এই লেখাতে আমি বাংলা ভাষায় কম্পিউটিং এর সম্পর্কে আরও কিছু মতামত তুলে ধরতে চাই। মোস্তফা জব্বার এর ব্যবসা ও তার উদ্ভাবন সম্পর্কে আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। যেভাবে আমার শ্রদ্ধা আছে নকিয়া এর মোবাইল ফোনের অবদানের প্রতি।
কোন কোম্পানি পরিবর্তনশীল মার্কেট সম্পর্কে বুঝতে ভুল করে যদি পুরাতনকে আঁকড়ে ধরতে চায়, সেখানে তার পতন হয়ে নতুনের আবির্ভাব অনিবার্য। নকিয়া এক কালে স্মার্টফোন মার্কেট এর অবিসংবাদিত নেতা ছিল। কিন্তু পরিবর্তনশীল মার্কেট ও টাচ স্ক্রিন এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পেরে সে ক্রমাগত অ্যাপল আইফোনের কাছে মার্কেট হারাতে থাকে। এ পর্যায়ে এন্ড্রয়েড এর উদ্ভব হয়। প্রথম আলো তে ছাপানো সিম্বিয়ানের (সিম্বিয়ান নকিয়ার স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম ছিল) সি ই ও এর একটা মন্তব্য এখনো আমার মনে আছে “গুগলের কোন ধারনাই নাই কিভাবে স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম কাজ করে। তাই এন্ড্রয়েড কখনওই সফল হতে পারবে না।” কিন্তু আজ এন্ড্রয়েড বিশ্বের সম্পূর্ণ স্মার্টফোন মার্কেট এর ৭৫% এর বেশি দখল করে রেখেছে। পক্ষান্তরে নকিয়া তার লোকসান সামাল দিতে না পেরে নিজের কোম্পানি মাইক্রোসফট এর কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে। নকিয়ার আগের সি ই ও (Stephen Elop) এর গোয়ারতুমি এর জন্য OHA এর সদস্য হওয়া সত্ত্বেও নকিয়া আগে এন্ড্রয়েড ফোন বের করে নি। তাই এক কালের স্মার্টফোন জায়ান্ট যে ইচ্ছা করলেই এন্ড্রয়েড ও তার নিজ বিশ্বস্ত (loyal) ক্রেতাদের ব্যবহার করে আইফোন কে টেক্কা দিতে পারত, সে আজ বন্ধ হবার পথে।
বিজয় কম্পিউটার ও মোস্তফা জব্বার এর কার্যকলাপে আমি একই একটা প্যাটার্ন দেখতে পাই। ৯০ এর মাঝামাঝি যখন প্রথম কম্পিউটার আসা শুরু করে, বিজয় এর জয় জয়াকার তখন। তবে সে সময় নতুন কম্পিউটার কেনা মানে হোল এক গাদা সফটওয়্যার “ফ্রি” দিয়ে দেওয়া। পাইরেসি নামক জিনিসটার সাথেই তখনো পরিচিত ছিলাম না। উইন্ডোজ যেভাবে পাইরেসি করে আমাদের দেশে জনপ্রিয় হয়েছে, বিজয় ও জনপ্রিয় হয়েছে একই ভাবে পাইরেসি করে। এ অবস্থায় মোস্তফা জব্বার কারো বিরুদ্ধে মামলা করেছেন কিনা বলে আমার জানা নাই। তবে, লাভ যেটা হয়েছে, নতুন কম্পিউটার কেনা মানেই বিজয়ের ইন্সটলার সহ দিয়ে দেওয়া।
বিজয়ের আকাশ চুম্বী জনপ্রিয়তা এর ফলে যেই ভয়াবহ জিনিস তৈরি হয়েছে তার নাম ভেন্ডর লক ইন। বিজয় নিজে তার নিজস্ব এনকোডিং ব্যবহার করত। যা ANSI এনকোডিং এর উপর ভিত্তি করে। বলা যায় যে ইংরেজি ভাষার ই আদলে এক একটা অক্ষর বাংলা ফন্ট এর এক একটি অক্ষর হিসেবে ব্যবহার করা হতো। (অ = A, ই = B, ঈ = C া = v, আ=Av) ৯০ ও ২০০০ এর শুরুর দিকে বাংলা কাজ হতো পাবলিকেশন এ । সেখানে এই পন্থা ভালোই কাজ করত।
সমস্যা দেখা দ্যায় যখন ডাটা সংরক্ষণ ও ওয়েব পেজ তৈরি করতে হয়। বিজয়ের নিজস্ব মালিকানাধীন এনকোডিং ব্যবহার মানে হচ্ছে যার কাছে বিজয় নাই, সে সেটা ব্যবহার করতে পারবে না। তদুপরি, বিজয়ের সাথে ব্যবহৃত ফন্ট সুতন্বি মোস্তফা জব্বারের কপি রাইট করা। চুরি করে কেউ ব্যবহার করলে তিনি মামলা করছেন না ঠিক ই , কিন্তু বিজয় ব্যবহার করে ওয়েব পেজ বানানো এর কাজ কেউ করলে ইচ্ছা করলেই তাকে মামলা করে ব্যপক ক্ষতিপূরণ তিনি আদায় করে নিতে পারতেন।
এনকোডিং স্ট্যান্ডার্ড না হলে মারাত্মক যে অবস্থা হয়, তা হোল বিজয়, প্রশিকা শব্দ ইত্যাদি প্রতিটি নিজস্ব এনকোডিং এ ইংরেজি বর্ণ কে বাংলা বর্ণ হিসেবে দেখায়। এই ধরনের পন্থায় sorting (ক্রমানুসারে সাজানো) প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। যেকোন সার্চ ইঞ্জিন এ বাংলা সার্চ করতে গেলে বিজয় দিয়ে লেখা text সার্চ করা আর অন্য এনকোডিং এ লেখা টেক্সট খোঁজা ভিন্নতর হবে। একটা ঘটনা মনে পরছে। আমাদের কম্পিউটারের ইন্সটলেশনের কাজ করতেন একজন বড় ভাই (আশিস ভাই)। তিনি বহু কষ্ট করে ২০০১ সালের দিকে বিজয়ে সম্পূর্ণ গীতাঞ্জলী টাইপ করে আমাকে দিয়েছিলেন। ওনার ইচ্ছা ছিল সেটা ওয়েবে দিয়ে দেওয়ার। কিন্তু বিজয়ের ফন্ট এর কপিরাইট ভঙ্গ না করে সেটা ওয়েবে দেওয়ার আশা বৃথা ছিল।
এই মারাত্মক stranglehold অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় বাতলে দ্যায় ইউনিকোড। মোস্তফা জব্বার শুরু থেকেই ইউনিকোড এর কঠোর সমালোচনা করেছেন। এবং বিভিন্ন সময় ইউনিকোড কিভাবে বাংলা ভাষাকে হিন্দির অনুরূপ কোডিং করা হয়েছে, সে সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারনা দিয়ে গেছেন মানুষকে । যখন বিভিন্ন ওয়েব ব্রাউজার এবং উইন্ডোজ এক্স পি ইন্ডিক ইউনিকোড সমর্থন করা শুরু করে, তখনও তিনি বিজয়ের কোন ইউনিকোড সমর্থন থেকে সম্পূর্ণ বিরত ছিলেন। ইউনিকোড এ লেখা যেকোনো ডকুমেন্ট এডিট করার জন্য বা দেখবার জন্য যেকোনো ইউনিকোড সমর্থিত ফন্ট ব্যবহার করা যায়। পক্ষান্তরে বিজয় এ লেখা যেকোনো জায়গায় দেখতে বা এডিট করতে সেই প্ল্যাটফর্মে বিজয় সমর্থন লাগবে। লিনাক্স বা অন্য ওএস এ বিজয়ের নিজস্ব কোন সফটওয়ার না থাকায় সেই প্ল্যাটফরমে বাংলা লেখার কথা ভুলে যেতে পারেন। তাই ইউনিকোড ভিত্তিক লেখার সফটওয়্যারের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও মস্তফা জব্বার সেই চাহিদা কে উপেক্ষা করেন তাঁর এনকোডিং এর পক্ষে।
ইউনিকোড যখন উইন্ডোজে আসে তখনই একুশে প্রজেক্ট প্রথমে ও পরে অভ্র টিম তার পক্ষে কাজ করে। উইন্ডোজ সার্ভিস প্যাক ২ এর আগে থেকেই বস্তুত “হ্যাকার”রা বেশ কিছু হ্যাক করার টুলস দ্যায়। (এই হ্যাকার দের জন্য শ্রদ্ধা। তাঁরাই বাংলা ইউনিকোড সর্বপ্রথম উইন্ডোজএ ব্যবহারের উপায় বাতলে দেন) হ্যাকাররা উইন্ডোজে ইউনিস্ক্রাইব ইঞ্জিন usp10.dll লাইব্রেরি ঠিক করার কাজ করে। পরবর্তীতে মাইক্রোসফট নিজেই উইন্ডোজে ইউনিস্ক্রাইব ইঞ্জিন ঠিক করে। মোস্তফা জব্বার এই সময়ে (২০০৪~) বিজয়ের ইউনিকোড সংস্করণ বের করতে পারতেন। কিন্তু তিনি ক্রমাগত “হিন্দি” ইউনিকোড এর বিরোধিতা করে বিজয়এর মধ্যেই থেকে যান। বস্তুত ইউনিকোড এ বাংলা ভাষার যে “দাড়ি” সেটা Devanagri স্ক্রিপ্ট থেকে নেওয়া হয়েছে, সেই জিনিস নিয়ে আপত্তি করে উনি “হিন্দির আদলে বাংলা" এই রকম বক্তব্য দেন। পক্ষান্তরে অভ্র, একুশে টিম তাদের বাংলা লেখার সফটওয়্যার এনে মানুষ কে ইউনিকোড এ বিভিন্ন ফোরাম, ব্লগ এ লেখার সুযোগ করে দ্যায়।
একুশে ও অভ্র টিম এ সময়ে যে ভুলটা করে, সেটা হচ্ছে মস্তফা জব্বার কে সম্মান করে। সম্মান করার অর্থটি ব্যাখ্যা করছি। মেহেদি অভ্রতে বিজয়ের কিবোর্ড লে আউট ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। মস্তফা জব্বার ইচ্ছা করলেই সফটওয়ার এ ফ্রি ব্যবহার করতে দিতে পারতেন। বরং উনি হার্ডওয়্যার এ বিজয় কি বোর্ড বিক্রি করে আরও অনেক মুনাফা পেতে পারতেন। বাংলাদেশে অভ্রএর জনপ্রিয়তার সাথে তখন বিজয় জনপ্রিয় হতো। এবং সব বিক্রিত ল্যাপটপ ও ডেক্সটপে বিক্রিত কিবোর্ড এ বাংলা লে আউট এর লাইসেন্স ফি নিতে পারতেন। তদুপরি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারের লাইসেনস ফি বাড়িয়ে নিতে পারতেন। তা না করে তিনি বিজয়কে তার কাছে কুক্ষিগত করে রাখতে চাইলেন এবং ফ্রি সফটওয়্যারে সেটা ব্যবহার করতে দিতে চাইলেন না। (ওনার ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত সেটা, আমি শ্রদ্ধা করি।) ভ্রটিম তখন বিজয় কি বোর্ড এর আংশিক পরিবর্তন করে ইউনিবিজয় কি বোর্ড তৈরি করে। আমার বক্তব্য ভুল করবেন না, আংশিক পরিবর্তন করে কপি করা কপিরাইট আইন লঙ্ঘন। কিন্তু এই ইউনিবিজয় লে আউট মানুষকে ইউনিকোডে বিজয় ব্যবহার করতে সাহায্য করে। ফলে ইউনিকোডে বিজয় কিবোর্ডকে জনপ্রিয় করে তোলে প্রথমে একুশে ও পরে অভ্র।
ভাষা সংক্রান্ত কাজ এ প্রথম ডেটাবেজ এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দ্যায় আমাদের নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা তৈরির কাজে। নির্বাচন কমিশন এ সময়ে অত্যন্ত দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে ইউনিকোড ব্যবহার করে। যদিও মস্তফা জব্বারের ৪ কোটি টাকা লাইসেন্স দাবি, বিজয় না ব্যবহারের পেছনে প্রারম্ভিক কারণ ছিল, এখানে মস্তফা জব্বার বিনা মূল্যে বিজয় দিলেও ডেটাবেজ এর এনকোডিং ও ফন্ট বিজয়ের কপিরাইট করা থাকত। এর ৪ বছর পর যদি কম্প্যাটিবল সফটওয়ার এর জন্য বিজয় ১০ কোটি টাকা লাইসেন্স দাবি করত, তাহলেও সেটা দেওয়া ছাড়া উপায় থাকত না। এক্ষেত্রে অভ্র যদি তার ইউনিজয় পরিত্যাগ করে প্রভাত দিয়ে নির্বাচন কমিশন কে solution দিত তাহলে মস্তফা জব্বার কি বলতেন, দেখবার বিষয় ছিল।
আমার মতে মস্তফা জব্বার নিজেই তাঁর ব্যবসার সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছেন অভ্র এর বিরুদ্ধে মামলা করে ওনার কি বোর্ড লে আউট পরিত্যাগ করতে বাধ্য করে। এতে মানুষ অন্য কি বোর্ড লে আউট ব্যবহার করতে বাধ্য হবে। ওনার কিবোর্ড লে আউট এর জনপ্রিয়তা আরও হ্রাস পাবে। পক্ষান্তরে তরুণ প্রজন্মের backlash তখনই প্রথম ওনাকে পেতে হয়েছে।
মস্তফা জব্বারের সমালোচনা যারা করেন, তাঁরা বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারনা থেকে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। মুনির কিবোর্ড ও বিজয় কিবোর্ড সম্পূর্ণ আলাদা। এবং বিজয় কি বোর্ড মুস্তফা জব্বারের সৃষ্টি। তিনি এক কালে এই বাংলা কম্পিউটিং এ অনেক সময় দিয়েছেন এবং নিরলস পরিশ্রম করে তাঁর আনন্দ কম্পিউটারকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু এনকোডিং ও ফন্ট monopoly করতে গিয়ে উনি কূপমণ্ডূকের ন্যায় ইউনিকোড থেকে দুরে ছিলেন। একুশে ও অভ্র - যারা তাঁর লেআউট কে নতুন প্রজন্মের কাছে আরও জনপ্রিয় করত, তাদের দুরে ঠেলে দিয়ে তিনি তরুণ প্রজন্মকেই দুরে ঠেলে দিয়েছেন। অত্যন্ত ট্র্যাজিক ভাবে তাঁর নিজেরই স্ট্যাটাস সেটা প্রমাণ করেঃ
Mustafa Jabbar: “আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি যে, বেশির ভাগ কম্পিউটার ব্যবহারকারী জানেনা যে, বিজয় বাংলা সফটওয়্যার দিয়ে ইন্টারনেটে বা ইউনিকোড পদ্ধতিতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বাংলা লেখা যায়। শুধু তাই নয়, বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের উইন্ডোজ (সকল সংস্করণ), ম্যাক (সকল সংস্করণ), লিনাক্স ও এন্ড্রয়েড সংস্করণ রয়েছে। সব ও.এস-এ-ই ইউনিকোড ও আসকি পদ্ধতিতে বাংলা লেখা যায়। আরও বিস্তারিত জানতে ****, ***** নাম্বারে যোগাযোগ করুন।”
উনি নিজেই স্বীকার করছেন যে বিজয় সফটওয়ার সম্পর্কে বেশিরভাগ কম্পিউটার ব্যবহারকারি এখন জানেই না।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
ভাষা হোক উন্মুক্ত।
-সাজিদ চৌধুরী (sajidmc)
(লেখাটি আমার নিজস্ব গবেষণা প্রসূত। কোন ভ্রান্তি থাকলে বা এব্যাপারে আপনাদের যেকোনো মতামত জানতে আমি আগ্রহী। )
মন্তব্য
এই অংশটুকু ক্লিয়ার না, আইনবিদেরা একটু সাহায্য করবেন?
অভ্রের সোর্স কোড নিয়াও কি জব্বার সাহেবের অভিযোগ ছিল?
এইটুক পইড়া চউদার ভাষায় খ্যাঁক কইরা হাইসা দিলাম। ভদ্রলোক সময় মত ট্রেন মিস কইরা ফালাইছেন, এখন মাটি থাবড়ায়া কানলেও উপায় নাই।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আমি নিজে আইনজীবী নই ও এ বিষয়ে বিজ্ঞ মতামত পেলে খুশি হব। বিজয় কিবোর্ড এমনিতে "সাহিত্যকর্ম" হিসেবে কপিরাইট করা। Derivative Work এর একটা উদাহরণ হচ্ছে গোঁফ ওয়ালা মোনালিসাঃ
এখানে নতুন চিত্রকর্ম তৈরি হয়েছে, কিন্তু significantly নতুনত্ব দেখানো হয় নি।
আরেকটি কথা। আমার মতে ফোনেটিক কিবোর্ড অবিলম্বে পেটেন্ট করে রাখা উচিৎ। মস্তফা জব্বারের আজকের স্ট্যাটাস ঃ
এই পন্থা বহু আগেই Google Transliterate, Microsoft Indic Language Tool, এবং পরবর্তীতে অভ্র এর শিফটবিহীন টাইপ এ implement করা আছে।
হুমমম
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দেবদ্যুতি
বিজয়ের আরো একটা সমস্যা হলো এই বিজয় মোস্তফা জব্বার কেন্দ্রিক। সাথে কিছু ল্যাঙবোট তাল দিলেও আল্টিমেটলি এটা ওয়ান ম্যান টিম। মোস্তফা জব্বার যতোদিন টিকে থাকবে বিজয়ের আয়ু ততোদিন। অভ্রের মডেলটা এরকম না। অভ্র একটা টিম এবং এই টিমের হয়ে বেগার খেটে দেবার লোকের অভাব হবে না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এটা একটা বড় দুর্বলতা। বিজয় যদি বাইরের কোম্পানি গুলির মত মডেল ফলো করত তাহলে আরও ভালো হতো। বিশেষত, আমার মতে পেটেন্ট ও কপিরাইট আনন্দ কম্পিউটারের নামে করা হলে ভালো হতো।
আপনি যতই বলেন, একজন এণ্ড ইউজার হিসেবে মোজা সম্পর্কে আমার কোনই শ্রদ্ধা-ফ্রদ্ধা নাই! মোজা চিরকাল মোজাই, অতি দুর্গন্ধময়।
নিজের একটা তুচ্ছ অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমি সবসময় বিশুদ্ধ ইংরেজি কিবোর্ড ব্যবহার করি, এখনকার বাংলা+ইংরেজি মিশ্র কিবোর্ড সহ্য করতে পারিনা, ব্যবহারও করতে পারিনা। প্রচণ্ড অসুবিধা হয়। কাজের ক্ষতি হয়। আমার বাংলা ও ইংরেজির সমস্ত কাজ ঐ এক ইংরেজি কিবোর্ডেই হয়ে যায় যেহেতু আমি অভ্র ব্যবহার করি। তো, বেশ কিছুকাল আগে আমার পুরনো কিবোর্ড নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন কিবোর্ড কিনতে গেলাম মার্কেটে। কিন্তু হা হতোম্মি, ঢাকার মার্কেটের পর মার্কেট ঘুরেও বাংলা+ইংরেজি মিশ্র কিবোর্ড ছাড়া শুধু বিশুদ্ধ ইংরেজি কিবোর্ড আর কিছুতেই খুঁজে পাইনা। শেষে একজন দোকানি বললেন, চাহিদা থাকা সত্বেও বিশুদ্ধ ইংরেজি কিবোর্ড না পাওয়ার কারন হচ্ছে - কোন এক মোজার নাকি উপরমহলে বিশেষ যোগাযোগ ও প্রভাব থাকায় ভাষা আন্দোলন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ, ভাষাপ্রেম ইত্যাদি ইত্যাদি বিশাল বিশাল আবেগে ভালমত সুড়সুড়ি দিয়ে বাংলাদেশে বাজারজাতকৃত সমস্ত কীবোর্ডে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা লেয়াঊটও বাধ্যতামূলক করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে উপরমহলের মাধ্যমে। এখন চীন থেকে যত কীবোর্ড আমদানি করা হয় তার সবগুলিতে আগে থেকেই অর্থাৎ চীন থেকেই নাকি এই বাংলা লেয়াউট (বাংলা+ইংরেজি মিক্সড) ছাপিয়ে আনা হয়, আনতে বাধ্য হন ব্যবসায়ী / আমদানিকারকরা। আর এই বাংলা লেয়াউট, কোন লেয়াউট কার লেয়াউট - সেটা কি বলে দিতে হবে? কারটা চলে সারা বাংলাদেশে? অন্য কিছু করে কি ব্যবসায়ীরা গচ্চা দিবেন? এটা তো আগে থেকেই জানা ও হিসেব করা! আর হ্যাঁ, ঐ কম্পু ব্যবসায়ীর ভাষ্যমতে এই পেটেন্টেড লেয়াউট সমৃদ্ধ প্রতি কিবোর্ডের জন্য ৩০/- টাকা (তৎকালীণ রেট) করে রয়াল্টি নিশ্চিত করতে বান্দা একেবারে সশরীরে (মোজার প্রতিনিধি বা অফিস) খোদ পোর্টেই হাজির থাকেন, যাতে তার রয়াল্টি ফাঁকি দিয়ে একটা কিবোর্ড কেন, একটা 'কী'-ও যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে।
ঐ ব্যবসায়ীর এই ভাষ্য যদি আংশিকও সঠিক হয়ে থাকে থাকে, তাহলে এটা স্পষ্ট বাঙালির ভাষা নিয়ে আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে একটা চতুর প্রতারক আমাদের মাথায় কাঠাল ভেঙে খাচ্ছে। এতটাই বজ্জাত সে, যে বাংলাদেশের সমস্ত কম্পিউটার ব্যবহারকারীর উপর - বাংলা ব্যবহার করুক আর নাই করুক - সে তার ব্যক্তিগত ট্যাক্স ঘুরপথে চাপিয়ে দিচ্ছে। এটা গুণ্ডামি ও চান্দাবাজি ছাড়া আর কি?
তাছাড়া, আমার কনজিউমার চয়েস, ভোক্তা অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়ার অধিকার কে তাকে দিয়েছে? তার পণ্য ব্যবহার করতে না চাওয়া ও না করা সত্ত্বেও - আমাকে তা্র পণ্য কিনতে বাধ্য করা ও তাকে চান্দা দিতে বাধ্য করার অধিকার কে দিয়েছে? এইধরণের ডাকাতকে আমি কোনপ্রকার শ্রদ্ধা-ফ্রদ্ধা না দেখিয়ে যদি স্রেফ 'কুত্তার বাচ্চা' ডাকি, তাহলে কি খুব অন্যায় হবে?
=======================================
ডিস্ক্লেইমারঃ কিবোর্ড সংক্রান্ত এই পুরো বিষয়টাই আমার একজন কম্পু ব্যবসায়ীর কাছে শোনা। তবে বাজারে এক্সক্লুসিভ ইংরেজি কীবোর্ড-এর ঘাটতি (অন্তত তখন, এখন কি অবস্থা জানি না) আর মিডিয়াতে কীবোর্ডের পর মোবাইলেও বাংলা বাধ্যতামূলক করা নিয়ে সরকারী আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে এটা খুব মিথ্যে মনে হচ্ছে না।
****************************************
দেখুন, উনি কিবোর্ড এ রয়ালটি নিচ্ছেন এটা তাঁর ব্যবসায়িক সাফল্য। এজন্য ওনার নিজের ভুল স্বিদ্ধান্ত হচ্ছে অভ্র কে কিবোর্ড ব্যবহার না করতে দেওয়া।
বরং উনি অভ্র কে কি বোর্ড ব্যবহার করতে দিয়ে যদি অভ্র কে শর্ত দিতেন যে বিজয় কিবোর্ড যে ভার্সনে থাকবে, সেটায় ফোনেটিক কিবোর্ড থাকতে পারবে না, সেটা আরও বুদ্ধিমানের মত সিদ্ধান্ত হতো।
প্রত্যেক প্রোডাক্ট থেকে রয়ালটি নেওয়া কোন নতুন ব্যপার না। মাইক্রোসফট কর্পোরেশন প্রত্যেক আন্ড্রোয়েড ফোন এর জন্য তাঁর পেটেন্ট এর জন্য রয়ালটি নেয়।
"উপরমহলের মাধ্যমে" কোন ইংরেজি কিবোর্ড আনতে দেওয়া হয় না, এটা অদ্ভুত কথা। কোন অফিসিয়াল নির্দেশনা আছে কি বোর্ড এর স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে? যদি না থাকে বা এটা যদি ব্যবসায়ী দের কোন নিজস্ব সিদ্ধান্ত হয় এ ব্যাপারে কোন লেখা লেখি হয় না, সেটা বিস্ময়কর
নতুন মন্তব্য করুন