অনেক্ষণ ধরে রিক্সার খোঁজে খিলগাঁও রেলগেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এমনিতেই দুপুর তার উপর প্রচন্ড রোদ। বেশ কয়েকটা রিক্সাকে জিজ্ঞেস করলাম বাড্ডা যাবার জন্য। কিন্তু কেউ রাজি হচ্ছে না। এখান থেকে বাড্ডা যাওয়ার একটা সহজ উপায় হলো বাস। কিন্তু দেশের যা অবস্থা, বাসে উঠাই এখন মুশকিল। সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকতে হয় কখন একটা পেট্রোল বোমা কাচ ভেঙ্গে বাসকে ঢুকে পুরো বাসকে ছাই বানিয়ে দেয়। এই ভয়ে ক'দিন ধরে বাসে উঠাই ছেড়ে দিয়েছি।
রাতের ট্রেনে বড় দাদা চট্টগ্রাম যাবেন। উনার জন্য টিকেট করতে এসেছিলাম কমলাপুর। কমলাপুর থেকে হেঁটে হেঁটে এই পর্যন্ত আসলাম। এতো গরমে আর দাঁড়ায় থাকা সম্ভব না আমার। সামনে একটা 'তুরাগ পরিবহন' এর বাস এসে থামতেই উঠে পড়লাম বাসে। বাস বলতে গেলে পুরাই ফাকা। দেখেই বুঝা যায় মানুষজন পেট্রোল বোমার ভয়ে বাসে উঠতে চান না। ক্লান্তির জন্যই হয়তো জোড় করে বাসে উঠতে বাধ্য হলাম।
সামনে এক বয়ষ্ক লোক বসে আছেন, চোখে চশমা আর হাতে একটা 'বাংলাদেশ প্রতিদিন' এর পেপার। মনোযোগ দিয়েই পড়ছেন তিনি। একটু উঁচু হয়ে দেখতে চেষ্টা করলাম কি খবর পড়ছেন। 'কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ' শিরোনামের একটা খবর। আসলেই বাসে উঠাই এখন শুধু আতঙ্কের। বাস মালিবাগ রেলগেট, আবুল হোটেল, রামপুরা পাড় করে ফেললো। রাস্তা মোটামুটি জনমানবহীন। গাড়ির সংখ্যাও কম।
হঠাৎ করে বাস ড্রাইভার বাসের স্পিড বাড়িয়ে মেরুল বাড্ডার স্ট্যান্ড পার করে চলে গেলো। আমার মেরুলের টিম্বার মিলগুলোর সামনেই নামার কথা। খেয়াল করলাম রাস্তার ডান পাশে নাকে রুমাল পেঁচানো অবস্থায় কয়েকজন ছেলেকে বাসের দিকেই তাকিয়ে আছে। মুহুর্তের মধ্যে একটা কাচ ভাঙ্গার শব্দ কানে আসলো। মাঝখানের সিটগুলোর দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করলাম সিটগুলোতে আগুন। সামনে বসা আঙ্কেল চেঁচিয়ে উঠলো আগুন আগুন বলে। কি করব বুঝে উঠার আগেই ধাক্কার মত খেলাম একটা। ড্রাইভার হার্ড ব্রেক করে বাস থামিয়ে ফেললেন। হেল্পার সবাইকে তাড়াতাড়ি বাস থেকে নামার জন্য বলল। সামনের দিকের কয়েকজন তো বাস পুরোপুরি থামার আগেই বাসের জানালা দিয়ে লাফ দিলেন। মহিলা সিটে বসে থাকা দুইজন মহিলা কিছু বুঝে উঠার আগেই নেমে গেলেন বাসের দরজা দিয়ে। পেছনে শুধু আমি আর ঐ বয়স্ক আঙ্কেল। আমার পাশের জানালা দিয়ে আমি খুব সহজে লাফ দিতে পারি। কিন্তু এতো ছোট জায়গা দিয়ে আঙ্কেল হয়তো নামতে পারবেন না। এতক্ষণে পুরো বাসে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দুজনের ফুসফুস অক্সিজেনের জায়গায় গ্রহণ করছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কালো ধোঁয়া। চোখে এখন খালি ধোঁয়া আর ধোঁয়া। আঙ্কেলকে তাড়াতাড়ই বললাম লাফ দিয়ে নিচে নামার জন্য। আঙ্কেল তাই করলেন। রয়ে গেলাম শুধু আমি। যখন আমি নামতে যাবো তখন লক্ষ্য করলাম আগুন ছড়িয়ে পড়তে পড়তে পাশের সিট পর্যন্ত এসে পড়েছে।
আমি জানালা দিয়ে নামতে যাবার সময় আমার পা জানালার সাথে বেজে গেল। উবু হয়ে পড়ে গেলাম মাটিতে। চোখে কিছু দেখছি না। শ্বাস আটকে আটকে যাচ্ছে। কিছু ভাল করে বুঝার আগেই খেয়াল করলাম আমাকে কয়েকজন তুলে একটা দোকানের সামনে নিয়ে আসলো। একজনকে বলতে শুনলাম, 'চোখে পানি ঢাল, চোখ লাল হয়ে গেসে'। মুখের মধ্যে কয়েকজন পানির ছিটা দিলো কিছুক্ষণ। মোবাইল বের করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু হাত নড়ছে না। অনেক চেষ্টা করলাম, শরীরের কিছুই নড়াতে পারলাম না।
(কাল্পনিক গল্প) ১৬/০২/২০১৫ তারিখে রাজধানীর বাড্ডায় তুরাগ বাসে আগুন দেয় সন্ত্রাসীরা।
মন্তব্য
আপনি কাল্পনিক লিখলেও সত্য ঘটনা অবলম্বনের ছায়া তো আছেই। পুড়ছে মানুষ সেই সাথে দেশ। আর গামছা পার্টিরা এভাবেই মুখে গামছা দিয়ে মানুষ গ্রীল করার চেষ্টা করবে আর অন্য গামছা পার্টিরা কাধে গামছা ঝুলিয়ে নতুন দর্শন (নাগরিক সমাজ) রচনা করবে ।ছাই পাশ যদি গিলাতে পারতাম বদমাইশ গুলোকে ।
----------------
রাধাকান্ত
শেষ নাকি? নাকি আরো আছে? সামনে পর্বের জন্য অপেক্ষা করবো?
স্বয়ম
জানালার সাথে 'বেজে' গেল
আরেকটু যত্ন নিন, লেখার শেষে নামটিও দিন। পাঠের প্রতিক্রিয়া জানানো পাঠকের খোঁজখবর নিন।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
- লেখায় আরেকটু যত্ন আবশ্যক। বেজে গেল মানে কী? আপনি যেহেতু শুদ্ধ ব্যাকরণসম্মত স্টাইলে বাংলা লিখছেন সেহেতু স্টাইল একরকম থাকা উচিত পুরো লেখায়।
- লেখায় নাম অাবশ্যক।
- ট্যাগ দেবার সময় আরেকটু খেয়াল করে ট্যাগান। স্মরণ ও গল্প দুটো ট্যাগ একসাথে যায় কীভাবে সেটা বুঝতে পারিনি।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নতুন মন্তব্য করুন