আমার তখন তের বৎসর বয়স। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। খুব মেধাবী ছিলাম। আমার শিক্ষকগণ আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন- আমি একদিন অনেক বড় হব। আমি দেখতেও ভাল ছিলাম, ভদ্র-নম্র ছিলাম। আমার বড় হবার স্বপ্ন ছিল। সব শেষ হয়ে গেল। আমার বাবা-মা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন। আমার যখন বিয়ে হয় তখন আমার বয়স তের। বিয়েটা খুব অল্প পরিসরে তাড়াহুড়ো করে হয়ে যায়।
কিছু মানুষ ছিল আমার পাশে তাদের কথা মনে না করলে খুব অন্যায় হয়ে যাবে।
ফুপুদের কাউকে ডাকা হয়নি। তবুও লোক মুখে খবর পেয়ে বড় ফুপু চিটাগাং থেকে চলে এলেন। বাবাকে থামানোর চেষ্টা করলেন। বাবা ফুপুর মুখের ওপর বলে দিলেন - তোর মেয়েদের বিয়ে হয়নি তাই আমার মেয়ের বিয়ে ভাংতে এসেছিস।
অপমানিত, আহত ফুপু তবুও থামলেন না, আমার সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে আমাকে নিয়ে যেতে চাইলেন। আমি সাহস পেলাম না, বাবা-মার অপমান হবে বলে ভয় পেলাম। বিয়ের পর দিন আমার স্বামীর সাথে কথা বলার পর কী বুঝলেন কে জানে, আমাকে বুকে নিয়ে অনেক কান্নাকাটি করলেন। আমাকে আবার নিয়ে যাবার প্রস্তাব দিলেন। আমি আবার ভয় পেলাম। গেলাম না।
যাদের সম্মানের কথা চিন্তা করলাম তারা আমাকে সহায় সম্বলহীন, শিক্ষা হীন একটা ছেলের হাতে তুলে দিলেন। অথচ আমার দাদাকে সবাই একনামে চিনত। আর দাদার অনেক বিষয় সম্পত্তিও ছিল। আত্মীয় স্বজন সবাই হতবাক হয়ে গেল। স্কুলের বন্ধুরা আমার জামাইকে নিয়ে কানাঘুষা করত, হাসাহাসি করত।
যেহেতু শ্বশুর শাশুড়ি নাই, তাই বিয়ের পর বাবার বাড়িই ছিলাম। প্রতি রাতে মা -চাচিরা আমাকে জোর করে বার্থ কন্ট্রোল পিল খাইয়ে জামাইর কাছে পাঠাতো। আমি পিল খেতে পারতাম না, বমি করে ফেলে দিতাম। সেই পিলই তুলে আবার খাইয়ে দিতেন।
এটা ছিল আমার জন্য ডাবল শাস্তি। কারণ পিল খাওয়ার পর সারাক্ষন বমি বমি লাগতো, মুখ তেতে থাকতো, আর হাত পা এতো জ্বালা পোড়া করতো যে দুই দিনের মধ্যে হাত পায়ের চামড়া উঠে গেল। অথচ আমার দিকে কারও নজর ছিল না। উনারা ব্যস্ত থাকতেন জামাই আদরে। আমার অতটুকুন শরীর রাতের পর রাত ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, আমার আপনজনের সামনেই হয়েছে। তারা আসলেই কি আমার আপনজন?
বিয়ের আগে কথা ছিল - আমাকে পড়াশোনায় বাধা দেয়া হবে না। কিন্তু তা হয়নি। এস এস সি পরীক্ষা দেবার আগে অনেক চেষ্টা করেছে যাতে পরীক্ষা দিতে না পারি। ঢাকায় এনে স্কুলে ভর্তি করবে বলে ঢাকায় নিয়ে এল, তারপর ভর্তি তো দূরে থাক বই পর্যন্ত ধরতে দিতো না। আমি অনেক যুদ্ধ করে ফিরে গেলাম বাবার বাড়ি। পরীক্ষা দিলাম, আমাদের স্কুলের সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করলাম। আমার শিক্ষকেরা আশা ছাড়লেন না। এই দিকে আমার জামাই আমাকে আবার ঢাকায় এনে আটকে ফেলেছে। আমার শিক্ষকেরা নিজ উদ্যোগে আমাকে কলেজে ভর্তি করেন, আর বই কিনে পাঠিয়ে দেন।
তখনো বাচ্চাকাচ্চা আসে নি। আসবে কি করে? তখনো জানিনা একটা বাচ্চার জন্য দুটি শরীর দরকার হয়! স্বামী সংগ তখনো নরক যন্ত্রণা যে! জামাইর অনুপস্থিতিতে পড়াশোনা করতাম। কিন্তু আমি আমার শিক্ষকদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারলাম না। আমাকে আর কিছুতেই পরিক্ষা দিতে দেওয়া হলো না। আমার সব স্বপ্ন ধুলোয় লুটালো।
বাবা -মাকে বারবার প্রশ্ন করেছি, কেন তারা আমাকে নিয়ে খেললেন? কোনো সদুত্তর পাইনি। ভাগ্যের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে গেছেন। আমি তো উনাদের একমাত্র কন্যা সন্তান ছিলাম। আমার ভাই দুইটা ছোট ছিল। তবে হ্যাঁ, একটা সময়ে মায়ের অনুতাপ দেখেছি। তখন আর আমার কিচ্ছু করার ছিলো না। বাবা দেশের বাইরে যাবার পর মায়ের নামে কিছু রটনা রটেছিল। আমি তার উপর আর ভরসা করতে পারি নি। উনার উপর আমার অনেক অভিমানও ছিলো। ফিরে যাইনি তার কাছে।
এমনিতেই চার দেয়ালে বন্দী ছিলাম, মায়ের উপর রাগ করে শক্ত খোলসে নিজেকে আটকে ফেল্লাম। কখনো মায়ের ছায়া কেউ আমার মাঝে দেখবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করলাম। স্বামীর হাঁ তে হাঁ, না তে না মিলিয়ে চলতে লাগলাম। ও যখন যে ভাবে চেয়েছে, সেই ভাবে ভোগ করেছে।
আপন শ্বশুর শাশুড়ি ছিলো না বলে কথা শোনানোর লোকের অভাব ছিলো না। তাদের নানান কটুক্তি হজম করেছি। এছাড়া কোনো উপায়ও ছিলো না। তত দিনে হয়তো ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম! ওর মটর সাইকেলের শব্দ পাওয়া মাত্র আয়নায় দাঁড়াতাম। শাড়ি চুল ঠিক করতাম, কী ভাবে হাসলে সুন্দর দেখায়, কী ভাবে তাকালে সুন্দর দেখায়, তার প্রাকটিস করতাম। কিন্তু ঘরে ঢুকে ও আমার দিকে ফিরেও তাকাতো না।
আমাকে দরকার হতো গরম গরম রুটি খাবার জন্য, গরম ভাত খাবার জন্য, মাঝ রাতে শরীরের ক্ষুধা মেটাবার জন্য। ও আমাকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়নি, ভালবাসা দেয়নি, সুসাস্থ্যের নিস্চয়তা দেয়নি। তবে আমার শরীরটা ওর খুব পছন্দের ছিল।
তারপরও খুব ভরসা করতাম ওর ওপর। আমি একে একে তিনটি কন্যার মা হলাম। কন্যার মা হবার কারনে আমার অবস্থান আরো নীচে নেমে গেল। প্রতিটি কন্যা সন্তান জন্মের পর ঘরে হিমশীতল আবহাওয়া বিরাজ করেছে, যেন প্রচন্ড ঘূর্ণি ঝড়ের পর ছিন্ন ভিন্ন তরী থমকে গিয়েছে।
আমার মেঝ মেয়ে বাসায় জন্মেছে। ওর জন্মের দুই ঘন্টা পর প্রচুর ব্লিডিং শুরু হয়, ফ্লোর ভেসে যায়। জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। কিছু বলতে না পারলেও শুনতে পারছিলাম মায়ের চিৎকার আর শুনলাম ওর মটর সাইকেলের হর্ন। আমার মাঝে সাহস ফিরে এলো, মনে হলো -বেচে গেলাম!
কিছু ক্ষন পর সত্যিই আমার জ্ঞান ফিরলো, তবে আমার জন্য কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। আমি এতো রোগা হয়ে গিয়েছিলাম যে মেয়েটিকে বুকের দুধও খাওয়াতে পারিনি। অনেক প্রতিকুল অবস্থার সাথে যুদ্ধ করে দুই মেয়ে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আর ছোটটির জন্য এখনো আমি ছায়ার মতো আছি। আমার বাবা মা আমার সাথে যে অন্যায় করেছে তা আমি আমার মেয়েদের সাথে হতে দেইনি, বেঁচে থাকতে হতে দেব না।
প্রতিটি বাচ্চা জন্মের আগের রাতেও রেপড হয়েছি। রেপড হয়েছি প্রিয় জন হারানোর বেদনায়, রেপড হয়েছি প্রচন্ড অসুস্থতায়ও। আমার ঘেন্না ধরে গেছে, আর পারি না। ভালবাসাহীন চুম্বনে আমার দম আটকে আসে।
একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করে ----একটা মেয়ে রেপড হলে আমরা খুব চেঁচামেচি করি, কেন করি? মেয়েটির সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয় বলে নাকি তার দেহ ও মন ক্ষতবিক্ষত হয় বলে? যদি মনে করি সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়, তবে আরও একটা প্রশ্ন এসে যায় যে অন্যায় মেয়েটি করে নাই, তার জন্য সে কেন মর্যাদা হারাবে? কেন সে লজ্জিত হবে? আর যদি মনে করি তার তার দেহ-মন ক্ষতবিক্ষত হয় বলে প্রতিবাদ করি, তবে এই আমরাই কি করে ১২/১৩ বতসরের মেয়েদেরকে বিয়ে দেই? তাও আবার সমাজকে সাক্ষি রেখে? একজন রেপিস্টতো চুপিসারে কাজ সারে, আর একজন লাইসেন্সধারী রেপিস্ট তো সমাজের অনুমতি নিয়ে দিনের পর দিন অতটুকুন শরীরের ওপর নির্যাতন চালায়! তখন কেন সবাই মুখ টিপে মজা দেখে? কেন মেয়েটির ক্ষতবিক্ষত দেহ আমাদের মনকে নাড়া দেয় না?
আমি মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারব না জানি, কিন্তু আমার মেয়েদের জন্য মুক্ত বাতাসের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। সেই কাহিনী আর একদিন বলব।
- ঝর্না
মন্তব্য
খুব মন খারাপ হলো ১৩ বছরের আপনার কথা ভেবে। মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে মা বাবা রা অনেক সময়ই এ ধরনের বাড়াবাড়ি রকমের তাড়াহুড়া করেন। এটা হয়তো সমাজেরই দোষ।
আপনার লেখার হাত ভালো। নিয়মিত লিখবেন।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
শ্রদ্ধা শব্দটা ছাড়া আরকিছু টাইপ করার মতো মনের জোর নেই এই মুর্হূতে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নীরবতা ভেঙে লেখার জন্য ধন্যবাদ। লিখতে থাকুন। অন্যের ভুলে যে সময় আর সুযোগ হারিয়েছেন সেটা আর ফিরবে না। আশা করতে পারি আপনার এই প্রকাশ, এই প্রচেষ্টায় আমরা সেই সময়ের দিকে একটু হলেও এগিয়ে যেতে পারলাম যেখানে কোনো মেয়ে শুধু মেয়ে হওয়ার কারণে এভাবে নিগৃহীত হবে না। ভালো থাকুন। সাহসী থাকুন।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আসুন ঝর্ণা এবারে খোলা আকাশের তলায় দাঁড়িয়ে বুকভরে শ্বাস নিন। আর নীরব হয়ে থাকবেন না, লিখে ফেলুন আরো সব কথা যা জমে জমে পাথর হয়ে রয়েছে ভেতরে।
আপনার মেয়েরা অনেক বড় হবে আর খুব ভাল থাকবে -- আপনি দেখে নেবেন।
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
হ্যাঁ নিশ্চয়ই বলবেন। লিখে চলুন মন খুলে।
আমারো একটা মেয়ে আছে, ব্যাপক দুষ্ট। আপনার মেয়েগুলির গল্প বলুন শুনি।
..................................................................
#Banshibir.
লিখুন আরও।
শক্ত থাকুন, দৃঢ় থাকুন। আপনার কন্যাগণ আপনার কাছ থেকে সুস্থ এবং নিরাপদ আচরণ পাবেন বলে মনে করি, আর সেটা তো আশার কথা।
কী দৃঢ় মনোবল নিয়ে আপনি এতদুর এসেছেন, লিখেছেন।
শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা নেই আসলে। লেখা থামাবেন না। অবশ্যই চালিয়ে যাবেন।
নিজেকে একা ভাববেন না কখনো। আমরা সবাই আপনার পাশে আছি।
আমাদের সরকার বাবা মায়ের অনুমতি নিয়ে ১৬ বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ে বৈধ ঘোষনা করেছেন।
বাচ্চা কতগুলো মেয়েকে নির্যাতিত হবার রাস্তা খুলে দিয়েছেন। এই আইন করে সরকার এবং বাংলাদেশের কী উপকার হলো, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
স্যালুট আপনাকে!
এবার আপনার মেয়েদের নিয়ে লিখুন।
যুদ্ধের গল্প লিখলেন, জয়ের গল্পও শুনতে চাই।
-সো।
আপনার জন্য শ্রদ্ধা, অভিনন্দন! নিজের কথা, মেয়েদের সাফল্যের কথা শোনার অপেক্ষায় থাকলাম আমরা।
লেখাটা প্রথমবার পড়ে মন্তব্য করার শক্তি ছিল না, তাই মন্তব্য না করেই চলে গিয়েছিলাম। আপনাকে শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা নেই। শুধু বলি, এতদূর যখন এসেছেন, হাল ছাড়বেন না প্লিজ। আপনার বাকি জীবনটা খুব সুন্দর কাটুক আর সেই গল্প আমরা জানতে পারি সেই কামনা রইল।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
আপনার অদম্য ইচ্ছেশক্তি আর সহাস সঞ্চারিত হোক আপনার সন্তানদের মাঝে এটাই চাওয়ার।
আমার এক দূর-সম্পর্কের খালোতো বোনের জীবনী প্রায়ই আপনার মতো ঘটেছে। কিছুদিন আগে শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ফেসবুকে কি সুন্দর সুন্দর ছবি দেয় অথচ প্রতিটি দিন কমবেশি স্বামী নামক নরপশুটি গায়ে হাত তুলে!
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
আপনার মনোবলের প্রতি শ্রদ্ধা।
আপনার প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে আর সেজন্য আপনাকে/ আমাকে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
আপনার একান্ত বেদনার কথাগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার কৃতজ্ঞতা, ঝর্ণা আপু। আর শ্রদ্ধা, অনেক শ্রদ্ধা। আপনার মেয়েরা আপনাকে দেখেই সাহস পাবে, জীবনকে নিজের মত গড়তে পাবে প্রেরণা- নিশ্চিত। তারা যেন আপনার কষ্টগুলো বুঝতে পারে, আপনাকে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করার মনোবল ও সাহস যেন তাদের থাকে- এই কামনা করি।
পরিশেষে, লিখতে থাকুন। শেয়ার আপনার অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞান।
ভাল থাকুন।
-----------
ফারাবী
আর কিছু বলার মত ভাষা নেই।
ঝর্ণা, আপনাকে আভূমি প্রণাম জানানো ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছি না। আপনার জীবনের মতো কিছু জীবন দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে। তবে সবাই আপনার মতো ফিনিক্স হতে পারেন না। যারা পারেন না, তাঁদের কোন দোষ নেই। আপনি পারছেন সেটা স্বস্তির ব্যাপার।
কেউ যদি ভেবে থাকেন ঝর্ণার গল্পটি সুদূর অতীতের, তাহলে বলবো খুব ভুল করছেন। কাজী অফিসের রেজিস্টার খাতা চেক করার সুযোগ পেলে দেখবেন সেখানে লাখ লাখ কনের বয়স '১৮' লেখা আছে। এগুলো ডাহা মিথ্যা তথ্য। ঐসব কনেদের যে কারো ব্যাপারে খোঁজ নিলে দেখবেন বিয়ের সময় তাদের বয়স ১৮-এর কম ছিল। এমনকি কারো কারো বয়স ঝর্ণার মতো ১২/১৩-ও ছিল।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার কন্যারা সৌভাগ্যবতী আপনার মত মায়ের কোলে জন্ম নিয়ে। আয়নামতি আপুর মতই বলি,
লিখতে থাকুন, মন খুলে।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আপনার লেখাটি পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম কতক্ষণ।দেশে বর্তমানেও জোর করে বিয়ে দেয়ার ধারাটি প্রচণ্ড রকম চালু রয়েছে।আপনাকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা,লিখতে থাকুন হাত খোলে
সেই কাহিনী অবশ্যই বলবেন। হয়তো সেই লেখাটা অনেকের জন্যই শিক্ষনীয় হবে, অনুকরণীয় হবে। অপেক্ষায় রইলাম।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ঝর্ণা,
আপনার সাহসী কথাগুলো আমাদের জানানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মত সাহসী মা পেলে যে কোন সন্তান ধন্য হবে। আশাকরি আপনার মেয়েরা আপনার যোগ্য উত্তরসূরি হবে। আপনার ও আপনার সন্তানদের জন্য অনেক ভালোবাসা।
বারবার পোস্টটার ট্যাগের দিকে দৃষ্টি ফেলছিলাম যে, এটা কি নিজের বয়ানে অন্য কারো গল্প-কথা, না কি সত্যিই নিজস্ব উচ্চারণ ! এবং যখন বুঝতে পারলাম যে, এটা তো একান্ত নিজস্ব অন্তর্গত রক্তক্ষরণই, বিব্রত হয়ে অনেকক্ষণ স্থির হয়ে রইলাম আর ভাবতে লাগলাম- আমাদের চলমান অভ্যস্ততা আর সামাজিক স্ট্যাটাস এমন পর্যায়েই চলে গেছে যে, একজন নারী বুঝি বা নিজেকে নিয়ে এই কথাগুলো এমন খোলামেলা বলতে পারেই না ! নিজের অজান্তেই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারা ধারণ করা এই সমাজেরই এক প্রতিনিধিত্বকারী পুরুষ হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করে কতোটা ছোট হলাম জানি না, তবে লজ্জিত হলাম ভীষণ ! মুখে যতোই প্রগতির তুবড়ি ফুটাই না কেন, এখনো বুঝি মানুষই হতে পারলাম না ! পুরুষই থেকে গেলাম !
আপনাকে অভিনন্দিত করছি এমন উচ্চারিত সাহসী কথামালার জন্য। এধরনের লেখা, সত্যি বলতে কি, আমাদের প্রকৃত স্বরূপ দেখিয়ে দেয়ার এক বিশিষ্ট আয়না হয়ে বারবার ফিরে ফিরে আসুক। অন্তত নিজেকে অমানুষ পুরুষের স্বরূপে দেখে যাতে প্রতিনিয়ত লজ্জিত হই, বিব্রত হই। আমাদের মধ্যে সেই তাড়নাটা আরো বেশি সক্রিয় হোক যাতে এবার সত্যি সত্যি মানুষ হয়ে ওঠতে পারি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলাম লেখাটা পড়ে। কিন্তু আমি জানি এটা স্তব্ধ হয়ে যাবার মতো কোনো ঘটনা না। এটা আপনার জীবনের অনন্য কোনো ঘটনা না। বাংলাদেশে লাখ লাখ মেয়ে এরকম বা এর চেয়েও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করেছে, করছে, করবে। আপনি তাও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন, নিজে না পারলেও নিজের মেয়েদের মানুষ হিসেবে বাঁচার অধিকার দেবার চেষ্টা করছেন। আপনার স্পিরিটকে স্যালুট।
আপনার লেখার হাত কিন্তু চমৎকার। সেটা সম্ভবত আপনিও জানেন। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা করেও বেশিরভাগ মানুষ এর কাছাকাছি ভাবতে পারে না সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এত দারুণ লিখতে পারে না। আশা করি নিয়মিত লিখবেন। কারণ এই গল্প শুধু আপনার না। এটা বাংলাদেশের গল্প।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
কি ভয়ঙ্কর, কি ভয়ঙ্কর! এত কিছুর পরও যে আপনি সোজা হয়ে আছেন, নিজের মেয়েদের জন্য অন্যরকম জীবনের কথা ভাবছেন সেজন্য আপনাকে কুর্নিশ।
এতকিছুর পরেও আপনার অটুট মনোবল দেখে আভূমিনত শ্রদ্ধা ।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
অনেকক্ষণ আগে লেখাটি পড়েছিলাম। পড়া শেষ হলে সাথে সাথে মন্তব্য করতে পারিনি। পড়তে পড়তে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আর আপনি এ জীবনটা নিজে যাপন করেছেন! আপনাকে কুর্নিশ করছি বললেও মনের অবস্থা কিছুই বোঝাতে পারলামনা। আপনার লড়াই সফল হবে, এই আকাঙ্খা রাখছি।
আপনার পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আপনি যে অসম্ভব মেধাবী লেখাটা পড়লেই বুঝা যায়। আপনার চেয়ে অনেক গুণ বেশি শিক্ষিত লোকজনের মধ্যে এই সচেতনতাত সিকি ভাগও নাই।
লিখে যান।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ভয়ঙ্কর
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
পড়ে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে ছিলাম। কি ভয়াবহ! বাবা মায়েরা ঠিক কি তাড়নায় মেয়ের বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যায় জানিনা, আর জানতেও চাইনা আসলে!
আপনার লেখার হাত চমৎকার, ভাষার ব্যবহারও। বই পড়ার অভ্যাসও আছে মনে হয়। আপা, আপনি লেখা থামাবেন না প্লিজ। দিনপঞ্জীর মতো করেই নাহয় নিজের চিন্তাভাবনা নিয়ে লিখুন। অনেক শুভকামনা।
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
নতুন মন্তব্য করুন