গোলাম আজমদের কথা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৭/১০/২০১৪ - ৬:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[justify]গোলাম আজম । আমার মামা । ঠিক আপন মামা নয় । আমার মায়ের কোন রকম এক দুর্সম্পর্কের ভাই । মায়ের চেয়ে বয়সে কয়েক বছরের ছোটই হবে । ছোটবেলায় প্রথম যখন উনাকে দেখি তার গালে তখন চাপ চাপ দাড়ি । খুব একটা যত্ন করে কাটা চাপ দাড়ি নয় । কেমন যেন একটা এলোমেলো ভাব ছিল । ছোটবেলা থেকেই দাড়ি জিনিসটা আমার পছন্দ নয় । তাই প্রথম দেখাতে তাকেও তেমন একটা পছন্দ হয়নি । এতো ছোট বেলার স্মৃতি খুব একটা বেশি স্মৃতি আমার মনে নেই । এই স্মৃতিটা মনে থাকার একটা কারণ আছে । উনি আমাকে কাছে টেনে নিয়ে গালের কাছে টেনে আদর করার চেষ্টা করেছিলেন । আদর তাতে তেমন একটা হয় নি । কেবল উনার শস্রুমন্ডিত মুখটা আমাকে খোঁচাই দিয়েছিল ।

গল্পটা আর এগোবার আগে একটা জিনিস পরিষ্কার করে নেয়া জরূরী । উপরে বর্নিত গোলাম আজম গত ২৩শে অক্টোবর সদ্য ভবলীলা সাংগ করা কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আজম নয় । ইনি ভবঘুরে জাহাজী মানুষ । উত্তাল আটলান্টিক থেকে শুরু করে ভারত মহাসাগর হয়ে ধীরস্থির প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত তার বিচরণ । মানুষের সাতে পাঁচে নেই । অনেক বছর আগে ঘর ছাড়া সেই গোলাম আজম আজ আর নেই । আক্ষরিক অর্থেও নেই । মায়ের কাছে শুনেছিলাম ছোটবেলায় স্কুলে থাকতে গোলাম আজম নামের কারণে হাজারো লাঞ্ছনা সইতে হয়েছে তাকে । বাবা মায়ের রাখা নাম । তাই সয়ে গিয়েছেন অপমান, টিটকিরি আর টিপ্পনি । বছর কয়েক আগের কথা । দুপুরে বাসায় ঢুকে দেখি বসার ঘরে মধ্যবয়স্ক একজন ভদ্রলোক বসে আছেন । মায়ের সাথে কথা বলছেন । আমি ঘরে ঢুকতেই মা পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, "ইনি তোর গোলাম আজম মামা । অনেক গল্প শুনেছিস । অনেক ছোট বেলায় দেখেছিস । তোর মনে থাকার কথা না । "

আমি মনে মনে ভাবলাম দাড়ি দিয়ে ঘষা দেয়ার স্মৃতিটা আমার এখনো মনে আছে ।

আমার ভাবনায় বাধা পড়লো মামার কথায়, " আপা, আমার নাম কিন্তু এখন আর গোলাম আজম না । অনেক সয়েছি ঐ নামের অপবাদ । বদলে ফেলেছি নামটা । আমার নাম এখন মোহাম্মদ আজম । "

আমি আর মা দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম উনার দিকে । মামা এখন ঠিক কোথায় আছেন জানিনা । বহাল তবিয়তেই আছেন হয়তো । গোলাম আজম নামের বোঝাটা ঝেড়ে ফেলে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন দুনিয়া জুড়ে ।

এতো গেলো আমার মামা প্রয়াত (নামে) গোলাম আজমের কথা । এবার আসি সদ্য দেহত্যাগী কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আজমের কথায় । এই দাড়িওয়ালাকেও ছোটবেলা থেকেই চিনি । তবে মানুষ হিসেবে নয়, নরপশু হিসেবে । একদিন স্কুলে যাওয়ার সময় দেয়ালে সাটানো পোস্টারে এই লোকটার ছবির নিচে নরপশু শব্দটা দেখে মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আচ্ছা মা, এই লোকটাকে নরপশু ডাকে কেন ? " মা তখন বলেছিল এই লোকটা নাকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মুক্তিকামী বাংলার মানুষের সাথে পশুর মত আচরণ করেছি । তাই তাকে নরপশু ডাকা হয় । ঐ পোস্টারটা দেখার আনুমানিক দুই দশক পর এই লেখা লেখছি । গত দুই দশকে রাজাকার শব্দটার সাথে কোন মুখ জুড়তে হলে চিন্তায় গোলাম আজমের মুখটাই প্রথম এসেছে ।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকিস্থানি সামরিক বাহিনী বাংলার মানুষের উপর যে পাশবিক অত্যাচারের বুলডোজার চালায় গোলাম আজম সেই বুলডোজারের কন্ডাকটরের ভুমিকা পালন করেছিল । শান্তিবাহিনী, রাজাকার, আলবদর গঠনে মাধ্যমে বাংলার প্রতিটি কোনায় পাকিস্তানী বাহিনীর যাওয়ার পথ সুগম করে দেয় গোলাম আজম এবং তার জামাত-এ-ইসলামের দোশররাই । শুধু পাকিস্তানী বাহিনীকে পথ দেখিয়ে দিয়েই এরা ক্ষান্ত হয়নি । নিজেরাও মেতে উঠেছিল খুন, ধর্ষন, লুট এবং অগ্নিসংযোগে । বাংলার ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু এবং ৪ লক্ষ মা-বোনের ধর্ষনের দায় পাকিস্তানী বাহিনীর চেয়ে এদের তাই কোন অংশেই কম নয় । নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পরও গোলাম আজম গংরা বসে থাকেনি । বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মলোপের জুজুর গল্প সে ফেরী করে গিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে । সর্বসাধ্য চেষ্টা করেছে সদ্য স্বাধীনতা লাভ করা যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশটার সামনে এগিয়ে যাওয়ার গতি রোধ করতে । এই ব্লগে গোলাম আজমের কুকীর্তির ফীরিস্তি দিতে যাওয়াটা অনেকটা চর্বিত চর্বনের মতই । সেদিকে আলোকপাত করাও এই লেখার উদ্দেশ্য নয় ।

গোলাম আজমকে চেনে না এমন লোক হয়তো বাংলাদেশে খুব একটা বেশি নেই । তবে এই জানা আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার প্রকৃতি ভুমিকা জানার মাঝে বিশাল একটা তফাৎ আছে । মানুষ জীবনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে শিক্ষা নেয় ভিন্ন ভিন্ন লেন্সের ভিতর দিয়ে । এই লেন্সটা কখনো স্কুলের পাঠ, কখনো পরিবারের শিক্ষা, কখনো রাজনৈতিক আদর্শ, কখনো ধর্মানুভুতি আবার কখনো বা ব্যক্তিগত নীতিবোধ যা কিনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে আগের চারটির মিশ্রনে । ফাইনাল জাজমেন্টটা আসে এই সবকিছুর মিশেলে । ১৯৭৫ স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সময়ে সামরিক জান্তা, জাতীয়তাবাদী শক্তি, আধা সেকুলার আওয়ামিলীগ, মিলিত জামাতি-জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং হালের সাচ্চা মুসলামানের দল আওয়ামিলীগ ইত্যাদি বিভিন্ন গোষ্ঠির হাতে হাত বদল হওয়া ইতিহাসের শিক্ষার উপর অনেক গুলো লেন্স পড়ে গেছে । গত চার দশকে এদের কেউ আরোপ করেছে ধর্মানুভুতির লেন্স, কেউবা আবার জাতীয় ঐক্যের লেন্স । এতো গুলো লেন্সের ভেতরে দিয়ে আসা গোলাম আজম পরিচয়টি ঝাপসা হতে হতে দেশের অনেকের কাছে এবং সমগ্র বিশ্বের কাছে গোলাম আজম পরিচিত হয় জামাত-এ-ইসলামের নেতা গোলাম আজম হিসেবে । শুভ্র দাড়ি-গোঁফ আর অশতীপর বৃদ্ধ চেহারার আড়ালে ঢেকে যায় খুনী রাজাকার গোলাম আজম পরিচয় ।

- তাই বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকারের উপর ডক্টরেট করা ছাত্রীটিও গোলাম আজমের বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বলে, "গোলাম আজম কে কি কেউ দেখেছে গুলি করে কাউকে হত্যা করতে ?"

- তাই বিচারের প্রমাণিত দন্ডপ্রাপ্ত গোলাম আজম হয়ে যায় আদর্শ ইসলামের সেবক ।

- ১৯৮১ সালে যে বায়তুল মোকাররমে গোলাম আজম্কে জুতা পেটা করা হয়েছিল সেই একই বায়তুল মোকাররমে গোলাম আজমের জানাজায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে ।

এসব দেখে মনে হয় বার বার পথভ্রান্ত আমাদের ইতিহাস শিক্ষা নিয়ে অতি জরূরী ভিত্তিতে ভাববার সময় এসেছে । পারিবারিক এবং ধর্মীয় শিক্ষার গন্ডিতে হস্তক্ষেপ করাটা বেশ কষ্টকর । তবে যে কোন ছেলেমেয়ের জীবনে স্কুল জীবনের শিক্ষাটা একটা দীর্ঘমেয়াদী ছাপ রেখে যায় । স্বাধীনতার আদর্শ বিরোধী জামাত এবং তার সহচর জাতীয়তাবাদী শক্তির পোষা বুদ্ধিজীবিরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে ইতিহাস বিকৃতির । ক্ষমতায় যাওয়া মাত্রই এই শক্তি যে তাদের ইতিহাস বিকৃতির এই ছোবল জাতীয় পাঠ্যসুচীর ওপর বসাবে না তার বিন্দুমাত্র নিশ্চয়তা নেই । পাশাপাশি স্বার্থান্বেষী মিডিয়াহাউজ গুলোও চেষ্টা করে যাচ্ছে কর্পোরেট কনজিউমারিজমের মোড়কে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস গেলাতে । আঈন করে এই ইতিহাস বিকৃতি কতটা নিয়ন্ত্রন করার দাবীটা কতটা বাস্তবসম্মত সেটা আমার চেয়ে আঈন বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন । তবে আঈনের মাধ্যমে পাঠ্যসুচিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করা কতটা সম্ভব কিনা এবং সেটা কতটা কার্যকরী পদক্ষেপ হবে এই ব্যপারে খোলা প্রশ্ন রেখে গেলাম ।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় মনে পড়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমার আগ্রহ, জানার ইচ্ছার একটা আমুল পরিবর্তন আসে ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের একটি ট্যুর । যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর এবং তাদের দোসরদের নির্যাতনের ভয়াবহতার ছবি দেখে, মুক্তিবাহিনীর সাহসীকতার গল্প শুনে নিজেদের রক্তিম গৌরবজ্বল অতীত নিয়ে এক অজানা গর্ববোধ তৈরি হয় । পাশাপাশি তীব্র ঘৃনা তৈরি হয় ধর্মান্ধ হায়নাদের প্রতি । বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের শাখা আছে কিনা জানিনা তবে একটা ভ্রাম্যমান মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর অবশ্যই দেশের নতুন প্রজন্মকে সাহায্য করবে । সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর একবারের জন্য হলেও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে ভ্রমন নিশ্চিত করা উচিৎ ।

শেষকথা ঃ

ছোটখাটো একটা দায়সারা ব্লগ লেখার উদ্দেশ্যে বসেছিলাম । কথায় কথায় অনেক দুর চলে এলাম । শেষ দুটো কথা বলে ইতি টানছি । আমার মামা গোলাম আজম তার গোলাম আজম নামের লজ্জার বোঝা ঝেড়ে ফেলতে পেরেছিলেন । এই নামের গ্লানীটা তার অজান্তেই তার উপর চাপিয়ে দেয়া । তাও ঝেড়ে ফেলতে পেরেছেন । আমাদের মাঝে যারা জেনে বুঝে গোলাম আজম এবং তার আদর্শের গ্লানী গায়ে টেনে নিয়েছে তারা এই বোঝা ঝেড়ে ফেলতে পারবে কিনা জানি না । তবে তাদের এই বোঝা টানার মুল্য আগামীদিনের বাংলাদেশকে দিতে হবে । আমাদের এখন নিশ্চিত করা প্রয়োজন এই আদর্শের ভুত যেন নতুন প্রজন্মের কারো ঘাড়ে না চাপে ।

==============================
দস্যু ঘচাং ফু

[/justify][/justify]


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

''তবে আঈনের মাধ্যমে পাঠ্যসুচিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করা কতটা সম্ভব কিনা এবং সেটা কতটা কার্যকরী পদক্ষেপ হবে এই ব্যপারে খোলা প্রশ্ন রেখে গেলাম ।''

আপনার সাথে আরো একটা ব্যাপার যোগ করতে চাই যা সচলে আগেও লিখেছি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস খুব বেশি নেই বইগুলোতে, যাও আছে, সেটা বিটিভির সংবাদের মতো করে লেখা। পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস জানানোই হয় নি। বঙ্গবন্ধুর নাম আছে, বীরশ্রেষ্টদের নাম আছে, কিন্তু সুকৌশলে গোলাম আজম , সাইদিদে নাম পর্যন্ত এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। জামায়াতকে চিনিয়ে দেয়াটা পাঠ্যপুস্তকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে মনে করি।

ভাবনার ব্যাপারটা লিখছি। অনলাইন কমিউনিটির আওতায় কি প্রাতিষ্ঠানিক রূপে স্কুল মাদ্রাসায় এলাকায় ভ্রাম্যমান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিচালনা সম্ভব মনে হয় আপনার বা এমন কোন উদ্যোগ কি চোখে পড়েছে ?

রাজর্ষি

অতিথি লেখক এর ছবি

বঙ্গবন্ধুর নাম আছে, বীরশ্রেষ্টদের নাম আছে, কিন্তু সুকৌশলে গোলাম আজম , সাইদিদে নাম পর্যন্ত এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে ।

সহমত ।

নব্বই এর দশকে সমাজবিজ্ঞান বইয়ে ইতিহাসের পাতায় মুক্তিযুদ্ধের একটা দায়সারা গোছের বিবরন ছিল । পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে এখকার বাংলাদেশ ও বিশ্ব বইটির অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেনীর বই এর পাতা ঘেটে জামাত-এ-ইসলামী নামটা ২/১ জায়গায় উদ্ধার করা গেল । শান্তিবাহিনী গঠনে মুসলীম লীগ এবং অন্যান্য দলের পাশাপাশি জামাতের কথা বলা আছে । তবে গোলাম আজম, নিজামী কিংবা সাঈদীর মত রাজাকারের ভুমিকার কথা কোথাও উল্লেখ করা নেই । এরা সকলেই এখন দন্ডপ্রাপ্ত আসামী । এখন তো অন্তত এদের অপরাধের ফিরিস্তি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করায় কোন নৈতিক বা আঈনী বাধা থাকার কথা না ।

বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধর্মান্ধ গোষ্ঠির অনুপ্রবেশ প্রতিটি পরিবারের অন্দরমহল পর্যন্ত । দাড়ি গোফ আর ধর্মের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই শয়তানদের আসল চেহারাটা নতুন প্রজন্মের মানসপটে চিরদিনের জন্য গেথে দেয়ার জন্য স্কুলের গন্ডিই সবচেয়ে আদর্শ বলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি ।

১। http://www.nctb.gov.bd/TextBook_2013/English_Version/Class-8/PDF_File_BGS-8.pdf
২। http://www.nctb.gov.bd/TextBook_2013/Eng.ver-2013-PDF/Class-9/Bangladesh%20&%20global%20studies%20.pdf

==============================
দস্যু ঘচাং ফু

মেঘলা মানুষ এর ছবি

এরকম 'ঝরঝরে' ভাষায় চিন্তা করার শক্তি সবার মধ্যে আসুক। আর লেন্সগুলো ঘষে মেজে পরিষ্কার করা দায়িত্বও আমাদের সবার।

শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

চিন্তা বা চিন্তা করার জন্য শক্তি তৈরি হওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপুর্ন শর্ত আছে । জীবনযাপনের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতেই দেশের একটা বড় অংশের মানুষ হিমসিম খায় । তবে মুল আশংকার বিষয়টা সেখানে নয় । অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে সেদিকে উন্নতি হবে । আশংকার বিষয়টা আমাদের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠিকে নিয়ে । যাদের আছে (উন্নত) শিক্ষা, ভালো মানের বই / লাইব্রেরী একসেস ইত্যাদি থাকার পরও একটা একটা গুরুত্বপুর্ন বিষয়ের ( অন্তত আমার কাছে মনে হয় ) অভাবে চিন্তা করার শক্তি হয় কখনো তৈরীই হয়না বা হারিয়ে ফেলে । সেই গুরুত্বপূর্ন বিষয়টা হলো মুক্তচিন্তা করার সময় বা সুযোগ । এই জিনিসটা না থাকার ফলে বাকি গুলো কোন কাজে আসে না । এই জিনিসটার অভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হয় কেবল নাম্বার তুলে ভালো চাকরী পাবার সিড়ি । আর গল্পের বইয়ের পাতায় পড়া ভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা, মুল্যবোধের, দর্শনের বর্ননা বই এর মলাটের ভেতরের এক রুপকথার জগৎ হিসেবেই থেকে যায় । আমরা যা পড়ি বা করি আমাদের দুদন্ড ফুসরত নেই তা নিয়ে ভাবার । ইংরেজীতে একটা কথা আছে, "সেলফ রিফ্লেশন" বলে । যুতসই কোন বাংলা খুজে পাচ্ছি না এই মুহুর্তে । প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে বা নিদেনপক্ষে প্রতিমাসে অন্তত একবার যা করলাম, যা বললাম, যা শুনলাম, যা দেখলাম তার খুটিনাটি বিচার করা । নিজের বিশ্বাস এবং চিন্তাকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাড়া করানো । আমাদের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এই ব্যপারটা থেকে দিনে দিনে দুরে সরে যাচ্ছে ।

প্রথমে আশংকার কথা বলেছিলাম । আশংকাটা হলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা লোকজনের উন্নয়ন হবে । তারা শিক্ষিত মধ্যবিত্তের কাতারে উঠে আসবে । কিন্তু তারা অনুসরণ করবে যারা অগ্রজ, অর্থাৎ বর্তমান শিক্ষিত মধ্যবিত্তের ধারা । সেই ধারাটার খুব একটা সুবিধাজনক গতিপ্রকৃতি দেখছি না । সেইটাই আশংকা ।

==============================
দস্যু ঘচাং ফু

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের পাঠ্যপুস্তকের ন্যায় আপনার লেখার শিরোনামেও এ মারুজা (মানুষ রূপী জানুয়ার)‘র আসল রূপটি প্রতিফলিত না হওয়াতে আমি নিজেও লেখাটি পড়তে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছিলাম। শিরোনাম পড়ে মনে হয়, গোলাম আযম, রবীন্দ্র-নজরুল বা আইনস্টাইনের মতো কোন প্রাতঃ স্মরণীয় ব্যক্তি এবং আপনি তার কথা শুনাতে যাচ্ছেন। এ মারুজা‘র নামের আগে নরপশু বা নরঘাতক জাতীয় কোন বিশেষণ এবং ‘কথা’ শব্দটির পরিবর্তে ‘কুকীর্তি’ জাতীয় কোন শব্দ ব্যবহার করলে শিরোনামটি আরও যুক্তিযুক্ত হতো বলে আমার মনে হয়। উদাহরণ স্বরূপ এটি হতে পারতো ‘নর পিচাশ গোআ‘র কুকীর্তি‘। সচলায়তনে গোআ‘র পুরোনাম ব্যবহার করার আমি ঘোর বিরোধী। আমার মনে হয় এটা করে আমরা পক্ষান্তরে তার প্রচার করছি। আমি মনে করি ‘ছাগু‘ নামটি‘র মত গোআ‘র জন্যও একটি নামের বিষয়ে একমত হওয়া দরকার যেটি, আমরা গোআ‘র বিষয়ে কোন কারণে লিখতে হলে ব্যবহার করবো। আমি জানি, এর নরপশুর বিষয় ছাড়া তামাম দুনিয়ায় লিখার জন্য আরও অনেক বিষয় আছে। কিন্তু এটাও সত্য, এদের কুকীর্তির বিষয় জানানোর ও বিশ্লেষণ করা সহ নানা কারণে না চাইলেও অনেক সময় এর নাম এখানে লিখতে হবে। আশা করি, শীগ্রই আমরা এ নরপশুকে বিবৃত করার জন্য একটি ‘ছাগু‘ মানের যুৎসই নাম পেয়ে যাব।

- পামাআলে

অতিথি লেখক এর ছবি

বরং গোলাম-আজম শব্দটাকে নরপশুর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করাটা বেশি কার্যকর । যেমন মীরজাফর প্রচলিত বিশ্বাসঘাতকের প্রতিশব্দ হিসেবে ।

উদাহরন ঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নৃশংস কর্মকান্ডের জন্য তাকে গোলাম-আজম খেতাব দেয়া যেতে পারে ।

==============================
দস্যু ঘচাং ফু

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের পাঠ্যপুস্তকের ন্যায় আপনার লেখার শিরোনামেও এ মারুজা (মানুষ রূপী জানুয়ার)‘র আসল রূপটি প্রতিফলিত না হওয়াতে আমি নিজেও লেখাটি পড়তে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছিলাম। শিরোনাম পড়ে মনে হয়, গোলাম আযম, রবীন্দ্র-নজরুল বা আইনস্টাইনের মতো কোন প্রাতঃ স্মরণীয় ব্যক্তি এবং আপনি তার কথা শুনাতে যাচ্ছেন।

হুমমম । মেনে নিলাম । গোলাম আজম নামটার আগে এখন থেকে নরপশু বাধ্যতামুলক ভাবে ব্যবহার করবো ।

সচলায়তনে গোআ‘র পুরোনাম ব্যবহার করার আমি ঘোর বিরোধী

এই ব্যপারে দ্বিমত পোষন করি । নরপশু গোলাম আজম তার স্বনামেই ঘৃনিত হওয়া উচিত । হিটলার যেমন তার স্বনামে ঘৃনিত এবং নিন্দিত তেমনি । ছদ্মনাম ইতিহাসে পাতায় হারিয়ে যাওয়ার একটা ভয় থাকে ।

==============================
দস্যু ঘচাং ফু

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার প্রস্তাবটি মন্দ নয়। তবে একটি বিষয় এখানে ববেচনার দাবী রাখে। ইউরোপে কেউ তাদের সন্তানের নাম এডলফ্ বা হিটলার কোনটিই রাখে না। এটা দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের এখানে আপনি অগনিত ছাগু পাবেন যারা তাদের সন্তানের নাম গোলাম বা আযম এমনকি পুরো নাম গোলাম আযমও রেখেছে, রাখে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে। আর ‘মীর‘ এবং ‘জাফর’ বা মীর্জাফর এর বেলাতেও ঠিক একই অবস্থা। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের বহুল আলোচিত প্রায় আজীবন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীরজা ফকরুল। অবশ্য তার দলের ছাগু প্রীতির কারণে আজকাল অনেকেই তাকে মীরজাফরুল ইসলাম বলেই ডাকে।
তবে এটা উল্লেখ না করলে অন্যায় হবে যে, আপনার লেখা কিন্তু আমার ভাল লেগেছে। চালিয়ে যান। সচলে চোখ রাখবো পরের লেখার জন্য।
আর আপনার যুক্তি পুরোপুরি গ্রহন করলে তো সচলে ছাগু না লিখে ছাগু দলের পুরো নামই লিখতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আঈন করে এই ইতিহাস বিকৃতি কতটা নিয়ন্ত্রন করার দাবীটা কতটা বাস্তবসম্মত সেটা আমার চেয়ে আঈন বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন । তবে আঈনের মাধ্যমে পাঠ্যসুচিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করা কতটা সম্ভব কিনা এবং সেটা কতটা কার্যকরী পদক্ষেপ হবে এই ব্যপারে খোলা প্রশ্ন রেখে গেলাম ।

প্রশ্ন থাকতেই পারে। ব্যাক্তিগতভাবে আমার মনে হয় আইন একেবারে না থাকার চেয়ে থাকা ভাল। একদিনে আইন মানা শুরু হবে সেই আশা ইউটোপিয়া ছাড়া করা যায় না। কিন্তু আইনটাই যদি না থাকে তবে প্রকৃত অর্থে রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়া ছাড়া কিচ্ছু করার থাকে না।

আমাদের এখন নিশ্চিত করা প্রয়োজন এই আদর্শের ভুত যেন নতুন প্রজন্মের কারো ঘাড়ে না চাপে ।

সেটাই আসল কথা চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ব্যাক্তিগতভাবে আমার মনে হয় আইন একেবারে না থাকার চেয়ে থাকা ভাল ।

সহমত ।

ভয় হয় আইনের প্রয়োগ নিয়ে । বাংলাদেশে আইসিটি আইনে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করে ব্লগ লেখার অপরাধে ব্লগার গ্রেফতার হয় আর ফারাবী হত্যার হুমকি দিয়ে ঘুরে বেড়ায় ।

এই ব্যপারে আইন প্রয়োগের আগে বিশদ আলোচনা দরকার । আইনের ফাঁকফোকর গলে বিকৃতির সুযোগ যেন না থাকে সেই ব্যপারে পাশাপাশি ক্ষেত্রটাও সুনির্দিষ্ট ভাবে নির্ধারণ করা দরকার ।

দস্যু ঘচাং ফু

==============================
চৈনিক নই, আমি নিতান্তই ভেতো বাঙালী,
নেই কোন তলোয়ার, কি-বোর্ড খানাই সম্বল খালি;
জামাত দেখিলে তেড়েফুড়ে তাহাতেই ঝড় তুলি ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।