আমার গল্প চার, বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ি। মোটামুটি স্বাধীনতার স্বাদ নিয়ে বেড়ে উঠছি, এটাই মনে হতো তখন। সারাদিন খেলাধূলো, নতুন নতুন বন্ধু... জীবন অনেক পূর্ণ ছিল।
সপ্তম শ্রেণীতে ওঠার পর ক্লাসের সব বন্ধুরা খুব উত্তেজিত, কারন শারিরিক শিক্ষা বইতে নাকি বড় হয়ে যাবার কথা আছে। এই এই চ্যাপ্টার নাকি ছেলেদের বইতেও আছে। নতুন সব বই গুলোর মধ্যে ঐ বইটাই খুব আকর্ষণীয় ছিল বোধহয়। বাসায় এলাম, লুকিয়ে পড়েও ফেললাম, চ্যাপ্টারের নাম “ঋতুস্রাব” । ক্লাসে আপা বললেন এই চ্যাপ্টার তোমরা বাসায় পড়ে নিও। ওইখানেই আমাদের বয়ঃসন্ধিকালের শিক্ষার সূত্রপাত এবং মৃত্যু।
আরেকবার মনে আছে, অফ পিরিয়ডে ক্লাসে সবাই বসে বসে গানের কলি খেলছি, পাশের ক্লাস থেকে শিক্ষিকা রেগেমেগে ছুটে এলেন, এবং অকথ্য ভাষায় ঝাড়ি দিলেন। যার মূল বক্তব্য ছিল, প্রেমিক জোটানোর জন্যেই রাস্তার পাশের ঐ জানালার কাছে বসে উচ্চস্বরে আমরা গান গাইছি। বুঝলাম প্রেম খুবই ন্যাক্কারজনক ব্যপার। প্রেম বিষয়ক ওইটাই আমাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষা।
আমার পিরিয়ড হয় অষ্টম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার পরে, প্রচণ্্ড ভয় আর লজ্জার মধ্যে আছি। বাসায় তখন আমার সব খালাতো ভাই বোন, ডিসেম্বরের ছুটিতে বেড়াতে এসেছে। আম্মা শোনার পরেই বললেন, বাইরে খেলা বন্ধ, নামাজ পড়া যাবে না এবং কী কী যেন ছোঁয়া যাবে না।
বুঝলাম বিশাল কোন অন্যায় করে ফেলেছি। পান্থ (আমার তিন মাসের বড় খালাতো ভাই) খুব জ্ঞানী ভঙ্গীতে বলল, ওহ তোরও আপুর মতো তুলা রোগ হয়েছে? তুই তো এখন আর আমাদের সাথে খেলতে পারবি না। আমরা দুজনেই তখন বয়ঃসন্ধিতে পা দিয়েছি। অথচ আমাদের কোন ধারণাই ছিল না। শুধু মনে হচ্ছিলো বিশাল কোন পাপ হয়ে গেছে। এখান থেকে ফিরে যাবার কোন উপায় নাই। শরীরে অন্যরকম অনুভূতি হওয়াটা অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল, তাই বার বার নিজেকে দোষারোপ করতাম। কিন্তু ঐ বয়সে প্রাতিষ্ঠানিক এবং পারিবারিক শিক্ষার খুবই কি দরকার ছিল না?
বয়ঃসন্ধি আমাদের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের একটা। ঐ সময় কিশোর- কিশোরীরা নিজেদের চিনতে শেখে, তাদের নৈতিকতা, স্বকীয়তা, মানবতা এইসব মৌলিক গুণগুলো বিকশিত হতে শুরু করে। এই বয়সে যখন একটা কিশোরীকে শেখানো হয় প্রেম মানে অসামাজিক ঘটনা, মোটামুটি অপরাধ। (আমার অনেক বন্ধুকে এর জন্য শাস্তিও পেতে হয়েছিলো।)
তাহলে এই সমাজ কীভাবে আশা করে, এই কিশোরী যখন তরুণী হবে তখন আরেকটা মানুষকে অগাধ ভালবেসে সংসার করবে এবং এই পৃথিবীতে তাদের শিশুকে আমন্ত্রন জানাবে?
আগের লেখাতে উল্লেখ করেছিলাম আমার মেজো ভাইয়ার এক বন্ধুর কথা, আমার ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন ক্লাস নাইন থেকে। যিনি কারণে- অকারণে আমাকে স্পর্শ করতেন। যেহেতু জানতাম না শারীরিক আকর্ষণ এবং যৌনতার অপব্যবহার সম্পর্কে, প্রতিবাদ করতাম না কোন।, দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম, পরিবারে এমন বিশ্বস্ত কেউ ছিল না যাকে সব খুলে বলতে পারতাম। শুধু মনে হতো.. শুনলে হয়তো আম্মা রাগ করবে খুব!
আর অপবিত্র কিংবা অবিশুদ্ধ একধরনের অনুভূতি ছিল নিজের সম্পর্কে।
আমার আপুর ধারণা ছিলো প্রেম হলো অসামাজিক একটা ব্যাপার। শুধু খারাপ (?) মেয়েরাই প্রেম করে এবং এক রিকশায় ছেলে- মেয়ে পাশাপাশি বসলেই তাদের শরীর কথা বলতে শুরু করে। এটা চরম পাপ!
যৌনতা আসলে কী, এই নিয়ে জানার সৌভাগ্য কলেজে ওঠার আগে হয়নি। তার মানে তখন আমার বয়স পনের কি ষোল। সেটা প্রাতিষ্ঠানিক ছিল না, বান্ধবিদের খাতিরে লুকিয়ে এক পর্ণ সিনেমা দেখেছিলাম, আর ভাবছিলাম এটাই তাহলে নারী-পুরুষের মিলনের অমানুষিক উপায়!
কলেজে পড়ার সময় পদার্থবিজ্ঞান প্রাইভেট পড়তাম নামি শিক্ষক “ক” স্যারের কাছে। ( স্যর এর নাম লেখা গেলো না, কারন কোন প্রমান নেই। শ্রদ্ধেয় ব্রিটিশ দাদারা ১৮৭২ সালে কুমারিত্ব পরীক্ষা করার জন্য দু আঙ্গুল এর যে পরীক্ষা রেখে গিয়েছেন , তা দেশে এখনো প্রচলিত। ২০১৩ এর অক্টোবর এ শুনেছি হাইকোর্ট বিশেষ অনুসন্ধানের জন্য হুকুম দিয়েছেন। ভালো খবরের অপেক্ষায় থাকলাম। (http://www.lawschool.cornell.edu/womenandjustice/Featured-Cases/Bangladesh-Court-Prohibits-Use-of-the-Two-Finger-Test.cfm)
স্যারের হিউমার অনেক ভালো ছিল, রবীন্দ্রনাথের কবিতা আর পদার্থ বিজ্ঞানের জটিল ভেক্টরের মধ্যে বেশ মজার সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন তিনি। সেকেন্ড ইয়ারের শেষ ক্লাস সেদিন…, প্রচণ্ড বৃষ্টি! আমি সাতটার ক্লাস মিস করে নয়টার ক্লাসে গেলাম। ক্লাস শেষে স্যার বসতে বললেন, হোমওয়ার্কের সব খাতা আজ দিয়ে দেবেন বলে। সবাই চলে গেছে, আমি বসে আছি, স্যারের গলার স্বর হঠাৎ বদলে গেলো। খুব কাছাকাছি এসে তিনি আমার উরুতে হাত দিলেন।
আমি তখন ভয়ে কাঁপছি নিচের দিকে তাকিয়ে। প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি ইনাকে, শ্রদ্ধার সাথে প্রতিবাদ কীভাবে করতে হয় শিখি নি কখনো। মাফরুহা নামে এক ক্লাসমেইট ঢুকল তখন। স্যার কি বলছিলেন মনে নেই, তবে মনে আছে সবকিছু নিয়ে দৌড়ে বের হওয়া আর কাঁদতে কাঁদতে গন্তব্যহীন ভাবে হাঁটার কথা। তখনও নিজেকে দোষারোপ করছিলাম, মনে হচ্ছিলো অনেক ছেলেরাও তো উনার কাছে পড়ে, আমি মেয়ে দেখেই এমন হলো। প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিলো নিজের উপর। ফলাফলস্বরূপ পদার্থবিজ্ঞান বই ধরতেই কান্না পেতো, রাগ হতো, সেই রাগ প্রকাশের উপায় জানা ছিলো না আমার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পর এসবের সংজ্ঞা আরো বদলাতে লাগলো। সন্ধ্যা ছয়টার পর-ই ছাত্রী হলের গেট তালাবন্ধ হয়ে যায়। অন্ধকারে কোন মেয়ে আর ছেলেকে পাওয়া গেলে প্রক্টর আর প্রভোস্ট দৌড়ে চলে আসেন। আর পরদিন সেটা হয়ে দাঁড়ায় বিশাল একটা ঘটনা!
জিন্স আর ফতুয়া পরতাম বলে ডিপার্টমেন্টের দুই শিক্ষক একবার অফিসে নিয়ে গিয়ে অনেক নীতিকথা শুনিয়েছিলেন। তখনও শিখিনি শিক্ষককের সাথে কীভাবে যুক্তি দিয়ে তর্ক করতে হয়। শ্রদ্ধার সাথে সবকিছুকেই আমরা বাঙালিরা কেমন যেন গুলিয়ে ফেলি।
হলে আমার দুই বান্ধবীই সমকামী ছিল, একজন আরেকজনকে আবিষ্কার করছিলো ভালোবাসা আর শরীর দিয়ে। সেটা চলে গেলো প্রভোস্টের কানে। কোন এক কারণে আমাদের ব্যাচের একটু নেতা টাইপ হিসেবে কুখ্যাত হওয়ায় প্রভোস্ট অফিসে ডেকে নেয়া হল আমাকে। এবং পুরো ঘটনা জানা থাকার পরও আমি অস্বীকার করলাম। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার আমার ডাক পড়লো, এবার আর তাদের রক্ষা করা গেলো না। ওদের পরিবারকে জানানো হল, একজনকে নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়া হলো। আরেকজনকে হলে রাখা হলো, তবে বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে। দেখা গেল চারজনের কক্ষে ঐ বন্ধু একা থাকছে, কারণ কেউ-ই ওর সাথে থাকতে রাজি নয়।
যৌনতার আবেদন এবং আকর্ষণ যে দ্বিপাক্ষিক না হলে কিছু ঘটা সম্ভব না, সেটা হয়তো বাঙ্গালী মেয়েরা জানেই না।
ওই বন্ধুকে আমার সবসময় খুব সাহসী মনে হতো। নিজের অনুভূতির প্রকাশের সাহসিকতা ক’জনেরই বা থাকে!
তেইশ বছর বয়স পর্যন্ত যৌনতার সংজ্ঞা ছিল অসামাজিক কার্যকলাপ, এবং মেয়েরাই সব সমস্যার জন্য দায়ী। এই জন্য তরুণী মেয়েদেরকে রাত ছয়টার পরে আটকে রাখা হয় এবং সমকামিতা আরও বড় অপরাধ।
বয়ঃসন্ধি কালের এইসব ভয়ানক ঘটনা দিয়েই কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত নেয় ভবিষ্যতে তারা কীভাবে আরেকটা মানুষকে ভালবাসবে। National Institute of Mental Health এর ওয়েবসাইটে এই নিয়ে একটা বেশ তথ্যবহুল লেখা আছে, কীভাবে বয়ঃসন্ধি কালের অভিজ্ঞতা নারীদের বিভিন্ন মানসিক হতাশামূলক স্বভাবের সৃষ্টি করে। ( পি টি এস ডি লিখে গুগল এ খোঁজা বোতামে চাপ দিয়ে দেখুন )
প্রথমত কিশোর -কিশোরীরা, ওই বয়সটাতে দ্বিধাগ্রস্ত থাকে তাদের শারীরিক পরিবর্তনের কারণে। ধর্ম, সংস্কৃতি, পরিবার সব কিছুই তাদের ভুল তথ্য দিয়ে প্রতারণা করে। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক আমাদের কাছে অন্ধকারে রাখা হয়।
“sex ed for teenagers” ক্লিক করলে হাজারো ভিডিও আসবে ইউটিউবে। আমার ধারণা এখনকার অনেক কিশোর- কিশোরী অনায়াসে এসব দেখে। তবে গ্রামে যে কিশোরীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আঠারো কিংবা তারো আগে, যার কোন ইন্টারনেট সংযোগ নেই? আমার মা কিছুই জানতেন না, কিন্তু তার ঘরে তো পাঁচ সন্তান রয়েছে। কিন্তু যৌনতার শিক্ষা যে শুধু কাম, দৈহিক মিলন, শিশু উৎপাদন শেখায় তা তো না, এ শিক্ষা শেখায় আরেকটা মানুষের যৌনতাকে সম্মান করা, নিজের শরীরকে চেনা, নিজেকে আবিস্কার করা, নিজেকে শ্রদ্ধা করা। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের খুব বড় একটা অংশ আসে কিন্তু ওখান থেকেই। ওই বয়সে আমাদের মধ্যে ঢুকে যায় কুমারিত্ব রক্ষা, শরীরকে সকল পাপ থেকে দূরে রাখা নামক কুৎসিত কিছু ধারণা।
প্রায়ই মনে হয় বাঙালি মেয়েরা বয়সের তুলনায় নিজেকে সবার সামনে “ছোট্ট, কিউট, টেডি বিয়ার প্রেমিকা, নিষ্পাপ” টাইপ প্রমান করতে চায় ( এটা মূলত একটা ফেসবুক পর্যবেক্ষণ, আমি শতভাগ ভুলও হতে পারি)।
তাহলে কি সবাই একই ভয়ে ভুগে, যে এই বুঝি নিজের পাপের(?) কথা ফাঁস হয়ে গেলো?
এই নিয়া পরে আরেকটা লেখা দেবো ভাবছি।
ইসলামে যৌনশিক্ষা নামক বেশ কয়েকটা লেখা আছে, গুগল করলে পাবেন। তবে একই লেখাই বিভিন্ন মানুষ কপি-পেস্ট করেছেন বলে মনে হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা পাবলিকেশনও দেখলাম, (পাবলিকেশনের মান দিন দিন কমে যাচ্ছে।) একটা ওয়েবসাইটে ছোট্ট একটা লাইন পড়ে খুব হাসি পেয়েছিলো , No wonder less than 10% of American brides are virgin.( http://www.missionislam.com/family/sex_ed.htm)
যাই হোক, ইসলামে যৌনশিক্ষার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু মূলত আলোকপাত করা হয়েছে কার সাথে সঙ্গম লিগ্যাল আর কার সাথে ইলিগ্যাল, কিন্তু এই সম্পর্কে মূল্যবোধ গড়ে ওঠার মতো কোন শিক্ষার সুযোগ সেখানে নেই। সেখানে নিষ্পাপ এবং ভেজাল চরিত্রের বিশদ বর্ণনা দেয়া আছে, এবং এইটা অনেকটাই নির্ভর করে শরীরের উপর। আবার কে কারে ডিজার্ভ করবে তার বর্ণনাও আছে ( আব্বাকে বলতে হবে পাত্র খোঁজার সময় আমার জীবনবৃত্তান্তে মেয়ে কুমারী নয় এই টা যেন লিখে, কী লাভ নিষ্পাপ মুসলিম ভাইদের বেহেশতে যাওয়া বন্ধ করার? )।
যৌন শিক্ষা, ধাপ- ৩, বয়স ১২ থেকে ১৫
১) বয়ঃসন্ধির সময়টাতেই মানুষ তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলোর মুখোমুখি হয়। তারা আত্মপরিচয় খোঁজা শুরু করে এবং আস্তে আস্তে বিকাশ করে স্বকীয়তার। তারা নিজেদের শৈশব থেকে পার্থক্য করা শেখে, আত্মনির্ভরশীল হবার চেষ্টা করে। এই বয়সে শারীরিক পরিবর্তনের কারনে তাদের চরিত্রে লজ্জা এবং বিনয় আস্তে আস্তে বিস্তার করতে শুরু করে। এসময় স্বমেহন খুব স্বাভাবিক।
২) কিশোর-কিশোরীদের জানানো উচিত তাদের এই দৈহিক পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক, তাদের যৌনাঙ্গের পরিবর্তন এবং এসময় কী কী পরিবর্তন আকাঙ্ক্ষিত সে সব তথ্য দেয়া উচিত। এবং যেকোন জটিলতায় এসব সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করার পরামর্শ দেয়া উচিত।
৩) “শারীরিক পাপ” সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা সম্পর্কে তাদের অবহিত করা উচিত।
৪) কিশোর-কিশোরীদের জানানো উচিৎ, সব ধরনের নারী-পুরুষ বিষয়ক বৈষম্য, নারীর প্রতি ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গী, এবং কর্তৃত্বমূলক আচরণ এবং যেকোনো ধরনের অপব্যবহার হলো মানবিক অপরাধ।
৫) সবার অধিকার আছে এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ এবং যৌনতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার।
৬) সমাজের বিভিন্ন সংস্থা যারা বৈষম্যের শিকার, এবং যৌনতার অপব্যবহারের শিকার হওয়া নারী- পুরুষদের সাহায্য করে , তাদের সাথে যোগাযোগের সকল তথ্য দেয়া। এবং কিশোর-কিশোরীদের সাহায্য করা তাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষটিকে চিহ্নিত করার, যাকে তারা যে কোনো ঘটনা অনায়াসে বলতে পারবে।
যারা ভাবেন যৌনশিক্ষা মানে বিবাহের আগে যৌনকর্মে উৎসাহিত করার আরেকটা পশ্চিমা অমুসলিম ধান্দা, তাদের বলি-- হয়তো আপনারই মেয়ে বা বোন চার বছর বয়সেই কুমারিত্ব হারিয়েছে, হয়তো আপনার-ই চোখের সামনেই। আপনারে বলার সাহস তার হয় নি। সে হয়তো এখন প্রতিরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে। মাঝে মাঝে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনাও করে। নিজেকেই সবকিছুর জন্য দোষারোপ করে। ঠাকুর ঘরে যেতে ভয় পায়, ভাবে.. এই বুঝি ঠাকুর বুঝে ফেললো-- সে অপবিত্র। আপনার বোন কিংবা আপনার বউয়ের যদি ঐ শিক্ষা থাকতো, তাহলে হয়তো আপনার মেয়ে কিংবা বোন আগে থেকেই সাবধান হতো। অন্তত কুমারিত্ব হারালে নিজের ইচ্ছাতেই তা হারাতো।
যৌনতার বিকাশ, মনুষ্যত্ব বিকাশের অবিচ্ছেদ্য এবং সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ণ অংশ। ধর্ম, সমাজ, কুসংস্কার থাকবেই, কিন্তু দুনিয়াটাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে অধিকতর ভালো পর্যায়ে রেখে যাওয়া আমাদের কর্তব্য। এটা আমার না অবশ্য, জনৈক মনিষীর কথা।
যৌন শিক্ষা, ধাপ ৪, বয়স ১৫ থেকে ১৮
১) কিশোর-কিশোরিদের স্বাভাবিক যৌনতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানানো, এবং তাদের সুযোগ দেওয়া নিজেদের যৌনতা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার।
২) নিজেদের যৌনতা বিষয়ক আত্মবিশ্বাস, নৈতিকতা, স্বভাব এবং এর গভীরতা উপলব্ধি করার।
৩) তাদের শেখানো কীভাবে নিজের সাথে, সমাজের এবং পরিবারের অন্য সদস্যের সাথে সম্পর্কের সদ্ব্যবহার করা। যৌনতার বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম সনাক্ত করা, সে সম্পর্কে দায়িত্ব নিতে শেখা। এবং অন্যের যৌন চাহিদাকে সম্মান করতে শেখা।
৪) বিভিন্ন ধর্মে যৌন আচরণগুলো বিভিন্ন ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের সেগুলো সম্পর্কে অবহিত করা উচিত, সেই সাথে জন্মনিয়ন্ত্রন, নিরাপদ সঙ্গম-- এইসব মৌলিক শিক্ষাও দেয়া উচিত।
৫) কিশোর- কিশোরী এবং তরুন- তরুণীদের শেখানো উচিত কীভাবে যুক্তি দিয়ে লিঙ্গ বৈষম্যের বিপক্ষে তর্ক করতে হয়।
৬) ওদের শেখানো উচিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ করে থাকা, আর সম্মান করা এক বিষয় নয়। ওদের স্পষ্টভাষী হতে শেখানো উচিত, শিক্ষক কিংবা পরিবারের মুরুব্বি, কিংবা অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মচারী... সে যেই হোক না কেনো! লিঙ্গ বৈষম্য, যৌনতার অপব্যবহার, অমানবিকতা সব কিছুর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া, প্রতিবাদ করা, এবং পরিকল্পনা মাফিক পদক্ষেপ নেওয়া।
আজ এ পর্যন্তই ।
আসুন ছোট্ট একটা পদক্ষেপ নেই। ছোট্ট খোকাখুকুর জন্য ভয়হীন শৈশব রেখে যাই, কিশোর কিশোরীরা যেন বয়ঃসন্ধিতে সঠিক সিধান্ত নেয় সেই ব্যবস্থা করি , তরুন তরুণী যেন গভীর বিশ্বাসে আর ভালোবাসায় একটা শিশুকে নিরাপদ পৃথিবীতে আমন্ত্রণ জানায় তা সুনিশ্চিত করি।
এ লেখাটা লেখার সময় পড়া কিছু লেখা/ ব্লগ ভালো এবং মন্দ লেগেছে, আপনারা উৎসাহিত হলে পড়তে পারেন।
http://www.onebillionrising.org/building-to-one-billion-rising-revolution/
http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/21351167
https://www.childwelfare.gov/topics/systemwide/statistics/can/?hasBeenRedirected=1
http://www.siecus.org/index.cfm?fuseaction=Page.ViewPage&PageID=1197
http://english.bayynat.org/WorldofYouth/sex_and_children.htm
ফিনিক্স
লস আলামস
মন্তব্য
আপনার লেখাগুলো মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালী লেখা এটা।
@ অ্যাডমিন প্যানেল: লেখিকাকে 'অতিথি সচল' করার বিষয়টা বিবেচনা করার সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
খুব চুপচাপ নিজের কৈশোরের স্মৃতি ঢেকে রাখি। মাঝে মাঝে কারো লেখা পড়লে মনে হয়, আরে সে আমার বেদনার গোপন তীরে কি দাঁড়িয়েছিল আরো সঙ্গোপনে?
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
অসাধারণ একটা লিখা। নিজের ছোটবেলার কথা এখন কত অবলীলায় বলতে পারি, অথচ তখন কী ভীষণ কষ্টটাই না পেয়েছি। এমন এমন লেখা আর ও আসুক।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
এ ধরনের লেখা পড়ে ভাল লাগে.....ঐ সময়টায় ছেলে-মেয়ে সবাই কখনো অস্থির আবার কখনো অ্যাডভেঞ্চারাস সময় পার করেছি (অন্তত যারা ৯০ দশকের- এখনকার ছেলেপিলেরা বয়সের অনেক আগেই পরিপক্ক হয়ে যায় )....তবে মানসিক কষ্ট কিংবা দ্বিধাগুলো এখনো ভোগায়!!
কিরীটি, মানসিক কস্ট দূর করার ব্যবস্থা করুন। আমাদের ছোট্ট জীবন অনেক মূল্যবান, এই কষ্টকে স্থায়ী ভাবে বাড়তে দেয়ার কোন মানে হয় না । আনন্দময় ঘটনার জন্য মনের জায়গা খালি করুন
চমৎকার পোস্ট!
যৌনতা, পিরিয়ড, প্রেম... এ বিষয়গুলোতে প্রচলিত ভুল ধারণা ও শিক্ষার কারণে আমাদের সমাজে সব মেয়েই বুঝি একরকম অশুচি, পাপবোধ নিয়ে বেড়ে ওঠে। অন্যের নোংরা আচরণ, দৃষ্টি, স্পর্শের জন্য নিজেকেই দ্বায়ী করে, প্রতীবাদ করা তো দূর বড়দের জানানো’র কথাও ভাবতে পারে না। হয়ত তুচ্ছ কারণে নিজের ভেতর বয়ে বেড়ায় আজীবন বড় মানসিক যন্ত্রনার। যা থেকে সৃষ্টি হয় আরো জটিল সমস্যার। অথচ পরিবার ও স্কুল থেকে এই বিষয়গুলোতে শুরুতেই পরিষ্কার ধারণা দেয়া হলে অনেক বড় সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারত গোড়াতেই। সুন্দর, স্বাভাবিক জীবন প্রতিটা শিশুর অধিকার, যা নিশ্চিত করে সুস্থ ভবিষ্যৎ।
কিরীটি, মানসিক কস্ট দূর করার ব্যবস্থা করুন। আমাদের ছোট্ট জীবন অনেক মূল্যবান, এই কষ্টকে স্থায়ী ভাবে বাড়তে দেয়ার কোন মানে হয় না । আনন্দময় ঘটনার জন্য মনের জায়গা খালি করুন
সুলতানা সাদিয়া, দুঃখিত আপনার কৈশোরের স্মৃতির জন্য। সঙ্গোপনে না রেখে কথাগুলো আলোয় আনুন, ভাবুন কি হলে এমনটি হতো না। আসছে শিশুদের জন্য আপনার নেয়া পদক্ষেপ খুব জরুরী ।
আমি শুধু গল্পই লিখতে জানি। গল্পের আড়ালে শব্দের ভাঁজে কল্পনাকে বুনতে চাই। এসব নিয়ে প্রজাপতির কান্না নামে একটা উপন্যাস শুরু করেছিলাম সেই কলেজে থাকতে। শেষ করা হয়নি। তারপর কি করে যেন মেয়ে শিশুর মা হয়ে গেলাম। আমি আমার চারপাশের প্রজাপতিদের জন্য গল্প লিখি, শোনাই। এই আশায় যেন সঠিক কে খুঁজে নিতে পারে। শুভকামনা।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
মেঘলা মানুষ, ধন্যবাদ। সচল এর নিয়ম কানুন এখনো ভালোভাবে জানা হয় নি, তাই এখনি অতিথি সচল হতে চাই না ।
সচলের নিয়ম কানুন কঠিন কিছু না। অতিথি সচল হইলে পরে প্রথম পোস্টে যারা কমেন্ট করে তাদেরকে কমেন্টপ্রতি দুই ডলার করে ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করে দেয়ার নিয়ম পোস্টদাতার। আর যারা একটু পুরান সচল, আর সচলে ঢুকেও ঈদে-চান্দে, তাদেরকে একটু বেশি দেবার নিয়ম। আমারে নরমালি, নয়া অতিথি সচলরা দশ ডলার করেই ব্যাংকে পাঠায়। আপনি হইলেন আপনা মানুষ, ফিফটি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট আপনের জন্য। পাঁচ ডলার মাত্র। এক দর।
এই হইলো মোটামুটি নিয়নকানুন। এখন জানলেন। অতিথি সচল হওয়া মাত্র পোস্ট মারফত জানাবেন, চাহিবামাত্র ব্যাংক ডিটেইল দিতে বাধ্য থাকিবো।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
আহ , এখন বুঝলাম ডলারের দাম নিম্নমুখী কেন । সচল না হইতে চাইলে কি, যারা সচল তারা উল্টো ডলার পাঠাবে ?
অতিথি সম্বোধন বেশ মধুর , ওইটাই থাকুক ।
হুম, এতো জোর করছেন যেহেতু অনলাইন ব্যাংকিং এর পাসওয়ার্ডটাও দিয়েন ।
ভালো থাকবেন
হাচল হবার প্রধান ২ টা সুবিধা:
১। লেখা এডিট করা যায়, ফরম্যাটিং খারাপ হলে গোছানো যায় আর 'আয়নাদি' বানান ভুল ধরিয়ে দিলে ঠিক করে নেয়া যায়।
২। মন্তব্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায় সহজেই।
বন্দনা, ধন্যবাদ । সবাইকে জানান অস্বস্তি কিভাবে কেটেছিলো , অবলীলায় বলার শক্তি কোথায় পেলেন ... অনেকেই সেই শক্তির পথ খুঁজছে
রংতুলি, সহজ সমাধান এর জন্য কি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন , জানান ।
আপনি যেমন বলেছেন – “তাদের শেখাই”, “তাদের অবহিত করাই”, “তাদের জানাই”... এই শেখানো, অবহিত করা, জানানোর প্রথম ও প্রাথমিক দায়িত্ব পরিবারের, তারপর স্কুলের। এখন পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই যদি প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অভাব থাকে তাহলে তাদের দ্বারা কতটুকু সম্ভব। এরপর থাকে শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও সামাজিকীকরণের দ্বিতীয় ধাপ শিক্ষাব্যবস্থা, এখানেও শিক্ষকের সদিচ্ছার অভাব যৌনতাবিষয়ক আবশ্যক পাঠ অনাবশ্যকই থেকে যায়, যার ভুক্তভোগী হয়েছি আমরা, এরপর হয়ত আমাদের সন্তানেরা।
যৌনশিক্ষা কেবলে কিশোর-কিশোরি, তরুণ-তরুণীদের জন্য নয় বরং বাবা-মা, ভাই-বোন, মামা-কাকা পরিবারের সকল সদস্যের জন্য বাধ্যতামূলক হওয়া প্রয়োজন।
যৌনশিক্ষা সম্বন্ধে শিক্ষকদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। পরিবারের পর মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের দ্বিতীয় ধাপ শিক্ষাব্যবস্থা। যৌনতার সামাজিক, মনোবৈজ্ঞানিক গুরুত্ব শিক্ষকদের অবহিত করা, এবং এ ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ দাবী করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। প্রতিবছর কেবল যৌন এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকারের হার যেকোনো যুদ্ধ, মহামারী বা দুর্ঘটনার হারের চেয়ে কম নয় বরং বেশী। অতএব যৌনতা কোনমতেই হালকাভাবে নেয়ার মতো কোনো ইস্যু নয়।
According to a 2009 World Bank factsheet, domestic violence and rape ranks higher than cancer, motor vehicle accidents, war and malaria in the global estimates of selected risk factors for increased morbidity, disability and mortality, accounting for an estimated 5 to 16 percent of healthy years of life lost by females aged 15 to 44 years of age.
২০০৫ এ WHO কতৃক Global Fund for Women এর প্রথম প্রকাশিত রিপোর্ট মতে- About one-third of women around the world have suffered violence from an intimate partner. One in five women will experience rape or attempted rape in her lifetime, with at least half of sexual assaults occurring before she is eighteen years old.
পোস্টে যেমন যৌনতা-কে সন্মান করার কথা বলেছেন, bodily integrity বলে একটা কথা আছে। কোনো সম্পর্ক তখনই স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য হওয়া উচিৎ যেখানে এই bodily integrity যথাযথ মর্যাদা পায়। সহজ কথা হলো একজন সুস্থ মানুষের ভেতর ক্ষুধার মতই সহজাত যৌনচাহিদা থাকবে, এবং যেকোনো ক্ষেত্রেই তা অস্বীকার করার অর্থ হলো বডি ইনটেগ্রিটি অস্বীকার করা। এখানে বাবা কর্তৃক মেয়ের যৌনতাকে সন্মান জানানোও বডিলি ইন্টেগরিটির অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ক্ষেত্রবিশেষে বাংলাদেশেও honor killing (মেয়েদের নিজ সঙ্গী নির্বাচনের শাস্তি হিসেবে পরিবারের সদস্য - বিশেষত বাবা বা ভাই দ্বারা নিহত হবার ঘটনা) খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। পরিহাসের বিষয় সে একই পাকিস্তানে যখন কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়, তখন তাকে সে অভিযোগ প্রমাণ করতে চারজন ‘চরিত্রবান’ (!) পুরুষ সাক্ষী হাজির করা লাগে!
লিঙ্গবৈষম্য, নারীপুরুষ সমঅধিকার, পুরুষতান্ত্রিক পরিবার ও সমাজ কাঠামো – কথাগুলো হয়ত পচে গেছে, অথচ বাস্তবতা হলো সুস্থ সমাজ বিকাশে নারীপুরুষ বৈষম্যহীন সমাজের বিকল্প নেই। পরিবারের নারী সদস্যের সাথে হওয়া আচরণ ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে সে পরিবারের সদস্যরা কতটা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, বা ভবিষ্যতে আদৌ শ্রদ্ধাশীল হবে কিনা। অনেক বড় বড় সমস্যার শুরু কিন্তু ছোট জায়গা থেকে। পরিবারে এ অসম ক্ষমতা বিন্যাসের কুফল কেবল নারীদের না পুরা মানব জাতিকেই বইতে হয়। অতএব এর সমাধানও আসতে হবে সেখান থেকে।
ধন্যবাদ , আপনার লেখায় অনেক তথ্য আছে যা জানতাম না । Bodily Integrity ব্যপারটা নিয়ে একটা সম্পূর্ণ লেখা লিখুন ।
পরিবারের শিশুদের আগে বড়রা যৌন শিক্ষা নিয়ে জানবে , কথা বলবে সেটা আমার লেখার প্রথম উদ্দেশ্য । কিন্তু বাড়ীর বাবা, কাকাদের যৌনতা নিয়ে অবহিত করার উপায় কি ?
সম্ভব হলে Anne Firth Murray’র From Outrage to Courage বইটির চ্যাপ্টার ফাইভ পড়ে দেখতে পারেন। প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বেশ বিস্তারিত আলোচনা আছে।
WHO’র Violence and Injury Prevention প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন।
খটমট হিউম্যান রাইটস টার্ম থেকে আপনার স্পষ্টবাদী, সোজা-সাপটা ভার্সন চলুক, সাথে আছি।
বাবা-কাকাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতন করা ছাড়া তো আর কোনো উপায় দেখি না। আর একটা হতে পারে মিডিয়ার (জাতিয় পর্যায়ে টেলিভিশন, রেডিও ও সংবাদপত্রের) দায়িত্বশিল প্রচারণা।
সময় পেলে পড়বো । WHO এর ওয়েবসাইট ঘোরা হয় প্রায় । টেলিভিশন, রেডিও ও সংবাদপত্রে আমার কোন প্রভাব নেই , তাই " মুখে কানে " প্রচারনার কাজ হাতে নিয়েছি । ত্রিশ ষাট করে কোটি তে পৌঁছুবে এটাই ভাবি । সবার সাহায্য পাব এই আশা করি । সমালোচনা আলোচনা যাই হোক না কেন , সামাজিক মাধ্যমে যৌন শিক্ষা শব্দটা ছড়িয়ে দিন ।
লেখা ভালো লাগলো। কিন্তু শিরোনামের কারণে হয়ত লেখাটা প্রয়োজনীয় পাঠক হারাবে। বলতে চাইছি, হালকা চালের ব্লগরব্লগর ভেবে হয়তো এমন অনেকে লেখাটা পড়বে না যারা মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানলে আগ্রহ নিয়ে পড়তেন!
সচলায়তনে স্বাগতম। লিখতে থাকুন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ । লেখাটা জমা দেয়ার পর মনে হয়েছে । ভবিষ্যতে চেষ্টা করব লেখাকে কেন্দ্র করে শিরোনাম দিতে ।
প্রথম অংশটা নিয়ে হয়তো কোথাও ঝামেলা হয়েছে । দুটো পর্ব একসাথে পড়লে বিষয়বস্তু অনেক বেশী স্বচ্ছ হবার কথা । অন্তত সেভাবে লেখার চেষ্টা করেছি ।
ক।
লেখাটা অসম্পূর্ণ। মানে নিয়ম না বুঝে দুই অংশে ভাগ করে পোস্ট করায় গোড়ার অনেকটুকু বাদ গেছে।
মডুদের অনুরোধ করছি, বাদ পড়ে যাওয়া অংশটুকু ইনক্লুড করে দিতে।
ফিনিক্স, contact এট sachalayatan.কম এ মেইল কর।
খ।
গুলশান টিচার, মূলত আমাদের শারিরীক শিক্ষা আর গাহর্স্থ্য অর্থনীতির ক্লাস নিতেন। নাকি বাংলা দ্বিতীয় পত্রের মিস রূপালী? স্মৃতি ভোঁতা হতে শুরু করেছে মনে হয়।
গ। আমি খুব খুশি হতাম যদি 'ক' স্যারের পুরো নামটা এই পোস্টে লেখার অপশন থাকতো। বলে রাখা ভাল, শহরের সবচেয়ে নামকরা একটি সরকারি কলেজের এখন তিনি অধ্যক্ষ। হায়, সেলুকাস, শিক্ষক তুমি শ্রেষ্ঠ সবার..
ঘ। বাংলাদেশের অসংখ্য, অসংখ্য মেয়ে ছেলেবেলায়, বড়বেলায় এমনকি বুড়োবেলায় অনাকাঙ্খিত শারিরীক স্পর্শ, ক্ষেত্রবিশেষে যৌন নির্যাতন বা নিপীড়ন হজম করে বড় হয়। সেটা জানানোর এবং ভবিষ্যতে আরেকজন যাতে একই ভাবে লাঞ্জিত না হয়, সেই পথ বন্ধ করার জন্য মুখ খোলার সাহস শুধু পোশাকে আধুনিক আর আদতে ভীতু অনেক মানবীদেরই থাকে না। সত্যিকারের সাহসী হতে পারার জন্য তোকে অভিনন্দন।
হ্যাটস অফ মাই ফ্রেন্ড।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ক) সচলের নিয়ম এতো জটিল ক্যরে ? প্রথম পর্ব নাম বিষয়ক ব্যফুক সংশোধনের পর কাল রাতে জমা দিলাম । কিন্তু কীর্তি কলাপ এ লেখা দেখছি না । লেখা কোথায় সংশধোন প্রয়োজন সে সম্পর্কে মডুরেটর যদি কোন পত্র দিতেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকতাম ।
খ ) ভেবে দেখ ঐ জায়গায় আম্মা বা আন্টি থাকলে কি বলতো । শিক্ষিকাদের হয়তো ঐ শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ হয় নাই, তাই উনারা বুঝতে পারেন নাই কি বলছেন ।
গ) হুম । একদিকে থেকে নাম প্রকাশ না করাতে ভালো হয়েছে । আমার উদ্দেশ্য কার্যকরী কিছু করা । ঘৃণা , হতাশা এবং আরো অনেক তীব্র কিন্তু অর্থহীন অনুভূতি প্রকাশ করে শুধু ভালো গল্প হয়, কার্যকরী কিছু হয় না। আমি কখনই নিজেকে লেখিকা ভাবি না ।
ঘ) ধন্যবাদ । সামনে অনেক কাজ। সাহায্য পাবো তা ধরে রাখছি ।
সচলে স্বাগতম। খুব ভালো লাগলো এই পর্বটা।
লিখতে থাকুন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ
গুরুত্বপূর্ণ লেখা। এই ঢাক গুড়গুড় করতে যেয়েই যে কত জীবন নষ্ট হয়ে গেছে দ্বিধা আর কুসংস্কারে।
facebook
ঢাক গুড়গুড় করা তো আমাদের নিজেদের তৈরি করা । যারা ধর্ষণের সাথে জড়িত তাদের করা মানহানি মামলা , ধর্ষিতার করা মামলার চাইতে শক্তিশালী।
দুর্ঘটনার পর কে চায় পুলিশ বাবাজীর দু আঙ্গুল যৌনাঙ্গের ভেতর । কিংবা কে চায় কুমারী ত্বের অভাবে ভালো পাত্র হাত ছাড়া করতে ।তাই আমরা ঢেকে রাখি। গাঁটের পয়সা খরচ করে মানসিক চিকিৎসকের কাছে রোজ করে যাই ,যাতে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকি ।
কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের একদিনের প্রাণিবিদ্যা ক্লাসে ঢুকেই সম্মানিত শিক্ষক ঘোষণা দিয়েছিলেন, "আজকে যে ক্লাস আমি নিবো, সেখানে তোমরা কোনো প্রশ্ন করতে পারবা না। করলেও আমি জবাব দিবো না"। তো এই যদি হয় সেক্স এডুকেশন বিষয়ে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এক কলেজের স্বনামধন্য, বিখ্যাত এক জীববিদ্যা শিক্ষকের বক্তব্য, তাইলে গ্রাম বা মফস্বলের স্কুলের জনৈক শিক্ষকের বক্তব্য কেমন আশা করা যেতে পারে!
গলদটা আসলে অন্য জায়গায়। যেমনটা বহুব্রীহি'তে কাদেইর্যা বলেছিলো। 'ভালোবাসা হইলো শরমের ব্যাপার। যদিও শরমের ব্যাপার, তারফরেও এইটার দরকার আছে।'
স্কুল কলেজে শিখছি কাদেইর্যার করা প্রথম উক্তির মাজেজা। আর তার পরের জীবনে এসে শিখছি পরের উক্তির মাহাত্য।
আপনার সাহসী আর অতীব প্রয়োজনীয় লেখাটার জন্য
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
গলদটা কোথায় সেটা বোঝার চেষ্টা করছি ?
আমার প্রথম সন্দেহ দেশের আশি ভাগ মানুষ মুসলিম। কিন্তু মোটামুটি তাদের সবাই অশিক্ষিত মুসলিম । আমি এ নিয়ে অনেক বার কুরআন খতম করেছি , কিন্তু কয়েকটা শব্দের মানে ছাড়া আর কিছুই জানা হয় নি। তাই মায়ের পথ অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত মোল্লারা যখন যা বলতেন বিশ্বাস করে ফেলতাম।
চমৎকার লেখা। অবশ্যপাঠ্য টাইপ। আমরা বড় হয়েছি প্রচুর ভুল তথ্য নিয়ে। আমাদের পরের প্রজন্ম বড় হচ্ছে আরো বাজে অবস্থার মধ্যে। এই অবস্থার নিরসন হওয়া দরকার একদম জাতীয় পর্যায় থেকেই।
আপ্নার বাকি লেখাগুলিও পড়েছি। কিবোর্ডবাজি জারি থাকুক, জারি থাকুক আপনার কফি পান। আশা করি অতিশীঘ্র আপনি হাচলত্বের পথে হাঁটবেন।
-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------
আপনি শুরু করুন, দেখবেন একদিন সেটা জাতীয় হয়ে গেছে।
ধন্যবাদ ।
হা হা হা। আপনার কথা শুনে আমাদের এইখানকার স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের এক প্রেসিডেন্টের কথা মনে পড়ল। ঊনাকে কেউ যদি বলত যে, বস এইটা করলে কেমন হয়? উনি বলতেন, তাইলে এইটার দায়িত্ব তুমি নাও। এক পর্যায়ে দেখা গেল সবার মাথায় আইডিয়া গিজগিজ করলেও উনারে কেউ কিছু বলে না।
একজন জনস্বাস্থ্যবিদ হওয়ার সুবাদে "সেক্সুয়ালিটি, জেন্ডার এন্ড হেলথ" বিষয়টি নিয়ে কাজ করার কিছু সু্যোগ হয়েছিল। আর ছাত্র অবস্থায় থিসিস করেছিলাম যৌনতা ও যৌনরোগ নিয়ে মানুষের চিন্তাভাবনা বিষয়ে। দেখে শুনে বুঝেছিলাম এইখানে আমার পক্ষ থেকে করার আসলে কিছু নেই। ব্যাপারটা একজন মানুষের জন্য করাটা যতটা কঠিন, সরকার বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করা তারচেয়ে অনেক বেশি সহজ এবং কার্যকর হবে। আমি আমার পক্ষ থেকে যতটুকু করার দরকার করেছি। কিন্তু আমি ডাকলে যত মানুষ শুনবে, সরকার ডাকলে তারচেয়ে বেশি মানুষ শুনবে না কি?
যাই হোক, লিখতে থাকুন।
-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------
এটা আমাদের স্বভাব , অনেক কিছু করার ইচ্ছে আছে, কিন্তু নিজের সে দায়িত্ব নেয়ার সাহস নাই। আপনার স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট তো আমার প্রিয় হয়ে গেলো।
যাই হোক, দায়সারা হয়ে সরকারকে এরকম অনেক কাজের দায়িত্ব দেয়া যায় । বেচারা সরকার গরীব দেশের অনেক সমস্যা সামলাতে ব্যস্ত ।
আপনার থিসিস এর কাজ করতে গিয়ে আমি নিশ্চিত আপনি অনেক মানুষের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছেন । ভেবে দেখুন আপনার মতো আরও দশজন াজ এ নিয়ে কথা বলছে । কাল একশো । নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুনেছি কনডম বিলানো হয়েছিলো একবার ।
শরমের কথা গুলো খুব বেশী দিন শরমের থাকবে না বলে আমার মনে হ্য়।
আর আপনার পক্ষ থেকে যতটুকু করার কথা, সেটা মেপে দিলো কে ? আপনার এই কথাটায় একটা তাছিল্য আর দাম্ভিকতা আছে । দেশের জন্য কাজের সীমারেখা তৈরী করে নেয়া মানুষ মনে হয়েছে আপনাকে । আমি ভুল বুঝলে দয়া করে ব্যখ্যা করবেন ।
আপনি একা হবেন কেন ।
আমার নিজেকে একা মনে হয় না তো । আমি তো আশা করি , একদিন খুব ভোরে এক গর্বিত বাবা মা'র অনলাইন চিঠি পেয়ে ঘুম ভাঙবে । সেখানে লেখা থাকবে তাদের আদরের খোকাখুকু র সাথে তারা যৌন শিক্ষা নিয়ে কি কি কথা বলেছে আর তার বাচ্চা সেটা কিভাবে নিয়েছে ।
ধন্যবাদ ।
আপনার এই কথাটা আমার কাছে খুব জাজমেন্টাল মনে হয়েছে। আমি দুঃখিত।
-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------
আমি স্পষ্টভাষী ভগবান না ।
ঐ লাইনটার ব্যখ্যা চেয়েছি ।
ভাল লেগেছে। জরুরী লেখা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ভালো লেগেছে পড়ে ভালো লাগলো ।
নতুন মন্তব্য করুন