(আমি মূলত একজন পাঠক। নারী সপ্তাহ উপলক্ষে একটি ছোট্ট গল্প লেখার চেষ্টা করেছি। গল্পের প্রতিটি উপকরণ আমার নিজের জীবন অথবা আমার পরিচিত মানুষদের জীবন থেকে নেওয়া।)
হ্যালো...... এই যে ভাইয়া, শুনছেন?
আমাকে বলছেন?
জী, আপনাকেই বলছি।
বলুন।
আমি একটু জানতে চাচ্ছিলাম, এই যে সাম্প্রতিক সময়ে পহেলা বৈশাখে মেয়েদের হয়রানি করার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, এই ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?
আমার বক্তব্য? আমার আবার কিসের বক্তব্য? আমার কোন বক্তব্য নেই।আমি ভাই একটা নিরীহ মানুষ।হয়রানি'ত দূরের কথা, জীবনে কোন মেয়েকে উদ্দেশ্য করে কোন বাজে মন্তব্যও করি নাই।
আপনি হয়ত করেননি। কিন্তু আপনার চারপাশেই'ত হচ্ছে।আপনার কি কিছুই বলার নেই?
না রে ভাই।আপনিও জানেন এটা খারাপ, আমিও জানি খারাপ। এই ত। আর কি!এবার ছাড়েন ত। কাজ আছে আমার।
আচ্ছা, আর একটা প্রশ্ন।আপনি হয়ত করেননি। কিন্তু আপনার সামনে হয়েছে এমন কোন ঘটনার কথা কি মনে করতে পারেন? হয়ত আপনার বান্ধবী কে উদ্দেশ্য করে কেউ কিছু বলেছে!!
হুমম...... কি জানি! ওহ্, হ্যাঁ। একবার আমার ছোট বোন কে নিয়ে বের হয়েছিলাম।ও পড়েছিল একটা স্কার্ট।পাশ থেকে এক ছেলে বাজে ভাবে বলেছিল, “এই যে, পা দেখা যায় যে!”
আপনি কি করলেন?
বাসায় এসে বোন কে ঝাড়ি দিলাম। বললাম, পায়জামা পড়তে পারিস না? অসভ্য মেয়ে, শুধু শরীরেই বড় হচ্ছে, মাথায় কোন ঘিলু নেই!
ওহ্।আর ওই ছেলেগুলোকে কিছু বললেন না?
ওদের কি বলব?
তাই ত।ওদের কি বলবেন! ত...... শুধু এই একটা ঘটনাই?
নাহ্। আর একটা মনে পড়ল। আমার প্রেমিকা কে নিয়ে বের হয়েছিলাম শপিং এ। ও এক পাশ দিয়ে ওড়না পড়ে ছিল।তখন একজন বলেছিল, “এক পাশ বের হয়ে আছে”।
এবারও নিশ্চয় আপনি আপনার প্রেমিকাকে শাসালেন?
না, শাসাইনি। শুধু বলেছিলাম, “ওড়না দিয়ে একটু ভাল করে ঢেকে রাখতে পার না?”
কি ঢেকে রাখবে ভাইয়া?
কি ঢেকে রাখবে মানে? বুক ঢেকে রাখবে।যেন না বোঝা যায়।
ভাইয়ার বুকে মনে হয় লোম নেই?
কি? কি বলছেন আপনি?
না, মানে শার্ট এর ২টা বোতাম খোলা ত, বুক দেখা যাচ্ছে। আপনি কিন্তু বেশ সেক্সি। আর জিন্সটা এত টাইট।......চোখ চলে যায়।
আপনি ত দারুণ অসভ্য।আপনার মত মেয়েদের... আপনার মত মেয়েদের ই......
কি করা উচিত? জামাকাপড় খুলে ফেলা উচিত? অথবা হয়ত বলতে চাচ্ছেন, ধর্ষণ করা উচিত।
আপনি যান ত।আপনি আমার মাথা গরম করে দিচ্ছেন।
এটুকুতেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে? যখন আপনারই বোন, আপনারই প্রেমিকা কে একইভাবে দিনের পর দিন হয়রানি করা হয়েছে, তখন মাথা গরম হয়নি?
আশ্চর্য। মেয়ে আর ছেলে এক হোল? ধর্মে মেয়েদের পর্দা করতে বলেছে।
ধর্ম 'ত আপনাকে ঠিকাদারি দেয় নাই কে কি পড়ল সেটা ঠিক করার। আপনি নিজে কি গোড়ালির উপরে প্যান্ট পড়েন? তার চেয়েও ভাল হয় যদি আরব দেশের মত জোব্বা পড়েন।তাইলে আমার মত খারাপ মেয়ের নজর যাবে না।
আপনি আপনার নজর সামলান।
কেন ভাইয়া? আপনার ফ্যাশন করতে ইচ্ছা করে। আমার করে না? আপনি টাইট জিন্স পড়বেন, আপনার বন্ধু এমন ঢিলা প্যান্ট পড়বে যে অর্ধেক আন্ডারওয়্যার বের হয়ে থাকবে, তাতে কোন সমস্যা নেই। সমস্যা আমি এক পাশ দিয়ে ওড়না পড়লেই!
ধুরর... আপনার সাথে কথা বলা মানে সময় নষ্ট। আপনি বিদায় হন এবার।
যাচ্ছি। বিদায় হওয়ার আগে বলে যেতে চাই, আপনার ছোট বোন স্কার্ট পড়ার কারণে যেদিন কথা শুনেছিল, তার ই কিছুদিন পর আপনারই বন্ধু দ্বারা যৌন আক্রমণের শিকার হয়। আপনার বন্ধু গিয়েছিল আপনার খোঁজে। বাসায় ছিল না কেউ। সেই সুযোগে কুকুরটা হামলে পড়ে।না, আমি জানি যে আপনি জানেন না।কারণ আপনাকে বলা বৃথা।আরও বলে যেতে চাই, গত পরশু আপনার প্রেমিকা তার থিসিস নিয়ে ডিপার্টমেন্ট এর চেয়ারম্যান এর কাছে যায়, চেয়ারম্যান একা রুমে তার বুক চেপে ধরে। এমন সময় বাইরে পিয়ন এর আওয়াজ পেয়ে এবারের মত ছেড়ে দেয়।
আপনি...... আপনি এসব কিভাবে জানেন?
কারণ আমিই আপনার ছোটবোন। আমিই আপনার প্রেমিকা।ভাবছেন, আপনি কেন জানেন না! কি হবে বলে? আপনি ত আমাকেই দুষবেন। তবে, আর না। আপনার মত ভাই, আপনার মত প্রেমিক, আপনার মত বাবা আমাদের আর চাই না।নিজের লড়াই নিজেই লড়ব।ধন্যবাদ আপনার সময়ের জন্য।
এই যে......শুনুন... একটু দাঁড়ান।ক্ষমা করুন। আমিও আসছি.........
শান্তা বিয়রনান্দের
মন্তব্য
পড়ে খুব ভালো লাগলো। ঠিক আমাদের দরকার নাই ওরকম ভাই/বন্ধু কিংবা প্রেমিকের।
ঝামা ওদের মুখে। আমাদের নিটোল নামের সাহসী ভাই আছে, বন্ধু কিংবা প্রেমিক আছে!
ধন্যবাদ। এই লড়াই থামবে না।
ভালো লাগলো। লিখতে থাকুন।
স্বয়ম
ধন্যবাদ
শান্তা খুব ভাল লিখেছ।
লেখা চালিয়ে যান। একটা পরামর্শ। আপনার লেখাটা ডায়লগভিত্তিক। ডায়লগ লেখার সঠিক ফর্ম্যাটিংটা যেকোন একটা উপন্যাস খুলে দেখে নিন। ওভাবে সাজালে পড়তে চোখের আরাম।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ধন্যবাদ আপনার পরামর্শের জন্য। এই ব্যাপারে সচেতন থাকার চেষ্টা করব।
চমৎকার! একেবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া যাকে বলে।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
সচলে স্বাগতম, খুলে যাক বিবেকের ঘরে বদ্ধ তালা। লেখা ভালো হয়েছে।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
আমাদের দেশে শিক্ষা নেই। শিক্ষিত মানুষের যৌনতার শিক্ষা নেই। যৌনতা শব্দটি একটি অশ্লীল শব্দ হিসেবে গণ্য এখনও। যৌন অবদমনের সমাজ আমাদের। মেয়ে দেখলেই এখানে অধিকাংশ মানুষের লালা ঝরে। আমার মনে হয় মেয়েদের প্রতিবাদে মুখর হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। লজ্জ্বায় মুখ লুকিয়ে থাকুক মেয়ে যৌন নিগ্রহণের পর এটাই চায় এখানের যৌন-নিগ্রহণকারী পুরুষ। এখানে লজ্জ্বার কিছু নেই, একজন অন্যায়ের শিকার হয়েছেন, আক্রান্ত হয়েছেন, এটার প্রতিবাদ করা দরকার, সেই অন্যায়কারীর পরিচয় সবার সামনে তুলে আনা দরকার।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
আমি সম্পূর্ণ এক মত। শিক্ষা খুবই এবং খুবই জরুরী। এবং সেটা সর্বস্তর থেকে শুরু হওয়া উচিত। ঘর থেকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এবং সর্বোপরি সমাজ থেকে।
ধারালো লেখা, লক্ষ্যভেদী।
facebook
অসংখ্য ধন্যবাদ । আমি কিন্তু আপনার একজন ভক্ত।
সচলে স্বাগতম !!!
লেখা ভালো লেগেছে। এমন লেখা, অভিজ্ঞতা আরও আসুক।
সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ুক চারিদিকে।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ধন্যবাদ । আমার ও প্রত্যাশা সেটাই।
শান্তা, আপনার লেখার হাত ভালো। লেখা চালিয়ে যান, নারী বিষয়ে বা অন্য যে কোন বিষয়ে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ষষ্ঠ পাণ্ডব , আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের উৎসাহের এক একটি বাক্য আমাকে অল্প অল্প করে সাহসী করে তুলছে।
একদম সরাসরি উদাহরণ, অবাস্তব মনে হয় নাই একটুও। আমরা এরকমই শুনি চারপাশে। লেখা চলুক।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ। আসলেই আমরা এমনটাই শুনি। সেই নিরেট মানুষ গুলোকে নাড়া দেওয়ার জন্যই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেস্টা।
নিয়মিত লিখুন।
আমাদের দেশে আপনার, আপনাদের মতো সাহসী লিখিয়ে বাড়ুক, লিটন নন্দীদের মতো সৎ, সাহসী ভাই, প্রেমিক বা বাবা বাড়ুক।
দেশ ভরা পুরুষপুঙ্গব তো অনেক, 'মানুষের' সংখ্যা যেন এতো হাতে গোনা না হয়।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সাহসীদের আঙ্গিনা বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হবে সেই প্রত্যাশাতেই - শান্তা।
কী! বলছিলাম না? তুমি লেখা দিলে তোমার লেখা প্রকাশ হবে সচলায়তনে। থেমে যেও না। নিয়মিত লিখো।
ধন্যবাদ কমল ভাই এবং অবশ্যই অবশ্যই কৃতজ্ঞতা। আপনার উৎসাহ অনস্বীকার্য। - শান্তা
এই সমস্যাগুলো সবসময়ের। সবার। কেউ বলে না। আমাদের বলার চর্চ্চা নাই বলে।
আপনি ভালো লিখেন। সবার হয়ে বলুন। সচলের মাধ্যমে সবাইকে চিনিয়ে দিন কুৎসিত মানুষের মুখ।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ক্ষত ঢেকে রাখলে কেউ দেখে না বটে, কিন্তু সেই ক্ষত বাড়তেই থাকে আর এক সময় দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। আমরা মনে হয় সেই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছি। এখনো যদি চুপ করে থাকি পচা গলা একটা সমাজ ছাড়া কিছুই পাব না। আসুন আমরা সবাই মাঝে বলার সাহস টুকু ছড়িয়ে দিই। ধন্যবাদ । শান্তা।
খুবই ভাল লিখেছেন। লিখতে থাকুন। শুভ কামনা রইলো।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ধন্যবাদ। আপনাকেও শুভ কামনা। - শান্তা
চমৎকার লেখা। আশেপাশে সবসময়ই এইসব কথা শুনতেই থাকি। কখনো বিরক্ত হই, কখনো এড়িয়ে যাই। এখন আসলে সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়িয়ে এসবের মোকাবেলা করার।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
একদমই আমার মনের কথা। অনেক অনেক শুভ কামনা।- শান্তা
আমিও আপনার মত এখনো পাঠক । আর পাঠক হিসেবে "পাঠকের' লিখক রুপ দেখে,লিখা ও ধরণ খুব ভালো লেগেছে।
এ্যানি মাসুদ
ধন্যবাদ এ্যানি।
দুরন্ত। লিখুন, আরো লিখুন, লিখতেই থাকুন। থামবেন না প্লীজ...
ডাকঘর | ছবিঘর
এমন উৎসাহ পেলে থামাও কঠীন। অনেক ধন্যবাদ। - শান্তা
একদম টু দ্য পয়েন্ট লেখা। ভাল লাগলো।
আমরা নিজেরা অত্যাচার না করলেও যে এই প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে যাই তা অনেক সময় বুঝতে পারিনা।
এই প্যাসিভ অবস্থান থেকে বের হয়ে আসা জরুরী।
নিয়মিত লিখুন।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
নিয়মিত লিখুন, অন্য যে কোনো বিষয় নিয়ে হলেও।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নতুন মন্তব্য করুন