বন্ধুদের সাথে ডাকটিকেট অদল বদলের কোন এক সময় নাম না জানা অজানা এক দেশের ঝলমলে এক ডাকটিকেট এসে পড়ে দশ বছরের এক কিশোরের হাতে। ডাকটিকেটের নিচে ক্ষুদে সোনালি হরফে লেখা “MAGYAR POSTA”। এ নামে কোন দেশের কথা তো সেই কিশোরের জানা নেই! আশির দশকের শেষ ভাগের সে সময়টাতে বাইরের পৃথিবীকে জানার একমাত্র অবলম্বন রাত আটটার সংবাদ, নতুবা বাড়িতে রাখা ইত্তেফাকের বহির্বিশ্ব পাতা। কিন্তু এই দেশটির নাম যে তাকে জানতে হবেই। অবশেষে তাকে পাঠোদ্ধারে সহায়তা করে সহপাঠী রাকেশ, “আরে এ তো হাঙ্গেরির ডাকটিকেট, বাবা তো গত বছরই হাঙ্গেরি থেকে ঘুরে এলেন”। হাঙ্গেরি? কোন বা সে দেশ, কেমনই বা সে দেশের বুদাপেস্ট নগরী, ডাকটিকেটের সেই ছবিগুলো যেন সেই কিশোরের স্বপ্নাতুর দু’চোখের সামনে আলো-ছায়ার মতো খেলা করে। পরম মমতায় ডাকটিকেট জমাবার খাতায় সেই অজানা দেশের ডাকটিকেটগুলো গুছিয়ে রাখতে রাখতে আপন মনে সে ভাবে, “হাঙ্গেরি, অপেক্ষায় থেকো তুমি, এই তো আর কটা দিন, তার বাদে আমি বড় হলেই বেড়িয়ে পড়বো তোমার সুলুক-সন্ধানে”। এর পর কেটে যায় চব্বিশটি বছর। সেই কিশোর আজ এই এতো দিন বাদে বাস্তবতার চাঁদরে ঢাকা প্রতিদিনের জীবনকে ক’টা দিনের জন্যে বিদায় জানিয়ে চেপে বসে বুদাপেস্টগামী ট্রেনে।
পোল্যান্ডের ক্র্যাকও থেকে বুদাপেস্টের উদ্দেশে ট্রেনে আমার কামরায় উঠেই দেখি ভেতরে এক দঙ্গল ফরাসি ছেলে-মেয়ে, গ্রীষ্মের ছুটিতে ওরা চলেছে বুদাপেস্ট হয়ে ভিয়েনায়। ওদের ফরাসি ভাষার কল-কাকলিতে আমাদের কুপ মুখরিত। আমার টিকেটটি আপার বার্থের জন্যে। ওদিকে রাত গভীর হতে আর বাকি নেই তেমন। আর বুদাপেস্টে গিয়ে আমার পৌঁছুবার কথা ভোরের দিকে। একটু চিন্তায় ছিলাম, এমনিতেই আমি ঘুম-কাতুরে মানুষ, হয়তো দেখা যাবে চোখ ডলতে ডলতে উঠে দেখব সেই ফরাসি ছেলে-মেয়েদের সাথে আমিও উপস্থিত ভিয়েনায়, বুদাপেস্টকে পেছনে ফেলে। এ ট্রেনে প্রতিটি কামরার জন্যেই একজন করে পৃথক কন্ডাক্টর গার্ড, যার কাজ টিকেট নিরীক্ষা থেকে শুরু করে যাত্রীদের সব ভালো-মন্দ দেখভাল করা। তাকে আমার শঙ্কার কথা জানাতে, মোটা গোঁফের পঞ্চাশোর্ধ চেকিশ কন্ডাক্টর গার্ড বাঁ হাতটি হাওয়ায় নেড়ে বলল, “তুমি গিয়ে নিশ্চিন্তে নাক ডাকিয়ে ঘুম দাও তো বাপু। ওঠার ভাবনা তোমাকে করতে হবেনা, ও আমি ঠিক সময়ে তোমাকে ডেকে দেবো ক্ষণ”।
রাতের ট্রেনে ভ্রমণ- এ এক অদ্ভুত, অন্য রকমের রোমাঞ্চ। ট্রেনের এক টানা কিচ কিচ শব্দ, মৃদু দুলুনি, সেই সাথে ট্রেনের চাকার লোহার পাত বদলের সময় কিঞ্চিৎ ঝাঁকিয়ে ওঠা, এ সব কিছু মিলিয়ে এমন এক রসায়ন সৃষ্টি করে যে রাতের পর রাত জাগা নির্ঘুম কোন মানুষের পক্ষেও চোখের পাতাকে মধ্যাকর্ষণের বিপরীতে টেনে রাখা বেশ কষ্টসাধ্য বৈকি। উষ্ণ ছাদর গায়ে জড়িয়ে অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই আমিও তলিয়ে পড়লাম অতল ঘুমে। ঘুম কিন্তু ভাঙল সেই মোটা গুঁফো চেকিশের ডাকাডাকিতে নয়, বরং পায়ের পাতায় কারও গোপন সুড়সুড়িতে। চকিতে লাফিয়ে উঠে দেখি সেই কখন ঊষালগ্ন সমাগত, এরই মাঝে আমাদের কুপের কেউ হয়তো খুলে দিয়েছে জানালার পাল্লা, সেই খোলা জানালা দিয়ে পাশেই বয়ে যাওয়া দানিয়ুবের বাষ্প বয়ে আনা প্রশান্তিকর মৃদু শীতল হাওয়া এসে এতক্ষণ আমার পায়ের খোলা পাতায় সুড়সুড়ি দিচ্ছিল আমাকে জাগিয়ে তোলবার জন্যে। দিনের পর দিন যেখানে আমার ঘুম ভাঙে দম দেয়া ঘড়ির কর্কশ ডাকাডাকিতে, সেখানে আজকের এই ঘুম ভাঙা ভীষণ রকমের বৈপরিত্ত্যে ভরা বৈকি। নীল দানিয়ুবের সাথে এর আগেই দেখা হয়েছিল স্লোভাকিয়ায়, কিন্তু আজ এই ক্ষণে হাঙ্গেরির গ্রামীণ পাহাড়ি পটভূমিকায় সুন্দরী দানিয়ুবকে যেন নবরূপে আবিষ্কার করলাম।
পূর্ব-ইউরোপের সব চেয়ে ঐতিহ্য-মণ্ডিত রেলষ্টেশন কোনটি? এ প্রশ্ন করা হলে নিঃসন্দেহে প্রথমেই উঠে আসবে বুদাপেস্টের কেলেতি রেলষ্টেশনটির নাম। আর আসবেই বা না কেন? প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো এই ষ্টেশনটি নিজেই যেন এক আস্ত ইতিহাস। একে যেন বলা যায় পূর্ব আর পশ্চিম ইউরোপের দ্বার, প্যারিস থেকে ইস্তানবুল পর্যন্ত যে দ্বারের মাঝ দিয়ে রেলের চাকা বহমান। পূর্ব-পশ্চিমে ছড়ান এই ষ্টেশনটির স্থাপত্য এমনই যে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুরো প্ল্যাটফর্মটি থাকে দিনের আলোয় ঝলমলে। তবে একুশ শতকের বিশ্বায়নের দায় মেটাতে গিয়ে ষ্টেশনের ঠিক সম্মুখেই যে বিশাল বড়সড় ‘বার্গার-কিং’ এর বোর্ড টানান হয়েছে তা যেন এই শতাব্দী-প্রাচীন পরিবেশের মাঝে কোথায় এক ছন্দ-পতন এনে দেয়।
আমার হোস্টেল ‘বাহা লুইজা’ স্ট্রীটে, কেলেতি থেকে বেশি দূরে নয়, মাইলটাক পথ। আমি অবশ্য কেলেতিতে নেমেই পরবর্তী ক’দিনের জন্যে দৈনিক যাতায়াত পাস কিনে নিয়েছি। তাই এই মাইল খানেক পথ আর ব্যাগ-বোঁচকা নিয়ে না হেঁটে ভাবলাম পাতালরেলেই পাড়ি দিই। এ ফাঁকে এই দৈনিক পাস নিয়ে কিছু কথা বলে রাখি। বুদাপেস্টে আগত পর্যটকদের বিগত কয়েক বছরে অন্যতম অভিযোগ ছিল এখানকার গণ-পরিবহনে টিকেটের ভ্যালিডেশন ব্যবস্থা নিয়ে। ভ্যালিডেশনের মানে হল বাসে ট্রামে ওঠার পর টিকেটটি একটি ছোট্ট যন্ত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া, যেটি সেই টিকেটে বসিয়ে দেয় সময় ও তারিখ, ফলে একই টিকেট পরবর্তীতে ব্যাবহারের সুযোগ থাকেনা। পর্যটকদের অনেকেই টিকেট কাটার পর, বাস-ট্রামে উঠে ভ্যালিডেশন করতে ভুলে যেত, অথবা তাদের কেউ কেউ জানতোই না এই করণীয় সম্পর্কে। ফলশ্রুতিতে তাদের অনেককেই চড়া অঙ্কের মাশুল গুনতে হতো। এই ফাঁদ থেকে বাঁচার এক সহজ উপায় হল দৈনিক পাস কিনে নেয়া, এই পাস কেনার সময়ই তাতে কেনার তারিখ এবং সময় উল্লেখ থাকে, আর তাই প্রতিবার বাসট্রামে উঠবার সময় ভ্যালিডেশনের ঝামেলা থাকেনা।
ইন্টারনেট থেকে হোটেলের বুকিং দেবার সময়ই ভেবে রেখেছিলাম ঝাঁ চকচকে আধুনিক কোন হোটেল আমার দরকার নেই, আমি চাই এমন কোন হোটেলে উঠতে যার সাথে সেই পুরনো বুদাপেস্টের গন্ধ লেগে থাকবে। মার্কও-পোলো হোস্টেলে পা দিয়েই মনে হল ভুল করিনি। আমার ঘরে ঢুকে দেখলাম আধুনিক কোন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র নেই, বরং আছে সেই আদিকালের এক তাপ-যন্ত্র শীতকালের জন্যে। ঠিক এমনটিই তো আমি চেয়েছিলাম। বিশাল লম্বাটে জানালার পর্দা সরাতেই চোখ আটকে গেলো এ স্ট্রীটের সারি সারি পুরনো ভবনগুলো ছাড়িয়ে দূরে কোথাও, নিজেকে কল্পনা করছিলাম ডিসেম্বরের কোন বরফ ঝরা সকালে কফির কাপ হাতে পেস্ট নগরীর ওই দূর ভবনগুলোর পানে চেয়ে থাকা এক দৃশ্যের সাথে। মনে মনে ঠিক করে ফেললাম কল্পনার তেমন একটি সকালের দেখা পাবার জন্যে হলেও আমায় আরও একটি বার আসতেই হবে এই নগরীতে।
বুদাপেস্ট শহরটি এক-দু’শ বছরের পুরনো নয়, বরং এ শহরটির সাথে জড়িয়ে আছে হাজার বছরের ইতিহাস। আর তাই ইতিহাসের উত্থান পতনের সাথে সাথে এ শহরের দালানকোঠার নকশাতেও এসেছে নানা সময়ের নানান স্থাপত্যরীতির প্রভাব। রোমান, রেনেসাঁ, বাইজেনটাইন, ক্লাসিসম, গথিক, রোমান্টিক, আর্ট নুভহ- গত হাজার বছরে উদ্ভব হওয়া যে কটি বিশেষ স্থাপত্যরীতির কথা আমরা জানি, বুদাপেস্টের পথে হাঁটলে তার অনেকগুলো ধারার নিদর্শনের সাথেই দেখা মেলে। এ শহরের বিশেষ বিশেষ ভবনগুলো তো বটেই, এমনকি গলি-তস্য গলির নিতান্ত সাধারণ পাড়ার ভবনের স্থাপত্য নকশা দেখলেও রীতিমতো চমকিত হতে হয়, ভ্রম হয় এই পুরো শহরটিই আশেপাশের সব দেশের জমিদারদের বাসভূমি ছিল না তো? এ শহরের রাজপথ, মলিন পাড়ার এলেবেলে রাস্তা সবই যেন আমাকে অমোঘ আকর্ষণে আটকে ধরে, আমি চলতে চলতে থমকে দাড়াই, আর মনে মনে ভাবার চেষ্টা করি পথের ধারের কোন বাড়িটি ঠিক কোন ধরণের নকশায় বানানো, রোমান্টিক নাকি আর্ট নুভহ?
এমনি অনেক অর্থহীন চিন্তাভাবনা আর শ্লথ গতিতে হাঁটার মাঝেই পরদিন সকালে পৌঁছে যাই ঠিক দানিয়ুবের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গথিক স্থাপত্ত্যে নির্মিত এক ভবনের সামনে। হাঙ্গেরিয়ান রাজ্যের ১০০০ বছর পূর্তিতে ১৮৯৬ সালে নির্মিত এই ভবনটিই আজ হাঙ্গেরির সংসদ ভবন। এমন অপূর্ব কারুকাজ মণ্ডিত ভবন কি আর শুধু বাইরে থেকে দেখে তৃষ্ণা মেটে? মোটেই মেটে না। এই ভবনের ভেতরে প্রতিদিন কেবল সীমিত সংখ্যক পর্যটক ঢোকার অনুমতি পায়, তাও আবার চড়া দর্শনীর বিনিময়ে। বেশ সকাল সকাল পৌঁছে যাবার কারণেই হয়তো পেয়ে গেলাম ভেতরে যাবার অনুমতি। আর অল্প দেরী হলেই সেদিনকার মতো হয়তো ব্যার্থ মনোরথে ফিরতে হতো।
আজকের হাঙ্গেরি দেশের তুলনায় এই বিশালাকায় সংসদ ভবনটি বেশ বড় মনে হলেও এই ভবনটি আসলে বানানো হয়েছিল সেই ১০০ বছর আগের অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের কথা মাথায় রেখে যা কিনা বিস্তৃত ছিল উত্তরের তাতরা পর্বতমালা থেকে দখিনের অ্যাড্রিয়াটিক সাগর অবধি। ভবনটির ভেতরে নিজের মতো করে ঘোরাঘুরি করার কোন উপায় নেই, এখানে ঢুকতে হয় নির্দিষ্ট গাইডের সাথে, গাইড যে যে স্থানে নিয়ে যায় শুধুমাত্র সেসব স্থানের মাঝেই প্রবেশাধিকার সীমিত। তা ওই সীমিত সুযোগ আর সীমিত সময়ের মাঝেই যতটুকু সম্ভব দেখে নিলাম। ভেতরের মূল কক্ষগুলো আজ এতো বছর বাদেও মোটামুটি অবিকৃত, মূল অধিবেশন কক্ষের আসবাব আর অঙ্গসজ্জার সবটাই ওক কাঠের তৈরি। অধিবেশন কক্ষের বাইরের ব্যাল্কনিতে দেখলাম এক মজার বিষয়, পেতলের কতগুলো আধারে চুরুট রাখার ব্যবস্থা, তার প্রতিটিতে আবার নির্দিষ্ট নম্বর দেয়া। অর্থাৎ চুরুট ফোঁক, এর মাঝেই চট করে ভেতরে গিয়ে কিছুক্ষণ আইন প্রণয়ন করো, ভেতরের বাতচিতে ধৈর্যচ্যুতি ঘটলে কিংবা ধূমায়িত বাষ্পের তৃষ্ণা জাগলে আবারো এসে দিয়ে যাও কয়েক টান, তবে চুরুট তোলার আগে দেখে নিয়ো যে নম্বরে তোমার আধপোড়া চুরুট রেখে গিয়েছিলে সেটিই নিচ্ছ কিনা। পুরো ভবনে ব্যবহৃত হয়েছে বাহারি নকশা করা কাঁচ, যার প্রায় সবগুলি আজও অক্ষত। এই অক্ষত থাকার আরেকটি কারণ হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই সব কাঁচের জানাগুলোই খুলে রাখা হয়েছিল সুরক্ষিত এক স্থানে। অধিবেশনস্থল ছাড়াও অন্য প্রায় সব কক্ষেই চোখে পড়লো থামের সাথে ঝোলান হাঙ্গেরিয়ান শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের অসংখ্য ছোট ছোট মূর্তি, গাইড জানাল এই মূর্তিগুলো বানাবার সময় ইচ্ছে করেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে হাঙ্গেরিয়ান সাধারণ মানুষের অবয়বের, যাতে করে আইন প্রণেতারা এই ভবনে ঢুকে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা ভুলে না যান। আর তাই হাঙ্গেরিয়ান ছুতোর, কাঠুরে, গোয়ালা, কৃষকদের উজ্জ্বল উপস্থিতি সারাটা ভবন জুড়ে। পুরো ভবনের ঠিক মাঝের কক্ষটিতে এক বিশালাকার গম্বুজ, ভূমি থেকে যার উচ্চতা পাক্কা ৯৬ মিটার, এতো সংখ্যা থাকতে এই ৯৬ কে বাছা হয়েছে হাঙ্গেরিয় সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তনের সাল ৮৯৬ কে মাথায় রেখে। এই সংসদ ভবনে পর্যটকদের আগমনের আরেকটি প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে এই ভবনেই সংরক্ষিত রাজমুকুট, এই সেই রাজমুকুট যা কিনা বারশ শতাব্দী থেকে শোভা পেয়েছে প্রতিটি সম্রাটের মাথায়। অর্থাৎ গুনে গুনে প্রায় পঞ্চাশ জন হাঙ্গেরিয় সম্রাট মাথায় পড়েছেন এই মুকুট। যদিও এই নয়শ বছর মোটেও মসৃণ ছিলোনা এই মুকুটের জন্যে, এর মাঝে বহুবারই তস্করেরা হানা দিয়েছে একে হস্তগত করার জন্যে। সর্বশেষ এই মুকুটটিকে নাৎসিদের হাত থেকে অস্ট্রিয়ায় উদ্ধার করে মার্কিন বাহিনী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষ পর্যায়ে। তারপর প্রায় তিন দশক মার্কিন মুল্লুকে কাটিয়ে ৭৮’এ এ মুকুট আবার ফেরত আসে স্বভূমিতে। অন্য সবখানে ছবি তোলায় বারণ না থাকলেও এই রাজমুকুটের ছবি তোলা একেবারেই বারণ নিরাপত্তার খাতিরে, শুধু তাই নয়, দুজন সশস্ত্র রক্ষী এই মুকুটটিকে পাহারা দিয়ে রাখে সর্বক্ষণ।
সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে দানিয়ুবের পাড় ধরে হাঁটছি। এই পাড়ের দিকটায় কোন বেষ্টনী নেই, নেই কোন ঢালু পাড়। বাঁধানো রাজপথের ঠিক পাশেই প্রায় বিশ ফুট নিচে বয়ে চলছে স্রোতস্বিনী দানিয়ুব। পা হড়কে একবার পড়ে গেলে আর রক্ষে নেই। হটাত নজরে এলো এই রাজপথের ধারেই নদীর ঠিক তীর ঘেঁষে কাদের যেন কিছু অবিন্যস্ত চপ্পল। তবে কি কেউ এখানেই জুতো ছেড়ে ঝাপ দিয়েছে এই দানিয়ুবের বুকে? ঠিক ঝাঁপ নয়, ঝাক ঝাক বুলেট সেদিন জোড়া জোড়া মানুষকে ছিটকে নিয়ে ফেলেছিল এই দানিয়ুবে। হ্যাঁ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার কথা বলছি। উগ্র-ডানপন্থি অ্যায়রো-ক্রস বাহিনী সেদিন রাতের আঁধারে খুন করে বুদাপেস্টের অসংখ্য ইহুদী নর-নারীকে। বুলেট বাঁচানোর জন্যে প্রতি দুজনকে এক সাথে বেঁধে গুলিটি করা হয় এক জনের মাথায়, যাতে গুলির ধাক্কায় অন্যজনটিও ছিটকে পড়ে নদীর বুকে। সেদিনের সেই নৃশংস ঘটনাটিকে স্মৃতির মণিকোঠায় ধরে রাখতেই এখানে রাখা হয়েছে লোহার তৈরি সেদিনের সেই হতভাগ্যদের ব্যাবহৃত কিছু জুতোর অবয়ব। এই সকালে কারা যেন ভালোবেসে সেই জুতোয় রেখে গেছে কয়েকটি গোলাপ আর টিউলিপ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা যেহেতু এলোই, তখন এই যুদ্ধ আর হাঙ্গেরিকে নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। একবার পোল্যান্ডে হাঙ্গেরি নিয়ে কথা বলার সময় একজনকে বলেছিলাম বুদাপেস্ট শহরকে ঘিরে আমার উচ্ছ্বাসের কথা, তাতে সে ঠোঁট উল্টে আমাকে বলেছিল, “ওদের ও শহর তো সুন্দর হবেই, যুদ্ধের সময় তো ও শহরের গায়ে টোকাটিও লাগেনি”। কথাটি যেমন পুরোপুরি সত্য নয়, আবার ঠিক সিকিভাগ মিথ্যাও নয়। যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময় এ শহর প্রায় অক্ষত থাকলেও শেষ সময়ে এসে এক তুমুল নগর-যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে জার্মান আর সোভিয়েত বাহিনী এ শহরে। সে নগর-যুদ্ধের তীব্রতা এতটাই ছিল যে মাত্র এক মাসে প্রাণ যায় প্রায় তিন লক্ষ সৈনিকের। হাঙ্গেরি গোঁড়া থেকেই ছিল জার্মানির মিত্র। তখনকার সরকারে নাৎসিপন্থীদের প্রভাব, ওদিকে হিটলারের একের পর এক বিজয়, এ সব কিছু মিলিয়ে হাঙ্গেরি হিটলারের পুচ্ছ-তলে থাকাটাই নিরাপদ মনে করে, এমনকি হিটলারের চাপে বেশ কয়েক ডিভিশন হাঙ্গেরিয়ান সৈনিক পূবের রাশান ফ্রন্টে যোগ দেয় জার্মান বাহিনীর সাথে। তবে ৪৪’র শীতে যখন যখন সমস্ত বাঁধা উল্লঙ্ঘন করে সোভিয়েত বাহিনী পৌঁছে যায় বুদাপেস্টের সীমানা অবধি, হিটলার বুঝে যায় বুদাপেস্ট তথা অস্ট্রিয়ার পতন আসন্ন। মরিয়া হয়ে হিটলার নির্দেশ দেয় জার্মান পদাতিক বাহিনীকে বুদাপেস্টে অবস্থান নিয়ে শেষ সৈনিকের প্রাণ থাকা পর্যন্ত সোভিয়েত বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখতে। ওদিকে ততোক্ষণে সোভিয়েত বাহিনী চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে বুদাপেস্টকে। অবরুদ্ধ বুদাপেস্টে তুমুল লড়াই চলতে থাকে দু’পক্ষের মাঝে। দু-তিন সপ্তাহের মধ্যেই পতন ঘটে দানিয়ুবের পূর্ব পাড়ের পেস্ট অংশের। এই পেস্ট আর দানিয়ুবের পশ্চিম পাড়ের বুদার মাঝে কিন্তু ভু-প্রাকৃতিক এক পার্থক্য বিদ্যমান।
পেস্ট অংশটি মূলত সমতল ভূমি, ট্যাঙ্ক চলাচলের উপযোগী চওড়া রাজপথ ছড়িয়ে আছে পুরো পেস্টে, অগ্রসরমান সোভিয়েত বাহিনীর পক্ষে পেস্ট জার্মানমুক্ত করা ছিল তাই তুলনামূলকভাবে সহজ। অন্যদিকে পশ্চিমের বুদা অংশটি মূলত পাহাড়ি ভূমি, এ অংশের রাজপথগুলও তাই কিছুটা আঁকা-বাঁকা, উঁচু-নিচু। জার্মান বাহিনী কোনঠাঁসা হয়ে সরে যায় এই বুদা শহরের পাহাড়গুলোতে। সেখানেও শেষ রক্ষা হলনা, ৪৫’র জানুয়ারির শেষভাগেই চূড়ান্ত জয় অর্জন করে সোভিয়েত বাহিনী। পেছনে পড়ে থাকে লক্ষ লক্ষ সৈনিকের বিবর্ণ মৃতদেহ, শতাব্দী প্রাচীন ভবনগুলোর গুলিতে ঝাঁজরা হওয়া দেয়াল, প্রশস্ত রাজপথে ট্যাঙ্কের কঙ্কাল, চিলেকোঠার জানালা থেকে উঁচিয়ে থাকা মৃত স্নাইপারের তরাকেভ রাইফেলের ডগা, শীতের জমে যাওয়া দানিয়ুবের বুকে ধসে পড়া ব্রিজ, এমনি আরও কত কত চিত্র..................
এখনও আমি দণ্ডায়মান পেস্ট নগরীতে। আরেকটু এগিয়ে ওই চেইন ব্রিজ ধরে ওপারে পৌঁছুলেই বুদা নগরী। আমার তো আর কোন তাড়া নেই, তাই ধীরে সুস্থে পদব্রজে পেরুলাম এই ব্রিজ। দানিয়ুবের উপর বানানো আটটি ব্রিজের মাঝে এটিই সবচেয়ে পুরনো। আর দশটি ব্যাস্ত শহরের আধুনিক সেতুগুলোর মতো এ সেতুতে শুনতে পাওয়া যায়না দ্রুতগামী যানের কর্কশ চাকার ঘর্ষণের শব্দ, তার বদলে শোনা যায় পথচারীদের এড়িয়ে ওপারে যাবার জন্যে ব্যাগ্র সাইকেলের টুংটাং বেল, কিংবা বহুকাল ধরে চলতে থাকা হলদে ট্রামের মৃদু গুমগুম আওয়াজ।
ওপারে পৌঁছেই টুক করে ঝুলে পড়লাম এক ট্রামের হাতল ধরে। সমাজতন্ত্রীরা আর কিছু নাই করুক, এই এক খানা খাসা জন-পরিবহণ ব্যাবস্থা বানিয়েছিল বটে। বুদাপেস্টের যে কোন স্থানে দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিটের মাঝেই ট্রাম, বাস বা পাতালরেলের দেখা মিলবেই, তাও বেশ স্বল্প খরচে। মন্থর গতিতে দুলতে দুলতে ট্রাম চলেছে দানিয়ুবের ঠিক পাড় ঘেঁষে। মধ্য সপ্তাহের অলস দুপুর, ট্রামের ভেতর তাই যাত্রী বলতে আমি বাদে আর মাত্র ক’জন। দুলকি চালে চলতে চলতে কয়েক মিনিটের বাদেই ট্রাম গিয়ে থামল সিতাডেল পাহাড়ের পাদদেশে। বাঁ দিকে আর্ট নুভহ ঢঙ্গে বানানো শতবর্ষী যে দালানটি দানিয়ুবের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে, তার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম লেক বালাতনের স্বাস্থ্যনিবাসের মতো এখানেও কি কোথাও লেখা আছে রবি কবির পদ চিহ্নের কথা? তিনি যেবার বুদাপেস্টে এসেছিলেন, সেবার তো এসে উঠেছিলেন এই হোটেল গ্যালারতেই। নাহ, তেমন কিছু চোখে পড়লো না, না পড়ুক, অন্তত আমি তো জানলাম ওই যে দোতলার পূবমুখী জানালাগুলো, সেগুলোরই কোনটির পাশে বসে হয়তো এক শীতের সন্ধায় কবি লিখেছিলেন,
পেস্ট শহরের সেই আদি সুশোভিত বাড়িগুলোর বর্তমান মালিকদের নগদ নারায়ণের অবস্থা যে তেমন সুবিধের নয় তা বাড়িগুলোর দিকে এক নজর তাকালেই ঠাহর করা যায়। হারিয়ে যাওয়া পরীর ডানা, খসে পড়া মুখায়ব, দেব শিশুর হারিয়ে যাওয়া আঙুলের ডগা, জানালার ভেঙ্গে পড়া ফ্রেম, কিংবা পরিত্যাক্ত চিলেকোঠাগুলোই বলে দেয় পুরনো সেই জৌলুস ভরা দিনগুলো এই দালানগুলোর জন্যে অতীতের অধ্যায় মাত্র। হয়তোবা দেয়ালে পিঠ ঠেকার ফলেই প্রায় সব ভবনের মালিকেরাই আজ নিচ তলাটি ছেড়ে দিচ্ছেন কোন দোকান মালিকের কাছে। ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ণ বেমানান আর বিসদৃশ ভাবে এই ভবনগুলো ঢেকে যাচ্ছে কখনো রেস্তোরাঁ বা কখনো পার্লারের দোকানের নামফলকে। এমনই এক সারি সারি রেস্তোরাঁ ভরা এক পাড়ার মাঝ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় মনে হল আরে এখনও তো হাঙ্গেরির বিখ্যাত খাবারের পদ গুলাসই চেখে দেখা হলনা। প্রায় সব কটি রেস্তোরাঁর সম্মুখেই পরিবেশনকারিরা দাঁড়িয়ে আছে খদ্দেরের আশায়। আমার চোখের ভুল কিনা জানিনা, কিন্তু প্রায় চার পাঁচটি রেস্তোরাঁর সামনেই একই ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, আমার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া আমেরিকান বা জার্মান পর্যটকদের তারা ধরছে জোঁকের মতো, হাতে খাবারের ফর্দ ধরিয়ে বোঝাচ্ছে কত কত পদের খাবার সেসব রেস্তরাঁয় পাওয়া যায়, আর এদিকে আমি জলজ্যান্ত মানুষটি যে পাশেই দাঁড়িয়ে বা হেঁটে যাচ্ছি সেদিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। হয়তোবা ভেবেছে কোন গরিব দেশের বাদামী আদমি, কি দরকার এর পেছনে বৃথা বাক্য ব্যয় করে, এর চেয়ে ধনী দেশের শ্বেতাঙ্গ আদমিরই খদ্দের হবার সম্ভাবনা বেশি। তাই যদি হয়, তবে শুভকামনা রইলো তোমাদের জন্যে, আমি না হয় গুলাস চেখে দেখব অন্য কোথাও, অন্য কোন সময়ে......
যুবরাজ আরপাদের কাফেলায় হেঁটে চলেছে মধ্য এশিয়ার আরও সাতটি গোত্রের মানুষ, তাদের সবার চোখেই স্বপ্ন নতুন একটি দেশ, নতুন একটি রাজ্যের। দুর্গম কারপেথিয়ান পর্বতমালা পেরিয়ে তারা এগিয়েই চলেছে আরও পশ্চিমের পানে। কিন্তু কোথায় হবে তাদের এ যাত্রার শেষ বিন্দু? দৈব-বাণীর মতো এ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এলো এক তুরুল পাখি, দানিয়ুব পাড়ের এক পাহাড়ে ঠোঁট থেকে পবিত্র তরবারি টুপ করে ঝেড়ে ফেলে যেন সে জানিয়ে দিয়ে গেলো তার উত্তর। সেখানেই ফেলা হল সেই কাফেলার তাঁবু। কালক্রমে এখান থেকেই উদ্ভব হল হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের। সেদিনের সেই পাহাড়টিই হয়ে উঠল এ সাম্রাজ্যের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। ফিউনিকুলারের বাক্সে চেপে এ পাহাড়ের চুড়োয় পৌঁছুলে প্রথমেই দেখা মেলে সেই তুরুল পাখিটির, তার প্রসারিত ডানার নিচ দিয়ে বাঁয়ে হাঁটলেই বুদা ক্যাসল, আর ডানে আজকের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ। যুদ্ধের পর কমিউনিস্ট সরকার এই ক্যাসলের বহির্ভাগে আদি নকশার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বেশ কিছু পরিবর্তন আনে সংস্কারের সময়, যার ফলে অপরিবর্তনীয় কিছু ক্ষতি হয়ে যায় হাজার বছরের পুরনো এই স্থাপত্যের। হায়রে রাজনীতি, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্থাপত্য, কৃষ্টি, সাহিত্য- কিছুই এর করাল থাবা থেকে মুক্তি পায়না।
পূর্ব ইউরোপের অন্য দেশ গুলোর মতোই এদের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদেও নিরাপত্তার তেমন বাড়াবাড়ি চোখে পড়ে না। সদর দরজার অল্প দূরেই কিছু ফেরিওয়ালা বিক্রি করছে আইসক্রিম আর সুভ্যেনির। তাদেরকে ঘিরে ছোটোখাটো জটলা হচ্ছে বটে, কিন্তু তাতে করে রাষ্ট্রপতি মশায়ের নিরাপত্তা তেমন বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মনে হলনা। হাঙ্গেরিতে আজকাল যদিও সেই কম্যুনিস্ট আমলের ত্রাবান্ত গাড়ি তেমন চোখে পড়েনা, কিন্তু এই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে কিছু দূর পথ হাঁটার পর পথের ধারে পেয়ে গেলাম ঝিমুতে থাকা এক ত্রাবান্ত। কাছে যাবার পর দেখি অনুদান চাইবার এক অভিনব পন্থা! গাড়ির মালিক গাড়ির গায়ে পোষ্টার সেঁটে অনুদান চাইছে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে।
বুদা পাহাড় ধরে পথ চলা এখানেই শেষ নয়, কালচে ইটের বাঁধানো রাস্তা ধরে আরও ডানে হাঁটতে থাকলে পথে পড়ে জেলেদের বেষ্টনী, দেখতে যদিও সেটি অনেকটা দুর্গের প্রাকারের মতই। এখানে দাঁড়িয়ে পুরো পেস্ট নগরীটি এক নজরে দেখা যায়। আর ওদিকে এই প্রাকারের উল্টো দিকেই ম্যাথিয়াস চার্চ। এ চার্চের রঙ বেরঙের টালির ছাদ বহু দূর থেকেও চিনিয়ে দেয় এই সেই ভবন যেখান থেকেই পবিত্র বারি ছিটিয়ে বহু কাল আগে হাঙ্গেরিতে যাত্রা শুরু করেছিল ক্যাথলিসম।
সকাল প্রায় ন’টা। হাঁটছি ‘আন্দ্রেসি স্ট্রীট’ ধরে। কিছু দূর যাবার পরই দেখা মেলে আপেলের মতো দেখতে এক ঝাঁক টুকটুকে ছোট্ট শিশুর, দল বেঁধে একে ওপরের কাঁধে হাত রেখে ওরা ঢুকছে ওদের স্কুলে। এ যেন এক ফুলের বাগান। সামনের সড়কের মাঝখানে চওড়া আইল্যান্ড, সেখানে পেতে রাখা বেঞ্চে এক বুড়ো শান্তিতে পড়ছে সেদিনের খবরের কাগজ। জানা না থাকলে কে বলবে এই সড়কেরই অল্প কিছু দূরেই এক কসাইখানা? টানা চল্লিশটি বছর ধরে এ সড়কেরই এক বনেদি বাড়ি ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন ফ্যাসিস্ট সরকারের দ্বারা, যাকে কসাইখানা বললেও অত্যুক্তি হয়না। মূলত কমিউনিস্ট সময়ের টানা চল্লিশ বছর এ বাড়িটি হয়ে ওঠে গুপ্ত পুলিশের ঘাঁটি। অত্যাচার, নির্যাতন, নজরদারি এ সবই নিয়ন্ত্রিত হতো এ বাড়িটি থেকে। ‘হাউস অফ টেরর’ নাম দিয়ে আজ একে জাদুঘর বানিয়ে খুলে দেয়া হয়েছে জন মানুষের জন্য। দলে বেঁধে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা আসছে দেখতে কিভাবে একদিন হারিয়ে গিয়েছিলো তাদের কাকু, দাদু, দিদিমারা, কি ভাবে শ্রেণীহীন সমাজের স্বপ্ন দেখিয়ে অন্যায়ের জগদ্দল পাথর একদিন চেপে বসেছিল তাদের এই ছোট দেশটির উপর। জাদুঘরে ঢোকার মুখেই এক প্রকাণ্ড রাশান ট্যাঙ্ক দাঁড়ানো থকথকে তেলের মাঝে। ট্যাঙ্কটি যেন তার সমস্ত তেল নিংড়ে ফেলে অচল স্থবির হয়ে বোঝাতে চাইছে হাঙ্গেরিতে এক কালের প্রবল প্রতাপশালী সমাজতন্ত্রও আজ এমনই ভাবে তার সমস্ত জৌলুস হারিয়ে আজ জড় মাত্র, আর নেই তার বিষদাঁত ফোটানোর ক্ষমতা। কিন্তু এ জাদুঘরে ঘুরে আমার যেন মনে হয়েছে এখানে যেন ইতিহাসের সীমানা টানা হয়েছে হাঙ্গেরিতে সমাজতন্ত্রের প্রারম্ভের সময় থেকে। যুদ্ধের প্রথম দিকে অ্যায়রো-ক্রস পার্টির অত্যাচার, হাঙ্গেরির নাৎসিদের সাথে মাখামাখি এসবের দিকে তেমন কোন আলোকপাত করা হয়নি। তারপরও মানবতা-বিরোধী ইতিহাসের কিছু পঙক্তি যে পৌঁছে যাচ্ছে নব-প্রজন্মের কাছে, যা হয়তো তাদের শেখাবে শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের পথ, তাই বা কম কি? এ ভবনের ভু-গর্ভস্থ টর্চার সেলগুলো লিথুয়ানিয়ায় বা লাটভিয়ায় আমার দেখা কে.জি.বির টর্চার সেলের অনুরূপ, বোঝাই যায় কাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছিলো এই সেলগুলো। এই গুপ্ত গুম-খুন আর অত্যাচারের সবচেয়ে শোচনীয় দশকটি ছিল পঞ্চাশের দশক। স্তালিনের মৃত্যুর পর, ৫৬’র গণ- অভ্ভুথানের রেশ কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলে কিছুটা কমে এর মাত্রা। যদিও অদৃশ্য লোহার শেকল জাপটে ধরে ছিল এ দেশের মানুষদের সমাজতন্ত্রের পুরোটা সময় ধরেই, যার পরিসমাপ্তি ঘটে ৯১’র জুলাইতে যেদিন সর্বশেষ রাশান সৈনিকটি হাঙ্গেরি ছেড়ে যায়।
আমার হোস্টেলের কয়েক ব্লক দূরেই দহানি স্ট্রীট। পথ ধরে হেঁটে যাবার সময় দেখা পাওয়া যায় অর্থোডক্স গির্জার আদলে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা হুঁকোমুখো কয়েকটি মিনার। হাতের ম্যাপ বলছে এটি বুদাপেস্টের অন্যতম প্রাচীন সিনাগগ। গির্জার আদলে প্রায় দেড়শ বছর আগে এই সিনাগগটি বানানো হলেও, সে নিয়ে কেচ্ছা কাহিনী কম হয়নি। বুদাপেস্টের অর্থোডক্স ইহুদীদের ঘোর আপত্তি ছিল কেন গির্জার নকশার আদলে বানানো হবে তাদের সিনাগগ। তাদের বাঁধা পেরিয়েই বানানো হল এই সিনাগগটি, যা কিনা আজ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম। সেকালের থিয়েটারের মতো উপরের ব্যাল্কনিতে নারীদের পৃথক বসবার ব্যাবস্থা। পৃথক বসবার ব্যাবস্থা থাকলেও কেন আলাদা পর্দা টানানো হলনা তাদের সামনে, এই নিয়ে অর্থোডক্সরা আবারো গোঁ ধরে রইলেন, তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো যখন তারা দেখলেন সেই আবার গির্জার আদলে সিনাগগে এনে ঢোকান হয়েছে অর্গান, সাবাথের দিনে আরাধনা আর পবিত্র গ্রন্থ তোরাহ পাঠের পর কিছুটা ভজন চর্চার জন্যে। এ যে পুরোপুরি গির্জার অনুরূপ সংস্কৃতি চর্চা, এ কি ধম্মে সইবে? চেতে-মেতে এবার তারা ঠিক করলেন নিজেদের জন্যে বানাবেন পৃথক কোন সিনাগগ, এখানে তাদের পোষাবে না। ইহুদী সমাজের অধিকাংশই কিন্তু সমর্থন করলো এই নতুন ধারার নতুন সিনাগগের। ধীরে ধীরে এই সিনাগগকে ঘিরেই বর্ধিষ্ণু হয় বুদাপেস্টের ইহুদী সমাজ, ভালোই ছিল তারা। অতঃপর এলো সেই যুদ্ধের বছর ৩৯ সাল, জার্মান তাঁবেদার সরকার সে বছরেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় এই সিনাগগটি।
পোল্যান্ডের আউসভিতসে গিয়ে দেখেছিলাম, জেনেছিলাম কিভাবে শিল্পকারখানার প্রডাকশন চেনের মতো ওয়াগনের পর ওয়াগন ইহুদীদের ধরে এনে সোজা ঢোকান হয়েছিলো গ্যাস চেম্বারে। সেখানে যে দেশটির ইহুদীদের কথা বার বার উঠে আসছিলো, সে দেশটির নাম হাঙ্গেরি। আউসভিতসে মাত্র দশ সপ্তাহের মতো সময়ে খুন করে ফেলা হয় প্রায় দু’ লক্ষ হাঙ্গেরিয়ান ইহুদীকে। সেই জল্লাদখানায় পাঠানোর আগে হাঙ্গেরিয়ান ইহুদীদের জড়ো করা হতো এই দহানি স্ট্রীট সিনাগগের সংলগ্ন এলাকায়, চারদিকে উঁচু পাঁচিল তুলে রাতারাতি এখানে ততদিনে বানানো হয়েছে ‘যিউশ ঘেঁটো’। যুদ্ধ যেদিন থেমে গেলো ঠিক সেদিনও সোভিয়েত বাহিনী এই ঘেঁটোতে এসে খুঁজে পায় প্রায় আড়াই হাজার মৃতদেহ, যাদের পরবর্তীতে সমাহিত করা হয় এই সিনাগগ প্রাঙ্গণেই। আমাদের সাথের গাইড বলছিল ইহুদীদের সমাধিতে নাকি জীবন আছে এমন কোন কিছুই রাখা হয়না, পোতা হয়না কোন বৃক্ষ। ফুল বা বৃক্ষ তারাও তো ঝরে যায় একটা সময় পর, তাই ইহুদীরা বিশ্বাস করে চলে যাওয়া প্রাণের সমাধিতে পাথরের মতো মৃত্যুহীন কিছু অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করাই শ্রেয়। এই রীতি বা বিশ্বাসের ব্যাতিক্রম হয়েছিলো কেবল এই সিনাগগের প্রাঙ্গনের সমাধিগুলোতে। পুরো সমাধি জুড়ে শনশনে হাওয়ায় দুলতে থাকা উইলো গাছের প্রতিটি পাতা আজও যেন বয়ে নিয়ে বেড়ায় সেদিনের সেই হতভাগ্যদের করুণ আর্তনাদ। কিন্তু এতো কিছুর পর আজও কি ভালো আছে এ শহরের সংখ্যালঘু সমাজ? সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে চরম ডানপন্থী দল হবিকের হাঙ্গেরিয়ান সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ কিন্তু সংখ্যালঘুদের জন্যে কোন সুখকর ভবিষ্যতের বার্তা বয়ে আনেনা।
যে কোন নতুন দেশের নতুন শহরে গেলেই দুটো স্থানে ঢুঁ মারা আমার কাছে একটি প্রিয় বিষয়। এর একটি হল স্থানীয় বাজার, অন্যটি হল ডাকঘর। বাজারে গেলে দেখা মেলে সে শহরের ছাপোষা সাধারণ মানুষের, আর ডাকঘরে গেলে কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যায় সে দেশের সরকারী পরিসেবা সম্পর্কে। আর সব প্রাক্তন সমাজতান্ত্রিক দেশের মতো পেস্ট শহরের বাজারটিও ঢোকানো প্রকাণ্ড এক হল ঘরের ভেতর। শুকনো মরিচ, পাপড়িকা, নাসপাতি কিংবা হরেক পদের মাখন থেকে শুরু করে হাতে বোনা জামা, সব কিছুই মেলে ওই এক সামিয়ানার নিচে। ছুটির দিন নয় বিধায় কিনা জানিনা, কিন্তু চোখে পড়লো ক্রেতাদের মাঝে একটা বড় অংশই আমার মতো ঘুরঘুরে পর্যটক পার্টি।
সুনীল তার ‘ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ’ বইয়ে লিখেছেন সেই বিশ বছর আগে সমাজতন্ত্র থেকে মুক্তির পরও তিনি দেখেছেন বাজারের দোকানের শেলফ খালি, কিংবা রেস্তোরাঁর খাবারের ম্যানুতে খাবারের নাম আছে, কিন্তু আসল খাবার উধাও। এই বাজার ঘুরে কিন্তু আমার সেই বিশ বছর আগের মতো ততটা দৈন্যদশা চোখে পরলনা। দোকানগুলোর পরতে পড়তে ঠাসা দ্রব্যসামগ্রী। আমি যেহেতু সবে পোল্যান্ড ঘুরে এদেশে এসেছি, তাই সব কিছুর দামের সাথেই তুলনাটা চলে আসছিলো পোল্যান্ডের সাথে। সে দিক দিয়ে চিন্তা করলে, বা হাঙ্গেরির বর্তমান তুলানামুলকভাবে রুগ্ন অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় খাবারের দাম একটু যেন বেশিই ঠেকল। রোজগারের তুলনায় খাদ্যদ্রব্যেরর দাম বেশি থাকা মানেই মধ্যবিত্তের নাভিঃশ্বাস, যা কোন সমাজের জন্যেই মঙ্গলজনক নয়। হয়তোবা এই মুদ্রাস্ফীতির কারণেই হাঙ্গেরির মুদ্রা ফ্লরিন্ত এখনও ইউরোর তুলনায় ততটা শক্তিশালী নয়। যদিও পর্তুগাল বা গ্রীসের মতো দেউলিয়া হবার পর্যায়ে হাঙ্গেরি উপনীত হয়নি, কিন্তু গত এক দশকের বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক মন্দা দেশটির হাজার হাজার মানুষকে বাধ্য করে ব্রিটেন বা জার্মানির মতো দেশগুলোতে পাড়ি জমাতে।
পোল্যান্ডে দেখেছি, লাটভিয়াতেও দেখেছি, সপ্তাহান্তের ছুটির দু’দিনই ডাকঘর খোলা থাকে। হাঙ্গেরিও এর ব্যাতিক্রম নয়। যদিও ডাকঘরগুলো তেমন জৌলুসপূর্ণ নয়, তা না হোক, তবু তো সমাজের একটা শ্রেণীর কর্মসংস্থান হচ্ছে। মার্কিন সরকার তো শনিবারের অর্ধ-দিবস সার্ভিস বন্ধের কথা ভাবছেই, সেই সাথে চিন্তা করছে কি করে ডাকঘরের সংখ্যা আরও কমান যায়। উদ্দেশ্য ব্যয় সাশ্রয়। আমি ভাবি আমার ক্ষুদ্র গণ্ডিতে, আমার ভাবনা আমাকে বলে আকাশী নীল রঙের শার্ট পড়ে গত তিনটি বছর ধরে যে বুড়ো ডাকপিওন আমার ডাক বাক্সে চিঠি রেখে গেছে, দেখা হলে মিষ্টি করে হাই বলতে যার কখনো ভুল হয়না, তার যদি কাল চাকরীটি চলে যায়, তবে এই ধনতান্ত্রিক সমাজ কি তার ভার নেবে? রাষ্ট্রকে কি সব সময়ই নিতে হবে ডেবিট-ক্রেডিটের ক্যাল্কুল্যাটরের ভূমিকা?
হাঙ্গেরি তো বটেই, সেই সাথে পূর্ব ইউরোপের সাবেক সমাজতান্ত্রিক আরও কটি দেশে যে বিষয়টি আমার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি, তা হল সমাজের সর্ব কর্মক্ষেত্রে নারীদের বিপুল অংশগ্রহণ। ক্রেন অপারেটর, ট্রাম-ড্রাইভার থেকে শুরু করে হাসপাতালের চিকিৎসক- সকল ক্ষেত্রেই নারীদের সগৌরব, সউজ্জল উপস্থিতি। নারীরা এ দেশগুলোতে যতটা স্বাধীনতা আর নিরাপত্তা পায়, পৃথিবীর খুব কম অঞ্চলেই বোধ করি তারা তা পায়। নিজেকে বাঁচাবার জন্যে এ দেশগুলোতে নারীদের সাত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হয়না, পড়তে হয়না নিবিড় গাত্র-আচ্ছাদনকারী পোশাক, বরং নারীর প্রতি সম্মান আর তাদের আত্ম-মর্যাদাবোধ এ দু’ই তাদেরকে মুক্ত রাখে সকল প্রতিকূলতা থেকে।
‘বাস্তবতা’ ব্যাপারটি কেমন যেন কায়ার সাথে অহর্নিশ ধাবমান ছায়ার মতো। হয়তোবা মধ্যগগনে এই ছায়া কখনো লুকোয় কায়ার পদতলে কিন্তু দিন পড়ে এলে আবার সে পিছু নেয়। এই লুকোচুরির খেলা চলতেই থাকে। যে বাস্তবতাকে কটা দিনের জন্যে পেছনে ফেলে এই তিলোত্তমা নগরীতে এসেছিলাম দানিয়ুবের পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রাণ জুড়োতে, এবার যেন সেই বাস্তবতা এসে কানে কানে বলে গেলো, “লুকোচুরির খেলা সাঙ্গ, এবার আমার আবার তোমায় পিছু নেবার পালা”। মায়ের বকুনি খেয়ে সকালের নীল স্বপ্নকে বিদায় জানিয়ে কাক-ডাকা ভোরে নিতান্ত অনিচ্ছায় একদিন যে ভাবে স্কুলের পথ ধরতে হতো, অনেকটা সেভাবেই যেন আজ বাক্স-পেঁটরা গুছিয়ে ফেললাম ফিরতি ট্রেন ধরার আশায়। ইচ্ছে ছিল রবি কবির স্মৃতিধন্য বালাতন লেকটি ঘুরে দেখার। পেস্ট শহরটি বন বন করে ঘুরে দেখলেও তেমন ভাবে দেখা হলনা বুদা অংশটি। তাতে অবশ্য তেমন আক্ষেপ নেই আমার। অদেখা জায়গাগুলো দেখবার ইচ্ছে-ফুলগুলো না হয় জমিয়ে রাখলাম ‘ভবিষ্যৎ’ নামক ফুলদানীতে।
জীবনযুদ্ধ
মন্তব্য
আপনার লেখাটি খুব ভালো লাগলো। শুধু ঘুরাঘুরির বর্ণনা না দিয়ে আপনি চেষ্টা করেছেন প্রাসঙ্গিক ইতিহাস সংস্কৃতি ইত্যাদি তথ্য যতোটা সম্ভব বিস্তারিত যোগ করতে।
সচলায়তনে এটা কি আপনার প্রথম লেখা? তাহলে স্বাগতম।
ব্লগে বড় লেখা দেখলে অনেকে এড়িয়ে যায়, সেক্ষেত্রে লেখা ছোট না করে দুই পর্বে ভাগ করে দিতে পারেন। যদিও সময়াভাবও আমাকে বিরত রাখতে পারেনি। আপনার লেখা সুন্দর। আরো লিখুন।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
লেখা ভালো লাগার জন্যে ধন্যবাদ নজরুল ভাই, না এটা আমার প্রথম লেখা নয়, এর আগে লিখেছি পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া আর লাটভিয়া নিয়ে।
জীবনযুদ্ধ
প্রথম ছবিটার সাইজ একটু ছোট করে দিতে পারেন। নীড়পাতার মার্জিন ছাপিয়ে উপচে পড়ছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
চমৎকার!
..................................................................
#Banshibir.
ইতিহাস, ঐতিহ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, উপস্থাপনা, ভূমিকা, উপসংহার, ছবি- সবকিছু এত সুন্দর করে মেশানো কোন ভ্রমণকাহিনী এর আগে সচলে পড়িনি। তারেক অণু'র প্রথম স্থানটি আপনি ছিনিয়ে নিলেন আমার কাছ থেকে।
অভিভূত করে দিলেন আপনি আপনার মন্তব্যে, ধন্যবাদ আপনাকে
জীবনযুদ্ধ
চমৎকার ভ্রমণকাহিনী! আপনি লেখেনও বেশ, ছবিও তোলেন ভালো!
ছোট একটা পরামর্শ:
ছবির প্রস্থ একই রাখুন। ছবিগুলো পোস্টে একটু বড় করে দিলে ভালো হয়। যেমন, অধিবেশন কক্ষেরগুলোর আরেকটু বড় করে দিলে সৌন্দর্যের তারিফ করতে পারতাম আরও বেশি। লেখার শেষে ফ্লিকার লিংক দিতে পারেন, গিয়ে দেখে আসতে পারব আমরা।
শুভেচ্ছা
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, পরেরবার লেখা পোস্টের সময় ব্যাপারটা মাথায় রাখবো
জীবনযুদ্ধ
খুবই উপভোগ করলাম, ৫ তারা।
ডাকটিকেটের মাধ্যমেই দেশটার সাথে পরিচয় হয়েছিল, যাওয়া হয়েছে আগে, সামনে সপ্তাহে আবার যাচ্ছি। আপনার লেখার অনেক কিছুর সাথেই মিলে গেল অভিজ্ঞতা। লেখা চালু থাক--
facebook
অনুদা আপনার কাছ থেকে ৫ তারা পাওয়া মানে তো অনেক খানি পাওয়া, বলতে পারেন আপনিই আমার দ্রোণাচার্য, আপনার লেখাও চাই বিস্তারিতভাবে
জীবনযুদ্ধ
ছবি লেখা সব মিলিয়ে দারুণ হয়েছে। হ্যাঁ আপনার লেখা আগেও পড়েছি। আপনার নিকটা মনে রাখার মতো কিনা তাই মনে করতে পারলাম। আরও লিখুন। অনেক অনেক লিখুন।
আপনাদের এই ভালো লাগাই আমার পরের লেখার প্রেরণা, ধন্যবাদ
জীবনযুদ্ধ
ছোটবেলার ডাকটিকিট এর অ্যালবামটার কথা মনে পড়ল, আহারে MAGYAR POSTA
ফারিয়ে ফেলেছেন কি? আমি কিন্তু আমার অ্যালবামটাকে এখনো এখনো আগলে আছি, কপাল ভালো মা ওটাকে কাগজওয়ালার কাছে বেচে দেয়নি। তাই কযেক বছর আগে দেশে দিয়ে ওটার হদিস পেয়ে বগলদাবা করে নিয়ে এসেছি
জীবনযুদ্ধ
বাঃ চমৎকার! পড়ে খুব ভাল লাগলো।
অদ্ভূত সুন্দর। মনের সাধ মিটিয়ে ঘুরেছেন বোঝা যাচ্ছে। আর হাঙ্গেরি সম্বন্ধে আপনার জানাশোনার তারিফ করতেই হয়।
এরকম লেখা আজকাল দুর্লভ হয়ে পড়ছে।
চালিয়ে যান
লন্ডনে এক ট্যাক্সিড্রাইভার বলছিলো- আই এম ফ্রম হাঙ্গেরি, অলওয়েজ হাংরি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আপনার হাত ধরে ঘুরে এলাম হাজার বছরের পুরনো শহর। সেই সাথে সমৃদ্ধ লেখায় ইতিহাসের আংশিক।
অনেক ধন্যবাদ
মোজাম্মেল কবির
নতুন মন্তব্য করুন