• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

দা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০২/০২/২০১৫ - ৩:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ সারাদিন ও বাড়িতে কাজ করতে করতে হাতে প্রায় ব্যথা হয়ে গেছে। এখন এই শেষবেলায় বাটিতে একটু সর্ষের তেল নিয়ে মালিশ করতে বসে চিনু। ফাঁকা বাড়ি, বিকেলটা কেমন যেন অলস লাগে। এই মুহূর্তে হাতে কাজ নেই তেমন, রান্না-বাড়া শেষ। একটু পরে যতীন ফিরবে, তারপর ছেলেটাও-তখন হয়ত আবার খাওয়া দাওয়া মাজা ঘষা, দু’একটা আলাপ আর তারপর ঘুম।আপাতত ছোট্ট উঠানটায় বসে এক হাতে বাটির তেল মেখে আরেক হাতে ঘষে ঘষে লাগাতে থাকে চিনু। পাশের বাড়ি থেকে কল্পনার চিৎকার ভেসে আসছে, উহ্, রোজ রোজ এক কাসুন্দি; কত মারও মানুষ খেতে পারে, বাবা! মার চিনু নিজেও কম খায়নি বিশেষ করে ও বাড়িতে কাজ করার ব্যাপারটা নিয়ে।

যতীনের ঘোর আপত্তি মাস্টারের বাড়িতে কাজ করা নিয়ে, আসলে সমস্যা ওর নিজের না, জানে চিনু-পাড়ার মানুষের এটা ওটা শুনে তাই নিয়ে চিৎকার, চেঁচামেচি আর পরে মারধোর করা যতীনের স্বভাব।বিশেষ করে ফিটফাট হয়ে থাকা, চুল বেঁধে সিঁদুর পড়াটা এ পাড়ার কারো পছন্দ নয়, সারাদিন ঘুঁটে কুড়াতে আর ছেলেমেয়ের পেছনে দৌড়াদৌড়ি, রান্নাবাড়া করতে যাদের দিন শেষ; সারাদিনে শাড়িটাও ঠিক করে পড়ার সময় পায় না, তাদের চোখে চিনুর তেল দেয়া চুল আর কুচি দিয়ে পরা শাড়ি তো আগুন ধরাবেই। আর তাছাড়া পাড়ার অনেক পুরুষেরও চোখে সর্ষের রঙ লাগে বটে, এটাও বিপদের কথা। তাই পাড়ার লোকে নিজেদের সময়মত যতীনকে একহাত নেয়। কিন্তু চিনু কী করবে, ও বাড়ির মাস্টারনি তো বলে দিয়েছে সবসময় ফিটফাট থাকার কথা, আর তাছাড়া ওদের দেখে দেখে চিনুর নিজেরও একটু গুছিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে আজকাল। মাত্র ক’মাস হলো কাজটা পেয়েছে ও, এইমুহূর্তে হাতছাড়া করা যাবে না কিছুতেই- অভাবের সংসারে যতীন কী-ই বা এমন করতে পারে। চিনু নিজে যাহোক কাজ করে টাকাটা-চালটা-আলুটা আর বছরে দু’খানা শাড়ি আনে, যতীনের ভিক্ষার টাকায় আর চালে কী হয়। সারাদিন ঘুরে তো কখনও কথনও তিন সেরের উপর ওঠে না চাল, দশ-বিশটা টাকা, প্যারালাইসিসে বাঁকা হয়ে যাওয়া ডান পা’টা নিয়ে খুব বেশি হাঁটতেও পারে না ও যদিও ওই পা’টাই ভিক্ষা পাওয়ার জন্য ওর সবচেয়ে বড় সহায়। ওর ভরসায় থাকলে না খেয়ে থাকার যোগাড়। আর ‘ফকিরের বউ’ কথাটার অপমান চিনু হাড়ে হাড়ে টের পায়। মুকুলের ভরসা তো আরও করা যায় না; কতই বা বয়স ছেলেটার! কাজ শুরু করলো এই ক’দিন হয়-তাও এখনও কাজের কোনো ঠিকঠিকানা নেই, যখন হাতের কাছে যা পাচ্ছে, তাই করছে এখনও, সবদিন তো কাজও থাকে না। তাছাড়া মাস্টারনি মানুষ ভালো, রোজই এটা সেটা দিয়ে দেয় বাড়ির জন্য, অভাব-অনটনে হাত বাড়ায়, কড়া কথাও বলে না, চিনু কেন কাজটা ছাড়বে তবে?

হাতে ঘষে ঘষে তেলের বাটিটা নিঃশেষ করে ওঠে চিনু। অন্ধকার বেশ ঘন হয়ে এসেছে এখন। এখনও ফেরার নাম নেই যতীনের, মুকুলেরও।দুশ্চিন্তা হতে থাকে চিনুর, যতীনের জন্য, ছেলের জন্য। সাথে ক’দিন ধরে নিজের জন্যও দুশ্চিন্তা যোগ হয়েছে-ফাঁকা বাড়িতে একলা থাকতে ভয় করে ওর এখন। বাড়ির পাশ দিয়ে শিস দেয় কেউ নিয়মিত, বিশেষ করে যখন ও ছাড়া কেউ বাড়িতে থাকে না। রাতে ঘরের পাশে মৃদু খসখস শব্দ হয়।বাঁশের চিকন বেড়ার পলকা ঘেরা দেয়া ঘর, ভয় করে চিনুর আজকাল খুব। ফিটফাট হয়ে থাকার ফল কি এতদূর পৌঁছে গেছে-বুঝতে পারে না চিনু।হাত মুখ ধুয়ে সন্ধ্যাবাতি জ্বালে ও।
ভাত খেয়ে বারান্দায় কুপি নিভিয়ে দিয়েছে মুকুল। আশেপাশের অনেকেই চিকন তার টেনে বাড়িতে কারেন্ট নিয়েছে, চিনুকেও বলেছিল নিতে-যা, অত টাকা আছে নাকি ওদের? এখনও তাই কুপিই ভরসা চিনু-যতীনের সংসারে, কতক্ষণই বা জ্বলে, এই খাওয়াদাওয়া পর্যন্তই, তারপর ঘুমানোর সাথে সাথে কৃপি নিভে যায়। আজ অবশ্য কুপি নেভায় না এত তাড়াতাড়ি, ভাবে যতীনের সাথে একটু আলাপ করবে বিষয়টা নিয়ে, ভয়টা আজকাল বুকের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে-কে করে এমন? কে রাতের বেলা খসখস করতে থাকে ঘরের পেছনে?

যতীন এখন চোখ বন্ধ করে একটানে ফুঁ দিয়ে যাচ্ছে অর্ধেক শেষ হওয়া আনছার বিড়িতে; আশপাশটা ধোঁয়ায় আবছা লাগে, কুপির লালচে মাখানো কালো রঙের পাকানো ধোঁয়ায় আরও বেশি আবছা হয়ে উঠছে কিছুটা জায়গা। বলতে গিয়েও থেমে যায় চিনু-থাক, মানুষটা সারাদিন পর বাড়ি ফিরেছে, অযথাই দুশ্চিন্তা করবে। আর তাছাড়া সন্দেহ বড় কম নয় যতীনের, কী জানি, এসবের জন্য শেষপর্যন্ত চিনুকেই না দোষী ভাবে। হয়ত রেগে গিয়ে গালাগাল করবে। তাইতো, এ কথা এতক্ষণ মনেই হয়নি চিনুর। ভয়ের চোটে মনে হয়েছিল যতীনকে বলা দরকার। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, থাক।

বিড়ি শেষ করে মুড়োটা মাটিতে ফেলে দেয় যতীন, নেভায় না-স্যাঁতসেতে মাটিতে একটু পর এমনিতেই নিভে যাবে। পাশ ফেরে- “কাইলকা আর যাইম না, রে। ঠ্যাং গুলাত খুব বিষ ধইরচে।” মাঝে মাঝেই যতীনের অবশ্য এমন ঠ্যাং-য়ে ‘বিষ’ ধরে, এ নতুন কিছু নয়। অনিচ্ছাসত্তেও চিনু বলে একবার-“ত্যাল মালিশ করি দেইম নাকি?” “না, থাউক, তুই সারাদিন ম্যালা কষ্ট কইরচিস”-যতীনের কথায় একটু অবাকই হয় চিনু। ওর কষ্টের হিসাব তাহলে করে নাকি যতীন? কোনোদিন মনে হয়নি তো। সে যাক, একটু ভালোও লাগে এখন চিনুর। জানায়, যতীন চাইলে তেল মালিশ করে দেবে ও। না, উদাস মুখে মাথা নাড়ে যতীন, শুয়ে পড়ে; বলে- “কুপিটা নিবি দিয়া শুতি পড়। আইত ম্যালা হইচে।” এমনই যতীন, নিরস, অল্পভাষী। তা শুতেই হবে অবশ্য, গ্রামের দিকে রাত কম হয়নি। ঘড়ির বালাই নেই চিনুর বাড়িতে, আশেপাশে দু’চার বাড়িতে নেই, তবে রাত একটু ঘনিয়ে এলেই খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়ে সবাই; ওঠে সেই কাকভোরে। খোঁপাটা দু’হাতে ঠিক করে কুপি নেভাতে যায় চিনু, হঠাৎ করে চোখ পড়ে কুপির আলোয় ঝিকিয়ে ওঠা দা’টার উপর। হাত বাড়িয়ে বেড়া থেকে দা’টা নিয়ে বালিশের নিচে রাখে চিনু, যতীন হাঁ করে দেখে, চোখে জিজ্ঞাসা নিয়েই বলে, “দাও দিয়া তুই কী করবু রে?” চিনুর একবার মনে হয় বলে ফেলে, কী ভেবে বাতিল করে দেয় চিন্তাটা। একটু হেসে বলে-“দুই দিন থাকি হ্যানা খারাপ স্বপন দ্যাকোচো।দাও খান থুয়া দ্যাকো কী হয়”।

দুঃস্বপ্ন তাড়ানোর প্রাচীনতম উপায়টা এইমুহূর্তে যতীন বিশ্বাস করে কী করে না, তবে কিছু বলে না। নড়েচড়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে। কুপিটা নিভিয়ে শুয়ে পড়ে চিনু। কয়েকদিনের চেয়ে আজ নিশ্চিন্ত লাগে চিনুর, রাতদুপুরে ঘরের পেছনে খসখস শব্দ পেলেও ও জানবে ভয়ের তেমন কিছু নেই; হাতের কাছে দা আছে, বালুতে ঘষা ঝকঝকে ধারালো দা।

দেবদ্যুতি রায়


মন্তব্য

মজিবুর রহমান  এর ছবি

আপনি পাড়াগাঁয়ের ভাঁড়ার থেকে রস খেয়েছেন ঢের , আর তা না হলে গল্পে এমন গ্রামীণ গন্ধ , এমন প্রান্তিক নিখুঁত বর্ণন অসম্ভব !!!!! ^:)^ এতেও কম হয়, অষ্টাঙ্গে প্রণামের একটা ইমো লাগত !!!!

মজিবুর রহমান

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার যা লেখার হাত, তার কাছে এ কিছুই নয় :)), অজস্র ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়েছেন বলে । তবে আমি আজন্ম পাড়াগাঁয়ের মানুষ, শতভাগ; আমার চেনা পাড়াগাঁয়ের প্রতিটি মানুষের থেকেই ভাবতে শিখেছি, প্রতিটি জীবন একেকটি আলাদা গল্প সেখানে।

দেবদ্যুতি রায়

এক লহমা এর ছবি

ভাল লেগেছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে, এক লহমা

দেবদ্যুতি রায়

Buly এর ছবি

খুব ভালো লাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ, Buly

দেবদ্যুতি রায়

শিশিরকণা এর ছবি

এইরকম গল্প গুলা পড়ার লোভেই সচলে ঢুঁ মারা হয়। (Y) (Y)

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

কনীনিকা এর ছবি

ভাল লাগলো (Y)

------------------------------------------------------------------
It is impossible to be a mathematician without being a poet in soul.

অতিথি লেখক এর ছবি

এই রকম মন্তব্য আমাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে, :) অনেক ধন্যবাদ, শিশিরকণা

দেবদ্যুতি রায়

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্যে আমারও ভালো লাগলো, ধন্যবাদ, কনীনিকা

দেবদ্যুতি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গুড জব! লেখা চালিয়ে যান।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

গান্ধর্বী এর ছবি

ঝরঝরে লেখা। নিয়মিত লিখুন।
শুভকামনা।

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

অতিথি লেখক এর ছবি

অজস্র ধন্যবাদ, ষষ্ঠ পাণ্ডব :)

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, গান্ধর্বী, চেষ্টা তো থাকবেই :)

দেবদ্যুতি

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

লগ অফ অবস্থায় পড়েছি প্রথমদিনই। গল্প পেলে আমার মনটা খুশি হয়ে ওঠে। ভাল লেগেছে। পারফেক্ট ছোট গল্প। শুভকামনা।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, সাদিয়া’পু। আপনি যা সুন্দর লেখেন..... :)

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

(Y)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

:)

নাশতারান এর ছবি

বাহ! (Y)

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ :)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।