উপমহাদেশে ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অযুহাতে কোনও ব্যক্তি কর্তৃক প্রথম যে খুনের ঘটনা আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই সেটা হচ্ছে ১৯২৩ সালে 'রঙিলা রসুল' বই প্রকাশকে কেন্দ্র করে। বইটি হযরত মুহাম্মদ এবং তাঁর ১১ স্ত্রী ও ২ দাসীর ঘটনাবলীকে কেন্দ্র করে স্যাটায়ার।
বইটা কে লিখেছিলেন সেটা আজও জানা যায়না, যদিও অনেকগুলো নাম শোনা যায়। এর প্রকাশক ছিলেন লাহোরের একজন সাংবাদিক, নাম রাজপাল মালহোত্রা। প্রকাশের পর সেটা নিয়ে ভারত বর্ষের নানা স্থানে প্রচন্ড বিক্ষোভ করেন মুসলমানরা। বই নিষিদ্ধ, লেখক-প্রকাশকের শাস্তি দাবী করতে থাকে। মহাত্মা গান্ধী নিজেও এই বই প্রকাশের সমালোচনা করেন। তবে চাপের মুখে পড়েও প্রকাশক বইটির আসল লেখকের নাম প্রকাশ করেননি।
বই নিষিদ্ধের ব্যাপারে মামলা হলে কোর্ট বলে দেয়, এই বইতে যা আছে তা সহিহ হাদিস গ্রন্থ থেকেই নেয়া, মিথ্যা তথ্য নেই। অর্থাৎ নিষিদ্ধের দাবী ব্যর্থ হয়।
'রঙিলা রসুল' এর প্রতিবাদে মুসলামনরা পাল্টা হিন্দুদের শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর সহস্র গোপিনীকে নিয়ে দুইটা বই প্রকাশ করেন।
ইলমুদ্দিন নামে লাহোরের এক তরুণ মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঐ সময় মসজিদের কাছে অনেক লোকের ভীড় করে রাজপালের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিল।
এ সময় ইলমুদ্দিন সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি রাজপালকে তার দোকানে গিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করবেন। অর্থাৎ ইতিহাসের অন্য জঙ্গিদের মত সেও বইটা না পড়েই সে খুনের সিদ্ধান্ত নেয়।
তারপর ৬ই সেপ্টেম্বর ১৯২৯ সাল। সে হত্যার উদ্দেশ্যে বাজার থেকে ছুরি কেনে। ছুরিটি প্যান্টের ভেতর নিয়ে সে রাজপালের দোকানে যেয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। রাজপাল দোকানে এলে ইলমুদ্দিন তাকে খুন করে। এরপর পুলিশ ইলমুদ্দিনকে অকুস্থল থেকেই হাতে-নাতে প্রেপ্তার করে।
কোর্টে ইলমুদ্দিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। বিবাদী পক্ষ তার নির্দোষিতার পক্ষে দুজন মিথ্যা সাক্ষীও উপস্থাপন করে। ( ইলমুদ্দীন ঘটনার দিন অন্য জায়গায় ছিলেন এমন)। কিন্তু কোর্ট ইলমুদ্দিনের ফাঁসির আদেশ দেয়।
মামলা যখন হাইকোর্টে যায় তখন ইলমুদ্দিনের পক্ষে মামলা লড়েন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। মৃত্যুদন্ড আদেশকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরে বদলানোর চেষ্টা করেও পারেননি জিন্নাহ।
ফাঁসি কার্যকর হবার পর স্যার আল্লামা ইকবাল ও সৈয়দ দিদার আলি শাহ এর মত সম্ভ্রান্তরাসহ কয়েক লক্ষ মুসলিম লাহোরে ইলমুদ্দিনের জানাজায় অংশ নেন।
এখানে কয়েকটা বিষয় লক্ষ্যনীয় যে,
১/ মুহাম্মদকে নিয়ে স্যাটায়ারধর্মী বই প্রকাশের কারণে মুসলমান কর্তৃক হিন্দু প্রকাশক খুন হলেও, কৃষ্ণকে নিয়ে দুইটা স্যাটায়ারধর্মী বই প্রকাশের কারণে হিন্দুরা পালটা খুন করেনি।
২/ খুনীকে মুসলিম কমিউমিনিটি [b]শহীদের উপাধি দেন। লেখার বিপরীতে লেখা চলতে পারে, কিন্তু লেখার বিপরীতে খুন করা যে খারাপ কাজ সেটা অনুধাবন করে মুসলিম কমিউনিটি যদি এ ধরণের খুনকে প্রশ্রয় না দিতেন তবে আজ উগ্রতা কমে আসত অনেকখানি।।[/b]
ইদানীংকালের মডারেট ধার্মিকরা অবশ্য ধর্মগ্রন্থের এ সংক্রান্ত আদেশ না পড়েই 'ধর্মে খুনের কথা বলা নাই', 'এইসব উগ্র জঙ্গিরা সহিহ মুসলিম না' ইত্যাদি তত্ত্ব দিয়ে ফেলেন। অর্থাৎ এইসব খুনি জঙ্গিকে অন্তত সরাসরি প্রশ্রয় তারা দিচ্ছেন না। ক্ষুদ্র হলেও মুসলমান কমিউনিটির এই পরিবর্তন প্রশংসনীয়। তবে মডারেটরা মূল কমিউনিটির কত শতাংশের মতামত বহন করেন সেটা প্রশ্নযোগ্য। অন্ধকার সময়ে তারা এই মত পরিবর্তন করে ফেলবেন কিনা সেটাও চিন্তাযোগ্য।
৩/ লেখাটা লিখলাম কারণ বাংলা ট্রিবিউন এই ঘটনা সম্পর্কে ভুল তথ্য ছেপেছে।
"সজীব ওয়াজেদ, জাফর ইকবাল এবং ‘স্পর্শকাতর’ ব্লগার ইস্যু" প্রবন্ধে লেখক আনিস আলমগীর লিখেছেন,
"‘রঙ্গিলা রাসুল’। এই নামে ১৯৩৫ সালে কলকাতা থেকে জনৈক দীনেশ ভট্ট একটি বই লিখেন। প্রকাশের পরই তোলপাড় শুরু হয় চারদিকে। মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ চলতে থাকে। আন্দোলন-মিছিল নিত্য ঘটনা। একদিন মিছিল যাচ্ছিল সোনাগাছির বিখ্যাত নিষিদ্ধ পল্লীর পাশ দিয়ে। পতিতালয়ের এক পাঠান দারোয়ান মিছিলের কারণ জানতে চাইল তাদের কাছে। এই অবাঙালিকে বলা হলো- মুসলমানদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-কে কটাক্ষ করে একজন হিন্দু বই লিখেছেন- তার প্রতিবাদে এই মিছিল। অল্প দিনের মধ্যেই উপর্যুপরি ছুরির আঘাতে খুন হন দীনেশ ভট্ট। তাকে হত্যা করে আর কেউ নয়, সোনাগাজী পতিতালয়ের সেই দায়োয়ান।দেখুন, সারাদিন যিনি বেশ্যাদের পাহারা দিতেন, তারও ধর্মানুভূতি এতই প্রখর যে, ধর্মের কারণে সে মানুষ খুন করতে দ্বিধা করেনি। নিজে ধর্ম পালন করে কি না সেটা বড় নয়, ধর্মানূভূতিতে টইটুম্বুর।"
৪/রঙ্গিলা রসুল কেন্দ্রিক খুনকে প্রথম খুনের ঘটনা হিসেবে দাবী করাটা হয়ত সঠিক নাও হতে পারে। কেউ যদি এর আগেও কোনও ঘটনার ইতিহাস জেনে থাকেন তবে জানানোর অনুরোধ রইল।
লেখক: আহমদ রনি
তথ্যসূত্রঃ
https://bn.wikipedia.org/wiki/ইলমুদ্দিন
http://en.wikipedia.org/wiki/Ilm-ud-din
http://en.wikipedia.org/wiki/Rangila_Rasul
http://www.rajpalpublishing.com/About_Us.aspx
http://www.banglatribune.com/সজীব-ওয়াজেদ-জাফর-ইকবাল-এব
http://www.aryasamaj.org/newsite/node/2682
http://www.ummah.com/forum/archive/index.php/t-341121.html
ছবিসূত্রঃ
http://sabakhan.com/artwork/2821757_Left_Rajpal_s_House_Publisher_in_Urdu.html
মন্তব্য
আনিস আলমগীর তার লেখায় ঢাকা ট্রিবিউনে রঙিলা রসুলের লেখক হিসেবে দিনেশ ভাটের উ্ল্লেখ করেছেন তাকে হত্যা করা হয়ছে ১৯৩৫ সালে এটাও লিখছেন। এই তথ্যের সূত্র কী?
আনিস আলমগীরের এই লেখা পড়ে আমি একটা পোস্ট লিখতে যাচ্ছিলাম। আপনাকে ধন্যবাদ আপনার এই পোস্টের জন্য।
http://www.dhakatribune.com/author/anis-alamgir
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
১।
রঙ্গিলা রসূলের ঘটনা আবছাভাবে আগেও শুনেছি, বিস্তারিত জানা ছিলনা। ধন্যবাদ।
২।
এই রায়ের পুর্ণাঙ্গ কপি কেউ দিতে পারেন?
৩।
এই সমস্যার সমাধান প্রখ্যাত ভারতীয় চ্যানেল মালিক এবং একমাত্র হালাল স্ট্যান্ডাপ কমেডিয়ান ডাঃ জাকির নায়েক অনেক আগেই দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছিলেন-
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
৩ নং পয়েন্টের যুক্তি অকাট্য। (পানিকে ছুরি দিয়ে কাটার চেষ্টা করে দেখতে পারেন)
ওহ, ইয়াপ! দ্যাট'স জাস্ট সিম্পল সায়েন্স, ইউ নো।
ইফ ইউ ইট ওয়াটার ইউ উইল বিহেইভ লাইক ওয়াটার।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ও আল্লামা ইকবালের কর্মতৎপরতার কথা জেনে খুব ভাল লাগলো।
আচ্ছা ইকবালের কবিতা কি এখনো আমাদের পাঠ্যসূচীতে আছে?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
তারমানে কোনকালে ছিল? জানতাম না তো!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এতসব তো জানা ছিল না বাপু!
নতুন জিনিস জানলাম।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
তথাকথিত মহান সম্রাট অশোকের শাসনামলে (খ্রীষ্টপূর্ব ২৬৯-২৩২) একবার এক আজীবক মতাবলম্বী একটা ছবি (কার্টুন!) আঁকেন যেখানে দেখানো হয়েছিল বৌদ্ধ মতের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ নতশিরে আজীবক মতের প্রবর্তক মাক্ষালী গোশালার চরণে প্রণাম করছেন। এই চিত্র দেখে (বা তার কথা শুনে) তথাকথিত 'ধর্মাশোক' রাতারাতি 'রুদ্রাশোক'-এ পরিণত হন। তিনি আজীবক মতাবলম্বীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন এবং তাদের মুণ্ডপিছু পুরস্কার ঘোষণা করেন। ব্যাস, শুরু হয়ে যায় নির্বিচারে গণহত্যা। উত্তরবঙ্গের পুণ্ড্রবর্ধণে এক দিনে ১৮,০০০ আজীবককে হত্যা করা হয়। চিত্রকরকে সপরিবারে পুড়িয়ে মারা হয়। (রেফারেন্সের জন্য যে কারো অনুবাদ করা 'অশোকাবধান' পড়তে পারেন।)
আর খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে আরেক তথাকথিত মহান সম্রাট পুষ্যামিত্র সুঙ্গ কর্তৃক বৌদ্ধদের কচুকাটা করা হয়েছিল। (রেফারেন্স উইকিপিডিয়াতেই পাবেন। আগ্রহী পাঠক একটু খাইট্টা খান।)
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কার্টুনের উপরে দেখি সব ধর্মের লোকই খেপা।
রঙিলা রসুল ঘটনার আগে রাজা বা রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক ধর্মানুভূতির দায়ে খুনের ঘটনা উপমহাদেশে আরও আছে। যেমনঃ আওরঙ্গজেব কর্তৃক সারমাদ কাশানিকে হত্যা।
-আহমদ রনি
সব ধর্মের কিনা জানা নেই, তবে রাজধর্মের (যখন যেটা) লোকেরা বরাবরই খাপ্পা। মধ্যযুগীয় চার্চ বাইবেলের ঈশ্বরকে ডিঙিয়ে (মূলত) খৃস্টধর্ম রক্ষার্থে যা করেছিল, এখন কিন্তু তা সে করে না। এখন ধর্মরক্ষার রিলেরেইসে খড়গসদৃশ ব্যাটন তুলে নিয়েছে অন্য কেউ, অন্য কোথাও। এই ব্যাটন (একবারে না হোক) আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাক, এটিই প্রত্যাশা।
সারমাদ কাশানি'র ব্যাপারে জানা থাকলে বিস্তারিত লিখুন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
"ধর্মানুভূতির অযুহাতে খুন" এটাকে সংজ্ঞায়িত করাটা মুশকিল, ধর্মের নামে খুনাখুনি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই চলে আসছে, সবগুলোকেই চাইলে "ধর্মানুভূতির কারণে খুন" নাম দেওয়া যায়। আপনি হয়ত বলতে চাইছেন লেখালেখির কারণে ধর্মানুভূতি আঘাতের অযুহাতে খুন।
আর ইতিহাস যতটুকু বুঝেছি, সেসময় প্রায় সবকিছুকেই, এমনকি লেখালেখিকেও কোনো না কোনো সম্প্রদায়ের অধিকারভুক্ত ধরা হচ্ছে। আপনার এই ব্লগেও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে লেখালেখিটাও একটা পক্ষ (আপনার ভাষ্য মতে----- "রঙিলা রসুল' এর প্রতিবাদে মুসলামনরা পাল্টা হিন্দুদের শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর সহস্র গোপিনীকে নিয়ে দুইটা বই প্রকাশ করেন।")
আপনার ১ এবং ২ নম্বর বোল্ড করা পয়েন্টগুলো অতি সরলীকরণের দোষে দুষ্ট। আপনার লেখা
এটা পড়ে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারলামনা।
(কৌতুহলী)
আমি খুব অবাক হলাম আপনি লেখাটা মন পড়েছেন কিনা ভেবে। এই লেখার নামে “ধর্মানুভূতির অযুহাতে” শব্দদ্বয় থাকলেও লেখার শুরুতে একদম প্রথম বাক্যেই লিখেছি “ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অযুহাতে”… অর্থাৎ কি বোঝাতে চেয়েছি সেটা আমি শুরুতেই স্পষ্ট করেছি।
আপনি সম্ভবত প্রথম বাক্যটা ভালোমত না পড়েই এমন মন্তব্য করেছেন,
এই বাক্য থেকে ‘পক্ষের’ ধারণা কিভাবে পেলেন সেটা আমার বোধগম্যের বাইরে। বাক্যটা সেই সময়ের ঘটনা পরম্পরায় যা ঘটেছিলো সেই হিসেবেই লেখা।
আপনি হাসবেন না কাঁদবেন সেটা আপনার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেটা নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। মনে হয় না অন্যদেরও এই ব্যাপারে আগ্রহ আছে।
এই বাক্য যদি ভুল মনে করে থাকেন, তবে সেটা লজিক দিয়ে ডিফাইন করুন। আপনার হাসি কান্না নিয়ে আগ্রহ নেই। ধন্যবাদ। আহমদ রনি
১। ধর্মের ঠিক বেঠিককে কেন্দ্র করে যেসব ভায়োলেন্স হয়, সেসব সবগুলোকেই চাইলে "ধর্মানুভূতির অযুহাতে খুন" বলা যায়, সেটাই বলতে চেয়েছি। উপমহাদেশে হিন্দু মুসলিম যেসব রায়ট হয়েছে, কিংবা ৮ম শতাব্দীতে মোহাম্মদ বিন কাশিম এসে যখন হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মানুসারী অনেককে হত্যা করেন, সেগুলোর সবগুলোকেই ধর্মানুভূতিতে অঘাতের অযুহাতে খুন বলা যায়। আপনি যদি রঙ্গিলা রাসুলের ঘটনাকে আলাদা বলতে চান, তাহলে আপনার সংজ্ঞটা আরো স্পষ্ট করা দরকার।
২। পক্ষের ধারণা টা আসে তখনই , যখন আপনার কথা থেকে বোঝা যায় যে উল্লিখিত লেখালেখিগুলিকে কোনো ডিস্প্যাশনেট পান্ডিটরি বা নিস্পৃহ জ্ঞানচর্চা হিসেবে দেখা হচ্ছেনা, বরং হিন্দু-মুসলিম এরকম একটা বিভাজন ধরে সেই বিভাজনের একটা পক্ষে হিসেবে ধরা হচ্ছে। আপনি যখন বলেন যে "মুসলমানরা বই প্রকাশ করেন", বরং এরকম বলেননা যে "অমুক তমুক শ্রীকৃষ্ঞ কে নিয়ে একটা উস্কানিমূলক বই লেখেন" তখনই পক্ষ বিপক্ষ ব্যাপারটা আপনার লেখাতেও চলে আসে।
৩। "হাসবো না কাঁদবো" এই কথাটি আসলে বাংলা একটা বাগধারার মত, যেখানে আসলে একজনের মানসিক প্রতিক্রিয়া বোঝানো হয়, এটা ঠিক আক্ষরিক অর্থে হাসি বা কান্নার ব্যাপার নয়। কোনো একটা আগ্রহোদ্দীপক ঘটনা নিয়ে বিশ্লেষণমূলক লেখা তৈরীর সময় কেউ যদি হঠাৎ করে খুব শিশুতোষ, বা নাইভ এমন কোনো কথা লেখেন, যেটা লজিক দিয়ে বিরোধিতা করতেও বিশাল ব্যাখ্যা লাগে, তখন অনেক সময়ই এই বাগধারা ব্যাবহৃত হয়।
"মুসলিম সমাজে" যে উগ্রতা আছে আপনি বলছেন, সেটার কারণ বহুমাত্রিক, ইতিহাসের অনেক অনেক ঘটনা এই "মুসলিম সমাজ"কে তার নিজের মত করে ঋদ্ধ করেছে পরিবর্তন করেছে, সেখানে একটিমাত্র বইয়ের ঘটনা আজকের মুসলিম কমিউনিটিতে উগ্রতা কমিয়ে আনতো, সেটা ভাবা অত্যন্ত বড় সরলীকরণ। উপমহাদেশে হিন্দু মুসলিম বিরোধিতার যে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে, সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে, হঠাৎ করে , একটা বই লেখা হলে ভায়োলেন্স ঠিক না এটা মেনে নিলে "মুসলিম কমিউনিটি" আজ আর উগ্র থাকতো না, সেটা ভাবার কোনো কারণ দেখি না।
৪। লেখাটায় "মুসলিম কমুউনিটি" নিয়ে লেখকের প্যাট্রনাইজিং মনোভাব অত্যন্ত স্পষ্ট। লেখক একদিকে আশা করছেন
"মুসলিম কমিউনিটি যদি এ ধরণের খুনকে প্রশ্রয় না দিতেন" আবার আরেকদিকে নিজেই সিদ্ধান্ত টেনেছেন যে ধর্মগ্রন্থে এসব খুনের ব্যাপারে সায় আছে। ছোট্ট করে পিঠ চাপড়েছেন এই বলে যে "ক্ষুদ্র হলেও মুসলমান কমিউনিটির এই পরিবর্তন প্রশংসনীয়" আবার সাথে সাথে এ মনে করিয়ে দিয়েছেন যে এরা আসল "মুসলিম কমিউনিটির" খুব ছোট অংশ, এরাও যে কবে মন ফিরিয়ে নেয় তার ঠিক নেই।
রঙ্গিলা রাসূল সংক্রান্ত তথ্যের জন্য লেখাটা আগ্রহোদ্দীপক, তবে লঘু যুক্তি আর প্যাট্রিনাইজেশন লেখাটাকে দূর্বল করে।
কৌতুহলী
১/ আপনি যদি রঙ্গিলা রাসুলের ঘটনাকে আলাদা বলতে চান, তাহলে আপনার সংজ্ঞটা আরো স্পষ্ট করা দরকার।
আমি কেনও আলাদা করেছি এই ঘটনাকে তা লেখাতেই বলা ছিলোঃ ‘কোনও ব্যক্তি কর্তৃক খুন।‘ রাজা বা রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক খুনের ঘটনা এর আগেও অনেক ঘটেছে।
২/ পক্ষের ব্যাপারটা এই জন্যই মনে হচ্ছে কারণ পাল্টা যে বইগুলো প্রকাশ করা হয় সেগুলো কে লিখেছেন তা জানা যায়না। এনোনিমাস বলেই সেটা কমিউনিটি উল্লেখ করেই বলতে হয়েছে।
৩/ সেখানে একটিমাত্র বইয়ের ঘটনা আজকের মুসলিম কমিউনিটিতে উগ্রতা কমিয়ে আনতো, সেটা ভাবা অত্যন্ত বড় সরলীকরণ।
একটা বই লেখা হলে ভায়োলেন্স ঠিক না এটা মেনে নিলে "মুসলিম কমিউনিটি" আজ আর উগ্র থাকতো না, সেটা ভাবার কোনো কারণ দেখি না।
আমার লেখায় ছিলো, “এ ধরণের খুনকে প্রশ্রয় না দিতেন...”। আমি বলি নাই, শুধু এই একটি বইয়ের ঘটনা থেকেই উগ্রতা পালটে যেত। এখানে এই ‘একটিমাত্র’ শব্দটি আপনার নিজের আমদানী করা। অর্থাৎ আপনি যুক্তিবিদ্যার ভাষায় “Straw man fallacy” করেছেন।
তবে হ্যা দৃষ্টান্ত স্থাপন করাই যেত। খুনির জানাজায় লক্ষাধিক মুসলমানের উপস্থিতি কমিউনিটির সংকীর্ণতারই পরিচায়ক। এই ধারা এখনও চলছে, গোলাম আজমের জানাজাতেও আমরা দেখেছি লক্ষাধিক মুসলমান।
৪/
আমি জেনে শুনেই লিখেছি যে ধর্মগ্রন্থে এমন ধরণের খুনের ব্যাপারে সায় আছে। আবার আমি এইটাও প্রত্যাশাও করি যে অন্য ধর্মগুলোর মত এই ধর্মেও রিফর্মেশন জরুরি [যদি আধুনিক যুগের সাথে টিকে থাকার ইচ্ছে থাকে]।
সেই হিসেবেই বর্তমান কমিউনিটির এই ছোট্ট পরিবর্তন প্রশংসাযোগ্য মনে হয়েছে।
অর্থাৎ ছোট্ট করে পিঠ চাপড়েছি বলে যে কথাগুলো বলেছি সেগুলো ভুল না।
বরং আলোচনায় এই ‘ছোট্ট করে পিঠ চাপড়েছি’ শব্দগুলো এনে আপনি আবারও লজিকাল ফেলাসি করেছেন। (begging for the question.)
-আহমদ রনি।
১ নং পয়েন্টটি তো একটি তথ্য, তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে দ্বিমত থাকলে রেফারেন্স সমেত জানাতে পারেন। কিন্তু "সরলীকরণ" পাচ্ছেন কোথায়? পরিষ্কার ভাবে জানান।
২ নং পয়েন্টের ব্যাপারটিকে "বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে" দেখলে সরলীকরণ পাচ্ছিনা। পৃথিবীর ইতিহাসের প্রেক্ষিতে হলে ঠিকাছে। (লেখক ইদানীংকালের একাংশকে স্বাগত জানিয়েছেন দেখতে পাচ্ছি।)
এই অংশটুকু কেন আপনার অনুভূতিতে আঘাত করল জানতে আগ্রহী। হাসি-কান্না'র দমক কমলে জানাবেন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ব্যাপারটা জানা ছিল না। ধন্যবাদ।
রাসিক রেজা নাহিয়েন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নতুন মন্তব্য করুন