তত্ত্ব এবং একটি কাল্পনিক ঘটনা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৮/০৩/২০১৫ - ৭:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই মুহূর্তে বেশ স্বস্তি লাগছে তাঁর। ইশ! এই মিডিয়াওয়ালা ছেলেটা যা জ্বালিয়েছে আজ! যাক, বাবা, শেষপর্যন্ত সবকিছু ভালোয় ভালোয় শেষ করতে পারা গেছে। অবশ্য ওই ছোকরার উল্টাপাল্টা প্রশ্ন আর কথার যন্ত্রণায় তাঁর মতো ঠাণ্ডা মানুষেরও মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল কয়েকবার, ভিডিও ক্যামেরায় ভিডিও হয়ে গেছে ঐ মুহূর্তগুলো। হঠাৎ তাঁর মনে হয়-আচ্ছা, ছোকরাকে বললে ওই জায়গাগুলো এডিট করে দিত কি? দূর ছাই, তিনি চিন্তাটাকে বাতিল করে দিলেন । যা হবার হয়ে গেছে; আপাতত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেম্বারে বসে একবার পুরো ব্যাপারটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একবার দেখে নিতে চান তিনি।

সেই কবে থেকে শুরু হয়েছে এসব। রীতিমতো খাটাখাটুনি করতে হচ্ছে বিষয়টি নিয়ে। ভাগ্যিস স্ত্রী পাশে ছিল, তবে তিনি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞতা বোধ করেন প্রিয় বন্ধুর কাছে। ও না থাকলে…। তাঁর ভাবতে ভালো লাগে আর কিছুক্ষণ পরেই নিজের দেয়া তত্ত্বটি পৌঁছে যাবে কোটি কোটি মানুষের কাছে, শুধু যে এই দেশে, তা তো নয়। এই ইন্টারনেটের যুগে দেশ বলে কি কিছু আছে? সবই এখন বৈশ্বিক! নিজের দেয়া তত্ত্বের আগাম সাফল্যে তিনি শিহরিত হন। ছোকরা অবশ্য খুব হেসেছিল-প্রশ্নও করেছিলো উল্টাপাল্টা; এই তত্ত্ব মানতে নারাজ সেটি বুঝিয়ে দিয়েছিল নানাভাবে! হেঁ হেঁ, বাছা-তুমি মানতে না চাইলে হবে? সবাই যখন শুনবে, তখন দেখো, আমার পক্ষের লোক নেহাৎ কম হবে না। শীতল কক্ষটিও তাঁর চিন্তার উত্তাপে উষ্ণ হয়ে উঠতে থাকে। শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছে এখন, বেল চেপে এক কাপ চায়ের অর্ডার দেন তিনি।

তত্ত্বটি বেশ হয়েছে না? সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ধুমায়িত কড়া লিকারের চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবতে থাকেন তিনি। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, পুরো প্রক্রিয়াটির রয়েছে চারটি ধাপ; প্রথমে উত্তেজনা, তারপর পরিবেশ-পরিস্থিতি, তারপর ভিকটিমের সম্মতি আর শেষমেষ সেই ব্যাপারটা। তিনি বেশ সুশীল মানুষ, ওই ব্যাপারটার নাম নিয়ে আপত্তি আছে, নিতান্ত বাধ্য না হলে শব্দটা তিনি উচ্চারণ করেন না। অবশ্য এই তত্ত্বের অন্তত সিকিভাগ কৃতিত্ব ঐ বন্ধুকে দিতেই হবে; বিশেষ করে এই ধাপগুলো সাজানোর ক্ষেত্রে বেশ ঝামেলায় পড়েছিলেন তিনি বটে, বন্ধুই না দিনরাত খেটে ঠিকঠাক করে দিল! আর আজ ওই বদ ছোকরা হাসে-কী দুঃসাহস! বলে কিনা-তার মানে আপনি ধরেই নিচ্ছেন ব্যাপারটায় ভিকটিমের সম্মতি থাকে? ইশ! কী ত্যাঁদড় ছেলেরে, বাবা। যাক, শেষমেষ ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে সব, এই স্বস্তির কথা।

চেয়ার ছেড়ে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করেন তিনি, বহুকালের অভ্যেস। সারাজীবনে এমন কেস একটাও পাননি তিনি, এমন মানে এত ঝামেলার কেস। এই যে ভিকটিম, মরলি তো মর, গোটা বিশ্বকে এতখানি জানিয়ে মরার দরকারটাই বা কী তোর? অবশ্য কেবল ঝামেলার জন্য নয়, আরও এক দিক দিয়ে তাঁর জীবনে এই কেসটা গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হলো কেসটার বিস্তৃতি! আগে ক’জনই বা চিনত তাঁকে! আর এখন! এটা ঠিক, কেসটা হাতে নেবার সময় এতকিছু ভাবেননি তিনি কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। সারা পৃথিবীর মানুষের আগ্রহ এখন এই কেসটাকে ঘিরে। ক্যারিয়ারে সুদিনের হাওয়া টের পান তিনি। ইন্টারনেটের যুগকে মনে মনে একটা ধন্যবাদই দিয়ে দেন। সবকিছু আসতে যাচ্ছে এবার জীবনে, টাকা, সুনাম, পসার…আর তার জন্য একটাই কাজ বাকি-কেসটা জেতা। আহা! হোক না একটু বেশি বয়সে, হচ্ছে তো!

গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে ঢোকেন তিনি। বেশ বড় রুইমাছটা হাতে করে পেছনে পেছনে আসে ড্রাইভার। পুরনো গাড়ির ছোকরা ড্রাইভার তাঁর। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবেন, যাক, নতুন গাড়ি কিনতে খুব বেশি দিন হয়তো লাগবে না আর। ড্রাইভার ছেলেটা খুশি হয়েছে মাছের সাইজ দেখে। রান্নাঘরের দরজায় রান্নার মাসির হাতে মাছটা দিয়েই চলে যায়। জুতোজোড়া ছেড়ে তিনি ড্রয়িংরুমে ঢোকেন। গিন্নী রোজকার মতোই সিরিয়ালে মশগুল। রোজই এ সময়টায় টেলিভিশনে সিরিয়াল দেখেন আর একটু পর পর হেসেকেঁদে একাকার করে ফেলেন। এ নিয়ে তিনি হাসাহাসিও করেন মাঝেমধ্যেই, গিন্নীর কোনো হেলদোল নেই তাতে।

তাঁর দিকে তাকিয়ে গিন্নী এবার উঠে পড়েন। রোজকার নিয়মমতো নিজের হাতে চা করে আনবেন গিন্নী। এ সময়ের মধ্যে তিনি কাপড় ছাড়বেন, হাতমুখ ধুয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসবেন টিভির সামনে। শোবার ঘরে যাওয়ার আগে মেয়ের ঘরে উঁকি দেন। মেয়েটা নেই, নিশ্চয়ই ছাদে গেছে। তিনি হাতমুখ ধুতে যান।

চায়ের কাপ হাতে গিন্নী জানান, মেয়ে আজ বেড়াতে গেছে। সে কী! কার সাথে? বন্ধুরা মিল-এই তো, সিনেমায় যাবে, রাতে ডিনার সেরে ফিরবে। বন্ধু? সিনেমা? আজকাল এই শব্দগুলো শুনলেই খট করে কেমন কানে লাগে। তিনি বিরক্ত বোধ করেন। গিন্নী বোঝান, এত চিন্তার কিছু নেই, চলে আসবে ঠিকঠিক। আর মেয়েটা তো লক্ষ্মী আছে, কিছু হবে না।

তিনি ছটফট করতে থাকেন, ড্রয়িংরুমের দেয়ালে ঝোলানো ঘড়িটার দিকে তাকান বারবার; এখন কাঁটা বলছে-রাত সাড়ে দশটা পেরোল একটু আগে। গিন্নী চুপ, ভয় আর দুশ্চিন্তার ধাক্কা সামলাতে না পেরে একটু আগে উঠে গেছেন শোবার ঘরে। রাগের চোটে গিন্নীকে বকুনি দিতেও ভুলে গেছেন তিনি। মেয়ের ফোন বন্ধ-বন্ধুদের মধ্যে যাদের ফোন নাম্বার আছে, কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসেও তিনি দরদর করে ঘামতে থাকেন। টেবিলের উপর রাখা গ্লাস তুলে বারবার পানি খান ঢকঢক করে। ঘড়ির কাঁটা এগারোটার ঘর ছোঁয়। না, কেউ ফেরে না এখনও।

মাথায় বিদ্যুচ্চমকের মতো ভেসে ওঠে তাঁর নবজাত তত্ত্ব। হতবিহ্বল লাগে তাঁর। তিনি ভাবতে চান না, কেউ একজন যেন তাঁকে জোর করে ভাবাতে থাকে নিজের তত্ত্বটা নিয়ে। যে তত্ত্ব প্রসব করে তাঁর খুশির সীমা ছিল না, তাই এখন কেমন এক বিশাল অন্ধকারের মতো মনে হয়। তবু কলের পুতুলের মতো তিনি ভেবে চলেন-তত্ত্বটার চারটে ধাপ। প্রথমত-উত্তেজনা; কার? কার উত্তেজনা? তিনি অসহায় বোধ করেন প্রচণ্ড, পরিচিত বা অপরিচিত কেউ কি এই সময় বা এরও আগে প্রথম ধাপটি পার করেছে? ঘাম বেড়ে যায়, এসির তাপমাত্রা কমাতে গিয়েও পারেন না তিনি। কে যেন সোফার সাথে বেঁধে ফেলেছে তাঁকে। অনড় মাথার ভেতর এগিয়ে আসে দ্বিতীয় ধাপ-পরিবেশ-পরিস্থিতি; আজকের পরিবেশ পরিস্থিতি কি সেই পরিচিত বা অপরিচিত মানুষটার বা মানুষগুলোর অনুকূলে নয়? এমনটাই তো তিনি বলেছিলেন আজ ছোকরাকে-এত রাত অবধি বাইরে থাকার দায়িত্ব ভিকটিমেরই নেয়া উচিৎ, অপরাধী কেন নেবে?

জীবনে এতটা অসহায় কখনও লাগেনি তাঁর। কী করা উচিৎ, কী উচিৎ নয়-বুঝতে পারছেন না তিনি। কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁর নিজের প্রণীত তত্ত্বের ধাপগুলো একটা পর একটা। এবার পর্যায়ক্রমে আসতে থাকে তৃতীয়ত… চতুর্থত… তাঁর মনে হয় তিনি একটা অন্ধকার খাদের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন একা। নিশ্চল নিথর হয়ে তিনি বসে থাকেন সোফার উপর, সোফার সাথে তাঁকে বেঁধে রাখা হাতটা এখন আরও প্রবল। ঘড়ির দিকে তাকাতে পারেন না তিনি, শক্তি নেই তাকানোর। নিজের তত্ত্ব তাঁকে সুস্থির থাকতে দিচ্ছে না। আরেকবার পানি খেতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন পানির গ্লাস শূন্য। কাউকে ডাকবার শক্তিটুকুও নেই এখন। প্রাণপণ চেষ্টায় সুস্থির থাকতে চান তিনি, পারবেন কি না জানা নেই। নিশ্চল তাঁর কানে আচমকাই ভেসে আসে কলিং বেলের শব্দ, তিনি বুঝতে পারেন না তাঁর কেমন লাগছে-রান্নার মাসি দরজা খুলে দিতে যায়, দু’হাতে মাথা চেপে ধরে সোফার উপর এলিয়ে পড়েন তিনি।

দেবদ্যুতি


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

প্রথমবার পড়ে বুঝতে পারিনি, উত্তরাধুনিক গল্প ভেবেছিলাম ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ধৈর্য্যও বটে! ভাগ্যে এই ধৈর্য্য আছে-তাই না দু’বার পড়লেন! আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

মানে আমার ভাগ্য যে আপনার দু’বার পড়বার ধৈর্য্য আছে হাসি । প্রথমবার যে বুঝতে পারলেন না, সে দায় তো পুরোই আমার, কী লিখতে চেয়ে কী লিখে বসি, বলুন তো!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

নাহ, আমারই দোষ, দৌড়ের ওপর ছিলাম তখন হাসি

কি করবেন? হুমম, লিখতে থাকুন, তাহলেই চলবে।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

গবেষণার ভেতর আরেকধাপ গবেষণা এগুতে থাকে......
তুষার রায়

অতিথি লেখক এর ছবি

আর আমাদের উকিল, পুলিশ সবাই একে একে গবেষক বনে যেতে থাকেন...

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

আমি কেন বুঝলাম না, দ্বিতীয়বারেও? রাগ হচ্ছে নিজের ওপর।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি কেন বোঝাতে পারলাম না আপনাকে দ্বিতীয়বারেও? নিজের উপর রাগ হচ্ছে এখন। ওহ্, উপায় থাকলে লেখাটা সরিয়ে নিতাম, সাদিয়া’পু। কী লিখতে চাইলাম আর কী লিখলাম! ছাগল দিয়ে হালচাষ সত্যিই হয় না। কান্না ওঁয়া ওঁয়া

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সুপ্রিয় দেবদ্যুতি, আমি আসলে সেই লেভেলের গল্পকার বা প্রস্তুত পাঠক হয়ে উঠতে পারিনি এখনও। আপনার ব্যর্থতা না এটা আমার ব্যর্থতা। কান্নার দরকার নেই, আমি লজ্জিত আপনার ইমো দেখে। প্রথম বা দ্বিতীয়বারের পর যখন তৃতীয়বার আপনার লেখার কাছে ফিরে আসছিলাম, তখন আমার প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পটির কথা মনে হচ্ছিল। কি এক মোহে আমি গল্পটি কমপক্ষে বিশবার পড়েছি, ভেবেছি আমি কি যেন খুঁজছি, কেন প্রেমেন্দ্র এই ঢঙে গল্প বললেন? তার কি উদ্দেশ্য ছিল? কেন ভাবালেন এত?
যাই হোক, আমি একটা লেখা পড়ে যেমন বলতে পারি ভাল হয়েছে, আবার বলি ঠিক ততটা ভাল নয়, তেমনি সাহস করে বলে ফেলেছিলাম, দ্বিতীয়বারেও বুঝিনি। আমার অজ্ঞতা আমার ব্যর্থতা মনে হয়নি, আপনার সফলতা মনে হয়েছে। কারণ, লেখাটির ভেতরে আমি আবার প্রবেশ করেছি। আমার মেয়ে যখন জাতীয় পতাকার বৃত্ত আঁকতে যেয়ে মনটা খারাপ করে বলে, মা আমি পারছি না, তোমার মতো হচ্ছে না, গোল হচ্ছে না। আমি বুকে টেনে বলি, হবে মা আস্তে আস্তে হবে। আমি বলি না, তুমি পারছো না কেন মা? তোমার পারা উচিত।
আপনার মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে আবারও ক্ষমাপ্রার্থী। ভাল থাকুন। গল্পের চমক বজায় থাকুক। শুভেচ্ছা অফুরন্ত।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

অতিথি লেখক এর ছবি

এবার কিন্তু আমার সত্যি সত্যিই কান্না পাচ্ছে, সাদিয়া’পু মন খারাপ । আপনি এভাবে বললে আমার কষ্ট লাগে না বুঝি? এই যে আপনি এই লেখাটা তিনবার পড়েছেন-এটা আমার অনেক বড় পাওয়া না, বলুন? আপনি কিন্তু এটা রেখে চলে যেতে পারতেন! যাননি তো! তাহলে কেন এইসব ‘ক্ষমা’ জাতীয় শব্দ বলবেন? আমি কিন্তু ‘কাইন্দা দিমু’ আর আপনার মেয়ের কাছে ‘বিচার চামু’ ...

মাসুদ সজীব এর ছবি

ঠিক না বুঝার কি আছে? ধর্ষন নিয়ে একটা তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন ভদ্রলোক, সেই তত্ত্ব যখন নিজের মেয়ের সাথে ঘটে যায়/কল্পনার করা হয় তখন মানসিক কি অবস্থা হয় সেটিতো সহজ সরল ভঙ্গিতে উঠে এসেছে গল্পে। গল্পকার যদি অন্যের গল্প বুঝতে না পারে তাহলে ক্যাম্নে হয়? চিন্তিত

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঘটনা হয়েছে কী-তত্ত্বটা যে ধর্ষণের এটা তো খোলাসা করা নেই আর ‘তিনি’ শব্দটাকেও আমার নিজের কাছে ভজঘট মনে হচ্ছে, একটা নাম দিলেও বোধহয় এতটা অস্পষ্ট হতো না।

দেবদ্যুতি

গগন শিরীষ  এর ছবি

বনফুলের একটি গল্প পড়েছিলাম।সেখানেও এরকম এক জ্ঞানী ব্যাক্তির কাছে এক লোক এসেছে পরামর্শ চাইতে।তার পরিচিত এক লোকের ছেলের বউয়ের বাচ্চ হচ্ছেনা।কি কিরা উচিত? জ্ঞানী লোক উপদেশ দিলেন বউটিকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে।"বাজা " বউ ঘরে রাখার দরকার নেই।
এরপর জ্ঞানী লোক বাড়ি ফিরে দেখলেন তার মেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে।মেয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করল "তুমি নাকি আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলেছ "?
আপনার গল্প পড়ে সেই গল্পের কথা মনে পড়ে গেল।

অতিথি লেখক এর ছবি

বনফুলের গল্পটা ‘ভিতর ও বাহির’ কাল পড়লাম। কী অদ্ভুত না? বনফুল পড়ছি আর অবাক হচ্ছি-এত ছোট ছোট গল্প এত অদ্ভুত সুন্দর!...

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্প ভালো লাগছে। তবে একটা কথা-

ক্যানভাসটা যদি একটু বড় করি। তাহলে কিন্তু ভিকটিম নারীই থেকে যাচ্ছে। অর্থাৎ পুরষতান্ত্রিক মানসিকতায় জোর আঘাত দিতে গিয়ে পুরুষটিকে আমরা ভিকটিমের জায়গায় নিতে পারছি না। আমরা বড়জোর তার শ্রেণির বা তার পরিবারের বা অত্যন্ত আপন নারীটিকেই বেছে নিচ্ছি আঘাতের লক্ষ্য হিসেবে।

যা হোক তত্ত্বকথা হয়ে গেল। গল্প ভালো লেগেছে।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার জন্য অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- । আর তাঁর প্রিয় নারীটি কিন্তু নিরাপদে ফিরে এসেছে কলিং বেলের শব্দের সাথে সাথেই। আসলে কী জানেন তো, আমার মনে হয় কেউ কেউ আছেন যারা নিজেদের খুব প্রিয় কিছু হারানোর সময় না এলে কিছু্ই বুঝতে পারেন না। মেয়েটার কিছু হয়নি কিন্তু কিছু হবার আশঙ্কায় একজন বাবা হিসেবে তাঁর কেমন লাগতে পারে সেটাই লিখবার কথা ছিল কিন্তু ইয়ে মানে, লেখাটার মধ্যে বেশ অস্পষ্টতা আছে মনে হচ্ছে, বোধহয় স্পষ্ট করে লিখতে পারিনি... মন খারাপ মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

অস্পষ্টতো লাগেনি আমার কাছে। ফিরে যে এসছে তাতো বুঝেছি প্রথমবারেই। আমি বলছিলাম, তার আত্ম-উপলব্ধির জন্য কিন্তু আমরা টেনশনটা তার কন্যাকে দিয়েই ক্রিয়েট করলাম। প্রিয় কিছুকে হারানো ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারে না।

এটা সত্য।

নিজের পুটুও কিন্তু সবার প্রিয়।

এটাও ভেবে দেখা যেত আরকি।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

জানেন, আপনার মন্তব্যটা ভাবাচ্ছে আমাকে কাল থেকে। পরে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি। অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মজিবুর রহমান  এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- স্বয়ম ও গগন শিরীষ কে কিছুটা বুঝতে সাহায্য করেছে তারা দেঁতো হাসি

কেউ একজন বলেছছিল " কবিতা হইল ডায়রিয়া, প্রবন্ধ হইল কোষ্ঠ কাঠিন্য , ছোট গল্প হইল আমাশয়" শয়তানী হাসি
এইবারের আমাশয়টা আমার জন্য একটু কঠিন ছিল!!!!!!

প্রিয় দেবদ্যুতি , হাততালি

অতিথি লেখক এর ছবি

ইয়ে, মানে... খাইছে আমার কান্না পাইতেছে এই লেখাখানার জন্য, কিছুদিন বিশ্রাম লই, কী বলেন! ওঁয়া ওঁয়া

নজমুল আলবাব এর ছবি

গল্প হিসাবে হয়তো পুরনো। কিন্তু আপনি চমৎকার করে বল্লেন।

এই গল্প না বুঝার কি হলো সেটা আমার বুঝে আসছে না। সচলে অপ্রস্তুত পাঠকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে নাকি? অবাক হচ্ছি, এবং কিছুটা বিরক্ত।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার জন্য অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- । আমি আজ নিজেও কেবল একজন পাঠক হিসেবে পড়তে গিয়ে খেয়াল করলাম, লেখাটা খানিকটা কঠিনই হয়েছে; সেদিন মি . শর্মার সাক্ষাৎকার দেখার পরপরই লিখেছি, তাই তখন বুঝতে পারিনি যে আরেকটু খোলসা করার দরকার আছে। পাঠকদের বোধহয় গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র এই ‘তিনি’টাকে নিয়েই বেশি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে-তা ওঁদের আর দোষ কী বলুন?

নজমুল আলবাব এর ছবি

আমিতো বল্লাম, এটা পাঠকের সমস্যা। সহজপাঠ এর গল্প নিশ্চয় এখানে কেউ আশা করে না। আরেকটু খোলাসা করতে গিয়ে হয়তো লেখাটাই মারা যেতো।

মাসুদ সজীব এর ছবি

চলুক চলুক

সহমত।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

মাসুদ সজীব এর ছবি

দেবদ্যুতি আপনার গল্পের মাঝে কোন অস্পষ্টতা নেই। এই গল্পের তত্ত্ব আবিস্কারক একজন পুরুষ, আর সেই তত্ত্ব যখন তার মানসিক যন্ত্রনার কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেটিই মূলত গল্পের মূল শিক্ষা/বক্তব্য। সচলের মতো জায়গায় এ গল্প পাঠক বুঝে উঠবে না বিষয়টা হতাশার। গল্পের প্লট যদিও পুরাতন কিন্তু আপনার গল্প বর্ণনার জন্যে বেশ ভালোলেগেছে। লেখালেখি চলুক নিজের মতো করে সর্বদা হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেকগুলো আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- । এইটাই বলতে চেয়েছিলাম ঠিক ঠিক, আপনি কেমন টুপ করে বুঝে গেলেন! দিল্লী কেস নিয়ে এম.এল. শর্মা’র সাক্ষাৎকার দেখছিলাম সেদিন-ভদ্রলোক (বলতেও ইচ্ছে করে না) কী অবলীলায় অপরাধীদের অপরাধ ক্ষালন করে গেলেন আর দোষ চাপালেন ভিকটিমের উপর! আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম একেবারে ঘেন্নায়, কষ্টে আর ক্ষোভে। তখন মনে হয়েছিল-মি. শর্মা যদি কোনোদিন ঠিক এমনই আতঙ্ক অনুভব করেন তাঁর কোনো প্রিয়জনের জন্য, কেমন ব্যাপার হবে সেটা... অন্য কেউ অনুভব করবে না, তাঁর স্ত্রীও ততটা না, মেয়ে তো বুঝবেই না কিন্তু তাত্ত্বিক নিজেই তাঁর তত্ত্বের জন্য ছটফট করবেন অপরিসীম যন্ত্রণায়...

sharafat sharif এর ছবি

আমি প্রথম দুটি তত্ব পড়েই বুঝতে পেরেছি ধর্ষণ সম্পর্কেই হবে। কিন্তু এমনটা তো হবার কথা ছিল না! গল্পটা ভালো লিখেছেন। কাহিনীটাও সুন্দর হয়েছে। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- । হয়ত এমন হয় না তবে যদি এমন হতো সত্যি সত্যি তাহলেই বোধহয় ভালো হতো অন্তত কিছু জঞ্জাল শিক্ষা তো পেত...

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আসলেই অজ্ঞ। কোন তত্ত্বের কথা বলা হয়েছে এখানে কেউ একটু বলবেন?

- নীল কাকাতুয়া

অতিথি লেখক এর ছবি

অজ্ঞতা আপনার নয়, অস্পষ্টতা হয়ত লেখার। দিল্লীর নির্ভয়া গণধর্ষনের ঘটনায় আসামিপক্ষের আইনজীবী এম.এল.শর্মা-র সাক্ষাৎকার দেখে মনে হয়েছে তিনি বেশ একটা তত্ত্ব দাঁড় করাতে চেয়েছেন ধর্ষন এবং ধর্ষনকারীদের সপক্ষে। সেটাই গল্পাকারে লিখতে চেয়েছি।

মরুদ্যান এর ছবি

আমি মনে হয় একটু বেশি আগে বুঝে ফেলেছি, শেষে কি হবে আগেই বুঝে ফেললে পুরোটা পড়ার ধৈর্য্য থাকেনা। বাজে অভ্যাস।

ভালাই হইসে। এই নেন বুড়াঙ্গুল চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

নিজের ঘাড়ে বিপদ পড়লে বোঝা যায় কত ধানে কত চাল!!! দারুন লেগেছে । বিশেষ করে গল্পের মমার্থ ছুয়ে গেছে।

------------
রাধাকান্ত

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

দেবদ্যুতি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।