নিউটনের ‘অলৌকিক বছর’
সময়কাল ১৬৬৬ সাল, তেইশ বছর বয়সী নিউটন তখন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ছাত্র। এমনই এক সময়ে ইংল্যান্ডে প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় নিউটন বাধ্য হন তার জন্মস্থান ‘উলসথর্প’ গ্রামে ফিরে যেতে; সেখানে তিনি বছরখানেক কাটান নিস্তরঙ্গ গ্রাম্য পরিবেশে। নিউটন এসময়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন বিজ্ঞান জগতের জটিল কিছু রহস্যের জট খুলতে। তার এসময়ের অবদানের মধ্যে রয়েছে – ডিফারেন্সিয়াল এবং ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস উদ্ভাবন, আলোর ধর্মের উপর মৌলিক কিছু আবিষ্কার আর মহাকর্ষের সূত্রাবলীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক বছরে এতগুলো বড় মাত্রার আবিষ্কারের আরেক নমুনা হচ্ছে ১৯০৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইনের ‘অলৌকিক বছর’ (Annus Mirabilis)। নিউটনের কাছে এমন অসাধারণ আবিষ্কারের পিছনে রহস্য কি জানতে চাইলে তার জবাব ছিলো সাদামাটা – “গভীর চিন্তাভাবনা”। নিউটনের এসময়ের গবেষণা এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো যে, কেমব্রিজে তার শিক্ষক ও গণিত বিভাগের প্রধান আইজাক ব্যারো তার পদ থেকে সরে দাঁড়ান – শুধু নিউটনকে বিভাগীয় প্রধান পদে মনোনয়ন দেয়ার জন্য। এ ঘটনা নিউটনের কেমব্রিজ ছেড়ে যাওয়ার পাঁচ বছর পরের কাহিনী – যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত আসতে মনস্থ করেন।
নখ দেখে যায় চেনা
১৬৯৬ সালে সুইস গণিতবিদ ইয়োহান বার্নোলি তার সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে এক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। চ্যালেঞ্জের বিষয়বস্তু ছিলো ‘ব্র্যাকিস্টোক্রোন সমস্যা’র সমাধান। ব্র্যাকিস্টোক্রোন (brachistos - ন্যূনতম, chronos - সময়) এমন এক রেখা যা অনুসরণ করে মহাকর্ষের প্রভাবে একটি বিন্দুসদৃশ বস্তুকে এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে ন্যূনতম সময়ে পরিবহন করা যায়। এই পরিবহণ ঘর্ষণের আওতামুক্ত এবং ধ্রুব মহাকর্ষ বলের প্রভাবে ঘটে থাকে। বার্নোলি এ সমস্যার সমাধানের জন্য ছয় মাস সময় বেঁধে দেন, কিন্তু পরে লাইবনিৎস -এর অনুরোধে এ সময়সীমা বাড়িয়ে স্থির করেন দেড় বছরে। লাইবনিৎস ছিলেন সে সময়ের আরেক প্রথম সারির পন্ডিত, যিনি নিউটনের সমাধানের উপর নির্ভর না করেই স্বাধীনভাবে উদ্ভাবন করেছিলেন ডিফারেন্সিয়াল এবং ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস। বার্নোলির চ্যালেঞ্জ নিউটনের কাছে পৌঁছায় ২৯ জানুয়ারি, ১৬৯৭ বিকাল ৪টায়। পরদিন সকালে কাজে বের হওয়ার আগেই নিউটন উদ্ভাবন করেন গণিতের সম্পূর্ণ নতুন এক শাখা – ‘ক্যালকুলাস অভ ভ্যারিয়েশান্স’, এ নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনি ব্র্যাকিস্টোক্রোন সমস্যার সমাধান করেন এবং বেনামে এই সমাধান পাঠিয়ে দেন বার্নোলির কাছে। সমাধানপত্র পাঠমাত্র এর অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর আর মৌলিকত্ব এই বেনামী লেখকের পরিচয় ফাঁস করে দেয়। বার্নোলি এই সমাধানপত্র হাতে পেয়ে মন্তব্য করেন - “We recognize the lion by his claw” - “আমরা নখ দেখেই এর পিছের সিংহকে চিনতে পেরেছি ”। নিউটন ছিলেন তখন তার পঞ্চান্ন বছরে।
সত্য সাগরের তীরে
সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের সাথে নিউটনের প্রবল প্রতিযোগিতার কথা সবারই কমবেশি জানা (যেমন, রবার্ট হুক – নিউটনের ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব)। তবে মহাবিশ্ব প্রকৃতির জটিলতা আর ব্যাপকত্বের প্রতি তিনি ছিলেন টলেমি আর কেপলারের মতোই বিনয়াবনত। পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার আগমুহূর্তে নিউটন লিখে গিয়েছিলেন – “আমি জানিনা এ পৃথিবীর মানুষ আমাকে কোন দৃষ্টিতে দেখে; তবে নিজের দৃষ্টিতে আমি ছোট্ট এক বালক বৈ কিছু নই, যে কিনা সাগরতীরে খেলা করে বেড়ায়, প্রতিনিয়ত নিজেকে ব্যস্ত রাখে নুড়ি পাথর আর ঝিনুক কুড়ানোতে। সত্যের অনাবিষ্কৃত মহাসমুদ্রের তীর থেকে আরো মসৃণ কোন পাথর, আরো সুন্দর কোন ঝিনুক খুঁজে পাওয়ার আশায়।”
মূল লেখাঃ Carl Sagan, “Cosmos”, Carl Sagan Publication Inc., 1980.
- ছায়াপথের পথচারী
মন্তব্য
ভালো লাগছে, আরো আসুক এমন কাহিনী।
আসলে এ বিষয়গুলি নিয়ে টিভি শো করা যেতে পারে।বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্টারি করে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এরুপ লেখা আরো আসুক।
খুব চমৎকার। আরো লিখুন।
দক্ষিণ ভারতের আলোকবিজ্ঞানী সি ভি রমন বিয়াল্লিশ বছর বয়েসে নোবেল পুরষ্কার পান। ১৯৩০ এর ডিসেম্বরে স্টকহোমে রাজা গুস্তাভ এর কাছ থেকে পুরষ্কার নেবার সময় জলভরা চোখে তিনি বলেছিলেন, "আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে যখন দেখি বসে আছি ব্রিটিশ ইউনিয়ন জ্যাকের নিচে...আমি বুঝলাম, হায় আমার অভাগা দেশ ভারত! তার একটা নিজের পতাকা পর্যন্ত নেই।"
আমাদের উপমহাদেশের বিজ্ঞানীদের গল্প নিয়েও লিখুন না। গুগল বুকসে প্রচুর বই পাবেন, অফলাইনেও পাওয়া যায় নিশ্চয়ই।
..................................................................
#Banshibir.
শুরুটা বেশ হয়েছে, কিন্তু বেশি সংক্ষিপ্ত। লেখা চলুক, আরও বড় কলেবরে
facebook
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
অনেক ধন্যবাদ সবাইকে। চেষ্টা থাকবে আরো বড় কলেবরে লেখার। ওয়ান ডে থেকে আস্তে আস্তে টেস্টে ঢুকার চেষ্টায় আছি। উপমহাদেশের বিজ্ঞানীদের নিয়ে লেখার আইডিয়াটা পছন্দ হয়েছে। কিছু পড়াশোনা করে দেখি।
হাচলাভিনন্দন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন