নেপাল ভ্রমণের কথোপকথন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৯/০৮/২০১৪ - ৮:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের দেশের মানুষজনের মাঝে ভারত ভ্রমণের এক ধরণের হিড়িক দেখা যায় আজকাল। আমিও তাদের দলে ছিলাম। ঘুরেছিও অনেক জায়গায়। বাই রোড যাওয়ার সুযোগ আছে দেখে হয়তো অনেকেই নিকটবর্তী দেশে সুযোগ বুঝে ঘুরে আসেন। তবে এইবার আমার মনে হয় আপনাদের নেপাল যাওয়ার সময় হয়েছে। আসুন নেপাল কেন কিভাবে ও কখন যাবেন সেই বিষয়ে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক।

বাই রোড নেপাল ভ্রমণঃ
হ্যাঁ, বাই রোড নেপাল যাওয়া খুব সম্ভব। সেজন্য যা করতে হবে তা হচ্ছে প্রথমে ঢাকাস্থ নেপাল এমব্যাসি থেকে নেপালের ভিসা নেয়া লাগবে। তারপর ভারতের ডাবল এন্ট্রি ট্রানজিট ভিসা। ভিসা কিভাবে নেবেন বা কি কি দরকারি কাগজ জমা দেয়া লাগে তা আপনি সামান্য একটা ফোন কলের মাধ্যমেই জানতে পারবেন। গুগল করে নেপাল এমব্যাসির ফোন নম্বর, ঠিকানা সব পাবেন। তাও আমি দিয়ে দিচ্ছি - [ ইউনাইটেড নেশন্স, রোড নং-২, বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক এলাকা, ঢাকা। ফোন- ৯৮৯২৪৯০ ] তবে আমার বাই রোড যাবার পূর্ব অভিজ্ঞতা নাই তাই সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিলাম। আগ্রহী হলে ইনবক্স করবেন, বাই রোড যাবার ব্যাপারে যতটা পারি সাহায্য করবো। তবে ফ্যামিলি নিয়ে বাই এয়ার যাওয়াটাই সব থেকে উত্তম।


By Road Nepal Route

বাই এয়ার নেপাল ভ্রমণঃ
অনেকেই জেনে থাকবেন নেপাল ভ্রমণে বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য অন এরাইভাল ভিসা এবং বছরে প্রথমবার তা একদম ফ্রি। সার্কভুক্ত দেশসমুহের নাগরিকদের জন্য বছরে প্রথমবার কোন ভিসা ফি লাগবে না, অর্থাৎ একই বছর দ্বিতীয়বার ভ্রমনের জণ্য ভিসা ফি লাগবে। ভিসা ফি 25$ USD. এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন অফিসার আপনার কাছে টাকা চাইলে সহজ ইংরেজিতে বলবেন আপনি বাংলাদেশী এবং ইহা আপনার প্রথম ভ্রমণ। তাই পাসপোর্ট রেডি থাকলে এক পা নেপাল ধরে নিতে পারেন। তবে পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস বাকি থাকতে হবে। পাসপোর্টে 150-200$ Endrosement করিয়ে নিয়ে যাবেন। অতঃপর টিকেট করার পালা। বাংলাদেশ বিমান এই যাত্রায় আপনার সবথেকে ভালো এয়ারলাইন্স নিঃসন্দেহে। ইউনাইটেড এয়ার বা অন্য কিছু থাকলে আমার তা জানা নাই। আপনার যদি ডেবিট কার্ড বা এই জাতীয় কিছু থাকে তবে আপনি চাইলে নিজে বিমান বাংলাদেশ এরায়লাইন্স ওয়েবসাইট থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে টিকেট করে ফেলতে পারবেন। আর নয়তো রুপসী বাংলা হোটেলের নিচে বিমান বাংলাদেশের অফিস আছে। সেখানেও আপনি টিকেট পাবেন। তবে সবথেকে কম খরচে কিনতে আপনাকে কিছু কিছু নির্দিস্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হবে এবং তাদের অফিস অধিকাংশই পল্টনে অবস্থিত। ইকনমি ক্লাস সিটের রাউন্ড ট্রিপ টিকেটের মূল্য ১৯,০৮৬ টাকা এবং তা আপনি জায়গা ভেদে ১৮,০০০-১৮,৫০০ টাকায় পাবেন। এর থেকে বেশি যারা বলবে তাদের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করে লাভ নাই। টিকেট করার পূর্বে আপনার যাত্রার তারিখের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবেন। যতদূর জানি তারিখ পরিবর্তনে ২,০০০ টাকা অতিরিক্ত দেয়া লাগে। সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে ঠিক করতে হবে আপনার টু্যর কয়দিনের হবে। আমি নিচে এই বিষয়ে আপনাকে কিছুটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।

টিকেট করা শেষ... এইবার টুকটাক ব্যাগ গুছিয়ে নিন। ট্র্যাকিং করতে গেলে যা যা প্রয়োজন তা আপনি পূর্বে ট্র্যাকিং করেছে এমন একজনের থেকে ভালমতো জেনে নিন। আর যদি শুধুমাত্র ভ্রমণের উদ্দেশ্যে হয় তবে বিশেষ কিছু নেবার প্রয়োজন নেই। খুব বড়জোর একটা টর্চ (কেননা নেপালে রাতে অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকে না জেনারেটর বা আই পি এস-এ চলে), পানিতে ভেজানো যায় এমন স্যান্ডেল(হালকা বৃষ্টি হতে পারে), আর পাতলা একটা সোয়েটার বা শাল নিতে পারেন যদি আপনার ভ্রমণের সময়কাল হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত। অক্টোবর থেকে মে কঠিন ঠাণ্ডা এবং নেপালের টুরিস্ট সিজন। তখন ঠাণ্ডা এবং খরচ দুটোই বেশি হবে।


Tribhuvan International Airport, Kathmandu

যদি আপনার প্রথম বাই এয়ার ভ্রমণ হয়ে থাকে তবে এয়ারপোর্ট কমপক্ষে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পূর্বে চলে যাবেন। খুব সামান্য কিছু কাজ শেষে বিমানে নির্দিস্ট আসনে বসে পরবেন। বিমান আকাশে উড্ডয়নের ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে একজন সুন্দরী এয়ারহোস্টেস আপনার সামনে সামান্য কিছু খাবার দিয়ে যাবে। আমাদের বেলায় তা ছিল একটা ফ্রুট কেক, একটা চিকেন বার্গার, ছোট এক কাপ সেমাই আর ২৫০ মিলি পেপসি। আশা করি এতে আপনার কিছুটা হলেও পেট ভরবে। ঢাকা থেকে কাঠমুন্ডু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পৌঁছাতে সময় লাগবে এক ঘণ্টার কাছাকাছি। কাঠমুন্ডু অর্থাৎ নেপালের লোকাল সময় বাংলাদেশের থেকে ১৫ মিনিট পেছনে। বিমান থেকে নেমে ঘড়িতে সময় ১৫ মিনিট কমিয়ে নিন এবং তাড়াহুড়ো না করে ভালো মত কয়েকবার নিঃশ্বাস নিয়ে নিবেন। ঢাকা এবং কাঠমুন্ডুর আবহাওয়া এক না তাই সেই আবহাওয়ার কিছুটা নিজেকে মানিয়ে নিয়ে গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করুন। পকেটে অবশ্যই একটা কলম থাকা চাই। ভেতরে দেখবেন সবাই হুমড়ি খেয়ে কি যেন লিখায় ব্যস্ত। আপনি ভুলেও সেই আদি আমলের লেখালেখিতে যাবেন না। আমাদের দেশের এ টি এম বুথের মেশিনের মত একাধিক কম্পিউটার ডিসপ্লে দেখতে পাবেন। সেখানে আপনার মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের যে পাতায় ছবি আছে সে পাতাটি হাতের কাছাকাছি একটা আয়নার মত জায়গা আছে সেখানে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখলে সব তথ্য কম্পিউটারে চলে যাবে এরপর বাকি কাজ সহজে হবে। আর বুঝতে সমস্যা হলে সেখানে গলায় কার্ড ঝোলানো প্রতিনিধিদের সাহায্য চাবেন। তারা যথেষ্ট উপকারী বলে আমার মনে হয়েছে। মোট কথা আপনি কাগজ কলমের ঝামেলায় যাবেন না। তথ্য দেয়া হয়ে গেলে ওয়েব ক্যাম দিয়ে ছবি তুলে ফেলুন। এরপর একটা রিসিট পেয়ে যাবেন, তা নিয়ে সোজা অফিসারের কাছে গিয়ে সিল নিয়ে বের হবেন। সাথে ৫০০ নেপালি রুপি থাকলে এয়ারপোর্টে ডলার এক্সচেঞ্জ না করাই ভালো, আর নয়তো করানো লাগবেই কেননা ট্যাক্সি ভাড়া করে আপনাকে "থামেল" যাওয়া লাগবে। ট্যাক্সি ভাড়া ৩৫০-৪০০। ড্রাইভারকে বলতে হবে আপনি থামেল যাবেন এবং যদি আপনার জানা কোনো হোটেল থাকে তবে সেই হোটেলের নাম বললে গন্তব্যে পোঁছে যাবেন। থামেল যাওয়ার পর দালালশ্রেণির মানুষ আপনাকে নানার রকমের হোটেলের কথা বলবেন তবে আমার একান্ত ব্যক্তিগত মত, দালাল কোনোদিনও আপনাকে ভালো হোটেলে নিয়ে যাবে না কেননা ভালো পরিবেশের হোটেলের সাথে তাদের কোনো মুনাফা-চুক্তি নাই। আমি একদম শেষে কয়েকটি হোটেলের ঠিকানা নিয়ে দেবো। চাইলে সেখানে দেখতে পারেন। এয়ারপোর্ট থেকেই মোবাইল সিম কিনে নেবেন কেননা নেপালে যেখানে সেখানে সিমকার্ড পাবেন না। সেক্ষেত্রে কয়েক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি সাথে নেবেন। আর ডলার এক্সচেঞ্জ করার সবচেয়ে ভালো জায়গা কাঠমান্ডু। ১০০ ডলার = ৯৮০০ রুপি আমরা পেয়েছি। মজার কথা হচ্ছে এই দেশে ডলার কনভার্ট করতেও দরদাম করা লাগে। বোর্ডে লিখা থাকবে ৯৪ দশমিক ৬০ কিন্তু দেখবেন ৯৮ এ রাজি হয়ে যাবে। আজব কাহিনী বটে! তবে ইহা এয়ারপোর্টে ঘটবে না। ফেরার পথে অনেকে ডিউটি-ফ্রি শপ থেকে কেনাকাটা করতে চায়, ভুলেও সেই চিন্তা করবেন না। সেখানে সব কিন্তু ডাবল দাম।

কাঠমুন্ডু হোটেলের রুম নেয়া হয়ে গেলে আপনার প্রথম কাজ একটু ফ্রেশ হয়ে খাবারের সন্ধানে বের হওয়া। খাবারের দোকান খুব কম এবং পরিচ্ছন্নতাও কম। হোটেলের কিচেন ভালো মনে হলে সেখানেও খেয়ে নিতে পারেন। ভুলেও লোকাল খাবারের আইটেম "থালি" খাবেন না। কোনো হোটেলেই সবজি ভালমতো সিদ্ধ করে না। সব থেকে ভালো খাবার চিকেন ফ্রাইড রাইস এবং চিকেনের নানা রকম আইটেম যেমন তান্দুরি, চিকেন কারি, ঝাল ফ্রাই ইত্যাদি। চিকেন মম খাবেন অবশই। প্রথমদিন ভালো মত কাটাতে পারলে বাকি দিনগুলো আপনার ভালো যাবার কথা। এরপর খুব সামান্য কিছু আপনার জানলেই চলবে তা নিচে দিয়ে দিচ্ছি।


Panorama View of Kathmandu (ছবিঃ সংগ্রহীত)

অনেকে প্রথম রাতে কাঠমুন্ডু হোটেলে না থেকে নাগরকোট চলে যায়। আমার ধারণা মতে সব থেকে ভালো হচ্ছে প্রথম রাত যদি আপনি এয়ারপোর্ট থেকে ভক্তপুর চলে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাসে গেলে জনপ্রতি ৩৫-৪০ রুপি আর নয়তো ট্যাক্সিতে ৭০০-৮০০ কমপক্ষে, সময় লাগবে এক ঘণ্টার একটু বেশি। আর নয়তো থামেল থেকে হাঁটা পথে যাবেন "লইনচর", সেখানে মাইক্রবাস লোকাল যাতায়াতের মাধ্যম। মাইক্রোবাসে জিজ্ঞাস করবেন "চক্রপথ" যাবে কিনা। ভাড়া ২০টাকা তবে স্টুডেন্ট আইডি থাকলে ভাড়া অর্ধেক, তা সে যেই দেশেরই স্টুডেন্ট হন না কেন! এক অ্যান্টি আমাদের এই তথ্য দিয়ে উপকৃত করেছিলেন। অতঃপর ভক্তপুর পৌঁছে দেখবেন খুবই অসাধারণ একটা জায়গা। খুব সম্ভবত সেখানে নেপালের অধিকাংশ স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। ভক্তপুর দরবার স্কয়ার দেখার মত জায়গা যদিও আমি ভেতরে যাইনি একটা বিশেষ কারণে। ভক্তপুর থেকে নাগরকোট খুব সামান্য পথ। চাইলে পরদিন খুব সকালে বাস বা ট্যাক্সিতে নাগরকোর্ট গিয়ে সূর্যোদয় দেখে ফেলতে পারেন। নাগরকোর্টে আমার সব থেকে ভালো লেগেছে " Hotel Hill View" ভাড়া সিঙ্গেল রুম ডাবল বেড ১৮০০-২০০০ রুপি থেকে শুরু। নাগরকোর্ট থেকে ডিরেক্ট কাঠমুন্ডু আসার বাস পাবেন সকাল ৯টার মধ্যে। ভাড়া ২০০-৪০০ রুপি। কাঠমুন্ডু থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টায় পোখারা যাবার বাস পাবেন। সেক্ষেত্রে আপনি যে হোটেলে উঠবেন উনারা টিকেট করে দেয়ার জন্য আপনাকে বলবে। চাইলে তাদের মাধ্যমেও করতে পারেন বা রাস্তায় আশেপাশে বহু ট্রাভেল এজেন্সি আছে তাদের মাধ্যমেও পারবেন।সেখানে টিকেট কাটার অনেক দালাল আছে। ওরা বেশি টাকা নিবে। ওদের সাথে কথা বলারই দরকার নাই। ট্যুরিস্ট বাসের কোন অভাব নাই। সিট পাবেন নির্দ্বিধায়। তবে এক্ষেত্রে ভাড়া কোনোভাবেই ৫৫০-৬০০ রুপির বেশি না। সামনের দিকে সিট নেবেন এবং টিকেট করার আগে সীট নম্বর জেনে নিবেন। লেখার শেষাংশে "রবিন" নামের এক ভদ্রলোকের নম্বর দিয়ে রাখলাম, আমরা উনার মাধ্যমে টিকেট নিয়েছিলাম। নেপালে সর্বক্ষেত্রে ভালো মত দরদাম করতে না পারলে পদে পদে আপনার ১০০-২০০ রুপি বেশি দেয়া লাগবে একথা নিশ্চিত।


Bhaktapur, Patan Darbar Square (ছবিঃ সংগ্রহীত)

পোখারা আমার দেখা মতে নেপালের সব থেকে নিরিবিলি এবং পরিপূর্ণ একটা শহর। বাস থেকে নেমে বামে ফিউয়া লেক আর ডানে ছোট বড় অসংখ্য হোটেল। অফ-সিজনে হোটেল ভাড়া খুবই কম। আপনার পছন্দ অনুযায়ী হোটেল নিয়ে নেবেন। "Lake View Resort" আমার দেখা মতে খুব ভালো একটা হোটেল। ভাড়া কিছুটা বেশি। আসে পাশে শত শত হোটেল আছে আপনার সাধ্য মত একটা নিয়ে নেন। পোখারাতে দালাল নাই বললেই চলে। আপনাকে হয়তো বড়জোর বলবে হোটেল লাগবে কিনা আপনি লাগবে না বলে সোজা হাঁটা দিলে আর কেউ বিরক্ত করবে না। ঠাণ্ডা মাথায় হোটেল রুম দেখে সিন্ধান্ত নিবেন। পোখারার লোকজন যথেষ্ট সহজ সরল। লেকসাইড এরিয়াতে যত সামনে যাবেন ডানে বামে শত শত রেস্টুরেন্ট আর দোকানের সারি আপনার চোখে পরবে। আমার মনে হয় সেখানে স্থানীয়দের থেকে টুরিস্ট বেশি এবং তারা চিল করে বেড়ায় সারাবছর। তাদের বড় একটা অংশ আসে ইউরোপ থেকে। আমি এখনো এই প্রশ্নের উত্তর পেলাম না যে এতো এতো সাদা চামড়ার লোক নেপালে কি এমন পেয়েছে যে বিন্দাস ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে! পোখারা দেখার জন্য আপনাকে ট্যাক্সি ভাড়া করতে হবে। সারাংকোট সহ পোখারার সকল স্পট ঘুরতে সকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্যাক্সি ভাড়া লাগবে ৩০০০ রুপি। আমার পরিচিত অত্যন্ত ভদ্রলোক একজন ড্রাইভার আছে নাম "প্রকাশ"। আপনাদের কেউ চাইলে আমি উনার ফোন নম্বর যাবার পূর্বে আপনাদের দিব। আমার দেখা এখন পর্যন্ত নেপালিদের মধ্যে সবথেকে সৎ এবং অমায়িক মানুষটি হচ্ছে এই প্রকাশ বাবু। শুধু তাই না, উনি অত্যন্ত ভালো ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন।

পোখারা থেকে চাইলে চিতওয়ান যেতে পারেন। জঙ্গল সাফারি করার জন্য বেশ ভালো জায়গা কিন্তু আমার পাহাড় বেশি ভালো লাগে তাই আমি একদিন বেশি পোখারাতে থাকতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছি চিতওয়ান যাবার চাইতে।


Phewa Lakw, PokharaPhewa Lakw, Pokhara

পোখারা লেকে বোট ভাড়া পাওয়া যায় ঘণ্টায় ৩৫০ রুপি সাথে প্রত্যেক যাত্রীর জন্য লাইফ জ্যাকেট বাবদ ১০ রুপি। প্রকাশ বাবু আমাদের পোখারা দেখানোর পর নৌকায় নিজে থেকে এক ঘণ্টা পোখারা লেক ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। পোখারা থেকে একইভাবে কাঠমান্ডু ফিরবেন টুরিস্ট বাসে। কাঠমান্ডু ঘুরে দেখার অনেক জায়গা আছে, হাঁতে কিছু সময় নিয়ে রাখতে হবে। তবে কাঠমান্ডুতে ঘুরে দেখার যায়গাগুলো তুলনামূলক কাছাকাছি। ৪-৫ ঘণ্টায় সব ঘুরে ফেলতে পারবেন। জোয়ান পোলাপাইন হলে কাঁধে ব্যাগ এবং মিনারেল ওয়াটার নিয়ে আল্লাহ্‌র নামে হাঁটা দিবেন কেননা হাঁটা শরীরের জন্য ভালো।


Sarangkot Sunrise LIVE

কাঠমান্ডুতে আমার দেখা একমাত্র মসজিদ থামেল মসজিদ। এর ঠিক পাশেই হোটেল আল-মদিনা। মদিনা হোটেল খাবারের জন্য বাংলাদেশীদের খুব প্রিয় জায়গা। সবরকম হালাল খাবার সেখানে পাবেন তবে আমার জানামতে লোকাল কারও সাহায্যে সেখানে যেতে চাইলে সবাই আমতা আমতা করবে। কেউ চিনে না। পুরা থামেল এরিয়াতে মুসলিম এরিয়া ওইটুকুই। তবে ওই হোটেলের খুব সামনেই কাঠমান্ডুর সব থেকে ভালো এবং মাঝারি মানের হোটেল "De Hotel Veda Pvt. Ltd" অবস্থিত। এই হোটেলে থাকলে বোনাস হিসেবে মদিনা হোটেলের হালাল খাবার খেতে পারবেন প্রত্যেক বেলা। যাইহোক প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি বর্ণনার। আর বিশেষ কিছু বলার নাই। মনে পড়লে পরবর্তিতে নিচে এডিট করে সংযুক্ত করে দেয়ার চেষ্টা করবো। আর তাছাড়া লিখার কোনো শেষ নাই... চাইলে অনেক কিছুই আরও লিখা যেত কিন্তু আমার মনে হয় এই যথেষ্ট। যদি আরও কিছু জানার থাকে তবে ইনবক্স আপনার জন্য ২৪/৭ খোলা থাকলো। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করবো আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার।

ধন্যবাদ
তাহসিন শেরপা, ঢাকা। :-পি

Tour Itinerary:
Plan A: Kathmandu > Nagarkot > Dhulikhel(Optional) + Bhaktapur > Kathmandu > Pokhara + Sarangkot > Kathmandu
Plan B: Kathmandu > Pokhara + Sarangkot > Kathmandu > Nagarkot > Dhulikhel(Optional) + Bhaktapur > Kathmandu
You can add Chitwan if you wants.

হোটেল ইনফো
Kathmandu hotels:
1) De Hotel Veda Pvt. Ltd (2*)
2) Hotel Kamal (2*)
3) Hotel Moon Light (3*)
4) Hotel Yambu (3*)
5) The Malla Hotel (5*)
De Hotel Veda Pvt. Ltd

Pokhara Hotels:
1) Raraa Hotel (Budget hotel nd the best)
2) Hotel Peace Pokhara (2*)
3) Hotel Confidential (2*)
4) Hotel Lake Star (3*)
5) Lake View Resort (3*)
6) Fulbari Resort (5*)

Nagarkot Hotels:
1) Hotel New Dragon (Budget hotel)
2) Hotel Hill View (3*)
Hotel Hill View, NagarkotHotel Hill View, Nagarkot

Bhaktapur Hotels:
Any Hotel Near Patan Darbar Square is good.

Pokhara Taxi Driver:
Prokash +977 9846124437
Kathmandu Travel Guide (Seven Peaks Tours & Travels):
Sunil +977 9845113135
"Kathmandu to Pokhara to Kathmandu" Tourist Bus helping person:
Rabin +977 9841029241

আমার এই ভ্রমণে যাদের থেকে তথ্য পেয়ে উপকৃত হয়েছি তাদের ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করছি।
ধন্যবাদ রাজিন মামা, ধন্যবাদ ফয়সাল ভাই, এ এইচ সুজন ভাই, ধন্যবাদ সুমি ফুপি এবংআরও ধন্যবাদ কাশেফ রহমান ভাই।

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

মরুদ্যান এর ছবি

চিল করা আর বিন্দাস শব্দ দুইটার মানে কি?

খুবই তথ্যবহ পোস্ট সন্দেহ নাই, অনেকের কাজে আসবে। চলুক

কিন্তু আমার কাছে মনে হল নেপাল যাওয়ার নিয়ম কানুন শিখলাম, ভেবেছিলাম ছবি সহ সুন্দর একটা ভ্রমণ কাহিনী হবে। শিরোনাম, ট্যাগ, ভিতরের বর্ণনা কারও সাথে কারও মিল নাই।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

"চিল আউট" মানে হলো রিল্যাক্স করা, দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ানো বা সিম্পলি এনজয় করা।

দীনহিন এর ছবি

একমত। আমিও একটা ভ্রমনকাহিনি আশা করছিলা। তবে আমার মত যারা এখনো যাননি, তাদের জন্য মহা-দরকারী পোস্ট তো বটেই!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রায় আড়াই বছর পর সচলায়তনে লিখালাম। শুরুতে লিখলে হয়তো আরও কিছুটা চিন্তা-ভাবনা করে লিখা হতো কিন্তু সত্যি এই যে লিখাটি আমার খোমাখাতা নোটস থেকে তুলে দেয়া হয়েছে কিছুটা পরিবর্তন সাপেক্ষে। সামনে সুন্দর একটা ভ্রমণ কাহিনী লিখার চেষ্টা করবো নিঃসন্দেহে

তাহসিন গালিব

সত্যপীর এর ছবি

দরকারি পোস্ট হে তাহসিন শেরপা চলুক

আমাদের বেলায় তা ছিল একটা ফ্রুট কেক, একটা চিকেন বার্গার, ছোট এক কাপ সেমাই আর ২৫০ মিলি পেপসি।

এক ঘন্টার ফ্লাইটে এত কিছু দেয়? দারুণ তো। নর্থ আমেরিকায় ফ্লাইট রমনা পার্কের মত, খালি চা কফি বুট বাদাম ছাড়া কিছু পাইবেননা।

ভুলেও লোকাল খাবারের আইটেম "থালি" খাবেন না।

আরে নাহ কি কন। লোকাল দোকানের থালির মত অসাধারন খাবার দুনিয়ায় বেশি নাই।

পোখারা সারাংকোট নাগরকোট মারাত্মক জায়গা। ত্রিসুলি নদীতে র‍্যাফটিং এ গেছিলেন? ঐটাও জটিল জিনিস।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মত যাদের ভেজিটেবল খাবার মনমত না হলে গলা দিয়ে নামে না কথাটা তাদের জন্য। এখানে উল্লেখ করে দেয়া দরকার ছিল। এডিট অপশন নাই তাই এখানে জানালাম।

হ্যাঁ আমি সহমত। অনেকেই থালি খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে।

- তাহসিন গালিব

tahsin_tahsan@yahoo.com

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বর্ণনা বেশ লাগলো। অনেকেরই কাজে লাগবে। শিরোনামে "কথোপকথন" পড়ে ধারণা করছি আরো পর্ব আসবে যেখানে নেপাল ভ্রমণের বর্ণনা ও ছবি থাকবে।

সজীব ওসমান এর ছবি

খুব ভাল।

কিন্তু শিরোনাম অনুযায়ী লেখাটা তো ঠিক 'কথোপকথন' না। শুধু কথন।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

যারা সড়কপথে নেপাল যেতে চান, তাদের জন্য কিঞ্চিত সংযোজন- যেহেতু ভারতীয় ট্রানজিট ভিসা নিতে হবে, তাই সে ভিসার পোর্ট অব এন্ট্রি হবে চ্যাংড়াবান্ধা আর পোর্ট অব ডিপারচার হবে কাঁকরভিটা। ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি এখন সরাসরি বাস চলে, সে বাসে লালমনিরহাটের বুড়িমারি চেকপোস্ট দিয়ে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা হয়ে শিলিগুড়ি যেতে পারেন। শিলিগুড়ি থেকে কাঁকরভিটার বাস পাওয়া যায়, সময় লাগে দুই-আড়াই ঘণ্টা। কাঁকরভিটা হয়ে নেপালে ঢুকলে(নেপালী চেকপোস্টের নাম খুব সম্ভবত রানিগঞ্জ) কাঠমান্ডু যাওয়ার অনেক বাস পাওয়া যায়। সময় লাগে ১৪-১৮ ঘন্টা। সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ বেশ এ্যাডভেঞ্চারাস এবং কষ্টসহিষ্ণু না হলে সড়কযাত্রা পরিহার করাই শ্রেয়, পুতুপুতু টাইপের মানুষদের জন্য এটা যাত্রার শুরুতেই দুঃস্বপ্ন বয়ে আনতে পারে। চ্যাংরাবান্ধা এবং কাঁকরভিটায় বিএসএফ জওয়ানদের বেয়াদবি অসহ্য লাগতে পারে, রানিগঞ্জে যেয়ে দেখতে পারেন কাঠমান্ডু যাওয়ার বাস বাড়ন্ত, একই রকম বাসের একেকটায় একেক রকম ভাড়া, ইত্যাদি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

काठमाडौं [kɑʈʰmɑɳɖu] = কাঠমান্ডু, কাঠমুন্ডু নয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

হা... লেখার শুরুতে কিছু জায়গায় 'কাঠমান্ডু' বানানে ভুল আছে কিন্তু সবখানে না

এক লহমা এর ছবি

যারা নেপাল যান নাই তাদের কাজে লাগবে আশা করি।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অর্বাচীন এর ছবি

থালিইতো ভালো। চমৎকার খাবার। সাশ্রয়ী মূল্যে এরচেয়ে ভালো খাবার নেপালে আছে কিনা জানা নেই।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

নেপালে খাওয়া দাওয়ার বিষয়টা কেমন যেন আগোছালো। এটা সেটা খেয়ে পেট ভরছিল না, পরে 'থালি' খেয়ে মজা পেয়ে গিয়েছিলাম।

নেপালে কঠিন রকম দরদাম করতে হয়, পুরো দেশটাই গুলিস্তানের ফুটপাথের মত, ঠিকমত দরদাম না করলে ঠকতে হয়

পোখরা শহরটা কেন সাদা চামড়ার লোকদের পছন্দ সেটার একটা নিজস্ব ব্যাখ্যা আছে আমার। আমার কাছে মনে হয়েছে পোখরা শহরটা ৮০ দশকেই আটকে আছে। দোকানে বাজানো গান‌গুলো থেকে শুরু করে সব কিছুর মাঝেই হিপি /বিট -এর একটা ছাপ আছে বলে মনে হয়। আপনি যাদের 'ঠান্ডা' (চিল) করতে দেখছিলেন তাদের একটা বড় অংশই ঐ আমেজটা খুঁজে বেড়ায়‌, আর সাদা চামড়ার মাঝে একটু বয়স্ক লোকজনও বেশ আসে। 'পোখরা' হয়ত যৌবনের ফেলে আসা দিন‌গুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়, কাছাকাছি নিয়ে যায়।

শুভেচ্ছা হাসি

ধ্রুব আলম এর ছবি

লেখার শিরোনামের সঙ্গে মূল বিষয়ের মিল না থাকলেও, লেখাটি উপকারী। নেপালে যাইনি, যাবার ইচ্ছা আছে। যখনি প্ল্যান করবো, এটা পড়ে নিবো। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

উপকারী লেখা। তবে ভ্রমণ কাহিনি ভেবে ঢুকেছিলাম, তাই মজা মিস!! নেপাল যাওয়ার সুযোগ পেলে আবার এসে পড়ে যাবো আপনার লেখাটা। চোখ টিপি

____________________________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।