সম্প্রতি বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে নিউজ করছে যে,অচিরেই জি-বাংলা ও স্টার জলসাসহ চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং পাখি ড্রেস নিয়ে নানা কাহিনী। আর সাথে সাথে ফেসবুকে এইসব লিংক শেয়ার ও কমেন্টসের হিড়িক পরা শুরু হয়েছে।
ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সিরিয়াল দেখা হয়না তাই এ’ব্যাপারে জানতে অর্ধাঙ্গিনীর দ্বারস্থ হতে হল। সে আবার আমাকে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আমাদের গৃহকর্মীর কাছে আমাকে রেফার করল। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
- ফাতেমা এই পাখি কে রে?
বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে তার উত্তর,
- আল্লাহ্! মামা আপনি জানেননা পাখিকে!
- আসলেই জানিনা।
ব্যাস শুরু হয়ে গেল, পাখির সম্পূর্ণ ইতিহাস। এছাড়াও রাশি,টুসু,কনক,কমল,বাহা,ঝিলিক,কাজল ইত্যাদি বিশাল লিস্ট।
আবার ফেরত গেলাম অর্ধাঙ্গিনীর কাছে, ‘বল তো, কী এমন জাদু আছে এইসব সিরিয়ালগুলোতে যে তোমরা এমন মোহাবিষ্ট এসব দেখ’? উত্তর যা পেলাম তা এমন আহামরি কিছু মনে হলোনা। অগত্যা সত্যের সন্ধানে নিজেকেই নামতে হল, তাই একদিন নিজেই টানা আট-দশটা সিরিয়াল দেখলাম। দেখার পর আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে — সিরিয়ালগুলোর কাহিনী মোটামুটি একই। যেমন,
১। সংসার সুখের হয় টাইপ একজন বউ আর তার সংসার
২। অবশ্যই কিছু কুটিল মহিলা যারা তার জীবন বিষিয়ে তুলবে
৩। কিছু মেরুদন্ডহীন পুরুষ চরিত্র
৪। ব্যাপক পরকীয়া
আসল কথায় আসি ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ নাটকে পাখি’র চরিত্রও ভিন্ন কিছু নয়। উপরন্তু বছর খানেক আগে জিটিভিতে শেষ হওয়া ‘ইস পেয়ার কো ক্যায়া নাম দু’ এর বাংলা ভার্সানই হচ্ছে ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’। তার পরনে পোশাকও বিশেষ কিছু না — সাধারন সালোয়ার কামিজই। একে নাকি এতদিন সবাই আনারকলি ড্রেস বলত।
এই সব খোঁজাখুজির চেষ্টা শেষে মনে যেসব প্রশ্ন জাগলোঃ
১। কেন আমার দেশের দর্শকরা এ’দেশীয় চ্যানেলের অনুষ্ঠান না দেখেন ভারতেরগুলি দেখেন?
২। কেন কম বাজেটে কিছু ঘরবাড়ীতে ও কিছু স্টুডিওতে ধারণকরা গৎবাঁধা অনুষ্ঠান নিয়ে, যার মাত্র ছয়-সাত ঘন্টা প্রচার বাকি ষোল-সতের ঘন্টা পুনঃপ্রচার, ওদের চ্যানেল টিকে আছে? অথচ আমাদেরগুলো কুলিয়ে উঠতে পারছে না?
৩। কেন এ যাবতকালে ভারতের কোথাও আমাদের চ্যানেল সম্প্রচার করল না?
নিজে নিজে যা উত্তর পেলামঃ
প্রথমত, যদি সঠিক সময়ে কোন অনুষ্ঠান প্রচার না করে, বা ৩০ মিনিটের অনুষ্ঠানে ১০ মিনিট বিজ্ঞাপন প্রচার করে, বা অনুষ্ঠান নিয়মিত প্রচার না করে সপ্তাহ বা পক্ষান্তরে প্রচার করে, বা বিনোদন চ্যানেলে দিনরাত খবর ও টকশো দেখায় তাহলে দর্শক কি তা দেখবে?
দ্বিতীয়ত, একটা অনুষ্ঠান কত টাকায় চ্যানেলের কাছে বেচা যাবে সে হিসেব না করে পাতায়া, ফুকেট, লন্ডন, আমেরিকা দৌড়ে বিশাল বাজেটের অনুষ্ঠান বানানো, বা অভিনয়ের ‘অ’ না-জানা মডেলদের জোর করে অভিনেতা বা অভিনেত্রী বানানো, বা জনপ্রিয় কোন অনুষ্ঠানের হুবহু কপি বানানো, বা অযোগ্য নির্মাতা দ্বারা নির্মিত জঞ্জাল দর্শককে জোর করে গেলাতে চাইলেই তারা কি তা গিলবে?
তৃতীয়ত, রাজনৈতিক বিবেচনায় বা যোগাযোগের কারণে গণ্ডায় গণ্ডায় যে সব চ্যানেল সম্প্রচারের অনুমতি পাচ্ছে, এদের না আছে অবকাঠামো, না আছে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, না আছে নিজস্ব স্টুডিও, না আছে অনুষ্ঠান নির্মাণের দক্ষতা। তারপরও এরা টিভি চ্যানেল চালাচ্ছে, এদের এই অযোগ্যতার দায় দর্শক বহন করবেন কেন?
সবশেষে আমরা দর্শকরা কী করি?
নিজ দেশের চলচ্চিত্রকে আইএসও মানদণ্ডে শ্লীলতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে করি। কিন্তু দিব্যি সপরিবারে ‘শিলা কি জওয়ানি’ বা ‘বেবি ডল’ দেখি, বা বউ শাশুড়ি একত্রে বসে মিলেমিশে এদের ঝগড়াঝাটি দেখি, বা নিজেরা নিজেদের জীবনে যা কখনই মানব না সেই পরকীয়া রসিয়ে রসিয়ে দেখি। স্বনামধন্য দেশি শিল্পীদের লাইভ অনুষ্ঠানে ফোন দেয়াতো দূরে থাক দেখিওনা, অথচ ওপারের রদ্দিমাল এলেও দাদা-দিদি বলতে বলতে ফোন করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হই।
যতদিন আমাদের এই স্ববিরোধীতা, ভণ্ডামী, আত্নসম্মানবোধহীনতা, অকারণ চামচামি, দুর্বলতা, অযোগ্যতা দূর না হবে ততদিনে প্রাণের মত বাকিরাও ভারতীয় চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেয়া শুরু করবে। জিবাংলা বা স্টার জলসার দাপটে দেশি চ্যানেলগুলি সিনেমাহলের মত বন্ধ হতে থাকবে আর পাখি বা কারিনা ড্রেস কিনতে না পেরে কোন টিনএজার গলায় দড়ি দিবে।
অভিমন্যু
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
মন্তব্য
একটা নাটক শুরু করে রাত আটটায়, খবর আর বিজ্ঞাপনের চোটে সেটা রাত বারোটায়ও শেষ হয়না। এরকম হলে কার ঠেকা পড়েছে বসে বসে এই জিনিস দেখবে যখন তার কাছে আছে অন্ত:ত আরো আধা ডজন বিদেশি চ্যানেল?
তারপরও যদি তার মান ভাল হত। নাটকের নাই কোন স্ক্রিপ্ট, নাই কোন ভাল গল্প। বেশির ভাগ অভিনয়ের অও জানেনা। কোথায় গেল আমাদের হুমায়ুন ফরিদী, গোলাম মোস্তফা, সুবর্ণা মোস্তফা, আফজাল, শহীদুজ্জামান সেলিমের নাটক??
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
একসময়ে দেশের মানুষ বিটিভির নাটকের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকতো - এটা কি শুধুই একটা চ্যানেল ছিল বলে? আংশিকভাবে সঠিক মনে হতে পারে। কিন্তু আরো বড় কারণ নাটকের মান আর কারিগরী দৈন্যতা। আপন সংস্কৃতি সবার কাছেই আপন - কিন্তু তার সঠিক উপস্থাপনও দরকার আছে। এখনকার যুগে আপনি দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখতে পারবেন না - সত্যকে বরং আরো ভালো ভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
____________________________
অবশেষে সুখবর। দুটো অখাদ্য জিনিস টিভি পর্দা থেকে দূর হবে। শুধু দুটো কেন, এই জাতীয় নাটক নামের অ্যাকশান নাট্যামির সবগুলো ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া উচিত। আমি যতবারই এসব সিরিয়ালে চোখ দিয়েছি ততবারই কিছু মানুষের মুখের উপর ক্যামেরার জুম ইন আর জুম আউট দেখেছি, আর ব্যাকগ্রাউণ্ডে থাণ্ডারবোল্ড মিউজিক। এই রহস্যটা কোনদিন ধরতে পারিনি, যে জিনিস পাঁচ মিনিট দেখলে আমার বমনোদ্রেক হয় সেটা দেখার জন্য লক্ষ কোটি মানুষ প্রতিদিন প্রতীক্ষা করে কেন? যদিও টিভি দেখি না নিয়মিত, কিন্তু যতটা দেখেছি তাতে তারা মিউজিক বাদে একটা ভারতীয় চ্যানেলও আমার হজম হয় নি।
আমাদের চ্যানেলে বিজ্ঞাপন উৎপাত শালীনতার সর্বশেষ সীমাও ছাড়িয়েছে। নাটক যদি ৩০ মিনিট হয় বিজ্ঞাপন হয় এক ঘন্টা। বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে দয়া করে কোন একটা প্রোগ্রাম চালানো হয়। টকশো বাদে সবগুলোর একই দশা। চ্যানেল৭১ বাদে বাকী সবগুলোয় এই অসভ্যতার চর্চা চলে। দর্শকের কোন চাওয়া টাওয়া তাদের গুনতিতে পড়ে না। একটা বিজ্ঞাপন পরপর পাচ সাতবারও দেখাচ্ছে এমনও দেখেছি। বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য এতগুলো চ্যানেলের কি দরকার বুঝি না। সংবাদের চ্যানেলগুলো দেখলে মনে হবে একই চ্যানেল দেখছি। সবগুলো খবরের সিকুয়েন্সও একদম একই থাকে। এই তামশার দরকারটা কি। সেই্ সংবাদগুলোতেও আবার একতলা দোতলা তিনতলা শিরোনাম। তিন শিরোনাম আমার তিন কোম্পানীর বিজ্ঞাপন। ভবিষ্যতে বিজ্ঞাপন বাড়লে শিরোনাম বাড়তে বাড়তে সংবাদ পাঠকের সিনা পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। সেদিন চ্যানেল২৪ এ দেখলাম এই তিনতলা শিরোনাম ছাড়াও ছাদের দুই কোনায় দুটো বিজ্ঞাপন এমনকি মাঝখানের স্ক্রিনের দুপাশ থেকেও উকি মারছে দুটো শিরোনাম। ফলে কোনটা খবর, কোনটা বিজ্ঞাপন, কোনটা সংবাদচিত্র মাঝে মাঝে বুঝা মুশকিল হয়ে যায়।
আমাদের টিভি চ্যানেলের এসব যন্ত্রণায় অতি বিরক্ত হই। তবু...... তবু বলবো ওই জি জলসা স্টাপ্লাস জাতীয় ভারতীয় চ্যানেলের চাইতে আমাদের নাটক ভালো লাগে আমার। কাহিনী যাই হোক, তাদের চেয়ে অনেক ভালো। আরেকটা অস্বস্তি কম লাগে ক্যামেরার জুম ইন জুম আউট আর কেরেং কেরেং বাদ্যবাজনার অত্যাচার নেই বলে। একদম ফালতু নাটকও ভারতীয় ওই অখাদ্যের চেয়ে উত্তম বলবো আমি। আমাদের মেয়েরা যে ভারতের ওই অখাদ্য সিরিয়ালের চরিত্রের সাজপোষাক দেখে জান দিয়ে ফেলে এটা খুব দুঃখজনক। করুণা ছাড়া আর কিছু করতে পারি না তাদের জন্য।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সুখবর মনে হতে গিয়েও কেন জানি পুরোপুরি তেমন লাগছে না।
ভারতীয় চ্যানেল মানেই শুধু রদ্দি সিরিয়াল নাটক না। আমি অন্তত "মীরাক্কেল" দেখি। জিবাংলা বন্ধ হলে এটা ভীষণ মিস্ করব!
****************************************
অবশ্যই ভালো বাংলা নাটকও হচ্ছে। এদের দর্শকপ্রিয়তা শুধু ইউটিউবের ভিউতে সীমাবদ্ধ। কারণ ইউটিউবে বিজ্ঞাপনের ঝামেলা নেই। তবে মননশীল নাটক কমই হয়।এক সপ্তাহ দেশি চ্যানেল দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে নিয়মিত টিভি দেখতে বসুন, এক সপ্তাহ পর আপনি নিজেই আবিস্কার করবেন কিভাবে যেন জি-বাংলা স্টার জলসার ভক্ত হয়ে উঠেছেন। মা-খালাকে তখন আর দোষ দিতে পারবেন না।
রাজর্ষি
এই আলোচনাটা বছর খানেক পর পর উঠে আসে। আমি অনেক আগে একবার একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আবার দিচ্ছি।
দর্শকের কাছে নাটকের পরিবেশনে দুটো সমস্যা। এক, নাটকের মান। দুই, ঘনঘন বিজ্ঞাপন। এই দুটোর পেছনে একটাই কারণ, চ্যানেল সংখ্যা বৃদ্ধি। ব্যাঙের ছাতার মতো চ্যানেল গজিয়ে ওঠার কারণে বিজ্ঞাপনের নির্দিষ্ট বাজারের দিকে এখন অনেকগুলো স্লট তাকিয়ে আছে। চাহিদা আর সরবরাহের নিয়ম অনুযায়ী, এসব বিজ্ঞাপন স্লটের দাম কমে গেছে। আগে হয়তো তিনটা বিজ্ঞাপন দেখালেই নাটকের দাম উঠে গিয়ে লাভের মুখ দেখার উপায় ছিলো। এখন দেখাতে হচ্ছে পনেরোটা। আবার একই সাথে নাটকনির্মাতাকেও আগের চেয়ে কম দামে নাটক বিক্রি করতে হচ্ছে চ্যানেলের কাছে, কাজেই সেও নাটকের পেছনে সময় আর মেধা খরচ করছে আগের চেয়ে কম।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে সিণ্ডিকেশন। নাটকনির্মাতা একটা চ্যানেলের কাছে দুই লক্ষ টাকায় নাটক বিক্রি না করে যদি দশটা চ্যানেলের কাছে দশ লক্ষ টাকায় নাটক বিক্রি করতে পারতেন, তাহলে চ্যানেলগুলোও অর্ধেক দামে নাটক কিনতে পারতো, আবার নির্মাতাও পাঁচগুণ দামে নাটক বিক্রি করে নিজের নাটকের পেছনে আরো বাজেট ঢেলে সেটাকে জাতে তুলতে পারতেন। এই নাটক ঐ দশ চ্যানেল নিজেদের মধ্যে শিডিউল ভাগ করে দেখাবে। অর্থাৎ চ্যানেল চিচিঙ্গা যদি জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নাটকটা দেখায়, তাহলে কাকরোল টিভি সেটাকে দেখাবে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে। দর্শক এখন আগের চেয়ে অনেক ব্যস্ত, কাজেই এক চ্যানেলে কোনো নাটক মিস হয়ে গেলে সে পরে অন্য চ্যানেলে ঠিকই দেখে নেবে।
টি আর পি রেটিংয়ের ব্যাপারটার কি হবে তাইলে? একই প্রোগ্রাম একাধিক চ্যানেল কিনবেনা প্রতিযোগিতার কারণে। আমার মনে হয়না বাজেটের জন্য সমস্যা, ফুকেট পাতায়া না গিয়ে কাহিনীর পিছনে সময় দিলেই হয়। আসল কারণ সদিচ্ছাটার অভাব। সবার ছাড়াছাড়া মনোভাব। কোনরকমে মোশা করিম, তিশা, তাহসান, অপূর্বরে দিয়া কিছু একটা নামায় দিলেই হল।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ইউটিউবের এইচডি কোয়ালিটির যুগে এই বুদ্ধি কাজে আসবেনা, একবার কোনো নাটক ইউটিউবে আপলোড হলে এর আবেদন কমে আসবে অনেকটাই। কাকরোল টিভি মোটেও সমান দাম দিয়ে এই নাটক কিনবেনা, এবং সেটা আনফেয়ারও না।
২য়ত, ঈদের কথা মাথায় রেখে যে বিপুল সংখ্যক নাটক তৈরী হয়, সেগুলো টাইম সেন্সিটিভ, এগুলোও এভানে বেচা যাবে না।
--দিফিও
সমান দামে কেনার দরকারও নাই আসলে। প্রাইস শেয়ারিঙের একটা অ্যালগোরিদম ডিজাইন করে ট্যাব রাখা যায়। কোন নাটক কোন টিভি কার আগে কার পরে কবে দেখাবে, সেটাও একইভাবে নির্ধারণ করা যায়। যে আগে দেখাবে, সে বেশি দাম দেবে, বাকিরা ক্রমহ্রাসমান হারে দাম দেবে।
ভারতীয় চ্যানেলের প্রচারিত সিরিয়ালগুলোর প্রচার পাওয়ার পিছনে ঠিক ঠিক কী কী ফ্যাক্টর আছে সেটি গবেষনার বিষয় হতে পারে, আশা করি করবেন আমাদের মেকার রা। তবে আমার কাছে এখানে নারীর ক্ষমতায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর মনে হয়। "রাশি" সবচাইতে জনপ্রিয় সিরিজগুলোর একটি যেখানে রাশি একজন স্বাধীনচেতা নারী,একলাই সে সমাজ পাল্টায়ে ফেলতেছে,রাজনীতিবিদদের সাথে ফাইট করতেছে। এছাড়া পারিবারিক ক্ষমতার দ্বন্দ্বে নারীর বিশেষ ভুমিকা(পজেটিভ,নেগেটিভ দুটোই) এই সিরিয়ালগুলোর জনপ্রিয়তার একটি উৎস বলে মনে হয় আমার কাছে। সোজা বাংলায় "পারিবারিক রাজনীতি" এই সিরিয়ালগুলোর "কি ইনগ্রেডিয়েন্ট"। যেহেতু আমাদের দেশের বেশিরভাগ নারীই গৃহবধু তাই এই পারিবারিক রাজনীতির ব্যাপারটা তাদের আগ্রহী করে তোলে। আর ক্যামেরাতে এক চেহারা একশ বার,একটি ইমোশনকে নিয়া ত্যানা প্যাচানি,ত্যানা প্যাচানি,ত্যানা প্যাচানি আসলে দর্শককে ধরে রাখতে কি ভুমিকা রাখে সেটাও মনে হয় গবেষনার বিষয়। খেয়াল করে দেখবেন একই রকম ইফেক্ট আমরা বাংলা সিনেমাতেও দেখি। নায়ক চেইত্তা যাওয়ার দৃশ্যটা দশ এ্যাংগেল থেকে দশবার দেখানো হয়। আমার মনে হয় দর্শকের মাঝে ইমোশনটা ঢুকায়ে দেয়ার পিছনে এই ইফেক্ট কাজ করে। আমি স্পেশালিস্ট না, তাহারা বলতে পারবেন হয়ত।
দেশের নাটকের মান উন্নতিকল্পে কি করা যায় তা আমি জানিনা। তবে একটা কাজ করা ভীষন জরুরী,তা হলো চ্যানেলগুলো কি ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারবে সেই ক্ষেত্রে নীতিমালা। যেমন ধরেন এই মুহুর্তে ইন্ডিয়াতে এটম বোমা পরলেও সনি টিভি বা জি বাংলাতে নিউজ দেখাইয়া সেটা প্রচার করবেনা, কারন তারা বিনোদনের চ্যানেল। আবার স্টারস্পোর্টসে নাটক দেখাবেনা। মেইন কথা হইলো "স্পেশালাইজেশন"। একটা চ্যানেল তার চ্যানেলের ধর্ম অনুযায়ী অনুষ্ঠান দেখাবে। আমাদের কনসেপ্ট এখনও হানিফ সংকেতের "ইত্যাদি" তে আটকে আছে। এক অনুষ্ঠানে আমরা হাসি,গান,উপদেশ,দূখ,সমাজ সচেতনা সব আশা করি। এই জায়গাটাতে কাজ করা জরুরী। খবর আর টকশো ব্যাপারটারে কিছু চ্যানেলের হাতে দিয়া বাকিদের শুধু বিনোদন মূলক অনুষ্ঠান প্রচারে বাধ্য করলে তারা নাটকের মান উন্নতি করতে বাধ্য থাকবে। আর সবার আগে এই জাতীয় ম্যাগা সিরিয়াল তৈরি করার মতো নির্মাতা লাগবে। যত কথাই বলি না কেনো মেগাসিরিয়াল ছাড়া ডিশের যুগে চলা সম্ভব না।
হিমু ভাইয়ের সাথে একমত হইতে পারলাম না। এক নাটক একাধিক চ্যানেলে গেলে সেইক্ষেত্রে চ্যানেলের ব্র্যান্ডিং এ একটা সমস্যা হবে। আপনে ইন্ডিয়ার চ্যানেলগুলো একটু ক্লোজলি দেখলে দেখতে পাবেন যে তারা এই ব্র্যান্ডিংটা বেশ ভালোভাবেই করতে সক্ষম হইছে।সনি টিভির প্রোগ্রামের সাথে স্টার প্লাসের প্রোগ্রামের মিল পাইবেন না, এমনকি অভিনেতাদেরও ব্র্যান্ডিং করে ফেলতেছে তারা। কিছু অভিনেতা থাকে মার্কা মারা,যারা এক চ্যানেলেই কাজ করে।সনিতে অপরাধ মূলক অনুষ্ঠান বেশি দেখায় আবার স্টারে দেখায় জি-বাংলা টাইপ। এতে দর্শকদেরও সুবিধা হয়।
বন্ধ করাটা আমার কাছে সমাধান মনে হয়না। ব্যাপারটা এইরকম না যে বলিউডি সিনেমার লগে এফডিসিরে লাগাইয়া দিছে কেউ যেখানে "লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড" ঠিক করা হয় না। বরং আমাদের নাটকের চাইতে তাদের ঘরের মধ্যেই করে ফেলা সিরিয়ালগুলোর বাজেট অনেক কমই হবে। সেইখানে যদি আমরা কম্পিট করতে না পারি তবে সেটা আমদের ব্যার্থতা। নিজেদের ব্যার্থতা স্বীকার না কইরা, কাজ না কইরা আরেকজনের সাফল্য (সেটা যেভাবেই আসুক,তারা ত পর্নোগ্রাফি দেখাইতেছেনা) নিয়া জ্বলুনি হইলে ক্যামনে কি?
---------------------
আশফাক(অধম)
সুন্দর একটা আলোচনার অবতারণা করেছেন। ধন্যবাদ।
মানের কোনও বিকল্প নেই। মানসম্মত অনুষ্ঠান দিতে পারলে মানুষ এমনিতেই দেখবে। আমার মনে পড়ে ইটিভির সময়কার কথা। সেই সময় হিন্দি জিটিভিও ছিলো, তাতে এধরণের সিরিয়ালও চলতো। তখন কিন্তু মানুষ ঠিকই ইটিভির নাটকের দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতো।
আমার মনে হয় বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের সামগ্রিক মান নিয়ে চিন্তিত হবার যথেষ্ঠ কারণ আছে। নাটক একটি মাধ্যম মাত্র। সংবাদনির্ভর চ্যানেলগুলোর কী অবস্থা? ইত্যাদি ছাড়া শেষ কবে একটি ভালো ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান হয়েছে? আলোচনা অনুষ্ঠানগুলো কেমন হচ্ছে? বাচ্চাদের অনুষ্ঠান কি আদৌ হচ্ছে, হলে কেমন হচ্ছে?
দর্শকদের সামগ্রিকভাবে ভালো মানের অনুষ্ঠান উপস্থাপন করা হচ্ছে না, তার উপরে আকাশ খোলা, তার উপরে যোগ হয়েছে আমাদের দেশি ঠাকুর ফেলে বিদেশী কুকুরের পেছনে ছোটার প্রবৃত্তি। সব মিলিয়েই আজকের এই অবস্থা। উত্তরণের উপায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকেই উদ্যোগি হতে হবে। এভাবে চললে হবে না।
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
"নিজ দেশের চলচ্চিত্রকে আইএসও মানদণ্ডে শ্লীলতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে করি। কিন্তু দিব্যি সপরিবারে ‘শিলা কি জওয়ানি’ বা ‘বেবি ডল’ দেখি, বা বউ শাশুড়ি একত্রে বসে মিলেমিশে এদের ঝগড়াঝাটি দেখি, বা নিজেরা নিজেদের জীবনে যা কখনই মানব না সেই পরকীয়া রসিয়ে রসিয়ে দেখি। স্বনামধন্য দেশি শিল্পীদের লাইভ অনুষ্ঠানে ফোন দেয়াতো দূরে থাক দেখিওনা, অথচ ওপারের রদ্দিমাল এলেও দাদা-দিদি বলতে বলতে ফোন করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হই।"
এই ভন্ডামিতা আমাদের জাতিগত সমস্যা এবং এর প্রসার শুধু টিভি চ্যানেল নিয়ে না, সবখানেই। আমরা যেই ফেসবুক দিয়ে বাঁশের কেল্লার মত পেজে গিয়ে ফটোশপ করা ছবিতে 'মাশাল্লাহ!' বলে লাইক দেই ও 'নাস্তেক সরকারের পুসি কায়ে' বলে হুঙ্কার দেই, তারপর সেখানেই সানি লিওন অথবা ১৮+ চটি পেজে লাইক দিয়ে রাখি এবং সেখানে সর্বদা বিচরন করে সুরসুরি খুঁজি। আমরা খুবই বিচিত্র একটা জাতি।
- ইয়ামেন
১।
হুঁহ্হ্! ভাত দেয়ার মুরোদ নাই কিল মারার গোঁসাই আইছেন!!!
স্যরি, একটু মজা করলাম। সিরিয়াসলি না। তবে কথা হচ্ছে - স্রেফ কিল, নীতিকথা বা উপদেশ দিয়ে যেমন ভাতের অভাব পূরণ হয় না, তেমনি বিনোদনের অভাবও পূরণ হয় না। দেশে চালের ঘাটতি পড়লে ভারতীয় চাল আসবে, যেমন আরও বহু পণ্য আসছে। আপনি কি সবকিছু বন্ধ করে রেখে মানুষকে না খেয়ে থাকতে বলবেন? নাকি বলবেন দুনিয়ার তাবৎ জিনিষ আমরাই উৎপাদন করব? নাকি বলবেন, যেমনটা এখন বলছেন - যা আপনার ভাল লাগে না, শুধু সেটাই বন্ধ করতে চান? তাহলে প্রশ্ন আসবে - আপনার ভালমন্দ অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার অধিকার আপনাকে কে দিল, কিম্বা কে আপনাকে বিচারক নির্ধারণ করল (এখানে 'আপনি' মানে বন্ধাবন্ধিতে উৎসাহী বা সমর্থক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী)? স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, দেশের একটা বিশাল অংশের মানুষ এই নাটকগুলি দেখছে। আপনি কি মনে করেন তাঁদের বিচারবুদ্ধি আপনার চেয়ে কম? এতই কম যে, তাঁরা কি দেখবেন না দেখবেন সেটা আপনি জোর করে নির্ধারণ করে দেয়ার বা বন্ধ করে দেয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন এবং অধিকারী? এর ভিতর কি একটা গোপন কর্তৃত্ববাদী / ফ্যাসিবাদী / মেগালোম্যানিয়াক মানসিকতার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না?
আপনার-আমার বা আমাদের মত কিছু "আঁতেল" পুরুষদের ভাল লাগে না ভাল কথা, কিন্তু তাঁদের - আমাদের মা-খালা-বোন-স্ত্রী (বিশেষ করে তাঁরা যদি ইংরেজি ভাষা ও সংস্কৃতিতে খুব স্বচ্ছন্দ না হন) গৃহকর্মী সহ দেশের নারীসমাজের - এবং পুরুষদেরও - এক বিশাল অংশকে সম-বা-উন্নততর ও আকর্ষনীয়তর বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা করে না দিয়ে তাঁদের অনেকের জন্যই স্বভাষায় প্রায় একমাত্র সহজলভ্য সাংস্কৃতিক বিনোদনের উৎসটা বন্ধ করে দেয়াটা কি আপনার কাছে অত্যন্ত নিষ্ঠুর, হৃদয়হীণ, অমানবিক এবং অন্যায় মনে হচ্ছে না? তাছাড়া এই বিরাট জনগোষ্ঠীকে আপনি কলমের মাত্র হাতে-গোণা কয়টা আঁচড়ে প্রায় রদ্দিখেকো বোকা-পাঁঠার পর্যায়ে নামিয়ে আনলেন! সরাসরি বলেননি হয়তো, কিন্তু আপনার বিশ্লেষণ থেকে ঐরকম ধারণা কেউ করে নিলে কি খুব ভুল হবে? এটাকে কি আপনার কাছে প্রচণ্ড অহমিকাপূর্ণ, জাজমেন্টাল, সামন্তবাদী ও পুরুষবাদী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ মনে হচ্ছে না? আপনার মনে কি একবারও এই বিকল্প ভাবনাটা এসেছে যে, যারা এসব সিরিয়াল দেখেন তারা আসলেই হয়তো এত ঘিলুহীণরূপে স্ববিরোধী, ভণ্ড, আত্নসম্মানবোধহীণ, অযোগ্য, দুর্বল ও অকারন চামচামি-স্বভাবসম্পন্ন নন -- আঁতেলদের ভাষায় বস্তাপচা ভারতীয় নাটকগুলির মধ্যে হয়তো পজিটিভ এমন কিছু আছে - যা আপনার-আমার মত আঁতেল পুরুষদের চোখে না পড়লেও - তাঁদের চোখে ঠিকই পড়েছে এবং সেজন্যেই তাঁরা সেগুলি উপভোগ করেন?
২।
তাছাড়া শুধু ২টা বাংলা চ্যনেল কেন? একই যুক্তিতে নানারকম পার্সিভ্ড নেগেটিভ বা ক্ষতিকর বিষয়াদি থাকার কারনে হিন্দী-বাংলা-ইংরেজি সহ আরও বহু চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া উচিৎ (আমার ব্যক্তিগত মত চাইলে বলবো - দ্যান, সবগুলিই বন্ধ কইরা দ্যান! চলেন সবাই মিলে বই পড়া শুরু করি)। সেসব বিষয়ে কথা না বলে শুধু ২টা বাংলা চ্যনেলের পিছে লাগলে তো সেটাও কি "স্ববিরোধী" ও "ভণ্ডামিপূর্ণ" হয়ে যায় না?!
৩।
চুলচেরা?!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
ঘিলুখেকো মস্তিষ্কশুন্যকারী ভ্যাকুয়াম-পাম্প টাইপের দেশি মেইনস্ট্রীম ছবি চুলমাত্র চেরাচিরি না করে অন্ধের মত দেখে গেলেও যে কোন জীবিত মানুষের মাথা মিশরীয় মামির মত মগজশুন্য খুলিতে পরিণত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এইসব ছবির অর্ধশিক্ষিত-আবাল-বলদ-জোকার টাইপের নায়কগুলার কোন বাস্তব ডায়লগ (সাক্ষাৎকার ইত্যাদিতে) শুনলেও যেকোন সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। শুধু দেশপ্রেমের বটিকা খাইয়ে তাকে সুস্থ করা যাবে না।
৪।
স্যাটেলাইট চ্যানেল আসার আগেও তো তথাকথিত দেশি মেইনস্ট্রীম সিনেমা শিল্পকে উন্নতির আশায় দশকের পর দশক প্রোটেকশন দেয়া হয়েছে। এখনও দেয়া হচ্ছে মনে হয়। এইভাবে প্রোটেকশনের এই পরীক্ষা সম্পূর্ণ ফেল। এতসব প্রোটেকশন সত্ত্বেও এই শিল্পে অন্তহীণ ল্যাদানি ছাড়া আর কি উৎপন্ন হয়েছে গত ৪২ বছরে? (সামান্য কিছু ব্যাতিক্রমের উদাহরণ দিয়ে লাভ নেই)। দেশের মানুষ তো এমনি এমনি মুখ ফিরিয়ে নেয়নি! সুতরাং স্যাটেলাইট / ভারতীয় চ্যানেলকে দোষ দিয়ে ফায়দা নাই। আর দেশি চ্যানেলগুলিকেও একইভাবে প্রোটেকশন দিয়ে কোন লাভ নেই - ফল একই হবে। আসলে সম্ভবত দেশি সিনেমা ব্যবসায়ীরা একসময়ে সম্পূর্ণ নিজেদের বেনিয়াস্বার্থ ও শ্রেণীস্বার্থে যেমন সরকারের কাছ থেকে ভারতীয় ছবি থেকে প্রোটেকশন পাওয়ার ব্যাপারটা আদায় করে নিয়েছিলেন, বর্তমানের এই বন্ধাবন্ধিও সম্ভবত সরকারের ঘনিষ্ট টেলিবেনিয়াদের বিশুদ্ধ বেনিয়াস্বার্থসন্ধানী প্রভাবের ফসল। এদের শুভবুদ্ধি বা সদুদ্দেশ্য সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র আস্থা নাই। দর্শক এবং বিশেষ করে প্রাণ গ্রুপের মত বড় বিজ্ঞাপনদাতাদের ভারতমুখী হতে দেখে এরা ভীত বা ঈর্ষান্বিত হইতেছে হয়তো। অন্যান্য অনেক বিজ্ঞাপনদাতাও এখন সম্ভবত কেবল অপারেটরদের টাকা দিয়ে ভারতীয় চ্যানেলের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের সময় নিজেদের বিজ্ঞাপন স্ক্রীনে ইনসার্ট করে। গতবছর জিবাংলায় "মীরাক্কেল" দেখানোর সময় স্ক্রীনে্র কোনা দিয়ে আলটপকা অনেক বিজ্ঞাপন লাফালাফি করতে দেখেছি - যেগুলি বুঝাই যাচ্ছিল জিবাংলা থেকে সম্প্রচারিত না। এইগুলাও মিস। হয়তো এগুলাও কারন। আসল কারন যাই হোক সেটা আসলে ভাল কিছু বলে বিশ্বাস হয় না। আর কাজটাও ভাল হয় নাই। বিশেষ করে এইভাবে।
মোদ্দা কথায় ঐসব চ্যানেল বন্ধ করে দেশি চ্যানেলের প্রোগ্রামিং বা তার মানের কোনই উন্নতি হবে না। যেমন হয়নি চলচ্চিত্র শিল্পে। উন্নতির জন্য যা যা করা দরকার (সেটা আরেক বিশাল ব্যাপার আমার মতে এবং কোনদিনও হবে কিনা সন্দেহ!) সেগুলি আগে সম্পন্ন করে তারপর বন্ধাবন্ধিতে হাত দিলে তখন সেটা গ্রহণযোগ্য হত হয়তো। এখন যেটা হচ্ছে সেটা সম্ভবত স্বার্থে পা-পড়া ঈর্ষাকাতর একটা টেলিবেনিয়া শ্রেণীর বেনিয়াস্বার্থে কিছু লোকের দেশপ্রেমের সেন্টিমেন্ট ভাঙিয়ে নিছক নিজেদের স্বার্থসেবা করার একটা চেষ্টা।
=============================================
এতক্ষণ "ডেভিল'স এ্যডভোকেসি" করলাম। নয়তো জিবাংলা-টাংলার ঐসব টেলিসিরিয়াল্গুলিও আমার কাছে খুব একটা কম মস্তিষ্কশুন্যকারী ও ঘিলু-ভেপরাইজার মনে হয় না! আমাদের সংস্কৃতির আকাশ থেকে এই আবর্জনাগুলি দূর হলেই খুশি হই। তবে আমি আমার মনে হওয়াটা জোর করে অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে আগ্রহী নই বা নিজে উন্নতি না করে বা সেজন্যে বিন্দুমাত্র দৃশ্যমান চেষ্টা না করেই কোনরকম বন্ধাবন্ধির সমর্থক নই।
ধন্যবাদ।
****************************************
মন্তব্য ভালো লাগলো, তবে পয়েন্ট নং ১ এবং পয়েন্ট নং ৩ পরস্পরবিরোধী একদিকে কইতেছেন লেখকের মনোভাব জাজমেন্টাল, আবার নিজেই বাংলা সিনেমার নায়করে জাজ কইরা বললেন "অর্ধশিক্ষিত-আবাল-বলদ-জোকার"
--দিফিও
১।
যে কোন ওয়ার্ক অফ আর্ট, এন্টারটেনমেনন্ট বা পারফর্মেন্স - কিম্বা শিল্পী/ অভিনেতা ইত্যাদি - কিম্বা যেকোন কিছু যা ব্যাপক জনসাধারণের নামে বা তাঁদের জন্য করা হয় এবং সেগুলি যারা করেন (যেমন রাজনীতিবিদ) - পাব্লিক স্ফেয়ারে নিজেদের বা নিজেদের কাজ উপস্থাপনের মাধ্যমে, জনগনের অর্থ / সময় / মনোযোগ ইত্যাদি দখলের মাধ্যমে - নিজেদেরকে অন্যের বিচার-বিশ্লেষণ-সমালোচনার বৈধ টার্গেট বা পাত্র হিসেবে স্বীকার করে নেন। সভ্য গণতান্ত্রিক সমাজে এটাই দস্তুর। আপনি বড়জোর বলতে পারেন - আমার ব্যবহৃত বিশেষণগুলি খুব সুন্দর-শোভন হয়নি বা আপনার রুচিসম্মত হয়নি। কিন্তু সমালোচনা করা ঠিক হয়নি এটা বলতে পারেন না। পক্ষান্তরে, সাধারণ দর্শকশ্রেণী কারওরই পায়ে পাড়া দেননি, কোনরকম পাব্লিক স্ফেয়ারে নিজেদের উপস্থাপন করেননি - সম্পূর্নভাবেই নিজস্ব প্রাইভেট স্ফেয়ারে একান্তই নিজেদের ব্যক্তিগত অধিকার ও চয়েসের চর্চা করছেন। এইক্ষেত্রে অন্যের কি বলার আছে?
২।
২য়তঃ আমি বাংলা সিনেমা বা তার নায়কের সমালোচনা করলেও তার কাজ করে যাওয়ার অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করার কথা বলছি না, তাকে ব্যান করার কথা বলছি না - যেমনটা লেখক, সরকার ও আমাদের নিমকম্পুপ টেলিবেনিয়াগোষ্ঠী বলছেন সাধারণ দর্শকদের ক্ষেত্রে।
৩। জাজ করা আর জাজমেন্টাল (১, ২) আচরণ করা - ঠিক এক জিনিস না।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আমার আগের কমেন্টের ১ ও ৩ নং পয়েন্টের মধ্যে আসলে তেমন কোন পরস্পরবিরোধিতা নেই!
ধন্যবাদ।
****************************************
ধন্যবাদ সবাইকে পোষ্টা পড়া ও মন্তব্য করার জন্যে।
মন মাঝি,
হয়ত আপনার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে নাহয় আপনি বুঝতে ভুল করেছেন !!
১। আমি কোথাও একতরফা শুধু সিরিয়ালের দর্শককে ‘স্ববিরোধীতা, ভণ্ডামী, আত্নসম্মানবোধহীনতা, অকারণ চামচামি, দুর্বলতা, অযোগ্যতা”র দায়ে দুষ্ট করেছি কি? কাদের কাদের উদ্দেশ্য করে বলে তা একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবে, অন্যথায় আমি আপনাকে সাহায্য করব।
ভাই কই পাইলেন আমি আমার মনোভাব অন্য সবার উপর চাপিয়ে দিচ্ছি বা আমাকে নিষ্ঠুর বা অমানবিক মনে হবার কারনটাই বা কি? বরং আমারতো মনে হয় আমাদের দর্শকরা ক্রমশ এসবের কু-প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে যার প্রমান পাখি ড্রেস।
২। দুইটা কেন আমি কোথাও বলেছি কি চ্যানেল বন্ধ করে দিতে !!! বরং আমি বিশ্বাস করি দ্বার রুদ্ধ করে কিছুই রোখা যায়না তাই আমি নিজেদের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি, যেন এ থেকে নিজেদের উন্নতির পথ বের করা যায়। তাই স্ববিরোধী বা ভন্ডামির প্রশ্নই আসেনা।
৩। রাতদিন বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত দক্ষিণ ভারতীয় বা তার রিমেক হিন্দি বা বাংলা মুভিগুলি কি খুব বাস্তব সম্মত বা সুস্থ ?
৪। প্রটেকশন মনেহয় খুব একটা কার্যকর নয় কারন ছবি আমদানীর নামে ও তথাকথিত যৌথ প্রযোজনার নামে ভারতীয় বাংলা ছবি কিন্তু বাংলাদেশের হলে প্রদর্শিত হচ্ছে।
পরিশেষে দয়াকরে পোষ্টা আবার পড়বেন দেখবেন আপনার মত আমার চাওয়ার তেমন পার্থক্য নেই আর আমি যে “অহমিকাপূর্ণ, জাজমেন্টাল, সামন্তবাদী ও পুরুষবাদী” নই বা আমার “মনের হওয়াটা জোর করে অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে আগ্রহী নই” ।
ধন্যবাদ
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
"ইস প্যায়ার কো " নামের সিরিয়াল স্টার প্লাসে দেখানো হ্ত জি টিভিতে ন্য়। সব ঠিকমত জেনে লিখূন
ধন্যবাদ Tushi , এই তথ্যটার ব্যাপারে অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে আমার আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল। যাক ভবিষ্যতে সচেতন থাকবো। আমার সংশোধন করার ক্ষমতা নাই তাই সংশোধন করতে পারলাম না।
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অনেকদিন পর সচলে এসে দেখি জমজমাট আলোচনা।
কয়েকটা কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না।
প্রথমত, আমাদের এখানে(পশ্চিমবংগে) পাব্লিক সিরিয়াল নেশায় বুঁদ এটা অস্বীকার করব না। তার মানে এটা নয় সবাই ভালোবেসে দেখছে। চক্রবুহ্যে ফেঁসে গিয়ে এখন হাঁসফাঁশ অবস্থা দর্শকূলের। আমাদের বাড়ীতে রাত সাতটা থেকে দশটা অবধি টানা চলে এটা সেটা। যদি বলি, কী দেখ এসব? বলে, কি করব, একটা কিছু নিয়ে তো থাকতে হবে।
এ ব্যাপারটা জানেন কি, এখানকার যুব সমাজের এক বড় অংশ বাংলাদেশী নাটকের ভক্ত। বিশেষ করে মোশারফ করিম। বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে হানা দিলে হার্ড ডিস্ক চল্লাশী চালালে গাদাগাদা মোশারফ, তিষা, মিশু কে খুঁজে পাওয়া যাবে। সবই ডাউনলোডিত। শুধু নাটক নয়। সিরিয়ালও কম যায় কিসে? মাস কয়েক আগে বন্ধুরা মিলে টানা এক সপ্তাহ ধরে 'হাউস্ফুল' বলে একটা সিরিয়াল দেখলাম ইউটিউবে। এত কম বাজেটে যে দর্শকদের এমন নির্ভেজাল আনন্দ দেওয়া যায়, দেখে চমৎকৃত হয়েছি।
- দীপালোক
ধন্যবাদ দীপালোক ।
তাহলেই বোঝেন চাইলেই অল্প পয়সাও আনন্দ দেয়া যায় আর মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের যন্ত্রনা না থাকলে তা ইউটিউবে না দেখে টিভিতেই দেখত।
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
ভালো থাকবেন।
------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
নতুন মন্তব্য করুন