প্রথম আলোর ময়নাতদন্ত: জাতীয় চার নেতার জেলহত্যা বার্ষিকীর সংবাদ উপস্থাপন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৪/১১/২০১৪ - ১২:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ তেসরা নভেম্বর ২০১৪ তারিখে জাতীয় চার নেতার জেলহত্যা বার্ষিকীতে প্রথম আলোর প্রথম ও শেষ পাতার আধেয় বিশ্লেষণ করা হলো। যেখানে দেখা যাচ্ছে- প্রথম আলোর প্রথম পাতায় আটটি সংবাদ ও তিনটি বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। শেষের পাতায় সাতটি সংবাদ ও সাতটি বিজ্ঞাপন (প্রথম আলোর নিজেদের বিজ্ঞাপন ৫টি) ছাপা হয়েছে। এই জাতীয় দৈনিকটিকে আমরা দেখি বছরজুড়ে জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতিতে সৎ, যোগ্য, দক্ষ নেতৃত্বের খোঁজ করতে। রাজনীতির খোলনলচে পালটানোর আহ্বানও শোনা যায় এদের সম্পাদকীয় ভাষ্যে। দেশের সুশাসন ও গণতন্ত্রকামী একটি পত্রিকার জন্য এই আকাঙ্খা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু, তাদের সেই আকাঙ্খা মার খায়, যখন দেখি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা চার জাতীয় সৎ, যোগ্য, দক্ষ নেতৃত্বের নিষ্ঠুর হত্যাবার্ষিকীর দিন পেছনের পৃষ্ঠায় দায়সারা সিঙ্গেল কলাম ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়।


প্রথম পাতার সংবাদের উপস্থাপন:
■ প্রথম পাতা-প্রধান সংবাদ-১: চার কলাম [জামায়াত-মীর কাসেম]
■ প্রথম পাতা-দ্বিতীয় প্রধান সংবাদ-২: চার কলাম [বিদ্যুৎ বিপর্যয়]
■ প্রথম পাতা-সংবাদ-৩: দুই কলাম [বিদ্যুৎ বিপর্যয়]
■ প্রথম পাতা-সংবাদ-৩: দুই কলাম [জামায়াত- কামরুজ্জামান]
■ প্রথম পাতা-সংবাদ-৪: দুই কলাম [জামায়াত-হরতাল]
■ প্রথম পাতা-সংবাদ-৫: দুই কলাম [শিক্ষা- অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ]
■ প্রথম পাতা-সংবাদ-৬: দুই কলাম [খেলা-সিরিজ জয়ের আগাম ম্যাচ রিপোর্ট]
■ প্রথম পাতা-সংবাদ-৭: এক কলাম [আয়কর বিবিরণী]
■ প্রথম পাতা-সংবাদ-৮: এক কলাম [ওয়াগায় নিহত]

প্রথম পাতার বিজ্ঞাপনের উপস্থাপন
■ প্রথম পাতা- বিজ্ঞাপন-১: সোলাস: তিন কলাম [ব্র্যাক ব্যাংক]
■ প্রথম পাতা- বিজ্ঞাপন-২: সেমি সোলাস: তিন কলাম [সিএফটিএম]
■ প্রথম পাতা- বিজ্ঞাপন-৩: সেমি সোলাস: তিন কলাম [এসবিএসি ব্যাংক]

শেষের পাতার সংবাদের উপস্থাপন:
■ শেষ পাতা-প্রথম আলোর এজেণ্ডা সংবাদ-১: তিন কলাম [প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী]
■ শেষ পাতা-সংবাদ-২: চার কলাম [হুজি]
■ শেষ পাতা-সংবাদ-৩: এক কলাম [জাতীয় চার নেতা]
■ শেষ পাতা-সংবাদ-৪: এক কলাম [বিদ্যুৎ বিপর্যয়]
■ শেষ পাতা-সংবাদ-৫: দুই কলাম [ঢাবি ছাত্রলীগ আটক]
■ শেষ পাতা-সংবাদ-৬: এক কলাম [হালিশহরে সংঘর্ষ]
■ শেষ পাতা-সংবাদ-৭: দুই কলাম [সাগর-রুণী]

শেষ পাতার বিজ্ঞাপনের উপস্থাপন:
■ শেষ পাতা-প্রথম আলোর এজেণ্ডা বিজ্ঞাপন-১: তিন কলাম [পাঠকমেলায় আমন্ত্রণ]
■ শেষ পাতা-প্রথম আলোর এজেণ্ডা বিজ্ঞাপন-২: তিন কলাম [নকশা- প্রকাশিতব্য]
■ শেষ পাতা-প্রথম আলোর এজেণ্ডা বিজ্ঞাপন-৩: তিন কলাম [ই-প্রথম আলো পড়ুন]
■ শেষ পাতা-প্রথম আলোর এজেণ্ডা বিজ্ঞাপন-৪: এক কলাম [কিআ-প্রকাশিতব্য]
■ শেষ পাতা-প্রথম আলোর এজেণ্ডা বিজ্ঞাপন-৫: দুই কলাম [প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী-প্রকাশিতব্য]
■ শেষ পাতা-প্রথম আলোর এজেণ্ডা বিজ্ঞাপন-৬: দুই কলাম [প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী-প্রকাশিতব্য]
■ শেষ পাতা-বিজ্ঞাপন-৭: চার কলাম [মানারাত ইন্টাননেশনাল স্কুল এন্ড কলেজ]

গতবছর এই চিত্র ছিলো আরো ভয়াবহ। গতবছর এই দিনে প্রথম আলো প্রথম ও শেষ পাতা বিশ্লেষণে দেখা গেছে জাতীয় চারনেতার জেলহত্যার সংবাদ ও ছবি পেছনের পৃষ্ঠায় সিঙ্গেল কলামে আল্লামা শফির নিউজের তলায় আর বিজ্ঞাপনের চিপায়-চাপায় ছাপা হয়েছিলো। শুদ্ধবাদী রাজনীতির চর্চার পরামর্শ যারা দেন; তারাই আবার জাতির পরীক্ষিত চার নেতার জেলহত্যার সিঙ্গেল কলাম সংবাদ ও ফটো দিয়ে জামাত-বিএনপিকেই দিনের প্রধান খবরে প্রথম পাতা ভাসিয়ে দেন। এই ধারাবাহিকতা চলতেই আছে!

সংবাদপত্রের প্রাণ ‘সংবাদ’ বা ‘খবর’। একটি সংবাদ প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার জন্য সংবাদ ছাড়াও তাকে বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নিতে হয়। কিন্তু সংবাদের চাইতেও বিজ্ঞাপনের উৎকট উপস্থিতি মাঝে মাঝে গা জ্বালা ধরে। সাংবাদিকতার বিদ্যায়তনিক চর্চায় বিজ্ঞাপন আধিক্যকে প্রশ্রয় দেয়ার জন্য অনুৎসাহিত করা হয়। কারণ, বিজ্ঞাপন আধিক্যের কারণে পাঠককে প্রতারণায় ফেলা হয় বলে ধরা হয়। পত্রিকার প্রাণ তো পাঠকরা। তাই পাঠকদের স্বার্থচিন্তা আগে। কিন্তু বিজ্ঞাপনের আয় থেকে যখন একটি পত্রিকার টিকে থাকার প্রশ্নটি জড়িত সুতরাং বিজ্ঞাপন স্বার্থটিও দেখতে হয়। কিন্তু কোন পত্রিকায় যদি আশি ভাগই বিজ্ঞাপনে ঠাসা থাকে এবং তার মাঝে নিজেদের পত্রিকারই বিজ্ঞাপন থাকে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ, তবে সংবাদ সেখানে গৌন হয়ে পড়ে।


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

নিজেদের হাউসের বিজ্ঞাপণ দিয়ে পাতা ভর্তি করা মানে হলো ওগুলো আসলে ফিলার। ম্যাটার কম ছিলো। পাতা ভরা হয়েছে। অতএব জায়গা ছিলো না তাই চার নেতার খবরের ট্রিটমেন্ট ছোট হয়েছে এই যুক্তি ধোপে টিকবে না।

টিকা
সচলে পোস্টের সাথে নাম লেখাটা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি পরবর্তীতে জিনিসটা মাথায় রাখবেন। সচল রাখুন, সচল থাকুন।

প্রজাবাহিনী এর ছবি

ধন্যবাদ, পোস্ট লেখার সময় বারবার খেয়াল করেছি কিন্তু লেখকের নাম অপশনটি পাইনি।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

প্রথম আলোসহ বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো নিয়ে গবেষণার দরকার আছে। এরকম গবেষণা থাকলেই এদের প্রোপাগান্ডাগলো ধরতে সুবিধা হতো। এদের উদ্দেশ্যের সাথে না মিললে অনলাইন-অফলাইন কোনো ভার্সনেই নিউজ হাইলাইট করে না।

বিদ্যুৎ ব্যবস্থার যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে এমনভাবে শিরোনাম দিয়েছে, যেন সরকারকে দোষারোপ করার একটা ছুঁতো পাওয়া যায়। নিউজের ভিতরে এরকম স্ট্রং দাবির সাপোর্টিং তেমন কোনো তথ্য নাই। বুয়েটের ৩ জন শিক্ষকের রেফারেন্স দিয়া বলেছে, তারা একটা প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলো আইল্যান্ডিং করার জন্য। বুয়েট ইইইর শিক্ষকরা বাস্তবে এ বিষয়ে কতোটুকু দক্ষ, সেটা নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে। আর যে ৩ জন শিক্ষকের নাম এসেছে - আবদুল হাসিব চৌধুরি, শাহনেওয়াজ, কামরুল আহসান - এরা শিক্ষক হিসেবেও সাবস্ট্যান্ডার্ডের। আবদুল হাসিব চৌধুরি অবশ্য আপ্রাণ চেষ্টা করে; কিন্তু ঠিকমতো গুছিয়ে পড়াতে পারে না। শাহনেওয়াজ বুয়েটের সবচেয়ে বদমেজাজি শিক্ষকদের একজন, যে ছাত্রছাত্রীদের সাথে ঠিকমতো কমিউনিকেট করতেই পারে না। আর কামরুল আহসানও বদমেজাজি প্লাস যা পড়ায়, সে সম্পর্কে সে নিজে হয়তো বুঝে; কিন্তু ছাত্রছাত্রীদেরকে বুঝাতে পারে না।

অবশ্য শিক্ষক হিসেবে তারা খারাপ হলেও বিদ্যুৎ ডিস্টিবিউশন সম্পর্কে ভালো জানবে না, এমন না। কিন্তু এই বিষয়ে তাদের প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা কতোটুকু, সেটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। বুয়েটের ইইই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের ইন্ডাস্ট্রি কানেকশন, আমার জানামতে, খুবই দুর্বল। এদের মতামতের চাইতে যারা ওই ফিল্ডে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তাদের মতামত বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এক কলামে চার নেতার ছবিকে যেভাবে চেপেচুপে বসানো হয়েছে, সেটা দেখে প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আনু-আল হক এর ছবি

চলুক গতবছর আমরা এরকম একটা কাজে হাত দিতে চেয়েছিলাম: প্রথম আলো’র কন্টেন্ট, ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপন এবং আপোসনীতি। পাকিস্তান ক্রিকেটারদের আজাইরা খবরও কী পরিমাণে ছাপা হয় সেটাও একটা সেকেন্ডারি অবজেকটিভ ছিলো। পরে সময়- এবং জনবলাভাবে করা হয়নি। আমরা এমনকি পত্রিকার কাটিং আর্কাইভ করে এমন সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলাম যাতে বেশ কয়েকবছর ধরে প্রকাশিত সংবাদের একটা ইনফোমেট্রিকসহ অ্যানালাইসিস দেয়া যায় বগ স্যাম্পল নিয়ে। আফসুস, সেইটা হইলো না। কেউ করলে কাজের কাজ হবে বলে মনে করি।

----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন

শেহাব এর ছবি

কাভারেজের এই কোয়ান্টিটেটিভ এনালিসিসের দরকার আছে।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দুতিনদিন আগের একটা স্ট্যাটাস এখানে জমা থাকুক।

হামিদ মীর নামক এক পাকিস্তানি ভাড়ের লেখা প্রথমালোর সম্পাদকীয় পাতায় মোটামুটি আধাপৃষ্ঠাজুড়ে একসময় নিয়মিত প্রকাশিত হত। সাকুল্যে পাঁচছয় জনের জামাতের ভুল বানানে ব্যানার লেখা মানব বন্ধনের ছবি প্রকাশিত হয়েছে সম্পাদকীয় পাতায়, সেটাতেও কাজ না হওয়ায় উপসম্পাদক আনিসুল হক সাহেব নিজে সেই ছবি তার ওয়ালে শেয়ার করেছিলেন। পাকিস্তানিদের রিকন্সিলিয়েশানের খবর প্রথমালো সম্পাদকীয় কলামে বড় বড় হরফে ছাপে, আর পাকিস্তানে যখন রাজাকারদের বিচারের নিন্দা জানানো হয় সেই খবর ছাপার জন্যে একটা ভাল জায়গা তারা বের করতে পারে না। অথচ জামাতের ভাড়াখাটা টোবি কেডমেনের একটা প্রলাপ বেশ বড়সড় জায়গা নিয়ে অতি উত্তেজনায় দুইবার ছাপিয়ে ফেলে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

হিমু এর ছবি

৩ নভেম্বর জেল হত্যার ভিক্টিম জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে এক চিপায় সামান্য খবর করলেও তার আগের দিন ২ নভেম্বর জামাতের লবিইস্ট টোবি ক্যাডম্যানের একই খবর আলুপেপার দুই পাতায় দুই বার ছাপিয়েছে।

দুই পাতার দায়িত্বে যদি দুই ভিন্ন লোক থাকে, মন্দ লোকে ধরে নিতে পারে যে জামাতের টাকা খেয়ে দুইজনের কেউই নেমকহারামি করতে চায়নি।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হুমম... পত্রিকার জন্যও একটা নীতিমালা থাকা জরুরী হয়ে পড়ছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

চরম উদাস এর ছবি

হে হে হে হে ... যা কিছু ভালু সঙ্গে তার আলু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।