আসকিরিমের কাঠি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৩/০৮/২০১৪ - ১:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

০০০০

আমার ছোট মেয়েটার নাম মুনিয়া; ঠিক একটা পাখির মতোই কটকটি হইছে বেটি; সারাদিন তুরতুর তুরতুর করে! বয়স এখনো তিন পুরে নাই, কিন্তু পাকনা বুড়ির ঠাস ঠাস আধো-আধো কথাই আমার নিরানন্দ সংসারে আলো জ্বালায় রাখে!

সরকারী দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীর বেতন শুনলে রিকশাওয়ালাও মুখ ভেঙচিয়ে গর্বে বুক ফুলায়!

আমার কোন শত্রুও যদি বলে আমি ঘুষ খাই, আমার অস্বীকার করার কোন উপায় নাই; কিন্তু- তাও তো দিনে চার-পাঁচশ বড়জোড়! উপড়ি ইনকামের কি কোন গ্যারান্টি আছে?

প্রতিদিন অফিস যাবার সময় এলেই মুনিয়া কোত্থেকে এসে গলা জড়িয়ে ঝুলে থাকে! আহারে, কি মায়া!

যখন ঠোঁট গোল করে গালে হাম্মি দিয়ে বলে, বাবা আমাল কাটি আচকিলিম আইনো?

কইলজাতে মোচড় দেয়; ইচ্ছা করে বলি- আম্মা, কাঠি আসকিরিম ক্যান খালি; তুমার যখন যা লাগবো আমি রক্ত বেঁইচা হলেও আনবো, চিন্তা কইরো না।

কয় মাস ধরেই, এই হলো আমার দিনের শেষ রুটিন- প্রতিদিন বাসায় ঢোকার আগ-মুহূর্তে বাসার সামনে চেনা কনফেকশনারী থেকে একটা কাঠি আইসক্রিম কিনি! পকেটে টাকা বেশি থাকলে মাচো, নাহলে চকবার; নিদেনপক্ষে একটা ললি বা কুলপি!

ট্যাকা না থাকলে বাকী; কিন্তু কাঠি আইসক্রিম আমি নিবোই।

দু’একদিন ভালো আইসক্রিম কেক বা কোন বা কাপ নিয়ে দেখছি, মেয়ে ছুঁয়েও দেখে না। এর কারন অবশ্য আমার বউ চুপি চুপি দেখাইছে একদিন- ওর মার একটা পুরনো ভ্যানিটি ব্যাগে মেয়ে সবগুলো কাঠি জমিয়ে রাখে!

আজিব শখ তাই না? কেন করে?

কি জানি কেন করে!

বাচ্চাদের কত অদ্ভূত ধরনের হ্যাবিট থাকে তা আপনিও বুঝতেন যদি আপনার ওরকম একটা পাকনা বুড়ি থাকতো!

যাই করে, তাতেই আদর লাগে। মুখটার দিকে একবার তাকালেই সারাদিনের-সারাজীবনের রাগ-দু:খ-হতাশা একলহমাতেই ফর্সা।

তো, ওর এই হ্যাবিটের মাজেজা বুঝলাম এক কলিগের বিয়েতে গিয়ে; আরেকটু খোলাসা করে বলা যাক সেদিনের কথা।

০০০০

সেদিন-

মনটা একটা সিগারেট-সিগারেট করতেছিল; পকেটে ইজিলাইটের একটা প্যাকেটে এখনো পাঁচটা বাকী আছে।

কিন্তু, এরম শাহী খানার সাথে একমাত্র বেনসনই যায়; দশ ট্যাকা কইরা এক একটার দাম নেয় আজকাল! বহুদিন হলো, বেনসন কিনে খাওয়ার মতো কলিজা বড় করতে পারি না। আজকে একটা কিনা যাইতে পারে; মাঝে মাঝে আমার মতো ফকিরনির ও দিল খুলে মজা মারতে মন চায়!

কমিউনিটি সেন্টার থেকে কোনরকমে পিছলে বেড়িয়ে এলাম; ঠেঁসে-গলা পর্যন্ত খেয়ে, ঠ্যালাঠ্যালি করে হাত ধুয়ে- সাজিয়ে রাখা ট্রে থেকে নিয়ে একটা মিষ্টিপান মুখে গুঁজেই, গেটের সামনে থাকা সাজু-গুজু করা হরেক-রঙা মানুষের ফাঁক গলে সুড়ুত করে। বকশিশের অপেক্ষায় চিলের মতো ওত পেতে থাকা ওয়েটারকে ম্যারাডোনার মতো একটা ডজ দিতে পেরে, নিজের উপরেই আনন্দ লাগছে।

হেব্বি টেস্টি রান্না হইছিল, খাসির রেজালা খেতে খেতে তো হুশই হারায় ফেলছিলাম; মারাত্বক- দইটাও সেরম জমছিল।বাবুর্চি শালার হাত সোনা দিয়া বান্ধায় দেয়া দরকার!

গলির উল্টা পাশের সিগারেটের দোকান থেকে কে যেন নাম ধরে ডাক দিল, ঐ সেলিম সাব- এদিকে।

গলা শুনে মনে হলো, এসিস্টেন্ট ডিরেক্টর ইকবাল ভাইয়ের।

মনে একটু খুশি জাগলো- বাহ! বয়সে ছোট হলেও, পোস্টে তো ইকবাল ভাই বড়; সো, ফ্রিতে একটা-দুইটা বেনসনও ভাগ্যে জুটার চান্স পুরাই।

কোন কোন দিন এমন যায়, যেদিন সবকিছুই মন মতো হয়।

বাসায় বাড়িঅলার দাবাড় খেতে হয় না, বুড়া বাপ-মার কাইজ্জা হয় না, বউ আসার সময় এত্তবড় বাজারের লিস্ট ধরায় দেয় না কিংবা ছোট্ট মেয়েটা ফ্রকের কোণায় সর্দি মুছতে মুছতে দামী কোন খেলনা-খাবারের আবদার করে না! অফিসে বস কথায় কথায় গরু-গাধার সাথে তুলনা দেয় না কিংবা বাইরে বের হলেই ফ্রি- খাওন-চা-সিগারেট পাওয়া যায়; এমনকি লাক ফেভার করলে বেকুব ধরনের কোন ক্লায়েন্টের কাছ থেকে হুদাই পাঁচশো-হাজার ধান্দা করা যায়!

তেমন একটা দিনে ঈদের চেয়েও শান্তি লাগে মনে।

আজকেও কি তেমন কোন দিন?

হতে পারে!

সবই ঠিকছিল। ভেজাল বাঁধাল প্রকৃতি।

রাস্তায় পা দিতেই গরম একটা কিছু যেন মাথা থেকে পা পর্যন্ত গেঁথে দিল।আরিবাপরে, বাপ!

ঘাড় উঁচু করে আকাশটার দিকে বেজার দৃষ্টিতেই তাকালাম; অজান্তেই কঠিন একটা গাল বেড়ুলো মুখ দিয়ে- কান থাকলে বা মা থাকলে আকাশের রেগে-মেগে আমাকে মারতে আসার কথা গালিটা শুনে।

মধ্য-জ্যৈষ্ঠের ঘোলা সাদা রঙের আকাশে সূর্যের একনায়কত্ব বাড়াবাড়ি রকমের বেশি।আর রোদের কি দাপট! চান্দিতে পরে একবারে শরীরের একদম চিপা-চাপা পর্যন্ত কড়া তেলে ভাজে। শুধু তাই না, হিউমিডিটিও যাচ্ছে-তাই রকম বেশি।

ঘামে শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে শার্ট; আঁঠা-আঁঠা একটা নোংরা অনুভূতিতে নিজের উপরই ঘিন্না লাগছে। ডানে-বামে দেখে নিয়ে দুই বগলের কাছে নাক শুঁকে বুঝলাম, শরীর থেকে অলমোস্ট পুরানা জাইঙ্গার গন্ধ বের হচ্ছে।পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছে নেওয়ার একটা ব্যর্থ চেষ্টা করলাম; অস্বস্থি আরো বাড়লো।

কদিন ধরেই ভ্যাপসা-গুমো্ট একটা আবহাওয়া যাচ্ছে; কুত্তাপাগল গরম একেবারে।মাঝে-মধ্যেই আচমকা দুদ্দাড় বৃষ্টি হচ্ছে বটে কিন্তু এতো বড় শহরের তুলনায় তার পরিমান খুবই কম। পড়ার আগেই শুষে নিচ্ছে রাস্তা-ঘাট আর আটকে পড়া মানুষগুলো। পরক্ষনেই গরম বেড়ে দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছে কোনরকম মায়াদয়া ছাড়াই।

ভরদুপুরে সূর্যের তেজ সহ্য করা খুবই প্রব্লেমেটিক; বছরের এ সময়টাতে, খাওয়ার পরে একটা ভাতঘুমই শরীরের দাবী।কিন্তু, ভাত খেলেই শরীরটা ছেড়ে দেয়; তাই সাধারনত: প্রায় দুপুরেই কোনরকমে রুটি-মুটি, নাকে-মুখে গুঁজে কাজে লেগে পরি।

সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত একঘেয়ে ডিউটিতে ফাঁকি দেবার যো নাই; অবশ্য, একবার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলে দিন-দুনিয়ার হিসাবও থাকে না।

আজকের কথা ভিন্ন; আজকে তো পুরা অফিসেরই দাওয়াত!

জুনিয়র রিসার্চ অফিসার হিসাবে গত বছর জয়েন করার পর থেকেই হালিমা ম্যাডামের সাথে অফিসের সবারই একটা মাখা-মাখা আলগা খাতির হয়েছে।

সরকারী অফিসের শুকনা কাজ-কর্মে এরকম মেয়েইতো সবারই স্পীড বাড়ায়; পোস্টারমার্কা সুন্দর না হলেও, টাইট একটা যুবতী মেয়ে আশপাশ থাকলে সবপুরুষই গন্ধ শোঁকার তালে থাকে। তারউপর বড়ঘরের মেয়ে বলেই, সবাইকে প্রাপ্য ইজ্জত দিয়া চলেন। এই যেমন- নিজের বিয়েতে অফিসশুদ্ধু স্টাফকে দাওয়াত দিয়ে রেখেছেন। তাইতো ধানমন্ডীর এরকম ঝিং-ঝাং কমিউনিটি সেন্টারে আমার মতো হাভাইতারাও কব্জি ডুবিয়ে খেতে পারলো!

একটু চাপ খাওয়া-দাওয়া হইছে।

এমনিতে অভাবের সংসারে ডাইল-ভাত, শাক-পাতা-ছোড মাছ এগুলাই ডেলি পেটে যাইত্যা ঢুকাতে হয়। তাইতো, কোন দাওয়াতে গেলে প্যান্টের বুতাম-বেল্ট ঢিলা করে গলা পর্যন্ত গিলি। জানি, কলিগরা-দোস্তরা হাভাইতা কয়! পাত্তা দেই না; মিনি-মাগনা পেটচুক্তির চান্স পেলে কোন ছাড়াছাড়ি নাই।

সিগারেটের দোকানের উপরে পলিথিনের মতো একটা ছাউনি থাকাতে বেশ ঠান্ডা।

পকেটে বাম হাত ঢুকিয়ে শাহরুখের স্টাইলে দুই-পা সামান্য ফাঁক করে সিগারেট টানছে ইকবাল ভাই; নিখুত ড্রেস, পিছলা জুতা পরা স্মার্ট লোক হলেও- দূর থেকেই দেখলাম, কপাল থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত চকচকে একটা গোলাপী রঙের চান্দি, পুরা স্টাইলটারই পাইন মেরে দিছে।

কাছে যেতেই বিনা বাক্যব্যয়ে একটা বেনসনের প্যাকেট এগিয়ে দিল আমার দিকে।

হে হে হে, কি দরকার ছিল! বলতে বলতে দুটো সিগারেট উঠিয়ে নিলাম খোলা প্যাকেট থেকে; আড়চোখে বুঝলাম- ইকবাল ভাইয়ের গালে টিটকারির হাসি ফুটছে, কিন্তু আমি নিরুপায়!

ভরা একটা প্যাকেট থেকে কি একটা সিগারেট হাতে উঠে?

০০০০

বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না ইকবাল যে, তার খারাপ লাগে নাই! ভিতরে ভিতরে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে; গহীনের ভাঙচুর মুখে চলে আসতে চাচ্ছে; কোনমতে অন্য উছিলায় ঠেকিয়ে রাখতে প্রানপণ চেষ্টা চলছে সমানে। এই বয়সে এরকম ছোট্ট ইস্যু নিয়ে পাবলিক প্লেসে হাউকাউ করার মতো ডেজিগনেশান তার না; এরমধ্যেই সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, পুরো ঘটনাটাই ম্যাচিওরডভাবে স্পোর্টিংলি হ্যান্ডেল করছে সে।

কিন্তু- স্টেজে যখন দেখেছে বরের পাশে বউটা মাথানীচু করে ব্রীড়া দেখিয়ে সমানে পোজ দিয়ে চলেছে, তখন আর সহ্য হয় নাই, নীরবে সরে এসেছে।

কমিউনিটি সেন্টার থেকে ছিটকে বেড়িয়ে এসে এই সিগারেটের দোকানের সামনে পজিশান নিয়েছে; এমনিতে সিগারেটে অভ্যস্ত না হলেও- গত কদিনে প্যাকেটের পর প্যাকেট উড়ে গেছে!

অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সময় কাটছিল না; আবার, ফিরে গিয়ে যে সবার সাথে হল্লা-গুল্লা করবে, তারও কোন উপায় নাই।

এমন সময় সেলিম সাহেবকে বেড়ুতে দেখে নিজেই ডাক দিয়ে বসলো।

যদিও, সেলিম সাহেবের সঙ্গ খুব একটা পছন্দ নয় ইকবালের; লোকটা এমনিতে ঠায়-ঠান্ডা ভোদাই গোছের হলেও জন্মের কিপ্টা আর বেহায়া। না হলে কেউ এরকম একসাথে দুইটা সিগারেট নেয়? আরে বাবা, একটা খেয়ে আরেকটা যদি চাইতিস তবে কি দিতাম না!

কিন্তু কিছু করার নাই, এইরকম লোকজনের সাথেই জীবনের আগামী ৩০ বছর হাসিমুখে কাটাতে হবে; এর নাম সরকারী চাকরীর ইন্দুর-কল।

এখানে ঢোঁকা যেমন কষ্ট, তেমনি ছেড়ে যাওয়া আরো কষ্ট। এসব ছোটলোক-ঘুষখোর দের সাথে একই অফিসে দিনের পর দিন কাজ করলে মেজাজের উপর শক্ত ইফেক্ট পরে। মাঝে মাঝেই চাকর-বাকরি ছেড়ে সন্নাসী হয়ে যেতে মন চায়। ভাল্লাগে না এসব আর!

তার কি উপায় আছে!

ইকবালের এখন মরারও সময় নাই; সকালবেলা বাসা থেকে পা বাইরে দেবার সময়ই ঘাড়ে করে কতগুলা ফরমায়েশ নিয়ে বের হয়েছে।

সে এখন আর মানুষ নাই, একটা ট্যাকা ছাপানোর মেশিন অথবা একটা এটিএম বুথ। সময় নাই-অসময় নাই, বাপ-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন,বন্ধু-বান্ধব যে যেমনে পারে- কার্ড পাঞ্চ করে তাকে ছিবড়ে করার তালে থাকে।

কেমন করে যেন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা পার হয়ে যাচ্ছিল! মাঝেমধ্যেই রাতে বাড়ি ফিরে একটা নরম শরীরের সাথে ঘষাঘষি করতে মন উথাল-পাথাল আবেদন আর বিদ্রোহ জানাচ্ছিল, কিন্তু ছোট বোনদুটোর বিয়ে দিতে না পারলে কি তার আর বউ আনা কপালে ছিল?

আনমনা ভাবেই মাথায় টাকের উপরের ঘাম রুমাল দিয়ে মুছে নিল ইকবাল।কেন যেন টাকটাই সবার আগে ঘেমে জানান দেয় যে, সে আর বিয়ের বাজারে এলিজিবিল কেউ না।

ঢাকা শহরের মানুষগুলোর উপর ভরসা আগেই উঠে গেছিল, ইদানীং কারো কথারই কোন দাম নাই। কেমন ধারা যেন পাগলাটে ব্যবহার সবার।

সময়ের দাম এখানে অকল্পনীয়; টাইম ইজ মানি, সিম্পলি।

সেও এই ভরসাতেই নাক-কান বুঁজে, বইয়ে মুখ লুকিয়েই ভার্সিটি লাইফটা পার করে গত চারবছর ধরে সেক্রেটারিয়েটের একঘেয়ে কাজ করে যাচ্ছে; নিয়ম করে ঘুষ-টুষও দিব্যি জুটে যায়।

হালিমা জয়েন করার পরেই প্রথম বিয়ের ভূত মাথায় জেঁকে বসে; এমনকি বাসার সবাইকে রাজীও করায় ফেলছিল বিয়ের জন্য।

একবছর ধরে অফিস-ফেরতা হালিমাকে নামিয়ে দিতে গিয়ে কতটাকার তেল পুড়িয়েছে বাইকে!

রমনা পার্ক আর ক্রিসেন্ট লেকের পাশের বেঞ্চগুলো কিংবা মিড নাইট সানের বেয়ারাগুলোই তাদের সম্পর্কের সাক্ষী! এমনকি সিনেপ্লেক্সের অন্ধকার চেয়ারগুলোও তাদের শরীর প্রেমের সাক্ষী!

সব মিথ্যা হয়ে গেল!

ঠিক ২৭ দিন আগে আবেগহীন গলায় হালিমা স্পষ্ট করেই তাকে জানিয়েছে- তারবাসার মানুষজনের নাকী মেয়ের হাজব্যান্ড হিসেবে টেকো কাউকে মেনে নেয়া সম্ভব না।

আকাশ থেকে পড়েছিল ইকবাল!

মানে? তার পুরো মাথা জুরে চুল নাই, এটা কি তার দোষ!

অনেক কথা-কাটাকাটি, অনুনয়-বিনয় করেও হালিমার মন গলানো যায় নি! পাথরের মতো মুখ করেই ইকবালের আহাজারি শুনেছে, শেষবারের মতো নিজেই ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে চেপে ধরে একটা চুমু খেয়ে গটগট করে উঠে চলে গেছে।

ক্রিসেন্ট লেকের সোডিয়াম লাইটগুলো যেন পরিহাস করছিল ইকবালকে তখন! চুমুর সেই বিস্বাদ পঁচা ইদুরের মতো অনুভূতি আজও মুখ থেকে মুছে যায় নি।

গতকাল রাতেও অনেকবার ভেবেছে বিষয়টা নিয়ে- তিনদিন আগেই অবশ্য বিয়ের কার্ডে বরের ডেজিগনেশান দেখেই ইকবাল বুঝে নিয়েছে; তার টাককে খামোখা গিল্টি করা হয়েছে!

বরের নাম এহসানুল করিম, সহকারী কমিশনার, খাদ্য মন্ত্রণালয়!হা হা হা, মূল কাহিনী টাক না, টাকা!!

নিজের কাছে কখনো হারেনি ইকবাল; এবারও হারলো না। হাসিমুখে হালিমার বিয়ের দাওয়াত খেতে ইকবাল আসবে; তা অফিসের কেউ কল্পনাও করেনি! ইকবাল কিন্তু নিয়মমাফিক বর-কনেকে কংগ্রাচুলেট করে ফার্স্ট ব্যাচেই খাওয়ার ভান করে কিছুক্ষণ বসে থেকে বেড়িয়ে এসেছে!

সেই থেকে সিগারেটের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছে আর ভাবছে সামনের দিনগুলোতে এই শোকটা কেমন করে চাঁপা দেবে!

এমন সময়ই সেলিম সাহেবকে দেখেই ডেকে নিল সে; একা থাকলে কে না কে আবার তাকে ড্রাই-দেবদাস মনে করে বসে, কে জানে!

০০০০

ইকবাল ভাইয়ের মনের অবস্থা স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম। আরেহ! জীবনে কম তো আর দেখলাম না! ছাত্র-মাত্র থাকা অবস্থায় ছ্যাঁক খেলে ভিন্ন কথা, বয়সকালে সবাই ভুলে যায় সেসব।

কিন্তু, ইকবাল ভাইয়ের কেসটা এরকম এলবিডব্লিউ হয়ে যাবে- তা কিন্তু ভাবি নাই! শুধু আমি কেন, অফিসের সবাই ধরে নিছিল- ইকবাল ভাইয়ের সাথে হালিমার বিয়ে সময়ের ব্যাপার। কিন্তু, ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েই যে হালিমা এরকম একটা ডজ দিবে তা কে বুঝতে পারছিল!

বাট, কলিজা আছে ব্যাটার! বোকা হয়ে গেলাম লোকটার কারবার দেখে! এই বিয়েতে কোন একটা অজুহাত দেখিয়ে না আসলেই বরং ভাল হতো। কেউই হজম করতে পারতেছে না ইকবাল ভাইয়ের রঞ্জিত মল্লিক বা রিশি কাপুর টাইপ মহত্ত্ব! এক্কেবারে বেশি বেশি!

এখন লক্ষ্য করলাম যে, ইকবাল ভাইয়ের মনের ভিতরে সেরাম ভাঙাভাঙি চলতাছে।দুএকটা খুচরা কথা ট্রাই করেও জমাতে পারলাম না।

চোখ গেল এ পাশের রেন্ট্রিগাছটার নীচে একটা বুড়ো আইসক্রিমওয়ালা বসে বসে ঝিমুচ্ছে।

এক ফাঁকে সেখান থেকে দুটো চকবার এনে একটা ইকবাল ভাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিলাম! অবাক ব্যাপার, আমার যাওয়া-আসার ব্যাপারটা খেয়ালই করেন নাই।

আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে টানার চেষ্টা করতাছে; বেচারার স্টাইল দেখলেই বুঝা যায় অ্যামেচার।

ছ্যাঁক খাইয়া সিগারেটের গুষ্টি পুন্দাইতাছে! হায়রে সিনেমা, কি যে হিগা্ইলি!

০০০০

হাত বাড়িয়ে আগ্রহের সাথেই সেলিম সাহেবের হাত থেকে আইসক্রিমটা নিলো ইকবাল; এমনকি খুলে চেটে চেটে খেতে খেতে ভালোই লাগলো! এমনকি সেলিম সাহেবকেও বড় ভাইয়ের মতো মনে হচ্ছে- কিন্তু, এর মতো কিপ্টা আইসক্রিম নিয়ে আসলো!

আমি আস্তে আস্তে নীচু স্বরে বললাম, ইকবাল ভাই; আপনি চাকরিতে অনেক উপরে হইলেও জীবন তো আমি আপনার থেইকা বেশি দেখছি!

আমার ছোট মাইয়াটা ডেলি একটা কাঠি আইসক্রিম খায়, কিন্তু আমি পরীক্ষা কইরা দেখছি যে আসক্রিম না, কাঠিটাই অর মেইন টার্গেট; কাঠি জমানোর আগ্রহেই আমার বেটি ডেলি আসক্রিম খায়!

আমার কথায় অবাক হয়ে খাওয়া থামিয়ে দেয় ইকবাল; কোনমতে সঙ্গত দেয়- তাই!

শেষ কামড় দিয়ে কাঠিটা ছুঁড়ে ফেলে রুমাল বের করে হাত-ঠোঁট-টাক মুছে নেয়।

এতক্ষণ পাশে দাঁড়ানো একটা কুকুর ঝাপিয়ে পড়েই সেই কাঠিটাই চাটতে থাকে।

কথা ছাড়লাম না আমি- শুনেন ভাই, যেইটা আমার পিচ্চি মেয়ে করে তা তো আর আপনি করেন না! আপনি তো ঠিকই আসক্রিম খেয়ে কাঠিটা ফেলে দিলেন- আর ঐ কুত্তাডা আইসক্রিম মনে কইরা কাঠিটাই চুষতাছে! আপনার আবার খাওয়ার ইচ্ছা থাকলে- নতুন একটা আসক্রিম কিন্না নিলেই তো হয়রে ভাই, কাঠি হামলাইয়া রেখে লাভ কি?

সিগারেট শেষ; জ্ঞান দেয়াও শেষ- এক ইকবালের দু:খে কানলে তো আমার মতো সংসারী মানুষের চলতো না! ব্যাটা দেবদাসরে নিজের জায়গায় রেখে আবার ঢুকে গেলাম কমিউনিটি সেন্টারের আরামে; ভীড়ে গেলাম কলিগদের হইহল্লায়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ইকবালের কথা ভুলে গেলাম।

সেলিম সাহেবকে দেখলে যতটা গবেট মনে হয়; সে আসলে ততোটা না! তাহলে কি ভোদাইয়ের ভাণ ধরে থাকে!

কিছুক্ষণের জন্য হালিমা টপিকস ভুলে সেলিমের উপর আশ্চর্য হয়ে গেল ইকবাল।

নতুন একটা জ্ঞানও পেল, যারা প্রকৃত বুদ্ধিমান- তারা আসলে পাবলিক প্লেসে ভোদাইয়ের ভাণই ধরে থাকে! আর তার মতো বেকুবেরা বেশি বুঝতে গিয়া জায়গা-বেজায়গায় ধরা খায়!

তবে লোকটা জ্ঞানীও বটে, তার অফিসের একজন কেরাণি জানে যে আইসক্রিম আর চকোলেটই হচ্ছে বিষাদের বিরূদ্ধে অস্ত্র! সিগারেট নয়!! ভাল তো!

একটু একটু করে ইকবালের মনের মেঘ কাটছে; চোখ বন্ধ করে আরাম করে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে টেনে ব্রেইনে রিওয়াইন্ড করলো পুরো ঘটনাপ্রবাহ!

তাই তো! মোড়ক খুলে আইসক্রিম যখন খেয়েই ফেলছে, তখন আর কাঠির জন্য আফসোস করে কি লাভ!

কুত্তার ভাগ্যেই কাঠি জোটে!

বেশ বুঝতে পারছে ইকবাল, এই যাত্রা বেঁচে গেল সে!

সাতাশ দিন বিস্বাদ থাকার পরে, ক্রিসেন্ট লেকের ধারে সেই নাটকীয় শেষ চুমুটার স্বাদ ঠোঁটে পেল; এবার আর কোন কাঠি নয় বরং বাটার স্কচের মতো ইয়াম্মী।

০০০০

দেখলাম, গুটি গুটি পায়ে ইকবাল ঢুকতেছে কমিউনিটি সেন্টারের দরজা দিয়ে- মোটামুটি স্মার্টলি গিয়ে ডাইরেক্ট স্টেজে উঠে হালিমা আর তার বরের সাথে দু’তিনটা ফটো পোজও দিল!

কেউ খেয়াল করে নাই, আমি স্পষ্ট দেখলাম- এতক্ষণ হাসিতে উপচে পরলেও এই ছবি কটায় হালিমার মুখে পরাজয়ের স্পষ্ট হতাশ-বেজার ভাব চিরস্থায়ীভাবে বাসা বাঁধলো।

ঠিক তখনই আমি আমার মামণি আর তার কাঠি আসকিরিমের মাজেজা পুরাপুরি বুঝলাম!

আল্লায় যেমনে বানাইছ, হাজার চেষ্টা করলেও কি ব্যাডাহাইত আর মাইয়ালোকের স্বভাবের মেইন পার্থক্য মুছা সম্ভব! দুনিয়াটাতো একটা জ্যামিতিরি মতোই চলতাছে।

আজাইরা ফাও মেন্টাল ফাইন ফিলিংস নিয়ে ডিল করা পুরুষের কাজ না।শরীরে পুরুষ হইলে স্রেফ সেক্স মেল হয়, জেন্ডারে ম্যান হতে হলে পুরুষের আচরণ করতে হয়। তাই, শরীর ও মনে পুরুষ হতে চাইলে টাকা কামাও আর দুনিয়ার সব সুখ কিনে নাও, সিম্পল!

আইসকিরিম খাইতে চাইলে, জিহবায় সোয়াদ থাকলেই হয় না, পকেটের পাত্তিই বেসিক নীড।

কাঠি জমানো কোন কাজের কথা না ম্যান!

নির্লিপ্ত নৃপতি
আদাবর, ঢাকা


মন্তব্য

মরুদ্যান এর ছবি

পাঁচমিশালি ভাষা! পড়তে গিয়ে লেজে গোবরে হয়ে গেল।

আজাইরা ফাও মেন্টাল ফাইন ফিলিংস নিয়ে ডিল করা পুরুষের কাজ না।শরীরে পুরুষ হইলে স্রেফ সেক্স মেল হয়, জেন্ডারে ম্যান হতে হলে পুরুষের আচরণ করতে হয়। তাই, শরীর ও মনে পুরুষ হতে চাইলে টাকা কামাও আর দুনিয়ার সব সুখ কিনে নাও, সিম্পল!

এটা কার উপলব্ধি? লেখকের? ইকবালের? সেলিমের? নাকি সব পুরুষের?

আরেকটু গুছানো লেখার প্রত্যাশায় থাকলাম, এবং শুদ্ধ বাংলা বানানে। ইংরেজির অনাবশ্যক ব্যবহার না হলেই ভাল। হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

মন মাঝি এর ছবি

গল্প অনুযায়ী এটা সেলিমের উপলব্ধি।

****************************************

এক লহমা এর ছবি

গোটা গল্পটা পড়ে কোন অর্থ উদ্ধার করতে ব্যর্থ হলাম।

অনেক সময় লেখকদের অনুরোধ করা হয়, অনুচ্ছেদ করে করে লিখতে, পড়ার সুবিধা হয়, বিষয় বিন্যাসেও সাহায্য হয়। কিন্তু এ গল্পে অনুচ্ছেদের যথেচ্ছ ছড়াছড়িতে যে পাঠ বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে গেলাম, তেমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম হল। আগে আপনার আর কোন লেখা পড়েছি বলে মনে করতে পারলাম না। তাই, জানি না, এ'টাই আপনার লেখার 'স্টাইল' কি না। তবে, সেটাই যদি হয়ে থাকে, 'স্টাইল'-টা বদল হওয়ার আশায় থাকব।

এর সাথে উপরে মরুদ্যান-এর করা গোটা মন্তব্যটাও জোড়া থাকল।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নজমুল আলবাব এর ছবি

শুরুটাতো ভালো ছিলো...

মন মাঝি এর ছবি

ভাল লাগল - একটা বহুব্যবহারে জরাজীর্ণ পুরনো থীমের চর্বিত-চর্বনই হওয়া সত্ত্বেও! কোথাও একটু নতুনত্ব আছে হয়তো, কিন্তু কোথায় ধরতে পারছি না।

দুয়েকটা টাইপো / বানান ভুল বাদে ভাষা বা তার পাঁচমিশালিত্ব নিয়ে আমার অন্তত কোন আপত্তি নেই। এটাই হয়তো সেই নতুনত্ব, এই গল্পের স্টাইল, যে কারনে অতি পুরাতন ও অসংখ্যবার পড়া থীম হওয়া সত্ত্বেও গল্পটা ভালই লেগেছে।

উপরে মরুদ্যান ও এক লহমা ভাইয়ের সাথে একটু দ্বিমত।
আমার মতে সৃজনশীল সাহিত্য বা গল্প-উপন্যাসের ক্ষেত্রে সংলাপ, স্বগোতক্তি, চরিত্রের উত্তম পুরুষে ব্যক্ত চিন্তাভাবনা, ইত্যাদিতে ভাষাটা কেমন হবে তা নির্ধারণ করার বিশাল একটা বা অধিকাংশই লেখকের সৃষ্টিশীল কল্পনার প্রেরোগেটিভ বা প্রাধিকারভুক্ত। বাধ্যতামূলকভাবে অন্যক্ষেত্রে প্রচলিত স্ট্যান্ডার্ড বা কনভেনশনের না। এখানে অন্যত্র (এমনকি একই লেখার) বা স্বাভাবিক অবস্থায় বা অন্য ধারার লেখার ভাষায় ব্যবহৃত নিয়মকানুন, রীতি-নীতি বা কনভেনশনগুলি নিয়ে জোরাজুরি করা পক্ষপাতি না আমি। কারন তাহলে অনেক মহৎ সাহিত্যই অপাঠ্য আবর্জনার তালিকায় চলে যাবে! এসব ক্ষেত্রে কাহিনির সাথে মিলিয়ে লেখকই নির্ধারণ করবেন - তিনি মান ভাষা, 'শুদ্ধ' বা 'অশুদ্ধ' ভাষা, আঞ্চলিক ভাষা, আর্বান ডায়ালেক্ট বা সোশিওলেক্ট, জগাখিচুড়ি পিজিন-জাতীয় ভাষা, মিশ্র বা পাঁচমিশালি ভাষা, নাকি সম্পূর্ণ নিজের বানানো কোন স্টাইলের অনুগামী বা ইডিওসিনক্রেটিক ভাষা ব্যবহার করবেন। সৃজনশীল সাহিত্যের লেখকের উপর এর চেয়ে বেশি আর কোন নিয়ন্ত্রন বা প্রত্যাশা আরোপ করা উচিৎ না আমার মতে। একটাই শুধু দেখার বিষয় হয়তো- এই ভাষা ন্যারেটিভ ভয়েস বা ন্যারেটিভ পয়েন্ট অফ ভিউর সাথে খাপ খাচ্ছে কিনা বা বেখাপ্পা হচ্ছে কিনা। আমার মনে হয়, এই লেখায় সেদিক থেকে খুব একটা অসুবিধা নেই। শুদ্ধ-অশুদ্ধ-কথ্য-স্ল্যাং-ইংরেজি-বাংলার যে মিশ্রণ দুয়েক জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে, বর্তমান সমাজে অনেকেই বাস্তবে ওভাবে কথা বলে বা চিন্তা করে। এটাই বাস্তবতা। লেখক যদি এই বাস্তবতাকে এর ত্রুটি-বিচ্যুতিসহ সংলাপ বা চরিত্রের জবানিতে রিফ্লেক্ট করতে চান, তাতে আমি বিন্দুমাত্র দোষের কিছু দেখি না। বরং সফল ও অর্থবহ ভাবে করতে পারলে এটা তার সৃষ্টিশীলতায় একটা নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। আর 'সীমিত ও সাব্জেক্টিভ ৩য় পুরুষের'-র ভয়েসে বলা গল্পের ৩ ও ৬ নং পর্ব বাদ দিলে বাকি গল্পটা অল্টারনেটিং পদ্ধতিতে গল্পেরই চরিত্র সেলিম সাহেবের পয়েন্ট অফ ভিউ এবং ভয়েস / জবানিতে বলা হয়েছে। আর এই চরিত্রের সাথে "আজাইরা ফাও মেন্টাল ফাইন ফিলিংস নিয়ে ডিল করা" -জাতীয় ভাষা বা পিওভি আমার কাছে অবধারিত ভাবে বিরোধাত্নক বা বেখাপ্পা মনে হয়নি মোটেই।

তবে উপ্রে এক লহমা-দার সাথে "এ গল্পে অনুচ্ছেদের যথেচ্ছ ছড়াছড়িতে" পাঠ বিড়ম্বনা-র ব্যাপারে আমিও সম্পূর্ণ একমত। একই অভিজ্ঞতা আমারও।

****************************************

এক লহমা এর ছবি

প্রিয় মন মাঝি-দাদা, আমার মন্তব্যর যে অংশটি মরূদ্যান-এর গোটা মন্তব্যটি বলে জানিয়েছিলাম সেইটি নিয়ে আমার এই মন্তব্য। প্রেক্ষিত অবশ্যই আপনার ‘দ্বিমত'-এর যতটুকু ঐ অংশ নিয়ে হ’তে পারে।

ভাষায় পাঁচমিশালিত্বঃ আমার কাছেও তা অগ্রহণীয় নয়। কিন্তু গল্প-অনুসারে তা'র উপভোগসীমার তারতম্য অনুভব করি। এ গল্প পড়তে গিয়ে ভাষার পাঁচমিশালি ঘুরচক্করে, মরূদ্যান যেমন বলেছেন, লেজে গোবরে হয়ে গিয়েছি। কি আর করব বলুন, সতীনাথ-এর ভাষায় হোঁচট না খেলেই যে কমলকুমার-এর ভাষায় খোঁচট খাবে না, বা উল্টোটাই কিংবা এই দুইজনেই সমান পরিতৃপ্তির পর অন্য কারো লেখাকে যে জটীল ও দুর্বোধ্য মনে হবেনা এবং হ’লে সেটা তার নিজের অক্ষমতা বিধায় তার আরো নিজের মত করে সহজে বোধ্য ভাষার প্রত্যাশা থাকবেনা, তার পাঠ- অভিজ্ঞতা নির্বিশেষে, আর থাকলে সেটা সরাসরি জানিয়ে বসবে না, এমন ত না হতেই পারে, তাই না? এক্ষেত্রে আমি সেটুকুই করেছি। এর বেশী আমার মন্তব্যকে আর গুরুত্ব না দেওয়াই ঠিক হবে।

গুছানো লেখাঃ এ লেখা আমার খানিকটা আগোছানো লেগেছে। এটা আমি মানতে রাজী আছি যে লেখা বিশেষে এই আগোছানো চলটাই লেখার আকর্ষণ শক্তি হয়ে উঠতে পারে। আপনার মন্তব্য থেকে বুঝতে পারছি আপনার ক্ষেত্রে সেটা ঘটেছে। খুব ভাল লেগেছে যে আপনি সেটা জানিয়েছেন। একজন পাঠকের ও যদি লেখা ভাল লেগে থাকে, সেটা মূল লেখাই হোক কি তার লেজের মন্তব্যই হোক সেটা জানতে পারা সেই লেখকের যে কত বড় প্রাপ্তি, সেটা যে কত বড় সাহস যোগায় সে আমরা যারা লেখালেখির চেষ্টায় থাকি আমরা সবাই ভাল ভাবে জানি। আবার একই ভাবে, লেখা ভাল না লাগার খবর জানতে পারাটাও কি একটা প্রয়োজনীয় প্রাপ্তি নয়? ভাল লাগার খবর জানানোতে আমি কোন চাপ অনুভব করি না। কিন্তু না লাগার খবর জানানোতে খুবই দ্বিধাগ্রস্ত থাকি। অনেকসময় চুপ করেও থাকি। তারপরও যদি তার কাছ থেকে আরো লেখা পড়তে পেলে ভাল লাগবে বলে মনে হয়, তখন নিজের বর্তমান অপ্রাপ্তির কথা বলে নিয়ে ভবিষ্যতের প্রাপ্তির আকাঙ্খার কথা জানিয়ে দিই। সম্ভব হ’লে, কেন এখন প্রাপ্তির অনুভব ঘটেনি এবং পরবর্ত্তীতে কিরকম পেলে আমার, একান্তই আমার, ভাল লাগবে সেটাও একটু উল্লেখ করি। আমার সে মন্তব্য লেখকের সৃষ্টিশীলতার পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কা থাকে বইকি, খুবই থাকে। তাই এ প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্যে অনেক স্বস্তি পেয়েছি।

শুদ্ধ বাংলা বানানে, ইংরেজির অনাবশ্যক ব্যবহার এড়িয়ে লেখাঃ গোটা লেখা চলছে স্বগতঃ বা পারস্পরিক কথোপকথনে। এ ক্ষেত্রে, আপনি যেমন বলেছেন, “শুদ্ধ-অশুদ্ধ-কথ্য-স্ল্যাং-ইংরেজি-বাংলার" মিশ্রণ, গল্পে বর্ণিত চরিত্রদের বাস্তবতা হয়ে থাকলে আমি বরং ঐ ভাষা সার্থকভাবে ব্যবহার করতে পারার জন্য লেখককে ‘টুপি খুলে কুর্নিশ’ জানাতেই ইচ্ছা রাখি। লেখক যখন গল্পের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ঐ বিশেষ ভাষা-ব্যবহারকে একটা অবশ্য প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, তখন অসুবিধা হয় না। এ গল্প তার ছন্নছাড়া অনুচ্ছেদ বিন্যাসে অনাবশ্যক দীর্ঘ হয়ে এবং তার সাথে গল্পের বিষয়ের নুতনত্বহীনতার কারণে আমার ধৈর্য্যকে যেখানে নিয়ে গিয়েছিল যেখানে ভাষার এই বিশেষ উপস্থাপন আমার কাছে উপভোগের বদলে আরো ক্লান্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখনো, আর একবার যে পড়ে দেখব, সে উৎসাহ পাচ্ছি না, তাই আপনার কথাতেই ভরসা করে লেখককে সাধুবাদ জানালাম।

“আজাইরা ফাও … …নাও, সিম্পল!” ঃ হ্যাঁ, “গল্প অনুযায়ী এটা সেলিমের উপলব্ধি।" এ গল্প যে ভাবে শেষ হয়েছে, তাতে এইটিই এই গল্পটির বক্তব্য কি না, না হ’য়ে থাকলে লেখক কি ভাবে এই বক্তব্যকে দেখছেন, নিছকই সেলিমদের মত মানুষদের মনের ছবি না কি আরো বড় প্রেক্ষিতে সেলিম-এর এই বক্তব্য সব বা বেশীর ভাগ পুরুষের মনের প্রতিচ্ছবি এইটি পাঠক হিসেবে আমাকে ধাঁধায় রেখে দিয়েছে। হয়ত আরো বার কয়েক পড়তে পারলে ধাঁধার উত্তর মিলতে পারত। অন্যদিকে, লেখক যদি ইচ্ছাকৃত ভাবেই এই ধাঁধার সৃষ্টি করে থাকেন তবে পাঠক হিসেবে সে সৃষ্টির আস্বাদনে যে ব্যর্থ হয়েছি এতে কোন দ্বিধা নেই।

লম্বা মন্তব্য করে বসলাম। ক্লান্তিকর হয়ে গেল সম্ভবতঃ। কিন্তু নিজের অবস্থানটা পরিস্কার না করার একটা চেষ্টা না দিলে ভাল লাগছিল না।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মন মাঝি এর ছবি

প্রিয় লহমা-দা, এত ডিফেন্সে যাওয়ার বা 'নিজের অবস্থানটা পরিস্কার' করার জন্য এত ব্যতিব্যস্ত হওয়ার আসলে কোনই দরকার ছিল না। আপনাকে এভাবে ব্যস্ত হতে দেখে আমি নিজেই লজ্জিত বোধ করছি এখন! খাইছে

আমার মতে 'দ্বিমত ' প্রকাশ মানেই - বিশেষ করে শিল্প-সাহিত্যের আলোচনায় - অবধারিতভাবে ভিন্নমতটি / গুলিকে ভ্রান্ত প্রতিপন্ন বা ডিলেজিটিমাইজ করা নয়; তার আত্নপ্রকাশের, অস্তিত্ত্বের বা যাথার্থ্যের যৌক্তিকতা হরণ করা নয়, তার স্বতঃপ্রকাশিত বা অন্তর্নিহিত কোন মূল্যকেই বিন্দুমাত্র অস্বীকার করা নয়। আমি মনে করি এসব ক্ষেত্রে, একমত-দ্বিমত-ত্রিমত-বহুমত-সবমতই একই সমতলে অবস্থান করতে পারে, পরস্পরকে কোনভাব বাতিল না করেই। পার্থক্য হয়তো দৃষ্টিভঙ্গি বা দৃষ্টিকোনে। একই জিনিষ হয়তো বিভিন্ন জন বিভিন্ন দিক বা অবস্থান থেকে দেখেন এবং সবার দেখাই একই সঙ্গে সঠিক বা ভুল - বা কোনটাই না হওয়া, অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব নয়। যেটিই হোক না কেন, এই ধরণের বিষয়ে তা ঐ মতপ্রকাশকারীদের পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে বা অনেকসময় কখনই - নিঃসংশয়ে প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব। এটা তো আর গণিত নয় যে, দুই বিয়োগ দুই 'শুন্য'ই হবে বা হতে হবে, অনেকসময় এবং সম্ভবত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আসলে সেটা 'চার'ই হয়। কিম্বা অন্য কিছু! সবচেয়ে বড় কথা, এসব ক্ষেত্রে ঠিক / ভুলের বেশি বিচার-আচার করতে যাওয়াটাই হয়তো ভুল। শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে মতামত আর দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্য আর প্রাচুর্যই মনে হয় এর প্রকৃত প্রাণশক্তি ও সৌন্দর্য্য। এই ক্যালাইডোস্কোপিক সৌন্দর্য্যশক্তিই মনে হয় আমাদের আরাধ্য হওয়া উচিৎ। ভিন্নমতকে ভ্রান্ত বা হেয় প্রতিপন্ন করা বা অবমূল্যায়ন করার যেকোন প্রয়াস বা মনোভঙ্গি তাই আমার মতে সেই প্রাণ-ভোমরাটাকেই হত্যা করার জন্য জেহাদ ঘোষণা করার সমতুল্য। আর আমি কোন অর্থেই জেহাদি নই। তাই আমার তথাকথিত 'দ্বিমতের' কারনে আপনার বিন্দুমাত্র বিব্রত বা বিচলিত হওয়ার বা নিজের বক্তব্য পরিষ্কার করতে তাগিদ অনুভব করার বা ব্যস্ত হওয়ার কোনই প্রয়োজন নেই। আমরা সবাই সাহিত্য ও তা নিয়ে আলোচনা মিলিয়ে সৌন্দর্য্যের একই বৃহত্তর ক্যালাইডোস্কোপ বা মোজেইকের অবিচ্ছেদ্য ও সম-অংশীদার।

কিছু বুঝাতে পারলাম? নাকি গালভরা শব্দে অর্থহীণ বা এলোমেলো বকে গেলাম? শেষেরটা হলে আমার বাচালতাকে ক্ষমাঘেন্না করে দেবেন প্লিজ!!!

তবে হ্যাঁ, আপনি প্রতিমন্তব্যটা করে এক হিসেবে আবার খুব ভাল করেছেন! তা নইলে, কাউকে বিন্দুমাত্র বিব্রত না করে নিজের বক্তব্য এত ইফেক্টিভলি আনবট্রুসিভ স্বয়ংসম্পূর্ণতার সাথে - এত সুন্দর, সুচারু আর শৈল্পিকভাবে যে প্রকাশ করা যায়, তা আমার জানাই হত না! মনে হচ্ছিল যেন কবিতা পড়ছি! কিম্বা কোন সুক্ষসুন্দর কারুকার্যময়, কাব্যময় ভাষ্কর্য দেখছি! এর আগেও আপনি অপূর্ব সব মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন আলোচনায়। অনেক সময়, মূল লেখার চেয়েও আপনার মন্তব্যটা পড়তেই বেশি ভাল লাগে, বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়ি, বেশি আলোকিত হই। এই আর্টফর্মটা আপনার কাছ থেকে আমার শেখা দরকার। সামান্য একটু শিখতে পারলেও নিজেকে ধন্য মনে করবো!

------------------------------------

এবারে আপনার প্রতিমন্তব্যের দুয়েকটা বিষয়ের প্রেক্ষিতে আমার কয়েকটা সবিনয় মতামত দিয়ে এই পোস্টে আমার মন্তব্যের পাট চুকিয়ে দেই --

কিন্তু গল্প-অনুসারে তা'র [ভাষার পাঁচমিশালিত্বের] উপভোগসীমার তারতম্য অনুভব করি।

নিশ্চয়ই! নিশ্চয়ই! আমিও করি! যেমন, ভাষা-প্রয়োগে যদি কোন শৃংখলা বজায় না থাকে (যেমন নিচের একটি মন্তব্যে মরুদ্যান দেখিয়েছেন) - তা সে পাঁচমিশালিই হোক বা নো-মিশালিই হোক। কিম্বা, গল্প বা চরিত্রের সাথে মানানসই বা যথাপ্রযুক্ত না হয়। ইত্যাদি।

.... আর থাকলে সেটা সরাসরি জানিয়ে বসবে না, এমন ত না হতেই পারে, তাই না?

নিশ্চয়ই পারে না!!! একশবার জানাবে, হাজার বার জানাবে!!! এইসব জানাজানিই তো সব আলোচনার প্রাণশক্তি আর সৌন্দর্য্য। এর "গুরুত্ব" তো সীমাহীণ। এটা বাদ দিলে আর কোন কিছুরই তো কোন গুরুত্ব থাকে না!

এ লেখা আমার খানিকটা আগোছানো লেগেছে।

আমারও লেগেছে। অনুচ্ছেদ ও পরিচ্ছেদ (?) বিভাজনটা উদ্ভূতুড়ে লেগেছে, ন্যারেটিভ ভয়েসের বা ফার্স্ট-থার্ড পার্সনের সুইচিং বা অল্টারনেশন ভাল হয়নি - কোন কোন জায়গায় খানিকটা বেখাপ্পা বা বিভ্রান্তিকর হয়ে গেছে, একই চরিত্রের মুখ দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলের ভাষা বেরুচ্ছে (মরুদ্যান ভাই দেখানোর আগে এ জিনিষটা তাড়াহুড়ার মাথায় আমি আসলে লক্ষ্য করিনি লইজ্জা লাগে ), ইত্যাদি।

এটা আমি মানতে রাজী আছি যে লেখা বিশেষে এই আগোছানো চলটাই লেখার আকর্ষণ শক্তি হয়ে উঠতে পারে। আপনার মন্তব্য থেকে বুঝতে পারছি আপনার ক্ষেত্রে সেটা ঘটেছে।

প্রথম মন্তব্যের একদম শুরুতেই যেমন বলেছি - ভাল যে কেন লেগেছে আমি নিজেই বুঝতে পারছি না! তবে সেটা 'অগোছালোত্বের' জন্য নয় মনে হয়। আসলে তাড়াহুড়ো করে ঝড়ের গতিতে লেখাটা পড়েছি, খারাপ লাগার বিষয়গুলি ঝড়োগতিতে পড়ার কারনে অটো-ফিল্টার হয়ে গেছে - শুধু ভালটাই মাথায় ছিল, আর তা নিয়েই তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেছি। তবে আপনার মতই এখন আর দ্বিতীয়বার পড়ার উৎসাহ বোধ করছি না!

আমার সে মন্তব্য লেখকের সৃষ্টিশীলতার পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কা থাকে বইকি, খুবই থাকে। তাই এ প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্যে অনেক স্বস্তি পেয়েছি।

সৃষ্টিশীলতায় নিয়ন্ত্রন বা প্রত্যাশা আরোপের বিষয়টা আমি মনে হয় গোছানো-আগোছানো প্রসঙ্গে বা আপনার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলিনি। এটা বলার সময় ইংরেজি-বাংলা-কথ্য-প্রমিত-স্ল্যাং ইত্যাদি মিশানো বা রচনায় তুলে আনা যাবে কিনা সে প্রসঙ্গটা মাথায় ছিল।

তাই আপনার কথাতেই ভরসা করে....

আমি খুব ভরসা করার মত লোক না! নীচে মরুদ্যান ভাইয়ের প্রতিমন্তব্য থেকে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে - আমি লেখাটা আসলে মোটেই মনোযোগ দিয়ে পড়িনি। ভাল করে না পড়েই ফট করে বিশাল কমেন্ট করে ফেলি। দেঁতো হাসি

লেখক কি ভাবে এই বক্তব্যকে দেখছেন, নিছকই সেলিমদের মত মানুষদের মনের ছবি না কি আরো বড় প্রেক্ষিতে সেলিম-এর এই বক্তব্য সব বা বেশীর ভাগ পুরুষের মনের প্রতিচ্ছবি এইটি পাঠক হিসেবে আমাকে ধাঁধায় রেখে দিয়েছে। হয়ত আরো বার কয়েক পড়তে পারলে ধাঁধার উত্তর মিলতে পারত। অন্যদিকে, লেখক যদি ইচ্ছাকৃত ভাবেই এই ধাঁধার সৃষ্টি করে থাকেন তবে পাঠক হিসেবে সে সৃষ্টির আস্বাদনে যে ব্যর্থ হয়েছি এতে কোন দ্বিধা নেই।

প্রশ্ন / ধাঁধাটা শুধু আপনারই না, মরুদ্যান ভাইয়েরও। আরও অনেকেরও হয়তো। এইখানে আমার একটুখানি ভিন্নতর জেনারেল মন্তব্য, বা বলা ভালো - জিজ্ঞাস্য আছে। গল্প-উপন্যাসে কোন কল্পচরিত্রের কোন বক্তব্য, দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভঙ্গির ব্যাপারে বাস্তব লেখকের নিজস্ব ও আসল মতামত কি, তিনি এটা সমর্থন করেন কি করেন না - ইত্যাদি কি ঐ লেখা পড়তে গিয়ে জানার আসলেই দরকার আছে? ঐ কাহিনি ও তার ইনার-ডায়নামিক্সটুকুই কি যথেষ্ট নয়? প্রবন্ধকারের দায়িত্ব থাকতে পারে উত্থাপিত কোন নৈতিক বা অন্যতর সমস্যার সমাধান দেয়া বা ঐ বিষয়ে তার নিজস্ব বক্তব্যটুকু দেয়া বা উত্থাপনটা জাস্টিফাই করা। কাহিনিকারের কি প্রবন্ধকারের মত সেরকম কোন দায়িত্ব আছে? ঘটনা ও চরিত্রচিত্রণের মাধ্যমে শুধু কাহিনিটুকু বলে বাকিটুকু পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলে চলবে না? নাকি তাকেও কোন না কোন লেভেলে প্রবন্ধকার বা শিক্ষকের ভূমিকা নিতে হবে?

ধরুন, একজন লেখক একটা সিরিয়াল কিলার বা একটা প্রোফেশনাল ভাড়াটে খুনি বা এ্যাসাসিন-কে নিয়ে একটা উপন্যাস লিখলেন। এই উপন্যাসে তিনি তার জীবনযাত্রা, কর্মকাণ্ড আর মনস্তত্ত্ব এক্সপ্লোর করলেন, আঁকলেন, ঐ কিলার বা খুনির নিজের দৃষ্টিকোন থেকে। কিন্তু লেখক এটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকলেন। কাহিনির মধ্যে এই পুরো বিষয়টাতেই তিনি সরাসরি তার নিজস্ব বা বাস্তব মতামত, দর্শন বা মূল্যায়ন দিলেন না, কোন নৈতিক বিশ্লেষন বা কনক্লুশন টানলেন না, বললেন না এটা নিছকই ঐ সিরিয়াল কিলার বা ভাড়াটে খুনির মত মানুষদের মনের ছবি, না কি আরো বড় প্রেক্ষিতে এটা সব বা বেশীর ভাগ পুরুষের বা মানুষের মনের প্রতিচ্ছবি।

- এমনটা হলে কি আপনার (বা মরুদ্যান ভাইয়ের) মতে এই উপন্যাসটা একটা সার্থক উপন্যাস হবে না বা হতে পারবে না? এটা পড়েও কি আপনি বা মরুদ্যান ভাই বা অন্যরা ধাঁধায় পড়বেন? আর, লেখক যেহেতু ইচ্ছাকৃত ভাবেই তার বাস্তব বা আসল দৃষ্টিভঙ্গিটা এখানে খোলসা করছেন না, আপনার ভাষায় "ধাঁধার" সৃষ্টি করছেন, তাই, পাঠক হিসেবে আপনি বা অন্যরা কি এই সৃষ্টির রস আস্বাদনে ব্যর্থ হবেন বলে মনে করেন?

আপনার উত্তর আমার জানতে খুব কৌতুহল হচ্ছে, কারন এই প্রশ্নটা অনেক আগে থেকেই আমার মনে ছিল। এই আলোচনার আশ্রয়ে সেটা প্রকাশ করলাম। তাই প্রশ্নটা আপনি নৈর্ব্যক্তিক ভাবে ও জেনারেলি নিতে পারলেই খুশি হব, কারন সেটাই আমার উদ্দিষ্ট।

আমার এবারের মন্তব্যটা আপনারটার চেয়েও অনেক অনেক বড় হয়ে গেল মনে হয়। আমার প্যাচালের তেমন কোন গুরুত্ব নাই, না পড়লে কোন লসও নাই। ক্লান্তি লাগলে পইড়েন না, বাদ্দেন! ওহ্‌.... স্যরি.... এদ্দুর যখন পড়েছেন তখন পুরোটাই তো পড়ে ফেলেছেন, বাদ্দিবেন আর কখন! কি আর করা!! হো হো হো

****************************************

এক লহমা এর ছবি

প্রিয় মন মাঝি-দাদা, সচলের যে অসাধারণ সম্পদগুলি আমায় মুগ্ধ ক’রে তার অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন আলোচনাগুলি। বিষয় ত কিছু থাকেই, কিন্তু তার উপর যে আলোচনা হয় সেটি হয়ত হয়ে উঠল আরো বিস্তারী, আরো বৈচিত্রময়। এই সব আলোচনাগুলির বেশীরভাগই আমি এই আসরের সাথে পরিচিত হওয়ার আগের সময়ের। এই সব পড়ি আর ভাবি, আমরা যারা আজকাল সক্রিয় অংশগ্রহণে থাকি, বিভিন্ন লেখার লেজের আলোচনাগুলি দিয়ে আমরা কি আমাদের সময়ে এই আড্ডাঘরটিকে যথেষ্ট আকর্ষণীয় করে তুলতে পারছি! আমি তাই এই আলোচনার সুযোগগুলিকে খুব আনন্দের সাথে আঁকড়ে ধরি। শুধু একটা ভয়ে থাকি, বিশেষ করে লম্বা মন্তব্য করলে, সুযোগটার অপচয় কি অপব্যবহার করে বসলাম না ত? এই আলোচনাটায় আপনার দ্বিমতের কারণে নিজের অবস্থান জানানো ইত্যাদি যা বলেছি, সেটা মনে হয় বাহানা, আড্ডা বসানোর উছিলা, নিজের অজন্তে নিজেকেই চোখ ঠেরে, অন্ততঃ এখন যা মনে হচ্ছে, আপনাকে বা আরো অন্যদের টেনে আনার-ধরে রাখার একটা লাগে তাক-না লাগে তুক প্রয়াস। খানিকটা ত কাজে লেগেইছে, আপনার এইবারের মন্তব্যটা পাওয়া গেছে। আর বিস্তারে না যাই।

মন্তব্যর শেষে আপনি যে জিজ্ঞাস্যটা রেখেছেন সেটা বাদে বাকি গুলি আপনার মন্তব্যর সাথেই, আমার কাছে, আর আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অতিক্রম করে গেছে। আবার যদি সেগুলি নিয়ে নুতন কোন উপস্থাপন আসে, নিশ্চয়ই আরো কথা হতে পারে।

এবারে ঐ শেষ জিজ্ঞাসাটি নিয়ে সাধ্যমত কিছু বলি।

জিজ্ঞাসার সমস্ত অংশটা মনে হয় নীচের উল্লেখটায় ধরা পড়ে।

“ঘটনা ও চরিত্রচিত্রণের মাধ্যমে শুধু কাহিনিটুকু বলে বাকিটুকু পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলে চলবে না? নাকি তাকেও কোন না কোন লেভেলে প্রবন্ধকার বা শিক্ষকের ভূমিকা নিতে হবে?"

চলতেই পারে। লেখার উপর নির্ভর করে, লেখকের-পাঠকের বোঝাবুঝিটা কেমন জমল তার উপর নির্ভর করে।

কোন কোন গল্পে গল্পকার প্রথমেই পরিস্কার করে দেন তিনি কি বলতে যাচ্ছেন, এমনকি শিরোণামেই হয়ত বুঝিয়ে দেন। আবার অনেক গল্পে লেখা যেমন যেমন এগোতে থাকে পাঠকের তত মনে হতে থাকে - পারছি, পারছি, বুঝতে পারছি কি হতে যাচ্ছে। তারপর গল্পের শেষে এসে হয় সে দেখে তার অনুমান আংশিক বা অনেকটাই এমনকি পুরোটাই হয়ত, মিলে গেছে, অথবা একটা চমক এসে তার ভাবনার একেবারে বিপরীত বোধে তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সেই পরিণতিতে সে খুশী হতেও পারে, না ও পারে। কিন্তু গল্প নিয়ে লেখক কি দেখাতে চাইছেন সেটা নিয়ে তার কোন দ্বিধা থাকে না। লেখকের পক্ষে গল্পকে এভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কিন্তু সবসময় সহজ বা মসৃণ থাকে না। বিশেষ করে সংলাপ নির্ভর গল্পর ক্ষেত্রে। অসুবিধা কাটানোর উপায় হিসাবে তখন সংলাপের মাঝখানে মাঝখানে কোন বর্ণনা কি আগের সংলাপের পরিণতিতে দু’-চার কথা অথবা পরের সংলাপের প্রস্তুতি - এই সবের মাঝখানে তিনি এক বা একাধিক সূত্র, ধরতাই রেখে যেতে থাকেন তার কাঙ্খিত পরিণতিতে পাঠককে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এই প্রবাহটা জটীল হয়ে যায় দুটি পরিস্থিতিতেঃ
(১) গল্পকার চাইছেন না তার স্থির করে রাখা কোন পরিণতিতে পাঠককে পৌঁছে দিতে। হয়ত, এমনকি কোন আভাষ ও দিতে।
(২) গল্পকার গল্পের যে চল বেছেছেন সেখানে শুধুই সংলাপ আছে, মাঝখানে লেখকের দিক থেকে কোন ধরতাই রাখা নেই।

এই গল্পটির ক্ষেত্রে অন্ততঃ দ্বিতীয়টি ত ঘটেইছে, প্রথমটিও ঘটেছে কি না পাঠক হিসেবে সেখানেই আমি ধাঁধায় পড়েছি।

প্রথমটি দিয়ে লেখক পাঠককে যেখানে দাঁড় করান সেটি পাঠকের কাছে আকর্ষণের থাকে যখন সে তার আগে থাকতে তত পরিচিত নয় এমন একটি অনুভূতির সামনা করে। সে ভাবে, তাই ত, এমনভাবে ত দেখিনি, বুঝিনি এমন ক’রে! কিন্তু সেটা যখন থাকে না, সে তখন অবাক হয়ে বলে, এসব ত জানাই আছে, তা লেখকমশাই, আপনি কি বলতে চাইছেন? আপনার কথাটি কি এখানে? লেখাটি তাকে কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে। পাঠক তখন ভাবে, আচ্ছা, লেখক যা বলতে চাইলেন আমি কি সেটা ধরতে ব্যর্থ হলাম? ঐ সংলাপ গুলোর মধ্যেই কোন কোনটি কি লেখকের ও কথা ছিল? একটা শেষ চেষ্টা হিসাবে সে অনেক সময় শেষের জোরদার সংলাপটি বা কোন সংলাপে লেখক যদি চরিত্রর মনের দ্বৈত ভাবনাকে প্রকাশের সময় কোন একটিকে বিশেষভাবে আলোকিত করে থাকেন তবে সেই সংলাপটি তার দ্বিধা কাটানোর নোঙ্গর হিসেবে আঁকড়ে ধরবার প্রয়াস পায়। এমনকি সেই প্রয়াস থেকেই সে গল্পটি আরো এক বা একাধিকবার পড়েও ফেলে। সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলে খুশী হয়ে ওঠে, না পারলে ভাঙ্গা মন নিয়ে চলে যায়।

এ গল্পটি এইখানেই পাঠক হিসাবে আমাকে দ্বিধান্বিত রেখে দিয়েছে। গল্পের নিজস্ব বিন্যাসের ফলেই তাকে আর ফিরে পড়তেও উৎসাহ পাইনি।

একটা ছোট গল্প বলে শেষ করি।
দাদীর কাছে বসে গল্প শুনছিল একটি ছোট মেয়ে। এমন সময় তার কলেজ-পড়ুয়া ছোটকাকা আসরে যোগ দিয়ে বাচ্চাটিকে বলল, সেও একটা গল্প জানে। শিশু ত সঙ্গে সঙ্গে উৎসুক। ছোটকাকা বলল, এক যে ছিল পাখী, সে গিয়ে বসল ঐ উঁচু ডালে, তারপর হুস করে উড়ে গেল। শিশুশ্রোতা জানতে চাইল তার পর কি হ’ল। গল্পকার বলল, পাখী ত উড়ে গেল, তার পর আর কি থাকবে? শিশু বলল - এ গল্প চাই না। দাদী, তুমি গল্প বল।
আমরা যারা যখন গল্প পড়ি, খুব বাস্তব, নৈর্ব্যক্তিক গল্প নিয়ে অনেক সময়ই এই রকম অনুভূতির মুখোমুখি হই। ধাঁধায় পড়ে যাই, গল্পটা বলা হ’ল কেন?

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মন মাঝি এর ছবি

চলুক চলুক

****************************************

মরুদ্যান এর ছবি

একেক জন মানুষ একেক ভাবে কথা বলে, তাতে কোন সমস্যা নাই। সমস্যা তখনই যখন দেখা যায় একই চরিত্র একবার বলে শুদ্ধ ভাষা আরেকবার বলে কথ্য ভাষা। এজন্য আমার কাছে লেগে গোবরে লেগেছে, কারণ ধাঁধায় পড়ে গেছি চরিত্রকে নিয়ে। উদাহরণ দেই:

সরকারী অফিসের শুকনা কাজ-কর্মে এরকম মেয়েইতো সবারই স্পীড বাড়ায়; পোস্টারমার্কা সুন্দর না হলেও, টাইট একটা যুবতী মেয়ে আশপাশ থাকলে সবপুরুষই গন্ধ শোঁকার তালে থাকে। তারউপর বড়ঘরের মেয়ে বলেই, সবাইকে প্রাপ্য ইজ্জত দিয়ে চলেন। এই যেমন- নিজের বিয়েতে অফিসশুদ্ধু স্টাফকে দাওয়াত দিয়ে রেখেছেন। তাইতো ধানমন্ডীর এরকম ঝিং-ঝাং কমিউনিটি সেন্টারে আমার মতো হাভাইতারাও কব্জি ডুবিয়ে খেতে পারলো!

একটু চাপ খাওয়া-দাওয়া হইছে।

এমনিতে অভাবের সংসারে ডাইল-ভাত, শাক-পাতা-ছোড মাছ এগুলাই ডেলি পেটে যাইত্যা ঢুকাতে হয়। তাইতো, কোন দাওয়াতে গেলে প্যান্টের বুতাম-বেল্ট ঢিলা করে গলা পর্যন্ত গিলি। জানি, কলিগরা-দোস্তরা হাভাইতা কয়! পাত্তা দেই না; মিনি-মাগনা পেটচুক্তির চান্স পেলে কোন ছাড়াছাড়ি নাই।

উপরের দুই প্যারা একই চরিত্রের ভাবনা, যেটা দুইবার দুই রকম ডায়ালেক্টে। আমার কাছে এটা অবাস্তব লেগেছে।

লেখক লেখা টা প্রকাশের আগে আরেকটু পরিমার্জন করতেই পারতেন, আমি এখনও বলব লেখা অগোছালো লেগেছে। হাসি

"আজাইরা ফাও---" এই লাইনের ব্যাপারে এক লহমা যা বলেছে আমিও সেই একই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছি।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

মন মাঝি এর ছবি

একই চরিত্র কনটেক্সটে-ভেদে ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলে কথা বলতে পারে বৈকি, বাস্তবে আমরা যেমনটা সবসময়ই করে থাকি। ইয়ারদোস্তদের আড্ডায় আমরা যে ভাষায় কথা বলি - অফিসে বসের সাথে বা মিটিং-এ, ফর্মাল পরিবেশে, গুরুজনদের সাথে, অপরিচিত মানুষের সাথে প্রথম পরিচয়ের সময় - ইত্যাদি সেটিং-এ আমরা নিশ্চয়ই অনেকটাই ভিন্নভাবে কথা বলি, তাই না? গল্পেও এটা উঠে আসতে পারে। তবে এই গল্পের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণই সঠিক - এখানে তেমন কোন কন্টেক্সট-ভেদ নেই। তাড়াহুড়োর মাথায় এটা আমি প্রথম পড়ায় লক্ষ্য করিনি, আপনি দেখিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত। বাকি সব কথা এক লহমার জবাবে আমার শেষ মন্তব্যে উপ্রে বলেছি।

****************************************

মরুদ্যান এর ছবি

আপনারে আর লহমা রে কুর্নিশ। এত বড় আলোচনা মূলক মন্তব্য করতে পারার জন্য আমারে আবার জন্মাইতে হবে দেঁতো হাসি
মন্তব্য সমূহে চলুক চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অন্যকেউ এর ছবি

ভালোই লাগলো আপনার লেখার ধরন। উপড়ি, বেঁইচা, ইত্যাদি বানানপ্রমাদগুলোতে হোঁচট খেয়েছি। আর শেষের কাঁচা কাঁচা স্কুলছাত্র কিসিমের ছ্যাঁকাপরবর্তী উপদেশনামাটা ভালো লাগে নাই। তবে সব কিছু মিলিয়ে গল্পটা ভালোই হয়েছে।

আরও লিখবেন আশা করি। শুভকামনা।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

বাহ! দারুণ একটা আলোচনা হয়েছে দেখা যায়! কেয়া বাৎ! কেয়া বাৎ!!

আমার যা বলার ছিল, তা লহমাদা আর মরূদ্যান আগেই বলে দিয়েছে।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

ইতিমধ্যে অনেক আলোচনা উঠে এসেছে, শুধু এতটকুই বলব ইংরেজির ব্যাবহার বেশি ছিল। ইংরেজি ছাড়াই আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যেত।
সব মিলিয়ে ভাল লেগেছে, ভবিষ্যতে আরও সুন্দর লিখার অপেক্ষায় থাকলাম।

সরীসৃপ

আয়নামতি এর ছবি

শ্রীপন্থের একটা মজার বই পড়ছি "পড়ার বইয়ের বাইরের পড়া"সেখানে লেখক আলবের্তো মাঙ্গোয়েলের "এ হিস্ট্রি অব রিডিং"
বইয়ের আলোচনার এক পর্যায়ে একেক জন পাঠকের কাছে একই লেখা/বই যে নানাভাবে ধরা দেয় সেটি মাঙ্গোয়েলের আলোকপাত করা কাফকার 'মেটামরফসিস' গল্পটিকে উদাহরণ ধরে বলেছেন। এ গল্পটি মাঙ্গোয়েলের ১৩ বছরের মেয়ের কাছে নিছকই একটা হাসির গল্প। অন্যআরেক পাঠকের কাছে যা ধর্মত্ত্ত্ব, ব্রেখট সে গল্পকেই 'সত্যিকার বলশেভিক সাহিত্যের প্রতিনিধি' হিসেবে চিহ্ণিত করেছিলেন। মার্কসবাদী লেখক লুকাচের কাছে যা 'বুর্জোয়া অবক্ষয়ের পরিচিত অবদান' হয়ে ধরা দেয়। নবোকভ, বর্হেস, আরো অনেকেই গল্পটি সম্পর্কে মন্তব্য করেন। কারো সাথেই কারো পাঠের মিল নেই!
কাজেই একই গল্প পাঠ পাঠক মাত্রই ভিন্নতা পাবে। জানিনা এসব বলাটা কতটা প্রাসঙ্গিক। জানান দিতে হবে তো আমি কী বই পাঠ করছি খাইছে

***
একটা মজার ব্যাপার খেয়াল করেছেন?
এই গল্পটা নিয়ে এতসব আলোচনা হচ্ছে অথচ এর লেখক মহাশয় নির্লিপ্ত আছেন।
নামের কী দারুণ সার্থকতা! আলোচনাগুলো খুঁটিয়ে পড়তে হবে। এ থেকে অনেক উপকার পাবো হাসি

অভিমন্যু . এর ছবি

প্যারার পীড়ায় ব্যাপক পীড়িত হইসি।

________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আয়হায়... লেখক কোনে? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

যা বলার তা উপরে আলোচনায় চলে এসেছে! হাসি

গল্প পড়তে গিয়ে একটু প্যাঁচ খায়ে গেছি! ইয়ে, মানে...

আর উপদেশ ধরনের অংশটুকু বড় পসা লাগলো! দেঁতো হাসি

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

অতিথি লেখক এর ছবি

একজন মানুষ কখনো একই ভাষায় কথা বলে না- এমনকি ভাবেও না! এমনই তো চারপাশে দেখি! আর, ভাষাগত বৈচিত্র্য সুপাঠ্য না হলে আমি কি করবো? যে লেখে সে তো আমি নই! সে এক ঘোর কেবল!
মনমাঝি, একলহমা, মরূদ্যান, অন্যকেউ, দুষ্ট বালিকা ও যারা পড়েছেন সবাইকে ধন্যবাদ।
(নির্লিপ্ত নৃপতি)

পাঠক এর ছবি

আপনি কি আগে সচলায়তনে স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট নিকে লিখতেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

এমন কেন মনে হলো পাঠক? একটু গুছিয়ে বলবেন কি?
(নির্লিপ্ত নৃপতি)

কল্যাণ এর ছবি

ভাষার জগা খিচুড়িটা না থাকলে খুব ভাল একটা গল্প হত। একটু লক্ষ্য রাখা যায় এদিকে? চালিয়ে যান চলুক

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।