গত বেশ কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণমাধ্যমসমূহের আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘটনাগুলোর সৃষ্টি এবং বিস্তারের সাথে যারা জড়িত তাদের মতামত বা কথার কোন গুরুত্ব আমার কাছে নেই তাই সেসব বিষয়ে কথা বাড়াবো না। আর সেসব অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহে ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার সুস্পষ্ট অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে আমি তার সাথে একমত। তাই এই লেখায় আলোকপাত করছি বিডি নিউজ ২৪ এ প্রাপ্ত একটি খবরকে মাথায় রেখে। খবরটিতে বলা হয়েছে- "কামাল লোহানী বলেন, অনশনের পাঁচ দিন পার হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। এটা দুঃখজনক। যারা এখানে এসছে তারা লেখাপড়া করতে চায়। এই দাবি শিক্ষার্থীদের ‘সুযোগ নয়, অধিকার’- মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আপনারা তাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারেন না।”
বিষয়টা হলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী অনশন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দাবি করে।তাদের প্রতি একাত্মতা প্রদর্শন করতে গিয়েছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী সহ বেশ কয়েকজন বামঘরানার গুণীজন। তাঁরা যেতেই পারেন এবং যাওয়াটাই স্বাভাবিক, সে ব্যাপার কোন আপত্তি নাই। আমার আপত্তি সেখানেই যখন সেইসব গুণিজন বলে বসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারাটা সবার অধিকার। এই অধিকার শব্দটিতেই আমার যত আপত্তি। শিক্ষা মানুষের জন্মগত অধিকার এবং বাংলাদেশ এর সংবিধানও তা স্বীকার করে। হতে পারে বাংলাদেশ এর প্রেক্ষিতে উচ্চশিক্ষাও মানুষের অধিকার, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারাটা যদি অধিকারই হয় তাহলে ঠিক বুঝতে পারছি না সেই অধিকার কিভাবে বাস্তবায়িত হবে! অধিকার হলে তো জন্মসূত্রে বাংলাদেশি সবারই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারার কথা। উদাহরণস্বরূপ স্বাস্থ্য মৌলিক অধিকার হলেও সেটা ঠিক এটা বোঝায় না যে দেশের সমস্ত জনগণ স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেবে, বরং এটা বোঝায় যে প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষে সকল জনগোষ্ঠী ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা পাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে পারাটা অধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে গেলে মেধার ভিত্তিতে বা যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়াটাই অবৈধ হয়ে যায়। আশা করবো গুণীজনরা যখন কথা বলবেন তখন এইচ টি ইমাম এর সাথে তাঁদের পার্থক্য যেন বোঝা যায় এমনভাবে কথা বলবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারাটা সুযোগ হতে পারে, যোগ্যতা হতে পারে, কিন্তু অধিকার নয় মোটেও।
তবে আমি সবচেয়ে বেশী অবাক হচ্ছি এই কথা ভেবে কিছু তাজা তরুণ প্রাণ, যারা জীবনের কিছুই এখনো দেখেনি, মাত্র ১৮ বছর যাদের বয়স, তারা কেন সামান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ চেয়ে তাদের মূল্যবান প্রাণকে বাজি রাখছে? সুকান্তের দুর্মর আঠারোর এই তরুণদের যখন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় শিহরিত হওয়ার কথা, রোমাঞ্চকর জীবনের জন্য যাদের এগিয়ে যাওয়ার কথা তারা কেন একুশে পা রাখার আগেই পরাজিত হতে চাইছে? তারা কেন ভাবছে একটি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণই তাদের জীবনের পরম চাওয়া ও পাওয়া? তারা কি ভাবছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে পারাটাই জীবনের সবকিছু? খুব সহজেই বুঝতে পারছি তাদেরকে এই বিপদজনক পথে ঠেলে দিচ্ছে তাদের নির্বোধ অভিভাবকবৃন্দ, লোভী কোচিং ব্যবসায়ী আর সমাজের গড়ে ওঠা ভন্ড মানসিকতা। যে সমাজ একদিকে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানেই ক্লাশ না নিয়ে রাজনীতি করে বেড়ানো, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাশ না নিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খ্যাপ মেরে বেড়ানো একদল লোভী, ধূর্ত মানুষ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মানেই রাজনীতি আর ফাও খেয়ে বেড়ানো বখে যাওয়া তরুণ, সেই একই সমাজ বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মানেই মেধাবী, আমি কি হনুরে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই দুটির কোনটিই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের হাজারো বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় খুঁজে না পাওয়া স্রেফ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাত্র।
এই তাজা তরুণ প্রাণগুলোকে কেন গুণীজনরা বলে আসলেন না, ‘দেখো বাবা মা’রা মানুষের জীবনে মানুষই বড়, কোন প্রতিষ্ঠান নয়’। তারা কেনো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর ভর্তি হওয়া অর্ধেকেরও বেশী শিক্ষার্থী কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সকেই তাদের সিলেবাস ভাবে। সেখানে যাওয়া নামী দামী বিভাগের শিক্ষকেরা কেনো বললেন না তাদের ৫০ শতাংশেরও বেশী শিক্ষার্থী মনমত এবং যোগ্য কোন কাজের সন্ধান পায় না প্রতিবছর। কেনো বললেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫-৬ বছর নাওয়া খাওয়া ভুলে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীটি চাকরী জীবনে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় হেসে খেলে ৫-৬ বছর কাটানো অপড়ুয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে। কেনো তাদের চোখের রংগীন চশমাকে আরো বেশী রংগীন করতে গিয়ে পুরোটাই কালো করে দিচ্ছেন?
সেইসব গুণীজন বরং যে কথাগুলো বলতে পারতেন বলে মনে করি তা হলো- দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রহিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে কোচিং সেন্টারগুলোর বছরমেয়াদি কোচিং করানোর সুযোগ বন্ধ হবে। সেই সাথে প্রতি বছর ২০০-৩০০ আসন শূন্য হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে। তদুপরি ক্লাশ না করে কোচিং করিয়ে বেড়ানো এবং পরেরবার ভর্তিপরীক্ষা দিয়ে ভালো বিষয়ে যাবো এই চিন্তায় বিভোর থাকা শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও কমবে। তবে যেহেতু এতোবছর ধরে চলে আসছে তাই এবারের ব্যাচটিকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়া উচিত এবং পরবর্তী ব্যাচ থেকে এই ব্যবস্থা পুরোপুরি রহিত করা উচিত।
কিন্তু তারা সেসব কিছুই করলেন না। বরং ক্লিশে রাজনৈতিক বক্তব্যসুলভ কথা বলে চিরায়ত কপটতা প্রদর্শন করলেন।
--সুব্রত দাশ
মন্তব্য
শিক্ষা কোন পর্যায় পর্যন্ত "অধিকার" এবং কোন পর্যায়ে গেলে "সুযোগ" - সেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হওয়া উচিৎ। বামঘরানার পণ্ডিতেরা হয়ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে বলবেন সেসব দেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বিনামূল্যে পাওয়া যায়, কিন্তু একথা বলেন না যে ঐসব দেশেও প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়। আর আমি যখন ঢাবির ছাত্র ছিলাম, তখন তো দেখতাম কোন বছর ভর্তি পরীক্ষায় পাস না করলে এক বছর অপেক্ষা করে আবার ভর্তি পরীক্ষা দেয়া লাগত। অনশনকারী ছাত্ররা যদি একই বছরে দুইবার ভর্তি পরীক্ষায় বসার দাবী করে, সেটা তো রিজনেবল দাবী বলে মনে হয় না।
সম্পাদনা করে যোগ করছিঃ বিডিনিউজের খবরটা পড়িনি, সুতরাং ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার নীতিমালায় কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা, সেটা জানি না।
Emran
"গুণীজন"কে এইচ টি ইমাম অপেক্ষা উত্তম হওয়ার উপদেশখানি পড়ে বিনোদিত হলাম। তবে সত্য হলো, এইচ টি ইমামের বক্তব্য খবিশরা টুইস্ট করে হলুদ হাগু করেছে, এবং এই "গুণীজন"কে আরেকটি কালেকটিভ নাউন "বুদ্ধিবেশ্যা" হিসেবে ট্যাগ করার রীতিও সম্প্রতি প্রচলিত হয়েছে। এইচ টি ইমামের সাথে তাদের পার্থক্য তো আছেই!
অন টপিক, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ১ বারই দেয়া যাবে, এটা ভর্তি পরীক্ষার আগে বলা উচিত ছিলো। একটা সাময়িক সমাধান হতে পারে ২০১৪ ব্যাচকেও পরের বার সুযোগ দেয়া। এরপর থেকে বাতিল করা। তবে ভর্তি ক্যাচালের ক্ষেত্রে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া ঝামেলার খুব একটা উন্নতি হবে না। আর প্রাইভেট ইউনি বিজনেস যতোদিন আছে, ততোদিন জিপিএ বিস্ফোরণও চলতে থাকবে, ভর্তি নিয়ে ক্যাচালও চলতে থাকবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
কোন সিদ্ধান্ত হুট করে না নিয়ে আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে নেয়া ভাল। তাহলে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়না। সিদ্ধান্তটা কবে নিয়েছে তা জানা গেলে বিচার করা সহজ হতো। আমার জানা নেই, তাই কোন মন্তব্য করছিনা।
আর বালের অধিকারের কথা শুনতে শুনতে এখন হাসি নয়, মেজাজ খারাপ হয়। সামান্য নাগরিক অধিকার যেখানে কাগজে কলমে সেখানে উচ্চশিক্ষার অধিকার!
দেন, যারা গালি দিতে চান দেন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
এই বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় আগষ্ট এর ১৭/১৮ তারিখ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করে ১৯/২০ অগাষ্ট। ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয় ঠিক এক মাস পরে সেপ্টেম্বর এ। ইতিমধ্যে সকল ইউনিট এর ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম সমাপ্ত, আর এই মাসেই বিভাগ বিন্টন শুরু হয়ে যাবে। বুয়েট এর ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটু দেরী করা হচ্ছে বলে ধারণা।
যাহোক, দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিতে পারার সুযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আসে ভর্তি পরীক্ষার পর পরই। ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচী এবং দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রহিত করণ আসলে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোচিং সেন্টারগুলোর রমরমা ব্যবসার বিপক্ষে ঢাবি'র একটা দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করছে।
সুব্রত
আহারে, এই দৃঢ় ও কঠর অবস্থানের ঘোষণা কেন এক সেশন পরের শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর করা হয় নাই সেটাই আচায্য। মনে হচ্ছে সৃষ্ট সমস্যা ইচ্ছাকৃত অথবা এদের মাথামোটা !
রাজর্ষি
রাজর্ষি,
"পুরানো পাপীরাই দীর্ঘমেয়াদে কোচিং সেন্টারের বান্ধা কাস্টমার" - এই সোজাসাপটা ফ্যাক্ট এড়িয়ে যাবার কোনও সুযোগ নাই।
পুনশ্চঃ সময়সূচী প্রতি বছরই এগিয়ে আসছে। আগে যেখানে প্রায় একবছর পরে পরীক্ষা হত (হ্যাঁ, আস্ত একটা বছর নষ্ট করে) সেখানে দু'মাসের মধ্যে বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাচ্ছে এটা চমৎকার ব্যাপার।
পুন-পুনশ্চঃ এই সেশনের পরিক্ষার্থীদের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা এখনও চলছে, সেগুলোতে অংশ নেয়ার অধিকার না নিয়ে কেউ ল্যাটা মেরে বসে থেকে এক বছর পরের অধিকার নিয়ে চেঁচামেচি করলে তাতে কান দিতে হবে কেন?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আসলেই নাই। আমার প্রসঙ্গ হচ্ছে, যে দেশে কোচিং বাণিজ্য কমানোর মহান দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হয়, সেখানে আরেকটু বিবেচনাপ্রসূত কাজ মহান কর্তৃপক্ষ করতে পারতেন, ভর্তি পরীক্ষার বেশ আগে থেকে নোটিশ দিলেই হত । তারপরও ,চলতি বছরের জন্য সুযোগ রাখার ব্যাপারটা অবশ্যই তাদের ভাবা উচিত ছিল। বাকি ব্যাপারগুলিতে আপনার সাথে একমত।
তবে, ল্যাঠা ধরে এরা বসে থাকতে আর পারল কই, আপনি কমেন্ট দিতে দিতে ছয় দিন উপোস দিয়ে পাতাতারি গুটিয়ে নিয়েছে।
রাজর্ষি
নতুন মন্তব্য করুন