পোস্টাপিস
চাকরি কি আর ছেলের হাতের মোয়া- কথাটা কে বলেছিলো যেন?
এজন্যই চাকরি এসেও আসেনা, হয়েও হয়না বেকারদের। এখন তো ছেলেরা মোয়া খায় না। লেবেনচুস চোসে। ললিপপ চোসে। তাই চাকরি রকম সকম গেছে উল্টে পাল্টে। কিন্তু আসমানীদের তো সরকারি চাকরির খায়েশ মেটেনা।
আসমানীর সঙ্গে পরিচয় ঘুরতে ঘুরতেই। চাকরিপ্রার্থী হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতার যেন অন্ত নেই। কথা বলার ধরণও বেশ অদ্ভুদ। পাঠকের ভাল লাগবেই। তাই এই সিরিজের নায়ক হিসেবে আসমানীকেই বেছে নিলাম। ও যখন গল্প শুরু করবে, আমার অস্তিত্ব ততক্ষনে গায়েব। তাই উত্তম পুরুষের সব বয়ান আসমানীর।
‘বাবা বলেছিল, সরকারি চাকরি লাগবেই লাগবে। মা সবসময়ই বলে আমি বাবা নেওটা। তাই বাবার কথা বেদবাক্য।
অফিসে অফিসে হন্যে হয়ে ঘোরা, পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞাপন তণ্য তণ্য করে দেখায় আমার প্রতিদিনের রুটিন।
এই সোমবার একটা দৈনিকে চাকরির বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে গেল। গ্রেডের দিক থেকে দ্বিতীয়। তাই সই।
সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্যারা শুরু হয় সূচনা থেকেই। তাই প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদনপত্রটি ডাউনলোড করলাম। কিন্তু প্রিন্ট তো ঠিকমতো হয় না! নীলক্ষেত্রে নিয়ে গেলাম পেন ডাইভে করে। ওরা বলল, লিগ্যাল সাইজে করতে হবে। দুই কপি দশ টাকা।
রাতে সবাই যখন গভীর ঘুমে মত্ত তখনি, ফরম পূরণ শুরু। একটা ফরমে কাটা ছেঁড়া হলো। দ্বিতীয়টায়ও একটু ভুল! কি করি, কি করি! একটা সাদা কালির কলম ছিল বাড়িতে। প্রায় গুদামমত জায়গা থেকে সেটা উদ্ধার হলো। পরদিন সার্টিফিকেট, ছবি, চারিত্রিকসনদ সত্যায়িত করলাম। সেখানেও বিরাট ও লম্বা গল্প। সেটা না হয় থাকুক!
এর দু দিন পরে অগ্রনী ব্যাংক, কারওয়ানবাজার শাখায় গেলাম। ১০০ টাকার পে অর্ডার করাবো। ১২৩ টাকা রাখলো কমিশনসহ। পাশেই পোস্ট অফিস। অনেক বুদ্ধি করে এই পোস্ট অফিসে এসেছি। কারণ যে প্রতিষ্ঠানে দরখাস্ত করছি, সেটি পোস্টঅফিসের দুই বিল্ডিং পরেই। চিঠি তো উড়ে উড়ে যাবে। সময় আছে তিন দিন। কোনোই ঘটনা না, এরম একটা ভঙ্গি করে পোস্টাপিসে যে ছেলেটা ছিল, তাঁকে বললাম এটা ওজন দাও! দেখো কত টাকা লাগবে!
ও বললো ২৬ টাকা। আচ্ছা ঠিক আছে। তা, কখন পৌছবে? ছেলেটির অদ্ভুদ পাল্টা প্রশ্ন- কবে পৌছাইবো, তা আমি জানি কি!
মানে বুঝলাম না। বুঝিয়ে বললাম, ভাই যেখানে চিঠিটা পৌছাবে, সেখানে যেতে আপনার লাগবে তিন মিনিট!’ কথায় কোন কাজ হলো না।
পাশ থেকে আরেকজন বলে উঠল, ‘আপা ওদের কোনো ঠিক নাই। আমাকে বলেছিল চিঠি পাঁচদিনে যাইবো। সাত দিনেও চিঠি যায় না। একই এলাকার মধ্যে। সেই অফিসে আবেদনই করতে পারলাম না পোস্ট অফিসের জন্য।’
দাঁড়িয়ে ভাবছি। কি ভাবছি আল্লাই মালুম। আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না প্লিজ। আমার তথৈবচ অবস্থা দেখে পেছনে বসে থাকা পোস্টমাস্টার ইশারায় ডাকলেন। ‘চিঠি পৌছানোর শেষ তারিখ কবে?’ বললাম, ‘তিন দিনের মধ্যে পৌছতে হবে।’
তিনি আমার ফোনটি নিয়ে কোথায় যেন কল করলেন। তারপর কি যেন সব বললেন। ফোনালাপ শেষ করে আমার দিকে ফিরে বললেন, ‘আপু এখানে আমরা গেরান্টি দিতে পারি না। কারণ চিঠি এখান থেকে তেজগাঁও যায়। সেখান থেকে কমলাপুর। বাছাই হয়ে আবার তেজগাঁও। সেখান থেকে আমাদের কাছে। তাপর ঠিকানামতো পৌছনোর কাজ আমাদের। এজন্য দেরী হবেই। আপনি তেজগাঁও পোস্টঅফিসে চলে যান। ওদেরকে বলবেন চিঠিটা যেন কমলাপুর না পাঠিয়ে আমাদের কাছে সরাসরি পাঠিয়ে দেয়। আর যে কাজটা করবে তাকে খুশি হয়ে পাঁচ- দশ টাকা দিয়েন।’
আশ্চর্য আর কারে কয়- ভাবতে ভাবতে রিক্সায় তেজগাঁও পোস্টাপিস। ঘটনা শুনে অপোস্ট অফিসের এক কর্মচারী বললো, ‘হুম! কিছু খরচা লাগবো!’
আমি কড়া গলায় বললাম, ‘কেন?’
কি হলো কে জানে, বললো, দ্যান চিঠি দ্যান।’
আমার পাশেই একজন বয়স্ক এসে দাড়ালো, চিঠি পাঠাবে কোথাও।
আমার সমস্যা শুনে বললো, আপনিও জিইপি করান। আমিও তো করাবো। জিইও মানে গেরান্টেড এক্সপ্রেস পোস্টাল। একদিনে যেতে বাধ্য।
অফিস কর্মচারী বললো, ‘আপনার এত কথার কি! আপনারটা আপনে করান।’
আমি বললাম, ‘এখানে জিইপি হয়?’ কোনো কথা নাই মুখে ওর। চোখের পাতাও নড়ে না। বিরক্তিটা লাগে কি না বলেন?
দেবদূতের মতো লোকটি বললো, এখানে তো অবশ্যই হবে। সব সাব পোস্ট অফিসেই এই ব্যবস্থা আছে।
অফিস কর্মচারী আমার খামটি নিল। ওজন দিয়ে বললো, ষোল টাকা দেন! দিলাম। ষোল টাকার স্ট্যাম দিল। আঠা লাগালাম। রিসিট দিল। দেবদূত বললেন, ‘এ্যাই রেজিস্ট্রির রশিদ দিস ক্যান। রেজিস্ট্রি তো এক দিনে যাবে না।’ ওর প্রতিউত্তর রশিদ নাই জিইপি’র। দ্যান সিল মাইর্যা দেই!’
দিল। দেবদূতকে ধন্যবাদ দিয়ে বাইরে এলাম। রিক্সায় ফিরতে ফিরতে পোস্টাপিসের চোদ্দগুষ্টি উদ্ধারকার্য মোটামুটি শেষ করে ফেললাম। এখন চাকরিটায় ডাক পেলে হয়!
সুচিত্রা সরকার
মন্তব্য
অদ্ভুদ, চোসে, পেন ডাইভে, স্ট্যাম-- এই বানানগুলো চোখে লাগার মতো।
একজন বয়স্ক এসে দাড়ালো, চিঠি পাঠাবে-- দাঁড়ালেন, পাঠাবেন। সেটাই হওয়া উচিত না?
সচলে স্বাগতম। লিখুন আরো।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
হু, সচলে স্বাগতম। তবে পরেরবার বানানগুলো একটু খেয়াল করে।
লেখা চলুক।
এখুনি ঠিক করছি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
পোস্ট অফিসের এই অবস্থা এখন! শুনে খারাপ লাগলো।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আপনার ভোগান্তি অল্পের উপরে শেষ হয়ে যাওয়াতে অভিনন্দন। আশা করি পরবর্তী পর্যায়ে ডাক পেয়ে যাবেন।
আপনার লেখাটা পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, বাংলাদেশের ডাক বিভাগের অবস্থা এখন কেমন? ইমেইল আর মোবাইলের এই সময়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে হাতে লেখা চিঠি তার গুরুত্ব হারিয়েছে। জরুরী চিঠিপত্রের জন্য পরিচিত অনেককেই দেখেছি কুরিয়ার সার্ভিসকে প্রাধান্য দিতে। আন্তর্জাতিক কিছু যোগাযোগ, আর দেশি সরকারি অফিসের আবেদনপত্র ছাড়া তারা এখন আর কী কাজ করে? হয়তো সরকারি অফিস দেখেই বেঁচেবর্তে আছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলে এই বিভাগ উঠে যেতো/লোকবল কমানো হতো নিশ্চিত।
অলমিতি বিস্তারেণ
ঠিক, সরকারি অফিস দেখেই এখনো বেঁচেবর্তে আছে। দেশে এখন কয়েক হাজার কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানি আছে। তারা করে খাচ্ছে কী করে? কারণ, ডাকবিভাগ যে সার্ভিসটা দেবার কথা সেটা কখনোই দিতে আগ্রহী ছিল না। একই কথা আন্তর্জাতিক কুরিয়ার (বনাম ইএমএস), বিকাশ (বনাম ইএমটিএস), ব্যাংক ড্রাফট (বনাম পোস্টাল অর্ডার), বেসরকারি লাইফ ইন্স্যুরেন্স (বনাম ডাক জীবন বীমা) ইত্যাদির কথা বলা যায়। পোস্ট অফিসের কাউন্টারের কর্মচারীদের দুর্নীতি আর দুর্ব্যবহারের উদাহরণ সবার ঝুলিতে আছে। কেউ কেউ হয়তো তাদের অতি সামান্য বেতনের কথা বলতে পারেন, তবে সেটার দায় ভোক্তার নয়। আর দুর্ব্যবহার করার অধিকার কারো নেই।
আগে মানুষের সামনে বিকল্প ছিল না তাই পোস্টঅফিসে যেতো, এখন উপায় থাকলে আর ওমুখো হয় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
স্বাগতম, লিখতে থাকুন। সাথে আছি।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
সচলে স্বাগতম দিদি।
আপনার চিঠি ঠিকমত পৌঁছাক এবং আপনি চাকরীর জন্য মনোনীত হয়ে আমাদের মিষ্টিমুখ করান সে কামনা করছি
লিখতে থাকুন, কোনো এক সুন্দর সকালে যখন হাচল(সচল হবার জন্য যে বা যাহারা হাঁ করিয়া থাকে) হয়ে যাবেন
তখনই টাইপোগুলো শুধরে নিবেন না হয়। হাত পা খুলে লিখতে থাকুন।
আমি সেই যন্ত্রণায় ‘ডাকযোগে দরখাস্ত’ করাই বাদ দিলাম! কী করি-সরকারি চাকুরি আজকাল আমারও চাই চাই মনে হয় কেবল-তাই পিএসসি-ই সই, ডাকের যন্ত্রণা অনেকখানি কম... । লেখা চলুক
দেবদ্যুতি
একটা বিষয় বুঝলাম না, ৩ মিনিট দূরত্বের অফিসে চিঠি পাঠাতে আপনাকে পোস্ট অফিসে গিয়ে পোস্ট করতে হবে কেন? হাতে হাতেই তো দিয়ে আসা সম্ভব ! !
নতুন মন্তব্য করুন