• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

তীর্থযাত্রী

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৪/১০/২০১৪ - ৩:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তীর্থযাত্রী
- মোঃ আনোয়ার পারভেজ

পাঞ্জাবির পকেটের কাছে এক কোণা ছিঁড়ে যাওয়াতে কুদ্দুস মিয়া খুব দুঃখ পায় মনে। তার দু’টো শার্ট, একটা পাঞ্জাবি। কোনও বিশেষ উপলক্ষ থাকলেই সে পাঞ্জাবিটা পরে। আজকের এটাও একটা উপলক্ষ। তার গন্তব্য শরীফউদ্দীন ইমামের বাড়ি – ৬৪, মদীনাবাগ। অনেক কষ্ট করে সে এই ঠিকানাটা জোগাড় করেছে। শরীফউদ্দীন ইমাম তাদের গ্রামেরই মানুষ, ডগরীবাজার জামে মসজিদে ইমামতি করেছিলেন বহুদিন, কুদ্দুস মিয়া তাকে ছেলেবেলা থেকে দেখে এসেছে। বউ মরে যাওয়াতে আর ছেলের চাকরি হওয়াতে গ্রাম ছেড়ে শরীফউদ্দিন ইমাম ঢাকায় চলে এসেছিলেন। তাও আজ প্রায় বছর চারেক হবে। আর কুদ্দুস মিয়া গ্রাম ছেড়েছে প্রায় দু’বছর হল। তবে গ্রামের সাথে তার যোগাযোগ ছিঁড়ে যায় নি। বউ ছেলেমেয়ে এখনও গ্রামে, একমাস কি দু’মাস বাদে গ্রামে গিয়ে সে টাকা দিয়ে আসে, ঘর গৃহস্থালির খোঁজখবর নেয়। শেষবার কুদ্দুস মিয়া গ্রামে গিয়েছিল দু’মাস আগে। তখন শরীফউদ্দিন ইমামের খোঁজ নিয়েছিল, ঐ বাড়ি মানে মোল্লা বংশের অনেকেই গ্রাম ছেড়েছে অনেকদিন আগে, এখন যারা অবশিষ্ট আছে তারা শরীফউদ্দিন ইমামের ঠিকানা জানে না। তিন চারদিন আগে গ্রামের ছেলে হাফিজ বয়াতির সাথে দেখা, সে শরীফউদ্দিন ইমামের ঠিকানা দিয়েছে। তো হাফিজ বয়াতি যখন এই ঠিকানা খোঁজার কারণ জিজ্ঞাসা করল কুদ্দুস মিয়া বলল, ‘মনের মধ্যে অনেক ধন্ধ। মীমাংসা দরকার।’ হাফিজ বয়াতি এর বেশি জানতে পারে নি। কিন্তু কোনও দ্বিমত প্রকাশ করে নি, কারণ মনের ধন্ধ কিংবা দ্বন্দ্ব যা-ই থাকুক না কেন, মীমাংসার জন্য শরীফউদ্দিন ইমামই সবচেয়ে যোগ্য লোক। বড় পুণ্যবান এই শরীফউদ্দিন ইমাম। গ্রামের বুড়ো প্রৌঢ় এখনও তার কথা বলে।
ঢাকায় দু’বছর থেকেও আর দশটা রিকশাচালকের মত কুদ্দুস এখনও পুরোপুরি শহুরে হতে পারে নি। এর ভূগোল এখনও তার অনায়ত্ত, ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ অজ্ঞাত ও অনধিগম্য, বর্তমান অস্পষ্ট। (এমন অনেক রিকশাওয়ালা আছে যারা এর উত্থান পতনের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞাত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাদের একটা ধারণা আছে পর্যন্ত। কুদ্দুস সে দলের নয়।) কুদ্দুসের বুদ্ধিবৃত্তিক স্তর খুব একটা উন্নত মানের নয়। তা না হলে ঢাকায় এত মসজিদ আর ইমাম থাকতে এবং তাদের কাছে যাওয়ার সুযোগ থাকতে গ্রামের ছেলে শরীফউদ্দিন ইমামের খোঁজ করা কেন? আসলে ইমামের চিন্তাটা যখন মাথায় এসেছে তখন সে শরীফউদ্দিন ইমামকেই বুঝেছে। বিকল্পটা তার মাথাতেই আসে নি। সমস্যার সূত্রপাত তিন মাস আগে। একটা স্বপ্ন থেকে। স্বপ্নটা কিছুটা এলোমেলো। স্বপ্নে সে তার বাবাকে দেখেছে। দেখেছে কুয়াশা ঘেরা একটি ক্ষেত। চাঁদনি রাত। ক্ষেতে তার বাবা বসে আছে আলের ওপর। কোথাও পানির লেশমাত্র নেই। কিন্তু বাবার হাতে একটা বড়শি। ক্ষেতের মধ্যেই ছিপ ফেলে বসে আছে। পাশে একটা ছাগল। ক্ষেতের মুলা চিবুচ্ছে। কুদ্দুস তার কাছে পৌঁছতেই বাবা ছিপ সরিয়ে বলে উঠল, ‘কানাহুলায় ধরছে। পথ খুঁইজা পাইতাছি না।’ এমন সময় কুদ্দুসের ঘুম ভেঙ্গে যায়। এ পর্যন্ত স্বপ্নটা সে দু’বার দেখেছে। প্রথমবার তিন মাস আগে। দ্বিতীয়বার দিন পনের আগে। দ্বিতীয়বার স্বপ্নটা একটু বড় হয়েছে। তার বাবা ছিপ ফেলে দেয়, আল ধরে এগিয়ে যায়, আর বিড়বিড় করে বলতে থাকে, ‘পথ তো একটা বাইর করতেই হইব।’ পেছন পেছন ছাগলটাও এগোতে থাকে। প্রথমবার দেখার পর থেকেই কুদ্দুসের মাথা গরম। স্বপ্নের অর্থটা তার কাছে পরিষ্কার। বাবা তার বিয়ের সময় তিন বাড়ি পরের হনুফা বিবির কাছ থেকে একটা ছাগল ধার করেছিল। সেটা প্রায় সাত আট বছর আগের কথা। ছাগলের টাকা শোধ করার আগেই বাবা মারা যায়। মারা যাবার সময় হনুফা বিবি গ্রামে ছিল না। সুতরাং কবর দেওয়ার আগে শরীফউদ্দিন ইমাম যখন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘কেউ কি মুর্দার কাছে কিছু পাবেন?’ তখন কোনও প্রশ্ন আসে নি। মাস দুয়েক পরেই হনুফা বিবি হাজির এবং কুদ্দুসকে বলে যে, ছাগলের দাম সে ছাড়বে না, কারণ তার সময় ঘনিয়ে এসেছে আর শহরে গিয়ে ভিক্ষা করে খাওয়ার মত শক্তি, অবস্থা ও মেজাজ তার নেই। কুদ্দুস তাকে কথা দিয়েছিল যে ছাগলের দাম সে দিবে এবং কপাল খারাপ বলতে হবে বুড়ির – টাকা পাওয়ার আগেই সে মারা যায়। গ্রামে বেঁচে থাকার সব অবলম্বন ও জমিজিরাত বেহাত হলে কুদ্দুস যখন ঢাকায় আসে তখনও তার মাথায় এই দেনার কথা ছিল, কিন্তু টাকা জোগাড় করে উঠতে পারে নি। উপরন্তু কাকে দিবে, কীভাবে দিবে সে প্রশ্নও মাথায় ছিল। এখন স্বপ্নে বাবার এই হাল দেখায় কুদ্দুস ভেবে নেয় অচিরেই তাকে এই দায় থেকে মুক্ত হতে হবে। একবার নয়, দু’বার সে এই স্বপ্ন দেখেছে। দায় থেকে মুক্তির উপায় জেনে নিতেই শরীফউদ্দিন ইমামের খোঁজ। ছাগলই দিতে হবে নাকি, হলেও সেটার দাম কত হবে, কীভাবে দিতে হবে, কিস্তিতে দেওয়া যাবে কিনা (হলে তার সুবিধা হয়) – এমনি অজস্র প্রশ্নের উত্তর জানতে সে গ্রামের বাড়িতে ইমামের খোঁজ করেছিল। পায় নি, হাফিজ বয়াতির কাছে সন্ধান পেতেই সে আজ সময় নিয়ে শরীফউদ্দিন ইমামের খোঁজে বেরিয়েছে। তার লক্ষ্য – ৬৪, মদীনাবাগ।
কুদ্দুসের রিকশা শ্যামপুরের। থাকেও সেখানে। সকালের পালায় রিকশা চালিয়ে গ্যারেজে জমা দিয়ে ঘুম, বিকেলে দু’টা পুরী দিয়ে নাস্তা সেরে নিয়ে পাঞ্জাবিটা গায়ে চাপিয়ে সায়েদাবাদগামী হিউম্যান হলারে চেপে বসেছে। সায়েদাবাদ নেমে আবার মুগদাপাড়ার হলার। নামার সময় একটা বল্টুতে পাঞ্জাবিটা আটকে যায়, টান পড়তেই ছিঁড়ে যায়। বেশ দুঃখ পায় কুদ্দুস মনে। তার চেয়েও বেশি আশঙ্কা হয় অমঙ্গলের। যাত্রাটা কেমন অশুভ! ঘর হতে বের হওয়ার সময় ঘটনাটা ঘটলে সে হয়ত পরিকল্পনা বাদ দিত, এখন মাঝপথে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। বিশ্বরোড থেকে মুগদাপাড়া হয়ে যে রাস্তাটা নেমে গেছে মান্ডার দিকে তার পথ ধরে কুদ্দুস। মান্ডা যাওয়ার পথে তাকে উত্তর দিকে বাঁক নিতে হবে। এইটুকুই জানে সে। মান্ডায় যাত্রী নিয়ে বেশ কয়েকবার যাওয়া আসা করলেও উত্তরের বাঁকটা ধরে শেষ কবে গিয়েছিল সে কথা মনে করতে পারে না কুদ্দুস। কাঁচা সরু আর বেশ এবড়ো থেবড়ো রাস্তা ছিল সেটা। এখন কি অবস্থা কে জানে! কুদ্দুস এ নিয়েও একটু চিন্তায় পড়ে।
চিন্তায় পড়ার কারণ আছে। গলি, উপগলি তো সাধারণ ব্যাপার, রাজপথেও কুদ্দুস অনেক ভুল করেছে। মাঝে মাঝে তার মনে হয় এত আলো ঝলমল শহরেও কানাহুলার ব্যাপারটা ক্রিয়াশীল, তা না হলে এত ভুল হবে কেন? আর ভুল যে শুধু সে একাই করে তা নয়, তার যাত্রীরাও কত যে ভুল করেছে তার লেখাজোখা নেই। কুদ্দুসের ভুলের ব্যাপারটা স্পষ্ট। সে যখন প্রথমবারের মত কোনও রাস্তা দিয়ে যায় দু’পাশের চিহ্নগুলো – দোকান (দোকানের ধরণ), অট্টালিকা (দেওয়ালের রঙ পর্যন্ত), মাঠ, ডোবা, ডাস্টবিন, টিনের ঘর, ল্যাম্পপোস্ট – এসব টুকে নেয় মনে মনে। পরেরবার ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় চিহ্নগুলো মনে করার চেষ্টা করে কিন্তু যেহেতু চিহ্নগুলো কেবলি পরিবর্তিত হয়, শহরটা স্থায়ী কোনও অবয়ব নেয় নি এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্মৃতি অবিশ্বস্ত ভূমিকা পালন করে সেহেতু সে কেবলি বিভ্রান্ত হয়ে যায়। তাই কোনও জায়গায় আট দশবার যাওয়ার আগে রাস্তার দিক নিশানা পুরোপুরি আয়ত্ত করতে পারে না মোটেও। এসব কারণে পথ চেনাবার ভারটা অনেক সময়ই সে যাত্রীদের উপর ছেড়ে দেয়। যাত্রীরাও যে খুব বড় ভূগোলবিদ তা কিন্তু নয়। যাত্রীদের কারণেও তাকে অনেকবার ভুগতে হয়েছে। মহাখালী না মগবাজার থেকে এক যাত্রী উঠেছিল বঙ্গভবন যাবে বলে, ঘুরতে ঘুরতে শেষ পর্যন্ত আর বঙ্গভবন যাওয়া হয় নি, পরিশ্রান্ত শরীরে কুদ্দুস হাল ছেড়ে দিয়েছিল। কোথায় যে যাত্রীকে নামিয়ে দিয়েছিল তা কুদ্দুস নিজেও জানে না, নামিয়ে বলেছিল, ‘আপনের যা ইচ্ছা হয়, তা-ই দেন।’ যাত্রী তার উপর অবশ্য দোষ চাপায় নি। নামার সময় যাত্রী তাকে বলে ছোটবেলায় সে একবার ঢাকা এসেছিল, মাঝখানে এই বিশাল বিরতি। যাত্রী তাকে কেমন সন্দিগ্ধ সুরে এ প্রশ্নও করেছিল, ‘এখনও কি বঙ্গভবন আগের জায়গায় আছে?’ কুদ্দুস কী উত্তর দিবে! সে তখন ঢাকা শহরে একেবারে নতুন। বঙ্গভবনের নামই শোনেনি। এমনি অসংখ্য বিভ্রান্তির কথা তার স্মৃতিতে জমা আছে, এখনও হচ্ছে। সেক্রেটারিয়েট যাবে বলে এক যাত্রী তাকে নিয়ে গিয়েছিল সংসদ ভবনে, আরেকজন জজ কোর্টের কথা বলে নিয়ে গিয়েছিল হাইকোর্টে। হাইকোর্টের কথা বলে কেউ নিয়ে গিয়েছিল বায়তুল মোকাররম, কেউ বা বেইলী রোড নাটক পাড়ায়। এসবকে ইচ্ছাকৃত সে বলে না, কারণ তার মনে হয়েছে যাত্রীরাও হয়ত বিভ্রান্তির শিকার। তার মতই। অনেক যাত্রীই নেমে বিরক্তি ও হতাশা প্রকাশ করেছে। কুদ্দুসের কেবলি মনে হয় পুরো শহরটাই হয়ত বিভ্রান্তিতে ভরা, যেন একটা গোলকধাঁধা। কোনও কিছুই স্থির নয়, স্থায়ী নয়। দালান ও তার ভেতরের মানুষগুলো কেবলি বাহারি ভূমিকা পালন করে চলেছে।
মুগদা নেমে একটা সিগারেট কিনতে গিয়েও কুদ্দুস নিজেকে দমন করে। গন্ধমুখে শরীফউদ্দিন ইমামের সাথে কথা বলাটা ঠিক হবে কিনা কে জানে। তাছাড়া টাকা তো বাঁচলই। যাতায়াত বাবদ তার খরচ ধরা আছে ২০ টাকা, তার মধ্যে ১০টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়াও কিস্তিতে পরিশোধ গ্রহণযোগ্য হলে প্রথম কিস্তির জন্য ধরা আছে ৩০ টাকা। এখন সব মিলিয়ে তার কাছে আছে ৪০ টাকা। সিগারেটের পেছনে টাকা খরচ না করাতে কুদ্দুস নিজের সংযমের কথা ভেবে মনে মনে খুশি হয়। মুগদাপাড়ার রাস্তা ধরে বেশ কিছুদূর নেমে উত্তরের প্রথম বাঁক ধরে। বাঁকের মুখে একটা পান বিড়ির দোকান, দোকানদার কুপি জ্বালাতে ব্যস্ত। পাশেই তিন চার বছরের একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়েছিল, উদোম গা, মুখে সমানে খিস্তি চালিয়ে যাচ্ছিল। কুদ্দুস এদিক ওদিক তাকায়, কাকে উদ্দেশ্য করে বাচ্চাটা গালি দিচ্ছে খুঁজতে থাকে। উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে খুঁজে পায় না। কুপি জ্বালাতে জ্বালাতে দোকানদার খিকখিক করে হাসছিল। দোকানদারকে কিছু জিজ্ঞাসা করা কুদ্দুসের কাছে সমীচীন বোধ হয় না। সরু কাঁচা রাস্তা আর সিমেন্টের ম্যানহোল দেখে সে সামনে এগিয়ে যায়, দু’পাশে পাঁচতলা, চারতলা বিল্ডিং, একটা টিনের বাসাও আছে। টিনের বাসার সামনে এক মহিলা কপালে বেশ বড় একটা কাজলের টিপ বসানো বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়েছিল, একটু ইতস্তত করে কুদ্দুস মহিলার মুখোমুখি হয়, জিজ্ঞাসা করে, ‘আফা, শরীফউদ্দিন ইমামের বাড়িটা কই?’ মহিলা কুদ্দুসের দিকে সন্দিগ্ধ চোখে তাকায়, তারপর সামনে এগিয়ে গালিগালাজে ব্যস্ত বাচ্চা ছেলেটাকে টানতে টানতে নিয়ে আসে। এরপর কুদ্দুসের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ভেতরে চলে যায়। কুদ্দুস ভাবে এটাই হয়ত শরীফউদ্দিন ইমামের বাড়ি, মহিলা তাকে খবর দিতে গেছে। বাড়ির ভেতর থেকেও বাচ্চাটার গালিগালাজ ভেসে আসতে থাকে। কুদ্দুস দাঁড়িয়ে থাকে। বেশ কিছু সময় কেটে যায়, দু’পাশে আলো জ্বলে উঠে, টিনের ঘর নীরব হয়ে যায়। কেউ বের হয় না। টিনের বাড়ির পর একটা দোতলা বিল্ডিং, তারপর আর কিছু নেই। কুদ্দুস সামনে এগোনোর কোনও মানে খুঁজে পায় না। তখন মনে হয় প্রথমেই দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করে এই কানাগলিতে ঢোকা উচিত ছিল। গলিটায় আরও মানুষের আশায় কুদ্দুস আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে, না পেয়ে দোকানদারের কাছে ফিরে খোঁজ করাটা সমীচীন মনে হয় তার। টিনের ঘর যে শরীফউদ্দিনের নয় – সে ধারণা হয়ে গেছে তার। ফিরতি পথ ধরে সে। দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করে, ‘ভাই, এইহানে শরীফউদ্দিনের বাড়ি কোনটা?’ দোকানদার আরও দু’জন খদ্দের সামলাতে ব্যস্ত, কুদ্দুসের দিকে না চেয়েই বলে, ‘ এইহানে কোনও ইমামের বাসা নাই।’ কুদ্দুসের মাথায় তখন কিছু যুক্তি খেলে যায় – এই গলিতে কয়েকটা চার পাঁচতলা বাড়ি, সবার কথা জানা এই দোকানদারের পক্ষে জানা সম্ভব নয়, আর শরীফউদ্দিন ইমাম যে এখানেও ইমামতি করবেন এমন কোনও কথা নেই। সে আবারও ঐ গলিতে খোঁজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এবার একটু ভয় ভয় করে। মস্তান গোছের কেউ কেউ তার চলাফেরা সন্দেহের চোখে দেখলেও দেখতে পারে। তাহলেই মুশকিল। কুদ্দুসের উপায় নেই, সে গলির মাঝখানটাতে দাঁড়িয়ে থাকে, গৃহাভিমুখী বা বহির্গামী যে কোনও একজন লোকের আশায়। পাঁচ সাত মিনিট অপেক্ষা করার পর মাঝবয়সী একজন টেকো লোককে আসতে দেখে সে জিজ্ঞাসা করে, ‘ভাই, এইহানে শরীফউদ্দিন ইমামের বাসা কোনটা?’ লোকটা কিছুক্ষণ চিন্তা করে, তারপর বলে, ‘কত নম্বর বাড়ি?’ কুদ্দুস বলে, ’৬৪, মদীনাবাগ।’ লোকটা বিরক্ত হয়ে বলে, ‘এইটা মদীনাবাগ না।’ কুদ্দুস হতাশ হয়, ‘মদীনাবাগ কোনদিকে?’ লোকটা কিছু না বলে পকেট থেকে চাবি বের করে, তারপর একটা চারতলা বাড়ির গেটের তালা খুলে ভেতরে ঢুকে যায়। কুদ্দুস প্রধান রাস্তায় ফিরে আসে। তার প্রথমে জানতে হবে – মদীনাবাগ কোনদিকে? উত্তর দিকে বাঁক নিতে হবে, এটাই শুধু জানে সে। প্রথম বাঁক তাকে হতাশ করেছে।
কুদ্দুস মদীনাবাগ যাওয়ার যে পথটা খুঁজছিল সেটা উত্তরের তৃতীয় বাঁক। আধাঘণ্টার মত এদিক ওদিক ঘুরে সে ঐ পথের হদিস পায়। তার আগে দ্বিতীয় বাঁকে খালি খালি বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে। সেটা তার দোষ নয়। বাঁকের মুখে মুচিকে জিজ্ঞাসা করাতে সে গলিটা দেখিয়ে দিয়েছিল। না পেয়ে যখন সে ফেরত আসে তখন মুচি হাসি চাপার চেষ্টা করছিল। মুচিকে কিছু বলা হয় নি। কুদ্দুস ঢাকায় এই দু’বছরের আবাসকালে জেনে গিয়েছে মুখ দেখে কে ক্ষমতাবান আর কে ক্ষমতাহীন তা বিচার করতে যাওয়াটা বোকামি। মুচিকে কিছু বলতে গেলে কোন ঝামেলা বাধবে কে জানে – শেষে তার উদ্দেশ্যটাই ভণ্ডুল হবে। উচিত হবে ঝামেলা এড়িয়ে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া। সুতরাং মুচিকে কিছু বলা হয় না। আরও সামনে গিয়ে কুদ্দুস মদীনাবাগের পথটা খুঁজে পায়। কিন্তু দোকানদার বা পথচারীদের কেউই শরীফউদ্দিন ইমামের নাম ঠিকানা জানে না। ৬৪ নং বাড়ি বলতে সবাই সামনের দিকে দেখিয়ে দেয়। কুদ্দুস কেবলি এগোয়। একবার তার মনে হয় পথটা না তার কুয়াশায় বন্দি বাবার কাছে নিয়ে যায়, সেখানে সে-ও আটকা পড়বে, পিতাকে উদ্ধার করা তো দূরের কথা! শেষে পিতা-পুত্র দু’জনেই মুক্তির জন্য মাথা কুটে মরবে। শেষ মাথায় এসে কুদ্দুস কিছুটা আলোর দিশা খুঁজে পায় যেন। পিঠা বিক্রেতা এক বুড়ীর কাছে কথাটা পাড়তে বুড়ী পাশের একটা ঘর দেখিয়ে দেয়। মুখে বলে, ‘ঐ বাজারের মহাজনরে জিগান। হে কইতে পারব।’ বাজার কোথায়? কুদ্দুস দেখে পানির ওপর বাঁশ কাঠ দিয়ে তৈরি বেশ বড়সড় একটা মাচা, উপরে টিনের ছাউনি। বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি ছোট ছোট বিভাজন। কোন বিক্রেতা বা পণ্যের দেখা নেই। ঢোকার মুখে টিমটিম করে একটা বাল্ব জ্বলছে। আলো কেমন ভূতুড়ে। সামান্য অন্ধকারই দূর করতে পেরেছে সেটা। ঢোকার মুখে দাঁড়ালে ভেতরে বেশ কিছুটা দূরে আরেকটা আলোকিত স্থান নজরে আসে। কুদ্দুস একটু ইতস্ততঃ করে। তারপর বাধা না পেয়ে এগিয়ে যায়। ক্যাঁচক্যাঁচ করে উঠে মাচাটা। দু’পাশে বাঁশের বেড়া। বাজার বলা হলেও এ মূহুর্তে কোনও লেনদেন বা ক্রেতা বিক্রেতা নেই। সম্ভবত এখনও বাজারটা চালু হয় নি। কুদ্দুস মনে মনে এমনটাই ভাবে। একেবারে শেষ ঘরটায় ডানদিকে একটা চৌকি নজরে আসে। চৌকির মাঝ বরাবর উপর থেকে একটা বাল্ব ঝুলে আছে, বাইরে থেকে এর আলোই সে দেখেছিল। সেই আলোয় ছোট একটু ছায়া তৈরি করে চৌকির উপর শুয়ে আছে একটা বানর। ছোট বানর। চোখ বন্ধ। গলায় কড়া, কড়ার সাথে একটা শিকল। কুদ্দুস ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সে তার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ভুলে গেছে। একটু ধাতস্থ হলে ঘরের চারদিকে নজর বুলায়। বামদিকে এক কোণে চারজন লোকের উপর নজর পড়ে। হাতে তাস, চোখ কুদ্দুসের উপর। একজন মাঝবয়সী, তিনজন অল্পবয়স্ক কিশোর। মাঝবয়সী লোকটার মুখে দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল। চোখাচোখি হতেই মুখে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঝুলিয়ে নেয়। একজন কিশোর এগিয়ে আসে, মুখে বলে, ‘কী ভাই, খেলা দেখবেন?’ উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবার বলে, ‘মধু, এ্যাটেনশন।’ তারপর বানরটার কাছে গিয়ে শিকল ধরে একটা ঝাঁকি দেয়, বানরটা হতচকিত হয়ে জেগে উঠে, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। মধু দু’পায়ে ভর করে বাম হাতে শিকলটা ধরে ডান হাতে স্যালুট দেয়, ডান পা’টা একটু ঠুকে দেয়, সাথে সাথে আবার শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিশোর ও বাকি তিনজন হেসে উঠে। দাড়ি-গোঁফ-অলা মাঝবয়সী লোকটা বলে, ‘হালারে গাঁজায় ভালমত ধরছে।’ কিশোর আবার শিকল ধরে ঝাঁকি দেয়, বানর জেগে উঠে, এবারের আদেশ, ‘মধু, হ্যান্ডশেক কর।’ মধু হাত নাড়িয়ে কিশোরের হাত একবার ঝাঁকিয়ে আবার নেতিয়ে পড়ে, চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিশোর এবার কুদ্দুসের দিকে নজর ফেলে, ‘কী, ভাগ্য গণাইবেন?’ বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করে কোণার দিকে এগিয়ে যায়। কুদ্দুসের নজর বানরের উপরই থাকে। বানরটা দু’বার তিড়িক করে লাফিয়ে উঠে। দাড়ি-গোঁফ-অলা লোকটি বলে, ‘মশায় কামড়ায়।’ লাফ দিয়ে বানরটা আবার শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ। কিশোর দু’টো ছোট লাঠি নিয়ে আসে। লাঠি দু’টো কুদ্দুসের হাতে দিয়ে বলে, ‘একটা নিয়ত করেন, এক লাঠিতে হ ধরেন, আরেক লাঠিতে না ধরেন।’ কুদ্দুস লাঠি দু’টো হাতে নেয়। একটু একটু করে তার উদ্দেশ্যের চেতনা তার মধ্যে ফিরে আসতে শুরু করে। সে ডান হাতের লাঠিটায় ধরে – ‘আমি হনুফা বিবির দেনা শোধ করতে পারমু।’ বাম হাতের লাঠিটায় ধরে – ‘পারমু না।’ তারপর লাঠিদু’টো বানরের দিকে বাড়িয়ে দেয়। বানরের চোখ বন্ধ। কিশোর শিকল ধরে ঝাঁকি দেয়, বানর জেগে উঠে, বানরটার জন্য কুদ্দুসের মায়া হয়। বানর চোখ ফেলতে ফেলতে ডান হাতের লাঠিটা ধরে। ধরা অবস্থাতেই চোখ বন্ধ করে ঢলে পড়ে। দাড়ি-গোঁফ-অলা জিজ্ঞাসা করে, ‘কি নিয়ত পুরা অইব?’ কুদ্দুস কিছু বলে না। বানরটাকে দিয়ে আর না খেলানোর জন্য, উপরন্তু নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে চৈতন্য ফিরে আসাতে দাড়ি-গোঁফ-অলাকে ‘ভাই, আমি একজনের খোঁজে আইছিলাম,’ বলতে যাবে, এমন সময় সে উদ্যোগে বাধা আসে। কিশোর তার ডান হাত সামনে বাড়িয়ে বলে, ‘দ্যান ভাই, পঞ্চাশ টাকা দ্যান।’ কুদ্দুস অবাক হয়। চোখ উপরে তুলে বলে, ‘পঞ্চাশ টাকা দিমু ক্যান?’
কিশোর খুব শান্ত স্বরে বলে, ‘খেলা দেখলেন, ভাগ্য গনাইলেন, টাকা দিবেন না!’
কুদ্দুস বলে, ‘টাকা দিতে অইব জানলে তো খেলা দেখতাম না।’ সে অসহায়ের মত এদিক ওদিক তাকায়।
দাড়ি-গোঁফ-অলা বলে, ‘এইডা কোনও ন্যায্য কথা অইলো না ভাই। যা পারেন, দিয়া যান।’
কুদ্দুস সবার মুখের উপর একবার নজর ফেলে। স্থির, ভাবলেশহীন মুখ। সে বুঝে ফেলে এদের মন গলাতে পারবে না। তবু একটা দুর্দমনীয় জেদ কোথা থেকে এসে জুড়ে বসে। সে ঘাড়টা বাঁকা করে বলে, ‘এইডা অন্যায়। আমি খেলা দেখতে আসি নাই। আমি টাকা দিমু না।’ দাড়ি-গোঁফ-অলা লোকটা উঠে আসে। কুদ্দুসের ঠিক সামনে এসে দাঁড়ায়। চোখে চোখ রাখে। কুদ্দুস কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই সে তার গালে চট করে একটা চড় মেরে বসে। কুদ্দুস মূহুর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে পড়ে, একটু পরেই সে ভাবটা কেটে যায়, হাতটা মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। সেটা ঘুরিয়ে দাড়ি গোঁফ-অলার মুখে আঘাত করতে যাবে, তার আগেই কিশোর হস্তক্ষেপ করে, কুদ্দুসের মুষ্টিবদ্ধ হাতটা শক্ত করে ধরে ফেলে। কুদ্দুস নিজে কৈশোর পার করে এসেছে, উপরন্তু অনেক কিশোর দেখেছে, কিন্তু একজন কিশোরের হাতে এত জোর থাকতে পারে সেটা কল্পনায়ও আসে না। কিশোর অপর হাতটা কুদ্দুসের পাঞ্জাবির ছিঁড়ে যাওয়া পকেটটিতে ঢুকিয়ে দেয়। কুদ্দুসের শরীর নাড়িয়ে প্রতিরোধের চেষ্টায় অথবা কিশোরের বিস্ময়কর শক্তির টানে অথবা তাদের যৌথ প্রভাবে পকেটটা এবার পুরোপুরি ছিঁড়ে যায়। কিশোরের মুঠিতে পুরো চল্লিশ টাকাই উঠে আসে, যাতে কুদ্দুসের ফিরে যাওয়ার ভাড়া আছে, দায় মুক্তির সম্ভাব্য প্রথম কিস্তির টাকা আছে। কিশোর টাকাটা বের করে দাড়ি-গোঁফ-অলার কাছে পূজার নৈবেদ্য’র মত মেলে ধরে।
কুদ্দুস সব হারানোর বেদনায় কাতর হয়ে বলে, ‘ভাই, ঘরে যাওইন্যা ভাড়াডা দ্যান।’
দাড়ি-গোঁফ-অলা কিশোরকে জিজ্ঞাসা করে, ‘ঐ কত দিছে?’ উত্তর আসে, ‘চল্লিশ।’ এবার কুদ্দুসের দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করে, ‘থাকেন কই?’
- শ্যামপুর। কুদ্দুস বলে।
- ঐ দশ টাকা ফেরত দে।
কিশোর আদেশ পালন করে।
কুদ্দুস মাথা নিচু করে কোনও রকমে বাইরে চলে আসে। বাইরে বেশ ঠাণ্ডা বাতাস। ভেতরে এত গরম ছিল! কুদ্দুসের অবাক লাগে। কপাল ভিজে গেছে ঘামে। ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা গায়ে মুখে মেখে নেয়। তারপর বিশ্বরোডের বাসস্ট্যান্ডের দিকে পা বাড়ায়। (সমাপ্ত)।
.....................***..................
[অতিথি লেখক]


মন্তব্য

মেঘলা মানুষ এর ছবি

বর্ণনাগুলো ভালো লেগেছে। একটা সময় মনে হচ্ছিল আমিই কুদ্দুসের সাথে সাথে ঘুরছি।
আরও লিখুন।

শুভেচ্ছা :)

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ভালো লাগা।
সাবলীল বর্ণনা।
শুভকামনা। অনিঃশেষ।

দীপংকর চন্দ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

(Y)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

(Y)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নজমুল আলবাব এর ছবি

বর্ণনাতো চমৎকার, গল্পটাও

কল্যাণ এর ছবি

প্যারা ভাগ করে গ্যাপ দিয়ে লিখলে ভাল হত; মানে পড়তে সুবিধা হয়, দেখতেও ভাল লাগে আরকি।

মাঝখানে লিখেছেন

দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করে, ‘ভাই, এইহানে শরীফউদ্দিনের বাড়ি কোনটা?’ দোকানদার আরও দু’জন খদ্দের সামলাতে ব্যস্ত, কুদ্দুসের দিকে না চেয়েই বলে, ‘ এইহানে কোনও ইমামের বাসা নাই।’

দোকানদার কিভাবে বুঝল কুদ্দুস ইমামের বাসা খুঁজছে?

গল্পের নাম তীর্থযাত্রী কেন?

শেষটায় ইমামের বা ছাগলের দাম শোধ করার কি হল?

আরো গল্প দিন (Y)

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

অতিথি লেখক এর ছবি

বলার ভঙ্গিটি সাবলীল। ভাল লাগলো। আসলে প্যারা করে দিলে পড়তে আরাম হয়। শুভ কামনা।
সুলতানা সাদিয়া

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।