পাশে চায়ের কাপটা নিয়ে বসে আছি বেশ কিছুক্ষণ। নানা ভাবনা চিন্তার মাঝে গরম ধোঁয়া ওঠা চা কখন যেন ঠান্ডা হয়ে গেছে। ইদানিং চা এর নেশাটা খুব পেয়ে বসেছে, অফিসে, ক্যাম্পাসে বাসায় একা ঘরে সব সময় চায়ের কাপটাকেই সবচেয়ে বেশি আপন মনে হয়। একবার কোলকাতার একটা বই এর দোকানে লেখা দেখেছিলাম, “Royalty, liberty, sensuality… you will find tea in all good things of life!” কথাটা বেশ মনে ধরেছিল। বেশ ছোট ছিলাম তখন, কিন্তু ওই কথাটার সাথেই মনে চায়ের প্রতি একটা দুর্বলতা তৈরী হয়েছিল। চায়ের কাপের মাঝেই হয়েছে কত বন্ধুত্বের সৃষ্টি! চা নিয়ে বসে থাকতে থাকতে মনে পড়ছে মাস পাঁচেক আগে নেপালে পোখারার সারাংকোটের চূড়ায় একটা ছোট্ট রেস্তোরায় আমি আর আমার দম্পতি বন্ধু সকাল বেলার হালকা রোদে চারিদিকে আকাশ ছোঁয়া পাহাড়ের মাঝে বসেছিলাম নাস্তা করার উদ্দেশ্যে। সেদিন প্রথমে ভেবেছিলাম চা খেয়েই উঠে যাব, কি মনে হতে আরও কিছুক্ষণ বসলাম। রেস্তোরার কর্মচারী ভদ্রমহিলা মেনুটা দিয়ে যেতেই আমাদের চোখ পড়ে তার দিকে। কিছুক্ষণ আগে পাহাড়ে ওঠার পথে আমার সহযাত্রী বন্ধুটিকে এক ভদ্রলোক হঠাত জিজ্ঞেস করে বসে তার কোন এখানে বিনোদনের কোন প্রয়োজন আছে কি না! ইচ্ছা করলে সে ব্যাবস্থা করে দিতে পারে! আমি আর আমার আরেক বন্ধু তখন খানিকটা পিছিয়ে পড়েছি। যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল উনি বেশ মজা পেয়েই বলেছিলেন, “না, এবার আমার স্ত্রী সাথে আছে তো, পরেরবার নাহয় বিনোদনের ব্যাবস্থা করা যাবে!” রেস্তোরার আশে পাশে আমরা বেশ অবাক হয়েই খেয়াল করি, কয়েকজন শিশু ঘোরাফেরা করছে যাদেরকে দেখেই বোঝা যায় যে তারা নেপালী নয়! তাহলে কি তারা এই কোন এক অতিথি পর্যটকের একরাতের বিনোদনের ফেলে যাওয়া স্মৃতি? রেস্তোরার কর্মচারী ভদ্রমহিলাটিকে দেখেও সন্দেহ হয়, সাধারণ পাহাড়ি ধাঁচের চেহাড়া নয় তার, কিন্তু জন্ম থেকেই তিনি এখানে। খুব বেশি দৌড়ঝাপের অভ্যাস না থাকায় পাহাড় চূড়ায় উঠতে বেশ ভালই বেগ পেতে হয়েছিল আমাদের। সেখানে এমন জায়গায় এরকম একটা রেস্তোরা চালানোর জন্য সব কিছু বয়ে উপরে তুলতে কি পরিমাণের কষ্ট করতে হয় তা আমরা চিন্তা করেও কূল পাচ্ছিলাম না! হয়ত সেই মানুষটা যিনি কিনা তার একরাতের বিনোদনে রেখে গিয়েছেন তার এক ফোঁটা অংশ, সে জানেই না তার সেই অংশের জীবনটা কিভাবে কাটছে হিমালয়ের দেশে লোকালয় থেকে দূরে কিছু পর্যটকদের আকৃষ্ট করে!
আমার বাকেট লিস্টের ইচ্ছে তালিকায় নেপাল ভ্রমণ আর হিমালয় দর্শন অনেকদিন ধরেই ঝুলে ছিল! সুযোগ পেতেই আমার মাস্টার্স করতে গিয়ে পরিচিত হওয়া এক বড়ভাই আর তার স্ত্রীর সাথে চলে গিয়েছিলাম হিমালয় দর্শনের স্বপ্ন পূরণ করতে! গিয়ে শুনি হিমালয়ের দেখা এভাবে মিলবে না। একটা প্লেনে চড়ে হিমালয়ের চারপাশে ঘোরার একটা প্যাকেজ আছে, নয়ত ট্রেকিং করে কিছুদূর উঠে দেখতে হবে! বিমান যাত্রা নেহায়েত প্রয়োজন না পড়লে করার কোন ইচ্ছাই হয় না। আর ট্রেকিং করার মত প্ল্যান করে তো আসা হয় নাই। বেশ হতাশ হলাম শুনে, আসার আগে বড় গলায় স্ট্যাটাস দিয়ে এসেছি ফেসবুকে “Everest calling”! হিমালয় দর্শনই যদি না হয় তবে আর নেপাল ভ্রমণের মানে কি? অতএব হিমালয় কন্যা অন্নপূর্ণাই ভরসা! সারাংকোটের চূড়ায় ওই রেস্তোরাটা যেখানে ছিল সেখান থেকে অন্নপূর্ণা সূর্যের ফাঁক দিয়ে শ্বেতশুভ্র রাজকুমারীর মত মাথা উঁচু করে তার দ্যুতি ছড়াচ্ছিল! প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আগে কখনও লেখার চেষ্টা করি নি। লিখতে গিয়ে কেন যেন মনে হচ্ছে যা লিখতে চাইছি তা ঠিক লিখে উঠতে পারছি না। কিন্তু ছবির মত শহর পোখারার হোটেলের জানালা থেকে সন্ধ্যা বেলার সূর্য ডোবার সাথে সাথে অন্নপূর্নার সেই দৃশ্যটার মত সুন্দর আর কিছু দেখেছি কিনা তখন ঠিক মনে করতে পারছিলাম না। সাদা একটা পাহাড় চূড়া, ডুবতে থাকা সূর্যের আলোর প্রতফলনে কি যেন একটা অদ্ভুত জিনিস দেখলাম। মোটামোটি মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে ছিলাম, যতক্ষণ অন্ধকার না হয়ে আসে। যাহোক হিমালয় না দেখতে পারলেও তখনকার মত অন্নপূর্ণার সৌন্দর্যেই আমরা বিমোহিত ছিলাম অনেকটা।
নেপালের উদ্দেশ্যে যাত্রার শুরুতেই দেশের এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনের সময় এক বিপত্তি। আমরা তিনজনই ছিলাম! ইমিগ্রেশন অফিসার বেশ অনুসন্ধিতসু স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কে কার কি হন? আমার সহযাত্রী বড়ভাই বন্ধুটি বললেন, একজন আমার স্ত্রী, আরেকজন আমার বান্ধবী! বলামাত্রই আঁতকে উঠলেন ভদ্রলোক, “বান্ধবী!” “কার বান্ধবী?” আমরাও বেশ অপ্রস্তুত হয়ে খেয়াল করলাম, আসলে বন্ধুত্বের সম্পর্কটিকে খুব সহজ ভাবে নেয়ার মত মানসিকতা এখনো দেশের অনেক মানুষের গড়ে ওঠে নাই। হাসি পেয়ে গিয়েছিল ওনাদের আচরণে! “আমরা আসলে এক ইউনিভার্সিটিতেই একসাথে পড়েছি কিছুদিন, অতএব বন্ধুত্বটা সেখানেই!” “তা তো বুঝলাম, কিন্তু আপনার বাসায় জানে, যে আপনি ওনাদের সাথে যাচ্ছেন? একটা ফোন করেন তো বাসায়!” অতএব আমাকে বাসায় ফোন করে তাকে আশ্বস্ত করতে হল! এবার উনি খানিকটা শান্ত হলেন! পড়ে অবশ্য আমাদের বলেছিলেন, “কিছু মনে করবেন না, দেশের স্বার্থেই এই জিজ্ঞাসাবাদ!” বুঝতে পারলাম না, উনি কি আমাদের নারী পাচারকারী গোছের কিছু বলে সন্দেহ করেছিলেন কি না! নেপালে পোছাতেই শুনতে শুরু করলাম আমাকে দেখতে নাকি বাঙ্গালী না, নেপালীদের মতই লাগে, তাই তারা বেশ অবাক হচ্ছিল আমি কেন বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে ঘুরছি! ছোট ছোট চোখ, আর খানিকটা বোঁচা নাক, এই হল নেপালীদের বৈশিষ্ট্য যেটা কিনা খানিকটা আমারও!
কাঠমুন্ডুর বাজেট হোটেলে রাতে থাকার ব্যাবস্থা করা হয়েছিল আমাদের। হোটেলের কিছু অল্পবয়স্ক কর্মচারী ভাঙ্গা ইংরেজীতে আমাদের সাথে কথা বলছিল। তাদের মধ্যে একজন দশ বারো বছর বয়সী কিশোর আমার ট্রলীটা নিজে থেকেই উপরে নিয়ে গেল। তাকে ধন্যবাদ জানাতে বুঝতে পারলাম সে ইংরেজী একেবারেই বোঝে না! পাশের জনকে জিজ্ঞেস করে বুঝে নিল আমি কি বলছি! ছেলেটা দেখতে খুবই সুন্দর, মায়া মায়া চেহাড়া! ছেলেটাকে দেখেই মাথায় কাশ্মীরের ফুল বোঝাই নৌকায় চরে বেড়ানো একটা কিশোরের ছবি চোখে ভেসে ওঠে। পরে জানতে পেরেছিলাম ছেলেটা আফগানিস্থান থেকে পালিয়ে এসেছে, রেফিউজি! তার মা বাবা কে এক রায়টে মেরে ফেলা হয় তারই চোখের সামনে, তখন থেকেই পালিয়ে সে নেপালে চলে আসে। এখানে এই হোটেলের মালিক তাকে হোটেল বয় এর কাজ দিয়ে উদ্ধার করে। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম শুনে, মানুষের জীবন তাকে কোথায় নিয়ে যাবে এটা আদৌ কে বলতে পারে! খুব মায়াবী ছেলেটার হাসিটা ছিল আরো মায়াবী, চলে আসার সময় তাকে বলে এসেছিলাম ভাল থাকতে, কে জানে আদৌ ভাল থাকতে পারবে কিনা সে তার বাকি জীবনটায়।
নেপালে চারিদিকেই পাহাড়, সত্যজিতের ভালবাসার পাহাড়, ফেলুদার হেঁটে চলা পাহাড়ী রাস্তা! দেখতে দেখতে কেমন যেন অস্থির লাগতে থাকে, এত বিশালতা কেন যেন অবাস্তব মনে হয়। কাঠমুন্ডু থেকে পোখারার রাস্তাটা খুব সুন্দর, পাশে পাশে স্রোতসীনি ত্রিশুলিয়া নদী। পুরোটা রাস্তা আমাদের ভাড়া করা গাড়ীর চালকের প্লে লিস্টের নেপালী গান শুনতে শুনতে যাচ্ছিলাম। নেপালের খুব প্রসিদ্ধ একটা গান “রেশম ফিরিরি”, বিভিন্ন জায়গায় থেকে থেকেই এই গান শুনতে পাওয়া যায়। যেটার প্রথম অংশের অর্থ দাঁড়ায়, “Like a silk ribbon/scarf flying freely in air, I wish to fly over the hills”! আমাদের গাড়ীটা মোটামোটি উড়েই উড়েই পাহাড়ী রাস্তাটা পাড় হচ্ছিল। গাড়ীচালক হিন্দু নেপালী, নাম সুরেষ, বেশ ধার্মিক গোছের ভদ্রলোক! আমাদের নেপালের বিভিন্ন মন্দির ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিল! নেপালে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় বৌদ্ধ বেশি, কিন্তু আসলে বেশিরভাগই হিন্দু! বড় বড় চোখের প্রতিকৃতি দেখতে পাওয়া যায় বিভিন্ন জায়গায়। বলা হয় বুদ্ধ তার বড় বড় চোখ দিয়ে শহরটাকে রক্ষা করে চলেছে। Buddha’s vigilant eyes! নেপালের মানুষকে কেন যেন একটু অলস গোছের মনে হল। নিজেদের শহরকে খুব বেশি উন্নত করার ইচ্ছা খুব একটা নাই। ঢাকা কাঠমুন্ডুর চেয়ে বেশ ভালই উন্নত মনে হল। আর একটা অদ্ভুত ব্যাপার হল, যেই পর্যটকদের উপর দেশটা টিকে আছে তাদেরকে কেমন যেন ঠাকাবার প্রবণতা। কোন কিছুর দাম জিজ্ঞেস করলে, কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিচ্ছিল বিক্রেতারা, যেন ভেবে একটা দাম বের করে তারপর বলছে, একেকজনের জন্য একেকরকম! আর কাঠমুন্ডুর তুলোনায় পোখারা অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন! তবে কাঠমুন্ডুর একটা জিনিস ভাল লেগেছিল, বেশ সাধারণ চেহাড়ার আন্টি গোছের মানুষজন খুব স্বাছন্দ্যে স্কুটি চালাচ্ছেন, যেটা ঢাকাতে এখনও পর্যন্ত বেশ অচেনা। দু একজন মেয়ে বাইকার যাও দেখা যায়, আমরা তাদের অতি মডার্ণ আখ্যা দিয়ে বসি! মোট কথা এদেশে এখনও বিষয়টা সর্বসাধারণের দৃষ্টির বাইরে!
শেষদিন আমরা তিনজন কাঠমুন্ডু হেঁটে হেঁটে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে বেরাই। ওইদিন ছিল দশমী! অতএব সারা শহর উৎসব মুখর! খুব ভাল লাগছিল হাঁটতে, পূজা দেখতে। খুব জাকজমকপূর্ণ রঙ্গীণ একটা দিন ছিল সেইদিন। আমরা একটা নেপালী বই এর দোকানে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নেপালী লেখকদের বই ঘাটাঘাটি করলাম। বোঝার চেষ্টা করছিলাম ওখানের হুমায়ুন আহমেদ কে! বিক্রেতা মঞ্জুশ্রী থাপা আর নারায়ণ ওয়াগলে নামের দুই লেখকের বই দেখিয়ে দিলেন আমাদের বেস্ট সেলার হিসাবে।
আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে দর্শনীয় মন্দিরগুলোর সাথে সাথে বিশেষ স্পা সেলুনের ব্যাবস্থা! আপাত দৃষ্টিতে খুব বেমানান হলেও চিন্তা করে দেখালাম ধারণার উতপত্তিটা কোথায়! যেকোন উপাসনালয়ের মাঝে শান্তির প্রচারণার ধারণা লুকানো। আর শান্তির সাথে প্রার্থণা, ধ্যান! দেখান থেকেই রিল্যাক্সেশন বা শিথিলতা! মানসিক থেকে শারীরিক! আর সেখানেই বোধহয় স্পা এর সূচনা! তবে পাহাড়ের বিশালতার মাঝে মনটা নিজে থেকেই অনেক শান্ত হয়ে যায়, খুব চুপচাপ কিছুক্ষণ একা বসে থাকতেও খুব ভাল লাগে এমন একটা জায়গায়! সারাংকোটের চূড়ায় এভাবেই বসেছিলেন এক শ্বেতাঙ্গ দম্পতি! পেছন থেকে দুজনকে দেখে খুব ভাল লাগছিল, এমন একটা মুহুর্ত কাছের একটা মানুষের সাথে কাটানোর জন্য মনে হয় অনেকদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায় অনায়াসে! শেষরাতে কাঠমুন্ডুর হোটেলের ঠিক সামনে এক ভদ্রলোক গিটার বাজিয়ে এক নেপালী শিশুকে শোনাচ্ছিলেন “ইয়ে দোস্তি হাম নেহি ছোড়েঙ্গে”! সন্ধ্যায় ঠান্ডা বাতাসের সাথে গানটা ছিল পুরো পারফেক্ট কম্বো! নেপাল ভ্রমণের টুকরো স্মৃতিগুলো ভুলে যাওয়ার আগেই লিখে রাখতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু ঠিকমত সাজিয়ে লিখতে পারলাম না বোধহয়! সাতদিনের যাত্রায় সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতা ছিল প্যারাগ্লাইডিং! অনেক ইচ্ছা ছিল করার, কিন্তু পারব কি না বুঝতে পারছিলাম না! কিন্তু সাহস করে করেই ফেললাম। পাহাড় থেকে লাফ দেবার ঠিক আগ মহুর্তে বেশ ভয় পেয়েছিলাম! কিন্তু ঠিক তারপরই টের পেলাম আমি আকাশে! বিষয়টা মোটেই খুব কঠিন কিছু না, আধা ঘন্টা আকাশে উড়ে পাখি হবার সাধ কিছুটা মিটল আমাদের! আমার সাথের পিছনে বসা নেপালী পাইলট ঝিংঝিং, ভিডিও করতে করতে জিজ্ঞেস করছিল আমি কিছু বলতে চাই কি না! আমার শুধু মনে আছে আমি বারবার শুধু এটাই বলছিলাম, “It feels amazing! I can’t believe I’m having this experience!”
সব মিলে সাতটা দিন খুব দ্রুতই কেঁটেছিল। স্বপ্নের হিমালয় দর্শন আদৌ সম্ভব হয় নি। কিন্তু যা পেয়েছি সেটাও কম কিছু না, বরং অনেক বেশি! ইচ্ছে তালিকার একটা ইচ্ছে পূরণ হল, এবার অন্য একটা নিয়ে ভাবনা শুরু করি! আর বলা অপ্রাসঙ্গিক, এর মধ্যে দুই কাপ চা শেষ করেছি লিখতে লিখতে!
আনীকা
মন্তব্য
সব নেপালির চেহারাই কি "সাধারণ পাহাড়ি ধাঁচের"? বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন সেকশনে আমার দুই নেপালি সহপাঠী ছিলেন, দু'জনেই গড়গড়িয়ে বাংলা বলা শিখে গিয়েছিলেন, শেষ বর্ষে গিয়ে জানতে পারি যে তারা বাঙালি নন। নেপালিদের চেহারা সম্পর্কে আপনার ধারণার সঙ্গে না মেলার কারণেই যদি আপনি কোনো নেপালি শিশু বা মহিলাকে "পর্যটকদের বিনোদনের ফসল" ভাবার সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান, সেটা কি ঠিক হবে?
না তা ঠিক হবে না। তবে ওনার চেহাড়াটা কিছুটা পশ্চিমা ধাঁচের ছিল বলেই এটা ধারণা করছিলাম। তবে হ্যা, এটা একান্তই একটা আনুমান, কোন সঠিক জানা তথ্য থেকে বলা নয়। ভাবছিলাম, এমনটা তো হতেই পারে, যে এই মানুষ গুলো তাদের আসল পরিচয় থেকে অনেক দূরে।
লেখা ভাল লাগছে, লিখতে থাকুন
[ওপরে হিমু ভাইয়ের কথার সাথে একমত। আমিও একটি প্রতিষ্ঠানে নেপালি সহপাঠী পেয়েছিলাম। ঠিক এক মাসের মধ্যে সে বেশ ভাল বাংলা শিখে গেছিল। তার চেহারাও "সাধারণ পাহড়ি ধাঁচের" ছিলনা, বরং তাকে গড়পড়তা বাঙালিদের মাঝে ছেড়ে দিলে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব ছিল। আর যদিও দু মাস পরে ঐ প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে এসেছিলাম, তবু আমার স্বল্প অভিজ্ঞতামতে সে অসম্ভব বন্ধুবৎসল ছিল। ]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অনেক ধন্যবাদ
আনীকা
বাহ্! স্বপ্ন পূরণ হলো তবে একটা।
ব্যাকেট লিস্টে এভাবে টিক দিতে দিতে স্বপ্ন পূরণ ঘটতে থাকার পর্যায়ে দেখবেন
পিতিমির প্রায় সব জায়গাতেই পর্যটকদের কাছ থেকে বাড়তি পয়সা চাওয়ার প্রবণতাটা বিক্রেতাদের কেমন স্বভাবজাত।
চাখোর যখন তখন এটা পড়ে মজা পাবেন।
সচলে স্বাগতম। লেখালিখি চলুক।
ধন্যবাদ আপনাকে। চা বিষয়ক লেখাটা পড়ে আসলেই অনেক মজা পেলাম।
আনীকা
ভ্রমণ সবসময়ই ভাল লাগে। দুঃখের ব্যাপার হল দেশের বাইরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ এখনও হয় নি। আপনাদের লেখাগুলো পড়লে একইসাথে উৎসাহ পাই এবং আফসোস হয়। কবে যে বাইরে ঘুরতে যাব?
ফাহমিদুল হান্নান রুপক
আমি আশায় এছি এরপর ভূটান যাব। শুধু বাইরে না, দেশের ভিতরও ঘুরতে যাওয়া উচিত। কয়েকদিন আগে একটা ফেসবুক পোস্ট দেখছিলাম, বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য খুব ভাল একটা দেশ। দেশে খানিকটা নিরাপত্তার অভাব থাকলেও অনেক জায়গা আছে অনেক সুন্দর। অনেক রকম মানুষের সাথে পরিচয় হয়। অনেক উপলব্ধি হয় নতুন করে।
আনীকা
লেখাটা ভাল লেগেছে অনেক । তবে আর একটু হয়তো বলা যেত । আপনার লেখার উপর ভর করে আমিও নেপালটা মনে মনে ধুরে আসলাম।
----------
রাধাকান্ত
অনেক ধন্যবাদ! সত্যি সত্যি ঘুরে আসতে পারেন। একবার অবশ্যই যাওয়া উচিত ওখানে।
ক)
অণ্ণ > অন্ন,
চেহাড়া > চেহারা
ব্যাবস্থা > ব্যবস্থা
পাড় > পার
ঘাটাঘাটি > ঘাঁটাঘাটি
দৌড়ঝাপের> ঝাঁপের
মোটামোটি > মোটামুটি
স্বাছন্দ্যে > স্বচ্ছন্দে
প্রতফলনে > প্রতিফলনে
ট্রলী > ট্রলি
রঙ্গীণ > রঙিন
প্রার্থণা > প্রার্থনা
কেঁটেছিল > কেটেছিলো
অনুসন্ধিতসু > অনুসন্ধিৎসু
মনে হল > হলো
ঘুরে বেরাই >বেড়াই
ঠিকমত >মতো
পোছাতেই > পৌঁছাতেই
ভাঙ্গা > ভাঙা
মহুর্তে > মুহূর্তে
স্রোতসীনি > স্রোতস্বীনি
উতপত্তিটা > উৎপত্তিটা
কেঁটেছিল > কেটেছিলো।
এইটুকু একটা লেখায় এতোকিছু চোখে পড়লে তো ভাই মুশকিল। নিয়মিত ব্লগ লেখালেখি বেশ ভালো অভ্যাস, তবে পরের লেখা পাঠকের পাতে দেবার আগে স্পেসিং আর বানানে একটু সময় দিয়েন প্লিজ।
খ) সাধারণ পাহাড়ি ধাঁচের চেহাড়া নয় বলেই যদি আপনি নিতান্ত অনুমানের বশে একরাতের বিনোদনের ফসল জাতীয় কথাটথা ভেবেটেবে বসতে পারেন, তাহলে বন্ধুত্বের সম্পর্কটিকে খুব সহজ ভাবে নেয়ার মতো মানসিকতা এখনো দেশের অনেক মানুষের গড়ে ওঠে নি বলে তো আর হাসি পাওয়ার কিছুও দেখিনা। খুব বিরক্ত হলাম ঐ অংশটা পড়ে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তিথীডোর, আপনাকে ধন্যবাদ ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্য। লেখালেখিতে নতুন, পরবর্তীতে আরো সচেতন হব এই ব্যাপারে।
তবে বিনোদনের ব্যাপারটা শুধুই আমার অনুমান, আর এটাই যে হয়েছে আমি তা বলি নি। তবে এটা হওয়াটা অসম্ভব নয়। এটাই বলতে চেয়েছিলাম লেখাতে। আর ইমিগ্রেশনের ওই ঘটনাতেও কাউকে আক্রমণ করে কিছু বলার চেষ্টা করি নি। উনি নিজেও পরে আমাদের বলেছিলেন যে দেশের স্বার্থেই ওনারা এধরণের কথা জিজ্ঞেস করে থাকেন। তবে হ্যা, অবশ্যই লেখাতে বিষয় গুলো আরও পরিস্কার হওয়া উচিত ছিল। মূলত ওই ভ্রমণে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা আর ভাবনার কথা বলতে চেয়েছিলাম। নিজের ব্যার্থতার জন্য দুঃখিত।
নেপাল ও ভুটান এই দুইটা দেশ প্রচন্ড পরিমানে টানছে আমাকে । শুধু শুধু ঘুরতেই নয় নিজেকে ঝালানোর ও যথেষ্ট প্রয়োজন ।-
----------------
রাধাকান্ত
হুম! তথাকথিত "সাধারণ পাহাড়ি ধাঁচের" চেহারা-বিহীণ এবং প্র্যাক্টিকালি বাঙালিদের মতই দেখতে আমার বিশুদ্ধ পাহাড়ি বন্ধুদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে তারা কোন অতিথি পর্যটকের একরাতের বিনোদনের ফেলে যাওয়া স্মৃতি? দেখি কি বলে!
****************************************
হুম! লেখালেখিতে আরও একটু দক্ষতা অর্জন করতে হবে বুঝতে পারছি! আসলে পাহাড়ে এক ভদ্রলোকের ওই প্রশ্ন "ডু ইউ নিড এন্টারটেইনমেন্ট ফর টুনাইট?" আর "নেপালী ধাঁচের চেহারা" না হওয়া দুইটা জিনিস আমার মাথায় এই শঙ্কার জন্ম দেয়! কিন্তু এই বিষয়টার উপস্থাপন যে পাঠকের মনে এমন ব্যাখ্যা তৈরি করবে লেখার সময় মাথায় আসেনি। হতে পারে "নেপালী ধাঁচের চেহারা" না হলেই তা হবে এমনটা নয়, কিন্তু সেটা অসম্ভব নয়। কারও প্রতি কোন অসম্মান প্রদর্শন করা আমার লেখার উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু এই বিষয়ের ছোট সম্ভাবনাটাও যে দূঃখজনক, এটাই বলতে চেয়েছিলাম মূলত। আবারও নিজের ব্যর্থতার জন্য দুঃখিত।
আনীকা
নেপাল ভ্রমণের ইচ্ছে আছে। প্যারাগ্লাইডিং এরও। চমৎকার বর্ণনা করেছেন। চা দিয়ে বর্ণনার শুরুটা, বিনোদন সবই ভালো লেগেছে। মঞ্জুশ্রী থাপা আর নারায়ণ ওয়াগলে নামের দুই লেখকের কথাও জানতে পেরেছি।
লিখতে থাকুন। ধন্যবাদ।
মহান অতন্দ্র।
অনেক ধন্যবাদ।
দেবদ্যুতি
নতুন মন্তব্য করুন