ছেলেমেয়ের নাম বাংলায় রাখুন, অন্তত ডাক নামটা বাংলায় রাখুন।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৭/০৫/২০১৫ - ২:২৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনেক দিন ধরেই খেয়াল করছিলাম আশেপাশে বন্ধুবান্ধবরা তাদের ছেলেমেয়েদের খুব অদ্ভুত অচেনা শব্দযুক্ত নাম রাখছে, নির্দিষ্ট করে বললে আরবি শব্দের নাম রাখছে। আরবির প্রতি আমার কোন ঘৃনা নাই, কিন্তু হিব্রু যেমন আমি বুঝি না, তেমনি আরবিও আমি বুঝি না। তাই ছেলেমেয়েদের এই নাম রাখার সংস্কৃতি আমার কাছে খুবই অদ্ভুত ঠেকত। নাম বাংলায় না রেখে কেনো আরবিতে রাখা হচ্ছে সেটাতে অবাক হতাম।

খেয়াল করলাম আগের জেনারেশনে কিছুটা হলেও রেন্ডমনেস ছিলো; কারো নাম যেমন আমিন, ওমর, রোকসানা, শাহজাহান, আকবর, সিরাজ, সাবেরা ইত্যাদি হত তেমনি সাগর, নীলা, রাত্রি, আকাশ, শুভ্র, লিসা, মারিয়া, সানি, পান্না, মনি, দূর্জয় ইত্যাদিও হত। কিন্তু এখন ব্যাপারটা আর সেই পর্যায়ে নাই,ছেলেমেয়ের নাম একমাত্র আরবিতেই হয়, খুব সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।

তারপর একটা সময় আসলো যখন নিজের ছেলের নাম রাখার উপলক্ষ হলো। আমি খুবই আনন্দিত হয়ে ভাবলাম যাক ছেলের একটা সুন্দর বাংলা নাম রাখবো। কিন্তু তখন বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা এত সহজ না। আরবি রাখার পিছনে মানসিকতাটা মোটেও ভিন্ন হওয়া কিংবা সুন্দর অর্থপূর্ন হবার ব্যাপার না, তার থেকেও বেশি কিছু। আরবিতে নাম না রাখা এখন পাপ। আরবিতে নাম না রাখা এখন অধর্ম।

নিজের ছেলের বাংলা নাম রাখার জন্য আমাকে বাপ-মা, বৌ, ইত্যাদি সবার মতের বিরুদ্ধে যেতে হয়েছে; অনেক বুঝাতে হয়েছে যে বাংলা নাম রাখাটাই স্বাভাবিক, আরবিতে নাম রাখার কোন যুক্তি নাই। এমনকি শেষ পর্যন্ত এটাও বলতে হয়েছে যে হাদিস মতে ছেলের নাম রাখার অধিকার বাবার, তাই আমি যা রাখব তাই মানতে হবে। কিন্তু এমনটা তো বাংলাদেশে হবার কথা ছিলো না! এটা দুঃখজনক। ছোট ব্যাপার হলেও, এটাও এক ধরনের ধর্মান্ধতা।

খুব বিস্তারিত লিখতে চাই না, কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলতে চাই বাংলায় নাম রাখলে সেটা ধর্মবিরোধী না, বরং সেটাই ইসলামকে সর্বজনীন ধর্ম হিসাবে আরো বেশি প্রতিষ্ঠিত করে। কুরান হাদিস ঘাটাঘাটি করে দেখেছি, বাংলায় নাম রাখলে পাপ হবে না। তাই ছোট অনুরোধ, ছেলেমেয়ের নাম বাংলায় রাখুন, অন্তত ডাক নামটা বাংলায় রাখুন। কারন আমাদের ছোট ছোট ধর্মান্ধতাই সমাজকে সাম্প্রদায়িক করে তুলছে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আরবী ভাষাভাষীদের কাছে নিজের নাম বললে ওরা কী যে অবাক হয়! অনেকবার শুনেছি, 'আরেহ! তোমার নাম আরবী?'
যদিও সেই নাম আমরা ওদের বলি ভুলভাল উচ্চারণে।

ওদিকে আমরা আরবীতে যেসব নাম রাখি, আরব রা সাধারণত তেমন নাম রাখে না। যে কারণে কোথাও কোনো নামের তালিকা দেখলেই বোঝা যায় এই ব্যক্তি বাঙালী-মুসলিম।

বাংলা নামকে সবাই হিন্দুয়ানী জ্ঞান করে। তার উপর আজকাল, শুধু আরবীনামেই চলে না। নামে নতুনত্ব আনতে আরবির মধ্যে থেকেও বিদঘুটেতম উচ্চারণের শব্দগুলোকে নাম হিসাবে বাছাই করে একালের বাবা-মা রা।

আরেক ফাল্গুন২

ঈয়াসীন এর ছবি

অন্যান্য দেশে নামগুলো সাধারণত আঞ্চলিক হয়, ধার্মিক নয়। যেমন আমার এক সুদানী বন্ধু আছে, নাম- হাসান; সে মুসলমান এবং আরো এক সুদানী বন্ধু আছে, তার নাম- কাশিম (আমাদের উচ্চারণে কাশেম); এই বন্ধুটি খ্রিস্টান। সুদানীরা মূলত আরবী ভাষাভাষী, সেই কারণে তাদের বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে আরবী নামই পরিলক্ষিত হয়, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ধারা আমাদের দেশে নেই। আমরা বাংলা নামগুলোকে 'হিন্দু' ট্যাগ দিয়ে দিয়েছি। আমরা আরবী শব্দকে পবিত্র মনে করি, তা নাম রাখার ক্ষেত্রেই হোক আর দেয়ালে সেই অক্ষর দেখে প্রস্রাব ঠেকাতেই হোক। আমাদের এই খেলো সংস্কৃতি মহান ভাষা আন্দোলনটাকে বড্ড অপমান করে।
যাইহোক, লেখাটি ভাল হয়েছে। লেখার নীচে নিজের নাম উল্লেখ করতে ভুলবেন না। ছদ্মনামও ব্যবহার করতে পারেন; একটা কিছু নাম পরবর্তীতে জুড়ে দিয়েন।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

রেখেছি, ভালো নামটাই রেখেছি- ঋদ্ধ জ্যোতির্ময়।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মেয়ের একটা সুন্দর বাংলা ডাকনাম রাখতে চাচ্ছি। সুন্দর বাংলা নামের তালিকা তেমন একটা পাই না, যেগুলো পাই বহুল ব্যবহৃত। আপনার কাছে কোন সাজেশন থাকলে দিতে পারেন।

সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

comilla এর ছবি

আল্লাহ পবিত্র কোরআন কে আরবের মাতৃভাষায় নাজেল করেছেন যেন তারা উহা ভালভাবে পড়িতে এবং বুঝিতে পারে- এটা আমার বানানো কথা নয় পবিত্র কোরআনের কথা !! আল্লাহ নতুন কোন ভাষা মুসলমানদের উপর আরোপ করেন নাই, নতুন কোন ড্রেসকোডও আরোপ করেন নাই ইসলাম আসার পর। তাই আমরা বাঙালী মুসলমান কেন আরবের মাতৃভাষায় আমাদের সন্তানদের নাম রাখব ?? এটা কিছু লোকের মানষিক দৈন্যতা !! ইদানিং এটা বেশি দেখা যাচ্ছে, আপনার মত আমিও বুঝি না এমন কেন হচ্ছে আমাদের দেশে !!

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব প্রিয় এক ম্যাম একবার ক্লাসে রীতিমতো ক্ষেপেই গিয়েছিলেন বিরক্তিতে, প্রায় সবার নাম আরবিতে তাই; অথচ প্রায় সবারই ডাকনামগুলো ছিল বাংলায়। আমার খুব অবাক লাগে এই নামকরণের বিষয়টিতে, ছেলেমেয়েদের সুন্দর নাম নাকি রাখতে বলা হয়েছে ইসলামে কিন্তু সেটা আমাদের কেন আরবিতেই করতে হবে? আমরা কথা বলি বাংলায়, তাহলে সেই নামগুলো বাংলায় নয় কেন?

আমার বাবা বিদেশি শব্দের নাম পছন্দ করেন না। মনে পড়ে, আরবি বা উর্দূ নাম দেখলে বাবা কিছু বলতেন না ঠিক (হয়ত নিজে হিন্দু বলে) কিন্তু স্কুলের কাগজপত্র বোর্ডে পাঠানোর আগে ইংরেজি নামগুলোকে বাংলা করে দিতেন সবসময়ই অবশ্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অনুমতি সাপেক্ষেই। বিউটি>বিথীকা, ডলি>হেমলতা হয়ে যেত কাগজেপত্রে।

লেখাটা ভালো, নাম লেখেননি কেন?

দেবদ্যুতি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

ইন্দোনেশিয়ায় পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুসলিম লোক বাস করে, অথচ তারা আরবি নাম রাখার জন্য পাগলামি করে না।
সিসিলো বামবাং, মেঘাওয়াতি সুকর্নপু্ত্রী এগুলো রাখতে তারা ভয় পায় না। বরং, এটাই স্বাভাবিক।

আরবি নাম রাখার কোন 'ঠ্যাকা' আমাদের পরে নাই।
অথচ, আরবি ছাড়া অন্য কোন নাম হলে বাচ্চাটাকে মানুষের বাঁকা কথা শুনতে এখানে সেখানে। আমরা অদ্ভুত জাতি। আমি যতটুকু জানি (ভুলটুল থাকতে পারে)। হযরত ওমর (রা) থেকে একটা হাদিসের রেফারেন্স দেয়া হয় আরবি নাম রাখার পক্ষে। যেটাতে বলা হয়েছিল যে, এমন নাম রাখতে হবে যেন নাম শুনে বোঝা যায় বাচ্চা মুসলমান।

এখন, তারিক আজিজ‌ ‌ নামটা শুনে কি বোঝা গেল? সাদ্দামের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তারিক আজিজ‌ ‌ খৃষ্টধর্মালম্বী ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যবাসী খৃষ্টধর্মালম্বী মানুষেের নামের তালিকা রাস্তায় টাঙিয়ে রাখলে বাঙালির বোধোদয় হতে পারে।
আমার, জানামতে ইসলাম ধর্ম প্রচারের সময়কালে, যারা ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেছিল তাদের নাম বদল করে ফেলা হয় নি, কয়েকজনের বিশেষ উপাধি ছিল অবশ্য।

আমার নিজের নাম আরবি শব্দের ‌র‌্যান্ডম সমাবেশ, তারপরও আমার দাদী বাংলায় ডাকনাম রেখে দিয়েছিলেন। প্রথম ৩ শ্রেণী পড়ার সময় আমার 'বড়/ আসল' নাম ছিল না; কেবল ওই বাংলা নামটাই আমার অফিশিয়াল নাম হিসেবে স্কুলের ফাইলে ছিল।

শুভেচ্ছা হাসি

কাল্পনিক  এর ছবি

বাঙ্গালি আত্মপরিচয় সংকটে ভোগে।

অতিথি লেখক এর ছবি

মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হল ওদের কাছে আরবী ভাষা এবং ইসলাম সমার্থক না; ইসলামের আবির্ভাবের আগে থেকেই ওরা আরবিতে কথা বলত। দক্ষিণ এশিয়াতে ইসলামের আবির্ভাবের আগে আরবী ভাষার কোন অস্তিত্ব ছিল না; তাই এই অঞ্চলের মুসলমানদের কাছে ইসলাম এবং আরবী সমার্থক। তবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপারটা মনে হয় একটু আলাদা। যেমন ইন্দোনেশিয়ার সুকারনো, সুহারতো - এই নামগুলি আরবী না, যদিও তারা দুজনেই ছিলেন মুসলমান। সুকারনোর মেয়ের নামতো ছিল মেঘবতী সুকারনোপুত্রী (Megawati Sukarnoputri) - যেটা নাম হিসেবে যেকোনো আরবী শব্দের চেয়ে অনেক বেশী শ্রুতিমধুর!

উদ্ভট, অপ্রচলিত আরবী নাম রাখার প্রচলনটা মনে হয় ১৯৮০র দশক থেকে শুরু হয়। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে পেট্রোডলারেরও অনুপ্রবেশের সূচনাও ঘটে এই একই সময়ে।

মুসলমানদের আরবী-ফার্সি নাম রাখার ব্যাপারেও নাকি অনেক সূক্ষ্ম নিয়ম আছে। আমাদের পাড়ার এক স্বঘোষিত ইসলামী চিন্তাবিদ একবার বলেছিলেন "শাহজাহান", "শাহআলম", "আলমগীর", "জাহাঙ্গীর" - এই চারটা নামের অর্থই "পৃথিবীর সম্রাট"। যেহেতু কোরান অনুযায়ী পৃথিবীর সম্রাট একমাত্র আল্লাহ, মানুষ কোনদিন এই দাবী করতে পারে না, সেহেতু এই নামগুলিও নাকি মুসলমানদের রাখা উচিৎ না। এমনকি আল্লাহর ৯৯টা নাম থেকে কেউ যদি মানুষের নামকরন করতে চায়, তাহলে নাকি সেই নামের আগে অবশ্যই "আব্দুল" লাগাতে হবে (আব্দুল কাদের, আব্দুল খালেক, আব্দুল্লাহ, ইত্যাদি); নাহলে শিরক হবে!

Emran

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

আসলে আমাদের অভিভাবকেরা কবি আবদুল হাকিমের বিশেষ ভক্ত,
তাঁরা উনার কবিতাকে কখনোই অপ্রাসঙ্গিক হতে দিতে চান না আর কি চোখ টিপি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ফাহিম হাসান এর ছবি

আমার ডাক নাম বাংলা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অনেকেরই ডাক নাম বাংলা। আমার কাছে বাংলা নাম খুবই শ্রুতিমধুর লাগে কিন্তু বাবা-মা কী নাম রাখবে এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। বিষয়টা আমার কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। যদি কোন নাম হিটলার, গোলাম আযম ধরনের মানুষের প্রতি ভক্তি দেখিয়ে রাখা না হয়, আমি কোন সমস্যা দেখি না।

কুরান হাদিস ঘাটাঘাটি করে দেখেছি, বাংলায় নাম রাখলে পাপ হবে না।

একমত। কিন্তু পাপের ভয়ে কী কেউ আরবি নাম রাখে? আমার তো মনে হয় নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী রাখে।

কারন আমাদের ছোট ছোট ধর্মান্ধতাই সমাজকে সাম্প্রদায়িক করে তুলছে।

একমত না। আরবি নাম রাখা ধর্মান্ধতা হল কিভাবে?

চারিদিকে বাংলা নাম শুনতে ভালই লাগবে, কিন্তু আরবি নামে আমি কোন সমস্যা দেখি না।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পাপের ভয়ে কী কেউ আরবি নাম রাখে?

নাহ, পুণ্যের লোভে রাখে। তবে পাপের ভয়ে "বাংলা" নাম রাখতে চান না অনেকেই।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ইরাম কথা আমিও শুনেছি বটেন! নিজের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না বলে সিরাম করে কিছু কইতে পারি নাই তবে যুক্তিগুলো খুব হাস্যকর ঠেকত...

মন মাঝি এর ছবি

চলুক

****************************************

মরুদ্যান এর ছবি

আরবি নাম রাখার পিছনে যুক্তিঃ

আল্লাহর কাছে শেষ বিচারের সময়ে নাকি এক্টাই নাম যায়, তাই ইস্লামিক নাম হতে হবে। আর আমাদের কাছে ইস্লামিক = আরবি।

আরবি দেখে পেশাব না করে সালাম করাটা যেমন ধর্মান্ধতার ফলাফল, এইটাও তাই।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আরবি দেখে পেশাব না করে সালাম করাটা যেমন ধর্মান্ধতার ফলাফল, এইটাও তাই।

ষণ্ডচক্ষু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক ভাল লিখসো। সচলে স্বাগতম! লেখার শেষে নিজের নাম বা ছদ্মনাম দিয়ে দিও পরের বার থেকে।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

আলবাব ইয়াফেজ ফাতমী এর ছবি

আরবী নাম রাখা যদি স্রেফ নাম রাখার খাতিরে হয়, তাহলে খুব সমস্যা হয়তো নেই, খালি নিজ ভাষা ছেড়ে অন্য ভাষা সাদরে গ্রহণকে যদি সমস্যা হিসেবে না দেখি। কিন্তু আমাদের দেশে এই আরবী নাম রাখার পিছনে মূল কারণটুকু ধর্মীয়, এবং সে কারণেই একে ধর্মান্ধতা বলা। যদি ব্যাতিক্রম নাম রাখতেই হয়, তাহলে আরো অনেক ভাষা আছে যা আমাদের সমাজে প্রচলিত নয়, সেসব ভাষা থেকেও তাহলে অনেকেই তাদের সন্তানের নাম রাখতো। অর্বোধকতা যদি উদ্দেশ্য হয়, তবে একই অর্থ প্রকাশক বাংলা শব্দ দিয়েই নাম রাখা যেত। আরবী-ফারসী নামকরনের মূলটি ধর্মে বা ধর্মান্ধতায় নিহিত, এ কথা অস্বীকারের বোধ হয় উপায় নেই।

রানা মেহের এর ছবি

ফাহিম, ব্যাপারগুলো এত সহজ নয়।

একটা সময় আমাদের দেশে নাম রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিলনা। বিশেষ করে আট নয় ভাইবোনের পরিবারে বাবা মা রা নাম রাখা জাতীয় ব্যাপারে সময় নষ্ট না করে যহোক একটা রেখে দিতেন। কখনো ভাই বোন মামা ফুপুরাও রাখতো।

এখন বাবা মা রা ভেবেচিন্তে নাম রাখেন। অন্তত শহরের দিকে অর্থবোধক নাম রাখার চেষ্টা করা হয়। তাই তারা যখন আরবি ভাষায় নাম রাখেন যেখানে একই অর্থের বাংলা ভাষাতেও চমৎকার শব্দ আছে সেটা ধর্মীয় কারণ এবং কখনো ধর্মীয় গোড়ামির কারণেই রাখেন।

আর হিটলার কিংবা গোলাম আজম নাম তাদের চিন্তা চেত্নার অনুসারী না হয়ে রাখা সম্ভব না। এই নামগুলো এমনভাবে বিশেষায়িত হয়ে আছে। ধরুন মীর জাফর। আপনি কি কখনো এই নামটা দেখেছেন কোন বাবামাকে রাখতে? কারণ এই নামটা ধর্ম বর্ণ রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে আমাদের মনে একটা বাজে জায়গা নিয়ে নিয়েছে।

নাম রাখা মাবাবার অধিকার। সেই অধিকারে হস্তক্ষেপ করার কোন পন্থা নেই। কিন্তু এই ট্রেন্ডটা নিয়ে কথা হওয়া জরুরী।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাসুদ সজীব এর ছবি

কারন আমাদের ছোট ছোট ধর্মান্ধতাই সমাজকে সাম্প্রদায়িক করে তুলছে।
একমত না। আরবি নাম রাখা ধর্মান্ধতা হল কিভাবে?

ফাহিম ভাই কোন ভাষার নাম’ই ধর্মান্ধতার প্রতীক না হলেও এর পেছনে যদি কেউ পাপ-পূণ্য খুঁজে তখন সেটি ধর্মান্ধতা হয়। ভাষাগত নামের সাথে পাপ-পূণ্যের কিছু নেই। আরবিকে যখন কেউ ধর্মীয় সকল প্রকার রীতি-নীতির একমাত্র পন্থা হিসেবে ধরে নেয় তখন সেটি তার ধর্মান্ধতাই, আবার ইংরেজিকে নাম রাখাকে যদি কেউ স্মার্টনেস মনে করে তবে সেটিকে হুজুগে পনা বলা হয়। লেখক খুব সম্ভব সেটিই বুঝাতে চেয়েছেন। আর এমন ছোট ছোট বিষয়গুলো আমাদের বড় ধরণের অন্ধতার দিকে নিয়ে যায়, এটাই সত্য।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

আয়নামতি এর ছবি

পছন্দ হলো লেখাটা চলুক

মন মাঝি এর ছবি

এই পোস্টের মূল স্পিরিটের সাথে আমি একমত (আমি যেমনটা বুঝেছি) এবং কঠিন কঠিন আরবি নাম রাখার সাম্প্রতিককালের ট্রেণ্ডের ব্যাপারে আমারও অস্বস্তি আছে। কিন্তু ব্লগে যেমনটা হয় আরকি - একেক কাঠি করে উত্তোরত্তর সরেস মন্তব্য আসতে থাকে আর সেটা স্নো-বল ইফেক্টের চরিত্র ধারণ করে সম্পূর্ণ আরেক মাত্রায় চলে যায় অনেক সময়। আমি সাধারণভাবে সচলের ভিশনের সাথে ঐক্যমত্য পোষন করি এবং এখানে যারা লিখেন তাদের লেখালেখির সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজের ভাবনার অনেকখানি সাযুজ্য খুঁজে পাই। কিন্তু আজকে কেন জানি প্রচণ্ড বিরক্তি বোধ করছি - মনে হচ্ছে যে বিষয়টা যত বড় নয় সে বিষয়টাকে চুইংগামের মত টেনে টেনে ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারনা করে তত বড় করে অন্যের স্বাধীণতা ও ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপের চর্চা শুরু করছি এখানে।

আমি যেমনটা বুঝি - যার যার নাম তার তার বা তাদের পিতামাতার ব্যাপার। এটার নির্ধারণ প্রক্রিয়া একটা চূড়ান্ত ভাবে প্রাইভেট ব্যাপার। অন্যের কি বলার আছে এতে? এই ব্যাপারে অন্যের নিন্দামন্দ করাটা আমার কাছে শুধু অন্যায় ও অনধিকারচর্চাই না, অত্যন্ত অশোভনও বটে। হ্যাঁ, এটা যেমন বাংলা নাম রাখার কারনে প্রকাশ্যে বা প্রচ্ছন্নভাবে কোন পারসিভ্‌ড 'হিন্দুয়ানী' গন্ধের বা 'মুসলমানী' গন্ধের 'অভাবের' অভিযোগে নিন্দামন্দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (এবং এটাই বেশি ঘটে), তেমনি উলটো ক্ষেত্রেও, অর্থাৎ আরবি নাম রাখার কারনে নিন্দামন্দের ক্ষেত্রেও কিন্তু সমভাবে প্রযোজ্য! উপরে ফাহিম হাসান যেমন বলেছেন, নামকরণের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার এবং -- এ ব্যাপারে এধরণের নিন্দাসূচক / আক্রমণাত্নক অনধিকারচর্চা থেকে কেমন যেন একটা সুপ্ত ফ্যাসিবাদী মনোভাবের গন্ধই ছড়ায় কেবল। যতক্ষণ আমি উদ্ভুতুড়ে কোন নাম রেখে আমার সন্তানকে পরবর্তীকালে সামাজিকভাবে, বিশেষ করে তার পিয়ার-দের কাছে হাসিঠাট্টার পাত্রে পরিণত করে তার মনোবিকলণের কারন না ঘটাচ্ছি, ততক্ষণ আমি আমার সন্তানের নাম কি বা কোন ভাষায় রাখবো না রাখবো - বাংলা, আরবি না মঙ্গলগ্রহের ভাষায় - সেটা নো বডি'জ ড্যাম বিজনেস! বাংলা নাম রাখলে বাংলাবিরোধীরা নিন্দামন্দ করলে তাদের জন্য আমার এই উত্তরই বরাদ্দ থাকবে, আবার আরবি নাম রাখলে আরবিবিরোধী নিন্দুকদের জন্যেও সেই একই জবাব - ইট'স নান অফ ইয়োর *** বিজনেস! পিরিয়ড।

আমার ন্যূনতম সেন্স অফ ডিসেন্সি বলে -- এই ক্ষেত্রে আমরা বড়জোর যা করতে পারি তা হল এই বিদ্ঘুটেরকম দাঁতভাঙ্গা বা টাং-টুইস্টিং আরবি নামকরণের ইদানীংকালের আজব ট্রেন্ডটা সম্পর্কে আমাদের নিজস্ব বা জেনারেল অস্বস্তিটা প্রকাশ করতে পারি, এমনকি অন্যদের অনুরোধ-উপরোধ বা উৎসাহিত করতে পারি বাংলা নাম রাখার জন্য - কিন্তু পরম ভালবাসা বা মমতায় যেসব নব্য পিতামাতা তাঁদের সন্তানের নামকরণ করছেন বা করেছেন, তাঁদের গালাগালি-নিন্দামন্দ-ব্যঙ্গবিদ্রুপ করাটা হবে একাধারে হৃদয়হীণ এবং অশ্লীল। এবং সত্যি কথা বলতে কি, এটাই বরং হবে বাঙালি ও যে কোন সংস্কৃতি-রই বিরোধী। আর এর মধ্যে যদি আবার জিঙ্গোইস্টিক, জাতিবিদ্বেষী বা জেনোফোবিক কথাবার্তার অবতারনা করা হয়, তাহলে তো আর কথাই নাই।

****************************************

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এই ক্ষেত্রে আমরা বড়জোর যা করতে পারি তা হল এই বিদ্ঘুটেরকম দাঁতভাঙ্গা বা টাং-টুইস্টিং আরবি নামকরণের ইদানীংকালের আজব ট্রেন্ডটা সম্পর্কে আমাদের নিজস্ব বা জেনারেল অস্বস্তিটা প্রকাশ করতে পারি, এমনকি অন্যদের অনুরোধ-উপরোধ বা উৎসাহিত করতে পারি বাংলা নাম রাখার জন্য - কিন্তু পরম ভালবাসা বা মমতায় যেসব নব্য পিতামাতা তাঁদের সন্তানের নামকরণ করছেন বা করেছেন, তাঁদের গালাগালি-নিন্দামন্দ-ব্যঙ্গবিদ্রুপ করাটা হবে একাধারে হৃদয়হীণ এবং অশ্লীল।

মাঝি ভাই, পোস্টে তেমনটা করা হয়েছে কি? আমার কাছে মনে হয় নি।

হ্যাঁ, এটা যেমন বাংলা নাম রাখার কারনে প্রকাশ্যে বা প্রচ্ছন্নভাবে কোন পারসিভ্‌ড 'হিন্দুয়ানী' গন্ধের বা 'মুসলমানী' গন্ধের 'অভাবের' অভিযোগে নিন্দামন্দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (এবং এটাই বেশি ঘটে), তেমনি উলটো ক্ষেত্রেও, অর্থাৎ আরবি নাম রাখার কারনে নিন্দামন্দের ক্ষেত্রেও কিন্তু সমভাবে প্রযোজ্য!

এই বক্তব্যের "গুণগত" (Qualitative) প্রেক্ষাপটে দ্বিমত নেই। "পরিমাণগত" (Quantitative) প্রেক্ষাপটে আছে। কেননা প্রচলিত প্রচারণা প্রবলভাবে একপক্ষীয়। এই অশালীন ট্যাবু ভাঙ্গার প্রয়োজন আছে। ব্যাক্তিস্বাধীনতার মোড়কে একে আড়াল করার পক্ষপাতী নই।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আলবাব ইয়াফেজ ফাতমী এর ছবি

নিজের কন্যার নাম যখন রাখলাম বাংলায়, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আত্নীয় অনাত্নীয় অনেকেই ভালো নাম জানতে চেয়েছে, আরো কোন নাম আছে কিনা জানতে চেয়েছে। আমরা দুইজনেই জানতাম এ প্রশ্নগুলো অবধারিত, এবং এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে আমরা তৈরি ছিলাম। তবে আমি নিশ্চিত ঘটনা এখানেই শেষ হবে না, যদি এই বাংলাদেশেই আমার কন্যা বড় হয়, তবে তাকে ৯০% শিক্ষক, অন্ততঃ ৫০% বন্ধুবান্ধবের অভিভাবক এবং চেনা আধা চেনা অসংখ্য মানুষের একই রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। আর কট্টর ধর্মান্ধের মুখে তার নামটি যে একেবারেই ধর্মবিরোধী হয়েছে, এটাও সে শুনবে, আমি নিশ্চিত।

অতিথি লেখক এর ছবি

নাম রাখার অধিকার অবশ্যই বাবা মায়ের - সে আরবি বাংলা যাই হোক, সবাই চায় সুন্দর একটি শিশুর সুন্দর নাম ৷ কথা হচ্ছে নাম রাখতে গিয়ে ধর্মান্ধতা যেন প্রশ্রয় না পায়, তেমনি আধুনিকতার নাম বিকৃত নামকরণও যেন না হয়৷

সমস্যা বাবা মায়ের এবং অনেকাংশে আত্মীয় স্বজনের মন মানসিকতায় ৷ অনেকেই আরবি নামের জন্য জোর- জবরদস্তি করেন ৷ আমার চাচারাই আমার নামের সাথে মোহাম্মদ দেয়ার জন্য অনেক জোরাজুরি করেন - মা মানেননি ৷

এমনো দেখেছি যে আরবি নাম রাখতে গিয়ে নামের অর্থই পাল্টে গেছে বা সম্পূর্ণ অনৈসলামিক নাম রেখে বসে আছে (উপরে এমরান ভাইয়ের মন্তব্য দ্রষ্টব্য) ৷ দুবাইয়ের মত কসমোপলিটান শহরে থাকার কারণে এটা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে আরবদের নাম শুনে ওদের ধর্ম বুঝতে পারবেন না ৷ আর আরবদের নাম ওদের পরিবারের নাম বহন করে - সাথে হয়ত (বাধ্যতামূলক ভাবে নয়) স্রষ্টার কোনো সুন্দর নাম ৷

মোদ্দাকথা অন্ধ অনুকরণ না করে, অন্ধভাবে ধর্মকে না টেনে, সুন্দর একটি শিশুর সুন্দর নামকরণ করুন ৷

মরুচারী

সাইদ এর ছবি

এটা সম্পূর্ণ রকমের ধর্মান্ধতার কুফল।
নিজের নামের উপর তো হাত ছিল না, কিন্তু নিজের ছেলের নাম রাখার সময় অনেক চেষ্টা করেও সম্পূর্ণ বাংলা নাম রাখতে পারিনি। তাই ডাকনামটাই বাংলা সম্বল।
আমরা বাংলাদেশিরা মারত্মক পরিচয় সঙ্কটে ভুগি এ হল তার আরেক নমুনা।

মন মাঝি এর ছবি

নাম, নামকরণ ও ভাষা সম্পর্কে আমার আরও কিছু বিক্ষিপ্ত মতামত দিলাম। বিশাল মন্তব্য হয়ে যাওয়াতে অগ্রিম ক্ষমাপ্রার্থীঃ

১। ধর্মঃ যারা আসলে সাধারণভাবে ধর্মবিরোধীতা বা কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি বিরাগের কারনে আরবি নামকরণের বিরোধীতা করছেন, তাদের প্রতি পুরোপুরি 'ঝেঁড়ে কাশার' বিণীত অনুরোধ রইলো। অর্থাৎ, নামের পিছনের ধর্ম বা এর ধর্ম-সংশ্লিষ্টতাই যদি আপনার আপত্তি বা অস্বস্তির মূল কারন হয় - তাহলে সরাসরি সেই ধর্ম সম্পর্কেই আপনার বক্তব্য খোলসা করে আলোচনা করুন না কেন? সেটাই সৎ, সুন্দর ও স্বাভাবিক হবে। এজন্যে খামাখা 'নাম' নিয়েতো টানাটানির কোন দরকার দেখছি না! নাম তো এখানে আসল বিষয়টার লক্ষণমাত্র, আসল বিষয়টাকেই সরাসরি এ্যাড্রেস করুন, নইলে বাংলা নামে দেশ ভরে গেলেও কোন লাভ হবে না।

২। অন্য অনেক অনারব দেশের মুসলমানরা আরবি নাম রাখে না, বাঙালি মুসলমান রাখে কেন। আমার মতে বাঙালি মুসলমানের আরবি নামকরণ শুরুর পিছনে কিছু ঐতিহাসিক কারন বা প্রেক্ষিত আছে (যা সবসময় অতি-আরবিপ্রেম / ধর্মান্ধতা / আত্নমর্যাদাবোধের অভাব/ বাংলা-বিদ্বেষ ইত্যাদি নয়) - যা অন্য অনেক অনারব মুসলমানদের নাই মনে হয়। একেক দেশের ইতিহাস একেক ভাবে বিবর্তিত হয়েছে, ফলে অন্যদের সাথে আমাদের তুলনা দিয়ে সবসময় লাভ নাই। আর এখন শত শত বছরের চর্চার ফলে বাংলার পাশাপাশি আরবি-ফার্সিতে নামকরণ আমাদের সংস্কৃতিতে আত্নীকৃত হয়ে আমাদের সংস্কৃতিরই একটা অংশ হয়ে গেছে। এটা দোষনীয় কিছু নয় এবং পৃথিবীর কোন সংস্কৃতিই বিদেশী প্রভাবমুক্ত অবিমিশ্র বিশুদ্ধ নয়। সবই সংকর সংস্কৃতি। এনিয়ে হঠাৎ করে আক্রমণাত্নক নিন্দামন্দের ঝড় তোলাটা ইংরেজি থেকে এ্যাংলো-স্যাক্সন ছাড়া আর সমস্ত শব্দ মুছে ফেলা বা বাংলা ভাষা থেকে সমস্ত আরবি-ফার্সি শব্দ ঝেটিয়ে বিদায় করার আন্দোলনের মতই আরেকটা সঙ্কীর্ণমনা শভিনিস্টিক, জেনোফোবিক ও এথনোসেন্ট্রিক মৌলবাদ বা পশ্চাদপদ কুপমণ্ডূকতা মনে হতে পারে। আমি নিশ্চিত বেশির ভাগই এমন নন - তারা সাধারণ পরিচিত আরবি নামের বিরোধী নন, শুধু সাম্প্রতিককালের উদগ্র টাং-টুইস্টার আরবি নামকরনে বা এনিয়ে অন্যদের চাপাচাপিতে বিব্রত। তবে মনে হয় এরা আপত্তিকারীদের ১০০% না। যারা বিদেশী ভাষা বলে, বা বিশেষভাবে আরবি ভাষা বলে, বা 'মরুভূমির ভাষা' বলে, বা কোনরকম আরব-বিদ্বেষ / জাতিগত বিদ্বেষ ইত্যাদির কারনে - এরকম নামকরণের নিন্দামন্দ করেন - তাদের ক্ষেত্রে অবশ্য জেনোফোবিক ইত্যাদি বিশেষণ পুরোপুরি প্রযোজ্য এবং তাদের ছেদো জাত্যাভিমানের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নাই । আমার কাছে পৃথিবীর সব দেশের মানুষই মানুষ, সব ভাষাই মানুষের ভাষা ও সুন্দর ভাষা - মানুষের জীবনের আখ্যান। শুধু তাই না, মানুষ হিসেবে সব ভাষাই এক হিসেবে আমারই ভাষা - যদিও বাংলা প্রায়োরিটি পায় বাংলায় জন্মেছি বলে। কিন্তু তা অন্য কাউকে বা অন্য কোন ভাষাকে হেয় করে নয়। বাংলাকে (এবং অন্য সব ভাষাকেই) আমি তার ন্যাচারাল হ্যাবিটাটে অপ্রতিদ্বন্দ্বী দেখতে চাই বৈকি। কিন্তু সেটা ঐতিহাসিক বা ঐতিহ্যিকভাবে আত্নীকৃত এর কোন অংশকে জোরপূর্বক খৎনা করে নয় বা এর সৃষ্টিশীল বিবর্তনের সম্ভাবণাকে রুদ্ধ করে নয়। সেটা হবে নিছক স্টুপিডিটি।

৩। আরবিতে নামকরণ বন্ধ করার জন্য, বা বাংলা ভাষাকে খৎনা বা ধোলাই করে এর থেকে আরবি-ফার্সি শব্দ বহিষ্কার করার জন্য ভাষা আন্দোলন হয়নি। এটা কোন ভাষা বা স্বেচ্ছায় কোন ভাষায় নামকরণের বিরুদ্ধেই হয়নি। এমনকি উর্দুর বিরুদ্ধেও না। মাত্র ৭%-এর ভাষা হওয়া সত্ত্বেও ৫৪%-এর ভাষার ভাষাসংগ্রামীরা উর্দুর রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা হরণ করতে চাননি, শুধু নিজেদের ভাষার জন্য একই মর্যাদা দেয়ার যৌক্তিক দাবী করেছিলেন এবং অগণতান্ত্রিকভাবে চাপিয়ে দেয়া ও মৌল-মানবাধিকার হরণের সংস্কৃতির প্রতিবাদ করেছিলেন। নয়তো, সালাম-বরকতসহ বেশির ভাগ ভাষা-শহীদ ও ভাষা-সংগ্রামীর নামই মনে হয় আরবি দেখা যাবে, এমনকি তাদের অনেকের সন্তান-সন্ততির নামও। আমি এমনকি পাড় নাস্তিক ও কমিউনিস্ট ভাষাসৈনিক চিনি যাদের সব সন্তানের "ভাল নাম"-ই আরবিতে। সুতরাং আরবিতে নামকরণ করলে "ভাষা আন্দোলনের" কোন অপমান হয় বা এর পিছনে অবধারিতভাবে কোন ছোটবড় "ধর্মান্ধতা"-র সংশ্লিষ্টতা আছে বলে আমার মনে হয় না।

৪। অন্যান্য দেশে নামকরণ আমাদের মত ভিনদেশী, ভিনভাষার বা ধর্মভিত্তিক হয় না - একথাও পুরোপুরি ঠিক না। এর তিনটাই হয় আসলে। খোদ পাশ্চাত্য জগতেই - ইউরোপ / আমেরিকায় সাদা চামড়ার পাক্কা সাহেবদের - অজস্র নাম আছে যা মধ্যপ্রাচ্যীয় বা হিব্রু ইত্যাদি ভাষা থেকে উদ্ভূত। কখনো তা সরাসরি ধর্মীয় কারনে, কখনও বা দীর্ঘকাল যাবৎ আত্নীকৃত সামাজিক চল বা প্রথার কারনে। এনিয়ে কিন্তু তাদের এত কথা শুনতে হয় বলে শুনিনি। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ডেভিড (হিব্রুতে দাউইদ), মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বারাক (হিব্রু ও আরবি দুটোই) কিম্বা জোসেফ (হিব্রুতে ইয়োসেফ), মেরি (হিব্রুতে মিরিয়াম), জ্যাকব (হিব্রুতে ইয়াকব), জন (হিব্রুতে ইয়োহানান), টম (হিব্রুতেও টমের কাছাকাছি কিছু) - এরকম আরও অজস্র হিব্রুসম্ভূত নাম ইউরোপ-আমেরিকাতে ও বিশ্বজুড়ে অ-হিব্রু খৃষ্ট-ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে প্রচণ্ড জনপ্রিয়। এগুলি সবই তাদের জন্য মূলত "বিদেশী" নাম এবং ধর্মীয় কারনেই এগুলি তাদের ভাষায় প্রবেশ করেছে। আমি যে নামগুলি উল্লেখ করলাম, সেগুলি শুধু বিভাষী হিব্রু নামই না - রীতিমত খৃষ্টধর্মের (মেরি বাদে ইহুদী ধর্মেরও) প্রধান চরিত্রগুলির অন্যতম। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ইসলামেরও! এমন আরও অসংখ্য-অজস্র নাম তাঁরা ব্যবহার করেন। বাঙালি মুসলমানকে "ধর্মান্ধ", দেশপ্রেমহীণ, মানসিক দৈন্যতা-আক্রান্ত, এমনকি 'বেজন্মা' ইত্যাদি বলে কষে গালি দেয়ার আগে, যারা আগ্রহী তারা আরো অন্যান্য পাশ্চাত্যে জনপ্রিয় নামগুলির এটাইমোলজি চেক করে দেখতে পারেন অভিধানে, কিম্বা নীচের নাম সংক্রান্ত ওয়েবসাইটগুলি দেখতে পারেন। আমার মনে হয় অনেকেই তব্দা খেয়ে যাবেন। এগুলি দেখলেই কিছুটা উপলব্ধি হবে যে ধর্ম সংক্রান্ত কারনে বা ঐতিহাসিক ভাবে আত্নীকৃত প্রথা হওয়ার কারনেই হোক - ভিনদেশী নাম পৃথিবীতে শুধু বাঙালি একাই আমদানি করে না। আর হ্যাঁ, ভারতীয় আর্য ও সংস্কৃত নামই বা বিজাতীয় নামের তালিকা থেকে বাদ যাবে কেন, বা যারা তেমন নাম রাখেন তাদের উদাহরণটাও বিবেচ্য হবে না কেন?

http://www.jesusanswers.com/names/christian.htm
http://www.behindthename.com/names/usage/biblical
http://www.biblestudytools.com/dictionaries/hitchcocks-bible-names/?letter=d
http://www.quora.com/Do-western-names-have-meanings

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

একটা অসাধারণ, অসাধারণ, অসাধারণ মন্তব্য, আপনার প্রতিটা কথার সাথেই একমত। লেখা পড়তে পড়তে ঠিক এই কথাগুলিই মনে ফেলিয়ে উঠছিলো, আপনি পরিশ্রম বাঁচালেন। আমাদের দেশে আরবী নাম রাখার প্রচলনে সম্ভবত ---এই
দেশে যারা ইসলাম প্রচার করতে এসেছেন, তারা কীভাবে ধর্মাচরণ করেছেন---এই ব্যাপারটাও ভূমিকা রেখেছে। কোনো কোনো দেশে, কোনো কোনো ধর্ম প্রচারে কেউ হয়ত নাম পরিবর্তনে গুরুত্ব দিয়েছেন, কেউ দেয়নি, যেমন আমাদের দেশে খ্রীস্টান ধর্ম ফলো করেন এমন অনেকেই তাদের পূবর্পুরুষের পদবী ব হাল রেখেছেন। এগুলো এখন ইতিহাসের অংশ।

আর সচলায়তন নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণের সাথে একমত। আসলে এখানে ৫/৭ বছর আগেও যারা নিয়মিত লিখতেন তাদের অনেকেই নেই অথবা ফেসবুকে চলে গেছেন, অতিথি লেখকদের লেখা আগের থেকে অনেক বেশী, (সেটা মন্দ এমন বলছিনা) তবে মাঝে মধ্যে কিছু লেখায় *অযৌক্তিক* ধর্ম বিদ্বেষ বেশ চোখে পড়ে।

-----কৌতুহলী

অতিথি লেখক এর ছবি

সচলায়তনের যেসব লেখায় "*অযৌক্তিক* ধর্ম বিদ্বেষ বেশ চোখে পড়ে", সেগুলি নিয়ে উদাহরণ সহকারে আলাদা পোস্ট দিলে পাঠকদের কৌতূহল নিবৃত্তি হত।

Emran

অতিথি লেখক এর ছবি

হাহাহা, এতোটা সময় তো নেই যে আলাদা পোস্ট দেবো! নিজেই চোখ কান খোলা রাখুন, আশা করি দেখতে পাবেন। আপাতত এই পোস্ট আর এর ঠিক পরের পোস্ট দেখতে পারেন, ২টাতেই ভুল যুক্তিতে ধর্ম বিদ্বেষ চোখে পড়েছে।

কৌতুহলী

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

অ্যাঁ নাউজুবিল্লাহ! ইয়ে, মানে... হ, আমিও জানার লাইনে খাড়াইলাম। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মেঘলা মানুষ এর ছবি

সমস্যাটা অন্যখানে। বাবা-মা যেকোন নাম রেখেই শান্তিতে থাকতে পারেন না। স্কুলে অনেক স‌হপাঠীকে/পাড়ার অনেক বন্ধুকে শিক্ষক কিংবা মুরুব্বীর হাতে নাজেহাল হতে দেখেছি নাম আরবি/মুসলিম না হবার কারণে।

'শাশ্বত' বা এরকম বাংলা নাম নিয়ে কোন স্কুলে পড়তে গেলে ইসলাম শিক্ষা শিক্ষকের হাতে নাজেহাল হতে হয়। আবার, কিছু বাংলা নাম কিছুটা স‌হ্য(!) করে নিয়েছে আমাদের সমাজ (যেমন, 'সজীব')

ড জাফর ইকবালের কোন একটা উপন্যাসে এরকম একটা ডায়লগ ছিল যেখানে বাংলা ডাকনাম থাকার কারণে একজন মুরুব্বি বলেছিলেন যে এটা হিন্দু হিন্দু লাগে শুনতে। -যদিও এটা উপন্যাস থেকে নেয়া, এরকম ঘটনা সমাজের বাইরে না।

আমার নিজের ডাকনামটা খাস বাংলা, আর আমার ৮ বছর পর্যন্ত ঐ এক শব্দের নাম নিয়েই চলেছি। ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলের খাতায়ও ঐ এক শব্দের বাংলা নামটাই ছিল। শুধু ঐ নামের কারণে আমার অনেক স‌হপাঠীরা আমার নামের শেষে 'দাস' উপাধি লাগিয়ে দিত। (তাতে আমার অবশ্য কিছু ক্ষতি-বৃদ্ধি হয় নি) চাল্লু

আর, আপনি যেসব জায়গার কথা বললেন, সেখানে আপনি কারও নাম হিব্র থেকে উদ্ভুত শব্দ দিয়ে রাখুন বা না রাখুন, আপনার উপরে কেউ এসে কথা বলবে না। আপনি আপনার ছেলের নাম ডেভিড/ যোসেফ/জ্যাকব রাখুন কিংবা অন্য ধারায় গিয়ে ড‌্যারেন/ কিং/ অ্যান্ডি রাখুন সমাজ আপনার এই নামকরণ নিয়ে কিছু বলবে না। আর, আপনি এখানে মুসলিম পরিবারে জন্মানো কারও না শাশ্বত/শুভ্র রেখে দেখুন -বাবা-মাকে মুরুব্বিরা কথা শুনাবেন, স্কুলে ইসলামিয়াত হুজুর কথা শুনাবেন।

আশা করছি, আমাদের দেশের আর আপনি যেসব জায়গার কথা বললনের এই দুটো সমাজের মানসিকতা আর পরিস্থিতির পার্থক্যটা খানিকটা অনুধাবন করেছেন।

@লেখক: মন্তব্যে আরেকটু অংশগ্রহণ করুন।

শুভেচ্ছা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পাশ্চাত্যের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হল তারা বিব্লিক্যাল নাম গ্রহণ করলেও খৃষ্টধর্মের আগমন-পূর্ববর্তী নামগুলি বর্জন করেনি। কিন্তু ইসলাম-পূর্ববর্তী নামকরণের যে ধারা ছিল, আমাদের দেশের মুসলমানরা সেখান থেকে সরে এসেছে।

দ্বিতীয়তঃ আরবী-ফার্সি সহ বিভিন্ন বিদেশী ভাষার শব্দ বাংলায় আত্তীকৃত হয়েছে। "জমি" শব্দটা এসেছে ফার্সি "যমিন" থেকে। অথচ আমাদের দেশের একজন কৃষক যখন "জমি" শব্দটা ব্যবহার করেন, তিনি কিন্তু এটাকে বাংলা হিসেবেই ব্যবহার করেন। নামকরণের ব্যাপারটা তো তা নয়; মুসলমান মানেই আরবিতে নামকরণের চর্চা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে (অর্থাৎ ইসলাম/মুসলমান = আরবী ভাষা)। নামকরণ অবশ্যই ব্যক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু আরবী ভাষার সঙ্গে ইসলাম ধর্মের কোন intrinsic সম্পর্ক নেই - এই বোধটাই মাঝপথে হারিয়ে গেছে।

Emran

মন মাঝি এর ছবি

@মেঘলা মানুষ,

আপনার বক্তব্যের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত - এবং আমারও বক্তব্য তো ঠিক সেটাই। বাংলা নাম রাখার কারনে যেসব কূপমণ্ডুক জ্বালাতন করে - উলটো ক্ষেত্রে আমরাও তাদেরই মত আচরণ করবো কেন? তাহলে তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য কি থাকলো? একটু ভেবে দেখবেন।

আর, আপনি যেসব জায়গার কথা বললেন, সেখানে আপনি কারও নাম হিব্র থেকে উদ্ভুত শব্দ দিয়ে রাখুন বা না রাখুন, আপনার উপরে কেউ এসে কথা বলবে না

ইগজ্যাক্টলি! আমিও তো ঠিক একথাটা বোঝানোর জন্যই এতগুলি বাক্যব্যয় করলাম! স্পষ্ট করেই লিখেছি - "এনিয়ে কিন্তু তাদের এত কথা শুনতে হয় বলে শুনিনি"। বিদেশী নাম আমদানি যে অস্বাভাবিক কিছু না বা বাঙালি যে এই ব্যাপারে ব্যতিক্রম বা সৃষ্টিছাড়া কিছু না - এটা দেখানোর পাশাপাশি, এই পয়েন্টটাতে আমার যে অতিরিক্ত প্রশ্নটা ইমপ্লাইড ছিল এবং আমি ভেবেছিলাম সবাই এমনিতেই বুঝতে পারবে সেটা হলো - কুকুর মানুষের পায়ে কামড় দেয় বলে মানুষকেও কি কুকুরের পায়ে কামড় দেয়াটা চর্চা করতে হবে? অর্থাৎ, আরও ভেঙে বলি, আপনি যে কূপমণ্ডুকদের উদাহরণ দিলেন তারা তাদের মত আচরণ করে বলে আমাদেরও কি তাদের মতই আচরণ করতে হবে? এই প্রশ্নে আপনার উত্তর 'না' হলে আমি আপনার সাথে আছি, আর 'হ্যাঁ' হলে নাই।

****************************************

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

অবশ্যই তাদের মত আচরণ করতে হবে না। আপনার ভাষ্য ধার করেই বলি-

ট্রেণ্ডের ব্যাপারে আমারও অস্বস্তি আছে।

এবং

ইদানীংকালের আজব ট্রেন্ডটা সম্পর্কে আমাদের নিজস্ব বা জেনারেল অস্বস্তিটা প্রকাশ করতে পারি

অস্বস্তিকর ব্যাপার চেপে যাবার চাইতে আলোচিত হওয়াই ভাল নয় কি? এখানে, আমরা সবাই (প্রায়) বোধহয় এই অস্বস্তিটাই প্রকাশ করছি, হতে পারে প্রকাশভঙ্গিতে ভিন্নতা আছে। তাই না?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মরুদ্যান এর ছবি

মন মাঝি ভাই,
লেখক সবাইকে বাংলা নাম বেশি বেশি রাখার ব্যাপারে আহ্বান করেছে, যারা নাম আরবি তে না হলে কাউকাউ করে তাদের নিন্দা করেছে। আরবি নাম রাখলে তাকে গিয়া অপমান করতে বলেছে কি?
আরবি নাম = ইস্লামিক নাম, তাই অন্য কোন নাম আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য হবেনা- এটা ধর্মান্ধতা না ??

আরেকজন বলে গেল সচলে অনেক অতিথি লেখক রা ধর্ম বিরোধী পোস্ট দেন, আগের ভাল লেখক রা নাই তাই। একবারো বলে নাই ধর্মের সমালোচনা মূলক পোস্ট। যেই না আপনার একটা মন্তব্য দেখল যেখানে পোস্ট দাতাকে একটু শক্ত সমালোচনা করা হল (ভুল না ঠিক দেখার দরকার নাই) সাথে সাথেই দুই কথা শুনায় দিয়া গেল, যদিও বিস্তারিত আলোচনায় তার কোন আগ্রহ নাই।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাসুদ সজীব এর ছবি

সেই বিশাল কৌতুহলী, যদি কোন পোষ্টে কোথায় ধর্মের নামে বিদ্বেষ করা হয়েছে দেখাতে পারতেন কৃতজ্ঞ থাকতাম। ধর্ম নিয়ে কথা বললেই যদি বিদ্বেষ হয়ে যায় তাহলে মানবহীন গ্রহে এদের চলে যাওয়া উচিত।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

মন মাঝি এর ছবি

এই পোস্টে আমি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মন্তব্য করে ফেলেছি, আরও মন্তব্য বা মন্তব্যের পিঠে অন্তহীণ প্রতি-মন্তব্যের চালাচালিতে কোনও আগ্রহ বোধ করছি না। আমার কাছে এই ইস্যুটা অত গুরুত্বপূর্ণ না। তবু ক্ল্যারিফিকেশনের স্বার্থে বলছি --

১।

...পোস্ট দাতাকে একটু শক্ত সমালোচনা...

আমার মন্তব্যগুলি পোস্ট দাতা বা তার পোস্টকে লক্ষ্য করে নয়। বরং মন্তব্যঘরের কিছু মন্তব্যকে মাথায় রেখে করা। মনোযোগ দিয়ে পড়লে সেগুলি চোখে পড়ার কথা - তারপরও যদি না পড়ে, তাহলে সেগুলি চোখে আঙুল দিয়ে এখন আর দেখিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে না। আপনার চোখে যদি না পড়ে না থাকে, তাহলে না পড়াই থাক বরং। আরও বাক্যব্যয়ের রাস্তা খুলে দিতে কিছুমাত্র আগ্রহ বোধ করছি না।

২।

আরবি নাম রাখলে তাকে গিয়া অপমান করতে বলেছে কি?

মন্তব্যঘরে সেটা করা হয়েছে বৈকি। বাকিটুকু উপরের ১নং পয়েন্টে দেখুন।

৩।

যেই না আপনার একটা মন্তব্য দেখল...

অন্যের মন্তব্যের দায়দায়িত্ব আমার না!!

ধন্যবাদ।

****************************************

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

চলুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

এক লহমা এর ছবি

পোস্ট-এর মূল উদ্দেশ্যটা ভাল লেগেছে। শুধু এইটুকু জানিয়েই থেমে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। এখন মনে হচ্ছে, একটু বিস্তারিতে বলি ।

(১) "অনেককে বুঝাতে হয়েছে যে বাংলা নাম রাখাটাই স্বাভাবিক, আরবিতে নাম রাখার কোন যুক্তি নাই।” —>
এইখানে দু’টি কথা - ‘স্বাভাবিক' এবং ‘যুক্তি নাই’ সমালোচিত হবার জায়গায় আছে। কি হয়, ব্যক্তি ভেদে স্বাভাবিকতার সংজ্ঞা পাল্টে যায়। তাই, প্রবলভাবে পুণ্য চাওয়া দিদিমার কাছে নাতির নাম হরিদাস দেওয়াটা একটুও অস্বাভাবিক না লাগতে পারে, যদিও নাতির পক্ষে সে নামটা অস্বস্তির কারণ বিধায় অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। আর সেই সূত্রেই ঐ ‘যুক্তি নাই’ প্রসঙ্গটাও এসে গেল। যে পরিপ্রেক্ষিতে আপনার চারপাশের মানুষেরা কোন একটি বিশেষ ভাষায় নাম রাখেন সেটা আপনার কাছে অযৌক্তিক মনে হলেও তাদের কাছে ত খুবই যুক্তিসঙ্গত। তাদের যুক্তি আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য না হতে পারে, তা বলে ‘যুক্তি নাই’ বলাটা তাদের কাছে ‘যুক্তি নাই’ হয়ে যাবে।

(২) “এমনকি শেষ পর্যন্ত এটাও বলতে হয়েছে যে হাদিস মতে ছেলের নাম রাখার অধিকার বাবার, তাই আমি যা রাখব তাই মানতে হবে। কিন্তু এমনটা তো বাংলাদেশে হবার কথা ছিলো না! এটা দুঃখজনক। ছোট ব্যাপার হলেও, এটাও এক ধরনের ধর্মান্ধতা।"—>
বাবার অধিকার খাটানোর এই ঘটনাটায় আপনার কাজটার যৌক্তিক আবেদন কমে গেল। আর, ব্যক্তি পর্যায়ে জোর খাটানোর উদাহরণ বড় পরিসরে বুমেরাং হয়ে যেতে পারে। আপনার উদাহরণের উল্টো কাজটাই তখন ঐ জোর খাটানো দিয়েই জায়েজ হয়ে যেতে পারে।

(৩) “খুব বিস্তারিত লিখতে চাই না, কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলতে চাই বাংলায় নাম রাখলে সেটা ধর্মবিরোধী না, বরং সেটাই ইসলামকে সর্বজনীন ধর্ম হিসাবে আরো বেশি প্রতিষ্ঠিত করে। কুরান হাদিস ঘাটাঘাটি করে দেখেছি, বাংলায় নাম রাখলে পাপ হবে না।" —>
এই লাইনের চিন্তাভাবনার কিতাবি আবেদন যাই থাকুক, মাঠ পর্যায়ে পরিণতি হচ্ছে - দেখো বাপু, একটা নাম রেখেছি, খারাপ কিছু ত করিনি। তুমিও ধর্ম করছ, আমিও ধর্ম করছি, তুমি তোমার মত কর, আমি আমার মত করি।

(৪) “তাই ছোট অনুরোধ, ছেলেমেয়ের নাম বাংলায় রাখুন, অন্তত ডাক নামটা বাংলায় রাখুন। কারন আমাদের ছোট ছোট ধর্মান্ধতাই সমাজকে সাম্প্রদায়িক করে তুলছে।" —>
এইখানেই রয়েছে পোস্টের প্রাণভোমরার সন্ধান। একটি বিশেষ ভাষায় নাম রাখার কাজটির মধ্যে আপনি ধর্মান্ধতার অশনি সংকেত দেখোতে পেয়েছেন। আপনি হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্তে আসেন নি। আপনার এই সিদ্ধান্তে আসার প্রক্রিয়াটার এক পর্যায়ে আপনি উল্লেখ করেছেন “ছেলেমেয়ের নাম একমাত্র আরবিতেই হয়, খুব সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।" - অশনি সংকেত-এর সূত্রটা রয়েছে এখানেই। গোটা দেশ জুড়ে একটি বিশেষ ভাষার প্রতি বিশেষ ভালোবাসাটা কি ঐ ভাষার নিজস্ব সৌন্দর্যের আকর্ষণে না কি অন্য কোন কারণে। অন্য কোন কারণে হয়ে থাকলে সেই কারণটির প্রভাব এই ভাবে পড়াটায় কোন অসুবিধা আছে কি? পরবর্ত্তীর কোন বিষবৃক্ষ-র বীজ অজান্তে আজ পোঁতা হয়ে যাচ্ছে না ত? এই প্রশ্নগুলো তুলে দেওয়াটাকেই এই পোস্টের উদ্দেশ্য বলে আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

১) সহমত

২) ইয়ে, রোমের দেশে রোমান হতে চেয়ে কিংবা বিষে বিষক্ষয় হবে ভেবে আমি কিছুদিন আর্থিক ক্ষেত্রে এই লাইনে চেষ্টা চালিয়েছিলুম। ফলাফল কেতাবপাঠের ওপর নিষেধাজ্ঞার ফতোয়া হজম। ভাবতে পারেন? আর্থিক ক্ষেত্রে বিশাল সংখ্যক মানুষ অবলীলায় ঈমান স্থগিত রাখে। এবং, যেক্ষেত্রে অন্যের পশ্চাদ্দেশধাবন করা যাবে সেক্ষেত্রে এই বকেয়ার কাফফারা দ্বিগুন-তিনগুন হারে আদায় করে পাপমুক্তির চেষ্টা করে। ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং।

৩) উঁহু, এত সহজে কেউ মাঠ ছাড়ে না। তখন মানুষ আরো বড় কোনও পীরছাহেবের কাছে বটিকা নিয়ে এসে বক্তার ঈমানের ছিদ্রান্বেষণ করতে উদ্যোগী হয়ে পড়ে। তাছাড়া, "লা-ক্বুম দ্বীনুক্বুম ওয়াল ইয়া দ্বীন" ছহীহ ধর্মের অংশ নয় বলে অনেকেই মনে করেন। (ওপরে ২ নং পয়েন্টের প্রেক্ষিতটিও কিছুটা প্রযোজ্য)

৪) আবারও সহমত। দুর্দান্ত বিশ্লেষণ।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

shahaziz এর ছবি

ভাল বিষয় তুলে এনেছেন। নবী ও খলিফাগন দিয়েই শুরু করি। তারা স্বধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহনের পর কি নাম পালটেছিলেন। কেউই করেননি। আরবরা খুব বিরক্তিকর জিনিস দিয়েছেন এই উপমহাদেশে তাহল আরবীয় সংস্কৃতির লালন। পৃথিবীর অনেক জায়গাতে মুসলিম আছে যারা নিজ সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন অর্থাৎ নাম বদল করেন নি । খাদ্য খাবারেও তেমন অভ্যাস বজায় রয়েছে।তবে শুকর সব জায়গাতে হারাম। নামকরনের ব্যাপারে আপনি স্বাধীন এবং মুক্ত।আমাদের বাঙালি সত্ত্বা প্রথম তার পর আসবে দ্বিতীয় ধারা । পোশাক , খাদ্য, সামাজিক রীতিনীতি, পড়াশুনা , ধর্ম পালন ইত্যাদি। ধন্যবাদ লেখককে।

নীলকমলিনী এর ছবি

লেখাটা ভাল লেগেছে। আমার মেয়েদের নাম তন্বী নন্দিনী আর প্রমিতি শাশ্বতী। আমাদের যারা চেনে তারা জানে আমাদের মেয়েদের নাম বাংলায় ই হবে। সেজন্যে কেউ কিছু বলেনি, বাবা মা আত্মীয়স্বজনও না। আমেরিকায় ডাক নামের তেমন চলন নেই বলে আমরা ডাক নাম রাখিনি। তবে ওদের ছোট বেলায় দুই একজন ওদের জিজ্ঞেস করেছে তোমাদের ভালো নাম নেই? তখন ওরা ভাবতো ওদের নাম বুঝি খারাপ। এখন বড় হয়ে আমাদের ধন্যবাদ দেয় সুন্দর নাম দেয়ার জন্য, আর বাংলা নাম রাখার জন্য।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

নাম শুধু আরবীতে রাখা নয়। কেউ কেউ আছে নামটা স্বয়ং কোন হুজুরকে দিয়ে একদম সহী পদ্ধতিতে রাখেন। আমার পরিচিত কয়েকজন সেই পদ্ধতিতে হুজুরের কাছ থেকে যে নামগুলো নিয়ে এসেছে তার অধিকাংশ মায়মুনা-জরিনা এই ধরনের। এখন মুশকিল হলো হুজুর নাম দিছে, সেই নাম ফেলতেও পারে না, গিলতেও পারে না। আবার সমাজে তারা আধুনিক বলেও পরিচিত। সুতরাং সমাজের জন্য মায়মুনাকে মুনা ডাকনাম, জরিনাকে জেরিন ডাকনাম দিয়ে কোনমতে সারছে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ইন্টারেস্টিং ,,,,হাহাহাহা

মরুদ্যান এর ছবি

হো হো হো

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

স্পর্শ এর ছবি

আরব দেশে এত কোটি কোটি বাঙালী ঝাড়া-পুছা করতে যায় প্রতি বছর। তার মানে বাংলার সংস্পর্শে তো ওরা নিয়মিত আসে। তো দুয়েকটা আরব তাদের সন্তানদের সুন্দর সুন্দর বাংলা নাম রেখে দেখিয়ে দিক না!

আমার সবচে প্রিয় আরবি নাম হল 'গেলমানুর রহমান'। যখনই এই নামের কারো সাথে পরিচয় হয়, মনটা নেচে ওঠে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বিয়াশাদী কইরাও এই নামের পেছনে মন নাচান, ভাবী জানে? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

শিশিরকণা এর ছবি

ইদানিং ক্বালের বাচ্চা কাচ্চাদের নাম আমি আর মনে রাখতে পারি না। সব "আ--য়া"/ "আ----ন" বা "জা--ন" "জ---য়া" এই ফর্মের মধ্যে ঘুরা ফিয়া করে। ব্যাতিক্রম গুলাই কেবল মনে থাকে। অভিনব নাম রাখতে গিয়ে সবাই একই রকম নাম রাখছে বরং, আজব আজব ভিন্ন ভিন্ন বানানে। সুন্দর কিছু নাম বারে বারে ঘুরে ফিরে ব্যবহার হলে অসুবিধা কি?

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।