এই কথাগুলো কোনদিন কাউকে বলিনি খুব কাছের দুই একটা বন্ধু ছাড়া। আমার স্বামীও জানেনা। জানলে যে সে খারাপ ভাবে নেবে তাও না। সে যথেষ্ট উদার মনের মানুষ। কিন্তু বলতে পারিনি। যদি কোনদিন একবার রাগের মাথাতেও কিছু বলে ফেলে আমি মরে যাব। আর আমার মনে হয় ছেলেরা আসলে ব্যাপারগুলো বোঝেনা। হয়তো আমি ভুল। কিন্তু সাহস হয়না।
আমি তখন ক্লাস ওয়ান কিংবা টুতে পড়ি। আব্বার অফিসের ড্রাইভার আমাদের বাসার কিছু কাজ করে দিত। বাজার করা, বাসার ফিউজ নষ্ট হয়ে গেলে ঠিক করা। নাম বোধহয় ছিল লিয়াকত। আমাদের বাসায় অনেক মানুষের আসা যাওয়া ছিল। বাচ্চারা কে কোনদিকে যাচ্ছে মা চাচিরা এত খবর রাখতোনা। লিয়াকত ভাই আমাদের কোলে নিয়ে খেলতো, আমরা খুব খুশি হতাম উনাকে পেলে। বাজার করার সময় চকলেট, তিলের খাজা এনে দিত আমাদের।
একদিন সন্ধ্যাবেলায় লিয়াকত ভাই কোলে নিয়ে আমাদের বারান্দায় বসলো। তারপর কুটি বাচ্চা তোমাকে অনেক আদর করি আর কী কী বলে আমার প্যান্ট এর ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিল। এটা যে কী আমি কিছুই বুঝলাম না। ভাবলাম এটা একটা নতুন ধরনের আদর বোধহয়। আমি অই অবস্থাতেই হাসতে হাসতে তার সাথে কথা বলতে থাকলাম। পরে আরো অনেকবার হয়েছে ওরকম। যতদিন না আব্বার বদলি অন্য শহরে হয়ে যায়। পরে যখন বুঝতে শিখেছি খালি বমি বমি পেত। ভয়ে কাউকে বলতাম না। আম্মা যদি মারে?
নানুবাড়ি গেছি। ওখানে ওইবার খালারতো ভাই বোন সবাই আছে। সবাই খুব মজা করি। সারাদিন ঘোরাঘুরি করি। পাশের বাসায় আরেকটা নানা নানু থাকেন। তাদের দুই ছেলে পড়ে ঢাকায়। কী একটা বন্ধে তারা দুইজন এসেছে। আমি আর আমার খালারতো বোন গেলাম দেখতে। আমার খালারতো বোন আমার থেকে ছোট, কিন্তু অনেক বোঝে। সে গিয়েই বললো অই মামাদের ভালো লাগে নাই। অইখানে আর যাবোনা। কিন্তু আমি যেতাম। মামারা মজার মজার গল্প করতেন।
একদিন অই দুই জনের এক মামা আমার জামার ভেতর হাত ঢুকিয়ে ফেললো। তারপর কথা বলেই যাচ্ছে। আমি শক্ত কাঠ হয়ে বসে আছি। কথা বলতে ভুলে গেছি। এর মধ্যে আরেক মামা ঢুকল। সেই মামা ঢুকে দুজন শুরু করলো হাসি। ওই মামা এগিয়ে এসে আমার প্যান্ট এর ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিতে চাইলে আমি কোনরকমে দৌড়ে বের হয়ে আসলাম। পরেও ওই দুই মামা আমার নানুর বাসায় আসতো যতদিন উনাদের বন্ধ ছিল। আমার আর খালারতো বোন গুলোর দিকে তাকিয়ে ঘিনঘিন করে হাসতো। আমি এখনো চোখ বন্ধ করলে তাদের লালা ঝরা হাসি দেখতে পাই। আমার ছোট মামা খুব সাবধানে রাখতো আমাদের। বুঝেছিল হয়তো কিছু। নানুকে বলতো আম্মা এই দুইটারে আসতে দিওনা।
এরকম অত্যাচার আমার চাচারতো ভাইও করেছিল আমাকে। তখন অনেক বড়। কলেজে পড়ি। ওই লোক প্রায় আমার বড় চাচার ছেলে, আব্বা থেকে মাত্র সাত আট বছরের ছোট। দৌড়ে অন্য ঘরে চলে আসছিলাম। পরে বলেছিলাম আমার ছোট চাচিকে। উনার সাথে আমার খুব ভাল সম্পর্ক ছিল, এখনো আছে। চাচী ওই ভাইকে ডেকে কী বলেছিলেন জানিনা। এরপর আর কিছু করার চেষ্টা করেননি।
এখন যখন ভাবি আমি কাউকে কিছু বললাম না কেন, তখন মনে হয় দোষতো আসলে আমার। আমি কেন গিয়েছিলাম ওই মামাদের কাছে। কিন্তু আমি জানি আমার দোষ না। আমার বয়স কত ছিল তখন? এত ছোট ছিলাম যে মনেই করতে পারিনা কোন ক্লাসে পড়ি। আমি কিভাবে জানবো মানুষ এরকম পশুর মতো হয়? অই মামারা ঢাকায় ভাল ভাল জায়গায় পড়তেন, কত সুনাম করতো সবাই। কে জানতো ভেতরে কতটা জানোয়ার এরা যে দুই ভাই মিলে একটা বাচ্চার ওপর নির্যাতন করতে পারে?
আমার উচিত ছিল ওই চাচারতো ভাইয়ের মুখোশ খুলে দেয়া। তাকে জুতা দিয়ে পিটানো। কিন্তু ভয় পেয়েছি। সম্মান হারানোর ভয়। ছোটবেলা থেকে জেনে আসছি মেয়েরাই খারাপ। রাস্তায় ছেলেরা বাজে কথা বলেছে, সবাই বলছে বাইরে যাবার দরকার কি? কোন ছেলে হয়তো ফোন করে বাজে কথা বলেছে, সবাই বলেছে তুমি খারাপ বলেই তোমাকে ফোন করে, কই আর কাউকে তো করেনা?
বাসে বসে আছি। পেছনের লোক গায়ে হাত দিয়েই যাচ্ছে। ভয়ে কিছু বলিনি। পাশে আব্বা ঘুমিয়ে আছে। আব্বার সামনে এগুলা বলবো কীকরে?
পরে জেনেছি। এই ব্যাপারগুলো শুধু আমার সাথে না আমার চেনাশুনা প্রায় সবার সাথেই ঘটেছে। এখনো ঘটে। যতদিন মেয়েরাই খারাপ এই ধারনা থেকে আমরা বের হয়ে না আসবো বারবার এরকম ঘটবে। মা বাবা নিজেদের বাচ্চাকে মেয়েদের সম্মান করতে না শেখালে এরকম ঘটতেই থাকবে। আপনাদের মেয়েদের সাথে এরকম ঘটুক চান কিনা সেটা আপনারাই ঠিক করুন।
মন্তব্য
এই ব্যাপারগুলোতে সচেতনতা তৈরি করা খুব জরুরি। সমস্যা হলো দেখা যাচ্ছে এত ছোট বয়সে বাচ্চাদের সাথে এসব ঘটছে, তাও আবার আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে, এটার জন্য কার্যকরী উপায় যে কী হতে পারে আমি ভেবে বের করতে পারি না। বাবা মার সাথে সন্তানদের দূরত্বও নিশ্চয়ই যৌন নির্যাতনের একটি বড় কারণ। বাবা মাকে সবার আগে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। আমাদের দেশে প্যারেন্টিং এর জন্য বই পড়ার অভ্যাস বা কোনো ট্রেনিং এর ব্যবস্থা সম্ভবত নেই। থাকলে এই ধরণের বিষয়গুলো কীভাবে বুঝিয়ে বলা উচিত সেইসব ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা হতো। আমাদের দেশে বাবা মারা যৌনতা নিয়ে ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ নন, এই জিনিসগুলোও ভাবা দরকার। কিন্তু কথা হচ্ছে ভাববে কে?
লিখতে থাকুন। নামে বা বেনামে। কারণ বাঁচতে হলে জানতে হবে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
সহমত। অভিভাবকের সঙ্গে সন্তানদের দূরত্ব ঘুচানোই সর্বাগ্রে জরুরী।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
কিছু বলার নেই। আসলে বলার কিছু থাকে না। ধর্ষণ, যৌন-হেনস্তা ইত্যাদি শুধু এক রকমের হয় না। মেয়েদের কি রকমের বর্বরতার উপর দিয়ে বেঁচে থাকতে হয় বিশেষত আমাদের এই অঞ্চলে তা বর্ণনা করার সাধ্য আমার নেই। চোখ খুললেই প্রতি দু'কদমে একটা উদাহরণ মিলে যায়। এটার বাইরে গিয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে - ছেলেশিশু এবং মেয়েশিশুকে আলাদা না করে যদি শুধু শিশুদের একটা ক্যাটাগরি বানাই তাহলে এই তৃতীয় বিশ্বে অন্তত ৯০ শতাংশের বেশী শিশু যৌন-হেনস্তার শিকার হন শৈশবে। আমি একজন ছেলে, ভাববেন না ছেলে বলে আমি শুিশুকালে পার পেয়ে গেছি, আমিও সেই নাইন্টি পার্সেন্টদের একজন। সে অভিজ্ঞতাও কম ভয়ংকর নয়। হয়তো লিখবো একদিন। আমি অন্তত সাহস করে ওঠতে পারিনি এখনো পর্যন্ত। আসলে ঠিক সাহস না, মূল কারণটা ঘেন্না...
আরো লিখুন... লেখা দরকার...
ডাকঘর | ছবিঘর
ঘেন্না লাগলেও বলে ফেলতে পারলে অনেক হালকা বোধ হবে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
হ
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
স্বনামে হোক অথবা ছদ্মনামে, লিখুন এগুলো নিয়ে।
পারলে যাদের নিয়ে লিখছেন, তাদের সামনে গিয়ে ছুঁড়ে মারুন প্রশ্নটা, কীভাবে পারতেন, কীভাবে পারেন? অপমান করুন ঐ হারামজাদা, শূকরছানাগুলোকে, সবার সামনে।
আত্মীয়তা নষ্ট হয়ে যাবে? কী হবে এসব আত্মীয় দিয়ে?
নইলে হয়তো ঐ চাচাতো ভাইয়ের ছেলের হাতে আপনার ছোট্ট মেয়েটি নির্যাতিত হবে ক'দিন পর।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আসলেই, অমন আত্মীয় থাকার চেয়ে না থাক ভালো। এ তো চরম শত্রুকে ঘরে বসিয়ে রাখা। বড় নাটকীয়তা করে বর্জন করতে না চাইলে অন্যান্য সকল আত্মীয়কে গোপনেই বলুন এবং কেন ওমুক আত্মীয়কে আপনি এড়িয়ে চলেন সেটা বলুন। যে আগে সরব হবে সেই পাত্তা পাবে, নইলে দেখবেন ঐ লুচ্চাগুলা উলটা আপনার নামে কান ভারি করে রাখবে নিজেদের বাঁচার সুবিধার্থে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বলা জরুরি, কারণ তাহলে একটু থমকে দাঁড়িয়ে চিন্তা করার ইচ্ছাটা জাগবে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
লিখুন, নামে অথবা বেনামে, সত্যটা উচ্চারিত হওয়াটা জরুরি।
স্বয়ম
আরো লিখুন। সব কিছু নিয়েই লিখুন। সচলে স্বাগতম।
..................................................................
#Banshibir.
তিথীডোর মনের কথাগুলো বলে দিয়েছে। মনের আরো কথা আসতে থাকুক।
এই গল্পগুলো আমার খুব চেনা। আপনি বলতে পেরেছেন, আমি পারিনি।
এই সাহসের কাজটি করার জন্য অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
যেই লোকগুলো বাচ্চাদের ওপর এরকম অত্যাচার চালায়, তারাই আবার দেখবেন উপদেশ দেয় ভাল হয়ে চলতে, নিজেকে ভাল রাখতে। এই লোকগুলোর জন্য ঘৃণাও কম পড়ে যায়।
ভাল থাকুন। আপনার এই সাহস চিরস্থায়ী থাকুক।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
দম বন্ধ হয়ে আসছিল পড়তে পড়তে। আর, আপনার মত যাঁরা এই অত্যাচারগুলোর শিকার হয়েছেন, হন, হয়ে চলেছেন তাঁদের অবস্থাটা ভাবতেই ভিতর হিম হয়ে যায়।
প্রথম অভিনন্দন এই অত্যাচারগুলোকে পরাজিত করে জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার, নিতে পারার জন্য।
দ্বিতীয় অভিনন্দন এখানে এগুলোকে লিপিবদ্ধ করার জন্য।
তৃতীয় অভিনন্দন এই অত্যাচার থামানোর ডাক দেয়ার জন্য।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আপনার দুঃখ এবং কষ্টের জন্য আমি খুবই দুঃখিত। এখন বড় হয়েছেন, অনেক কিছু বুঝতে শিখেছেন। এগুলো অন্যদের জানান। আপনার জীবনটা আনন্দময় হোক।
আপনার ক্ষেত্রে যা ঘটে গেছে সেটা তো আর ফেরানো যাবে না, তবে আপনার সামনে অন্য কারো সাথে অমনটা যেন না হতে পারে তার জন্য আপনি কিছু করতে পারেন। এমন ঘটনায় আপনি ভিকটিমের পক্ষ নিন, তাতে সাহস যোগান, ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করুন। এমন ঘটনায় অপরাধীকে কঠোরভাবে প্রহার করুন (মাইরের উপ্রে অষুধ নাই) এবং সামাজিকভাবে যথাসাধ্য অপদস্থ করুন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কথা'র ভয়টা কিন্তু অনেক। নির্যাতিতা কথা বলবে সেই ভয়টা থাকলে নির্যাতন অন্তত খানিকটা কমে যেতে পারে। সেইজন্য কথা বলাটা জরুরি। যে কথা বলতে চায় তাকে সাহস দেয়া জরুরি, তার সঙ্গে থাকা জরুরি।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সেই সাথে পরিবার থেকে সন্তানদের সাথে এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
এই ধরণের লেখা পড়তে বা ঘটনা শুনতে, ম্মুভ্যিতে দেখতে গেলে আমি প্রচন্ড মানসিক চাপ বোধ করি।
তারপরও ব্যাপারগুলি প্রকাশিত হওয়া খুব জরুরি। বিশেষ করে যখন ঘটছে তখনই।
এই ব্যাপারে সহমত।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
শরীর কাটা দিয়ে গেল।--মামা,চাচা,কাজিন,-- কাছের মানুষের এই খামছি-থাবা থেকে রেহাই পাবার পথ কি ? ভেবে পাই না ।
এ্যানি মাসুদ
প্রায় সব মেয়েরই গল্প থাকে এমন, ছোটবেলায় না বুঝে আর বড় বেলায় চুপচাপ থেকে মেয়েরা প্রতিনিয়ত এই অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্য দিয়ে যায়। বছর দুয়েক আগে গরমের ছুটিতে বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আমার খুব প্রিয় একটা মানুষ যখন কাঁদতে কাঁদতে আমাকে ফোন করেছিল, আমি কেঁদেছিলাম প্রায় সারাদিন। করতে পেরেছিলাম কিছু? কিচ্ছুটি না। কিচ্ছু করা যায় না কখনও কখনও।
দেবদ্যুতি
নতুন মন্তব্য করুন