ভুমিকাঃ
২০১৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম আমরা এর মধ্যেই জেনে গেছি। শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলণের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যথাক্রমে পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই এবং ভারতের কৈলাস সত্যার্থী। তবে নোবেল শান্তি পুরস্কার এবং এর প্রাপকদের নিয়ে বিতর্ক চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। ২০১০ সালে নরওয়ের আইনজীবী এবং শান্তি আন্দোলনের কর্মী Fredrik S. Heffermehl “The Nobel Peace Prize: What Nobel Really Wanted” নামে একটি বই লেখেন, যেখানে তিনি শান্তি পুরস্কার বিষয়ে আলফ্রেড নোবেলের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন, এবং প্রদত্ত পুরস্কারগুলি এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে কতটুকু (অ)সঙ্গতিপূর্ণ, সে ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। এই পোস্ট মূলতঃ Heffermehl-এর বইয়ের প্রাসঙ্গিক অংশের একটি উপস্থাপনা। প্রথম পর্বে আমি আলোচনা করব নোবেল শান্তি পুরস্কারের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।
আলফ্রেড নোবেল (১৮৩৩-১৮৯৬) এবং তাঁর উইলঃ
১৮৯৫ সালে আলফ্রেড নোবেল তাঁর উইল লেখেন। এই দলিলে তিনি তাঁর সম্পত্তির সিংহভাগ বরাদ্দ করে যান পাঁচটি পুরস্কারের জন্যঃ পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং শরীরতত্ত্ব, সাহিত্য, এবং শান্তি। নোবেল লিখেছিলেনঃ
“The whole of my remaining realizable estate shall be dealt with in the following way: the capital, invested in safe securities by my executors, shall constitute a fund, the interest on which shall be annually distributed in the form of prizes to those who, during the preceding year, shall have conferred the greatest benefit on mankind. The said interest shall be divided into five equal parts, which shall be apportioned as follows: one part to the person who shall have made the most important discovery or invention within the field of physics; one part to the person who shall have made the most important chemical discovery or improvement; one part to the person who shall have made the most important discovery within the domain of physiology or medicine; one part to the person who shall have produced in the field of literature the most outstanding work in an ideal direction; and one part to the person who shall have done the most or the best work for brotherhood between nations, for the abolition or reduction of standing armies, and for the holding and promotion of peace congresses.” (মূল উইলের ইংরেজি অনুবাদঃ নোবেল ফাউন্ডেশন; উদ্ধৃতিঃ Heffermehl, 2010: p. XV; বোল্ড করা অংশ আমার)।
যেহেতু এই পোস্টের বিষয়বস্তু নোবেল শান্তি পুরস্কার, সুতরাং আমরা এই কোটেশনের বোল্ড করা অংশের দিকেই মনোযোগ দেবো।
শান্তি পুরস্কার বিষয়ে নোবেলের উইল এবং এর ব্যাখ্যাঃ
উইল একটা আইনি দলিল; এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এর প্রণেতার দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইচ্ছাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। Heffermehl-র মতে,
“The intention of the testator [= উইল প্রণেতা] is the primary point in the interpretation of wills. The text should be read with one single thought in mind, that is, what the testator intended at the time the words were written…In Nobel’s case,…both the circumstances surrounding the will and its history provide strong evidence that the words used conform to the intention of Nobel. The words adequately reflect the content of the will and are binding for posterity.” (2010: p. 18)
আমরা দেখেছি শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তির যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য নোবেল তিনটা শর্ত নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেনঃ brotherhood between nations, abolition or reduction of standing armies, এবং holding and promotion of peace congresses. লক্ষণীয় যে এই তিন শর্তের মাঝে নোবেল “অথবা” (or) শব্দ ব্যবহার করেননি; এ থেকে আমরা ধরে নিতে পারি তাঁর মতে এই শর্তগুলি একে অন্যের বিকল্প না, বরং তিনি এগুলোকে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বলেই মনে করতেন। আমরা এখন দেখবো এই তিন শর্ত দিয়ে নোবেল কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। আমরা শুরু করব শেষ শর্ত থেকে।
১. শান্তি সম্মেলনের আয়োজন এবং প্রসারণ (Holding and promotion of peace congresses):
উনবিংশ শতক ইউরোপের (এবং বিশ্বের) ইতিহাসে যুদ্ধ এবং সাম্রাজ্য বিস্তারের শতক; ঐতিহাসিক এরিক হবসবমের মতে ১৮৭৫-১৯১৪ সময়কাল ছিল সাম্রাজ্যের যুগ (Age of Empire)। বৃহৎ শক্তিবর্গের যুদ্ধপ্রচেষ্টার বিপরীতে ১৯শ শতকের শেষদিকে ইউরোপে শান্তি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। ১৮৯০র দশকের প্রথমদিকে গড়ে ওঠে International Peace Bureau এবং Inter-Parliamentary Union; সুইৎজারল্যান্ডের বার্নে বেসরকারি পর্যায়ে প্রথম শান্তি সম্মেলন [Peace Congress; সুইডিশ Fredkongresser; Heffermehl, 2010: p. 21] অনুষ্ঠিত হয় ১৮৯২ সালে। নোবেল স্বয়ং ছিলেন Austrian Society for Friends of Peace-র একজন নিবন্ধিত সক্রিয় সদস্য (Heffermehl, 2010: pp. 29-30)। কোন ধরণের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এই সংগঠনগুলি প্রায়ই টাকার টানাটানিতে ভুগতো, এবং নোবেল তাদেরকে নিয়মিত অর্থসাহায্য দিতেন (Heffermehl, 2010: p. 34)। এসব সংগঠন এবং আন্দোলনের প্রধাণ লক্ষ্য ছিল (ক) বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক পরিবর্তন সাধন, এবং (খ) যুদ্ধের পরিবর্তে আইন, আলোচনা, এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সঙ্কট নিরসন।
২. স্থায়ী সামরিক বাহিনীর বিলুপ্তি অথবা আয়তনহ্রাস (Abolition or reduction of standing armies):
সামরিকতন্ত্র এবং যুদ্ধের কবল থেকে রক্ষার মধ্যেই মানবজাতির প্রগতি নিহিত – এটা ছিল তৎকালীন শান্তি আন্দোলনের মূল দর্শন। “স্থায়ী সামরিক বাহিনীর বিলুপ্তি”-র শর্তের মধ্য দিয়ে নোবেল সামরিক বাহিনী সমাজের অংশ – এই ধারণাকেই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন; রাজা-রাজড়ার যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলার বদলে তিনি বেছে নিয়েছিলেন নিরস্ত্রীকরণ। এটা তাঁর ঘোষিত শান্তি পুরস্কারের একটা মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
৩. আন্তর্জাতিক “সৌভ্রাতৃত্ব” [Brotherhood between nations (সুইডিশ folkens förbrödrande; Heffermehl; p. 22)]:
নোবেলের উইলের এই শব্দগুচ্ছ নিয়ে সবচেয়ে বেশী পানি ঘোলা করা হয়েছে। যা কিছু ভাল, তাকেই brotherhood শব্দের আওতায় এনে পুরস্কৃত করার প্রবণতা হালের নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির মধ্যে অত্যন্ত প্রবল। তবে নোবেলের জুতো পায়ে দিয়ে সামগ্রিকভাবে তাঁর উইল নিয়ে চিন্তা করলে এই শব্দের ইন্টারপ্রিটেশনে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। অস্ত্র প্রতিযোগিতা, সামরিকায়ন, এবং যুদ্ধের ভয়াবহতার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন নোবেল। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন অবিশ্বাস, প্রতিযোগিতা, এবং হিংসাবিহীন এমন এক বিশ্বব্যবস্থার যার ভিত্তি হবে জাতিসমূহের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, আইনের শাসন, ঐক্য, এবং সহযোগিতা। সমসাময়িক সুইডেনের পরিস্থিতি brotherhood শব্দের এই ইন্টারপ্রিটেশনকে সমর্থন করে। ১৮৯৩ সালে সুইডেনের জনগণের পক্ষ থেকে দেশের রাজা, মন্ত্রীপরিষদ, এবং আইনসভার কাছে এক পিটিশন জমা পড়ে। আইনের ভিত্তিতে জাতিসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, এবং (আন্তর্জাতিক) বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বাধ্যতামুলকভাবে নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের দ্বারস্থ (mandatory arbitration) হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদন ছিল এই পিটিশনের মূল বিষয়; সুইডেন এবং অন্যান্য সভ্য রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল সামরিক সমাধানের বদলে শান্তিপূর্ণ উপায় উদ্ভাবন ছিল পিটিশনকারীদের অন্যতম দাবী (Heffermehl, 2010: p. 23)। শান্তি পুরস্কার প্রদানের জন্য নোবেল কেন নরওয়েকে বেছে নিয়েছিলেন, সেই কারণ অনুসন্ধান করলেও এই ইন্টারপ্রিটেশনের সপক্ষে যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯শ শতকের শেষদিকে নরওয়ে এবং সুইডেনের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ থাকা নিয়ে বেশ ঝামেলা চলছিল। সেসময় নরওয়ের আইনসভা (Storting) যুদ্ধের বদলে আরবিট্রেশনের সপক্ষে জোরাল অবস্থান নেয়। শান্তি আন্দোলন যে সময় চলত মূলতঃ সদস্যদের চাঁদা এবং জনগণের দানের টাকায়, সেই সময় International Peace Bureau নরওয়ে সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য লাভ করে (Heffermehl, 2010: p. 32)। সুতরাং শান্তিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে নরওয়ে ইতোমধ্যেই পরিচিত ছিল, যে কারণে শান্তি পুরস্কার প্রদানের জন্য নোবেলের পছন্দের রাষ্ট্র ছিল নরওয়ে।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলামঃ (১) শান্তি পুরস্কারের জন্য নোবেল প্রদত্ত তিনটি শর্তকে বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে একযোগে বিবেচনা করতে হবে; এবং (২) নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সেই ব্যক্তি/সংগঠন সবচেয়ে উপযুক্ত যে/যারা নোবেলের ভিশন (যুদ্ধ এবং শক্তিপ্রয়োগের বদলে জাতিসমূহের মধ্যে যুক্তি, চুক্তি ও আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য, অসামরিকায়িত এক আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করেছেন/করছেন। মজার ব্যাপার হল, নোবেল নিজে “শান্তি পুরস্কার” শব্দযুগল ব্যবহার করেননি (এটা পুরস্কার কমিটির উদ্ভাবন); পুরস্কারের উপযুক্ত প্রাপককে বর্ণনা করার জন্য তিনি ব্যবহার করেছিলেন “শান্তির কাণ্ডারি” [Champions of peace (সুইডিশ fredsförfäktare); Heffermehl, 2010; p. 37] । এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেনঃ গণতন্ত্র, মানবাধিকার, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা বিস্তার, এবং পরিবেশ সংরক্ষণও পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে কেন সেগুলি নোবেল শান্তি পুরস্কারের আওতায় আসবে না? আমার মতে, দুইটা কারণেঃ
১. গণতন্ত্র, মানবাধিকার, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা বিস্তার, এবং পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব কেউ অস্বীকার করছে না। কিন্তু এই বিষয়গুলির সঙ্গে সামরিকায়ন এবং যুদ্ধের আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক আছে। সামরিক বাহিনী চরিত্রগতভাবে একটি অগণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান; জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা এড়ানোর জন্য এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ঢাল ব্যবহার করে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা জানি কিভাবে সামরিক বাহিনীর প্রভাব আমাদের দেশে গণতন্ত্রের সুস্থ বিকাশকে বারবার বাধা দিয়েছে। এটা এমনকি বাংলাদেশের ইউনিক সমস্যাও না, এটা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির একটা কমন সমস্যা। পৃথিবীতে সামরিকায়ন, অস্ত্র ব্যবসা, এবং যুদ্ধের পিছে যে পরিমাণ টাকা খরচ করা হয় (২০১৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৭৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; সূত্রঃ SIPRI Yearbook 2014), তার এক ভগ্নাংশও যদি মানবাধিকার, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা বিস্তার, এবং পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে খরচ হত, তাহলে এই সমস্যাগুলির সমাধান অনেক সহজ হত। পৃথিবীর যেসব জায়গায় বর্তমানে যুদ্ধ হচ্ছে এবং নিকট অতীতে হয়েছে (পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ), সেখানে শিক্ষার অবকাঠামো ধ্বসে পড়েছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং যুদ্ধের অজুহাতে মানবাধিকার খর্ব এবং নাগরিক অধিকার হরণ চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। যুদ্ধে পারমাণবিক/ জৈবরাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার পরিবেশ এবং মানুষের ওপর ফেলে দীর্ঘমেয়াদী বিরূপ প্রভাব। মানুষের জীবনে যুদ্ধের এই ইমপ্যাক্ট নোবেলের সময়েও যেমন ভয়াবহ ছিল, এখনও তাই আছে। সুতরাং নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানের বেলায় প্রার্থীর সামরিকায়ন এবং যুদ্ধবিরোধিতা একটা আবশ্যিক ক্রাইটেরিওন হওয়া উচিৎ। এখানে এটাও মনে রাখতে হবে এই বিরোধিতার রকম কী? দৈনিক পত্রিকায় বছরে একটা উপসম্পাদকীয় কলাম প্রকাশ; অথবা কোন বিবৃতিতে ১০০ জন স্বাক্ষরকারীর মধ্যে একজন, কিন্তু সারা বছর চুপচাপ – এ ধরণের ব্যক্তি এই পুরস্কারের যোগ্য প্রাপক নন। শান্তি বিষয়ে নোবেলের সার্বিক চিন্তা এবং কাজ বিবেচনা করলে আমরা যুক্তিসঙ্গতভাবেই মনে করতে পারি “Champion of peace” বলতে নোবেল তাঁকেই বুঝিয়েছিলেন যিনি শান্তি আন্দোলনে সক্রিয়, নিরলস, এবং দীর্ঘমেয়াদী অংশগ্রহণ করবেন; মৌসুমি পাখিদের তিনি বোঝাননি।
২. নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটি প্রার্থী বাছাইয়ের বেলায় নোবেলের উইলকে অত্যন্ত লিবারেলি ইন্টারপ্রেট করেন। Brotherhood between nations-কে তাঁরা সাধারণতঃ ইন্টারপ্রেট করে থাকেন “friendship and kindness between people”-এর মত একটা অপেক্ষাকৃত অস্পষ্ট, সাধারণ ধারণা হিসেবে (Heffermehl, 2010: p. 22)। সেটা তাঁরা করতেই পারেন। তবে একটা জিনিস তাদের মাথায় রাখা উচিৎঃ তাঁরা নোবেলের টাকায় নোবেলের নামে পুরস্কারটা দিচ্ছেন; এখানে নোবেল “শান্তি” বলতে কী বুঝেছিলেন এবং বুঝিয়েছিলেন (অন্য চারটি বিষয়ের তুলনায় শান্তির ব্যাপারে নোবেলের অভিমত ছিল অনেক বেশী সুনির্দিষ্ট), সেটাই গুরুত্বপূর্ণ; পুরস্কার কমিটি কী বুঝলেন, সেটা গৌণ। উইল সাহিত্য না যে কেউ নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে ব্যাখ্যা করবেন; উইল একটা আইনি দলিল, এখানে উইলপ্রণেতার ইচ্ছা এবং বক্তব্যই প্রধাণ। নোবেলের ভিশন এবং উইলের বাইরে যেয়ে পুরস্কার দিতে চাইলে তাঁরা নিজেরা নতুন কোন পুরস্কার চালু করতে পারেন; নোবেলের নাম এবং টাকা এ কাজে ব্যবহার না করাই ভাল।
অনেকে এ কথাও বলেন যে নোবেলের সময়ের তুলনায় বিশ্বপরিস্থিতি পাল্টে গেছে। সত্যিই কি তাই? সামরিক বাহিনীর প্রভাব সমাজ এবং রাষ্ট্রে এখন আরও বেশী গভীর এবং ব্যাপক। অস্ত্রের ধ্বংসক্ষমতা এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা ১৯শ শতকের তুলনায় এখন অনেকগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে; এক সময় যে যুদ্ধ সীমাবদ্ধ থাকতো দুটো সামরিক বাহিনীর মধ্যে, এখন সেই যুদ্ধের প্রধান বলি হয় অসামরিক জনগণ। হ্যাঁ, নোবেলের সময়ের তুলনায় বিশ্বপরিস্থিতি পাল্টে গেছে; পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। অতিবাস্তব্বাদি কেউ এই যুক্তিও দেখাতে পারেন যে যুদ্ধ বিলুপ্ত করে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন একটা পাইপ ড্রিম। এটা হল “জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই”-ধরনের যুক্তি। নোবেল নির্বোধ ছিলেন না; হলে তিনি এত বিশাল সম্পত্তির মালিক হতে পারতেন না। শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ কতটা কঠিন, সে ব্যাপারে তাঁর ভাল ধারণা ছিল। তারপরেও তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন মানুষ হাল ছেড়ে দেবে না; সামরিকায়ন এবং যুদ্ধের বিলুপ্তির জন্য তারা কাজ করে যাবে। তিনি উইলেও লিখেছিলেন “to the person who shall have done the most or the best work” । স্বপ্ন দেখার সময় নোবেল হয়ত চোখ খুলেই রেখেছিলেন, আর একারণেই তাঁর স্বপ্ন গুরুত্বপূর্ণ, এবং এর অ্যাবিউজ মেনে নেয়া সহজ না।
নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির গঠন, নোবেল পুরস্কারের রাজনীতিকিকরণ এবং বানিজ্যিকীকরণ, এবং নোবেলের ভিশন থেকে পুরস্কারের বিচ্যুতি নিয়ে Heffermehl-র আলোচনার সারাংশ পরের পর্বে উপস্থাপনার আশা রাখি।
Emran Huq
সূত্রঃ
Heffermehl, Fredrik S. (2010) The Nobel Peace Prize: What Nobel Really Wanted. Santa Barbara, CA: Praeger.
মন্তব্য
পোষ্টে পাঁচতারা
পরের পর্বের অপেক্ষায়!
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছাপত্রের ব্যত্যয় ঘটলে কি সুইডেন বা নরওয়ের আইনে কোনো প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে?
দেরিতে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃখিত; হারিকেন গনযালোর কারণে ১৩ই অক্টোবর থেকে আমার এলাকায় বিদ্যুৎ/ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। যাই হোক, বই পড়ে যা বুঝলাম, তা হলঃ নোবেল ফাউন্ডেশনের (যার কাজ মূলতঃ হিসাবরক্ষণ এবং পুরস্কারের চেক দেয়া) statute অনুযায়ী পুরস্কারের ব্যাপারে কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত; এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। আলফ্রেড নোবেলের পরিবারের সদস্য, পুরস্কার প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ (ক্যারোলিন্সকা ইন্সিটিউট, সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস, সুইডিশ অ্যাকাডেমি, এবং নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি), এবং সুইডিশ সরকার - সবাই এই statute-কে অনুমোদন করেছে।
Emran
ধন্যবাদ
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
নিয়মিত লিখুন।
..................................................................
#Banshibir.
তথ্যবহুল লেখা
ইসরাত
পুনশ্চঃ হিমুভাইয়ের প্রশ্নটা আমারও
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
৫ তারা অবশ্যই।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
Fredrik S. Heffermehl comment: I was delighted to see Emran Huq´s solid and comprehensive review of my book in a Benhghali paper. I have in my continuing research never found reason to change my clear conclusion of the purpose of Nobel, his intention is the content of the peace prize. But I have found a better way to present it. It is easier to demonstrate and explain the Nobel intention by concentrating on the word "champions of peace" used by Nobel about those who were to receive the prize. To Alfred Nobel this clearly referred to the people working for a world without national military forces. The purpose was to support an idea, not to praise fine people for good acts or intentions. Promoting and supporting Nobel´s approach, his idea on peace by disarmament, is the legally binding task of the Norwegian Nobel committee. Unfortunately today´s awarders believe in military force and allegiance to NATO and the US - the direct opposite of the Nobel approach to peace - the Norwegian awarders are against the purpose of the prize!
নতুন মন্তব্য করুন