ভারতের ভু-রাজনীতি আর আমাদের গণতন্ত্র

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৪/০১/২০১৫ - ৬:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রবিবার ওবামা আসবেন ভারতে। সাজ সাজ রব। রং করা হচ্ছে ভূতলে-অন্তরীক্ষে। ওবামা সাধারণত এক অঞ্চলে এলে , একাধিক দেশ ভিজিট করে যায়। কিন্তু তিনি শুধু এবার ভারত সফরের জন্যই আসছেন। সফরের গুরুত্ব অপরিসীম-বোঝাই যায়। প্রথম আলোতে সংবাদ দেখলাম, বাংলাদেশ নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে, যার উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যত। দু'দলই নাকি তাকিয়ে আছে সেদিকে। বাংলাদেশে বাসের মধ্যে মানুষ পুড়ে মরে আর আমরা বিদেশী বড় ভাইদের দিকে তাকিয়ে থাকি। দেওলিয়াপনার একটা সীমানা থাকা উচিত।

এই সংবাদটি এভাবে পরিবেশনের আরেকটা উদ্দেশ্য প্রথম আলোর থাকতে পারে, আন্দোলনকারীদের চাঙ্গা করা। তোমরা চালিয়ে যাও, ওবামা আসছেন, ভারতকে চাপ দিতে। যেমনটা ক'দিন আগে বিএনপির ভেতর থেকে করা হয়েছিল, কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষর নকল করে আর অমিত শাহর সাথে ভুঁয়া টেলিফোন সংলাপের খবর প্রচার করে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারে ওবামার সফরে কতটুকু আলোচনা হতে পারে বলে আপনাদের ধারনা ? আমার ধারণা যতকিঞ্চিৎ। প্রসঙ্গ এলে, ভারত বলবে আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি বাংলাদেশ বিষয়টি। তারপর অন্য প্রসঙ্গে চলে যাবে। আমি স্বপ্নে দেখেছি কিনা, কেউ জিজ্ঞেস করে ফেলতেই পারেন। না, ডিডিউস করার চেষ্টা করেছি মাত্র। আমার ডিডাকসান ভুলও হতে পারে।

একবিংশ শতাব্দী এশিয়ার হবে, এ নিয়ে বিন্দুমাত্র কারো কোন সন্দেহ নেই। পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশী লোক এশিয়ায় বাস করে। এশিয়া এখন আর পাশ্চাত্যের কাছে টেকনোলজির মুখাপেক্ষী না। এশিয়ার টেকনলজি পাশ্চাত্যকে চমকে দিয়েছে। পৃথিবীর বড় বড় করপোরেশান ইতিমধ্যে ডেরা গেরেছে এশিয়ায়। যুক্তরাষ্ট্র বুঝে গেছে, যে দেশটি ভবিষ‌্যতে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দেবে ,তা আর কেউ নয়, চীন। চীনের মোট জিডিপি এখন ১০.৩ ট্রিলিয়ন ডলার , তার যে ভাবে প্রবৃদ্ধি ঘটছে , তা বজায় থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। যখন চীনারা সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হবে , তখন তারা সামরিক ব্যয় বাড়াবে। বর্তমানে চীনের সামরিক ব্যয় ১৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার , যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে এই ব্যয়ও বাড়বে । সব দিক দিয়ে মার্কিনীরা চীনের কাছে হেরে যাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ( অলিম্পিকের মত)। এ অবস্থায় চীনের সাথে প্রতিযোগীতা করার জন্য , এশিয়াতে তাদের বড় ধরণের সঙ্গী প্রয়োজন। এই সঙ্গী হিসেবে ভারত ছাড়া অন্য কারো নাম কি আপনাদের মনে আসে ? ভারতের সাথে চীনের বিভিন্ন ইস্যু রয়েছে। তাই ওবামার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণূ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার এখন আর ইয়োরোপ নয় , ভারত (সারা ইয়োরোপের জনসংখ্যা ভারতের চার ভাগের একভাগ, এই জিনিসটিও মাথায় রাখা জরুরী)। ওবামার সামনের লক্ষ্য পরিষ্কার, তা হলো ভারত। ভারতকে বাংলাদেশ নিয়ে চাপ দিবে বলে আমার মনে হয় না।

ভারতের সাম্প্রতিক পররাষ্ট্রনীতির দিকে তাকিয়ে দেখা যেতে পারে। তারা কি আর জোট নিরেপক্ষ আন্দোলনের ভারত রয়েছে? বিশেষ করে মোদী আসার পর ভারতের কুটনীতির একটা ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। মোদী "লুক ইস্ট" পলিসি থেকে সরে গিয়ে এখন "এক্ট ইস্ট" পলিসি অবলম্বন করছে। তারা এখন শুধুমাত্র চায়নাকে পর্যবেক্ষণ করবে না। চায়নাকে তারা মোকাবেলা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবং এই নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এতটাই পছন্দ হয়েছে, তারা আহলাদে গদ গদ। ওবামার ভারত সফর সম্ভবত এ কারণেই। ক'দিন আগে শ্রীলংকায় চায়না-পন্থী মাহিন্দা রাজাপক্ষের বিদায় হলো। নতুন সরকার এসে ঘোষণা করলো, চীনার সাথে চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে। মাহিন্দ বাবু গোপনে চীনা সাবমেরিন শ্রীলংকা বন্দরে ভিড়তে দেয়া মাত্রই , ভারত সিদ্ধান্ত নেয় আর এক বিন্দু ছাড় দেয়া হবে না মাহিন্দকে । চায়নাকে একটা ১.৫ বিলিয়ন ডলারের কাজ দেয়া হয়েছিল, যার ফলে শ্রীলংকার নেভাল বেইজ ব্যবহার করার সুযোগ পেতো চীন। নুতন সরকার এসেই সেই চুক্তি রিভিউ করার ঘোষণা করেছে। মোদী সাহেব দুইবার ইতোমধ্যে বাফার দেশ নেপাল ভ্রমণ করেছেন। চীনের সাথে ঝামেলা আছে এমন দু'টি দেশ জাপান আর ভিয়েতনামের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে। আর বাংলাদেশের জন্য সংবাদ হলো সোনাদিয়া দ্বীপ। আট বিলিয়ন ডলারের সোনাদিয়া সমুদ্র বন্দর চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানীর পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ভারত একেও চীনা আধিপত্য ভাবছে। ভারতীয় কোম্পানী আদানী গ্রুপ, এই কাজটি পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছে। আদানী গ্রুপ গুজরাটের প্রতিষ্ঠান, মোদীর সাথে গলায় গলায় ভাব।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আমি কেন এমন একটা ডিডাকসান করলাম। এ রকম জটিল প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র কতটা স্বাভাবিক পথ খুঁজে পাবে , তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ । বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ইতোমধ্যেই নিজেদের ভারত বিরোধী দল হিসেবে চিনিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত গণতন্ত্র নির্ভর করছে, বি এন পি কতটা সাফল্যজনক ভাবে এ বিষয়টি মোকাবেলা করতে পারবে তার উপর। অথবা জামাতকে সাথে নিয়ে আদও বি এন পি তা করতে পারবে কিনা , তা নিয়ে আমার প্রবল সন্দেহ।

হলুদ ঘাস

টরোন্টো


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভূরাজনীতির শিক্ষার পাঠ দুইটা রাজনৈতিক দলেরই দরকার। তবে ধর্মীয় বাতাবরনে আবদ্ধ মাথা মোটা যাদের তাদের মাথায় কতটুকু এই পাঠটা ঢুকবে জানিনা।এতটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের অবস্থান এমন একটা জায়গায় যেখান থেকে এশিয়া মহাদেশের পরাশক্তি গুলো নিজেদের স্বার্থেই এদেশের অভ্যন্তরীন ব্যপার নিয়ে কিছুটা হলেও মাথা ঘামাবে।

-------------
রাধাকান্ত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।