শিরোনামটা বলে দিচ্ছে আমি একজন পুরুষ, অন্তত: নিরানব্বুই ক্ষেত্রে। বাংলায় লিখছি, কাজেই এবার অনুমিতি নিরানব্বুই দশমিক নয় নয়ে অথবা একশতে গিয়ে ঠেকা উচিত। নিপীড়নে বাঙালি পুরুষের জুড়ি মেলা ভার। সেটা যৌন হলে তো কথাই নেই। আমি ব্যক্তিগত কিছু ঘটনা বলব, পাঠক প্রতিক্রিয়া নিয়ে আপাতত: মাথা ঘামাচ্ছি না। ব্যক্তি আমাকে নিয়ে কে কি ভাবলো সেটাতে আসলে আমি ছাড়া ম্যাস পপুলেশনের কিছু যায় আসে না। ঘটনাগুলো বাস্তব এবং এতটুকু অতিরঞ্জিত নয়। এগুলো বাংলাদেশে অনাদিকাল থেকে চলছে, সচেতনতা বাড়ানো না হলে, প্রতিরোধ করা না গেলে অনন্তকাল ধরে চলবে।
ঘটনাগুলো ক্রমানুসারে বলব, কাজেই ধারাবাহিকতা থাকবে না। এলোমেলো লাগতে পারে, সেক্ষেত্রে পুরোটা না পড়ার স্বাধীনতা পাঠকের তো আছেই। বিস্তারিত বর্ণনা যথাসম্ভব পরিহার করার ইচ্ছে আছে। একে তো সেগুলো অরুচিকর, তার ওপর থান্ডা মাথায় এসব বলা বা লেখা খুব কঠিন।
খুব ছোটবেলায়, যখন স্কুলে যাবার বয়স হয় নি তখন কাকার বাসার কাজের লোক আমাকে ছাদের কুঠুরিঘরে নিয়ে গেল। পেছনে কোন ব্যথা পেয়েছিলাম কিনা এখন আর মনে নেই, তবে কিছু একটা নিশ্চয়ই ঘটেছিল। স্মৃতিতে আবছা ভাসে তার শিশ্নের আগায় ঘন ধূসর তরল, ওর নোংরা লুঙ্গি দিয়ে আমার গায়ে লাগা ছিটে মুছে দেবার অনুভূতি। আমি কতখানি অবাক হয়েছিলাম মনে আছে। এরকম একটা ঘটনা কেন ঘটল সে প্রশ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি দীর্ঘদিন। একেবারেই নির্বোধ বাচ্চা ছিলাম খুব সম্ভব, না হলে কাউকে না কাউকে ঘটনাটা অবশ্যই বলতাম। এই ঘটনার একটা উপযুক্ত বিহিত হওয়া জরুরি ছিল, কিন্তু আমি মুখ না খোলায় কেউ কিছু জানতে পারল না। ওই বদমাশ ছোকরা এরকম ঘটনা আরো ঘটিয়েছে আমি নিশ্চিত। আমার বাবা মায়ের দায়িত্ব ছিল সচেতন থাকার, সচেতন করার। কিন্তু সেসব এখন বলে আর লাভ নেই।
খুব বেশিদিন যায় নি, দ্বিতীয় ঘটনা ঘটল। আমি তখন স্কুলে যাই না, যাব যাব করছি। বাবার সহকর্মীর ছেলে, হয়ত এইট বা নাইনে পড়ে, বলল আমাকে একটা মজার জিনিস দেখাবে। আমার বাবা মা দুজনেই চাকরি করে, কাজেই বাসা মোটামুটি ফাঁকা থাকে। দূর সম্পর্কের এক খালাকে হাউস কিপিং এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সেই ভদ্রমহিলা মুদি সদাই আনতেই হোক, পাশের বাসায় গল্পে যাবার জন্যই হোক, দিনের কিছুটা সময় বাইরে থাকেন। সেইরকম এক সময়ে আমাকে "মজার" জিনিস দেখানো হয়। যৌনকেশে পূর্ণ একটি উত্থিত শিশ্ন আমার মুখে পুরে চোষণের নির্দেশ দেয়া হয়। সঙ্গত কারণেই আমি আপত্তি করলে ভয় ভীতি দেখানো হয়, তবে কি বলে ভয় দেখিয়েছিল মনে নেই। একটি কৃষ্ণবর্ণ শিশ্ন আমি চুষতে থাকি, শিশ্নের মালিক অতিরিক্ত উত্তেজনায় বীর্যপাত করার বদলে প্রস্রাব করে আমার মুখ ভাসিয়ে দেয়। মুখভর্তি প্রস্রাবের কিছুটা আমার পেটে যায়, বাকিটা হয়তবা আমি ফেলে দিতে পারি। এই ঘটনাও আমি কাউকে বলি নি। সেই কুলাঙ্গার এখন সরকারের উচ্চপদে চাকরি করে।
এরপর অনেক দিন আমাকে কোন নিপীড়নের শিকার হতে হয় নি। বরং পাড়ায়, স্কুলে সহপাঠি বন্ধুদের কাছে যৌন শিক্ষার হাতেখড়ি হতে থাকে। মেয়েদের নিয়ে কুৎসিত, আপত্তিকর সব কৌতুক, মন্তব্য শিখতে থাকি। রতিক্রিয়ার সম্ভব অসম্ভব সবরকম দেশী প্রতিশব্দ জানা হয়ে যায়, ব্যাপারটি নিয়ে কৌতূহল জেগে উঠতে থাকে। মেয়েদের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখার, স্পর্শ করার, মথিত করার একটা অবদমিত ইচ্ছের বীজ সেই সময় রোপিত হয়, আমি নিশ্চিত। আমার বয়স তখন সর্বসাকুল্যে সাত।
পাশের বাসার ভাড়াটিয়ার মেয়ে, যাকে দেখে খুব সহজ সরল আর অন্তর্মুখী মনে হয়, তাকে একদিন প্রস্তাব দিই, "আসো আমরা চোদাচুদি করি"। জিনিসটা কি সে সম্বন্ধে আমার নিজের স্পষ্ট ধারণা ছিল না। মেয়েটির তো নয়ই। কিন্তু কৌতুহলী হয়েই সম্ভবত: সে তার বাসার নির্জন একটা ঘরে আমার সাথে একসাথে বসে। আমি তার প্যান্ট টেনে নিচে নামাই, কিন্তু এর বেশি আর কিছু করা যেতে পারে বলে আমি জানতাম না। রাতে মেয়েটি তার বাবা মাকে দিনের বেলার ক্রিয়াকর্মের কথা খুলে বলে। চারজন বাপ মায়ে ব্যাপারটা নিয়ে সম্ভবত: হালকা বাক বিতন্ডা অথবা হাসাহাসির বেশি আর কিছু হয় নি, হলেও আমার মনে নেই। আমাকে দুই একটা শাসানির মধ্য দিয়ে ব্যাপারটার সমাপ্তি ঘটে।
পরের বছর আমাদের বাসার কাজের মেয়ের সাথে একই ধরনের একটা ঘটনা ঘটাই। মেয়েটি আমার চেয়ে দুই বছরের বড়। তার আমার চেয়ে বেশি জানাশোনা থাকার কথা। হয়ত তার আপত্তি ছিল কিন্তু আশ্রিতা বলে হয়ত বাধা দেবার সাহস করেনি। তার প্যান্ট খুলে তার যৌনাঙ্গ স্পর্শ করি। আমার স্মৃতি প্রতারণা করতে পারে, কিন্তু আমার প্যান্ট খুলে শিশ্ন বের করার আইডিয়াটা তার ছিল। আমার নিজেরও হতে পারে। হয়ত ততদিনে আরো একটু বেশি জেনেছি যৌনতা সম্বন্ধে। যাই হোক, পুরো ঘটনাটা ঘটছিল খোলা মাঠে, একজন পথচারী ব্যাপারটি দেখতে পেয়ে প্রচন্ড ধমকে আমাদের নিবৃত করে, তারপর মার দেবার হুমকি দিয়ে বাসায় কোলে যেতে বলে। আমি বুঝতে পারি, কাজটি ভালো নয় এবং কখনো এরকম কিছু করতে হলে গোপনে করতে হবে।
পাড়ায়, স্কুলে যৌন শিক্ষার তাত্ত্বিক পাঠ চলতে থাকে, যৌনতার মূল প্রক্রিয়াকে আবছা রেখেই। ব্যবহারিকের সুযোগ আসে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময়। বাড়িওয়ালার পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া মেয়েটি আমাকে খেলার জন্য ডেকে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ খেলনা দিয়ে খেলার পর তার কাছ থেকে আবারও "মজার" কিছু করার প্রস্তাব আসে। শীতের সকাল, আমরা এক কাঁথার নিচে ঢুকে পড়ি, তার দুজন দুজনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে এলোমেলো স্পর্শ চালিয়ে যেতে থাকি। এই ঘটনাটি বাংলা সিনেমা থেকে অনুপ্রানিত হয়ে থাকবে, সিনেমায় যতটুকু দেখানো হয় ততটুকুই আমরা অভিনয় করি। আমাদের সৌভাগ্য, যৌনাঙ্গ স্পর্শ করার ভূত কারও মাথায় চাপে নি, নয়তো এটাও একটা কলঙ্কজনক স্মৃতি হয়ে থাকত। ব্যাপারটি দুই তিন বারের বেশি ঘটে নি। অজানা কারণে মেয়েটির দিক থেকে সাড়া বন্ধ হয়ে যায়। আমার মনে আছে আমি তার স্পর্শ তীব্রভাবে উপভোগ করতাম। আমি দুই একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম আমরা আবারও সেই মজার জিনিসটি করতে পারি কিনা, কোন উত্তর পাই নি। হয়ত অপরিপক্ক অবচেতন মনে আমি বিপরীতলিঙ্গের সঙ্গ কামনা করছিলাম, সুযোগের অভাবে সেই কামনাকে চাপা দিতে হয়। এই ঘটনাটি আমার মনে তীব্র যৌন অবদমন সৃষ্টি করে থাকতে পারে।
হাই স্কুলে পড়ার সময় আমাদের এক সহপাঠী একটি শ্বেতাঙ্গ মেয়ের নগ্ন পোস্টার নিয়ে আসে। আমরা গোগ্রাসে একটি নারীদেহ গিলতে থাকি। আমি কখনো নগ্ন নারী দেখি নি। মেয়েটির বক্ষ, যোনি, ভরাট শরীর স্পর্শ করবার তীব্র বাসনায় আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেতে থাকে। আমার নিম্নাঙ্গ শক্ত হয়ে ওঠে। পত্রিকায়, অনলাইনে যখন ভিড়ের মধ্যে নারীদের স্পর্শ বা মথিত করার ঘটনা যখন পড়ি, আমি বুঝতে পারি এর উৎস কোথায়। যৌন অবদমনে ভোগা বাঙালি পুরুষ, যৌনতার চেয়েও চকিত, অকস্মাৎ, ক্ষনিক স্পর্শে প্রশমন লাভ করে বেশি। তবে এই তত্ব তরুনদের বেলায় খাটে, পারভার্ট বুড়োগুলোর যৌন চিন্তাভাবনা মানসিক বিকৃতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত।
আমাদের আরেক সহপাঠি দাবি করে সে পঞ্চাশের বেশি মেয়ের সাথে সঙ্গম করেছে, এটাকে সে একশতে নিতে চায়। রতিক্রিয়ার খুটিনাটি বর্ণনা দিয়ে সে আমাদের আস্থা অর্জন করে। আমরা অবিশ্বাস এবং সমীহ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি, মনে মনে তার মত হবার কথা ভাবি। বাসায় বা স্কুলে আমাদের নৈতিকতা শিক্ষায় যে বিশাল শূন্যস্থান রয়েছে সেই জায়গাটা দখল করে নেয় একাধিক, অফুরন্ত নারীর সাথে সঙ্গমেচ্ছা। আমরা ঠিক বেঠিক বিচার করা শিখি না, আমরা শুধু যত বেশি পারা যায় দখল নিতে চাই, ভোগ করতে চাই, জাহির করতে চাই। সেই ভোগের তালিকায় সবার ওপরে থাকে নারীদেহ। ঘটনাক্রমে আমরা কখনই সেই ভোগের চাহিদা পূরণ করার ধারেকাছে যেতে পারি না। আমাদের যাবতীয় ভোগ সীমাবদ্ধ থাকে নারীকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নিগৃহীত করার আনন্দে। আমাদের ভোগ সীমাবদ্ধ থাকে এক টিকেটে দুই ছবিতে, আমাদের ভোগ সীমাবদ্ধ থাকে ক্রমাগত হস্তমৈথুনে। আমাদের ভোগের দেনা কেবলি বাড়ে, সময়ে সময়ে তার প্রকাশ ঘটে দুর্বল অসহায় নারীকে ধর্ষণের মধ্যমে।
আমি পরিকল্পনা করতে থাকি কিভাবে অন্তত: একটি নারীদেহ ভোগ করা যায়। সবচেয়ে সহজ লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে বাড়ির কাজের মেয়ে। মেয়েটিকে ভোগ করার নানান পরিকল্পনা মনে মনে সাজাতে থাকি। কোনটাই মনে ধরে না। একবার ভাবি টাকা সাধব। একবার ভাবি আড়ালে নিয়ে মুখ চেপে ধরব। একবার ভাবি সোজাসুজি গিয়ে খায়েশ জানাব। আমাদের বাড়িতে আশ্রিত, আমার কথা না শুনে কি উপায় আছে তার? মেয়েটা সুন্দর ছিল। পাশের বাড়ির মালিকের বিশ্ববিদ্যালয় পড়া পুত্র তার রূপে পাগল হয়ে গেল। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলো আমাদের বাসায়। এই কথা তার বাপের কানে যেতে ছেলেকে পিটিয়ে সোজা করলেন তিনি। আমি অবশ্য জানতাম না কাজের মেয়েটি ইতিমধ্যেই সহ্যের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। আশেপাশের কিছু ভাড়াটিয়া, বাড়ির দারোয়ান, রাস্তার দোকানদার সবাই মেয়েটার সঙ্গ কামনা করে তাকে বিভিন্ন প্রস্তাব দিত, কেউ কেউ হয়ত কিছুটা জোর খাটিয়েও থাকবে। মেয়েটা অত্যাচার সইতে না পেরে আমাদের বাসা থেকে এলাকা ছেড়ে কোলে গিয়ে অন্য বাসায় উঠল, মুক্তির আশায়। সেই মুক্তি মেলেনি তার, নতুন মালিক তাকে ভয়ভীতি লোভ কিছু একটা দেখিয়ে পুন: পুন: সঙ্গম করেছে, তারপর একসময় বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। সেই গল্প সে বলতে এসেছিল আমার মার কাছে, বলেছে এখানে সে অন্তত: বাড়িতে নিরাপদ ছিল। সে জানত না, তাকে নিয়ে সেই একই কাজ করার ইচ্ছে বাড়ির ছেলেটারও ছিল।
আমার চাচীর বাসায় অন্য একটি কাজের মেয়ে ছিল। কালো, মোটা, নোংরা। আশেপাশে সহজ কিছু না পেয়ে তাকেই টার্গেট করি। মানুষ ডেসপারেট হয়ে গেলে কোয়ালিটি নয়, কোয়ান্টিটি খোঁজে। আগের বার শিকার ফসকে যাওয়ায় এইবার কিছুটা তাড়াহুড়ো ছিল। খুব সহজ প্ল্যান, ঘুমের মধ্যে মেয়েটিকে চেপে ধরব। আপত্তি করলে ভয় দেখাবো। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খেটে মেয়েটা একটু শুয়েছিল একদিন। সরাসরি তার বুক হাত দিয়ে ডলাডলি করতে শুরু করলাম। ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে নেতিয়ে পড়া ঘুম ভাঙ্গতে কিছুটা সময় লাগলো। হয়ত ওর বুঝে উঠতেও আরো কয়েক মুহূর্ত গেল। সদ্য ঘুম ভাঙ্গা রক্তলাল চোখে আতঙ্ক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল মেয়েটা। সেই তীব্র দৃষ্টি আমার হৃদপিন্ডের কোন এক দুর্গম স্থানে আঘাত হানলো, আমি ভয় পেলাম। বুক ছেড়ে দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, চাচী তোরে ডাকে। বলে পালিয়ে গেলাম সেখান থেকে। এরপর দীর্ঘদিন আমি সেই বাসা এড়িয়ে চলেছি।
সহপাঠিনীদের দিকে কুনজর আমার সবসময়ই ছিল, কিন্তু কাউকে গিয়ে প্রেমের প্রস্তাব বা অন্য কিছুর প্রস্তাব দেবার সাহস হয় নি কখনো। নিপীড়কেরা বেশিরভাগ সময়েই ভীতু হয়, সামাজিক হেনস্তার ভয় তাদের কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। তারা সবকিছু গোপনে করতে চায়। যেহেতু সাহসে কুলায় না, একেবারে দুর্বল শিকার খোঁজে তারা। ছোট বাচ্চাদের চেয়ে দুর্বল শিকার মনে হয় পৃথিবীতে আর নেই, বিশেষ করে মেয়ে বাচ্চা। আমি সুযোগ পেয়ে দুটি শিশুর যোনি স্পর্শ করি, আঙ্গুলের পরশে ল্যাবিয়াগুলোর অস্তিত্ব গঠন বুঝে নিতে যাই। তারা কাঁদে, আপত্তি করে কিন্তু রেহাই পায় না। এত ছোট বাচ্চার সাথে সঙ্গমের চিন্তা মাথায় আসার কথা না, কিন্তু সমাজে এই পর্যায়ের বিকৃতির অভাব নেই। কিছু ঘটনা পত্রিকার পাতায় আসে, কিন্তু আমি নিশ্চিত অনেক ঘটনা এত দুরাঞ্চলে ঘটে যে তারা পত্রিকার কাভারেজ পায় না। বাবা মায়ের উচিত নেভার লিভ ইয়োর চাইল্ড আন অ্যাটেন্ডেড পলিসি ফলো করা, আর পুরুষ আত্মীয়ের আদরের প্যাটার্ণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নজরে রাখা।
আরো কিছু কথা লেখার ইচ্ছে ছিল, আরো কিছু ঘটনা জানাবার ইচ্ছে ছিল, বলা ভালো প্রয়োজন ছিল, কিন্তু স্মৃতিচারণের এই পর্যায়ে আমি তীব্র মানসিক অবসাদে ভোগা শুরু করেছি। আপনারা আমাকে গালি দিন, বিকারগ্রস্থ বলুন অসুবিধা নেই, কিন্তু দুটি জিনিস তারও আগে করুন। আপনার বাচ্চাকে প্রটেক্ট করুন এবং তাকে নৈতিক শিক্ষা দিন। প্রয়োজনে নিজেরাও নৈতিক শিক্ষা নিন, কেমন করে সত্যিকারভাবে সেটা আপনাদের বাচ্চার মনে গেঁথে দেবেন সেই পরিকল্পনা করুন। মনে রাখবেন, আপনার সন্তানের বিকৃত আচরণের জন্য আপনি নিজেও দায়ী। আর শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়। আমি আপনাদের মতই উচ্চশিক্ষিত, কিন্তু সেটা আমাকে থামাতে পারে নি। হয়ত আপনাদের অনেককেও পারে নি। আমি যেমন গোপন রাখতে পেরেছি , হয়ত আপনারাও পেরেছেন, সমাজে সন্মানের সাথে ওঠাবসা করছেন। কিন্তু যার ক্ষতি হবার ঠিকই হয়েছে, চিরস্থায়ী ভাবে। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করুন.....................
মন্তব্য
সাহসী লেখা...
যৌন নিপিড়নের এই সমস্যা নিরাময়ে কী করা যায়, সেই পরিকল্পনা করতে ঘটনার অন্য পাশের ভাষ্যও জানা থাকা ভালো।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
দারুণ সাহসী একটা লেখা।
-> আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এমন মানসিকতার জন্য। এরকম গোপন ঘটনা যে কত মানুষের জীবনে কত কত আছে তার হিসেব নেই। সেগুলোর কিছু হলেও উঠে আসুক। সতর্ক হোক সবাই। আয়নায় একবার করে হলেও নিজের মুখটা দেখে নিক সবাই।
এইরকম একটা শকিং লেখার দরকার ছিলো। সাহস করে কথা গুলো খুলে বলার জন্য ধন্যবাদ।
অসাধারণ একটি লেখা। এতোগুলো কথা আপনি স্বীকার করেছেন, এতোগুলা ইন্সিডেন্ট তা একজন মেয়ে হয়ে আমার প্রচণ্ড গর্ব হচ্ছে। একটা জিনিষ আপনি দেখিয়েছেন, উচ্চশিক্ষিত হওয়া যৌন নিপীড়ক ভুমিকা থেকে বাঁচাতে পারে নি।
আপনি বলছেন বাচ্চাদের প্রটেক্ট করা কথা ! সেটা অবশ্যই একজন বাবা-মায়ের দায়িত্ব ?
কিন্তু আসল প্রশ্ন হচ্ছে বিকৃত কামসত্তা থেকে মুক্তি কোথায় আমাদের ? এই পারভারশন দমন করার কি সত্যিই কোন উপায় নেই?
সমস্যা হচ্ছে, অনেক পরিবারই 'নৈতিক শিক্ষা' মনে করে আদতে 'অনৈতিক শিক্ষা' দিয়ে থাকে। এই পরিবারগুলো নারীকে, নারী স্বাধীনতাকে এবং সর্বোপরি স্বাধীনতাকেই অশ্রদ্ধা করতে শেখায়, যার ফলে প্রায় ঘরে ঘরে 'যৌন নিপীড়ক' জন্ম হয়!
তাই 'নৈতিক শিক্ষা' দেয়ার আগে 'নৈতিক শিক্ষা' আসলে কি, সেই শিক্ষাটাই দিয়ে নিতে হবে মনে হয়!
সাহস করে লিখেছেন, সেজন্য ধন্যবাদ।
।।।।।
অন্ধকূপ
সাহস করে লেখার জন্য ধন্যবাদ। যৌন অবদমন কেবল করতে বলা হয় নানান নীতিবাক্যের মাধ্যমে, কিন্তু স্বাভাবিক যৌনতা কি, এবং কিভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করেও সুন্দর জীবনযাপন করা যায় সেই শিক্ষাও জরুরি। শিশুকালের অনেক ঘটনাই ঘটে কেবল কৌতুহল থেকে। সেটা সঠিক যৌন শিক্ষার মাধ্যমেই পূরণ করা যায়। স্বাভাবিক যৌন চাহিদা কি এবং কিভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা শেখালে পরেই এই অনিয়ন্ত্রিত অবদমিত যৌন বাসনা থেকে অসুস্থ মানসিকতার মানুষে পরিণত হবে না।
ধর্ষক বা যৌন সন্ত্রাসীদের প্রচলিত অজুহাত "মেয়েদের ( কাপড় চোপড়ের দোহাই যোগ করে পড়ূন) দেখলে মাথা ঠিক থাকে না।" মেয়ে দেখলে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়া প্রাকৃতিক ব্যাপার, যেটা মিসিং তাহলো এই যৌন উত্তেজনা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সে ব্যাপারে শারীরিক দিক নির্দেশনা। কেবল চোখ রাঙ্গানি দিয়ে উত্তেজনা দমন হবে না। শেখানো, জানানো দরকার স্বাস্থ্যসম্মত কৌশল।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
একটা কথাই বলার ছিলো থ্যাংক য়্যু
ডাকঘর | ছবিঘর
এই লেখাটা খুব দরকার ছিল। মলেস্টেশনের শিকার বেশিরভাগ হয় ছোট ছেলে-মেয়ে আর বড় হলে অবলা নারীরা, যারা মুখ খুলবে না। এটা থেকে বোঝা যায় যে নিপীড়কদের মূল টারগেট কারা। কিন্তু কিভাবে তারা নিপীড়ক হয়ে ওঠে, তাদের মনোজগৎ কি সেটা জানাটাও জরুরি।
বাবা মায়ের সচেতন হওয়ার সাথে সাথে বাচ্চাকে বিভিন্ন বয়সে তার উপযোগী করে খারাপ স্পর্শ, সেক্স সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া জরুরি। নইলে বন্ধু-বান্ধব আর চটি থেকে বিকৃতিটাই তারা জানবে। সেটা যে বিকৃতি, সেটা বুঝতে অনেক দেরি হয়ে যাবে, হয় তো অনেকের হবেই না। শুরু করতে হয় তো অকওয়ার্ড লাগবে, কিন্তু পাঁচ মিনিটের সেই অকওয়ার্ডনেসের মূল্যে যদি একটা শিশুর সুন্দর শৈশব কেনা যায়, সেটা কি খুব বেশি দামি?
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
খুব সাহসী এবং প্রয়োজনীয় একটা লেখা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
- এই অবস্থা যখন কেটে যাবে তখন আবার লিখুন। সবার লেখার ক্ষমতা থাকে না, সবার লেখার সাহস থাকে না। আপনার লেখার ক্ষমতা ও সাহস দুটোই আছে।
- একদম ঠিক! আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখাও। বড়দের নৈতিকতা শিক্ষাতে গলদ আছে বলে তারা ছোটদের ঠিক শিক্ষাটা দিতে পারে না। আগে বড়দের শিক্ষাটা সম্পন্ন করতে হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
খুবই ভাল এবং সাহসী একটা লেখা।
আনন্দ পথিক
স্যালুট
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আয়নার সামনে দাঁড়া করিয়ে দিলেন। এত এত যৌন নিপীড়নের কতা শুনি, সেইসব নিপীড়িতদের দেখি, নিপীড়কও নিশ্চয়ই আমাদের মধ্যেই আছে। আমি আপনার ভেতরেই আছে এইসব নিপীড়ক। নিজের অপরাধ স্বীকারের আত্মপোলব্ধির মাধ্যমে আমাদের যাত্রা শুরু হোক।
উপদেশ আমি বা আমরা সবাই দিতে পারি। কিন্তু আপনি যেটা পেড়েছেন সবাই সেটা পারে না। এইজন্য স্যালুট।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
চ্রম শকিং লেখা। আপনার স্বীকারোক্তির সৎসাহসকে অভিনন্দন।
আমাদের চারপাশে এতো এতো যৌন নিপীড়ক- তারা নিশ্চয়ই আকাশ থেকে আসছে না। তারা আমাদের মতোই মানুষ, নানা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা নিপীড়ক হয়ে উঠি। আপনার লেখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- এমন একটা প্রেক্ষিত থেকে পুরো ঘটনাটা দেখা যাচ্ছে, যেটা আমরা সচরাচর দেখতে পাই না।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, এই লেখাটার জন্য।
অলমিতি বিস্তারেণ
এমন লেখাকে অসাধারন বা চমৎকার বলতে পারব না। কিন্তু এমন কঠিন সত্যে পরিপূর্ণ একটা একটা লেখা লিখে আপনি যেই সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, সেটা নিঃসন্দেহে সাধুবাদের দাবীদার। খুবই সময়োপযোগী একটা লেখা, কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, এরকম আরও কত ঘটনা দেশে এবং বিদেশে আমাদের চারপাশে ঘটেছে, ঘটছে, ঘটতে যাচ্ছে? আর এ থেকে প্রতিকারের উপায়টা কি?
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
লিখেছেন, সে জন্য সাধুবাদ। কিন্তু আপনি নিজে যেমন মেরুদণ্ডহীন এবং বিকৃত রুচির মানুষ, সেই ব্যাপারটা আমি এড়িয়ে যেতে পারছিনা অন্যদের মতো। আমরা জানি নি আপনি এখনো এমন করে বেড়ান কী না। নাকি শিক্ষা এবং বিবেকের বেড়ে উঠা আপনাকে ভালো পথে এনেছে। গেস্ট রাইটার হলেও নাম কিছুই দেন নাই। সুতরাং আপনার "এচিভমেন্ট" গুলো অন্যদের শুনিয়ে হয়তো অনেক মজা নিচ্ছেন, এটা উড়িয়ে দেবার মতো নয় চিন্তাটা।
আমরা সবাই জেনে এবং না জেনে অনেক অপরাধ করি। কিন্তু সেখান থেকে যদি অনুশোচনা না হয়, বা আমরা বেড়িয়ে না আসি সেসব অন্যায় জেনেও, তাহলে সেটা হবে আরও বড় অপরাধ।
- নারী সপ্তাহ নিয়ে লেখায় নাম ছাড়া লেখার অধিকার সচলায়তন থেকেই দেয়া হয়েছে। সন্দেশের পিনড্ পোস্টে বলা আছে
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনি লিখতে পেরেছেন বলে ধন্যবাদ।
একটা জিনিস বিরক্ত লাগলো। আপনাকে গালি দেয়ার আগে বাবামাকে কেন বাচ্চাকে প্রোটেক্ট করতে হবে বুঝতে পারলামনা।
বাচ্চাকে প্রটেক্ট করা সব বাবামায়ের দায়িত্ব। কিন্তু তারা যদি সেই দায়িত্ব পালন নাও করেন তারপরো আপনি কিংবা অন্য কেউ বাচ্চাকে নির্যাতন করার অধিকার পেয়ে যান না।
আপনার বাকি সব অভিজ্ঞতার সাথে নৈতিক কিংবা যৌন বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান না থাকাকে মেলাতে পারি কিন্তু ঐ বাচ্চা দুটোকে নির্যাতন করার সময় আপনি যদি হাই স্কুলে পড়ে থাকেন, কিছুটা নৈতিকতার শিক্ষাতো আপনি অন্তত পড়ার বই থেকে পেয়েছেন। তারপরো কেন এমন।
দুঃখিত , ভেবেছিলাম নন জাজমেন্টাল মন্তব্য করবো। সম্ভব হলোনা।
এরকম গল্প পড়লে আমরা প্রায়ই লেখকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে যাই। হোকনা সেটা ডাকাত খুনী কিংবা অন্যকারো আত্মকথা। আশা করবো আপনার এই লেখা পড়ে আমরা সহানুভূতিশীল হবার বদলে সচেতন হবো।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-এই অংশটা কি খুব আপত্তিকর? লেখক বা তার মতো বিকারগ্রস্থদের গালি দিলে আমার ব্যক্তিগত কোন লাভ হবে না, কিন্তু আমি যদি আমার সন্তানকে রক্ষা করি তাহলে সেটা আমার ও আমার সন্তানের লাভ হবে - সুতরাং প্রায়োরিটি এটাই। এবং এই অংশটি পড়ে এটা মনে হয়নি যে, বাবা-মা সন্তানকে রক্ষা না করলে কেউ তাকে নির্যাতন করার অধিকার পেয়ে যায় এটাকে জাস্টিফাই করা হয়েছে। আমরা অসেচেতন বলে আমাদের সন্তানরা বিপদের মুখে আছে - এটাকে অগ্রাধিকার দিন। কারণ, দুনিয়া কোনদিন স্বর্গরাজ্য হবে না, সেখানে বিকৃতমনস্ক ইতর থাকবেই।
আমাদের স্কুলগুলো কি কোন নৈতিকতা শিক্ষা দেয়? টেক্সটবুকে? আমি অন্তত দেখিনি। যদি দেয়া হতো তাহলে নৈতিকতা শিক্ষা নিয়ে আচরণবিধি শিক্ষা নিয়ে ব্লগে ব্লগে, ফেসবুকে আমাদেরকে এতো কথা খরচ করতে হতো না। সচল দুর্দান্তের একটা লেখা ছিল, পড়ে দেখতে পারেন। হ্যাঁ, শিক্ষা যে একেবারে দেয়া হয় না তা না। কিন্তু একজন কুসঙ্গে পড়লো কিনা এবং সেই সংসর্গ থেকে যা শিখলো সেটাকে স্কুলে/পরিবারে দেয়া শিক্ষা নালিফাই করতে পারলো কিনা; অথবা একজন যখন নির্যাতনের শিকার হলো তখন তাকে 'একটা অপরাধ আরেকটা অপরাধকে নালিফাই করে না' এই শিক্ষা দেয়া হলো কিনা সেটা ভাবতে হবে।
মন্তব্য জাজমেন্টালই হবে। তবে সেখান থেকে কিছু কমন বিষয়ও বের হয়ে আসবে।
যে অংশে লেখক নির্যাতিত হয়েছে সেই অংশে তাকে সহানুভূতি দেখানো যেতে পারে। তবে ঐ অংশে তাকে সহানুভূতি দেখালেই তার কৃত অপরাধ লঘু হয়ে যায় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমার এরকম একটা অতীত আছে। আমি খুব প্রটেকটেড পরিবেশে বড় হয়েছি, তবুও।
আমার বয়স যখন ১০ কি তার আশেপাশে, আমার পাশের বাড়ি এক বাচ্চা মেয়ে আমার সাথে খেলতে আসতো, আমার থেকে প্রায় ৬/৭ বছরের ছোট। মানে ওর ব্য়স তখন ৩/৪। সেক্চু্য়াল হ্যারাসমেন্ট করার মত সেক্চু্য়াল নলেজ ছিলো না ঐ বয়সে। কিন্তু, মনে পড়ে খেলার সময় অন্তত ৩/৪ দিন আমি ওকে জামাটা কাচা দিয়ে (যেমন লুংগি কাচা দেয়) অশালীনভাবে ড্রস করায় দিছি। আমি বলতাম 'সাজায় দিচ্ছি'। ওর মা ওকে এক দিন বলে দিছিলেন আমাকে বলতে যাতে আমি সাজায় না দেই। এরপর আর একদিন মাত্র ঐ কাজ করছি।
মনে আছে, হিন্দি সিনেমার একটা গান, (যা এখন "ওহ্, হিন্দি তো " বলে উড়িয়ে দেই) দেখে আমার একটা প্রচন্ড অস্বতি আর অসুস্থ অনুভুতি হইছিল। বেশ কিছুটা সময় খুব চাপ আর অস্বতিতে কাটাইছিলাম। নিজেকেসহ সব কিছু খারাপ মনে হইছিল। তখন বয়স ৬/৭। বাসায়, আমার বাসায় না ঠিক পাশে আমার আত্নীয়ের বাসায়, নতুন 'ডিস' সংযোগ নেয় হইছিলো। সময়ের সাথে মেমোরিটা চাপা পড়ে গেছিলো, সব সময় মনে উঠত না আর।
অনেক খু্জছি, কেন আমি এমন করলাম? আমার ৯৯% মনে হইছে ঐইটাই শুরু, তবে একমাত্র কারণ কি না বলতে পারবো না। কিন্তু আমার সাদামাটা, খুবই সাধারণ, আর ওভার প্রোটেকটেড জীবনে ওই সময়ে সেক্চু্য়ালি (মেন্টালি) ডিসটার্বড্ হওয়ার আর কোন মেমোরি মনে করতে পারি না। ওই সময়ের আশেপাশে, আগে পড়ে আমার কিছু 'শক' এর মেমোরি আছে। বাবার অতিরিক্ত কঠোর শাসন (আমার স্পষ্ট মনে আছে একদিনের কথা। ক্লাস ২ তে পড়ি। আমি মনোযোগী ছাত্রী ছিলাম, শিক্ষকের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা, ভালো ছাত্রী। তবে ঐ দিন, ছুটির আগে আগে, টিচার পড়াচ্ছিলেন আর আমি শুধু একটা জিনিসই বারবার মাথায় আউড়াইতে ছিলাম, 'ইস্ যদি বাসায় যাওয়া না লাগতো। বাসায় গেলেই তো আবার ঐ একই দমবন্ধ করা বন্দীত্ব। তবে সেটা সেক্চু্য়াল হ্যারাসমেন্ট ছিলো না। আমার মনে আছে, আমার মেমোরি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা না করলে'।)। খুব প্রিয় একজন নিকট আত্নীয়কে হারনো। 'শক' বলতে এই সবই মনে পড়ে।
লিখতে গিয়ে আরো একটা দূরে ঠেলে রাখা মেমোরি মনে পড়লো। তখনকার, মানে ১০/১১ বছর বয়সের আমার কিছু দু:স্বপ্ন আর কল্পনা। ঐগুলাও খুবই সেক্চু্য়ালি (মেন্টালি) ডিসটারবিং ছিলো। ভুলে গেছিলাম।
আবারো একই প্রশ্ন, কেন করলাম? ঐ বয়সে?
আর একটা ঘটনা আছে। এটা হল আমি যখন ১২/১৩ বছরের। আমার এক কাজিন, আমার থেকে ৬/৭ বছরের ছোট। মানে ওর বয়স তখন ৫/৬। আমার মনে হল কতুকুতি দেয়াটা খুব........একটা 'ঐ রকম' অনুভুতি পাওয়া যায় এমন একটা কাজ। আমি ওকে এটা একটা খেলা বলে বুঝাইলাম। বললাম, কাতুকাতি দিলে কাতুকুতি পাওয়া যাবে না। শক্ত হয়ে থাকতে হবে।
বগলে কাতুকুতি দিতে হবে। প্রায় ৬/৭ দিন এই খেলা খেলছি ওর সাথে; আমার ছোট একটা ভাইয়ের সাথে।
প্রথম ঘটনাটায় ২ কি ৩ নম্বর দিন, আর পড়েরটায় প্রথম দিন থেকেই বুঝছি খারাপ কাজ করতেছি। থামতে তবু দেরি হইছে। এই দুইটাই আমার সেক্চু্য়াল হ্যারাসমেন্ট-এর সবটা। এরপর, আর কখনো ঐ পথে হাটি নাই। তবে বহু বছর দু:স্বপ্ন হইছে, শুরুতে অচেনা মানুষদের নিয়ে, আর তারপর নিজেকে নিয়ে। এখন বছরখানেকের কাছাকাছি ভালো আছি।
নিজেকে মাফ করা যায় না। আমার সন্তান থাকলে, আর তার সাথে কেউ এই আচরণ করলে তো আমি তাকে কখনো ক্ষমা করার কথা ভাবতেও পাড়তাম না। হোক সে ১০/১২ কি ৪০......
সত্যি কথা, আমি নিজের জন্য ক্ষমা খুজে বেড়াচ্ছি। কি করলে, কিছু একটা করলে হয়তো প্রয়শ্চিত্ত হবে। এটা আমি 'একটা জীবিত প্রাণীর প্রাণ রক্ষার জৈবিক তাগিদ (animal instinct)' থেকে করতেছি। এজন্য না যে, আমার ক্ষমা পাওয়ার যোগ্যতা আছে...নাই হ্য়তো।
এতদিন পর, এই পথের সন্ধান পাইছি। প্রায়চিত্তের শুরু হয়তো এখান থেকেই। তাই এখানে লিখলাম। আমার অপরাধ, যারা এর শিকার হইছে তাদের মনে আছে কি না জানি না। আমার ...মনে আছে।
বাচ্চাদের দেখে রাখা আর প্রোটেক্ট করার প্রয়োজনীয়তা অনেক অনেক বেশি। এটা এখানকার সব লেখাতেই বলা হয়েছে। ঐগুলার সাথে আমার পূর্ণ সহমত এবং সমর্থন। আমি এখানে শুধু আর একটা জরুরী বিষয়ে বলবো:
'আমি কেন এমন করলাম?' মানে, কাউকে এমনটা করা থেকে কিভাবে বিরত রাখা যায়?
আমার মা-বাবা আমাকে অনেক প্রটেকশন দিয়ে বড় করেছেন। এমন কি তারা এই 'Child Sexual Abuse' ব্যপারটা নিয়েও সচেতন ছিলেন। তখন বুঝতাম না, কেন আমাকে কোন আত্নীয়ের বাসায় রাতে থাকার অনুমতি দেওয়া হত না। মা-বাবা ছাড়া দুই-এক আত্নীয়ের বাইরে কারো সাথে কোথাও যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হত না। এখন বুঝি। আমি grateful.
কিন্তু আমার মা-বাবা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেন নাই, এখনো ভাবেন না, যে তাদের ১০/১২ বছরের মেয়েটা অন্য একটা বাচ্চার সাথে এই আচরণ করতে পারে।...... প্রতিকার কি? ১০-১৩/১৪ বছর সময়টা আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল, সত্যি বলতে। আমি পড়াশুনায় খুব খারাপ করতেছিলাম। বাসায় ঐ কঠোর শাসনের বিভিষিকা সর্বোচ্চ ছিল তখনই। কিছুটা পারিবারিক সমস্যাও ছিলো। আমি মানুষের সাথে মিশতে পাড়তেছিলাম না। কী যে ভয় আর হীনমন্যতা ছিলো এখনো স্পষ্ট বুঝি না। কাউকে বলতে পাড়তাম না, আমার অবস্থা শোনার কেউ ছিলো না। আমি কাউকে বিশ্বাস করে বলতে পারি নাই।
আপনার ভালো-ছাত্রী মেয়েটা যখন ফেল করে। সমবয়সিদের দাপিয়ে বেড়ানো দস্যি মেয়েটা যখন লাজুক আর ইতস্তত হয়ে যায়। যখন সে বেশির ভাগ সময়ে যে কারো হ্যা-তে হ্যা আর না-তে না মেলাতে শুরু করে। একটা মিষ্টি হাসির 'স্টিকার' মুখে লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় (সব সময় হাসি মুখে থাকবে কেন? তার কি সবকিছু-জগৎ সংসার এতই পছন্দ?!)। একা একা মন মরা হয়ে বসে থাকে। টিভি-তে লুকিয়ে কোন প্রোগ্রাম দেখে, কেউ গেলে চমকে যায়। পাতার পর পাতা গোপন ডাইরি লেখে।.......বুঝবেন হতাশা তাকে গিলে খাচ্ছে। 'আমার মেয়েটা এমনিতেই খুব শান্ত(!!)' এই ভেবে মুখ ফেরাবেন না। সে নিজে এই ধ্বংসের পথে যাওয়ার আগে তাকে বাচান; এই পাপের বোঝা সারা জীবন টানা থেকে।
দোষ মা-বাবার না। কিন্তু মা-বাবাই বাচাতে পারেন। তার জীবনটা ঐ বয়সে অত কুৎসিত কেন? নি:স্ব কেন? একটু জানার চেষ্টা করেন। আমিও এখনো জানি না, আমার ঐ পাপের কারণ কি। সময় চলে গেছে। আমার সব মেমোরি পুংখানুপুংখ মনে আসে না। লজ্জা আর অপরাধবোধ দূরে ঠেলে রাখার সাধারণ জৈবিক প্রচেষ্টা(natural psychological defense)। আমি শুধু জানি আমি পাপি। এই পাপের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে। সারা জীবন। আর, ঐটা কম করতে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টাটা ঐ জন্যই মূলত।
এরকম ঘটনা আমি আগে শুনিনি তা না, প্রথম যখন স্কুলে থাকতে শুনলাম তখন বিশ্বাস করতে রীতিমত কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে গন্ধম ফল খেতেই হয়, মানুষ চিনতেই হয়... কিছু বিচ্ছিন্ন বানোয়াট অথবা বাস্তব ঘটনা, খবরের কাগজে টুকিটাকি... আমি একটু একটু করে বুঝতে শুরু করলাম, মানুষ কী, মানুষ কেমন, মানুষ কী চায়, মানুষ কী ভাবে, মানুষ কী স্বপ্ন দেখে... ছোটবেলায় মানুষের দলে না পড়লেও, আস্তে আস্তে আমিও তাদের দলে ভীড়তে শুরু করলাম, তাদের স্বপ্ন-চিন্তা-কামনার সাথে আমার স্বপ্ন-চিন্তা-কামনা কমন পড়তে শুরু করল… সমস্ত সন্দেহ আর কনফিশন এর মধ্যে আপাত নৈতিকতার স্থূল দাগ টা খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম, এখনো প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি... স্বাভাবিক যৌনতা (‘স্বাভাবিক’- বলে কিছু নাই, এটা সমাজের মেজরিটি মানুষ কে মিথ্যা স্বস্তি দেয়া ছাড়া আর কিছু করে না; দুই বা ততোধিক মানুষ যারা ঘটনার সাথে জড়িত তাদের নিজ নিজ স্বাধীন ইচ্ছার আওতায় সব কিছুই স্বাভাবিক- এ প্রসঙ্গে বলা ভাল, পুরুষ শাসিত সমাজে উর্ধতন কর্মকর্তার অফিসের মহিলা কর্মাচারীর প্রতি sexual advancement, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর sexual domination, কাজের লোকের প্রতি বাড়ির মালিকের যৌন আচরণ, শিশুর প্রতি (কত বয়স পর্যন্ত শিশু ধরব?) কোন রকম যৌন আচরণ- এই আওতায় পড়বে না, অর্থাৎ যদি আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় ও যে কারও ওপর জোর করা হয়নি, তাও এসব ক্ষেত্রে নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় নাই)...আর যৌন নীপিড়ন, যৌন অত্যাচার এর মধ্যে পার্থক্য যাচাই করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যাইহোক, লেখক এর সাহসের সাধুবাদ জানাই, লেখা পড়ে আমি অনুশোচনা দেখতে পেয়েছি স্পষ্ট, তাই তাকে বলছি- আপনি কি চাইলেই বাদ দিতে পারেন না- এই আচরণ করতে কী আপনি বাধ্য? মাফ করবেন, এসব করে আপনি পরমানন্দ পাচ্ছেন মনে হলে এই কথাটা বলতাম না। আর শেষ একটা কথা...
“স্পর্শ করার, মথিত করার একটা অবদমিত ইচ্ছের বীজ সেই সময় রোপিত হয়, আমি নিশ্চিত। আমার বয়স তখন সর্বসাকুল্যে সাত।”
...আপনার বয়স কি তখন সত্যি সাত ছিল?... আমি আসলে মেনে নিতে পারছিনা। আর এরকম যেকোন ঘটনাতে- বাবা-মা বা অভিভাবক ছাড়া একচেটিয়া ভাবে আর কাউকে দোষ দিতে পারছিনা। আপনি যা হয়েছেন, যেমন হয়েছেন... তাতে বাবা-মার অসচেতনতার ভূমিকা কতখানি কখনো কি একটুও চিন্তা কোরে দেখেছেন? ধিক সেই মা-বাবা কে যারা পৃথিবীতে মজাসে সন্তান নিয়ে আসে আর ভুলে যায় দায়িত্বের কথা; জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ শান্তি-সুখের উৎস, যাদের কাছে যৌন সুখ উপভোগের মুহূর্তে শুধুই একটা মামুলি অ্যাক্সিডেন্ট।
নিশাচর জীব।
সাধারণ জাজমেন্টাল মানুষ বলেই লেখাটা সাহসী হলেও সাধুবাদ দিতে পারছিনা। এই ঘটনা নিজের সাথে ঘটেছে এবং একটা বাচ্চার কাছে সেই ট্রমাটা ঠিক কতোখানি ভয়াবহ আর সেটা তাকে কতোটা ভোগায়, এটা আপনাকে কেউ অন্ধকার ঘরে নিয়ে মুখ চেপে না ধরলে হয়তো বুঝতে পারবেন না।
যাইহোক, এই ঘটনাটুকু লিখে নিজের দায় শেষ এটা না ভেবা কিভাবে এই পারভাশন আর কারও মধ্যে যেন না ছড়ায় তা নিয়ে ভাবতে পারেন। জানিনা, আপনার লেখা পড়ে যে তীব্র রাগ হচ্ছে তার জন্য চিন্তাভাবনা পরিস্কার করতে ঠিক কতো সময় লাগবে।
আমাদের মা বাবাদের আসলে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কোনও ট্রেনিং থাকেনা, তাদের কেউ এই জিনিসগুলো জানায়োনা অনেক সময়। স্বামী স্ত্রী থেকে হুট করেই দুটো মানুষ মা বাবা হয়ে যায়, যেখানে মা হয়তো তার হরমোনের পরিবর্তনগুলো সামলে আনতে আনতেই পার করে দেন একটা দেড়টা বছর, তারপরে বাচ্চার দেখাশোনা করার পাশে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দৈনন্দিন জীবনে, তার জীবনে তাকে যেমন তার মন মানসিকতার বিকাশের সুযোগটা কেউ দেয়নি সেহেতু নিজের বাচ্চার ক্ষেত্রেও এতোশত ভাবতে বসার সময় হয়না তার।
ধুর, জানিনা কি লিখছি, পরে হয়তো গুছিয়ে মন্তব্য করবো!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
"সাধারণ জাজমেন্টাল মানুষ বলেই লেখাটা সাহসী হলেও সাধুবাদ দিতে পারছিনা।" - সহমত।
"যাইহোক, এই ঘটনাটুকু লিখে নিজের দায় শেষ এটা না ভেবা কিভাবে এই পারভাশন আর কারও মধ্যে যেন না ছড়ায় তা নিয়ে ভাবতে পারেন। জানিনা, আপনার লেখা পড়ে যে তীব্র রাগ হচ্ছে তার জন্য চিন্তাভাবনা পরিস্কার করতে ঠিক কতো সময় লাগবে।" - সহমত।
"আমাদের মা বাবাদের আসলে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কোনও ট্রেনিং থাকেনা, তাদের কেউ এই জিনিসগুলো জানায়োনা অনেক সময়। স্বামী স্ত্রী থেকে হুট করেই দুটো মানুষ মা বাবা হয়ে যায়, যেখানে মা হয়তো তার হরমোনের পরিবর্তনগুলো সামলে আনতে আনতেই পার করে দেন একটা দেড়টা বছর, তারপরে বাচ্চার দেখাশোনা করার পাশে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দৈনন্দিন জীবনে, তার জীবনে তাকে যেমন তার মন মানসিকতার বিকাশের সুযোগটা কেউ দেয়নি সেহেতু নিজের বাচ্চার ক্ষেত্রেও এতোশত ভাবতে বসার সময় হয়না তার।" - সহমত।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অতি সাহসী লেখা। আমাদের নৈতিক এবং যৌন শিক্ষা এবং সচেতনতা ছাড়া ইহা থেকে নিস্তার নেই।
নতুন মন্তব্য করুন