
আমার এক বন্ধু ঔষুধ কোম্পানিতে চাকরি করে। আমাদের বাসায় বিদেশী বেশ কিছু ঔষুধ থাকে সর্বদাই,বড় ভাইদের কল্যানে। একবার এইরকম একটা ঔষুধের (নাম মনে করতে পারছিনা,তবে ভিটামিন আর জিংক ফিংক নাকি থাকে ঐটাতে,বাজারে ভালো চাহিদা) আস্ত একটা ডিব্বা দেখে সে আমার কাছে তা চেয়ে বসল। ১০০০টা ট্যাবলেটের কন্টেইনার ছিলো সেটি।মেয়াদ ছিলো ১ মাসের মতো। আমি অতশত না ভেবে তাকে সেটি দিয়ে দেই। কিছুদিন পরে এমনিতেই কথা প্রসংগে জানতে চাইলাম সেটি সে কি করেছে। বললো, ঢাকার এক লোকের কাছে বেচে দিয়েছে। আমি ত তব্দা। জিজ্ঞাস করলাম,মানে কি? এটি কি হবে এখন? সোজা উত্তর এগুলো এখন ছোট ছোট বাক্সে ১০০ পিসের ওষুধ হিসেবে বিক্রি হবে মিটফোর্ডে। বিদেশী ভিটামিন ট্যাবলেটের অনেক চাহিদা, আর ডাক্তাররা এগুলোকেই সাবস্ক্রাইব করে। আমি এরপর থেকে বিদেশী ঔষুধ দেশ থেকে কিনে খাওয়া বন্ধ করেছি। আপনি বললেন,
জামা-কাপড় হলে আমরা নিজেরা বেছে নিতে পারতাম।কিন্তু ঔষুধ ত ডাক্তাররা রিকেমেন্ড করবেন।সেইক্ষেত্রে বড়/ছোট প্রতিষ্ঠান আমরা কিভাবে বাছব? আর ঔষধের যেহেতু বিজ্ঞাপন হয়না তাই বড়/ছোট বা ভালো/খারাপ প্রতিষ্ঠান চেনাটাও ত সহজসাধ্য না। আপনার লেখায় শুধু ঔষুধ তৈরি নিয়ে প্রতারনার কথা বলেছেন কিন্তু সেই দুইনাম্বার ঔষুধগুলো আমাদের পেটে বা রক্তে প্রবেশ করানোর জন্য ডাক্তারদের কিভাবে প্রস্তুত করা হয় সেটিও ত বিবেচনাতে রাখতে হবে,তাই না?
মোদ্দা কথা হলো,দুই নাম্বার ঔষুধ আর দুই নাম্বার খাবারের হাত থেকে আমাদের বোধহয় রক্ষা নেই।
------------------------
আশফাক (অধম)
ডাক্তারকে নিয়ে এই পর্বে আলোচনায় যাইনি, তাহারা আবার ক্ষিপ্ত হয়ে ধর্মঘট ঢাকবে আমার পুষ্টে । এটা নিয়ে যেহেতু ধারাবাহিক ভাবে লেখার চিন্তা আছে তাই এক পর্বে সব কিছু নিয়ে আলোচনা করিনি। ভবিষ্যতে লেখে সবার অপ্রিয় হয়ে উঠবো হয়তো ।
শুধ ডাক্তারদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ঔষুধ খায়। আমি অনেককেই দেখি অল্পতেই এন্টিবায়োটিক ও খেয়ে ফেলে নিজেই সবজান্তা শমসের হয়ে। ধরা যাক ডাক্তার আপনাকে গ্যাসের সমস্যার জন্যে ওমিপ্রাজল-২০ দিলো একটা আনকোরা প্রতিষ্ঠানের। এখন আপনি যদি সচেতন হোন সেই ওমিপ্রাজল কেনার চেষ্টা করবেন বড় প্রতিষ্ঠানের থেকে। কিংবা যে ঔষুধ দিক না কেন আপনি সেটি যেনতেন প্রতিষ্ঠানের বদলে ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে নিবেন। এ্যাড ছাড়াও জানা সম্ভব দেশে ঔষুধে বড় প্রতিষ্ঠান কোনগুলো। যেমন: স্কয়ার, বেক্সিমকো, ইনসেপ্টা, হেলথ কেয়ার, রেনাটা, এসকেএফ প্রভৃতি। ধন্যবাদ।
মাসুদ সজীব
বাংলাদেশে বাস করা মানুষদের কাছে লভ্য ওষুধের যে ভয়ানক ছবি আপনি তুলে ধরলেন, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবা যায় না। কি ভয়ংকর!
অঃ টঃ - ভারতের অবস্থাও কি একই রকম!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
দু:স্বপ্নময় হলেও গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠান মানের সাথে আপোষ করে না কিন্তু সে সংখ্যা অতি নগন্য। অথচ বেশিভাগ প্রতিষ্ঠান ইচ্ছে করলেই ভালো মানের ঔষুধ উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু অন্যরা যখন দুই নাম্বারি করে স্বল্প খরচে সেই ঔষুধ উৎপাদন করে বাজারজাত করে ফেলে তখন কে আর ঝুঁকির পথে যায়?
ভারতের অবস্থা আমি ঠিক বলতে পারবো না, তবে আশা করি বাংলাদেশের চেয়ে ভালো হবে
মাসুদ সজীব
হাসিব ভাইয়ের লেখার পরেই আপনার এই লেখার অপেক্ষায় ছিলাম - ঐ লেখায় আপনার মন্তব্য আর প্রতিশ্রুতি পড়ে।
লেখাটা পড়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে "অনেক কিছু জানার হল শুরু ..." আশা করি চলবে...
ও শুভেচ্ছা। আশা করি চলবে
মাসুদ সজীব
চমৎকার তথ্যবহুল লেখার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি এই বিষয়ে আপনি আরও লিখবেন।
আপনার এই লেখা ব্লগে না হয়ে (দৈনিক) পত্রিকায় প্রকাশিত হলে এটাকে বলা হত "বাংলাদেশের ঔষধ শিল্প ধ্বংসের জন্য ইঙ্গ-ইন্দো-ইসরায়েলী-মার্কিন ষড়যন্ত্র"।
Emran
পত্রিকা এই লেখা জীবনেও প্রকাশ করবে না , করলেও এতক্ষনে ষড়যন্ত্রকারী রূপে চিন্থিত হয়ে যেতাম । লেখার ইচ্ছে এই বিষয়ের নানা অনিয়ম আর অজ্ঞতা নিয়ে আরো লিখার ইচ্ছে আছে।
মাসুদ সজীব
অন্য ইন্ডাস্ট্রিগুলো কি খুব ভাল আছে? ইটিপি(Effluent Treatment) প্লান্ট থাকলেও বর্জ্যের স্থান হয় মেঘনা নদী। অনেক ইন্ডাস্ট্রীতে সেটাও আবার নেই।
অন্য প্রসঙ্গের একটা কথা বলি, দেশীয় ইন্ডাস্ট্রীগুলোতে সদ্য পাশ গ্রাজুয়েটদের বেতন যা দেয়া হয় তা লজ্জাস্কর।সেইফটির অবস্থাও খুবই নাজুক।
গুরুত্বপূর্ণ লেখা।
রাজর্ষি
পড়ার জন্যে ও শুভেচ্ছা।
মাসুদ সজীব
লেখাটার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা। সবাই এটি পড়বে কিনা জানি না, না পড়লে পস্তাবে এটা নিশ্চিত। অবস্থা যদি এই হয়, বাংলাদেশে আমাদের ভেজাল ওষুধ খেয়ে মরা প্রায় অনিবার্য, তবু এই লেখাটার কল্যাণে জেনে মরলাম বলে একটা তৃপ্তি থাকবে। আমার মতে গাজার জন্য হ্যাশট্যাগ দেয়ার চেয়েও এই লেখাটা পড়া জরুরী।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
পড়ার জন্যেও থাকলো শুভেচ্ছা। মৃত্যু তো অবধারিত, তবে নিরাপদ মৃত্যুর গেরান্টি টুকুর নিশ্চয়তা নিয়ে বিদায় বলতে যাই। ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
মাসুদ সজীব
বাংলাদেশে গড়পড়তা লোকেরা অসত এবং এই অসততা বেশীরভাগের কাছে ঠিকাছে টাইপ বিষয়। পত্রিকা মারফত জানি যে বাংলাদেশের নেক্সট সম্ভাবনাময় রপ্তানী আইটেম এই ঔষুধ শিল্প। ভেজাল ঔষুধ বাইরে পাঠালে সেটার প্রতিক্রিয়া বাজে মানের কাপড় দিয়ে বানানো গার্মেন্ট রপ্তানীর প্রতিক্রিয়ার মতো হবে না। ভেজাল পেলে পুরো মার্কেট থেকে ঔষুধ তুলে নেয়া বা পুরো কোম্পানিকে ব্যান করা ধরণের কাজ ঘটাটা অস্বাভাবিক না। এই বিবেচনাটা মাথায় নিলে ঔষুধ শিল্প যেমন সম্ভাবনাময় তেমনি ঝুঁকিপূর্ণও বটে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বিদেশে ভেজাল ঔষুধ যাওয়ার সম্ভবনা খুব কম, প্রথমত ওরা ওদের ল্যাবে পরীক্ষা করা ছাড়া কোন ঔষুধ নেয় না, দ্বিতীয়ত আমাদের এখানে বিদেশে যে সব ঔষুধ যায় সেগুলো ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। কিন্তু ঠিক সেই প্রতিষ্ঠান যখন বাংলাদেশে সেই একি ঔষুধ উৎপাদন করে বাজারজাত করে তখন আর সেই সতকর্তার ধারে কাছেও থাকে না ।
মাসুদ সজীব
খুবই গুরুত্বপুর্ন ও তথ্যবহুল লিখার জন্যে।
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
পড়ার জন্যে আপনাকে ও ধন্যবাদ
মাসুদ সজীব
নতুন মন্তব্য করুন