• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function 'theme_imagefield_image' not found or invalid function name in theme() (line 669 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/theme.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function 'theme_imagefield_image' not found or invalid function name in theme() (line 669 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/theme.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function 'theme_imagefield_image' not found or invalid function name in theme() (line 669 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/theme.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function 'theme_imagefield_image' not found or invalid function name in theme() (line 669 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/theme.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function 'theme_imagefield_image' not found or invalid function name in theme() (line 669 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/theme.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function 'theme_imagefield_image' not found or invalid function name in theme() (line 669 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/theme.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

দ্য ডাচ্‌ ক্যপিটল

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১০/০৯/২০১৪ - ৬:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উত্তর সাগর থেকে ভেসে আসা নোনা বাতাস শ্যাওলা ধরা জাহাজের কাঠের পাটাতনে মিশে এক ধরনের স্যাতসেতে ঘ্রান তৈরী করে। কাঠের জাহাজ কালের কাছে বিলীন হয়েছে। কিন্তু সমুদ্রচারী নীর্ভিক এক নাবিক জাতির জীবনসংগ্রামের এই ঘ্রান এখনও পাওয়া যায় সেই অঞ্চলে। এই ঘ্রান তারা জাহাজে করে বয়ে নিয়ে গিয়েছে আটলান্টিকের পশ্চিম প্রান্ত ধরে সোজা দক্ষিন দিকে। কাঠের জাহাজে ভেসে আরো পূব দিকের ভারত মহাসাগর ও এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলো পর্যন্ত তারা বিস্তার করেছে নিজের সংগ্রাম কাহিনী। সেই জাতিটির নাম ওলন্দাজ বা ডাচ্‌।

নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড নামে পরিচিত সাগর পাড়ের ছোট্ট দেশের রাজধানী আমস্টারডামের শত বছরের গল্প আসলে শুধুমাত্র সেই দেশটির মানুষের গল্প না। এটি এমন একটি শহর যেখানে এখনও কান পাতলে শোনা যায় সুরিনামের দাস ব্যবসায়ী, ভারতীয় মসলার সওদাগর ও জাভা দ্বীপ জয় করা নাবিকের অবিশ্বাস্য সব গল্প-কাহিনী।

সেই বহু শতাব্দী প্রাচীন আমস্টারডাম শহরটি কালের পরিবর্তনে আজ ভবঘুরে শিল্পীদের শহর, পাপীদের শহর আর পৃথিবীর সব মুক্ত মানুষের শহর। এই মানুষগুলোর গল্প এই শহরের জালের মত ছড়িয়ে থাকা ক্যানেলগুলোর পানির প্রতিচ্ছবিতে দেখা যায়। আট লাখ মানুষের শহরের প্রায় সমানসংখ্যক সাইকেলের শব্দে পাওয়া যায়। এই সুপ্রাচীন বিস্ময় উপভোগ করা যায় পথের পাশের কোন গ্যালারিতে সগৌরবে ঝুলে থাকা রেমব্রান্ডটের ছবিতে।

জার্মানির কোন শহর থেকে পশ্চিমের সীমানা পেড়িয়ে নেদারল্যান্ডস এর সীমানায় প্রবেশ করলেই দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে দ্রুত। সমতল জমি, ঘাস, মাঝে কিছু গবাদী পশুর আনাগোনা, উইন্ডমিল আর মানুষ। বোঝা যায়, এই ভূমির আবাদে মানবসন্তানদের যত্নের হাত পড়ছে অনেকদিন ধরে। বঙ্গ-উপসাগরীয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের কোন মানুষ যদি সেই দৃশ্য দেখে নিজের স্বদেশভূমির কথা মনে করতে থাকে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই! একই সমতল ভূমি, একই রকম মানুষ আর দিগন্ত – শুধু সময়ের প্রভাবে পৃথিবীর এই পাশটি একটু বেশি চকচকে হয়েছে, এটাই পার্থক্য!

স্থ্যাপত্যের মধ্যেও এক ধরনের সম্মান থাকে, সেই সম্মান বহুগুনে বেড়ে যায় যদি এর সাথে লেখা থাকে হাজার হাজার গল্প। কেউ যদি ট্রেনে করে আমস্টারডাম শহরে এসে নামে, সবার প্রথমে যেই প্রাসাদের মত ভবনটি দেখে বিস্ময়ে আভিভূত হবে, সেটি হচ্ছে আমস্টারডাম সেন্ট্রাল স্টেশন। দেখে বোঝার উপায় নেই এই শতাব্দী-প্রাচীন রাজপ্রাসাদের মতো স্থাপত্যের ভেতর থেকে ছুটে যাচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী আর আধুনিক ট্রেনগুলো। সেন্ট্রাল রেল স্টেশনের সামনে ঘন্টাখানেক কেউ দাড়ালে পৃথিবীর প্রায় সবগুলো দেশের মানুষের দেখা পেয়ে যাবে! সামনের সেই বিশাল চত্ত্বরটি যেন কালের গতিতে মানুষের পোশাক পালটে দিচ্ছে শুধু... একই স্থান থেকে শহরের দিকে প্রতি মিনিটে ছুটে যাচ্ছে ট্রাম, বাস আর ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা। আবার এই স্টেশনের পেছন দিকটাতেই আমস্টারডাম হারবার, যেখানে হাজার হাজার গাঙচিলেরা উড়ছে মানুষের চেয়ে স্বাধীনভাবে।
যোগাযোগের বন্দর বা স্টেশনগুলোর গতানুগতিক ব্যস্ততার মধ্যেও অদ্ভুত ধরনের এমন শিল্প-সৌন্দর্য আমস্টারডাম ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা জানা নেই!

সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে আমস্টারডাম শহরের দিকে কোন আগন্তুক যদি ট্রামে করে প্রবেশ করতে থাকে, সে হয়তো কিছু সময়ের জন্য ভুলে যেতে পারে একবিংশ শতাব্দীর নাগরিকত্বের পরিচয়ের কথা! দুইপাশের স্বতন্ত্র ঢঙয়ের শতাব্দী ধরে সংরক্ষিত প্রতিটি বাড়ির দেয়ালে সে কি বিস্ময়! কিছুদূর যেতে না যেতেই ট্রামগুলো পাড়ি দিতে থাকে এক-একটি ক্যানাল ব্রিজ! রাস্তায় মুক্তভাবে হেটে চলা স্বাধীন মানুষগুলোর কাছ থেকে পথ চেয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে চলা ট্রামগুলো দেখলে মনে হয় – এখনও পৃথিবীতে এমন আধুনিক শহর আছে, যেখানে এখনও সময় মানুষের জন্য অপেক্ষা করে!
আমস্টারডামের গৌরব লন্ডন, প্যারিস আর বার্লিনের চেয়ে আলাদা সম্ভবত তার সময়জ্ঞানহীনতার কারনে। এখানে মানুষের জীবন ছন্দোবদ্ধ নয়। কিছুটা এলোমেলো আর খাপছাড়া। সবুজ-লালবাতিগুলো নিজেরাই জ্বলছে আর নিভছে, মুক্ত মানুষের তাদের দিকে তাকাবার সময় কই? এই শহরে সাইকেল চলে নিজের খেয়াল-খুশীমত রাস্তায়, প্রতিবেশী জার্মানদের মত এত নিয়মের বালাই নেই তাদের! মোটরগাড়ীগুলো একেবারেই বেমানান –নিতান্তই মাথা নিচু করে চলা যন্ত্রযান! তবে কিছুটা স্বাধীন ওই জলের যানগুলো।

আমস্টারডাম এর কথা বলতে গেলেই তাকে ছিন্ন-ভিন্ন করা খাল বা ‘গ্রাখট্‌’ এর কথা বলতে হয়। এই শহরের মূল নদী আমস্টেল এর শাখা-প্রশাখা হচ্ছে সারিবদ্ধ এই খালগুলো। এই সরু খাল বা ক্যানালগুলোই আমস্টারডামকে নগর হিসেবে দিয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা স্ব্যাতন্ত্র! নগরজুড়ে বয়ে চলা প্রতিটি খালের সমান্তরালে সবুজ গাছের সারিবদ্ধ সমারোহ আর সাথে রাস্তা!প্রতিটি ক্যানেলের উপর আবার কিছু দূর পর পরই ইট বাধানো শতাব্দী প্রাচীন ব্রিজ! কত দেশের, কত রঙের প্রেমিক-প্রেমিকারা এই ব্রিজের পাড়ে নিজেদের ভালবাসার তালা ঝুলিয়েছে তা গুনে শেষ করা যাবে না! ভালোবাসা খালের জলের সাথে একাকার হয়ে ভেসে একসময় মহাসমুদ্রে বিলীন হয়ছে, কিন্তু সেই অনূভুতি রাখা প্রতিটি ব্রিজের ওপরে... সব ধরনের রোমান্টিসিজম যেন আশ্রয় নিয়েছে এই একটি জায়গায়!

আমস্টারডামের নগর ঐতিহ্যকে কাছ থেকে অনুভক করতে হলে পর্যটকদের যেতে হবে ডাম স্কয়ার বা নগর-কেন্দ্রে। এর পশ্চিম পাশেই রয়েছে ডাচ্‌ রাজপ্রাসাদ বা রয়েল প্যালেস। ডাচ রাজপরিবার যে কখনোই সাধারণ মানুষের ধরা-ছোয়ার বাইরে বাস করতেন না, তা এই রাজপ্রাসাদের অবস্থান থেকেই অনুমান করা যায়। সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত এই ভবনটি তৎকালীন সময়ে পৃথিবীর অন্যতম বিস্ময়কর ভবন বলে বিবেচিত হতো। এই ভবনটির অভ্যন্তরভাগের অন্দরসজ্জা এখন বিশেষ রাজকীয় অনুষ্ঠানের দিন ছাড়া জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত। রাজপ্রাসাদের সামনেই বিশাল খোলা চত্তরটি ট্রাডিশনাল ইউরোপীয় নগর-কেন্দ্রের একটা উৎকৃষ্ট উদাহরন বলা যেতে পারে। এই চত্তরে কেউ জটলা করে মজার খেলা দেখাচ্ছে, কেউ আপন মনে গান করছে, পর্যটকদের আকর্ষন করার জন্য কেউবা পসরা সাজিয়ে বসেছে আবার কোন এক কোনে প্রেমিক-যুগল আপনমনে ভালোবেসে যাচ্ছে। এ যেন সত্যিকারের স্বাধীন এক নগর-কেন্দ্র!
ডাম স্কয়ারের চারপাশজুড়ে রয়েছে আরো আকর্ষনীয় সব স্থাপনা। তারমধ্যে ন্যাশনাল মনুমেন্ট, আমস্টারডাম হিস্টোরি মিউজিয়াম, নতুন-গীর্জা ও মাদাম-তুসো বিখ্যাত। এছাড়া নগর কেন্দ্র থেকে অল্প দুরত্বেই আমস্টারডাম নিউ-মার্কেট, সেন্ট্রাল রেল-স্টেশন ও বিশ্ববিখ্যাত রেড-লাইট ডিসট্রিক্ট অবস্থিত।

বিশ্বের নামকরা কয়েকটি মিউজিয়ামের অবস্থান এই আমস্টারডামে। তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত রাইক্‌স মিউজিয়াম আর ভ্যান গঘ মিউজিয়াম! এছাড়াও মেরিটাইম মিউজিয়াম, আমস্টারডাম হিস্টোরি মিউজিয়াম আর স্টেডলিক মিউজিয়াম পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয়।
তবে শিল্প কি শুধুমাত্র কোন দর্শনীয় বা উপভোগ্য বস্তু? নাকি বেচে থাকার জন্য শিল্প অপরিহার্য? এর উত্তর পাওয়া যাবে রাইক্‌স মিউজিয়ামের প্রতিটি গ্যালারিতে। শুধু পৃথিবীর নানা-প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা দূর্লভ শিল্প সামগ্রীই নয়, লক্ষ মানুষের বেচে থাকার যুদ্ধের গল্প মেশানো এক-একটি নিদর্শন, ভাস্কর্য বা পেইন্টিংস! সবচেয়ে উপভোগ্য গ্যালারির দেয়ালের কোনায় ছোট ছোট লেখাগুলো, যা শুধু দৃষ্টি দিয়ে দেখতে শেখায় না, মানুষের হাজার বছরের সংগ্রামকে অন্তরাত্মা নিয়ে ধরতে শেখায়! এই মিউজিয়ামের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বস্তু রেমব্রান্ডটের ‘নাইট ওয়াচ’ পেইন্টিংসটি। বিশাল গ্যালারিতে রাখা দুর্মূল্য বিরাট এই পেইন্টিংস্টি নেদারল্যান্ডস এর জাতীয় গৌরব ও নিদর্শন! সবচেয়ে অবাক হতে হয়, এই পেইন্টিংসকে ঘিরে নেওয়া নিরাপত্তা বলয়ের কান্ড-কারখানা শুনে! রাইকস মিউজিয়ামে এছাড়াও রাখা আছে ডাচ ও ইউরোপিয়ান শত শত শিল্পীদের তৈরী অমূল্য সব শিল্পকর্ম! এছাড়া সিংহল, ইন্দোনেশিয়া ও প্রশান্ত-মহাসাগরীয় দ্বীপগুলো থেকে সংগ্রহ করা নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন, যুদ্ধাস্ত্র ও শিল্পকর্মের এক অসাধারণ সংগ্রহ! একজন জীবনচারি মানুষ সারাদিন রাইকস মিউজিয়াম এক গ্যালারী থেকে অন্য গ্যালারীতে ঘুরে বেরিয়ে এসে হয়ত মনে হতে পারে- জীবন কি অদ্ভুত, নিষ্টুর এক শিল্প!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসী অবরুদ্ধ আমস্টারডাম নগরীর একটি বাড়ির গোপন আস্তানায় যে কিশোরী মেয়েটির লেখা আবেগরুদ্ধ ডায়েরী সারা পৃথিবীর মানুষকে কাঁদিয়েছিল, সেই আনা ফ্রাঙ্কের বাড়ীটি আমস্টারডামের অন্যতম আকর্ষন। ক্যানালের ধারে সাধারণ একটি বাড়ির পেছন দিকে গোপনে আশ্রয় নিয়েছিল দুটি ইহুদী পরিবার। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগে সেই দুটো পরিবার নাৎসী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। পরিবারের একমাত্র বেচে যাওয়া সদস্য অটো ফ্রাঙ্ক উদ্ধার করে তার কিশোরী কন্যার ডায়েরী। পরে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথেই সারা দুনিয়ায় শুরু হয় হুলুস্থুল কান্ড! আমস্টারডামের এই বাড়িটি রাতারাতি হয়ে ওঠে জীবন্ত ইতিহাস। এই বাড়ীটি এখনও ঠিক একইভাবে সংরক্ষন করা হয়েছে কোন রকম মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া। সরু সিড়ি বেয়ে উঠে প্রাক্তন অফিস ঘরের বুক শেলফটি দেখে বোঝার উপায় নেই, এর পেছনেই লুকোনো অন্ধকার ঘরগুলোতে পোকা-মাকড়ের মতো বাস করা করছিল কিছু অপরাধী মানুষ – যাদের একমাত্র অপরাধ ছিল ধর্মপরিচয়! ঘরগুলোর সব জানলা ছিল কালো পর্দায় মোড়া, যাতে বাইরের কেউ তাদের অবস্থান টের না পায়। আনা ফ্রাঙ্কের একমাত্র আকাশ ছিল চিলেকোঠার ঘরটার ছোট জানালাতে। এখনও ঠিক একই অনূভুতি পাওয়া যায় আনা ফ্রাঙ্কের বাড়ীর প্রতিটি কোনায়। প্রতিটি অন্ধকারচ্ছন ঘর মানুষকে সেই লজ্জার ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়।
পৃথিবীর জাতিগুলোর ভাষা ও সংস্কৃতির প্রান-প্রাচুর্যের ভান্ডার কতটা শক্তিশালী সেটি ধারনা পাওয়া যায় সে দেশের শিল্পীদের শিল্পকর্মের সৃষ্টিশীলতার বিচারের মাধ্যমে। এইক্ষেত্রে ডাচ্‌বাসী আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে ভ্যান-গঘের প্রতি। রহস্যময় ও বিখ্যাত এই চিত্রকরের শিল্পকর্মের যাদুঘর আমস্টারডাম শহরের অন্যতম শোভা! আধুনিক আর্কিটেকচারে তৈরী এই মিউজিয়ামে সংগৃহীত আছে ভ্যান গঘের প্রায় সবগুলো শ্রেষ্ট চিত্রকর্ম। সারা বিশ্ব থেকে শুধুমাত্র এই মিউজিয়াম দেখতে আমস্টারডাম আসেন, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম না।
জীবদ্দশায় ভ্যান-গঘ কখনোই যোগ্য মর্যাদা পাননি। সারা জীবনে ভ্যান-গঘের একটি মাত্র পেইন্টিংস বিক্রী হয়েছিল। তীব্র অপমান, তাচ্ছিল্য আর অর্থকষ্টের আঘাতে জর্জরিত ছিল তার জীবন। মাত্র ৩৭ বছরের জীবনে রঙ-তুলি দিয়ে উপহার দিয়ে গিয়েছেন মানব সভ্যতার অমূল্য কিছু সম্পদ, যা মানুষ বুঝতে পারেছিল আরো অনেক পরে। অভিমানী শিল্পী পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন আত্মহনেনের মধ্য দিয়ে।

তবে অতৃপ্ত শিল্পসত্ত্বা কোনদিন মৃত্যুবরন করে না, শিল্পীদের নাকি অনেকবার পুনঃজন্ম হয়। তাই ভাবতে ইচ্ছা হয়- ভ্যান গঘ তার মৃত্যুর কিছুকাল পরেই হয়তো আবার জন্মেছিলেন জীবনানন্দ দাশ হয়ে, আমাদের বাংলাদেশে। জীবনানন্দের কবিতা আর ভ্যান গঘের ছবিগুলোর মধ্যে কোথায় জানি মিল হয়ে যায়। প্রান-প্রাচুর্য আর বিষন্নতা যেন একাকার হয়ে যায় প্রতিটা স্ট্রোকে আর ছন্দে। আলমন্ড ব্লোসম, স্টারি নাইট বা সানফ্লাওয়ার মস্তিষ্কে সেই জীবনানন্দের কবিতার মতো একই রকম ছাপ ফেলে যায়।

আমস্টারডামের ভ্যানগঘ মিউজিয়ামের সামনে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ভীড় কখনো শেষ হয় না। সবুজ ভন্ডেলপার্কের কোলাহল কখনই থামেনা। শহরজুড়ে ফুটপাতগুলোতে চলতে থাকে সংগীতজীবি ভবঘুরে আর শিল্পীদের আনাগোনা। গান গায় অদ্ভুত জানা-অজানা বাজনা নিয়ে, কেউবা একমনে ছবি আঁকতে থাকে। বিস্ময়াভিভূত পর্যটকের পয়সা জমা হয় সামনে রাখা হ্যাটে।
অন্যদিকে পাপনগরীর ক্যানেলগুলোর পাড়ে সন্ধ্যা নামতেই কাচের ঘরের লাল আলোর ভেতর থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে মর্ত্যের হুর পরীরা। মাংস দোকানের ক্রেতারা হাটতে থাকেন কাচ ঘরের সামনে... অনেক পর্যটক নিতান্ত উৎসাহের বশে কেউবা চোখের চাহিদা মেটাতে দেখতে আসেন এই লাল জগৎ। পাথর বাধানো এইসব সরু রাস্তার পাশে মায়াবী জগতে চলতে থাকে পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশার উৎসব। এই উৎসব শুধুমাত্র আজকের দিনের নয়। বহু শতাব্দীরও আগে কোন শ্রান্ত নাবিক নীল জলে ক্লান্ত হয়ে ফিরেছিল এমন উৎসবের রাতে, ঠিক এইখানে। সে হয়তো কারো শরীরের খোঁজেনি, প্রচন্ড ক্লান্ত মানুষের মতো শান্তির আশ্রয় চেয়েছিল। সভ্যতার কাছে সে কোন অপরাধের চিহ্ন রেখে যায়নি। সে শুধুমাত্র অপরাধী হয়েছিল অর্থের বিনিময়ে আশ্রয় দেওয়া কোন যুবতীর মায়াবতী মুখের কাছে, যার প্রাণ ছিলো না কখনোই।
এখানে রাতের পৃথিবী থমকে থাকে অপরাধীর মতোন।
আমস্টারডাম হারবারের গাঙচিলগুলো অপেক্ষা করতে থাকে আরেকটি ভোরের জন্য।

--
সাফওয়াত আবেদীন
মাগদিবূর্গ, জার্মানী


মন্তব্য

সত্যপীর এর ছবি

লেখার স্টাইল ভালো লেগেছে।

দ্বিতীয় প্যারা পড়ে মনে করেছিলাম ভিওসি ঔস্ট ইন্ডিশ হাউস (উচ্চারন ঠিক আছে?) নিয়ে কিছু দিবেন। যাক, পরে দিয়েন একসময়।

..................................................................
#Banshibir.

সাফওয়াত আবেদীন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

ইচ্ছা ছিল, কিন্তু এটা নিয়ে লিখতে গেলে আলাদা একটা লেখা লাগবে।
আপনিই লিখে ফেলুন না, এই ধরনের ইতিহাসনির্ভর লেখায় তো আপনিই গুরু!!

সত্যপীর এর ছবি

আমি তো ইস্ট ইন্ডিয়া হাউস দেখিনাই ভাই। তাছাড়া আমার ক্যামেরা নাই তাই কোনদিন ভিজিট করলেও ভ্রমণ পোস্ট দেওয়া হবেনা। আপনিই দেন (Y)

..................................................................
#Banshibir.

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চমৎকার লেখা =DX

[ এই অনুভূতির জামানায় যে নাম রেখেছেন! কারও "বামানুভূতিতে" গুঁতা লাগলে সব্বোনাশ! ]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাফওয়াত আবেদীন এর ছবি

ভালো কইছেন তো! এইডা তো আগে খিয়াল করিনাই! কেম্নে কি!!

অনুপ্রেরনার জন্য ধন্যবাদ :)

মেঘলা মানুষ এর ছবি

ছবিগুলো ভালো লেগেছে। আমস্টারডাম শহরটার একটা মিনি ট্যুর হয়ে গেল আপনার সৈজন্যে।

ভালো থাকুন, শুভেচ্ছা :)

সাফওয়াত আবেদীন এর ছবি

আমার ভালো কোন ক্যামেরা নেই আপাতত, ছবিগুলো সব মুঠোফোনে তোলা। তবুও প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ!
আপনার লেখা আর ছবিগুলোও আমার বেশ লাগে।

অনেক ধন্যবাদ!

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

কি চমৎকার লেখেন আপনি!!!!

অসাধারন কিছু মুহুর্ত জীবন্ত হয়ে উঠল চোখের সামনে, ছুঁয়ে গেল মনের কোন গহীন কোণ।

নিয়মিত আপনার লেখা দেখতে চাই, দাবি থাকল। ভালো থাকবেন।

সাফওয়াত আবেদীন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ! :)

নিয়মিত লেখার চেষ্টা থাকবে অবশ্যই!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

সাফওয়াত আবেদীন লিখেছেন:
জার্মানির কোন শহর থেকে পশ্চিমের সীমানা পেড়িয়ে নেদারল্যান্ডস এর সীমানায় প্রবেশ করলেই দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে দ্রুত। সমতল জমি, ঘাস, মাঝে কিছু গবাদী পশুর আনাগোনা, উইন্ডমিল আর মানুষ। বোঝা যায়, এই ভূমির আবাদে মানবসন্তানদের যত্নের হাত পড়ছে অনেকদিন ধরে। বঙ্গ-উপসাগরীয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের কোন মানুষ যদি সেই দৃশ্য দেখে নিজের স্বদেশভূমির কথা মনে করতে থাকে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই! একই সমতল ভূমি, একই রকম মানুষ আর দিগন্ত – শুধু সময়ের প্রভাবে পৃথিবীর এই পাশটি একটু বেশি চকচকে হয়েছে, এটাই পার্থক্য!

একেবারে যথার্থই বলেছেন। এমেরিশ হয়ে জার্মানির সুবিস্তীর্ণ এলাকা ছাড়িয়ে নেদারল্যান্ডসের বর্ডারের দিকে ছুটলে সবুজ ঘাসের মাঠ আর ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট গরুর আনাগোণাই চোখে পড়ে। কোনো বাড়িঘর নাই। শতভাগ বাঙালি মাথায় তখন একটাই প্রশ্ন জাগে, 'এই গরুগুলার মালিক ক্যাডায়! ঐ হুমুন্দির পুতে থাকে কই'!

নেদারল্যান্ডসের সীমানা যেখানেই শুরু সেখান থেকেই হাইওয়ের উপরে টাঙানো বাতি দেখে মনে হয়, হালায় জার্মানি হইলো একটা ফতুরা দেশ। ডাচরা কতো উন্নত, হাইওয়েতেও বাত্তি টাঙ্গায়া রাখছে!

তবে, নৈসর্গিক দৃশ্যের দিক থেকে জার্মানি-সুইস হাইওয়ে হলো চরম! চরম মানে, পুরাই চরম। মনেহয় চোখের সামনে একটা ক্যালেন্ডারের ছবি আস্তে আস্তে বড় হতে হতে একসময় সেই ছবির মধ্যেই নিজের ঢুকে যাওয়া! বাঙালি মাথায় তখন একটা খেয়ালই আসে, 'গাড়িডা থামান ভাই, নাইমা রাস্তার পাশে একটু গড়াগড়ি দিয়া লই'!

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

গাড়িডা থামান ভাই, নাইমা রাস্তার পাশে একটু গড়াগড়ি দিয়া লই

অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল

সাফওয়াত আবেদীন এর ছবি

একমত, তবে জার্মানির চেয়ে নেদারল্যান্ডস এর জনঘনত্ব বেশি মনে হলো, হাইওয়েগুলোও বেশ ব্যস্ত!

জার্মান-সুইস হাইওয়ের দিকে যাওয়া হয়নি, আপনার লেখা পড়ে ইচ্ছে বেড়ে গেল।
অনেকদিন রাস্তার পাশে নেমে গড়াগড়ি দেই না! :)

এক লহমা এর ছবি

(Y) লেখায়-ছবিতে পুরাই কাব্যিক! :)

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাফওয়াত আবেদীন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ! :)

মরুদ্যান এর ছবি

(Y) (Y)

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

সাফওয়াত আবেদীন এর ছবি

(ধইন্যা)

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা ভালো লেগেছে।

স্মৃতির পাতায় বেদনার অশ্রু

তাহসিন রেজা এর ছবি

লেখা এবং ছবি ভালো লাগল। :)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

সাফওয়াত আবেদীন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ!

তারেক অণু এর ছবি

খুব প্রিয় শহর আমার, তবে গাঁজার গন্ধটা বাদ দিয়ে।

কয়েকটা নামের উচ্চারণ ঠিক করে নিয়েন। লেখা চলুক-

সাফওয়াত আবেদীন এর ছবি

বাংলার পরিব্রাজক তারেকানু'র কমেন্ট দেখে বেশ আনন্দ পেলাম! :)
আমি কিছু উচ্চারন নিয়ে সন্দিহান! যেমন, ভ্যাগ-গঘ নাকি ফন-গখ? জানালে কৃতার্থ হব।

গাজার গন্ধ বেশ লাগে কিন্তু! ;)

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি তো অসাধারণ লেখেন (Y) । ছবির কমতি লেখায় পূরণ হয়ে গেছে :)

ফাহিমা দিলশাদ

সাফওয়াত আবেদীন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন! :)

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাফওয়াত আবেদীন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া :)

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

চমৎকার লেখা - মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ছবিগুলোও লেখার সাথে খুব সুন্দর সাযূজ্য রেখেছে।

"সুরিনামের দাস ব্যবসায়ী, ভারতীয় মসলার সওদাগর ও জাভা দ্বীপ জয় করা নাবিকের অবিশ্বাস্য সব গল্প-কাহিনী" - একটা দুইটা কাহিনি যদি শোনাতেন!!

লেখা পড়ে মনে হলো শহরটা পুরাই ঢিমে তেতালায় চলা একটা শহর। কারো কোন তাড়া নেই, কোথাও যাবার কোন হুড়ো নেই!! আসলেই কি তাই?

____________________________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।