“কি!!! উগান্ডা? মানে ইদি আমিনের দেশে? বুঝি না কেন এইসব দেশেই তোমাকে যেতে হয়! তবে মনে রেখো, এই দেশের লোকজন কিন্তু মানুষখেকো, ঠিক ইদি আমিনের মতই! হোটেলের বাইরে একদম-ই বের হবা না, আর সাবধানে থাকবা, যেখানে-সেখানে যাওয়ার চেষ্টা না করাই ভালো”- না ভাই এটা বাংলাছবির নায়িকার বাবার ডায়লগ নয়, কথাগুলো আমার বাবার। দেশের বাইরে (বিশেষ করে আফ্রিকার দিকে) কোথাও যাওয়ার আগে সাধারনত আম্মার একগাদা লেকচার শুনতে হয়, কিন্তু এইবার প্রথম আব্বা আমাকে একচোট নিলেন। কি আর করা লক্ষী মেয়ের মত সবার সব রকম উপদেশ নোট করে বাক্স-পেটরা গুছাতে বসলাম - জার্নি টুওয়ার্ডস উগান্ডা।
উইনস্টন চার্চিল উগান্ডার মনোহর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, গহীন বন, বন্যপ্রাণীর সংগ্রহ আর মানুষের আতিথেয়তা-তে মুগ্ধ হয়ে এর নাম দিয়েছিলেন ‘আফ্রিকার মুক্তা’। যথার্থ নামকরন এতে কোন সন্দেহ নেই। পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটি পুরোটাই অন্যান্য দেশ দিয়ে পরিবেষ্টিত। কথিত আছে, উগান্ডাই হল আফ্রিকা মহাদেশের সর্বশেষ দেশ যা বাইরের বিশ্বের কাছে ছিল একদম অজানা। ১৮৪০ সালের দিকে কতিপয় আরব বনিক উগান্ডাতে আসে ক্রীতদাস আর হাতির দাঁতের লোভে। এর পর পরই ব্রিটিশদের নজরে পরে দেশটি। তখন থেকেই দুনিয়ার মানুষ জানতে পারে উগান্ডা নামক দেশটির অস্তিত্ত।
১৯৬৬ সালে রাজা মুতেসা আর রাজনীতিবিদ ওবোতে-র চরম দুঃসম্পর্কের ফলস্বরুপ আর্মি কমান্ডার ইদি আমিনকে ওবোতে তার বাহিনীসহ মুতেসাকে হত্যার জন্য পাঠান। প্রানভয়ে মুতেসা ব্রিটেনে নির্বাসিত হন আর পতন হয় তার সাম্রাজ্যের। ১৯৭১ সালে ইদি আমিন এই ওবোতে-কে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজেকে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষনা করেন। হায়রে রাজনীতির কুটিল প্যাঁচ! ইদি আমিনকে চিনেন না এমন ব্যাক্তি খুব কমই আছেন মনে হয়। নারীলোলুপ হিসেবে সমাদৃত ইদির ঘোষিত বৌয়ের সংখ্যা ছিল ডজনখানেক! আর ছিল অদ্ভুত সব খেয়াল। এমনও শোনা গেছে যে প্রতিদিন মানুষের রক্ত পান না করে ইদি নাকি তার প্রাসাদ থেকে বের হতেন না! এজন্যই তো উগান্ডা যাওয়ার কথা শুনে আমার বাবার এতো আপত্তি। আসলে একটি দেশের সুনাম নষ্টের জন্য ইদি আমিনের মত একজন লোকই যথেষ্ট!
অনেক তো ইতিহাস ঝারলাম, এবার একটু আসল কথায় আসি। উগান্ডার কোন দূতাবাস বাংলাদশে না থাকায় ভিসা নিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। আপনাকে যেতে হবে “ভিসা অন আরাইভাল” নিয়ে। তার মানে উগান্ডার বিমানবন্দরে পৌঁছে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে, আর ভিসা ফি মাত্র পঞ্চাশ মার্কিন মুদ্রা। আসলে উগান্ডা যেতে কোন ঝামেলা হয় নাই। তবে রুটটা বেশ বড় ছিল, ঢাকা – দুবাই – আদ্দিস আবাবা – এন্তেব্বে।
ক্লাস নাইন-টেনে পড়ার সময় ‘ভূগোল’ বিষয়টা আমার খুবই প্রিয় ছিল যা বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়তাম। তখনই প্রথম জানতে পারি ভিক্টোরিয়া হ্রদের কথা। এটা নাকি পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর হ্রদ। বিমান যখন এন্তেব্বে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের উপড় উড়ছিল, আমি তখন মহা শিহরিত এক মানুষ! কারন নিচে দেখা যাচ্ছিল অসম্ভব সুন্দর নীল রঙের বড় এক টুকরো পানির খন্ড, আমার স্বপ্নের ‘ভিক্টোরিয়া হ্রদ’! ভিক্টোরিয়া স্পর্শ করে যখন এন্তেব্বে-তে নামলাম তখনো যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না আমি আর ভিক্টরিয়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি! মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে উগান্ডার ভিসা পেয়ে গেলাম। এরপর রওনা হলাম কাম্পালা-র উদ্যেশে।
কাম্পালা হল উগান্ডার রাজধানী। এন্তেব্বে থেকে প্রায় দুই ঘন্টার ড্রাইভ। এক সময় কাম্পালা ছিল ‘ইম্পালা’ নামক এক বিশেষ ধরনের হরিণের নিবাস। এজন্যই হয়তো একে ‘কাম্পালা’ বলা হয়, কারন শব্দটির অর্থ হল ‘ইম্পালার পাহাড়’। কাম্পালা-য় ঢুকতেই চোখে পড়ল অসংখ্য ‘বোদাবোদা’ নামক মোটরসাইকেল। খুবই জনপ্রিয় আরে দ্রুতগামি গণপরিবহণ এই বোদাবোদা। আর যারা এই মোটরসাইকেল চালায় তাদের বলে ‘বোদা ড্রাইভার’। প্রত্যেক বোদা ড্রাইভারের পেছনে দুই-তিনজন করে পুরুষ কিংবা মহিলা বসে আছে। কেউ অফিস যাচ্ছে, কেউবা যাচ্ছে বাজার কিংবা স্কুল-কলেজে। মনে মনে খুব শখ জাগছিল এই বোদাবোদা-তে চড়ার, কিন্তু কেন জানি এই ইচ্ছাটাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার সাহসে কুলালো না! কাম্পালা শহরটা অনেকটাই পাহাড়ি এলাকা টাইপ, চড়াই-উতরাই ধরনের রাস্তা। একটু জোরে গাড়ি চালালে মনে হয় যেন রোলার-কোস্টারে আছি! অনেক পুরোনো ট্র্যডিশনাল ঘরানার একটা হোটেলে উঠেছিলাম। একটা পাহাড়ের মত জায়গা কেটে হোটেলটা বানানো হয়েছে। কোন এস্কেলেটর নাই হোটেলে, যদিও বেশ সুন্দর দেখতে। এত লম্বা জার্নি করে শরীর যেন আর চলছিল না, রুমে ঢুকেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম।
পরেরদিন ঘুম ভাঙল দোয়েলের শীষ শুনে! ঢাকায় তো আর পাখির ডাক শুনতে পাই না, তাই সুমধুর সেই ডাক এখনো যেন আমার কানে বাজে! হোটেলের বারান্দায় দাঁড়ালেই অদ্ভুত অজানা সব শব্দ পুরোটা সময় আমাকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছিল। আমি যদি কবি হতাম তাহলে হয়তো অমর কোন কাব্য সৃষ্টি করে ফেলতাম, আফসোস! সকালের নাস্তা করে রওনা হলাম নীল নদের উৎসের সন্ধানে, গন্তব্য ‘জিনজা’।
কাম্পালা থেকে জিনজা পুরোটা পাহাড়ি পথ জুড়ে আখের খেত আর পাহাড়ের ঢালে অজস্র চা বাগান। সে এক মনোরম দৃশ্য! কিন্তু একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা না বলে পারছি না – যতক্ষণ এই পথে ছিলাম কেমন জানি একটা দম বন্ধ করা অনুভূতি হচ্ছিল। এটা এমন নয় যে বাতাস কম ছিল বা বাতাসে কোন দুর্গন্ধ ছিল, তারপরও আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল একটা ভারি কিছু আমার নাক চেপে ধরছে, আমাকে নিঃশ্বাস নিতে দিচ্ছে না! তাই বলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে বিরত থাকার লোক আমি নই! প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা এই দম বন্ধ করা অস্বস্থি নিয়েই হাসিমুখ করে কাটিয়ে দিলাম!
ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি নীল নদ মানেই মিশর! এখানে এসে জানলাম আসলে নীল নদের উৎপত্তি হয়েছে উগান্ডার জিনজা নামক স্থানে। মূলত জিনজা-তে ভিক্টোরিয়া হ্রদের যে অংশটুকু আছে সেটা হল নীল নদের পূর্বভাগ আর এটাই হল এর উৎপত্তিস্থল। পরবর্তীতে সুদান, ইথিওপিয়া আর মিশর পার হয়ে এই নীল নদ পতিত হয়েছে ভুমধ্যসাগরে। আহা, এই তো সেই নীল নদ! পাইলাম আমি ইহাকে পাইলাম! জলে নামবো অথচ চুল ভেজাবো না তা কি করে হয়! স্পিডবোটে চড়ে ছুটলাম নীল নদের উৎপত্তিস্থল ছুঁতে! ঠিক যেইখানটায় নদের উৎস, সেখানে একটা ঘূর্ণির মত কি যেন দেখা যাচ্ছিল। স্পিডবোট যখন ঠিক সেই ঘূর্ণির মধ্যে পৌঁছল, মনে হল আমি যেন নীল নদ জয় করে ফেলেছি! আসলে অনেক অনুভূতি হৃদয়ের মাঝে এমনভাবে গেঁথে থাকে যা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না, এটিও ঠিক তাই! এখানে আরো পেলাম শান্তি আর অহিংসার দূত মহাত্মা গান্ধীকে। ১৯৪৮ সালে তাঁর দেহভস্মের কিছু অংশ এই নীল নদে ভাসিয়ে দেয়া হয়। নীল নদ জয়ের পরবর্তী কাজ হল ভিক্টোরিয়া হ্রদের তেলাপিয়ার স্বাদ আস্বাদন। উফ এত্ত বড় তেলাপিয়া আমি এই জীবনে দেখি নাই! নাম না জানা সুস্বাদু এক স্যুপ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর তেলাপিয়া ভাজা ছিল সেদিনের দুপুরের খাবার!
চার্চিল উগান্ডার মানুষের ব্যবহারে যতটা মুগ্ধ হয়েছিলেন, আমি যেন তার চেয়ে বেশি মুগ্ধ হলাম। সদা হাস্যময় মুখ আর পরোপকারী মনোভাব আসলেই প্রশংসনীয়। তবে কয়েকটা ব্যাপার শুধু আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল (মেয়েলি কৌতুহল আর কি!), কিন্তু কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারছিলাম না। যেহেতু কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারছি না, তাই আরো উসখুস করছিলাম ভিতরে ভিতরে...... অতঃপর আর থাকতে পারলাম না। ডক্টর বনিফেস নামক এক উগান্ডান বন্ধু জিজ্ঞেসই করে ফেললাম, “আচ্ছা তোমাদের বেশীরভাগ ছেলেদের মাথায় চুল নাই কেন”? হা... হা...... বনিফেস হেসে ফেলল আমার এই অদ্ভূত প্রশ্ন শুনে, কারন ওর মাথার-ও ঠিক একই অবস্থা! কারনটা যখন শুনলাম আমিও খানিকটা হেসে ফেললাম! ওদের চুল এত্ত কোঁকড়ানো থাকে যে ওরা ঠিক মত চিরুনি দিয়ে আঁচড়াতে পারে না, তাই ওদের ছেলেরা চুল একটু বড় হলেই মাথা ন্যাড়া করে ফেলে এই ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য! এবার তার প্রতি ছুঁড়ে দিলাম প্রশ্ন নাম্বার দুই – “তোমাদের মেয়েরা কি দেখে একটা ছেলের প্রতি আকর্ষণবোধ করে কিংবা ছেলেরা কি দেখে একটা মেয়ের প্রতি”? বনিফেস এবার যেন আরো জোরে হেসে দিল! মেয়েরা দেখে একটা উগান্ডান ছেলে কত লম্বা! বাদ বাকি কোন গুণ না থাকলেও চলে! আর ছেলেরা দেখে একটা মেয়ে কত স্বাস্থ্যবতী! যত ভালো স্বাস্থ্য তত সুন্দরী, তত আকর্ষণীয়! হা... হা... হা......... আরো অনেক বিষয় নিয়ে কথা হল... কথা হল ব্ল্যাক ম্যাজিক নিয়েও। উগান্ডাতে রয়েছে মারাত্মক রকমের ভুডুচর্চা। কিছুদিন আগেও নাকি ডাইনী সন্দেহে বনিফেসের এলাকার এক মহিলাকে ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ানরা পুড়িয়ে মেরেছে! আর এক মা ভবিষ্যতে ধনী হওয়ার আশায় তার একমাত্র সন্তান কে হত্যা করেছে! এরকম অনেক কাহিনী শোনার পর একটু ভয়ই পেলাম যেন!
তবে খুব ভালো লাগল বনিফেসের অমর প্রেমের কথা শুনে। ও পড়াশুনা করেছে কিউবাতে। সেখানে পড়া অবস্থায় এক ভিয়েতনামিজ মেয়ের সাথে ওর প্রেম হয়। কিন্তু বাধ সাধে মেয়ের পরিবার। তারা কালো ছেলের সাথে তাদের মেয়ের বিয়ে দিবে না। এক সময় ওদের লেখাপড়া শেষ হলে যে যার দেশে ফিরে যায়। পরিবারের কথা চিন্তা করে সবার অমতে ওরা বিয়ে করেনি। এখনো ওদের যোগাযোগ আছে, এখনো ওরা একে অপরকে ঠিক আগের মতই ভালবাসে। এখনো ওরা স্বপ্ন দেখে ঘর বাঁধার। ওদের স্বপ্ন সত্যি হোক!
(সামশাদ)
মন্তব্য
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সাক্ষী সত্যানন্দ! যে নিজে কিনা এত্ত ভালো লেখে, তার কম্প্লিমেন্ট পেলাম! ধন্য আমি!
(সামশাদ)
নারে ভাই, ম্যাটল্যাবে লেখালেখি করি
এত সুন্দর বর্ণনা আমারে দিয়া হইত না
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দারুণ বর্ণনা। খুব সুন্দর। খাবারগুলো অারো সুন্দর।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
সুলতানা সাদিয়া আপু, একটু বেশীই লজ্জা পেলাম এতো সুন্দর কমেন্ট দেখে! এক বস্তা ধন্যবাদ আপনাকে!
(সামশাদ)
দেবদ্যুতি
ধন্যবাদ দেবদ্যুতি!
(সামশাদ)
লেখা, ছবি দুইই ভাল লেগেছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অজস্র ধন্যবাদ এক লহমা।
ছবিতে ক্যাপশন থাকলে ভালো হতো। লেখার শেষের দিকের কিছু গল্প হয়তো আরো বিস্তারিত হতে পারত। শুরুটা যেরকম ধীর লয়ের, শেষটা সেরকম লাগেনি। খানিকটা তাড়াহুড়া করেছেন বলে মনে হলো!
লেখা চলুক। সচলে স্বাগতম।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ অনার্য সঙ্গীত! আপনার সাজেশন মাথায় টুকে রাখলাম নেক্সট লেখাটার জন্য!
ভালো থাকবেন অনেক অনেক অনেক।
সচলে স্বাগতম আপু! হাত খুলে লিখতে থাকুন এমন চমৎকার লেখা
ধন্যবাদ আয়নামতি!
(সামশাদ)
কমল, তোকে আর ধন্যবাদ না-ই দেই! তোর কারনেই সচল-এ লেখা!!!!
(সামশাদ)
- চার্চিলের কোটগুলো/প্রসঙ্গগুলো একটু ক্লিশে টাইপ। এগুলো লেখায় না আনলেও হতো।
- উগান্ডার কলোনিয়াল ইতিহাসটা কী? সেটা একটু লেখায় আনা যেত। ব্রিটিশদের নজরে পড়ে বলে উল্লেখ করেছেন। তারমানে এটা ব্রিটিশ কলোনী ছিলো? সেটা হলে এই দেশটার সাথে আফ্রিকার ফ্রাঙ্কোফোন দেশগুলোর সংস্কৃতিতে কতোটা পার্থক্য? কারো সাথে এই নিয়ে আলাপ হয়েছে?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কুইন লাতিফার অভিনীত কোন একটা মুভ্যিতে দেখেছিলাম তার ক্ষীনকায়া হট বান্ধবীকে অবজ্ঞা করে তাকেই আকর্ষণীয় মনে করে সমাজ তার সুস্বাস্থ্যের দরুন। আসলেই এমন কোন দেশ আছে জেনে ব্যাপক মজা পেলাম।
লেখা আর ছবি দারুণ লাগল।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
শাব্দিক, কুইন লাতিফা-র এই মুভিটা আমিও দেখেছি অনেক দিন হল। তখন মনে মনে অনেক হেসেছিলাম, কিন্তু উগান্ডা যেয়ে ঘটনার সত্যতার প্রমান পেলাম! নাইজেরিয়াতেও নাকি মেয়েদের সৌন্দর্য তাদের স্বাস্থ্যের সাথে সমানুপাতিক! ভাবছি আফ্রিকাতেই সেটেল হব কিনা.........
(সামশাদ)
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ এত্ত সুন্দর করে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য। ভুল-্ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন আশা করি।
(সামশাদ)
সত্তরের দশকে এক বাংলাদেশী পরিবার বেশ কয়েক বছর উগান্ডাতে ছিল। তো সেই পরিবারের গৃহকর্ত্রী, রওশন আরা হাফিজ কাক্কু, ছিলেন কথাসাহিত্যিক। তিনি সাপ্তাহিক 'বেগম'-এ 'স্মৃতির সোনালী পৃষ্ঠায়' নামে একটা সিরিজ লিখতেন তাঁদের উগান্ডা বাসের কাহিনী নিয়ে। ঐ আমলে আমার পড়ার দৌড় খুব বেশি ছিল না। তাই বড় বোন আমাদের বাকি দুই ভাইবোনকে সেই কাহিনী পড়ে শোনাতেন। সেই থেকে উগান্ডার নাম আমার পরিচিত। রওশন আরার পরিবার প্রথমে এন্টেবি ও পরে কাম্পালাতে থাকতেন, সেই সুবাদে ঐ শহরগুলোর নামও আমার পরিচিত। আরো সামান্য পরিচয় তার প্রকৃতি আর মানুষকে।
এরপর পত্রিকার পাতা আর রেডিও-টেলিভিশনে মিল্টন ওবোটে > ইদি আমিন > গডফ্রে বিনাইসা > মিল্টন ওবোটে > টিটো ওকেল্লো > ইউরি মুসাভেনি'র কীর্তিকলাপ পড়তে পড়তে, শুনতে শুনতে উগান্ডা সম্পর্কে আরো জানা হয়ে যায়।
নব্বইয়ের দশকে এক বার একুশের বইমেলায় রওশন আরার সাথে দেখা হয়ে যায়। তাঁকে জিজ্ঞেস করি তাঁর উগান্ডা স্মৃতি বই আকারে বের হয়েছে কিনা। তিনি জানান, ওটা বই আকারে বের হয়নি, আপাতত ওটাকে বই করার পরিকল্পনাও নেই। আমি জানি না ওই কলামগুলো পরে আর কখনো আদৌ বই আকারে বের হয়েছিল কিনা।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এক সহপাঠিনী ছিলেন যিনি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত উগান্ডাতে ছিলেন। কিন্তু অন্য বিভাগে পড়ায় আর তার ভাষাজনিত সমস্যা থাকায় (ইয়োংলিশ, ইংলিশ আর বাংলাতে গোলমাল বেঁধে যেতো) তার সাথে আর উগান্ডা নিয়ে আলাপ জমে ওঠেনি। অনেক কাল পরে আবার কারো কাছ থেকে উগান্ডার গল্প শুনতে পেলাম।
উগান্ডা নিয়ে আরো লিখুন। এর মানুষ, সংস্কৃতি, পোশাক, খাবার, প্রকৃতি, রীতি নিয়ে। আপনার এখানে উইকিপিডিয়া লেখার দরকার নেই। বরং নিজে যা দেখেছেন এবং তা দেখে যা বুঝেছেন সেটাই লিখুন। নির্ভয়ে লিখুন, দুহাত খুলে লিখুন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ষষ্ঠ পাণ্ডব, অনেক অনুপ্রাণিত হলাম আপনার মন্তব্য পড়ে। আপনার আশীর্বাদ আমার চলার পথের সঙ্গী করে নিলাম।
(সামশাদ)
এই তো ৬ মাস হয়ে গেল আফ্রিকার আরেকটা দেশ অ্যাঙ্গোলা থেকে একে বারে দেশে চলে আসলাম যদিও আফ্রিকার মায়া এখন ও ছাড়তে পারলাম না। লেখিকাতে ধন্যবাদ এত সুন্দর করে আফ্রিকা তে বর্ননা করার জন্য ।
লেখা ভালো লাগলো, উগান্ডা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম , দেশটা সম্পর্কে আগ্রহ জন্ম নেয় ১৯৭৬ সালে এই এন্তেব্বে এয়ারপোর্ট এ ঘটে যাওয়া এক শাসরুদ্ধকর জিম্মি নাটকের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র দেখবার মধ্য দিয়ে।
উগান্ডায় কি আপনার কোনও ভারতীয় চোখে পড়েছে? ৭০ এর দশকে ইদি আমিনের সময় প্রায় সব ভারতীয়দের তাড়িয়ে দেয়া হয়.
উগান্ডায় কি উদ্দেশ্যে গেলেন সেটা লিখলেও মনে হয় ভালো হত. লেখা চলুক
গুডরিডস
লেখাটার শুরুটা দারুন হয়েছে কিন্তু শেষটাতে যদি জমিয়ে দিতেন তাহলে আরো বেশী মজা পেতাম,। অনেক কিছু জানিয়েছেন , ধন্যবাদ আপনাকে
----------
রাধাকান্ত
অসংখ্য ধন্যবাদ জীবনযুদ্ধ। আফ্রিকার যতগুলো দেশে গেছি ইন্ডিয়ানদের-ই পেয়েছি! ওরা ব্যবসা জিনিসটা এত ভালো বোঝে! উগান্ডাতেও প্রচুর ইন্ডিয়ান আছে। ওখানে 'উইলিয়াম স্ট্রীট' বলে একটা এলাকা আছে যেটা আমাদের মিটফোর্ড আর কি। পুরো এলাকাটা জুড়ে ইন্ডিয়ানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান!
(সামশাদ)
সাবলীল এবং প্রাঞ্জল। বেশ ভালো লাগলো পড়তে! ছবিগুলো লেখার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে...
- ভোরের বৃশ্চিক
অসাধারণ। এই দেশটা সম্বন্ধে খুবই কম জানি। তাই গোগ্রাসে গিললাম আপনার লেখা। চালিয়ে যান। আরও জানতে চাই।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
আপনার লেখাটি হারিয়ে যাওয়া দিনের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। আহা এন্টেবি, আহা কাম্পালা! কতই না মধুর স্মৃতি মনে ভাসে। কখনো উগাণ্ডার সীমান্ত পেরিয়ে কেনিয়া চলে যাওয়া, গ্রান্ড ক্যানিয়ন হয়ে মাসাই মারা। কখনো সেরেঙ্গাতি সাভানার সবুজ মেখে নিয়ে দারুস সালাম পেরিয়ে নীল জলে ভাসা। আবার কখনও জাঞ্জিবারের আত্মাকে বুকে বেঁধে গুমরে গুমরে কাঁদা। আহা, সে এক সময় ছিল আমার, সে এক অফুরন্ত সবুজ দিনের কোল, সে এক অফুরন্ত অলসতা, কত কথা, আবোল-তাবোল। আরো লিখুন, সাগ্রহে অপেক্ষায় আছি।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
সেসব কাহিনী কোথায়?
এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আরো অনেক জমে আছে মনে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আরেব্বাহ্! সব কাহিনি আমাদের বঞ্চিত করে নিজের ঝাঁপিতে লুকিয়ে রাখলে হবে? ছাড়ুন, ছাড়ুন, ঝাঁপি উপুড় করে দিন!
****************************************
চমৎকার ঝরঝরে সাবলীল বর্ণনা, তবে শুরু হতে হতেই মনে হল শেষ হয়ে গেল। গরিলা ট্রেকিং এ গিয়েছিলেন কি?
আর একটা ছোট্ট তথ্যগত ভুল চোখে পড়ল। উগান্ডা থেকে যে নীলনদের উৎপত্তি (হোয়াইট নাইল) যা কিনা নীলনদের মাত্র ১৫% পানি সরবরাহ করে তা কিন্তু ইথিওপিয়ার মধ্য দিয়ে যায়নি। ইথিওপিয়ায় উৎপত্তি হওয়া ব্লু নাইল সুদানের খার্তুমের কাছে এসে হোয়াইট নাইলের সাথে মিশেছে।
মুদ্রা সংগ্রাহক
লেখা ভালো লেগেছে। বর্ণনাও চমৎকার!
ছোট বেলা থেকেই মানচিত্রের প্রতি আমার টান. বসে বসে বিভিন্ন দেশের শহর, রাজধানী, নদ নদী দেখাই ছিল আমার হবি. আর ছিল ভ্রমন কাহিনী পড়ার নেশা. সেটা এখনো রয়ে গেছে. উগাণ্ডা কেও সেজন্যে ছোট বেলা থেকেই চিনি .
আপনার লেখাটি পড়ে অনেক আনন্দ পেলাম. অবহেলিত আফ্রিকা মহাদেশটির সৌন্দর্য টিভিতেই দেখতে পাই. আমার দুই কন্যা কেনিয়া আর ঘানায় চারমাস করে থেকে এসেছে কলেজের স্টাডি এব্রড প্রোগ্রামে, তখন ওদের কাছ থেকেও ওখানকার মানুষদের আথিতেয়তা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা শুনেছি. পরের পর্বের আশায় রইলাম.
লেঅ ভালো লাগলো। ছবিগুলো একসাথে নিচে না দিয়ে লেখার ফাঁকে ফাঁকে দিলে ভালো হতো।
স্বয়ম
ভ্রমণ কাহিনী ভালু পাই, আর লেখা এমন ঝরঝরে হলে আর বেশি ভালু পাই
নিশ্চয় অনেক ছবি তুলেছেন, ভ্রমণ পুষ্টে ছবি বেশি হলে সোনায় সোগহাগা। পরের ভ্রমণ কাহিনীগুলোতে ছবি সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে আশা করি। ঘুরাঘুরি চলুক, উগান্ডার অজানা মানচিত্রকে দেখা হোক আপনার চোখে।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
নতুন মন্তব্য করুন