বিকেল ৫টা বাজতে না বাজতেই আজ আড্ডা ছেড়ে উঠে পরলো রাফি। অনেকদিন ধরেই যাব যাব করে যাওয়াই হচ্ছে না। মা’র জন্য একটা শাড়ি কিনতে হবে। পহেলা বৈশাখের আগে আর মাত্র একটা দিনই আছে হাতে! মা নিজেই যদিও শপিং করবে তবুও সবসময়ই রাফি নিজে থেকেও কিছু একটা কিনে দেয়। আড়ংএ গেলেই মনে হয় তাড়াতাড়ি হবে - দামাদামির ঝামেলা নেই।
রাতে মা’র হাতে শাড়িটা দিয়ে রুমে ঢুকেই বিরক্তিতে নাক কুঁচকায়! দেয়ালের গায়ে বিশাল একটা মাকড়শা বসে আছে। পেটে একটা সাদা রঙের ডিমের থলেও দেখা যাচ্ছে। এই কুৎসিৎ প্রাণীটাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে ও। কি ভয়ংকর দেখতে। কোথায় যেন শুনেছিল জন্মানোর পরে মাকড়শার বাচ্চারা নাকি মা’টাকে খেয়ে ফেলে! টেবিল থেকে একটা খাতা নিয়ে হুস হাস করে মাকড়সাটা তাড়িয়ে দরজার আড়ালে পাঠিয়ে তারপর শান্তি।
বৈশাখের সারাদিন টো টো করে ঘুরেই কেটে গেল। বিকেলের দিকে টিএসসি তে মিট করার কথা সবার সাথে। জিসানদের গ্রুপটা দারুণ একটা এ্যডভেঞ্চার প্ল্যান করে রেখেছে। এ্যনেক্স বিল্ডিংএ পার্ক করা বাইক নিয়ে ভিড় ঠেলে ফিরে আসতে আসতে মনে মনে হাসে রাফি। ভালই মজা হবে। জোরে জোরে কয়েকবার হর্ণ বাজিয়ে ভাবে শুরুতেই টিএসসির পাশে বাইকটা রাখলেই হতো।
জ্যামকে শাপ-শাপান্ত করতে করতে অনেক রাত করে ঘরে ফেরে রাফি। মা’র রুমের দরজাটা বন্ধ। সারাদিন অফিসের পার্টি তারপর বন্ধুদের সাথে একটু ঘোরাঘুরি শেষে মাও ক্লান্ত তাই আর ডাকলো না। খুবই হাসিখুশি আর উচ্ছল হওয়ায় সব গ্রুপেরই রাফির মা কে নিয়ে টানাটানি। রাফির মধ্যেও এটা নিয়ে একটা হালকা গর্ব কাজ করে। মাঝে মাঝে পার্টিতে গেলে দুষ্টুমি করে মা’কে নিজের বড়বোন বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে মোবাইলটা নিয়ে বসলো রাফি। বাইকটা আনতে গিয়েই দেরী হয়ে গেল। জিসানদের সাথে দেখা হলো না। কিন্তু ওরাও বদ কম না, মনে মনে হাসে রাফি। পুরো জিনিসটাই মোবাইলে ভিডিও করেছে। সাহস আছে বলতে হবে। এত মানুষ টিএসসিতে তার মাঝখানে - ভাবতেই গায়ে কাঁটা দেয়!
মেয়েটার ফিগার ভালই মনে হচ্ছে, মোবাইলে তাকিয়ে ভাবে রাফি। ভিড়ের মধ্যে ভিডিওটা তেমন ভাল হয় নি। কাঁপা কাঁপা। ধরেছেও পেছন থেকে। শাড়ি দেখে তো বেশ ভাল ফ্যামিলির মনে হচ্ছে। আরে এই শাড়িটা তো রাফিও সেদিন দেখেছে আড়ংএ। ভাল মালই ধরেছে বদগুলো - মনে মনে হাসে রাফি। এতক্ষনে শালা লাইনে এসেছে, ক্যামেরা নিয়ে সামনের দিকে গিয়েছে। ভুভুজেলার শব্দে অন্য কিছুই আর শোনা যাচ্ছে না।
হঠাত দরজার পাশে চোখ যায় রাফির। সেই বিশাল মাকড়শাটা চিৎ হয়ে ঝুলে আছে। বাচ্চাগুলো কি মা’টাকে মেরে রেখে গেছে নাকি!
--
ঘুমকুমার
মন্তব্য
...
আয়নামতি, এই প্রপিকের মত চললে কি মুক্তি আসে?
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
একই প্রশ্ন আমারও ৷
গল্পটা যদি লিখতে না হতো তবেই সবচেয়ে খুশি হতাম।
- ঘুমকুমার
অল্প কথায় অনেক বলেছেন। আমি ঘুমিয়েই বেশ ছিলাম ঘুমকুমার।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
ঘুমিয়ে থাকতে পারলেই বোধহয় ভাল। কিন্তু ঘুমাতেও পারি না।
- ঘুমকুমার
দেবদ্যুতি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
যত ভয়ঙ্কর, ঘৃণিত আর অবাস্তব-ই মনে হোক না কেন, এ পোস্ট-এ ধরা ঘটনা মর্মান্তিকভাবে সত্যের প্রতিচ্ছবি!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
কিছু কিছু সত্য তেতোই হয়---------
স্বয়ম
নতুন মন্তব্য করুন