• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

পাঠ্য বইয়ে বাংলা সাহিত্য ও আমার ভাবনা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৪/০৮/২০১৪ - ১:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বি সি এস পরীক্ষার প্রিপারেশন নিচ্ছিলেন পাশের রুমের এক বড় ভাই। প্রায় এক ঘন্টা চন্ডীদাস , জ্ঞানদাস, কানাহরি দত্ত পড়তে পড়তে হঠাৎ করে বলে উঠলেন,‘শালার হিন্দুগুলা এত্ত কিছু লিখে গেল কেন? নাম মনে রাখাই তো কষ্ট !‘ আমি হাসি চাপতে না পেরে বললাম,‘ভাই, সাহিত্য কি গুলে খাওয়ার জিনিস? আনন্দ নিয়ে পড়েন, দেখবেন এমনিতেই মনে থাকবে।‘

আমার চিন্তার জায়গা এটা নয় যে এগুলো মনে রাখা কষ্ট। চিন্তার ব্যাপার হল ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত আমরা বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র নামে দুইটি আবশ্যিক বিষয় থাকলেও এগুলো পড়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ও মমত্ববোধের জায়গাটুকু তৈরি হয় না কেন? বাংলা সাহিত্যের জন্ম ও বিকাশ নিয়ে খুব বেশি কিছু লেখা নেই ওই পাঠ্যবই গুলোতে। এব্যাপারে আমার চোখে পড়া দুইটি দিক নিয়েই লিখতে বসেছি।

প্রথমত, আমাদের পাঠ্য বই গুলিতে বাংলা সাহিত্যের আদি ও মধ্যযুগ বেশ উপেক্ষিত। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ একটা ছেলে বা মেয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শেকড় সম্পর্কে জানবে, এটা কি খুব অমূলক চাওয়া? সে যুগে শ্রী চৈতন্যকে ঘিরে লেখা হয়েছিল অপুর্ব সে বৈষ্ণব সাহিত্য। শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন পড়তে হবে সেটা বলছি না, অন্তত জানতে তো হবে। মঙ্গলকাব্য, পুথি সাহিত্য, ময়মনসিংহ গীতিকা এগুলোর কথাও খুব জানানোই হয় নি। এছাড়াও বিহারীলাল,প্যারীচাদ, প্রেমেন্দ্র মিত্র এদের নামই তো অজ্ঞাত থেকে যাচ্ছে। হুমায়ূন আজাদের লেখা „লাল নীল দীপাবলি“ পাঠ্য না হোক অন্তত সহপাঠ হিসেবে কি থাকতে পারতো না!

দ্বিতীয়ত , মুক্তিযুদ্ধ। এ ব্যাপারে সচল শেহাব ভাই একবার লিখেছিলেন । আমি বিস্ময় নিয়ে দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত সাহিত্য পাঠ্যবইয়ে খুব বেশি জায়গা পায় নি। যা আছে তা হল কিছু গল্প আর কবিতা। অন্তত একটা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস আমাদের কারিকুলামে নেই। স্কুলে থাকতে আমাকে সময়ের মূল্য,পাট, ছাত্রজীবন প্রভৃতি দশপনেরোটি রচনা প্রতি বছর তোতা পাখির মত মুখস্ত করতে হয়েছিল। ক্লাস নাইনের একটা ছেলে এই সময়ে দশটি উপন্যাস আর একটা গল্প সংগ্রহ পড়ে ফেলতে পারে। আমার মতে , মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বেশ কিছু টেক্সট রেফারেন্স হিসেবে স্কুল ও মাদ্রাসাগুলিতে সরবরাহ করা যেতে পারে। এইগুলো খুব বেশি মার্ক ক্যারি না করলেও এগুলো ছাত্রছাত্রীরা আনন্দ নিয়ে পড়তে পারবে , অনুভব করতে পারবে যুদ্ধদিনের আবেগ, চিনতে পারবে এদেশের শত্রুমিত্র।

দুই চারটা গল্প আর কবিতা পড়ে কি আর সাহিত্যে আগ্রহ জন্মায়? কবি সাহিত্যিকের জীবনী ও বিখ্যাত রচনা বিটিভির আটটার সংবাদের মত পরিবেশন না করে এর সাথে আরো কিছু নির্বাচিত রেফারেন্স কি দেয়া যায় না? যেগুলো পাওয়া যাবে স্কুলের লাইব্রেরীতে। পরীক্ষায় অন্তত কিছু প্রশ্ন থাকবে এগুলো থেকে। সর্বোপরি বাংলা বিষয়টা হবে স্বদেশ ও স্বভাষার প্রতি মমতা জাগানো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগানিয়া, আগ্রহোদ্দীপক ও আনন্দময় । এটা কি খুব বেশি চাওয়া ?

রাজর্ষি


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

(Y)

একসময় আনোয়ার পাশা রচিত "রাইফেল রোটি আওরত" উপন্যাসটি মাধ্যমিক অথবা উচ্চ-মাধ্যমিকের সহপাঠ হিসেবে ছিল। ৭৫ পরবর্তী সময়ে এটি বাদ পরে। তারপর "পেম-পেম-ভালুবাসা" টাইপ সাহিত্য ছাড়া কোনও সাহিত্যকে এই স্থানে আর আনা হয় নি। :(

পুনশ্চঃ লাল-নীল-দীপাবলি আর কত নদী সরোবর বইদুটিকে কেবল সহপাঠ নয়, পাঠ্যবই হিসেবে গ্রহন করা উচিৎ। আরো একটা এই তালিকায় আসতে পারেঃ মহাবিশ্ব। অসাধারণ একটা বই। ^:)^

পুনঃ পুনশ্চঃ যারা বিসিএস পরীক্ষার সময় জীবনে প্রথমবারের মত সাহিত্য/ইতিহাস/রাজনীতি খুলে বসে, তারা বিসিএস পরীক্ষা পাস না করলেই দেশের মঙ্গল। 8)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এক লহমা এর ছবি

"যারা বিসিএস পরীক্ষার সময় জীবনে প্রথমবারের মত সাহিত্য/ইতিহাস/রাজনীতি খুলে বসে, তারা বিসিএস পরীক্ষা পাস না করলেই দেশের মঙ্গল।" - পূর্ণ সহমত।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

পূর্ণ সহমত!

অতিথি লেখক এর ছবি

যারা বিসিএস পরীক্ষার সময় জীবনে প্রথমবারের মত সাহিত্য/ইতিহাস/রাজনীতি খুলে বসে, তারা বিসিএস পরীক্ষা পাস না করলেই দেশের মঙ্গল

কিন্তু তারাই তো পাশ করে ফেলে দেখি। আমার এক সাবেক কলিগ বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় প্রতিদিন একবার করে সকল সাহিত্যিকের জাতি উদ্ধার করতেন। তিনি এখন বিসিএস ক্যাডার!

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

(Y)

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বেশ কিছু টেক্সট রেফারেন্স হিসেবে স্কুল ও মাদ্রাসাগুলিতে সরবরাহ করা যেতে পারে।

অবশ্যই করা উচিত। ক্লাস নাইন-টেনে খুব সম্ভব কিছু উপন্যাস আলাদা করে পড়ানো হয় যেমন পদ্মা নদীর মাঝি আমরা পড়েছিলাম। এগুলো পড়ানোর প্রতি আমাদের শিক্ষকদের যে অনীহা দেখেছি তাতে সমস্যা শুধু মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস চালু করলেই হবে না, শিক্ষকদেরও সত্যিকার সাহিত্য অনুরাগী এবয় সাহিত্যপ্রেমী হতে হবে। আর মাদ্রাসায় সাহিত্য অনুরাগী শিক্ষক না খোঁজাই ভালো। সেখানে পারস্য প্রেমিক পাওয়া যেতে পারে সাহিত্যপ্রেমিক পাওয়া যাবে না।

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

এগুলো পড়ানোর প্রতি আমাদের শিক্ষকদের যে অনীহা দেখেছি তাতে সমস্যা শুধু মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস চালু করলেই হবে না, শিক্ষকদেরও সত্যিকার সাহিত্য অনুরাগী এবয় সাহিত্যপ্রেমী হতে হবে।

(Y)

পারস্যপ্রেমিক শিক্ষকরা সাধারনত বলেন না "এই বইটা পড়ে দেখো। এ ব্যাপারে আরো ভালো জানতে পারবে।" , বলেন "আউট বই পড়বা না! "
নির্বাচিত বেশ কিছু বই পড়াটা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে, অন্তত দ্বাদশ শ্রেণিতে।

অতিথি লেখক এর ছবি

পাঠ্যবইগুলি বা শ্রেণীকক্ষে বাইরের বই পড়তে খুব একটা উৎসাহ যোগান হয় না। "পেম-পেম-ভালুবাসা" র সঙ্গে সঙ্গে অত্যাবশ্যক কিছু বই অবশ্যই পাঠ্য থাকা উচিত বলে মনে হয়। স্কুলের প্রায় প্রতি বছর আল মাহমুদের একটা কবিতা আছেই। সপ্তম শ্রেণীতে উনি ভাষা আন্দোলনের কবিতা শোনাচ্ছেন। কিন্তু "কাঁদতে আসি নি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি " ওই বইয়ে স্থান পায় না।

বি সি এস এর কথা বলছেন ? আমার আশংকা আপনার না চাওয়া এই অমঙ্গলটা নিয়মিত ঘটছে। আমার দেখা অনেকেই আছেন যারা বি সি এস এর প্রিলি-রিটেন সহজেই পাস করে দেশ সেবা করে যাচ্ছেন কিন্তু জীবনে কোনদিন বঙ্কিম বা জীবনানন্দের বই হাতে নিয়ে দেখেন নি।অবশ্য এরা তখন ইতিহাস-সাহিত্যের আদ্যোপান্ত বলে দিতে পারত ! আমার মনে হয় এরকম লোক আপনিও দেখে থাকবেন।

পাঠ্যবই সব কিছু জানিয়ে না দিক , জানার আগ্রহ তৈরি করুক।তাহলে বিসিএস দিতে গিয়ে কেউ প্রথম বারের মতো এগুলো শুনবে না।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বর্তমানে সংশোধিত পাঠ্যক্রম চালু করার পরে ৬-১০ এর বইগুলি দেখেছেন? কবিতা অংশটা আগের চেয়ে ভাল হয়েছে। :)

হ, এরাম লোক নিত্যই আশেপাশে চড়ে খায়। =(( দেখি এইবার কি সংস্কার হয় বিসিএস পরীক্ষায়? দেরিতে হলেও হোক, এটুকুই তো চাওয়া।

পাঠ্যবই সব কিছু জানিয়ে না দিক , জানার আগ্রহ তৈরি করুক।

(Y) (কোলাকুলি)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যা, সংশোধিত পাঠক্রম আগের চেয়ে ভাল। তবে আরো ভাল করার জায়গা রয়েছে বৈকি। দেখা যাক কি সংস্কার হয় বিসিএস পরীক্ষায়!
রাজর্ষি

এক লহমা এর ছবি

"সর্বোপরি বাংলা বিষয়টা হবে স্বদেশ ও স্বভাষার প্রতি মমতা জাগানো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগানিয়া, আগ্রহোদ্দীপক ও আনন্দময় । এটা কি খুব বেশি চাওয়া ?" (Y)

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

হিমু এর ছবি

যে লোকগুলো এসএসসিতে "জোহরা", "আবদুল্লাহ", এই উপন্যাসগুলো পাঠ্য বানিয়েছিলো, তাদের দিয়ে কতগুলি জিন্সের প্যান্ট কাচায় নিতে পারলে খুব ভালো লাগতো।

অতিথি লেখক এর ছবি

:) :)

মন মাঝি এর ছবি

এগুলো পড়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ও মমত্ববোধের জায়গাটুকু তৈরি হয় না কেন?

কারন এগুলি পরীক্ষা পাশের জন্য পড়তে হয়। বাধ্যতামূলক ভাবে পড়তে হয়। জোর করে পড়তে হয়। পরীক্ষায় সম্ভাব্য ব্যর্থতা বা কাঙ্খিত সাফল্য লাভ করা - না করার সচেতন-বা-অচেতন ভীতির মধ্যে পড়তে হয়। সম্পূর্ণ বৈষয়িক কারনে পড়তে হয়। তাও আবার সম্পূর্ণ অবৈষয়িক একটা বিষয়। কন্টেন্ট-সর্বস্ব টেক্সট সম্পূর্ণরূপে তার প্রকৃত-স্পিরিট বিযুক্তভাবে অন্যসব বিষয়ের মত করে নিপাট গলধকরণ করতে হয় (এক্ষেত্রে, অর্থাৎ সাহিত্যের প্রতি মমত্ববোধের জায়গায়, যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে বুঝে পড়ারও আসলে কোন কেন্দ্রীয় মূল্য নেই)।

ঠিক একই কারনে আপনি যে পদ্ধতি বাৎলাচ্ছেন তাতেও কোন ফায়দা হবে না, কারন আসলে আপনি নতুন কোন পদ্ধতিই বাৎলাচ্ছেন না - নতুন বোতলে পুরনো মদই দিচ্ছেন। আপনার কথা মত কন্টেন্ট বদলিয়ে বা উন্নত করে কোন লাভ হবে না। এটা আপনার উদ্ধৃত প্রশ্নের প্রেক্ষিতে থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড় ছাড়া আর কিছুই না, কারন এতে মূল ইস্যুটা এড্রেস্‌ড হবে না।

‘ভাই, সাহিত্য কি গুলে খাওয়ার জিনিস? আনন্দ নিয়ে পড়েন, দেখবেন এমনিতেই মনে থাকবে।‘

এটাও আরেকটা ভুল পদ্ধতি। উপদেশ দিয়ে বা নীতিকথা শুনিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই "আনন্দ" জিনিসটা জাগানো যায় না! :)

=====================

আমার পাগলামি মত দেই এবার। :)

আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে মাধ্যমিক পর্যন্ত সিলেবাস থেকে সাহিত্য একেবারেই বাদ দিয়ে দেয়া উচিৎ। একাদশ থেকে এটা ঐচ্ছিক করা যেতে পারে। অনেকেই হয়তো লাফিয়ে উঠে হা-রে-রে করে তেড়ে আসবেন এমন বর্বর কথা শুনে, কিন্তু এটাই আমার মত আপাতত এবং এটা আমি সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা থেকেই বলছি। মাধ্যমিক পর্যন্ত বড়জোর যা থাকতে পারে তা হল - ক্রিয়েটিভলি ও ইমাজিনেটিভলি সাহিত্যপাঠের যদি কোন সহজবোধ্য পদ্ধতি-প্রকরণ-টেকনিক থাকে তাহলে সে-সম্পর্কে বুদ্ধিবৃত্তিক / বিশ্লেষণী ও মোটিভেশনাল / ইন্সপিরেশনাল আলোচনা নিয়ে ৫০ মার্কের একটা পেপার, আর ক্রিয়েটিভ লেখালেখির কিছু বাস্তব পদ্ধতি-প্রকরণ-টিপ্‌স নিয়ে (সৈয়দ সামসুল হকের চমৎকার একটা বই আছে এ বিষয়ে) আরও ৫০ মার্কের একটা পেপার - বা দুইয়ে মিলে একটা। একাদশ থেকে এই নম্বর ডাবল করে দেয়া যেতে পারে।

তবে "ভাষা শিক্ষা" থাকতে হবে ভাল ভাবেই। কিন্তু তা সাহিত্যের মাধ্যমে না। সাহিত্যের জায়গায় উন্নত গদ্যে লেখা ইতিহাস / অর্থনীতি / পৌরনীতি ইত্যাদি জাতীয় বিষয় আবশ্যিক করে (হয়তো আগেকার 'সমাজপাঠের' মত একক বিষয় হিসেবে) "ভাষা শিক্ষাটা" তার সাথে ইন্টিগ্রেট করে দিতে হবে। তাহলে ভাষা শিক্ষাটা নির্মেদ, বলিষ্ঠ, বাস্তবমুখী ও কার্যকরী হবে।

সাহিত্য থাকবে একেবারেই পরীক্ষা, পাশ, নম্বর, ইত্যাদি ইত্যাদি মুক্ত অনেকটা স্পোর্টসের মত এক্সট্রাকারিকুলার এ্যাক্টিভিটি হিসেবে। কারও ইচ্ছে হলে স্রেফ আনন্দের জন্য পড়বে-লিখবে, না পড়লে নাই।

=====================

বেশ কাট-কাট করে বলে গেলাম হয়তো। বাইরে ফজরের আযান দিচ্ছে। ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসি চোখের পাতায় পেতে দেয়া পিড়িতে এতক্ষণে এসে বসার তোড়জোড় করছেন। এবার তাঁদের একটু খাতিরদারি করা লাগবে। এই মুহূর্তে তাই এর চেয়ে সুন্দর করে বা বিস্তারিত ভাবে নিজের মতামতটা ব্যক্ত বা ব্যাখ্যা করার শক্তি পাচ্ছি না। দুঃখিত।

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, আপনার 'কাট-কাট' কিন্তু সুচিন্তিত মতামতের জন্য। :) :)
আপনার মতে স্পোর্টসের মত এক্সট্রাকারিকুলার হিসেবে সাহিত্য থাকুক। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি সাহিত্যকে ঐচ্ছিকের কাতারে ফেলে দেয়ার পক্ষপাতী আমি নই। এটা সত্য 'হাজার বছর ধরে' বা 'ছুটি' গল্প আমাকে স্রেফ পরীক্ষাপাসের জন্য পড়তে হয়েছে। কিন্তু এর আবেগ আমাকে স্পর্শ করে গেছে(এটাই সাহিত্যের নিজস্ব গুণ।)। লাইব্রেরীতে থাকা রবীন্দ্রনাথের 'গল্পগুচ্ছ' পড়ার আগ্রহ পেয়েছি। তাই অন্তত রবীন্দ্রনাথ-বিভূতিভূষণদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দায়িত্বটুকু স্কুল-কলেজের থাকুক। বাংলা সাহিত্যের জন্মকথা আর নির্বাচিত কিছু লেখা (যেমন, একাত্তরের দিনগুলি) তাদের পড়িয়ে নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়।

রাজর্ষি

ফাইয়াজ জামাল এর ছবি

(Y)

গান্ধর্বী এর ছবি

এইচএসসির পর ভর্তি পরীক্ষার সময় পরীক্ষার হলে একবার একজন প্রশ্ন করেছিল- 'পথের পাঁচালী যেন কার লেখা?' আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। বিসিএস পরীক্ষায় একজন প্রশ্ন করল 'ধিক্কার' শব্দটার মানে কী?' মনে মনে ধিক্কার জানানো ছাড়া কিছুই করার ছিল না। বুঝুন এই হচ্ছে অবস্থা!

আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি।

হুমায়ূন আজাদের লেখা „লাল নীল দীপাবলি“ পাঠ্য না হোক অন্তত সহপাঠ হিসেবে কি থাকতে পারতো না!

আমি মনে করি সহপাঠ নয়, পাঠ্যই করা উচিৎ।

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

অতিথি লেখক এর ছবি

(Y)

পথের পাঁচালী যেন কার লেখা?'

অন্তত জানা তো উচিত। সবকিছু পড়ে ফেলতে হবে এমন নয় অন্তত কিছু তো পড়া থাকা উচিত।

রাজর্ষি

অতিথি লেখক এর ছবি

(Y)
পাঠ্য বইয়ের সাহিত্য পড়ার ফল হইলো আমি জীবনে সাহিত্যিকদের দুইটা ভাগ করে ফেলছিলাম
১। পাঠ্য বইয়ের লেখক(তা না হইলে এখন ফররুখ আহমেদকেও সেইরাম সাহিত্যিক ভাবতাম ;) )।
২। আউট বইয়ের লেখক।
প্রতি ক্লাসে সেই একই লেখকদের লেখা পড়তে পড়তে এই ধারনাই জন্মাইছিলো যে চরিত্র নিরুপন,নামকরনের স্বার্থকতা বাইর করা ছাড়া পাঠ্য বইয়ের সাহিত্যের আর কোনো কাজ নাই।আর পাঠ্য বইয়ের বাইরের সাহিত্য মানে হইল দস্যু বনহুর,মাসুদ রানা,তিন গোয়েন্দা,সেবা রোমান্টিক,ওয়েস্টার্ন। গৎবাঁধা একজিনিস পড়তে পড়তে ত্যাক্ত হয়ে এছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিলোনা হয়ত। সবাই খালি জ্ঞান দিলে ক্যামনে কি? পড়া লাগে আনন্দের জন্য,তাই না? তবে একটা প্রবন্ধ মনে হয় ধারনা পালটে দিলো। "বই পড়া" এই প্রবন্ধটি আবার ধীরে ধীরে সাহিত্য পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করে। কিন্তু পাঠ্য বইয়ের সাহিত্য নির্নয় করার কাজটা আসলে কারা করে আর কি কি বিবেচনাতে করে সেটা আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে এখনও ঢোকেনা। ঐ বয়সে যেখানে আনন্দের সাথে পড়ার ধারনা তৈরি করা দরকার তখন দুনিয়ার সব হিজিবিজি তত্ত্ব কথা দিয়া বই ভরায়ে রাখলে সাহিত্যের প্রতি নেগেটিভ এ্যাপ্রোচই তৈরি হয়। আর পরীক্ষাতে হাজার হাজার প্রশ্নের উত্তর দেয়াটাও আমার কাছে প্রব্লেমেটিক লাগে। এইভাবে ক্যাটাগোরাইজ করে সাহিত্য পড়া যায়? সহপাঠগুলা বরং পড়তে ভালো লাগত কারন এতে হাজার টাইপের প্রশ্ন আসতোনা আর স্যাররাও এই খাতাটা বেশ সহজভাবে দেখতো :) ।

আরেকটা ছোট্ট কথা বলি। আমাকে আমার বড় ভাই ৮ম শ্রেনীতে পড়ার সময় মানিক বন্দোপাধ্যায় এর 'পুতুল নাচের ইতিকথা' কিনে পড়তে দিছিলো। সেই বই পড়তে গিয়া নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলছিলাম। ফলাফল আমার "মানিক ভীতি" তৈরি হলো। বংকিম পড়ে ফেলার পরও আমি কেনো জানি মানিক পড়তে চাইতাম না। অনেক পরে সেই ভূত গেছে। এই ব্যাপারটাও মনে হয় মাথায় রাখা উচিৎ। বাচ্চাদের জোর করে কঠিন জিনিস গিলাইতে গেলে সেই বাচ্চা পরে সারাজীবন "রোজা" রাখাটাই উত্তম মনে করতে পারে।

বিসিএস যাহারা পাস করে তাহাদের সাহিত্যজ্ঞান সাল, নোবেল,একুশে পদক এগুলোতেই থাকা ভালো তা না হলে ঘুষ খেয়ে দেশ ও জাতির মংগল করতে তাহাদের সমস্যা হইতে পারে। ):)
-------------------------------
আশফাক(অধম)

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক এই কথাই আমার মূল সুর। বেশ কিছু নির্বাচিত লেখা, ধরুন উপন্যাস, গল্প সংকলন, কত নদী কত সরোবর টাইপের বই (অবশ্যই বয়স-শ্রেণি বিবেচনায় ) সহপাঠ হিসেবে থাকুক না। যেগুলো স্কুলের ছেলেরা পড়বে। পরীক্ষা পাসের জন্য এগুলোও পড়তে হয় কিন্তু ভয়ে নিয়ে নয় !

রাজর্ষি

দীনহিন এর ছবি

প্রথমত, আমাদের পাঠ্য বই গুলিতে বাংলা সাহিত্যের আদি ও মধ্যযুগ বেশ উপেক্ষিত।

আর এজন্যই আমাদের এ্যাভারেজ সাহিত্যজ্ঞান এত ঠনঠনে! আমাদের ভাষাজ্ঞান এত ভাসা ভাসা বলেই!

আমি বিস্ময় নিয়ে দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত সাহিত্য পাঠ্যবইয়ে খুব বেশি জায়গা পায় নি।

দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির দাবিদার সরকারটিও চুড়ান্ত অবহেলা করেছে মুক্তিযুদ্ধকে; তাদের ইতিহাস বিকৃতি রোধের প্রচেষ্টা শুধু মুজিব তোষনেই সীমাবদ্ধ!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

তাদের ইতিহাস বিকৃতি রোধের প্রচেষ্টা শুধু মুজিব তোষনেই সীমাবদ্ধ!

অথচ যুদ্ধ নিয়ে সত্যিকারের লেখাগুলো আড়ালেই থেকে যাচ্ছে যা দেশের প্রতিটি উচ্চ মাধ্যমিক পাস ছেলে বা মেয়ের যেকোন ভাবেই হোক পড়া থাকা উচিত। কি বলব, একবার মুক্তিযুদ্ধে নারী নির্যাতন নিয়ে ফেসবুকে ছোট্ট একটা লেখা চোখে পড়েছিল,যা ছিল মাত্র কিছু বই এর টেক্সট তুলে দেয়া । লেখাটি পড়ে অক্ষম ক্রোধে চোখে পানি আসছিল। আমি চাই এই বইগুলো দেশের প্রতিটি শিক্ষিত লোক পড়ুক, নীরবে একটু কাঁদুক।

রাজর্ষি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

দুঃখের সাথে বলছি, হুমায়ূন আজাদের বই মূল পাঠ্য তো দূরে কথা, সহপাঠ হিসেবেও কোনদিন অন্তর্ভূক্ত হবে না। হুমায়ূন নামের উপর ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর লাগানো ট্যাগ (বাংলা মনে আসছে না) আছে; তাতে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যাও অনেক। এই নাস্তিক লোকের বই পাঠ্য করলে সরকারের গায়েও নাস্তিক ট্যাগ সেঁটে যাবে। কোনো সরকারের সেই সাহস হবে বলে মনে হয় না। :(

আসলে, ভালো লোকদের চাইতে প্রতিক্রিয়াশীলদের কন্ঠ বেশি জোড়ালো -ওদেরটারই কাটতি বেশি। :(

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমায়ূন আজাদের বই মূল পাঠ্য তো দূরে কথা, সহপাঠ হিসেবেও কোনদিন অন্তর্ভূক্ত হবে না।

হুমায়ূন আজাদের একাধিক লেখা(প্রবন্ধ বলা যেতে পারে) বর্তমান পাঠক্রমে আছে। আপনার সাথে সহমত, সাহস থাকলে অন্তত উনার এই অসাধারণ বইগুলো সরকার পড়ানোর ব্যাবস্থা করত। সেই চর্যাপদের আকাশ বালিকার কণ্ঠস্বরে, পদ্মাবতীর চোখের জলে, কাঙ্গাল হরিনাথের কলমে, আর প্রেমাংশুর রক্তে কিভাবে বাংলা বয়ে চলেছে সেটা একজন শিক্ষিত বাঙ্গালী অন্তত জানবেনা, কিছুটা অনুভব করবে না সেটা কি করে হয় !!

রাজর্ষি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

এরকম একটা দুটো করে প্রবন্ধ থাকাটা ঐ শ্রেণীর চোখে পড়ে না, তেমন একটা। তবে, যখন একটা গোটা বই সহপাঠ হিসেবে থাকবে, ছাত্রদের টেবিলে যখন থেকে 'হুমায়ূন আজাদ' এর নামাঙ্কিত একটা বই থাকবে, তখন অনেক মুরুব্বির‌ কাছেই বিষয়টা 'ভয়াব‌হ বিপর্যয়' জাতীয় কিছু মনে হবে।

কিছুদিন আগে ফেসবুকে ঝড় তোলা মাধ্যমিক ইসলাম শিক্ষা বইয়ের "দেব-দেবীর বা আল্লাহ ছাড়া কারো নামে" শীর্ষক ঘটনাটার কথাও মনে পড়ল। অনেকে এর মাঝে নাকি 'ষড়যন্ত্র' খুঁজে পেয়েছিলেন।

শুভেচ্ছা :)

অতিথি লেখক এর ছবি

'যারা বিসিএস পরীক্ষার সময় জীবনে প্রথমবারের মত সাহিত্য/ইতিহাস/রাজনীতি খুলে বসে, তারা বিসিএস পরীক্ষা পাস না করলেই দেশের মঙ্গল'

সহমত। আর বিসিএসের প্রিলি অবধি পাস করতে কোন মূলবই পড়তে হয় না। আদি এবং মধ্যযুগ সম্পর্কে শ'খানেক প্রশ্নের উত্তর এককথায় উত্তর মুখস্থ করলেই হয়ে যায়। অনেক বিসিএস ক্যাডারকে দেখেছি- সঞ্চয়িতা আর সঞ্চিতার দুই লেখকের নাম মুখস্থ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। 'শেষের কবিতা' কী বস্তু-উপন্যাস নাকি গল্প সেটাও মুখস্থ করতে হয় এদের। পড়ে দেখার ধৈর্য্য নেই- ইচ্ছাও নেই্। কারণ এখানে জানাটা তো লক্ষ্য নয়- ক্যাডার হওয়াটাই মূল লক্ষ্য।

-সুস্মিতা শ্যামা রহমান

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌমিত্র শেখর স্যারের 'গাইড' বইয়ে সব সাহিত্য উদ্ধার করা আছে। সেটাই বা কম কিসে, যদি সিলেবাসে না থাকত এই কষ্টটাও স্বীকার করতে হত না ! সঞ্চয়িতা বা সঞ্চিতা নিয়ে কে আর মাথা ঘামাতে যেত বলুন !

রাজর্ষি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী ভাই, আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য।কিভাবে কিশোরদের ভেতরে সাহিত্যটা ঢুকিয়ে দেয়া যায় সেটা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে।আপনার এই স্টার দেয়ার পদ্ধতিটা বেশ ভাল মনে হচ্ছে। আমার এই লেখাটা আপনাদের ভাবনাটা জাগিয়ে দিতে পেরেছে সেটাই আমার জন্য আনন্দের। আদি বা মধ্যযুগ স্কুল পর্যায়ে আনা উচিত বলছি না। এব্যাপারে কলেজে থাকতে পারে একটা বা দুইটা সামগ্রিক আলোচনামূলক লেখা, সাথে রেফারেন্স যা পড়ার জন্য কড়াকড়ি থাকবে না, থাকবে স্বাধীনতা।

রাজর্ষি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

কোন কোন স্কুল, কোন কোন অভিভাবক, কোন কোন শিক্ষক - সাহিত্য বা আউট বই পড়াকে প্রায় কবিরা গুনাহ মনে করেন। সিলেবাসের বাইরে যে কোন পড়া মহাপাপ। এই জাতীয় শিক্ষক স্কুলের সংখ্যাই মনে হয় বেশী। আমি যে স্কুলে পড়তাম, সেই স্কুলে একটা লাইব্রেরী ছিল। ক্লাস সেভেনে উঠে বই নিতে দিত বাসায়। সেই লাইব্রেরীটা ছিল আমাদের আনন্দ নগর। কিন্তু আমরা পাশ দিয়ে বেরোবার বেশ কবছর পর হেডস্যার বদলে যায়। নতুন যিনি আসলেন তিনি এসব বইপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন এমনকি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গাড়িকে স্কুলে ঢুকতে দেয়া হতো না। আগ্রাবাদ সরকারী কলোনী হাইস্কুলের সেই কুলাংগার প্রধান শিক্ষিকা ফেরদৌসী বেগমকে ছাত্রছাত্রীরা ঘসেটি বেগম উপাধি দিতে বাধ্য হয়েছিল।

এবার পাঠ্যবইয়ে সাহিত্যের কথা বলি। পাঠ্যবই মানে অবশ্যপাঠ্য, আর অবশ্যপাঠ্য যে কোন বিষয়ের প্রতি সবার একটা ভীতি কাজ করে। সাহিত্য পাঠের আনন্দের চেয়ে পরীক্ষাপাশের ভীতি অনেক বেশী শক্তিশালী। আমার মতে সাহিত্য বিষয়টাকে আনন্দদায়ক করার জন্য এটাকে পরীক্ষার মুখস্তবিদ্যায় না ঢুকিয়ে কেবল আনন্দপাঠ হিসেবে রেখে দেয়া উচিত। এটাকে অন্য পাঠ্যবই থেকে ভিন্নভাবে রাখতে হবে। এখনকার কি অবস্থা জানি না, আমরা পদ্মানদীর মাঝি পড়েছিলাম ইন্টারে। আমি কিন্তু সেই বয়সে বইটা বুঝিনি। বুঝেছি আরো বড় হয়ে। এসএসসি বা তার আরো আগ থেকে স্কুলে বাচ্চাদের জন্য আনন্দদায়ক হালকা মানের বই পড়ানো যেতে পারে। সহজ গদ্য লেখেন তেমন লেখক বাছাই করে অন্তত দশটা বইয়ের একটা তালিকা দিয়ে ছাত্রদের বলা উচিত তোমরা এই তালিকা থেকে যে কয়টা বই সম্ভব সে কয়টা পড়ো। প্রতি বইয়ের জন্য একটা করে স্টার পাবে। যে যতটা বই পড়বে ততটা স্টার। ওটা মূল পরীক্ষার নম্বরে অন্তর্ভুক্ত না হয়ে আলাদা সম্মান হিসেবে থাকবে। এরকম কিছু হলে ছেলেরা ভয়ে না পড়ে আনন্দের সাথে পড়বে। বিদেশী ক্লাসিক অনুবাদগুলো পড়ার জন্য ইন্টারে জোর দেয়া উচিত, কারণ তখনই বিশ্বসাহিত্যের সাথে পরিচয় হবার সময়। এক্ষেত্রে আমি বলবো সেবার অনুবাদগুলো বাংলাদেশের একটা সম্পদ। ওই মানের অনুবাদ বাংলায় আর কোথাও নেই। সেবার পেপারব্যাক বইগুলোর আসল মূল্যায়ন করার সময় এসে গেছে। এগুলোকে নিউজপ্রিন্ট থেকে দরকার হলে হোয়াইট প্রিন্টে বাধাই করে দীর্ঘ সময় সংরক্ষন উপযোগী করা উচিত।

আর আপনি মধ্য বা আদিযুগের সাহিত্য অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন শুরুতে। আমি তাতে দ্বিমত পোষণ করছি। কেননা মধ্যযুগের সাহিত্য পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত করলে ছেলেমেয়েদের ভয়ে পরিমান আরো বেড়ে যাবে, আরো বেশী বইবিমূখ হবে।

চমৎকার একটা বিষয় নির্বাচন করার জন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মেঘলা মানুষ এর ছবি

তিনি এসব বইপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন এমনকি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গাড়িকে স্কুলে ঢুকতে দেয়া হতো না।

-উপাধি ঠিক আছে =DX

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

পাঠ্যবইয়ের সাহিত্য উপভোগ করা কঠিন, চেষ্টা করলেও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কারনে সেটার ওপর বিতৃষ্ণা আসতে খুব একটা সময় লাগে না। একটা উদাহরণ দেই। তখন ক্লাস টেনে পড়ি, বাংলায় উপন্যাস হিসেবে পাঠ্য ছিল জহির রায়হানের 'হাজার বছর ধরে'। স্কুলে সিলেবাস পড়ানো শেষ, আমাদের প্রস্তুতি যাতে ভাল হয় সে জন্য আমাদের বাংলা স্যার প্রতিদিন নতুন নতুন বুদ্ধি বের করেন। নৈর্ব্যক্তিক অংশে আমাদেরকে জাতে তোলার চেষ্টা হিসেবে স্যার বললেন, প্রতিদিন সবাইকে বই পড়ে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন বানিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তারপরে প্রতি ক্লাসে সবচেয়ে মানসম্পন্ন প্রশ্ন যে করতে পারবে তাকে কিছু একটা পুরষ্কার দেয়া হবে (সম্ভবত কোন বাড়তি নম্বরের মাধ্যমে)। তো ক্লাসের আঁতেল পোলাপান খুঁজে খুঁজে ভয়াবহ সব প্রশ্ন নিয়ে আসে। একটা প্রশ্ন (যেটা ঐ দিন মানসম্পন্ন প্রশ্নের জন্য পুরষ্কার পেয়েছিল) মনে পড়ে এখনও। প্রশ্নটা ছিল এরকমঃ

"তখন তার চোখের কোনায় চকচক করছিল জল"। এখানে 'তার' বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
ক) টুনি
খ) টুনিদের ছাগল
গ) পোষা কুকুর
ঘ) মন্তু

এই প্রশ্নটার উত্তর ছিল সম্ভবত 'টুনিদের ছাগল'।

এই রকম ভাবে যখন আপনাকে উপন্যাস পড়তে হবে, মজাটা কোন দিক থেকে বের হবে বলতে পারেন?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

"তখন তার চোখের কোনায় চকচক করছিল জল।এখানে 'তার' বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? "

হাহাহা, এরকম আনন্দময় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আমি আপনি আমাদের প্রজন্মের সবাই হয়েছি। মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ছিল,'নিচের কোন তথ্যটি সত্য বললে মিথ্যা হিসেবে প্রতিপন্ন হবে? '

কিন্তু ব্যাপারটা কি জানেন, এই অচলায়তন ভাঙ্গার চিন্তাটা আমি-আপনাকেই করতে হবে। অন্য দেশের কেউ এটা নিয়ে ভাববে না। তবে আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলতে পারি, নীড় সন্ধানী ভাইয়ের আইডিয়াটা আমার কাছে বেশ প্রণিধানযোগ্য মনে হয়েছে।

রাজর্ষি

হিমু এর ছবি

আমাদের দেশে সব কিছুই পড়ানো হয় পরীক্ষার প্রশ্নের মুখোমুখি হতে ছাত্রছাত্রীদের তৈরি করার জন্য। কিছু শেখানোর জন্য না।

অতিথি লেখক এর ছবি

।'এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে !!'
ভেবে দেখুন না কিছুটা, এই অচলায়তন কিভাবে ভেঙ্গে ফেলা যায় !

রাজর্ষি

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে পোষ্ট দেবার জন্যে রাজর্ষি আপনাকে ধন্যবাদ।

পাঠ্য পুস্তকে কি থাকবে না থাকবে তা যেসব মহাজ্ঞানীরা নির্ধারণ করেন তারা বিভিন্ন সরকারের নিয়োগ কৃত তাই তাঁরা তাঁদের নিয়োগকর্তাদের চিন্তা-চেতনারই প্রতিফলন ঘটান বরং তাঁদের সকল সৃষ্টিশীলতা কেবল পরীক্ষা পদ্ধতি কি হবে না হবে তা নিয়ে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি পাঠ্য পুস্তক পাঠ করে আদৌ কেউ সাহিত্যনুরাগি হতে পারে কিনা সন্দেহ? কারণ বাধ্যতামূলক যেকোনো কিছুর প্রতিই আমাদের অনীহা থাকে।

তবে যদি সকল স্কুলের লাইব্রেরীগুলি সমৃদ্ধশালী হয় এবং স্কুল কর্তৃক বই পড়ায় উৎসাহ প্রদান করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হয় তবে তা অধিক ফলপ্রসূ হবে। সেই সাথে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের পাঠ্যপুস্তকের বাইরে সবকিছু(আউট বই) অগ্রহণযোগ্য সেই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলেই আপনাআপনি সাহিত্যনুরাগির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, অন্যথায় সাহিত্য গুলে খাবার এই প্রক্রিয়া জারিই থাকবে।

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

কি বলব বলুন, সাহিত্য গুলে খাবার এই প্রক্রিয়া রোধ করতে কারো মাথাব্যাথা দেখি নি ।

রাজর্ষি

অতিথি লেখক এর ছবি

যদি এমন হতো, সব ঠিকঠাক মনের মতো, এই লেখাটির মতো, আহা যদি

তুষার রায়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।