একটি সামান্য পর্যবেক্ষণ ও আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতি একটি বিশেষ অনুরোধ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৮/০৮/২০১৪ - ১১:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটি সামান্য পর্যবেক্ষণঃ
ভারতীয় বাংলা সিনেমার মধ্যে একটা নতুনত্বের ছোঁয়া লেগেছে, এটা হয়তো অনেকেই লক্ষ্য করেছেন। কিন্তু কাল একটা বিশেষ জিনিস লক্ষ্য করলাম - ওরা ওদের কিংবদন্তীদেরকে সম্মান জানাতে আরম্ভ করেছে।

কয়েকদিন আগে ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে একটা সিনেমা বানালো, মেঘে ঢাকা তারা। ঋত্বিকের জীবন, ওর বানানো সিনেমাগুলো মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলো প্রধান চরিত্র নীলকণ্ঠ বাগচীর মধ্যে। ঘটকবাবুকে যে ওরা কেমন সম্মান করে, সেটা মুভির সীনগুলোর মধ্যে একদম স্পষ্ট। একদম সরাসরি কিছু উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু আপনার যদি ঘটকের কাজ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে বুঝতে একটুও সমস্যা হবেনা। নীলকণ্ঠ বাগচী যে সিনেমাগুলো বানাচ্ছিলো, সেগুলোর নাম দেখলেই বুঝতে পারবেন যে বলা হচ্ছে অযান্ত্রিকের কথা, বাড়ি থেকে পালিয়ে এর কথা, অথবা যুক্তি তক্কো গপ্পো এর কথা।

গতকাল একটা সিনেমা দেখলাম, অপুর পাঁচালি। কাহিনীর শুরুটা অনেকটা এমন - বিভূতির গল্প থেকে বানানো সত্যজিত রায়ের "পথের পাঁচালি" সিনেমাতে অপু চরিত্রে যে শিশু শিল্পী অভিনয় করেছিলো, তার খবর জানেনা কেউ। সুবীর ব্যানার্জি নামের সেই চাইল্ড আর্টিস্ট এখন কোথায়? তার খোঁজ পড়লো। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র তাকে অনেক কষ্টে খুঁজে বের করলো। তার হাতে ধরিয়ে দিলো জার্মানী থেকে আসা একটা নিমন্ত্রণপত্র। কিন্তু সুবীর ব্যানার্জি যাবেন না কোথাও।

একবার একটা আর্টিক্যালের মধ্যে অপুর জীবনের সাথে সুবীরের জীবনকাহিনীর অনেক মিল লিপিবদ্ধ করা হয়েছিলো। সিনেমাটার মধ্যে সুবীর-অপু যেন একীভূত হয়ে গেলো। সত্যজিত রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ফুটিয়ে তোলা হলো, তার অপু ট্রিলজির টুকরোগুলো এনে। অপু ট্রিলজি দেখা ছিলো অনেক আগেই, এভাবে করে আবার দেখে কেন যেন চোখে পানি চলে এলো।

আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতি একটি বিশেষ অনুরোধঃ
আমি অত্যন্ত খুশি হবো, যদি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারা আমাদের কিংবদন্তীদের সম্মান জানিয়ে ট্রিবিউট নির্মাণ করেন।

কিংবদন্তী যে কোনো ক্ষেত্রে হতে পারে। আমাদের জহির রায়হান আছেন, মুনীর চৌধুরী আছেন, শহীদুল্লাহ কায়সার আছেন, আছেন সুভাষ দত্ত, আছেন খান আতাউর রহমান, আছেন জয়নুল আবেদীন। আমাদের নতুন প্রজন্মের সাথে আরো বেশি করে পরিচয় করিয়ে দেয়া উচিৎ আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাথে, শহীদুল জহিরের সাথে, আহমদ ছফার সাথে, শওকত ওসমানের সাথে।

বিশেষ করে একটা সিনেমা বানানোর জন্য প্লট একদম রেডি করাই আছে, বাস্তব ঘটনা দিয়ে সাজানো - শহীদুল্লাহ কায়সারকে ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর তুলে নিয়ে গেলো আল-বদর বাহিনী। দেশ স্বাধীন হবার পর তার ভাই জহির রায়হান তাকে খুঁজতে গেলেন মীরপুরে। মীরপুর তখন ঠিক ঢাকার ভেতরে না এখনকার মত, সেটা ছিলো বিহারী অধ্যুষিত এলাকা। সেখানে কে বা কারা (সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা - বিহারীরা বা ছদ্মবেশী পাকিস্তানি সৈন্যরা) তাকে গুলি করে হত্যা করে।

এমন একটা দমবন্ধ করা প্লট! আমাদের দুই কিংবদন্তীকে নিয়ে! আর কী লাগে? আমরা যখন আমাদের মেধাবীদেরকে, আমাদের কিংবদন্তীদেরকে সম্মান জানানো শুরু করবো, সেটার প্রভাব হবে বহুমুখী। সবচেয়ে বড় কথা, মেধার সম্মান জানানোর চর্চা তৈরি হবে। নতুন প্রজন্ম আমাদের অতীত কিংবদন্তীদের ব্যাপারে জানতে পারবে। তারা জাতি হিসেবে গর্ব করার কিছু উপাদান খুঁজে পাবে। তাদের মধ্যে কিছু একটা করে দেখানোর উৎসাহ আসবে।

- ফরহাদ হোসেন মাসুম, একজন সামান্য মুভিখোর এবং বাংলাদেশী সিনেমার সুদিনপ্রত্যাশী


মন্তব্য

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

ভালো লিখেছেন। চলুক

পুরনোরা কিছু করবেন না, করলে এতোদিনে নামিয়ে ফেলতেন। নতুনদের মধ্য থেকে কাউকে এগিয়ে আসতে হবে।

মরুদ্যান এর ছবি

নতুনরা তো এসব বানাচ্ছে। স্টোরি অফ সামারা

পরিচালকের নাম রিকিয়া মাসুদো, মাসুদ নামরে মাসুদো বানায় জাপানিজ আমেজ দিতে চায় নাকি?

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ফরহাদ হোসেন মাসুম এর ছবি

ট্রেইলার দেখলাম। লেইমনেসের একটা সীমা থাকা উচিৎ। রিকিয়া মাসুদো? আজাইরা আর কাকে বলে!

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের আসলে দুটো জিনিস খুব বেশী দরকার। এক, হলে গিয়ে সিনেমা দেখার অভ্যাস। দুই, পর্যাপ্ত ভাল মানের প্রেক্ষাগৃহ। এই দুই যদি ঠিক থাকে তাহলে পরিচালক-প্রযোজকরা ফর্মুলা ফিল্মের বাইরে গিয়ে ছবি বানাতে পারবে। আমরা যদি পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকাই দেখব, নব্বইএর দশকেও তাদের চলচ্চিত্র শিল্প খুব আহামরি কিছু ছিল না। কিন্তু এখন ওখানে একটা সাধারন মানের শহরেও স্টার সিনেপ্লেক্স মানের মাল্টিপ্লেক্স দেখা যাবে। কলেজ-ভার্সিটির ছেলেমেয়েদের সিনেমা দেখা ওদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু এখানে পুরো বাংলাদেশের কথা বাদ দিলাম এক ঢাকাতেই স্টার, যমুনা, বলাকার বাইরে ভাল প্রেক্ষাগৃহ খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে একটু অন্যধারার সিনেমা চলবেই বা কোথায় আর দর্শকই বা আগ্রহ থাকলেও দেখবে কোথায়?

- সীমান্ত রায়

অতিথি লেখক এর ছবি

একমত। ভালো সিনেমার নির্মাণ ও আরো জরুরী ভিত্তিতে প্রসার করতে হবে। আমাদের নির্মাতারা মার্কেটিং বোঝেন না এখনো ভালো করে। ভালো খাবার রান্না করা যেমন জরুরী, দাওয়াত দেয়াও জরুরী। নইলে খাবার পড়ে থাকবে।

- ফরহাদ হোসেন মাসুম

মরুদ্যান এর ছবি

ভাল সিনেমা যে চলে তা ইদানিং কালের মনপুরা, মনের মানুষ, গেরিলা প্রমাণ করেছে। এর আগে হুমায়ূন আহমেদের ছবি গুলাও কোনটাই লোকসান করেনি। তারপরও মেধাবী পরিচালক রা কেন এগিয়ে আসেন না বুঝি না।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

আয়নামতি এর ছবি

সুন্দর প্রস্তাবনা ভাই চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

কোনো নির্মাতা বন্ধু থাকলে ওদের সাথে শেয়ার করতে পারেন লেখাটা।

- ফরহাদ হোসেন মাসুম

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
শুধু লিজেন্ডদের নিয়ে সিনেমা করাই না, লিজন্ড গল্প/উপন্যাস থেকে সিনেমা বানানোটাও বোধহয় ভালো হতো। আমাদের দেশে ট্র্যাডিশনটা খুব বেশি দেখিনা, টিভিতে কিছু কাজ হচ্ছে কিন্তু সিনেমা আর নাটক ত এক না। দুটো কাজই করতে পারলে ভালো হতো।

-------------------
আশফাক(অধম)

অতিথি লেখক এর ছবি

অবশ্যই। গৎবাঁধা একই জিনিস নির্মাতারা বানিয়েই যাচ্ছেন, অথচ চমৎকার রসদের দিকে ধ্যান দিচ্ছেন না। ব্যাপারটা দুঃখজনক। অনেকে হয়তো ভাবছেন, খরচ পোষাতে পারবেন না। অথচ, নিজেদের ওপর কনফিডেন্স রেখে যদি আন্তর্জাতিক মানের ছবি বানানো হয়, তাহলে বাইরেও পৌঁছে যাবে আমাদের চলচ্চিত্র। চিন্তাই আমাদেরকে ছোটো করে রেখেছে।

------------------
মাসুম

দীনহিন এর ছবি

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ, মাসুম!

সমস্যা হচ্ছে কি, জানেন, আগে আমাদের সিনেমা পরিচালকেরা হিন্দি ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতেন প্লট নকলের জন্য। এখনকার ভারতীয় বাংলা ছবিগুলোতে অনেক স্মার্টনেস দেখতে পাওইয়া যায়, চিত্রায়ন, স্টোরি, সংলাপ - সবকিছুতে অনেক আধুনিক হয়ে উঠছে এই সময়ের ওপাড়ের বাংলা ছবিগুলি; তো আমাদের দেশের সিনেমা পরিচালকগণ এখন তাকিয়ে থাকেন ভারতীয় বাংলা সিনেমার দিকে, এমনকি আগে হিন্দি ছবির তারকাদের আনার একটা বাতিক থাকলেও এখন আনছেন ভারতীয় বাংলা ছবির তারকাদের!

এ থেকেই বোঝা যায়, ভারতীয় বাংলা ছবি কতটা এগিয়েছে, আর আমরা আরও কতটা পিছিয়েছি!!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাবতে বেশ খারাপ লাগে ব্যাপারটা।

কয়েকদিন আগে নৃ এর ট্রেইলার দেখলাম, অতিমাত্রায় জটিল লাগলো। কিন্তু মন খারাপ হলো এটা শুনে যে, নৃ এর জন্য ফান্ডিং এর টান পড়েছে, প্রযোজক পাওয়া যাচ্ছেনা। ভালো সিনেমাকে কেন অর্থসংকটে ভুগতে হবে?

- মাসুম

এক লহমা এর ছবি

আসুক, আসুক সেদিন আসুক; আসুক, আসুক চলচ্চিত্রে সুদিন আসুক!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অভিমন্যু . এর ছবি

চলুক

________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।